মালদ্বীপের শহীদ আবু নূহ(রহঃ) এর জীবনী
নিশ্চয় নবী, সিদ্দিক, শুহাদা এবং সলেহীনদের জীবনী স্মরণের মাধ্যমে একজন বিশ্বাসী ব্যক্তির চিত্ত দৃঢ় হয়।
ইবন আল ক্বায়িম রাহিমাহুল্লাহ তাঁর মাদারিজ আস-সালিকিন গ্রন্থে উল্লেখ করেন জুনায়েদ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন “গল্পগুলো হচ্ছে আল্লাহর সৈন্যবাহিনী থেকে সৈন্য যার মাধ্যমে তিনি তাঁর স্মরণকারী বান্দার অন্তরে শক্তি যোগান” তারপর তিনি পাঠ করেনঃ
وُكالًّ ن َُّق ُّص َعلَْي َك ِم ْن أَنبَاِء الُّرُسِل َما ن ُثَبِّ ُت بِهِ ف َُؤاَد َك
“এবং আমরা আমাদের রাসুলদের সংবাদ প্রত্যেক গল্পের মাধ্যমে তোমার কাছে বর্ণনা করি যাতে তা তোমার হৃদয়কে দৃঢ় করে ”
আর এর থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে সৎকর্মশীলদের জীবনী স্মরণ করা আল্লাহর রহমত লাভের একটি উৎস আর তা আমাদের বিশ্বাসকেও দৃঢ় করে। কিন্তু এইধরনের গল্প যদি তার সঠিক অধিকার না পায় এবং তা শুধু মুখে বলা আর শুনার মধ্যে সীমিত থাকে তাহলে সময়ের বিবর্তনে তাঁরা আমাদের স্মৃতি থেকে মুছে যাবে। তাই আল্লাহ আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন যারা শুনে এবং তা থেকে উপকৃত হয়।
আজকে আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা আমাদের মালদ্বীপের শহীদ, মুজাহিদ এবং মুহাজির ভাই আবু নূহ রাহিমাহুল্লাহ এর জীবনীর উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ উপস্থাপন করব, যে মুজাহিদ তাঁর শরীর এবং জিহ্বা দিয়ে কঠোরভাবে জিহাদ করেছেন, যে তাঁর আত্মা এবং তাঁর যা কিছু ছিল সবকিছু উজাড় করে দিয়ে তাঁর পরবর্তীদের নিকট অনুকরণীয় আদর্শ হয়েছেন। তিনি এমন একজন ব্যক্তি যার সমতুল্যতা দুষ্প্রাপ্য। তিনি এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যার একার উপস্থিতি যেকেউ উপভোগ করবে। তিনি তাঁর কর্মের মাধ্যমে তাঁর নিষ্ঠার প্রমাণ দিতেন। আল্লাহর ওয়াদা যা কিছু তাঁর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করা হবে তার থেকে উত্তম বস্তু তিনি দান করবেন এই বিশ্বাসের উপর দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়ে তিনি তাঁর পরিবার এবং মুল্যবান যা কিছু ছিল তার প্রতি ভালোবাসা থাকা স্বত্তেও আল্লাহর জন্য সবকিছু বিসর্জন দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর জীবনে এবং মরণের পরও রহমত প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তাঁর রক্ত যেটা ন্যায়ের সাথে আল্লাহর পথে প্রবাহিত হয়েছিল তা শত-শত লোকের জীবন রক্ষা করেছে এবং শত্রুদের অন্তরে ভীতি সঞ্চাচারিত করেছে ও বিশ্বাসীদের হৃদয়কে উৎফুল্ল করেছে। তিনি ছিলেন সেইসকল স্বাধীন মানুষ যারা আল্লাহ ছাড়া আর কারো বশ্যতা মেনে নেয়নি। তিনি আমাদেরকে অতিক্রম করেছেন তাঁর ইচ্ছা এবং ভালো কাজ দ্বারা যেটা আমাদেরকে ছাড়িয়ে তাঁর শাহাদতের জন্য কবুল হয়েছে আর এটা আমাদের উপর দায়িত্ব সেই বিষয়টিকে(শাহাদাত) খোঁজ করা যেন মৃত্যু আমাদের খুঁজে পাওয়ার পূর্বেই আমরা তা খুঁজে পাই আর ঈমান এবং আমল প্রত্যেক মানুষকে বিভিন্ন স্তরে উন্নিত করে আর আল্লাহ তাঁর শ্রেষ্ঠ বান্দাদেরকেই শহীদ হিসেবে মনোনীত করেন। যে লোকটিকে নিয়ে আমরা কথা বলছি তিনি হলেন আবু নূহ- মুহাজির এবং মুজাহিদ যিনি ২৫শে মে ২০১৪ সিরিয়ার ইদলিবের আরিহাতে মুজাহিদদের সাথে সরকারী সেনার মধ্যে মুখোমুখি লড়াইয়ে শহীদ হয়েছিলেন। তাঁর শাহাদাতের পর তাঁর স্ত্রীর কথা দিয়ে আমরা শুরু করবঃ
“আমি আমার স্বামীকে নিয়ে গর্ববোধ করি। তিনি একজন কর্তব্যনিষ্ঠ স্বামী, একজন মহান পিতা ও একজন ন্যায়পরায়ণ সন্তান। তাঁর পুরো পরিবার তাঁর জন্য গর্বিত এবং খুশী কারণ আমরা চিন্তাও করতে পারছিনা তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে কি পরিমাণ রিযক প্রাপ্ত হচ্ছেন। আমাদেরকে এবং দুনিয়াতে তাঁর যা কিছু আছে তা ত্যাগ করা অনেক কঠিন ইচ্ছা তা স্বত্তেও তিনি তাঁর দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের জন্য উৎসর্গ করেছেন। তাঁর পুরো জীবনে তিনি অনেক সহায়ক ছিলেন, একজন রক্ষক যিনি সবসময় তাঁর পরিবার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আমাদেরকে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে তিনি শুধু একটি চতুর মুখের অধিকারী নন যার শুধু মুখের বুলি আছে বরং তিনি তাঁর কর্মের মাধ্যমে তা প্রমাণ করেছেন যে তিনি তাই বলেন যা তিনি করেন। আমরা সবাই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁকে ভালোবাসি.... তিনি আমাদেরকে আল্লাহ সুবঃ এর হেফাজতে রেখে গেছেন এবং আমাদের সৃষ্টিকর্তার থেকে উত্তম হেফাজতকারী আর কে আছে।
আল্লাহ তাঁকে কবুল করুন এবং জান্নাতে সুউচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমিন” [ তাঁর কথা শেষ হল ]
জীবনের আগে সিরিয়া
সিরিয়ায় আসার পূর্বে, আমি ভাইয়ের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় কিছুদিনের জন্য ছিলাম। আমি প্রায়ই লক্ষ্য করতাম তিনি অন্য সবার থেকে ভিন্ন। তিনি কোন বিরতি ছাড়াই নিয়মিত সোম এবং বৃহস্পতিবার সিয়াম পালন করতেন। এছাড়াও তিনি সৎকাজের আদেশ দিতেন এবং অসৎকাজের নিষেধ করতেন। একদিন ১৫ বছরের এক কিশোর ভাই তার বন্ধুর সাথে কিছু বিষয়ে ঝগড়ার কারণে তাকে কাফির সাব্যস্ত করে। আবু নূহই হচ্ছেন প্রথম ব্যক্তি যিনি তাকে এজন্য তিরস্কার করেন। আবু নূহ ঐ ভাইকে এইধরনের কথার বিপদ ব্যাখ্যা করেন ও তাকে তার এই অল্প বয়সের আবেগকে নিয়ন্ত্রণের জন্য শাসন করেন। আর এভাবেই আবু নূহ অসৎকাজের নিষেধ ও সৎকাজের আদেশ দিতেন। এবং তিনি ঐসকল লোকের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না যারা সৎকাজের আদেশ দেয় অথচ নিজেরাই তা ভুলে যায়। এক ভাই আমাকে জানান যে, মালদ্বীপে থাকাকালীন সময়ে আবু নূহ কোন একটা চাকরিতে বেশী দিন থাকতে পারতেন না কারণ যখনই কোন চাকরি তাঁর এবং তাঁর দ্বীনের মধ্যে প্রতিবন্ধক হিসেবে দাঁড়াত তখনই তিনি আল্লাহর ভালবাসাকে প্রাধান্য দিতেন এবং ঐ চাকরি ছেড়ে দিতেন যদিও তা তাঁকে সন্তোষজনক বেতন দিত। এছাড়াও আরেকজন ভাই আমাকে জানিয়েছেন যে, আবু নূহ মালদ্বীপে থাকাকালীন সময়ে সবসময় জিহাদে যাওয়ার উপায় তালাশ করতেন এবং এইভাই জানতেন যে তিনি সবসময় নিষ্ঠার সাথে জিহাদের পথ খুঁজেছেন আর তিনি ঐসকল লোকের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না যারা তা শুধু মুখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে। তিনি আরও বলেছেন যে, আবু নূহ সবসময় কঠোর পরিশ্রম করে টাকা যোগাড় করতেন যাতে তিনি মুজাহিদিনদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য যেতে পারেন। তিনি আল্লাহর সাথে নিষ্ঠাবান ছিলেন এবং আল্লাহ তাঁকে তাই দিয়েছেন যা তিনি ছেয়েছেন। আমরা এটাই ধারণা করি আর আল্লাহই সর্বোত্তম জ্ঞাতা।
আর উপরে বর্ণিত জায়গায় থাকাকালীন সময়ে, তিনি সিরিয়ার জিহাদে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিলেন আর আমি তাঁকে অনুসরণ করেছিলাম। আর ঐসময়ে আবু নূহের স্ত্রী যিনি মালদ্বীপে ছিলেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তিনি তাঁর দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিবেন। আর আবু নূহ অনেক কষ্টের মাধ্যমে প্রাপ্ত জিহাদের এই রাস্তা ছেড়ে দেয়ার মত ছিলেন না। আবু নূহ তাঁর শীঘ্রই প্রত্যাশিত সন্তানের ভালোবাসার চেয়ে আল্লাহর ভালোবাসাকেই বেশী প্রাধান্য দিলেন। যেমনটা আল্লাহ তাঁর কালামে বলেছেন
“বলুন [ হে মুহাম্মদ ], ‘তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের অর্জিত ধন সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর, তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা পছন্দ কর তা আল্লাহ তাঁর রাসুল ও তাঁর রাস্তায় জিহাদ করা অপেক্ষা অধিক প্রিয় হয় তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত। আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না”
আর অবশ্যই তিনি ঐসকল লোকের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না যারা তাদের পরিবারের সাথে পিছনে বসে থাকার অনুমতি খুঁজে যখন জিহাদ ফরদুল ‘আইন হয়ে গেছে। আর আল্লাহ ঐসকল লোকদের সম্মন্ধে বলেনঃ
আর এভাবেই, তিনি আল্লাহর জন্য সবকিছু উৎসর্গ করলেন এবং তাঁর ঘরবাড়ি ছেড়ে জীবনের নতুন একটি ধাপে পা রাখলেন যেখানে তাঁর সামনে ছিল কষ্ট এবং পরীক্ষা। যেদিন আমরা ভ্রমন করব সেদিন সেদেশের এয়ারপোর্টে গেলাম, ঐসময় সেখানে চরম রাজনৈতিক সঙ্কট চলছিল এবং দাড়ি নিয়ে বাইরে ভ্রমন করা অনেক বিপদজনক হয়ে পড়ল আর রাস্তার দুর্বৃত্তরা ঐদিন কয়েকবার আমাদেরকে হুমকি দিয়েছিল এবং আমাদের কয়েকজন সঙ্গী আবেদন করল যে আমাদের প্রত্যেকের দাড়ি শেভ করে রাস্তায় নামা উচিৎ। কিন্তু আবু নূহ রাহিমাহুল্লাহ তা প্রত্যাখান করলেন এবং বললেন যে, আমরা যাব এবং আল্লাহ রক্ষা করলে আমাদের কিছুই হবেনা। আর আমরা তাই করলাম এবং আল্লাহ আমাদের সমস্ত বিপদ ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করলেন। তারপর আমরা এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম এবং যে দেশে আমরা ছিলাম তা ত্যাগ করলাম। তারপর ট্রানজিটের একটি দেশে ছোট বিরতির পর আমরা সিরিয়া প্রবেশ করলাম এবং এটা ছিল আবু নূহের শাহাদাত অন্বেষণের জন্য জিহাদী জীবনের সূচনা।
সিরিয়ায়
সিরিয়ায়, আমরা আবু নূহকে টার্গেট শুটিং এ খুবই পারদর্শী হিসেবে পেলাম এবং নবী সালল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসালল্লাম বলেছেন “নিশ্চয়, নিক্ষেপই হল শক্তি। নিক্ষেপই হল শক্তি। নিশ্চয়, নিক্ষেপই হল শক্তি”’
সিরিয়ায় থাকাকালীন সময়ে আবু নূহ তাঁর নতুন সন্তান জন্মের সুসংবাদ পেলেন যার জন্য তিনি দুইটি ভেড়া জবাই দিলেন আর এটি পরিবারের হকের প্রতি তাঁর দায়িত্ববোধের একটি ভালো উদাহরণ। আবু নূহ প্রায় সময় রিবাতে যেতেন এবং সবসময় ময়দানে যাওয়ার জন্য ইচ্ছাপোষণ করতেন। তিনি তাঁর শাহাদাতের দিন তিনবার আহত হওয়ার পূর্বে আরও দুইবার আহত হয়েছিলেন। তাঁর প্রথম আঘাতটি তাঁর যেকন একটি পায়ের হাঁটুর হাড়ের কাছে হয়েছিল যেখানে শার্পনেলের একটি টুকরো একদিক দিয়ে ঢুকে অন্যদিকে বের হয়ে গিয়েছিল। তিনি এই পরীক্ষাটি ধৈর্যের সাথে সহ্য করেছিলেন এবং আমি তাঁর কাছ থেকে জেনেছিলাম যে তিনি আবারও রিবাতের ভূমিতে ফিরে যেতে আকাঙ্ক্ষি। তাঁর দ্বিতীয় আঘাতের বেলায়, এটা তাঁর শাহাদাতের একমাস পূর্বে। আমি তাঁর পাশে বসেছিলাম যখন তাঁর অন্য পায়ের হাঁটুর ঠিক উপরে শার্পনেলের বেশকিছু ছোট টুকরো ঢুকেছিল কিন্তু তিনি শান্ত রইলেন এবং কিছুক্ষণ পর বললেন “এটা একটা ছোট আঘাত, আমি পিছনে ফিরে যাচ্ছিনা” কিন্তু তার কিছুক্ষণ পর তিনি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে চলে গেলেন এবং এটা ছিল তাঁর সাহস এবং বীরত্বের একটা চিহ্ন যে তিনি তাঁর সামর্থ্যের মধ্যে এসব কষ্ট সহ্য করতেন।
বুখারি এবং মুসলিমে বর্ণিত আছেঃ
আবু হুরাইরা(রাঃ) বর্ণনা করেনঃ আল্লাহর রাসুল(সাঃ) বলেছেনঃ “যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় আঘাত প্রাপ্ত হয়- এবং আল্লাহ জানেন কে তাঁর জন্য আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে- বিচার দিবসে তার আঘাতস্থল হতে রক্ত ঝরবে। ঐ রক্তের রঙ হবে লাল এবং তার ঘ্রাণ হবে মেশকের!”
মিডিয়া জিহাদ
এটা উল্লেখ্য যে তাঁর এ জিহাদি কার্যক্রম ময়দানের লড়াইয়ে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। উপরন্তু তিনি মিডিয়ায় কাজ করতেন। কবি হিসেবে, তিনি প্রচুর জিহাদি কবিতা এবং একজন নাস্তিক যে তাঁকে অনলাইনে বিরক্ত করত তার প্রতিউত্তরে তিনি ইসলামের সাধারণ বিষয়ের উপরও কবিতা লিখতেন। মালদ্বীপিয়ান ভাষার একটা অসাধারণ কবিতা তিনি এবং অন্য আরেকজন ভাই গাইত যেটা অনলাইনে ‘ইলহাদ’[অর্থঃ নাস্তিকতা] নামে পাওয়া যায়। এছাড়াও সিরিয়ায় আসার পড় তিনি প্রথমদিকে যে কাজগুলো করেছিলেন তার একটি হল ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের উপর একটি কবিতা রেকর্ড করে তাঁর মায়ের কাছে পাঠায় যার বিষয় ছিল একজন ছেলে যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রওনা দেয় সে আসলে হারিয়ে যায়না। এটাও অনলাইনে “লোবাইভা মাম্মাহ” [অর্থঃআমার স্নেহের মা] নামে পাওয়া যায়। এটা রেকর্ডিং এর সময় আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম আর তখন খুবই আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল কারণ ভাই আবু নূহ এটা গাওয়ার সময় অনেক সংগ্রাম করেছিলেন কারণ যখনই তিনি তাঁর প্রিয় মাকে সম্বোধন করছিলেন তখনই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন আর যেকেউ এটার অডিও শুনবে সে একথার প্রমাণ পাবে যে আমরা সত্য বলেছি। এছাড়াও, তাঁর অনেকগুলো কবিতা যা তিনি গেয়েছিলেন তার কিছু প্রকাশিত হয়েছে যখন আর কিছু প্রকাশের অপেক্ষায় ছিল এবং আরও অসংখ্য কবিতা তাঁর নোটবই এ ছিল যেগুলো গাওয়া হয়নি।
অধিকন্তু, তিনি জিহাদের স্কলারদের সাক্ষাৎকার নিতে খুবই উৎসাহী ছিলেন এবং তার মধ্যে একটা “ফরিদাতুল জিহাদ” শিরোনামে আমাদের মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে যেখানে আবু আবদুল্লাহ আল-সূরী(কাফাররুমাতের শরীয়াহ কাউন্সিলের সভাপতি) কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। এবং তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি জিহাদের ব্যাপক তাৎপর্যতার প্রতি সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন মিডিয়া কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন। এবং আমরা আল্লাহর কাছে চাই যে তাঁর ইচ্ছার কারণে তিনি তা তাঁর আমলনামার মানদণ্ডে যোগ করেন। অধিকন্তু, আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই যে তাঁর শাহাদাতের সংবাদ দাওয়ার কর্মকাণ্ডে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। এটা সম্ভব, কারণ এটা পূর্বেও ঘটেছিল এবং তা বর্তমানেও ঘটছে। এটা বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত আছে হারাম ইবনে মিলহান মৃত্যুকালীন সময়ে ছুরিকাহত হয়েছিলেন, তিনি সেসময় বলেছিলেনঃ “কাবার রবের শপথ আমি সফল হয়েছি”। এবং আরও বর্ণিত আছে যে লোকটি তাঁকে হত্যা করেছিল পরে সে প্রশ্ন করেছিল “কিভাবে সে সফল হতে পারে, অথচ আমি তাকে হত্যা করেছি” আর এটা তাকে পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
এখানে উপকারের বিষয় হল তাঁর ধৈয্য, দৃঢ়তা এবং শাহাদাতের প্রতি তীব্র ভালোবাসা যা হারাম ইবনে মিলহান প্রকাশ করেছিল পরবর্তীতে দাওয়ার একটি বড় উপকরণ হয়েছিল যা তাঁর হত্যাকারীকে ইসলাম গ্রহনের দিকে নিয়ে যায়।
অতঃপর যখন আমাদের ভাইদের(আবু নূহ এবং আবু তোরাব) শাহাদাতের খবর ও গল্প ছড়িয়ে পড়ল যে তাঁরা শাহাদাত অন্বেষণের আগে কি রকম ধৈয্যশীল এবং দৃঢ় ছিলেন, আর তা যখনই লোকদের কানে পৌঁছাল তখন তা যেন মৃত আত্মায় জীবন দেয়ার মত হল। ইসলাম এবং জিহাদের প্রতি তাদের হৃদয়ে ভালোবাসা যেন পুনর্জীবন পেল। আর আমাদের ভাইদের শাহাদতের খবর শুনার পর বিগত কয়েকদিনে আমরা অনেক ভাইকে প্রচুর উৎসাহমূলক জিহাদি কথাবার্তা বলতে দেখেছি। আর এভাবেই ভাইয়েরা যে এলাকায় থাকত সে এলাকায় আমরা জিহাদি যযবার পুর্ণজাগরণ দেখতে পেলাম এবং আমরা আল্লাহর কাছে চাই তিনি যেন তাঁদেরকে এজন্য উত্তম পুরষ্কার দেন। নিশ্চয়, তাঁরা তাঁদের কথার জন্য রক্ত দিয়ে জীবন দিয়েছেন এবং এই কথাগুলো মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করেছে যা পরবর্তীতে তাদেরকে অন্ধকারের মধ্যে যেখানে তারা হাবুডুবু খাচ্ছিল সেখান থেকে বের করে এনে নতুন জীবন দিয়েছে।
ইবাদতের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা
আল্লাহর প্রতি আবু নূহের নিষ্ঠার বেলায়, আমি তাকে প্রায়ই সোম এবং বৃহস্পতি বারের সিয়াম পালন করতে দেখেছি যদিনা তাঁকে আঘাতের কারণে ওষুধ সেবন করতে হয়। তিনি সবসময় অযু অবস্থায় থাকতেন প্রচণ্ড শীতের রাতেও যখনই তাঁর অযু ভেঙ্গে যেত তিনি পুনরায় তাঁর অযু করে নিতেন যদিও সেখানে তখন বরফ শীতল পানি পাওয়া যেত। শুধু তাই নয়, তিনি আহত হয়ে নিজে হাঁটার অপারগতা স্বত্তেও অযু অবস্থায় থাকতেন। প্রতি রাতেই তিনি ইবাদতের জন্য উঠতেন এবং তিনি প্রচুর কান্নাকাটি করতেন আর এই বিষয়টি অনেক ভাইয়েরই দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমি আমার কম্বলের নিচে ঘুমের ভান ধরে থাকতাম এবং আমি তাঁকে তাঁর খাটে সিজদায় কান্নারত অবস্থায় দেখতাম যেটা আমার পাশেই ছিল।এক ভাই বলেছিল আবু নূহকে ফজরের সালাতে অতিরিক্ত কান্নাবিহীন অবস্থায় পাওয়াটা খুবই অস্বাভাবিক। অধিকন্তু, তাকে রাতের সালাতে পাওয়া যেত যদিও তিনি আহত হয়ে দাঁড়াতে অপারগ ছিলেন তবুও। রাতের বেলায় তিনি এক ভাইকে বলতেন যে কিছু পানি তাঁর বিছানার পাশে রাখা হয় যাতে তিনি অযু করে রাতে বিছানায় বসে ইবাদত করতে পারেন। তিনি গোপনে তাঁর ভাইদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণের উপদেশ দিতেন এবং কেউ তাঁর কথায় প্রভাবিত না হয়ে থাকতনা। তিনি অর্থ ব্যয়ের বেলায় খুবই সচেতন থাকতেন এবং অপ্রয়োজনীয় কাজে অর্থ ব্যয় করতেননা যা তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর অসিয়াতে(অন্তিম ইচ্ছা) প্রতিফলিত হয়েছে, তাঁর অর্থ শুধু জিহাদের জন্য ব্যয় হবে এবং কোন অপ্রয়োজনীয় কাজের জন্য নয়। প্রত্যেক রাতে ঘুমানোর পূর্বে, তিনি তাঁর ফোন থেকে কিছু পড়তেন যা কি ছিল তা আমি খুঁজে পাইনি । যদি আমি তা জানতাম আমি এখানে তা তাঁর জীবনীতে লিখতাম। আমি তা কি ছিল তা জানার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। এর থেকে বড় কথা হল তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি ইবাদতের প্রতি আগের থেকে আরো বেশী দৃঢ় হয়েছিলেন।
তিনি জান্নাত উচ্চ মর্যাদা পাওয়ার জন্য খুব বেশী আগ্রহী ছিলেন। একদিন কিছু ভাই তাঁদের বন্ধুদের পূর্বেই নিজেদের শাহাদাত লাভের বাসনা নিয়ে কথা বলছিলেন এবং আবু নূহ বললেনঃ “আমি আসলে তেমন কিছু মনে করিনা যে আমি তোমাদের আগে অথবা পরে শহীদ হব যতক্ষন না আমি তোমাদের সকলের থেকে উচ্চ মর্যাদা না পাই” আর সবাই তখন হেসেছিল।
তিনি প্রায় সময় নিজের ভুলগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করতেন। তিনি আল্লাহর জন্য কারো প্রতি ঘৃণা ছাড়া তাঁর ভাইদের প্রতি কোন ধরণের ঘৃণা থেকে নিজের হৃদয়কে পরিশুদ্ধ রাখতেন। নিশ্চয় তিনি ছিলেন সবচেয়ে বেশী সহনশীল একজন ভাই যিনি অন্যকারো দ্বারা নিজের কোন ক্ষতি হলে তা ক্ষমা করে দিতেন এবং তা উপেক্ষা করতেন আর এটা আমি খুবই আশ্চর্য্যজনকভাবে উপলব্ধি করেছি। যদিও তিনি বিপর্যস্ত থাকতেন তবুও তিনি ভাইদের সাথে হাশিখুশি থাকতেন এবং সবাইকে আনন্দ দিতেন।
আবু নূহ এবং বিদ‘আতিরা
তিনি বিদ‘আতিদেরকে চরম ঘৃণা করতেন। এর উদাহরণ হিসেবে জামা’ত আল বাগদাদীর প্রতি তাঁর ঘৃণা এমন ছিল যে তিনি সাধারণ মুসলিমদের উপর তাদের জুলুম থেকে প্রতিহত করার জন্য তাদের সাথে লড়াই করার ইচ্ছা পোষণ করতেন। তাঁর শেষ দিনগুলোতে, তিনি তাঁর এক ভাইকে দেইর আল-জের এ পৌঁছার রাস্তা জিজ্ঞেস করছিলেন যাতে তিনি সেখানে গিয়ে তিনি ঐসকল চরমপন্থি খাওয়ারিজদের সাথে লড়াই করতে পারেন। যেখানে প্রতিদিন আমাদের সুন্নাহর ভাইদেরকে তাদের জুলুম নির্যাতন সহ্য করতে হয়। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে জামা’ত আল বাগদাদী হল ঐদল যারা নিরপেক্ষ স্কলার, মুজাহিদিন এবং সাধারণ মুসলিমদের শান্তি প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। নিশ্চয় তারা হল একটি বুঘাত (সীমালংঘনকারী) দল, মুসলিমদের উপর যাদের সীমালংঘনকে অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে এবং তাদের সাথে ততক্ষন পর্যন্ত লড়াই করতে হবে যতক্ষন না তারা আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে আসে। একইসাথে তারা এমন একটি দল যারা যেকোন নিরপেক্ষ শরঈ কোর্ট অথবা প্রতিথযশা ইলমের ছাত্রদের ফয়সালা প্রত্যাখ্যান করে, এবং তারা হল তইফা আল-মুমতানিয়া (প্রতিহত করা উচিৎ এমন দল) যারা বল প্রয়োগের মাধ্যমে নিরপেক্ষ শরঈ কোর্টের রায় প্রত্যাখ্যান করে। আল্লাহর শরীয়াহ অনুযায়ী তারা লড়াইযোগ্য একটি দল। কিন্তু শরঈ নীতি অনুযায়ী , আমাদের স্কলাররা তাদের সাথে আত্মরক্ষা ছাড়া লড়াই করার অনুমতি দেননি। আমাদের এখানে উল্লেখ করা দরকার যে আবু নূহ ঐধরণের লোকের অন্তর্ভুক্ত ছিলেননা যারা এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে আপত্তি করবে, কিন্তু তিনি এই সিদ্ধান্তে আসার আগে এই সম্মন্ধে স্কলারদের কাছে জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর এবং তাঁদের ফতওয়া তালাশ করেছেন।
বিদ ‘আতিদের প্রতি আবু নূহের ঘৃণা শুধুমাত্র চরমপন্থি তাকফিরিদের প্রতিই সীমাবদ্ধ ছিলনা। পরন্তু তাঁর ঘৃণা প্রত্যেক সাধারন পথভ্রষ্টদের প্রতি ছিল। আধুনিক ইখওয়ানি, নতুন মুরজিয়াদের(তথাকথিত সালাফিয়াহ) প্রতিও তাঁর তীব্র ঘৃণা ছিল।
সুসংবাদের স্বপ্ন
আবু নূহ এবং অন্যান্য ভাইয়েরা তাঁকে নিয়ে অনেক সুন্দর স্বপ্ন দেখত, যাইহোক আমি এখন তার অনেকগুলোই ভুলে গেছি। কিন্তু আমি তার কিছু ইনশাআল্লাহ উল্লেখ করব। তারপূর্বে আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই যে স্বপ্ন কোন দলিল নয় এবং কারো একটা নির্দিষ্ট স্বপ্ন দেখে তা সত্য বলে ধরে নেয়া উচিৎ নয়, প্রকৃতপক্ষে সত্যকে নির্ধারণ করতে হবে কোরআন এবং সুন্নাহর উপর যার বুঝ সালাফরা দিয়েছেন, আর যেকেউ তা অনুসরণ করবে সেই সত্যের উপর থাকবে। আর স্বপ্নের বেলায় তা শুধুমাত্র তাঁদের জন্য সুসংবাদ যারা সঠিক পথের উপর আছে। আর যে অন্যকোন পথে রয়েছে তার জন্য তা স্বপ্ন কোন কিছুইনা। এখন এখানে আবু নূহের অথবা তাঁর সম্মন্ধে তাঁর ভাইদের কিছু স্বপ্নের কথা উল্লেখ করা যাক।
সিরিয়াতে আমাদের প্রথম মাসে, আমাদের এক ভাই একটা স্বপ্ন দেখল যে আবু নূহ একটা শহীদি হামলা পরিচালনা করছেন আর তিনি এভাবেই শহীদ হলেন। তাই যে ভাই এই স্বপ্ন দেখছিল সে এবং অন্য আরেকভাই আবু নূহের চেহারা দেখতে গেল তখন তারা তাঁর চেহারাতে অনেক উজ্জ্বল আলোকচ্ছটা দেখতে পেলেন। তারপর তারা কবরস্থানে গেল যেখানে আবু নূহকে সমাহিত করা হয়েছে তারপর এক ভাই আবু নূহকে সালাম দিল এবং তিনি তাঁর কবর থেকে সালামের জবাব দিলেন। তাই দেখে যে ভাই স্বপ্নটি দেখছিল সেও তাঁকে সালাম দিল এবং আবার তিনি কবর থেকে সালামের জবাব দিলেন এবং বললেনঃ “এটাই আসল জীবন এবং আমি এখানে খুবই আনন্দিত। তাই নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর পথে জিহাদকে আঞ্জাম দিয়ে তাড়াতাড়ি আমি যে দুনিয়াতে আছি সেখানে আস”। [তার স্বপ্ন শেষ ]
একটা স্বপ্নে যেটা আবু নূহ নিজে দেখেছে যেখানে তাঁকে এবং আবু তালহা আল-সুরিকে একটা মাকড়সা কামড়াচ্ছে। আবু নূহকে তাঁর পায়ে কামড় দেয়া হয়েছিল। তারপর তিনি আকাশে উড়ে গিয়ে কুফফারদের সাথে লড়াই করছেন এবং তাদের অনেককে তাঁর অস্ত্র দিয়ে হত্যা করলেন তারপর তিনি নিজে শহীদ হয়ে গেলেন। এরপর তিনি যেসব কুফফারদের হত্যা করলেন তাদের চেহারা দেখতে গিয়ে দেখলেন সেগুলো কালো এবং খুবই বিশ্রী দেখাচ্ছে। কিন্তু আবু নূহের চেহারা শুভ্র এবং খুবই উজ্জল ছিল, তাই তিনি এক কাফিরকে জিজ্ঞেস করলেন ‘তুমি কি মৃত?’ এতে কাফিরটি জবাব দিল ‘আমিও মৃত এবং তুমিও মৃত’। কিন্তু আবু নূহের চেহারা উজ্জ্বল এবং শুভ্র পক্ষান্তরে কাফিরের চেহারা মলিন এবং কালো। আর আবু নূহ খেয়াল করল যে তাঁর দাড়ি আগের থেকে ছোট হয়ে গেছে। [তাঁর স্বপ্ন শেষ]
আবু নূহ এই স্বপ্ন দেখার পর তার সম্মন্ধে কথা বলেছিলেন (বাস্তব জীবনে)। তিনি এবং আবু তালহা উভয়ই একই লড়াইয়ে আহত হন আর আবু নূহ তাঁর পায়ে আঘাত প্রাপ্ত হন যেটা তাঁদের দুজনেরই স্বপ্নে দেখা মাকড়সার কামড়ের দিকে ইঙ্গিত করে। এবং তার কিছুদিন পর আবু নূহ এক দুর্ঘটনায় তাঁর দাড়ির অর্ধেক পুড়ে ফেলেন। তখন তিনি বলেছিলেনঃ “স্বপ্নে দেখা দুইটি বিষয় এর মধ্যেই সত্য হল (মাকড়সার কামড় ও দাড়ি ছোট হয়ে যাওয়া), তাই আমরা মনে হয় পরেরটা হয়তোবা আমার শাহাদাত হবে”। এবং একমাস যাওয়ার পূর্বেই তিনি শহীদ হলেন। উপরি উল্লেখিত তিনটি বিষয়ই একমাস সময়ের মধ্যে সংঘটিত হল এবং তিনি ছোট দাড়ি ও সদ্য সেরে উঠা পা নিয়ে শহীদ হলেন।
আরেকটি স্বপ্নে আবু নূহ দেখেছিলেন যে তিনি কুফফারদের সাথে লড়াইরত অবস্থায় একটি বিল্ডিং ছিলেন। তখন একটি মিসাইল বিল্ডিংটিতে আছড়ে পড়ল এবং তিনি ডানদিকে পড়ে গেলেন ও ‘লা ইলাহা ইল্লালাহ’ পাঠ করতে লাগলেন এবং তিনি শহীদ হয়ে গেলেন। [তাঁর স্বপ্ন শেষ] আর এটা বাস্তবতার সাথে খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ কারণ আমরা যা জানি তা হল তাঁর শেষ মুহূর্তে তিনি একটি বিল্ডিং এর ভেতর থেকে কুফফারদের সাথে লড়াই করছিলেন আর ক্রমাগত বোমাবর্ষণের ফলে তা আবু নূহ সহ মাটিতে মিশে যায়।
মালদ্বীপে থাকাকালীন সময়ে অন্য একটি স্বপ্নে আবু নূহ দেখেছিলেন তিনি সউদি আরব গেলেন এবং সেখানের লোকজনকে বানরের মত দেখলেন এরপর তিনি অন্য একটি জায়গায় গেলেন যেখানের দেয়ালে তিনি ইসলামিক আলপনা দেখতে পেলেন। তিনি ঐজায়গায় গিয়ে খুবই খুশী এবং সন্তুষ্ট হলেন। তারপর তিনি ঐজায়গার নির্দেশিত একটি পথ ধরে চলতে লাগলেন যতক্ষণ না তিনি একটি খুবই সুন্দর জায়গায় গেলেন যেখানে অনেকগুলো বড় গেইট দেখতে পেলেন এবং তার চারপাশে লম্বা দাড়িওয়ালা অনেকগুলো সুন্দর যুবক দেখতে পেলেন। [তাঁর বাক্য শেষ]
যখন তিনি বাস্তব জীবনে সিরিয়া আসলেন, তিনি সিরিয়ার দেয়ালগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে বলছিলেন এইগুলো সেই দেয়াল যা তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন। এটা সম্ভব যে, যে পথ তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন তা জিহাদের পথ যা তাঁকে সিরিয়ায় নিয়ে এসেছে যতক্ষন না তিনি জান্নাতে না পৌঁছান।
অন্য একটি স্বপ্নে তিনি দেখলেন নবী সাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসতেছেন তাই তিনি তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য দৌড়ে গেলেন এবং দেখলেন তিনি যেখানে যাচ্ছিলেন সেখানে লোকজনের ভীড় হয়েছে। তখন তিনি সেখানে কি হয়েছে তা দেখতে গেলেন এবং নবী সাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাদের মাঝে দেখলেন, অতঃপর তিনি তাঁর(রাসুল) সাথে আলিঙ্গন এবং মুসাহাফা করলেন। তারপর আবু নূহ রাসুল(সাঃ) কে কিছু বলতে গেলেন কিন্তু তিনি ভুলে অন্যকিছু বলে ফেললেন যা শুনে রাসুল সাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসলেন। তারপর আবু রাসুল নূহ সাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর জন্য দুয়া করতে বললেন তারপর তিনি(সাঃ) আল্লাহর কাছে ক্ষমা করার জন্য দুয়া করলেন। পরবরতী যে জিনিসটি আবু নূহ খেয়াল করলেন তাহল তাঁর উভয় হাঁটুর নিকটের পা থেকে আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। [তাঁর কথা শেষ] অন্য আরেকজন ভাই বললেন এটা হয়ত তাঁর দুপায়ের হাঁটুর নিকট আঘাতকে নির্দেশ করছে এবং এটা তাঁর উপর ক্ষমার একটি নিদর্শন। আবু নূহ এই স্বপ্নটি যখন দেখেছিলেন তখনও তিনি মালদ্বীপে।
আরেকটি স্বপ্নে, আবু নূহ একদল সিংহ দেখেছিলেন তারপর দেখলেন তিনি রাসুল সাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশে থেকে লড়াই(একটা শত্রুর সাথে) করছেন। [তাঁর কথা শেষ]
তাঁর শাহাদাতের একদিন পর, আবু নূহের চার বছরের ছেলে ঘুম থেকে উঠে তার মাকে জিজ্ঞেস করলঃ “বাবা এখন আকাশে ঘুমাচ্ছে, তাই না?”। শিশুটি তাঁর শাহাদতের ব্যাপারে অজ্ঞ থাকার কারণে এই ধরনের প্রশ্ন করেছিল এবং পরে সে এটার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলল যে, সে স্বপ্নে তার বাবাকে আকাশে ঘুমাতে দেখেছে।
এর সাথে, তাঁর শাহাদাতের পর তাঁর মা একটি স্বপ্নে দেখলেন যে তিনি একটি অনুর্বর ভূমিতে তাঁর পরিবারের সবার সাথে আছেন। ঐভূমির মাঝখানে, অনেকগুলো কবর আছে এবং আবু নূহ সেখান হতে বের হয়ে আসছিলেন। তাঁর চাচাতো ভাই তাঁর হাত ধরে তাঁকে উপরে উঠাচ্ছেন। তারপর আবু নূহের স্ত্রী সেখনে দাঁড়িয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তুমি এখানে কি করে এলে?” তার জবাবে তিনি বললেনঃ “কোন কিছুর সাথে ঝুলে”। তারপর তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ “কি জন্যে?” তারপর তিনি হাসলেন এবং এমন কিছু বললেন যা তাঁর স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার নির্দেশ করে। আর ঐসময়ে আবু নূহের মা তাঁর কাছে দৌড়ে গেলেন এবং তাঁকে জড়িয়ে ধরতে চাইলেন এর প্রতিউত্তরে আবু নূহ বললেনঃ “মা, আমি এখন খুবই অপরিচ্ছন্ন কারণ আমি রক্তে ভিজে জবজবে হয়ে আছি। আমি এখন যাচ্ছি”। [স্বপ্ন শেষ]
তাঁর মা ঐস্বপ্ন সম্পর্কে বলেন আবু নূহ নিজেকে অপরিচ্ছন্ন দেখেছিল কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে পুরোপুরি পরিষ্কার ছিল। তাঁর কাপড়, লম্বা দাড়ি, চুল সবকিছুই সাদা রঙের ছিল। এবং তিনি আরও যোগ করেন যে স্বপ্নে আবু নূহের চেহারায় একটি দুষ্ট হাসি লেগেছিল।
এছাড়াও আবু নূহকে নিয়ে দেখা আরও অনেক স্বপ্ন যা আমি এখন ভুলে গেছি। সময়ের সাথে সাথে আমি তা ভুলে গেছি কিন্তু সিরিয়ায় আমার প্রথম মাসগুলোতে, আমার ধারণা করতাম আবু নূহ আমাদের দলের মধ্যে প্রথম শহীদ হতে যাচ্ছে কারণ আমাদের সিরিয়ায় আসার পর থেকে বরাবরই তাঁর শাহাদাত নিয়ে অনেক সুন্দর স্বপ্ন দেখা গিয়েছিল।
একটি শহীদি হামলার সন্ধানে
তাঁর শাহাদাতের একমাস অথবা তার কিছু পূর্বে, আবু নূহ এবং আরেকজন ভাই শাইখ আবু সুলাইয়মান আল-মুহাজির হাফিযাহুল্লাহ (জাবাহাত আন-নুসরা এর শরীয়াহ কাউন্সিলের সদস্য) এর কাছে সুপারিশ করার জন্য গিয়েছিলেন যাতে করে তিনি তাঁর নাম শহীদি হামলায় অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি শাইখকে এটার সময় ত্বরান্বিত করার জন্য বললেন। শাইখ আবু সুলাইমান তাঁর(আবু নূহ) শাহাদাতের পর এটা নিয়ে টুইট করে বলেছিলেনঃ “তিনি রাহিমাহুল্লাহ কিছুদিন আগে আমার কাছে সুপারিশ করার জন্য এসেছিলেন যাতে তাঁর নাম শহীদি হামলায় লিখাতে পারেন। তিনি অনুসন্ধান করেছিলেন এবং শাহাদাত পেয়েছিলেন”
আবু তোরাব মালদ্বীপিয়ানের শহীদি হামলার দিন, যেদিন আবু নূহও শহীদ হয়েছিলেন, আবু নূহ আবু তোরাবের সাথে ঝগড়া করে বলেছিলেনঃ “ এটা ঠিক হচ্ছেনা, আমি তোমার আগেই শহীদি হামলার জন্য নাম লিখিয়েছি আর তুমি আমার আগেই তা পেয়ে যাচ্ছ ”। আর এটা এরকমই হল যে তাঁরা একই দিনই শহীদ হয়েছিলেন পার্থক্য হল শুধু কয়েক ঘণ্টা সময়ের ব্যবধান।
শাহাদাতের সন্ধানে
২৫শে মে ২০১৪, ভোর হওয়ার সাথে সাথে পর পর চারটি শহীদি হামলায় দুনিয়া কেঁপে উঠল এবং প্রত্যেকটি বিস্ফোরণে পুরো এলাকা ও তার চারপাশে প্রতিধ্বনিত হল। আবু তোরাব সিয়ামরত অবস্থায় শহীদ হল। তারপরের অপারেশন হল ইক্বতিহাম(ঝড়ো বেগে শত্রুর মধ্যে প্রবেশ) যাতে আবু নূহ অংশগ্রহণ করেছিলেন। এটা খুবই ভোরে সংঘটিত হয়েছিল এবং তাঁরা কেউই সকালের নাস্তাও করেননি। তাঁরা(মুজাহিদরা) কুফফারদের বিরুদ্ধে তীব্রভাবে লড়াই করে প্রবেশ করেছিল এবং নিকট সীমার মধ্যে একটার পর একটা বিল্ডিং তাদের হাত থেকে দখল নিচ্ছিলেন।
আবু নূহ সম্পর্কে বলা হয় তিনি খুব সাহসিকতার সাথে কুফফারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। একটি উদাহরণস্বরূপ, তিনি নিজেকে জমিনে কুফফারদের খুবই নিকটে নিয়ে যান এবং তাঁর AK47 থেকে তাদের উপর গুলি বর্ষণ শুরু করেছিলেন। তিনি একজন মৃত কুফফারের বুলেট নিয়ে তাঁর ভাইদের সাথে তা শেয়ারও করেছিলেন। যেসব ভাইয়েরা অপারেশনের পর নিরাপদে ফিরে এসেছিল তাঁদের মতে লড়াইটা আসলেই খুবই বিপদজনক মুকাবিলা ছিল।
আবু নূহ এবং কিছু ভাইয়েরা একটি বিল্ডিঙে প্রবেশ করেছিলেন। তাঁরা এটা দখল করে পরে সেখান থেকে আরেকটি দখল করার জন্য তার থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ময়দানের স্বাভাবিক বিভ্রান্তির কারণে ঘণ্টাখানেক পরে দেখা গেল যে আবু নূহ ঐ বিল্ডিং থেকে বের হয়নি। বিল্ডিঙের সামনে ঘোষণা করা হয়েছিল, যে কেউ ভিতরে থাকলে এখনই যাতে নেমে আসে কিন্তু তাতে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। কয়েক ঘণ্টা পার হওয়ার পরও ভাইয়েরা জানতেন যে তিনি নিশ্চয় নিখোঁজ কিন্তু সেখানে আর কোন বিল্ডিং ছিলনা, কারণ অনবরত গোলাবর্ষণের ফলে ঐ এলাকার আশপাশের সব বিল্ডিং ধ্বংস হয়ে গেছে। আবু নূহ শহীদ হয়েছিলেন। লড়াইয়ের পূর্বে তিনি যে শাহাদাতের সাক্ষ্য দিয়েছিলেনঃ “আজকের পর আমি আর ফিরে আসবনা। আমি চাইনা পাহাড়ারত অবস্থায় শহীদ হতে, বরঞ্চ আমি সম্মুখ সারিতে তীব্রভাবে শত্রুর সাথে লড়াই করে শহীদ হতে চাই”।
আর এটাই ছিল এই মহান লোকটি সম্মন্ধে কিছু কথা যা আমরা একত্রিত করতে পেরেছি কিন্তু যার মর্যাদা এই কিছু মূল্যহীন কথার দ্বারা দেয়া সম্ভব নয়, আর কেউই ভুলের উর্দ্ধে নয়। পানি যা সমুদ্রে গিয়ে মিলিত হয় সামান্য ময়লা পড়ার ফলে তা তেমন নষ্ট হয়না। মহান মানুষ ছোট-খাট ত্রুটির কারণে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়না। আমরা আল্লাহর কাছে চাই, তিনি যেন আবু নূহ এবং অন্যান্য শহীদদের জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা দেন এবং আমাদেরকে যেন তিনি সেই রহমত থেকে বঞ্চিত না করেন যা তিনি তাঁদের উপর করেছেন। নিশ্চয় আমাদের প্রিয় ভাইয়েরা শাহাদাত অন্বেষণে আমাদেরকে পরাজিত করেছেন এবং আমরা আল্লাহর কাছে চাই যে, আল্লাহ যেন তাঁকে সেইসকল লোকের সাথে অন্তর্ভুক্ত করেন যাঁরা তাঁর নিকটস্থ। এবং আমরা আল্লাহর কাছে চাই যে, তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর পথে নিষ্ঠার সাথে, পিছনে না ফিরে, রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আক্বিদাহ এবং মানহাজের উপর শিরক এবং বিদআত মুক্ত অবস্থায় শহীদ হিসেবে কবুল করেন।
লেখকঃ আবু দুজানাহ আল-মালদ্বীপি
আবু নূহ সম্মন্ধে তিনি যা জানেন এবং যা দেখেছেন তার আলোকে
১ জুন ২০১৪
বিলাদ আল-শাম মিডিয়া(সিরিয়াতে মালদ্বীপিয়ানরা)
http://www.biladalsham.wordpress.com
@BiladAlSham_Dhi.
নিশ্চয় নবী, সিদ্দিক, শুহাদা এবং সলেহীনদের জীবনী স্মরণের মাধ্যমে একজন বিশ্বাসী ব্যক্তির চিত্ত দৃঢ় হয়।
ইবন আল ক্বায়িম রাহিমাহুল্লাহ তাঁর মাদারিজ আস-সালিকিন গ্রন্থে উল্লেখ করেন জুনায়েদ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন “গল্পগুলো হচ্ছে আল্লাহর সৈন্যবাহিনী থেকে সৈন্য যার মাধ্যমে তিনি তাঁর স্মরণকারী বান্দার অন্তরে শক্তি যোগান” তারপর তিনি পাঠ করেনঃ
وُكالًّ ن َُّق ُّص َعلَْي َك ِم ْن أَنبَاِء الُّرُسِل َما ن ُثَبِّ ُت بِهِ ف َُؤاَد َك
“এবং আমরা আমাদের রাসুলদের সংবাদ প্রত্যেক গল্পের মাধ্যমে তোমার কাছে বর্ণনা করি যাতে তা তোমার হৃদয়কে দৃঢ় করে ”
[তাঁর বাক্য শেষ-মাদারিজ আস-সালিকিন]
আর এর থেকে আমরা বুঝতে পারলাম যে সৎকর্মশীলদের জীবনী স্মরণ করা আল্লাহর রহমত লাভের একটি উৎস আর তা আমাদের বিশ্বাসকেও দৃঢ় করে। কিন্তু এইধরনের গল্প যদি তার সঠিক অধিকার না পায় এবং তা শুধু মুখে বলা আর শুনার মধ্যে সীমিত থাকে তাহলে সময়ের বিবর্তনে তাঁরা আমাদের স্মৃতি থেকে মুছে যাবে। তাই আল্লাহ আমাদেরকে তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন যারা শুনে এবং তা থেকে উপকৃত হয়।
আজকে আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা আমাদের মালদ্বীপের শহীদ, মুজাহিদ এবং মুহাজির ভাই আবু নূহ রাহিমাহুল্লাহ এর জীবনীর উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ উপস্থাপন করব, যে মুজাহিদ তাঁর শরীর এবং জিহ্বা দিয়ে কঠোরভাবে জিহাদ করেছেন, যে তাঁর আত্মা এবং তাঁর যা কিছু ছিল সবকিছু উজাড় করে দিয়ে তাঁর পরবর্তীদের নিকট অনুকরণীয় আদর্শ হয়েছেন। তিনি এমন একজন ব্যক্তি যার সমতুল্যতা দুষ্প্রাপ্য। তিনি এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যার একার উপস্থিতি যেকেউ উপভোগ করবে। তিনি তাঁর কর্মের মাধ্যমে তাঁর নিষ্ঠার প্রমাণ দিতেন। আল্লাহর ওয়াদা যা কিছু তাঁর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ করা হবে তার থেকে উত্তম বস্তু তিনি দান করবেন এই বিশ্বাসের উপর দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়ে তিনি তাঁর পরিবার এবং মুল্যবান যা কিছু ছিল তার প্রতি ভালোবাসা থাকা স্বত্তেও আল্লাহর জন্য সবকিছু বিসর্জন দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর জীবনে এবং মরণের পরও রহমত প্রাপ্ত হয়েছিলেন। তাঁর রক্ত যেটা ন্যায়ের সাথে আল্লাহর পথে প্রবাহিত হয়েছিল তা শত-শত লোকের জীবন রক্ষা করেছে এবং শত্রুদের অন্তরে ভীতি সঞ্চাচারিত করেছে ও বিশ্বাসীদের হৃদয়কে উৎফুল্ল করেছে। তিনি ছিলেন সেইসকল স্বাধীন মানুষ যারা আল্লাহ ছাড়া আর কারো বশ্যতা মেনে নেয়নি। তিনি আমাদেরকে অতিক্রম করেছেন তাঁর ইচ্ছা এবং ভালো কাজ দ্বারা যেটা আমাদেরকে ছাড়িয়ে তাঁর শাহাদতের জন্য কবুল হয়েছে আর এটা আমাদের উপর দায়িত্ব সেই বিষয়টিকে(শাহাদাত) খোঁজ করা যেন মৃত্যু আমাদের খুঁজে পাওয়ার পূর্বেই আমরা তা খুঁজে পাই আর ঈমান এবং আমল প্রত্যেক মানুষকে বিভিন্ন স্তরে উন্নিত করে আর আল্লাহ তাঁর শ্রেষ্ঠ বান্দাদেরকেই শহীদ হিসেবে মনোনীত করেন। যে লোকটিকে নিয়ে আমরা কথা বলছি তিনি হলেন আবু নূহ- মুহাজির এবং মুজাহিদ যিনি ২৫শে মে ২০১৪ সিরিয়ার ইদলিবের আরিহাতে মুজাহিদদের সাথে সরকারী সেনার মধ্যে মুখোমুখি লড়াইয়ে শহীদ হয়েছিলেন। তাঁর শাহাদাতের পর তাঁর স্ত্রীর কথা দিয়ে আমরা শুরু করবঃ
“আমি আমার স্বামীকে নিয়ে গর্ববোধ করি। তিনি একজন কর্তব্যনিষ্ঠ স্বামী, একজন মহান পিতা ও একজন ন্যায়পরায়ণ সন্তান। তাঁর পুরো পরিবার তাঁর জন্য গর্বিত এবং খুশী কারণ আমরা চিন্তাও করতে পারছিনা তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে কি পরিমাণ রিযক প্রাপ্ত হচ্ছেন। আমাদেরকে এবং দুনিয়াতে তাঁর যা কিছু আছে তা ত্যাগ করা অনেক কঠিন ইচ্ছা তা স্বত্তেও তিনি তাঁর দুনিয়ার জীবনকে আখিরাতের জন্য উৎসর্গ করেছেন। তাঁর পুরো জীবনে তিনি অনেক সহায়ক ছিলেন, একজন রক্ষক যিনি সবসময় তাঁর পরিবার দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আমাদেরকে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন যে তিনি শুধু একটি চতুর মুখের অধিকারী নন যার শুধু মুখের বুলি আছে বরং তিনি তাঁর কর্মের মাধ্যমে তা প্রমাণ করেছেন যে তিনি তাই বলেন যা তিনি করেন। আমরা সবাই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তাঁকে ভালোবাসি.... তিনি আমাদেরকে আল্লাহ সুবঃ এর হেফাজতে রেখে গেছেন এবং আমাদের সৃষ্টিকর্তার থেকে উত্তম হেফাজতকারী আর কে আছে।
আল্লাহ তাঁকে কবুল করুন এবং জান্নাতে সুউচ্চ মর্যাদা দান করুন। আমিন” [ তাঁর কথা শেষ হল ]
জীবনের আগে সিরিয়া
সিরিয়ায় আসার পূর্বে, আমি ভাইয়ের সাথে মধ্যপ্রাচ্যের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় কিছুদিনের জন্য ছিলাম। আমি প্রায়ই লক্ষ্য করতাম তিনি অন্য সবার থেকে ভিন্ন। তিনি কোন বিরতি ছাড়াই নিয়মিত সোম এবং বৃহস্পতিবার সিয়াম পালন করতেন। এছাড়াও তিনি সৎকাজের আদেশ দিতেন এবং অসৎকাজের নিষেধ করতেন। একদিন ১৫ বছরের এক কিশোর ভাই তার বন্ধুর সাথে কিছু বিষয়ে ঝগড়ার কারণে তাকে কাফির সাব্যস্ত করে। আবু নূহই হচ্ছেন প্রথম ব্যক্তি যিনি তাকে এজন্য তিরস্কার করেন। আবু নূহ ঐ ভাইকে এইধরনের কথার বিপদ ব্যাখ্যা করেন ও তাকে তার এই অল্প বয়সের আবেগকে নিয়ন্ত্রণের জন্য শাসন করেন। আর এভাবেই আবু নূহ অসৎকাজের নিষেধ ও সৎকাজের আদেশ দিতেন। এবং তিনি ঐসকল লোকের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না যারা সৎকাজের আদেশ দেয় অথচ নিজেরাই তা ভুলে যায়। এক ভাই আমাকে জানান যে, মালদ্বীপে থাকাকালীন সময়ে আবু নূহ কোন একটা চাকরিতে বেশী দিন থাকতে পারতেন না কারণ যখনই কোন চাকরি তাঁর এবং তাঁর দ্বীনের মধ্যে প্রতিবন্ধক হিসেবে দাঁড়াত তখনই তিনি আল্লাহর ভালবাসাকে প্রাধান্য দিতেন এবং ঐ চাকরি ছেড়ে দিতেন যদিও তা তাঁকে সন্তোষজনক বেতন দিত। এছাড়াও আরেকজন ভাই আমাকে জানিয়েছেন যে, আবু নূহ মালদ্বীপে থাকাকালীন সময়ে সবসময় জিহাদে যাওয়ার উপায় তালাশ করতেন এবং এইভাই জানতেন যে তিনি সবসময় নিষ্ঠার সাথে জিহাদের পথ খুঁজেছেন আর তিনি ঐসকল লোকের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না যারা তা শুধু মুখের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে। তিনি আরও বলেছেন যে, আবু নূহ সবসময় কঠোর পরিশ্রম করে টাকা যোগাড় করতেন যাতে তিনি মুজাহিদিনদের সাথে যোগ দেয়ার জন্য যেতে পারেন। তিনি আল্লাহর সাথে নিষ্ঠাবান ছিলেন এবং আল্লাহ তাঁকে তাই দিয়েছেন যা তিনি ছেয়েছেন। আমরা এটাই ধারণা করি আর আল্লাহই সর্বোত্তম জ্ঞাতা।
আর উপরে বর্ণিত জায়গায় থাকাকালীন সময়ে, তিনি সিরিয়ার জিহাদে যোগদানের সিদ্ধান্ত নিলেন আর আমি তাঁকে অনুসরণ করেছিলাম। আর ঐসময়ে আবু নূহের স্ত্রী যিনি মালদ্বীপে ছিলেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তিনি তাঁর দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দিবেন। আর আবু নূহ অনেক কষ্টের মাধ্যমে প্রাপ্ত জিহাদের এই রাস্তা ছেড়ে দেয়ার মত ছিলেন না। আবু নূহ তাঁর শীঘ্রই প্রত্যাশিত সন্তানের ভালোবাসার চেয়ে আল্লাহর ভালোবাসাকেই বেশী প্রাধান্য দিলেন। যেমনটা আল্লাহ তাঁর কালামে বলেছেন
قُلْ إِنْ كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ
“বলুন [ হে মুহাম্মদ ], ‘তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের অর্জিত ধন সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর, তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা পছন্দ কর তা আল্লাহ তাঁর রাসুল ও তাঁর রাস্তায় জিহাদ করা অপেক্ষা অধিক প্রিয় হয় তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত। আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না”
আর অবশ্যই তিনি ঐসকল লোকের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না যারা তাদের পরিবারের সাথে পিছনে বসে থাকার অনুমতি খুঁজে যখন জিহাদ ফরদুল ‘আইন হয়ে গেছে। আর আল্লাহ ঐসকল লোকদের সম্মন্ধে বলেনঃ
وَإِذَا أُنزِلَتْ سُورَةٌ أَنْ آمِنُوا بِاللَّهِ وَجَاهِدُوا مَعَ رَسُولِهِ اسْتَأْذَنَكَ أُولُو الطَّوْلِ مِنْهُمْ وَقَالُوا ذَرْنَا نَكُن مَّعَ الْقَاعِدِينَ
“যখন কোন সূরা নাযিল হয় যাতে বলা হয় তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান আন এবং তাঁর রাসুলের সাথে মিলে লড়াই কর তখন কিছু সামর্থ্যবান লোকেরা আপনার কাছে এসে অব্যাহতি চায় এবং বলে আমাদেরকে ছেড়ে দিন এবং বসে থাকা লোকদের সাথে থেকে যেতে দিন”
আর এভাবেই, তিনি আল্লাহর জন্য সবকিছু উৎসর্গ করলেন এবং তাঁর ঘরবাড়ি ছেড়ে জীবনের নতুন একটি ধাপে পা রাখলেন যেখানে তাঁর সামনে ছিল কষ্ট এবং পরীক্ষা। যেদিন আমরা ভ্রমন করব সেদিন সেদেশের এয়ারপোর্টে গেলাম, ঐসময় সেখানে চরম রাজনৈতিক সঙ্কট চলছিল এবং দাড়ি নিয়ে বাইরে ভ্রমন করা অনেক বিপদজনক হয়ে পড়ল আর রাস্তার দুর্বৃত্তরা ঐদিন কয়েকবার আমাদেরকে হুমকি দিয়েছিল এবং আমাদের কয়েকজন সঙ্গী আবেদন করল যে আমাদের প্রত্যেকের দাড়ি শেভ করে রাস্তায় নামা উচিৎ। কিন্তু আবু নূহ রাহিমাহুল্লাহ তা প্রত্যাখান করলেন এবং বললেন যে, আমরা যাব এবং আল্লাহ রক্ষা করলে আমাদের কিছুই হবেনা। আর আমরা তাই করলাম এবং আল্লাহ আমাদের সমস্ত বিপদ ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করলেন। তারপর আমরা এয়ারপোর্টে পৌঁছালাম এবং যে দেশে আমরা ছিলাম তা ত্যাগ করলাম। তারপর ট্রানজিটের একটি দেশে ছোট বিরতির পর আমরা সিরিয়া প্রবেশ করলাম এবং এটা ছিল আবু নূহের শাহাদাত অন্বেষণের জন্য জিহাদী জীবনের সূচনা।
সিরিয়ায়
সিরিয়ায়, আমরা আবু নূহকে টার্গেট শুটিং এ খুবই পারদর্শী হিসেবে পেলাম এবং নবী সালল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসালল্লাম বলেছেন “নিশ্চয়, নিক্ষেপই হল শক্তি। নিক্ষেপই হল শক্তি। নিশ্চয়, নিক্ষেপই হল শক্তি”’
সিরিয়ায় থাকাকালীন সময়ে আবু নূহ তাঁর নতুন সন্তান জন্মের সুসংবাদ পেলেন যার জন্য তিনি দুইটি ভেড়া জবাই দিলেন আর এটি পরিবারের হকের প্রতি তাঁর দায়িত্ববোধের একটি ভালো উদাহরণ। আবু নূহ প্রায় সময় রিবাতে যেতেন এবং সবসময় ময়দানে যাওয়ার জন্য ইচ্ছাপোষণ করতেন। তিনি তাঁর শাহাদাতের দিন তিনবার আহত হওয়ার পূর্বে আরও দুইবার আহত হয়েছিলেন। তাঁর প্রথম আঘাতটি তাঁর যেকন একটি পায়ের হাঁটুর হাড়ের কাছে হয়েছিল যেখানে শার্পনেলের একটি টুকরো একদিক দিয়ে ঢুকে অন্যদিকে বের হয়ে গিয়েছিল। তিনি এই পরীক্ষাটি ধৈর্যের সাথে সহ্য করেছিলেন এবং আমি তাঁর কাছ থেকে জেনেছিলাম যে তিনি আবারও রিবাতের ভূমিতে ফিরে যেতে আকাঙ্ক্ষি। তাঁর দ্বিতীয় আঘাতের বেলায়, এটা তাঁর শাহাদাতের একমাস পূর্বে। আমি তাঁর পাশে বসেছিলাম যখন তাঁর অন্য পায়ের হাঁটুর ঠিক উপরে শার্পনেলের বেশকিছু ছোট টুকরো ঢুকেছিল কিন্তু তিনি শান্ত রইলেন এবং কিছুক্ষণ পর বললেন “এটা একটা ছোট আঘাত, আমি পিছনে ফিরে যাচ্ছিনা” কিন্তু তার কিছুক্ষণ পর তিনি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে চলে গেলেন এবং এটা ছিল তাঁর সাহস এবং বীরত্বের একটা চিহ্ন যে তিনি তাঁর সামর্থ্যের মধ্যে এসব কষ্ট সহ্য করতেন।
বুখারি এবং মুসলিমে বর্ণিত আছেঃ
আবু হুরাইরা(রাঃ) বর্ণনা করেনঃ আল্লাহর রাসুল(সাঃ) বলেছেনঃ “যে কেউ আল্লাহর রাস্তায় আঘাত প্রাপ্ত হয়- এবং আল্লাহ জানেন কে তাঁর জন্য আঘাত প্রাপ্ত হয়েছে- বিচার দিবসে তার আঘাতস্থল হতে রক্ত ঝরবে। ঐ রক্তের রঙ হবে লাল এবং তার ঘ্রাণ হবে মেশকের!”
মিডিয়া জিহাদ
এটা উল্লেখ্য যে তাঁর এ জিহাদি কার্যক্রম ময়দানের লড়াইয়ে কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। উপরন্তু তিনি মিডিয়ায় কাজ করতেন। কবি হিসেবে, তিনি প্রচুর জিহাদি কবিতা এবং একজন নাস্তিক যে তাঁকে অনলাইনে বিরক্ত করত তার প্রতিউত্তরে তিনি ইসলামের সাধারণ বিষয়ের উপরও কবিতা লিখতেন। মালদ্বীপিয়ান ভাষার একটা অসাধারণ কবিতা তিনি এবং অন্য আরেকজন ভাই গাইত যেটা অনলাইনে ‘ইলহাদ’[অর্থঃ নাস্তিকতা] নামে পাওয়া যায়। এছাড়াও সিরিয়ায় আসার পড় তিনি প্রথমদিকে যে কাজগুলো করেছিলেন তার একটি হল ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের উপর একটি কবিতা রেকর্ড করে তাঁর মায়ের কাছে পাঠায় যার বিষয় ছিল একজন ছেলে যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রওনা দেয় সে আসলে হারিয়ে যায়না। এটাও অনলাইনে “লোবাইভা মাম্মাহ” [অর্থঃআমার স্নেহের মা] নামে পাওয়া যায়। এটা রেকর্ডিং এর সময় আমরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম আর তখন খুবই আবেগঘন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল কারণ ভাই আবু নূহ এটা গাওয়ার সময় অনেক সংগ্রাম করেছিলেন কারণ যখনই তিনি তাঁর প্রিয় মাকে সম্বোধন করছিলেন তখনই তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন আর যেকেউ এটার অডিও শুনবে সে একথার প্রমাণ পাবে যে আমরা সত্য বলেছি। এছাড়াও, তাঁর অনেকগুলো কবিতা যা তিনি গেয়েছিলেন তার কিছু প্রকাশিত হয়েছে যখন আর কিছু প্রকাশের অপেক্ষায় ছিল এবং আরও অসংখ্য কবিতা তাঁর নোটবই এ ছিল যেগুলো গাওয়া হয়নি।
অধিকন্তু, তিনি জিহাদের স্কলারদের সাক্ষাৎকার নিতে খুবই উৎসাহী ছিলেন এবং তার মধ্যে একটা “ফরিদাতুল জিহাদ” শিরোনামে আমাদের মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে যেখানে আবু আবদুল্লাহ আল-সূরী(কাফাররুমাতের শরীয়াহ কাউন্সিলের সভাপতি) কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। এবং তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি জিহাদের ব্যাপক তাৎপর্যতার প্রতি সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিভিন্ন মিডিয়া কর্মকাণ্ডের পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন। এবং আমরা আল্লাহর কাছে চাই যে তাঁর ইচ্ছার কারণে তিনি তা তাঁর আমলনামার মানদণ্ডে যোগ করেন। অধিকন্তু, আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই যে তাঁর শাহাদাতের সংবাদ দাওয়ার কর্মকাণ্ডে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছিল। এটা সম্ভব, কারণ এটা পূর্বেও ঘটেছিল এবং তা বর্তমানেও ঘটছে। এটা বিশুদ্ধ সনদে বর্ণিত আছে হারাম ইবনে মিলহান মৃত্যুকালীন সময়ে ছুরিকাহত হয়েছিলেন, তিনি সেসময় বলেছিলেনঃ “কাবার রবের শপথ আমি সফল হয়েছি”। এবং আরও বর্ণিত আছে যে লোকটি তাঁকে হত্যা করেছিল পরে সে প্রশ্ন করেছিল “কিভাবে সে সফল হতে পারে, অথচ আমি তাকে হত্যা করেছি” আর এটা তাকে পরবর্তীতে ইসলাম গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করেছিল।
এখানে উপকারের বিষয় হল তাঁর ধৈয্য, দৃঢ়তা এবং শাহাদাতের প্রতি তীব্র ভালোবাসা যা হারাম ইবনে মিলহান প্রকাশ করেছিল পরবর্তীতে দাওয়ার একটি বড় উপকরণ হয়েছিল যা তাঁর হত্যাকারীকে ইসলাম গ্রহনের দিকে নিয়ে যায়।
অতঃপর যখন আমাদের ভাইদের(আবু নূহ এবং আবু তোরাব) শাহাদাতের খবর ও গল্প ছড়িয়ে পড়ল যে তাঁরা শাহাদাত অন্বেষণের আগে কি রকম ধৈয্যশীল এবং দৃঢ় ছিলেন, আর তা যখনই লোকদের কানে পৌঁছাল তখন তা যেন মৃত আত্মায় জীবন দেয়ার মত হল। ইসলাম এবং জিহাদের প্রতি তাদের হৃদয়ে ভালোবাসা যেন পুনর্জীবন পেল। আর আমাদের ভাইদের শাহাদতের খবর শুনার পর বিগত কয়েকদিনে আমরা অনেক ভাইকে প্রচুর উৎসাহমূলক জিহাদি কথাবার্তা বলতে দেখেছি। আর এভাবেই ভাইয়েরা যে এলাকায় থাকত সে এলাকায় আমরা জিহাদি যযবার পুর্ণজাগরণ দেখতে পেলাম এবং আমরা আল্লাহর কাছে চাই তিনি যেন তাঁদেরকে এজন্য উত্তম পুরষ্কার দেন। নিশ্চয়, তাঁরা তাঁদের কথার জন্য রক্ত দিয়ে জীবন দিয়েছেন এবং এই কথাগুলো মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করেছে যা পরবর্তীতে তাদেরকে অন্ধকারের মধ্যে যেখানে তারা হাবুডুবু খাচ্ছিল সেখান থেকে বের করে এনে নতুন জীবন দিয়েছে।
ইবাদতের প্রতি তাঁর নিষ্ঠা
আল্লাহর প্রতি আবু নূহের নিষ্ঠার বেলায়, আমি তাকে প্রায়ই সোম এবং বৃহস্পতি বারের সিয়াম পালন করতে দেখেছি যদিনা তাঁকে আঘাতের কারণে ওষুধ সেবন করতে হয়। তিনি সবসময় অযু অবস্থায় থাকতেন প্রচণ্ড শীতের রাতেও যখনই তাঁর অযু ভেঙ্গে যেত তিনি পুনরায় তাঁর অযু করে নিতেন যদিও সেখানে তখন বরফ শীতল পানি পাওয়া যেত। শুধু তাই নয়, তিনি আহত হয়ে নিজে হাঁটার অপারগতা স্বত্তেও অযু অবস্থায় থাকতেন। প্রতি রাতেই তিনি ইবাদতের জন্য উঠতেন এবং তিনি প্রচুর কান্নাকাটি করতেন আর এই বিষয়টি অনেক ভাইয়েরই দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আমি আমার কম্বলের নিচে ঘুমের ভান ধরে থাকতাম এবং আমি তাঁকে তাঁর খাটে সিজদায় কান্নারত অবস্থায় দেখতাম যেটা আমার পাশেই ছিল।এক ভাই বলেছিল আবু নূহকে ফজরের সালাতে অতিরিক্ত কান্নাবিহীন অবস্থায় পাওয়াটা খুবই অস্বাভাবিক। অধিকন্তু, তাকে রাতের সালাতে পাওয়া যেত যদিও তিনি আহত হয়ে দাঁড়াতে অপারগ ছিলেন তবুও। রাতের বেলায় তিনি এক ভাইকে বলতেন যে কিছু পানি তাঁর বিছানার পাশে রাখা হয় যাতে তিনি অযু করে রাতে বিছানায় বসে ইবাদত করতে পারেন। তিনি গোপনে তাঁর ভাইদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণের উপদেশ দিতেন এবং কেউ তাঁর কথায় প্রভাবিত না হয়ে থাকতনা। তিনি অর্থ ব্যয়ের বেলায় খুবই সচেতন থাকতেন এবং অপ্রয়োজনীয় কাজে অর্থ ব্যয় করতেননা যা তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর অসিয়াতে(অন্তিম ইচ্ছা) প্রতিফলিত হয়েছে, তাঁর অর্থ শুধু জিহাদের জন্য ব্যয় হবে এবং কোন অপ্রয়োজনীয় কাজের জন্য নয়। প্রত্যেক রাতে ঘুমানোর পূর্বে, তিনি তাঁর ফোন থেকে কিছু পড়তেন যা কি ছিল তা আমি খুঁজে পাইনি । যদি আমি তা জানতাম আমি এখানে তা তাঁর জীবনীতে লিখতাম। আমি তা কি ছিল তা জানার জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। এর থেকে বড় কথা হল তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলোতে তিনি ইবাদতের প্রতি আগের থেকে আরো বেশী দৃঢ় হয়েছিলেন।
তিনি জান্নাত উচ্চ মর্যাদা পাওয়ার জন্য খুব বেশী আগ্রহী ছিলেন। একদিন কিছু ভাই তাঁদের বন্ধুদের পূর্বেই নিজেদের শাহাদাত লাভের বাসনা নিয়ে কথা বলছিলেন এবং আবু নূহ বললেনঃ “আমি আসলে তেমন কিছু মনে করিনা যে আমি তোমাদের আগে অথবা পরে শহীদ হব যতক্ষন না আমি তোমাদের সকলের থেকে উচ্চ মর্যাদা না পাই” আর সবাই তখন হেসেছিল।
তিনি প্রায় সময় নিজের ভুলগুলো সংশোধন করার চেষ্টা করতেন। তিনি আল্লাহর জন্য কারো প্রতি ঘৃণা ছাড়া তাঁর ভাইদের প্রতি কোন ধরণের ঘৃণা থেকে নিজের হৃদয়কে পরিশুদ্ধ রাখতেন। নিশ্চয় তিনি ছিলেন সবচেয়ে বেশী সহনশীল একজন ভাই যিনি অন্যকারো দ্বারা নিজের কোন ক্ষতি হলে তা ক্ষমা করে দিতেন এবং তা উপেক্ষা করতেন আর এটা আমি খুবই আশ্চর্য্যজনকভাবে উপলব্ধি করেছি। যদিও তিনি বিপর্যস্ত থাকতেন তবুও তিনি ভাইদের সাথে হাশিখুশি থাকতেন এবং সবাইকে আনন্দ দিতেন।
আবু নূহ এবং বিদ‘আতিরা
তিনি বিদ‘আতিদেরকে চরম ঘৃণা করতেন। এর উদাহরণ হিসেবে জামা’ত আল বাগদাদীর প্রতি তাঁর ঘৃণা এমন ছিল যে তিনি সাধারণ মুসলিমদের উপর তাদের জুলুম থেকে প্রতিহত করার জন্য তাদের সাথে লড়াই করার ইচ্ছা পোষণ করতেন। তাঁর শেষ দিনগুলোতে, তিনি তাঁর এক ভাইকে দেইর আল-জের এ পৌঁছার রাস্তা জিজ্ঞেস করছিলেন যাতে তিনি সেখানে গিয়ে তিনি ঐসকল চরমপন্থি খাওয়ারিজদের সাথে লড়াই করতে পারেন। যেখানে প্রতিদিন আমাদের সুন্নাহর ভাইদেরকে তাদের জুলুম নির্যাতন সহ্য করতে হয়। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে জামা’ত আল বাগদাদী হল ঐদল যারা নিরপেক্ষ স্কলার, মুজাহিদিন এবং সাধারণ মুসলিমদের শান্তি প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করেছে। নিশ্চয় তারা হল একটি বুঘাত (সীমালংঘনকারী) দল, মুসলিমদের উপর যাদের সীমালংঘনকে অবশ্যই প্রতিহত করতে হবে এবং তাদের সাথে ততক্ষন পর্যন্ত লড়াই করতে হবে যতক্ষন না তারা আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে আসে। একইসাথে তারা এমন একটি দল যারা যেকোন নিরপেক্ষ শরঈ কোর্ট অথবা প্রতিথযশা ইলমের ছাত্রদের ফয়সালা প্রত্যাখ্যান করে, এবং তারা হল তইফা আল-মুমতানিয়া (প্রতিহত করা উচিৎ এমন দল) যারা বল প্রয়োগের মাধ্যমে নিরপেক্ষ শরঈ কোর্টের রায় প্রত্যাখ্যান করে। আল্লাহর শরীয়াহ অনুযায়ী তারা লড়াইযোগ্য একটি দল। কিন্তু শরঈ নীতি অনুযায়ী , আমাদের স্কলাররা তাদের সাথে আত্মরক্ষা ছাড়া লড়াই করার অনুমতি দেননি। আমাদের এখানে উল্লেখ করা দরকার যে আবু নূহ ঐধরণের লোকের অন্তর্ভুক্ত ছিলেননা যারা এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে আপত্তি করবে, কিন্তু তিনি এই সিদ্ধান্তে আসার আগে এই সম্মন্ধে স্কলারদের কাছে জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের উত্তর এবং তাঁদের ফতওয়া তালাশ করেছেন।
বিদ ‘আতিদের প্রতি আবু নূহের ঘৃণা শুধুমাত্র চরমপন্থি তাকফিরিদের প্রতিই সীমাবদ্ধ ছিলনা। পরন্তু তাঁর ঘৃণা প্রত্যেক সাধারন পথভ্রষ্টদের প্রতি ছিল। আধুনিক ইখওয়ানি, নতুন মুরজিয়াদের(তথাকথিত সালাফিয়াহ) প্রতিও তাঁর তীব্র ঘৃণা ছিল।
সুসংবাদের স্বপ্ন
আবু নূহ এবং অন্যান্য ভাইয়েরা তাঁকে নিয়ে অনেক সুন্দর স্বপ্ন দেখত, যাইহোক আমি এখন তার অনেকগুলোই ভুলে গেছি। কিন্তু আমি তার কিছু ইনশাআল্লাহ উল্লেখ করব। তারপূর্বে আমি এখানে উল্লেখ করতে চাই যে স্বপ্ন কোন দলিল নয় এবং কারো একটা নির্দিষ্ট স্বপ্ন দেখে তা সত্য বলে ধরে নেয়া উচিৎ নয়, প্রকৃতপক্ষে সত্যকে নির্ধারণ করতে হবে কোরআন এবং সুন্নাহর উপর যার বুঝ সালাফরা দিয়েছেন, আর যেকেউ তা অনুসরণ করবে সেই সত্যের উপর থাকবে। আর স্বপ্নের বেলায় তা শুধুমাত্র তাঁদের জন্য সুসংবাদ যারা সঠিক পথের উপর আছে। আর যে অন্যকোন পথে রয়েছে তার জন্য তা স্বপ্ন কোন কিছুইনা। এখন এখানে আবু নূহের অথবা তাঁর সম্মন্ধে তাঁর ভাইদের কিছু স্বপ্নের কথা উল্লেখ করা যাক।
সিরিয়াতে আমাদের প্রথম মাসে, আমাদের এক ভাই একটা স্বপ্ন দেখল যে আবু নূহ একটা শহীদি হামলা পরিচালনা করছেন আর তিনি এভাবেই শহীদ হলেন। তাই যে ভাই এই স্বপ্ন দেখছিল সে এবং অন্য আরেকভাই আবু নূহের চেহারা দেখতে গেল তখন তারা তাঁর চেহারাতে অনেক উজ্জ্বল আলোকচ্ছটা দেখতে পেলেন। তারপর তারা কবরস্থানে গেল যেখানে আবু নূহকে সমাহিত করা হয়েছে তারপর এক ভাই আবু নূহকে সালাম দিল এবং তিনি তাঁর কবর থেকে সালামের জবাব দিলেন। তাই দেখে যে ভাই স্বপ্নটি দেখছিল সেও তাঁকে সালাম দিল এবং আবার তিনি কবর থেকে সালামের জবাব দিলেন এবং বললেনঃ “এটাই আসল জীবন এবং আমি এখানে খুবই আনন্দিত। তাই নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর পথে জিহাদকে আঞ্জাম দিয়ে তাড়াতাড়ি আমি যে দুনিয়াতে আছি সেখানে আস”। [তার স্বপ্ন শেষ ]
একটা স্বপ্নে যেটা আবু নূহ নিজে দেখেছে যেখানে তাঁকে এবং আবু তালহা আল-সুরিকে একটা মাকড়সা কামড়াচ্ছে। আবু নূহকে তাঁর পায়ে কামড় দেয়া হয়েছিল। তারপর তিনি আকাশে উড়ে গিয়ে কুফফারদের সাথে লড়াই করছেন এবং তাদের অনেককে তাঁর অস্ত্র দিয়ে হত্যা করলেন তারপর তিনি নিজে শহীদ হয়ে গেলেন। এরপর তিনি যেসব কুফফারদের হত্যা করলেন তাদের চেহারা দেখতে গিয়ে দেখলেন সেগুলো কালো এবং খুবই বিশ্রী দেখাচ্ছে। কিন্তু আবু নূহের চেহারা শুভ্র এবং খুবই উজ্জল ছিল, তাই তিনি এক কাফিরকে জিজ্ঞেস করলেন ‘তুমি কি মৃত?’ এতে কাফিরটি জবাব দিল ‘আমিও মৃত এবং তুমিও মৃত’। কিন্তু আবু নূহের চেহারা উজ্জ্বল এবং শুভ্র পক্ষান্তরে কাফিরের চেহারা মলিন এবং কালো। আর আবু নূহ খেয়াল করল যে তাঁর দাড়ি আগের থেকে ছোট হয়ে গেছে। [তাঁর স্বপ্ন শেষ]
আবু নূহ এই স্বপ্ন দেখার পর তার সম্মন্ধে কথা বলেছিলেন (বাস্তব জীবনে)। তিনি এবং আবু তালহা উভয়ই একই লড়াইয়ে আহত হন আর আবু নূহ তাঁর পায়ে আঘাত প্রাপ্ত হন যেটা তাঁদের দুজনেরই স্বপ্নে দেখা মাকড়সার কামড়ের দিকে ইঙ্গিত করে। এবং তার কিছুদিন পর আবু নূহ এক দুর্ঘটনায় তাঁর দাড়ির অর্ধেক পুড়ে ফেলেন। তখন তিনি বলেছিলেনঃ “স্বপ্নে দেখা দুইটি বিষয় এর মধ্যেই সত্য হল (মাকড়সার কামড় ও দাড়ি ছোট হয়ে যাওয়া), তাই আমরা মনে হয় পরেরটা হয়তোবা আমার শাহাদাত হবে”। এবং একমাস যাওয়ার পূর্বেই তিনি শহীদ হলেন। উপরি উল্লেখিত তিনটি বিষয়ই একমাস সময়ের মধ্যে সংঘটিত হল এবং তিনি ছোট দাড়ি ও সদ্য সেরে উঠা পা নিয়ে শহীদ হলেন।
আরেকটি স্বপ্নে আবু নূহ দেখেছিলেন যে তিনি কুফফারদের সাথে লড়াইরত অবস্থায় একটি বিল্ডিং ছিলেন। তখন একটি মিসাইল বিল্ডিংটিতে আছড়ে পড়ল এবং তিনি ডানদিকে পড়ে গেলেন ও ‘লা ইলাহা ইল্লালাহ’ পাঠ করতে লাগলেন এবং তিনি শহীদ হয়ে গেলেন। [তাঁর স্বপ্ন শেষ] আর এটা বাস্তবতার সাথে খুবই সাদৃশ্যপূর্ণ কারণ আমরা যা জানি তা হল তাঁর শেষ মুহূর্তে তিনি একটি বিল্ডিং এর ভেতর থেকে কুফফারদের সাথে লড়াই করছিলেন আর ক্রমাগত বোমাবর্ষণের ফলে তা আবু নূহ সহ মাটিতে মিশে যায়।
মালদ্বীপে থাকাকালীন সময়ে অন্য একটি স্বপ্নে আবু নূহ দেখেছিলেন তিনি সউদি আরব গেলেন এবং সেখানের লোকজনকে বানরের মত দেখলেন এরপর তিনি অন্য একটি জায়গায় গেলেন যেখানের দেয়ালে তিনি ইসলামিক আলপনা দেখতে পেলেন। তিনি ঐজায়গায় গিয়ে খুবই খুশী এবং সন্তুষ্ট হলেন। তারপর তিনি ঐজায়গার নির্দেশিত একটি পথ ধরে চলতে লাগলেন যতক্ষণ না তিনি একটি খুবই সুন্দর জায়গায় গেলেন যেখানে অনেকগুলো বড় গেইট দেখতে পেলেন এবং তার চারপাশে লম্বা দাড়িওয়ালা অনেকগুলো সুন্দর যুবক দেখতে পেলেন। [তাঁর বাক্য শেষ]
যখন তিনি বাস্তব জীবনে সিরিয়া আসলেন, তিনি সিরিয়ার দেয়ালগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে বলছিলেন এইগুলো সেই দেয়াল যা তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন। এটা সম্ভব যে, যে পথ তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন তা জিহাদের পথ যা তাঁকে সিরিয়ায় নিয়ে এসেছে যতক্ষন না তিনি জান্নাতে না পৌঁছান।
অন্য একটি স্বপ্নে তিনি দেখলেন নবী সাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসতেছেন তাই তিনি তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য দৌড়ে গেলেন এবং দেখলেন তিনি যেখানে যাচ্ছিলেন সেখানে লোকজনের ভীড় হয়েছে। তখন তিনি সেখানে কি হয়েছে তা দেখতে গেলেন এবং নবী সাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাদের মাঝে দেখলেন, অতঃপর তিনি তাঁর(রাসুল) সাথে আলিঙ্গন এবং মুসাহাফা করলেন। তারপর আবু নূহ রাসুল(সাঃ) কে কিছু বলতে গেলেন কিন্তু তিনি ভুলে অন্যকিছু বলে ফেললেন যা শুনে রাসুল সাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসলেন। তারপর আবু রাসুল নূহ সাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাঁর জন্য দুয়া করতে বললেন তারপর তিনি(সাঃ) আল্লাহর কাছে ক্ষমা করার জন্য দুয়া করলেন। পরবরতী যে জিনিসটি আবু নূহ খেয়াল করলেন তাহল তাঁর উভয় হাঁটুর নিকটের পা থেকে আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে। [তাঁর কথা শেষ] অন্য আরেকজন ভাই বললেন এটা হয়ত তাঁর দুপায়ের হাঁটুর নিকট আঘাতকে নির্দেশ করছে এবং এটা তাঁর উপর ক্ষমার একটি নিদর্শন। আবু নূহ এই স্বপ্নটি যখন দেখেছিলেন তখনও তিনি মালদ্বীপে।
আরেকটি স্বপ্নে, আবু নূহ একদল সিংহ দেখেছিলেন তারপর দেখলেন তিনি রাসুল সাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশে থেকে লড়াই(একটা শত্রুর সাথে) করছেন। [তাঁর কথা শেষ]
তাঁর শাহাদাতের একদিন পর, আবু নূহের চার বছরের ছেলে ঘুম থেকে উঠে তার মাকে জিজ্ঞেস করলঃ “বাবা এখন আকাশে ঘুমাচ্ছে, তাই না?”। শিশুটি তাঁর শাহাদতের ব্যাপারে অজ্ঞ থাকার কারণে এই ধরনের প্রশ্ন করেছিল এবং পরে সে এটার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলল যে, সে স্বপ্নে তার বাবাকে আকাশে ঘুমাতে দেখেছে।
এর সাথে, তাঁর শাহাদাতের পর তাঁর মা একটি স্বপ্নে দেখলেন যে তিনি একটি অনুর্বর ভূমিতে তাঁর পরিবারের সবার সাথে আছেন। ঐভূমির মাঝখানে, অনেকগুলো কবর আছে এবং আবু নূহ সেখান হতে বের হয়ে আসছিলেন। তাঁর চাচাতো ভাই তাঁর হাত ধরে তাঁকে উপরে উঠাচ্ছেন। তারপর আবু নূহের স্ত্রী সেখনে দাঁড়িয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করলেনঃ “তুমি এখানে কি করে এলে?” তার জবাবে তিনি বললেনঃ “কোন কিছুর সাথে ঝুলে”। তারপর তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেনঃ “কি জন্যে?” তারপর তিনি হাসলেন এবং এমন কিছু বললেন যা তাঁর স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসার নির্দেশ করে। আর ঐসময়ে আবু নূহের মা তাঁর কাছে দৌড়ে গেলেন এবং তাঁকে জড়িয়ে ধরতে চাইলেন এর প্রতিউত্তরে আবু নূহ বললেনঃ “মা, আমি এখন খুবই অপরিচ্ছন্ন কারণ আমি রক্তে ভিজে জবজবে হয়ে আছি। আমি এখন যাচ্ছি”। [স্বপ্ন শেষ]
তাঁর মা ঐস্বপ্ন সম্পর্কে বলেন আবু নূহ নিজেকে অপরিচ্ছন্ন দেখেছিল কিন্তু প্রকৃতপক্ষে সে পুরোপুরি পরিষ্কার ছিল। তাঁর কাপড়, লম্বা দাড়ি, চুল সবকিছুই সাদা রঙের ছিল। এবং তিনি আরও যোগ করেন যে স্বপ্নে আবু নূহের চেহারায় একটি দুষ্ট হাসি লেগেছিল।
এছাড়াও আবু নূহকে নিয়ে দেখা আরও অনেক স্বপ্ন যা আমি এখন ভুলে গেছি। সময়ের সাথে সাথে আমি তা ভুলে গেছি কিন্তু সিরিয়ায় আমার প্রথম মাসগুলোতে, আমার ধারণা করতাম আবু নূহ আমাদের দলের মধ্যে প্রথম শহীদ হতে যাচ্ছে কারণ আমাদের সিরিয়ায় আসার পর থেকে বরাবরই তাঁর শাহাদাত নিয়ে অনেক সুন্দর স্বপ্ন দেখা গিয়েছিল।
একটি শহীদি হামলার সন্ধানে
তাঁর শাহাদাতের একমাস অথবা তার কিছু পূর্বে, আবু নূহ এবং আরেকজন ভাই শাইখ আবু সুলাইয়মান আল-মুহাজির হাফিযাহুল্লাহ (জাবাহাত আন-নুসরা এর শরীয়াহ কাউন্সিলের সদস্য) এর কাছে সুপারিশ করার জন্য গিয়েছিলেন যাতে করে তিনি তাঁর নাম শহীদি হামলায় অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি শাইখকে এটার সময় ত্বরান্বিত করার জন্য বললেন। শাইখ আবু সুলাইমান তাঁর(আবু নূহ) শাহাদাতের পর এটা নিয়ে টুইট করে বলেছিলেনঃ “তিনি রাহিমাহুল্লাহ কিছুদিন আগে আমার কাছে সুপারিশ করার জন্য এসেছিলেন যাতে তাঁর নাম শহীদি হামলায় লিখাতে পারেন। তিনি অনুসন্ধান করেছিলেন এবং শাহাদাত পেয়েছিলেন”
আবু তোরাব মালদ্বীপিয়ানের শহীদি হামলার দিন, যেদিন আবু নূহও শহীদ হয়েছিলেন, আবু নূহ আবু তোরাবের সাথে ঝগড়া করে বলেছিলেনঃ “ এটা ঠিক হচ্ছেনা, আমি তোমার আগেই শহীদি হামলার জন্য নাম লিখিয়েছি আর তুমি আমার আগেই তা পেয়ে যাচ্ছ ”। আর এটা এরকমই হল যে তাঁরা একই দিনই শহীদ হয়েছিলেন পার্থক্য হল শুধু কয়েক ঘণ্টা সময়ের ব্যবধান।
শাহাদাতের সন্ধানে
২৫শে মে ২০১৪, ভোর হওয়ার সাথে সাথে পর পর চারটি শহীদি হামলায় দুনিয়া কেঁপে উঠল এবং প্রত্যেকটি বিস্ফোরণে পুরো এলাকা ও তার চারপাশে প্রতিধ্বনিত হল। আবু তোরাব সিয়ামরত অবস্থায় শহীদ হল। তারপরের অপারেশন হল ইক্বতিহাম(ঝড়ো বেগে শত্রুর মধ্যে প্রবেশ) যাতে আবু নূহ অংশগ্রহণ করেছিলেন। এটা খুবই ভোরে সংঘটিত হয়েছিল এবং তাঁরা কেউই সকালের নাস্তাও করেননি। তাঁরা(মুজাহিদরা) কুফফারদের বিরুদ্ধে তীব্রভাবে লড়াই করে প্রবেশ করেছিল এবং নিকট সীমার মধ্যে একটার পর একটা বিল্ডিং তাদের হাত থেকে দখল নিচ্ছিলেন।
আবু নূহ সম্পর্কে বলা হয় তিনি খুব সাহসিকতার সাথে কুফফারদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন। একটি উদাহরণস্বরূপ, তিনি নিজেকে জমিনে কুফফারদের খুবই নিকটে নিয়ে যান এবং তাঁর AK47 থেকে তাদের উপর গুলি বর্ষণ শুরু করেছিলেন। তিনি একজন মৃত কুফফারের বুলেট নিয়ে তাঁর ভাইদের সাথে তা শেয়ারও করেছিলেন। যেসব ভাইয়েরা অপারেশনের পর নিরাপদে ফিরে এসেছিল তাঁদের মতে লড়াইটা আসলেই খুবই বিপদজনক মুকাবিলা ছিল।
আবু নূহ এবং কিছু ভাইয়েরা একটি বিল্ডিঙে প্রবেশ করেছিলেন। তাঁরা এটা দখল করে পরে সেখান থেকে আরেকটি দখল করার জন্য তার থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ময়দানের স্বাভাবিক বিভ্রান্তির কারণে ঘণ্টাখানেক পরে দেখা গেল যে আবু নূহ ঐ বিল্ডিং থেকে বের হয়নি। বিল্ডিঙের সামনে ঘোষণা করা হয়েছিল, যে কেউ ভিতরে থাকলে এখনই যাতে নেমে আসে কিন্তু তাতে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। কয়েক ঘণ্টা পার হওয়ার পরও ভাইয়েরা জানতেন যে তিনি নিশ্চয় নিখোঁজ কিন্তু সেখানে আর কোন বিল্ডিং ছিলনা, কারণ অনবরত গোলাবর্ষণের ফলে ঐ এলাকার আশপাশের সব বিল্ডিং ধ্বংস হয়ে গেছে। আবু নূহ শহীদ হয়েছিলেন। লড়াইয়ের পূর্বে তিনি যে শাহাদাতের সাক্ষ্য দিয়েছিলেনঃ “আজকের পর আমি আর ফিরে আসবনা। আমি চাইনা পাহাড়ারত অবস্থায় শহীদ হতে, বরঞ্চ আমি সম্মুখ সারিতে তীব্রভাবে শত্রুর সাথে লড়াই করে শহীদ হতে চাই”।
আর এটাই ছিল এই মহান লোকটি সম্মন্ধে কিছু কথা যা আমরা একত্রিত করতে পেরেছি কিন্তু যার মর্যাদা এই কিছু মূল্যহীন কথার দ্বারা দেয়া সম্ভব নয়, আর কেউই ভুলের উর্দ্ধে নয়। পানি যা সমুদ্রে গিয়ে মিলিত হয় সামান্য ময়লা পড়ার ফলে তা তেমন নষ্ট হয়না। মহান মানুষ ছোট-খাট ত্রুটির কারণে তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়না। আমরা আল্লাহর কাছে চাই, তিনি যেন আবু নূহ এবং অন্যান্য শহীদদের জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা দেন এবং আমাদেরকে যেন তিনি সেই রহমত থেকে বঞ্চিত না করেন যা তিনি তাঁদের উপর করেছেন। নিশ্চয় আমাদের প্রিয় ভাইয়েরা শাহাদাত অন্বেষণে আমাদেরকে পরাজিত করেছেন এবং আমরা আল্লাহর কাছে চাই যে, আল্লাহ যেন তাঁকে সেইসকল লোকের সাথে অন্তর্ভুক্ত করেন যাঁরা তাঁর নিকটস্থ। এবং আমরা আল্লাহর কাছে চাই যে, তিনি যেন আমাদেরকে তাঁর পথে নিষ্ঠার সাথে, পিছনে না ফিরে, রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আক্বিদাহ এবং মানহাজের উপর শিরক এবং বিদআত মুক্ত অবস্থায় শহীদ হিসেবে কবুল করেন।
লেখকঃ আবু দুজানাহ আল-মালদ্বীপি
আবু নূহ সম্মন্ধে তিনি যা জানেন এবং যা দেখেছেন তার আলোকে
১ জুন ২০১৪
বিলাদ আল-শাম মিডিয়া(সিরিয়াতে মালদ্বীপিয়ানরা)
http://www.biladalsham.wordpress.com
@BiladAlSham_Dhi.
Comment