শাইখ আবু মুহাম্মাদ আসিম আল মাকদিসির (দা.বা.) সাক্ষাতকার এবং তাঁর জীবনি"
এনএম: দয়া করে কি আমদের পাঠকদের সামনে আপনার পরিচয় তুলে ধরবেন?
শায়খ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি প্রশংসার উপযুক্ত। দুরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূলের উপর এবং যারা তাকে সাহায্য করে তাদের উপর।
১৩৭৮ হিজরীতে (১৯৫৯ ইংরেজী) ফিলিস্তিনের নাবলুসে আমার জন্ম। যখন আমার বয়স ৩ অথবা ৪ হবে সে শহর ছেড়ে আমি আমার পরিবারের সাথে কুয়েতে স্থায়ি হই, এবং এখানেই হাই স্কুল পর্যন্ত পড়ালেখা শেষ করি। আমার লক্ষ্য ছিল মদিনার ইসলামিক ইউনিভার্রসিটিতে পড়ালেখা করার, কিন্তু আমার পিতা মাতাকে খুশি করতে এরপর আমি নর্দান ইরাকের মসুল ইউনিভার্রসিটিতে সাইন্স পড়তে চলে যাই। এটা সেই সময়ের কথা যখন আমি ইসলামের ব্যাপারে আমার প্রবল আগ্রহ/ চেতনা খুজে পাই এবং অনেক গ্রুপের সাথেও আমার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। আমি ভুলতে পারব না সেসব ভাই শায়খদের সাহায্যের কথা। আমি কুয়েত ও হিজাজে সফর করেছি যেখানে শিক্ষাবিদ ও শায়খদের সাথে আমার সুসম্পর্ক ছিল যারা আমাকে ইসলামিক জ্ঞান আহরণের মন্ত্র শিক্ষা দিয়েছেন। যাইহোক, তারা আমার পিপাসা প্রশমিত করতে পারলেন না সেসব প্রশ্নের ব্যাপারে যা মুসলিম যুবকদের চাহিদা, যেমন সঠিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিজ্ঞান, কিভাবে সঠিক লিগ্যাল রুলিং বর্তমান শাসন ব্যবস্থায় প্রতিষ্টা করতে হবে, আমাদের সময়ের শাসকদের ব্যাপারে আমাদের সত্যিকার অবস্থান কি, এবং সঠিক পথের দিশা যা উম্মাহর বর্তমান বাস্তবতার পরিবর্তন আনবে ইত্যাদি। একারণে, আমি একনিষ্ঠতার সাথে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া ও তার ছাত্র ইবনুল কায়্যিমের বই পড়তে নিমগ্ন হই।
উপরন্তু, আমার মদীনায় সফরের সময়ে আমি অনুরাগী হয়ে যাই মোহাম্মাদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাবের বই, তার ছাত্র, ছেলে ও নাতীদের প্রতি এবং নাজদি দাওয়াহর ইমামদের প্রতি, যা সেখানকার পাবলিক ও প্রাইভেট লাইব্রেরীগুলোকে সমৃদ্ধ করেছে। এসব বইয়ের স্টাডিতে দীর্ঘ সময় ব্যয় করি। পরবর্তীকালে আমার পথ চলায় এসব বইয়ের ভীষণ প্রভাব ছিল। আমি পাকিস্থান ও আফগানিস্তানেও সফর করেছি এবং সেখানে আমি মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মুসলিম ভাই ও ইসলামিক গ্রুপের সাথে মিলিত হই। আমি সেখানে কিছু শিক্ষামূলক ও দাওয়াহ কাজে জড়িত ছিলাম। সেখানে অবস্থানকালে “মিল্লাতে ইবরাহীম” একটি বই রচনা করি।
এছড়া মুকাফফিরাদের সাথেও আমার বিতর্ক হয় যার ফলে কিছু পান্ডুলিপির সংকলন হয় যা এখনও অপ্রকাশিত রয়ে গেছে। কিছু ইরজায়ী দলের সাথেও আমার বিতর্ক ও মোকাবিলা হয়েছে, যার ফলে কিছু বই বেরিয়ে এসেছে যেমন “Delighting the Sight with Unveiling the Scepticism of Contemporary Murji’at”.
ফাইনালি আমি ১৯৯২ সালে জর্ডানে সেটেল হই, তা ছিল আমার গ্রেফতারির দুই বছর পূর্বে। আমি দেখলাম এদেশ ইরজায়ী লোকে কিলবিল করছে যারা আনন্দের সাথে এর উপর প্রলাপ বকে যাচ্ছে। তিনটি ভিন্ন স্থানে শিক্ষকতার মাধ্যমে আমি এ পবিত্র দাওয়াহ শুরু করি। দুটি ছিল সর্বসাধারণে ও একটি খাস। পাঠে গুরুত্ত দেওয়া হয় তাওহীদের ধারণা, তার তাৎপর্য ও বাধ্যবাধকতা উপর; লা ইলাহা ইইল্লাল্লাহকে তার শর্তের সাথে – যেমন কিসে তা বাতিল করে ও কি তার শক্তিশালী অংগীকার। পাঠে ইরজায়ী গ্রুপেরও মোকাবিলা করা হয় তাদের উপস্থাপিত সংশয়বাদকে খন্ডণ করার মাধ্যমে। এছাড়া আরো অনেক গুরুত্তপুর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে অনেক মানুষ যে ব্যাপারে অজ্ঞ। এসব পাঠ আইন-পরিষদের নির্বাচনের সময় দেয়া হচ্ছিল। সুতরাং, আমার ছাত্র এবং গণতন্ত্র ও ইলেকশানের সমর্থকদের মধ্যে বিতর্ক জ্বলে উঠল। প্রয়োজন ছিল এ ইস্যুকে স্পষ্ট করার। আর তাই এ বিষয়ের উপর একটি প্রবন্ধ লিখে ঐ লোকদের দ্বারা উপস্থাপিত অত্যন্ত সুপরিচিত সন্দেহের খন্ডণে আমি উদ্যেগী হলাম। তাড়াহুড়োর মধ্যে তৈরি ঐ প্রবন্ধের নাম দিলাম “ডেমোক্রেসি একটি ধর্ম, আর কেউ যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম খুজে তা কখনো আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য হবে না”। এই প্রবন্ধ প্রিন্ট করে আমরা তা বিলি করতে থাকি। তাছাড়া আমি একটি জুম’য়া খুতবায় তাওহীদের দাওয়াহর নিয়ে ব্যাখ্যা করলাম, এবং তাতে মানুষকে সরাসরি আহবান করলাম মানব তৈরি আইনের সমালোচনা করতে, আইন পরিষদকে অস্বীকার করতে ও তাতে অংশ না নিতে।
আমি ব্যগ্র ছিলাম আমাদের দাওয়াহকে ছড়িয়ে দিতে, তাই আমি ও সাথি ভাইয়েরা দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিনাঞ্চলে প্রচুর সফর করলাম। কিছু ভাই যারা আফগান জিহাদে শরীক হয়েছিলেন তাদের সাথেও দেখা করলাম, আর ভালো দাওয়ার কাজও হয়ে গিয়েছিল। আমাদের রচনাসমূহ তাদেরকে দিলাম এবং আহবান করলাম বেরিয়ে এসে দাওয়ার কাজে জোর দিতে। এই দাওয়ার বয়স নতুন হওয়ার পরও তা সিকিউরিটি অফিসারদের নজর কাড়ল। তাছাড়া এই দাওয়াহ ইরজায়ী দলগুলো ও সরকারী অফিসারদের জন্যও অসহ্য হয়ে দাড়াল। তাই প্রত্যেক দলই এই দাওয়াহর মোকাবেলা করতে লাগল ধূর্ততার সাথে। সরকারী কর্মচারীরা অত্যন্ত আগ্রহের সাথে দাওয়াহর ইমেজকে বিকৃত করতে নিয়োজিত হল। তারা আমাদের ভাইদেরকে বিভিন্ন খেতাবে অভিযুক্ত করতে লাগল যেমন ‘তাকফিরি’ বা ‘চরমপন্থি’ ইত্যাদি, যা সাধারণত সত্যপন্থীদেরকে অবমাননা করতে ইরজায়ীরা গ্রুপরা ব্যবহার করে থাকে।
এরপর গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের ভাইদের একে একে গ্রেফতার করা শুরু করল। তারা জিজ্ঞেস করত আমাদের দাওয়াহর ব্যাপারে, আমার ব্যাপারে, আমার দেয়া পাঠদানের পদ্ধতি সম্পর্কে এবং আমি কোন আদর্শের দাওয়াত দিচ্ছি তার ব্যাপারে। এসব ঘটনা আমার জন্য স্বাভাবিক ছিল এমনকি আমি আশা ও অপেক্ষা করছিলাম যে, যে কোন সময় তা ঘটতে পারে যেহেতু এই পথের প্রকৃতিই এটা। আল্লাহর শত্রুরা যে কোন দল বা অর্গানাইজেশনকে মেনে নিতে পারে যে পর্যন্ত না তারা ইরজায়ী মতের উপর থাকে, তাই তারা গ্রেফতারকৃত আমাদের কিছু ভাইদের জিজ্ঞেস করত: “তোমরা যা শিখার তা আলি আল-হালাবী, আবু শাকরাহ অথবা আল-আলবানী ও অন্যান্যদের কাছ থেকে কেন শিখ না? এসব শায়খদের তোমরা কি এক সন্ত্রাসীর জন্য পরিত্যাগ করছ?”
এমন দাওয়াহ যা রাসূলদের পথ অনুসরণ করে, ইবরাহীমের ধর্মমতের উপর প্রতিষ্টিত হয় এবং তাওহীদকে তুলে ধরে তা কখনো একাকী ছেড়ে দেওয়া হয় না। আর এ দাবির স্বীকৃতি দেয় নবুওয়াতের শুরুর সময়ে রাসূল সা. কে বলা ওয়ারাকা ইবনে নওফেলের উক্তি: “আপনার পুর্বের কোন ব্যক্তিই ( ie. রাসূল) বহন করেননি ( ওহী) বিরোধিতার সম্মুখীন হওয়া ছাড়া ও শত্রু হিসেবেই তাদের সাথে আচরণ করা হয়েছে।” অতএব, যার আল্লাহর শত্রুদের বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয় না, সে আসলে প্রকৃত বাণী বহন করছে না এবং অবশ্যই তার মাঝে নির্দিষ্ট কিছুর ঘাটতি, বিচ্যুতি অথবা পথভ্রষ্টতা রয়েছে। সন্দেহাতীতভাবে, আমাদের দাওয়াহর মত দাওয়াহ এদেশে এখনও শিশুকালে রয়েছে; এটাকে আরো গবেষণার প্রয়োজন এবং এটাকে আরো জোরদার ও উন্নত করবে এর সংস্কার এবং এটাকে স্থির করবে পবিত্রতাকে নিয়ে এসে অপবিত্রতাকে পৃথক করার মাধ্যমে।
আমি ও আমার সাথীরা আত্তসমর্পণ না করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
সাত সাতবার আমার ঘর ভাংগা হয় আমাকে গ্রেফতার করার জন্য। দরজা ভেংগে আমার ঘর সার্চ করা হয়, প্রচুর বই, ডকুমেন্ট, লেখা এবং যা কিছু তাদের সামনে আসে ক্রোক করা হয়। প্রত্যেক রেইডে, তারা ডিমান্ড করত আমি যেন এসে ধরা দেই।
অবশেষে, আমি একদল ভাইয়ের সাথে গ্রেফতার হই, এদের মধ্যে কিছু ভাই পূর্বে আমার কাছে ফতোয়া চেয়েরছিল নদী অতিক্রম করে (প্যালেষ্টাইনে) এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের মাধ্যমে গোপন অপারেশ করার জন্য যা আমি তাদের করতে দেইনি। যদিও আমি এসব অপারেশনের বিরোধী নই তবুও আমি বলি বর্তমান অবস্থায় তাওহীদের দাওয়াত দেয়া, ধৈর্য ধরা এবং এজন্য সংগ্রাম করে যাওয়া এদেশের জন্য বেশি উপযুক্ত। এর কারণ হল যে এধরনের অপারেশনের (ইহুদীদের বিরুদ্ধে) প্রচুর সমর্থক রয়েছে, বিশেষ করে এদেশে, ফিলিস্তিনের সাথে ভৌগলিক অবস্থানের কারনে। পক্ষান্তরে যারা কুফরের ইমামদের সাথে অস্ত্রের মাধ্যমে যুদ্ধের জন্য তৈরি হচ্ছে তাদের মাঝে তাওহীদের দাওয়াহর সমর্থক অত্যন্ত কম। বাস্তবতা হল এই বিশ্বাসঘাতকরা ‘ইসরাঈলে’ ও যারা তা রোপণ করেছে মুসলিম বিশ্বের বুকের মধ্যে তাদের গার্ড, আর তারা পূর্ব ও পশ্চিমের কুফফারদের জন্য সম্ভবপর করেছে আমাদের সম্পদ ও সৌভাগ্য শুষে নিতে।
নিশ্চয়ই আল্লাহ সত্য প্রকাশ করেছেন:
তারা তার ক্ষতি করতে চাইল, অতঃপর আমি তাদেরকেই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ করে দিলাম। (২১:৭০)
এই গ্রেফতারীর কারণে এবং আল্লাহর শত্রুরা এ ইস্যুকে ষড়যন্ত্র করে বড় করে দেখানোয়, তাদের মিডিয়া ও প্রতিষ্টানের মাধ্যমে হইচই ফেলে দেয়ায়, তা আল্লাহর রহমতে আমাদের দাওয়াহকে দ্রুততার সাথে প্রকাশ ও প্রসারে সাযাহ্য করল। নিশ্চয়ই, খারাপ সময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক ভালো সাহায্য প্রকাশ পায় যা সাধারন অবস্থায় প্রকাশিত হয় না। আল্লাহ আমাদেরকে পথ দেখিয়েছেন এবং আমাদের অন্তরকে গ্রেফাতারীর শুরু থেকেই অবিচল রেখেছেন। আমরা তাগুত ও তাদের আইনের প্রতি নিজেদের নিষ্কলুষতা ঘোষণা করলাম, কোন ধরনের মোসাহেবি ও চতুরতা ছাড়াই। জেলে ও কোর্টরুমে আমাদের অবস্থান ভালো হতে লাগল নিয়মিত খোতবা, লেখা ও পাঠদানের মাধ্যমে যা কার্যকরভাবে আল্লাহর শত্রুদের ক্রোধান্বিত করছিল, যারা তাদের আক্রোশ বাড়িয়ে দিত ঐসব লোকদের প্রতি যারা আমাদের জানত, আমাদের বই পড়ত অথবা কোনভাবেই আমাদের সাথে সম্পর্ক ছিল।
ফলে, আমাদের ভাইয়েরা সিক্রেট সার্ভিসের গোপন বন্দিশালায় বাস করতে লাগলেন, বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পুর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় এমন সময় ব্যয় করলেন যা তাদের পূর্বে দুএকজন ছাড়া এদেশের আর কোন বন্দির বেলায় ঘটেনি। কেউ পুরো একবছর এভাবে রইলেন, অন্যরা কমপক্ষে ছয় মাস রইলেন। কর্তিপক্ষ দ্বারা বিভন্ন ধরনের শারিরিক ও মানসিক টর্চারের শিকার হলেন। তাদেরকে বাধ্য করা হল অনেক ভাইকে লুকিয়ে রাখতে যখন ইন্ট্যারন্যাশনাল কিছু অর্গানাইজেশন অনিয়মিত ভিজিটে আসত।
যাইহোক, এটা ছিল একটি অনন্য ও পবিত্র অভিজ্ঞতা যা অনেক ভাইকে শক্তিশালী করেছে। এরপর আমাদেরকে গোপন বন্দিশালা থেকে বের করে প্রিজন সেলে স্থানান্তর করা হল। আমাকেত উত্তরে ‘কাফকাফা’ জেলে প্রেরণ করা হয় যখন অধিকাংশ ভাইদেরকে দক্ষিণে সেন্ট্রাল জেল ‘সুয়াকা’য় পাঠানো হয়। তাদের এই প্লান ছিল তাদের অভিলাষ আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দুর্বল করা থেকে। ۖ তারা যেমন ছলনা করত তেমনি, আল্লাহও ছলনা করতেন। বস্তুতঃ আল্লাহর ছলনা সবচেয়ে উত্তম। (৮:৩০) জেলে পা দেয়ার মূহুর্ত থকেই আমি আগ্রহের সাথে আমার দাওয়াহ শুরু করলাম। তাই আমি কিছু রচনা লেখা শুরু করলাম যা ঐ সিরিজের অংশ ছিল যার নাম দিয়েছিলাম “হে কারাগারের দুই সঙ্গী! পৃথক পৃথক অনেক উপাস্য ভাল, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ?” (১২:৪৯ আয়াত থেকে নেয়া)। আমি বিভিন্ন সাবজেক্ট সেখানে অন্তর্ভূক্ত করি যেমন তাওহীদ, ইবরাহীমের পথ, ইবাদাত, বহু ইশশরবাদ ইত্যাদি। বন্দীদের মাঝে আমি এই বুকলেটগুলো বিলির চেষ্টা করি। এমনকি, কোন কোন রিলিজের সময় তা বাইরে নিয়ে যায়। জেলের বাইরে এসব বুকলেট তারা আমার নাম দিয়ে ছাপিয়ে দেয়। এটা নিশ্চিতভাবে আল্লাহর শত্রুদের ক্রুদ্ধ করেছিল, এমতাবস্থায় কিছু মুক্ত ভাইয়েরা আমার লেখা সংগ্রহ করতে বন্দি ভাইদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন। পরবর্তীকালে, আল্লাহ নির্ধারিত করে দিয়েছিলেন, এসব সাবেক বন্দীরা জর্ডানিয়ান ইন্টেলিজেন্স অফিসের একটি অফিসে সশস্ত্র আক্রমণের অন্যতম সহযোগী হয়েছিল, তাদের কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছিল এবং তারা স্বীকার করে জেলে আমার সাথে তাদের দেখা হয়, পরিচয় হয়। আমার কিছু রচনাও তাদের কাছে পাওয়া যায়। পরাক্রমশালী আল্লাহ এই ঘটনাকে একটি হেতু বানালেন আমাকে আমার ভাইদের সাথে পুনরায় মিলিত করতে। এই ঘটনার পরপরই আমাকে দক্ষিণের সেন্ট্রাল জেলে প্রেরণ করা হয়।
এনএম: দয়া করে কি আমদের পাঠকদের সামনে আপনার পরিচয় তুলে ধরবেন?
শায়খ: সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর যিনি প্রশংসার উপযুক্ত। দুরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূলের উপর এবং যারা তাকে সাহায্য করে তাদের উপর।
১৩৭৮ হিজরীতে (১৯৫৯ ইংরেজী) ফিলিস্তিনের নাবলুসে আমার জন্ম। যখন আমার বয়স ৩ অথবা ৪ হবে সে শহর ছেড়ে আমি আমার পরিবারের সাথে কুয়েতে স্থায়ি হই, এবং এখানেই হাই স্কুল পর্যন্ত পড়ালেখা শেষ করি। আমার লক্ষ্য ছিল মদিনার ইসলামিক ইউনিভার্রসিটিতে পড়ালেখা করার, কিন্তু আমার পিতা মাতাকে খুশি করতে এরপর আমি নর্দান ইরাকের মসুল ইউনিভার্রসিটিতে সাইন্স পড়তে চলে যাই। এটা সেই সময়ের কথা যখন আমি ইসলামের ব্যাপারে আমার প্রবল আগ্রহ/ চেতনা খুজে পাই এবং অনেক গ্রুপের সাথেও আমার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। আমি ভুলতে পারব না সেসব ভাই শায়খদের সাহায্যের কথা। আমি কুয়েত ও হিজাজে সফর করেছি যেখানে শিক্ষাবিদ ও শায়খদের সাথে আমার সুসম্পর্ক ছিল যারা আমাকে ইসলামিক জ্ঞান আহরণের মন্ত্র শিক্ষা দিয়েছেন। যাইহোক, তারা আমার পিপাসা প্রশমিত করতে পারলেন না সেসব প্রশ্নের ব্যাপারে যা মুসলিম যুবকদের চাহিদা, যেমন সঠিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার পরিজ্ঞান, কিভাবে সঠিক লিগ্যাল রুলিং বর্তমান শাসন ব্যবস্থায় প্রতিষ্টা করতে হবে, আমাদের সময়ের শাসকদের ব্যাপারে আমাদের সত্যিকার অবস্থান কি, এবং সঠিক পথের দিশা যা উম্মাহর বর্তমান বাস্তবতার পরিবর্তন আনবে ইত্যাদি। একারণে, আমি একনিষ্ঠতার সাথে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া ও তার ছাত্র ইবনুল কায়্যিমের বই পড়তে নিমগ্ন হই।
উপরন্তু, আমার মদীনায় সফরের সময়ে আমি অনুরাগী হয়ে যাই মোহাম্মাদ ইবনে আবদুল ওয়াহহাবের বই, তার ছাত্র, ছেলে ও নাতীদের প্রতি এবং নাজদি দাওয়াহর ইমামদের প্রতি, যা সেখানকার পাবলিক ও প্রাইভেট লাইব্রেরীগুলোকে সমৃদ্ধ করেছে। এসব বইয়ের স্টাডিতে দীর্ঘ সময় ব্যয় করি। পরবর্তীকালে আমার পথ চলায় এসব বইয়ের ভীষণ প্রভাব ছিল। আমি পাকিস্থান ও আফগানিস্তানেও সফর করেছি এবং সেখানে আমি মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মুসলিম ভাই ও ইসলামিক গ্রুপের সাথে মিলিত হই। আমি সেখানে কিছু শিক্ষামূলক ও দাওয়াহ কাজে জড়িত ছিলাম। সেখানে অবস্থানকালে “মিল্লাতে ইবরাহীম” একটি বই রচনা করি।
এছড়া মুকাফফিরাদের সাথেও আমার বিতর্ক হয় যার ফলে কিছু পান্ডুলিপির সংকলন হয় যা এখনও অপ্রকাশিত রয়ে গেছে। কিছু ইরজায়ী দলের সাথেও আমার বিতর্ক ও মোকাবিলা হয়েছে, যার ফলে কিছু বই বেরিয়ে এসেছে যেমন “Delighting the Sight with Unveiling the Scepticism of Contemporary Murji’at”.
ফাইনালি আমি ১৯৯২ সালে জর্ডানে সেটেল হই, তা ছিল আমার গ্রেফতারির দুই বছর পূর্বে। আমি দেখলাম এদেশ ইরজায়ী লোকে কিলবিল করছে যারা আনন্দের সাথে এর উপর প্রলাপ বকে যাচ্ছে। তিনটি ভিন্ন স্থানে শিক্ষকতার মাধ্যমে আমি এ পবিত্র দাওয়াহ শুরু করি। দুটি ছিল সর্বসাধারণে ও একটি খাস। পাঠে গুরুত্ত দেওয়া হয় তাওহীদের ধারণা, তার তাৎপর্য ও বাধ্যবাধকতা উপর; লা ইলাহা ইইল্লাল্লাহকে তার শর্তের সাথে – যেমন কিসে তা বাতিল করে ও কি তার শক্তিশালী অংগীকার। পাঠে ইরজায়ী গ্রুপেরও মোকাবিলা করা হয় তাদের উপস্থাপিত সংশয়বাদকে খন্ডণ করার মাধ্যমে। এছাড়া আরো অনেক গুরুত্তপুর্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে অনেক মানুষ যে ব্যাপারে অজ্ঞ। এসব পাঠ আইন-পরিষদের নির্বাচনের সময় দেয়া হচ্ছিল। সুতরাং, আমার ছাত্র এবং গণতন্ত্র ও ইলেকশানের সমর্থকদের মধ্যে বিতর্ক জ্বলে উঠল। প্রয়োজন ছিল এ ইস্যুকে স্পষ্ট করার। আর তাই এ বিষয়ের উপর একটি প্রবন্ধ লিখে ঐ লোকদের দ্বারা উপস্থাপিত অত্যন্ত সুপরিচিত সন্দেহের খন্ডণে আমি উদ্যেগী হলাম। তাড়াহুড়োর মধ্যে তৈরি ঐ প্রবন্ধের নাম দিলাম “ডেমোক্রেসি একটি ধর্ম, আর কেউ যদি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম খুজে তা কখনো আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য হবে না”। এই প্রবন্ধ প্রিন্ট করে আমরা তা বিলি করতে থাকি। তাছাড়া আমি একটি জুম’য়া খুতবায় তাওহীদের দাওয়াহর নিয়ে ব্যাখ্যা করলাম, এবং তাতে মানুষকে সরাসরি আহবান করলাম মানব তৈরি আইনের সমালোচনা করতে, আইন পরিষদকে অস্বীকার করতে ও তাতে অংশ না নিতে।
আমি ব্যগ্র ছিলাম আমাদের দাওয়াহকে ছড়িয়ে দিতে, তাই আমি ও সাথি ভাইয়েরা দেশের উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিনাঞ্চলে প্রচুর সফর করলাম। কিছু ভাই যারা আফগান জিহাদে শরীক হয়েছিলেন তাদের সাথেও দেখা করলাম, আর ভালো দাওয়ার কাজও হয়ে গিয়েছিল। আমাদের রচনাসমূহ তাদেরকে দিলাম এবং আহবান করলাম বেরিয়ে এসে দাওয়ার কাজে জোর দিতে। এই দাওয়ার বয়স নতুন হওয়ার পরও তা সিকিউরিটি অফিসারদের নজর কাড়ল। তাছাড়া এই দাওয়াহ ইরজায়ী দলগুলো ও সরকারী অফিসারদের জন্যও অসহ্য হয়ে দাড়াল। তাই প্রত্যেক দলই এই দাওয়াহর মোকাবেলা করতে লাগল ধূর্ততার সাথে। সরকারী কর্মচারীরা অত্যন্ত আগ্রহের সাথে দাওয়াহর ইমেজকে বিকৃত করতে নিয়োজিত হল। তারা আমাদের ভাইদেরকে বিভিন্ন খেতাবে অভিযুক্ত করতে লাগল যেমন ‘তাকফিরি’ বা ‘চরমপন্থি’ ইত্যাদি, যা সাধারণত সত্যপন্থীদেরকে অবমাননা করতে ইরজায়ীরা গ্রুপরা ব্যবহার করে থাকে।
এরপর গোয়েন্দা সংস্থা আমাদের ভাইদের একে একে গ্রেফতার করা শুরু করল। তারা জিজ্ঞেস করত আমাদের দাওয়াহর ব্যাপারে, আমার ব্যাপারে, আমার দেয়া পাঠদানের পদ্ধতি সম্পর্কে এবং আমি কোন আদর্শের দাওয়াত দিচ্ছি তার ব্যাপারে। এসব ঘটনা আমার জন্য স্বাভাবিক ছিল এমনকি আমি আশা ও অপেক্ষা করছিলাম যে, যে কোন সময় তা ঘটতে পারে যেহেতু এই পথের প্রকৃতিই এটা। আল্লাহর শত্রুরা যে কোন দল বা অর্গানাইজেশনকে মেনে নিতে পারে যে পর্যন্ত না তারা ইরজায়ী মতের উপর থাকে, তাই তারা গ্রেফতারকৃত আমাদের কিছু ভাইদের জিজ্ঞেস করত: “তোমরা যা শিখার তা আলি আল-হালাবী, আবু শাকরাহ অথবা আল-আলবানী ও অন্যান্যদের কাছ থেকে কেন শিখ না? এসব শায়খদের তোমরা কি এক সন্ত্রাসীর জন্য পরিত্যাগ করছ?”
এমন দাওয়াহ যা রাসূলদের পথ অনুসরণ করে, ইবরাহীমের ধর্মমতের উপর প্রতিষ্টিত হয় এবং তাওহীদকে তুলে ধরে তা কখনো একাকী ছেড়ে দেওয়া হয় না। আর এ দাবির স্বীকৃতি দেয় নবুওয়াতের শুরুর সময়ে রাসূল সা. কে বলা ওয়ারাকা ইবনে নওফেলের উক্তি: “আপনার পুর্বের কোন ব্যক্তিই ( ie. রাসূল) বহন করেননি ( ওহী) বিরোধিতার সম্মুখীন হওয়া ছাড়া ও শত্রু হিসেবেই তাদের সাথে আচরণ করা হয়েছে।” অতএব, যার আল্লাহর শত্রুদের বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয় না, সে আসলে প্রকৃত বাণী বহন করছে না এবং অবশ্যই তার মাঝে নির্দিষ্ট কিছুর ঘাটতি, বিচ্যুতি অথবা পথভ্রষ্টতা রয়েছে। সন্দেহাতীতভাবে, আমাদের দাওয়াহর মত দাওয়াহ এদেশে এখনও শিশুকালে রয়েছে; এটাকে আরো গবেষণার প্রয়োজন এবং এটাকে আরো জোরদার ও উন্নত করবে এর সংস্কার এবং এটাকে স্থির করবে পবিত্রতাকে নিয়ে এসে অপবিত্রতাকে পৃথক করার মাধ্যমে।
আমি ও আমার সাথীরা আত্তসমর্পণ না করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
সাত সাতবার আমার ঘর ভাংগা হয় আমাকে গ্রেফতার করার জন্য। দরজা ভেংগে আমার ঘর সার্চ করা হয়, প্রচুর বই, ডকুমেন্ট, লেখা এবং যা কিছু তাদের সামনে আসে ক্রোক করা হয়। প্রত্যেক রেইডে, তারা ডিমান্ড করত আমি যেন এসে ধরা দেই।
অবশেষে, আমি একদল ভাইয়ের সাথে গ্রেফতার হই, এদের মধ্যে কিছু ভাই পূর্বে আমার কাছে ফতোয়া চেয়েরছিল নদী অতিক্রম করে (প্যালেষ্টাইনে) এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের মাধ্যমে গোপন অপারেশ করার জন্য যা আমি তাদের করতে দেইনি। যদিও আমি এসব অপারেশনের বিরোধী নই তবুও আমি বলি বর্তমান অবস্থায় তাওহীদের দাওয়াত দেয়া, ধৈর্য ধরা এবং এজন্য সংগ্রাম করে যাওয়া এদেশের জন্য বেশি উপযুক্ত। এর কারণ হল যে এধরনের অপারেশনের (ইহুদীদের বিরুদ্ধে) প্রচুর সমর্থক রয়েছে, বিশেষ করে এদেশে, ফিলিস্তিনের সাথে ভৌগলিক অবস্থানের কারনে। পক্ষান্তরে যারা কুফরের ইমামদের সাথে অস্ত্রের মাধ্যমে যুদ্ধের জন্য তৈরি হচ্ছে তাদের মাঝে তাওহীদের দাওয়াহর সমর্থক অত্যন্ত কম। বাস্তবতা হল এই বিশ্বাসঘাতকরা ‘ইসরাঈলে’ ও যারা তা রোপণ করেছে মুসলিম বিশ্বের বুকের মধ্যে তাদের গার্ড, আর তারা পূর্ব ও পশ্চিমের কুফফারদের জন্য সম্ভবপর করেছে আমাদের সম্পদ ও সৌভাগ্য শুষে নিতে।
নিশ্চয়ই আল্লাহ সত্য প্রকাশ করেছেন:
তারা তার ক্ষতি করতে চাইল, অতঃপর আমি তাদেরকেই সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ করে দিলাম। (২১:৭০)
এই গ্রেফতারীর কারণে এবং আল্লাহর শত্রুরা এ ইস্যুকে ষড়যন্ত্র করে বড় করে দেখানোয়, তাদের মিডিয়া ও প্রতিষ্টানের মাধ্যমে হইচই ফেলে দেয়ায়, তা আল্লাহর রহমতে আমাদের দাওয়াহকে দ্রুততার সাথে প্রকাশ ও প্রসারে সাযাহ্য করল। নিশ্চয়ই, খারাপ সময়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক ভালো সাহায্য প্রকাশ পায় যা সাধারন অবস্থায় প্রকাশিত হয় না। আল্লাহ আমাদেরকে পথ দেখিয়েছেন এবং আমাদের অন্তরকে গ্রেফাতারীর শুরু থেকেই অবিচল রেখেছেন। আমরা তাগুত ও তাদের আইনের প্রতি নিজেদের নিষ্কলুষতা ঘোষণা করলাম, কোন ধরনের মোসাহেবি ও চতুরতা ছাড়াই। জেলে ও কোর্টরুমে আমাদের অবস্থান ভালো হতে লাগল নিয়মিত খোতবা, লেখা ও পাঠদানের মাধ্যমে যা কার্যকরভাবে আল্লাহর শত্রুদের ক্রোধান্বিত করছিল, যারা তাদের আক্রোশ বাড়িয়ে দিত ঐসব লোকদের প্রতি যারা আমাদের জানত, আমাদের বই পড়ত অথবা কোনভাবেই আমাদের সাথে সম্পর্ক ছিল।
ফলে, আমাদের ভাইয়েরা সিক্রেট সার্ভিসের গোপন বন্দিশালায় বাস করতে লাগলেন, বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পুর্ণ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় এমন সময় ব্যয় করলেন যা তাদের পূর্বে দুএকজন ছাড়া এদেশের আর কোন বন্দির বেলায় ঘটেনি। কেউ পুরো একবছর এভাবে রইলেন, অন্যরা কমপক্ষে ছয় মাস রইলেন। কর্তিপক্ষ দ্বারা বিভন্ন ধরনের শারিরিক ও মানসিক টর্চারের শিকার হলেন। তাদেরকে বাধ্য করা হল অনেক ভাইকে লুকিয়ে রাখতে যখন ইন্ট্যারন্যাশনাল কিছু অর্গানাইজেশন অনিয়মিত ভিজিটে আসত।
যাইহোক, এটা ছিল একটি অনন্য ও পবিত্র অভিজ্ঞতা যা অনেক ভাইকে শক্তিশালী করেছে। এরপর আমাদেরকে গোপন বন্দিশালা থেকে বের করে প্রিজন সেলে স্থানান্তর করা হল। আমাকেত উত্তরে ‘কাফকাফা’ জেলে প্রেরণ করা হয় যখন অধিকাংশ ভাইদেরকে দক্ষিণে সেন্ট্রাল জেল ‘সুয়াকা’য় পাঠানো হয়। তাদের এই প্লান ছিল তাদের অভিলাষ আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে দুর্বল করা থেকে। ۖ তারা যেমন ছলনা করত তেমনি, আল্লাহও ছলনা করতেন। বস্তুতঃ আল্লাহর ছলনা সবচেয়ে উত্তম। (৮:৩০) জেলে পা দেয়ার মূহুর্ত থকেই আমি আগ্রহের সাথে আমার দাওয়াহ শুরু করলাম। তাই আমি কিছু রচনা লেখা শুরু করলাম যা ঐ সিরিজের অংশ ছিল যার নাম দিয়েছিলাম “হে কারাগারের দুই সঙ্গী! পৃথক পৃথক অনেক উপাস্য ভাল, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ?” (১২:৪৯ আয়াত থেকে নেয়া)। আমি বিভিন্ন সাবজেক্ট সেখানে অন্তর্ভূক্ত করি যেমন তাওহীদ, ইবরাহীমের পথ, ইবাদাত, বহু ইশশরবাদ ইত্যাদি। বন্দীদের মাঝে আমি এই বুকলেটগুলো বিলির চেষ্টা করি। এমনকি, কোন কোন রিলিজের সময় তা বাইরে নিয়ে যায়। জেলের বাইরে এসব বুকলেট তারা আমার নাম দিয়ে ছাপিয়ে দেয়। এটা নিশ্চিতভাবে আল্লাহর শত্রুদের ক্রুদ্ধ করেছিল, এমতাবস্থায় কিছু মুক্ত ভাইয়েরা আমার লেখা সংগ্রহ করতে বন্দি ভাইদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন। পরবর্তীকালে, আল্লাহ নির্ধারিত করে দিয়েছিলেন, এসব সাবেক বন্দীরা জর্ডানিয়ান ইন্টেলিজেন্স অফিসের একটি অফিসে সশস্ত্র আক্রমণের অন্যতম সহযোগী হয়েছিল, তাদের কেউ কেউ গ্রেফতার হয়েছিল এবং তারা স্বীকার করে জেলে আমার সাথে তাদের দেখা হয়, পরিচয় হয়। আমার কিছু রচনাও তাদের কাছে পাওয়া যায়। পরাক্রমশালী আল্লাহ এই ঘটনাকে একটি হেতু বানালেন আমাকে আমার ভাইদের সাথে পুনরায় মিলিত করতে। এই ঘটনার পরপরই আমাকে দক্ষিণের সেন্ট্রাল জেলে প্রেরণ করা হয়।
Comment