মানসুর হাল্লাজের গোমর ফাক,,,,,,,,,,,,,, রূপকথার ওলী (না পড়লে বিভ্রান্ত হতে পারেন)
#মানসুর_হাল্লাজ
نعوذ بالله أن نقول عليه ما لم يكن قاله أو نتحمل عليه في أقواله وأفعاله
শুরুতেই আমরা আল্লাহ তায়ালার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি’ কারো বিরুদ্ধে এমন মতবাদ বা এমন কাজের কথা বলতে যা তার মধ্যে নেই বা অাদৌ সে করেনি।
নাম : হুসাইন ইবনে মানসুর ইবনে মাহমী আল-হাল্লাজ আবু মুগীস এবং তাকে আব্দুল্লাহ ও বলা হত। তার দাদা ছিল অগ্নি পূজক। তার (দাদার) নাম ছিল মাহমী। সে ছিল পারস্যের বাইযা শহরের অধিবাসী।
মানসুর হাল্লাজ সম্পর্কে রূপকথায় মত সমাজে অসংখ কল্পকাহিনী প্রচলিত । তাকে সাধারণ মুসলমানদের কেউ ইতিবাচ, কেউ নেতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করছে।এতে করে সর্ব সাধারণের ঈমান-আকীদায় বিরাট প্রভাব ফেলছে । ইসলামের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ইবনে কাসীর (রহ.) প্রণীত “আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া” , খতীব বাগদাদী (রহ.) এর লিখিত 'তারিখে বাগদাদ', ইবনুল জাওজী (রহ.) -এর 'আল মুন্তাজেম' ও ইমাম আয যাহাবী (রহ.) -এর 'সিয়ারু আ’লামিন নুবালা' ইত্যাদি নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে হাল্লাজের আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মজীবনের উপর বিশদ বিবরণ এসেছে।
সেগুলো চুম্বকাংশ তুলে ধরা হচ্ছে-
মানসুর হাল্লাজ ২৪৪ হি./৮৫৮ খ্রি. জন্ম গ্রহণ করে। তার দাদা পারস্যের অধিবাসী ও একজন অগ্নি উপাসক ছিল। সে ইরাকের ওয়াসেত শহরে জীবনের একটি অংশ অতিবাহিত করার পর বাগদাদে গমন করে । হজ্জ পালনের জন্য কয়েকবার মক্কায়ও গমন করে । এমনকি বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত, সে যাদু বিদ্যার্জনের লক্ষ্যে ভারতেও আসে ।
যাদু প্রসঙ্গে সে বলত- أدعو به الى الله –আমি যাদুর মাধ্যমে লোকদেরকে আল্লাহ্*র দিকে দাওয়াত দিই । (“আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া”)
অাল্লামা ইবনুল কাইয়ূম আল জাওযী বলেন,
-লোকদের ধোঁকা দেয়ার জন্য বহু কৌশল তার আয়ত্তে ছিল। বেশভূষা পরিবর্তন করে এক শহর থেকে অন্য শহরে ঘুরে বেড়াত। মানুষ তার ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্বে বিভক্ত ছিল। সে Pantheism (সর্বেশ্বরবাদ) ও Zoroastrianism (জরাথ্রুস্ট প্রবর্তিত ও জেনদ্-আবেস্তায় বর্ণিত প্রাচীন পারস্যবাসীর অগ্নি উপাসনার ধর্ম) ইত্যাদি দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল । সে সূফীবাদী দর্শন হুলুল ( আল্লাহ্* তায়ালা কোন ব্যক্তি বিশেষের মাঝে প্রবিষ্ট হওয়া ) ও 'ওয়াহদাতুল ওজুদ' ( স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে কোন পার্থক্য নেই, স্রষ্টার আলাদা কোন অস্তিত্ব নেই, সকল সৃষ্টির মাঝে তাঁর অস্তিত্ব বিরাজমান ) এর অন্যতম প্রবক্তা । ওয়াহদাতুল ওজুদ তথা একক অস্তিত্ব এই দর্শনে প্রভাবিত হয়ে সে বলত- ما في جبتيي الا الله.- আমার জুব্বার মাঝে যে স্বত্বা রয়েছে তা আল্লাহ্* ছাড়া অন্য কেউ না । أنا الحق - আমি আল্লাহ্* ইত্যাদি ।
হাল্লাজের কবিতা সংকলন ديوان الحلاج- বইয়ে সে মানুষকে সম্বোধন করে হাল্লাজ বলছে:
—তুমি আমাকে দেখার অর্থ তাঁকে (আল্লাহ্*) দেখা
আর তাঁকে (আল্লাহ্*) দেখার অর্থ আমাকে দেখা ।
আল্লাহকে সম্বোধন করে বলছে
—নিঃসন্দেহে আমি হচ্ছি তুমি (আল্লাহ্*)
তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করা আমারই পবিত্রতা ঘোষণা করা ।
তোমার তাওহীদ ঘোষণা করা আমারই তাওহীদ ঘোষণা করা ।
তোমার নাফরমানী করা আমারই নাফরমানী করা ।
আমি তোমার দ্বীনের সাথে কুফরী করেছি, কারণ কুফরী আমার জন্য
ওয়াজিব হয়েছে । যদিও মুসলিমদের নিকটে তা নিন্দনীয় ।
তোমার আত্মা আমার আত্মার সাথে মিশে গেছে
যেরূপে মদ সুপেয় পানির সাথে মিশে যায় ।
তোমাকে কিছু স্পর্শ করলে তা আমাকে স্পর্শ করে,
কারণ সর্বাবস্থায় আমিই তো তুমি।
ইত্যাদি।
আরো আছে-
جبلت روحك في روحي كما … يجبل العنبر بالمسك الفنق … فإذا مسك شيء مسني … وإذا أنت أنا لا نفترق
১. তোমার রুহ আমার রুহে এমন ভাবে প্রবেশ করেছে, যেমনিভাবে মৃগনাভীর সাথে কোমল পানির মিশ্রণ হয়।
সুতরাং যখন কোন জিনিস তোমাকে স্পর্শ করে তা যেন আমাকেই স্পর্শ করে। অতএব তুমিই আমি, আমাদের মাঝে কোন পৃথকতা নেই।
وقوله … مزجت روحك في روحي كما … تمزج الخمرة بالماء الزلال … فإذا مسك شيء مسني … فإذا أنت أنا في كل حال
২. তোমার রুহ আমার রুহের সাথে এমন ভাবে মিশ্রণ ঘটেছে যেভাবে পানির মিশ্রণ ঘটে রঙ্গের সাথে। সুতরাং যখন কোন জিনিস তোমাকে স্পর্শ করে তা যেন আমাকেই স্পর্শ করে। অতএব সর্ব অবস্থায় তুমিই আমি, এবং আমিই তুমি ।
وقوله أيضا … قد تحققتك في سر … ي فخاطبك لساني … فاجتمعنا لمعان … وافترقنا لمعان … إن يكن غيبتك التعظي … م عن لحظ العيان … فلقد صيرك الوج … د من الأحشاء دان
৩. নিঃসন্দেহে আমিই তুমি , সুতরাং তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করা মানেই হচ্ছে আমার পবিত্রতা ঘোষণা করা। এবং তোমার একাত্ব মানেই হচ্ছে আমার একাত্ব, এবং তোমার অবাধ্যতা মানেই হচ্ছে আমার অবাধ্যতা।
হযরত আব্দুর রহমান আস সুলামী আমর বিন উসমানের সূত্রে বর্ণনা করেন, আমর বলেন,
-হজ্জের মৌসুমে আমি একদা হাল্লাজের সাথে মক্কার কোন এক গলিতে হাঁটছিলাম আর কোরআন তেলাওয়াত করছিলাম। হাল্লাজ আমার তেলাওয়াত শুনে বলল, 'আমার পক্ষেও এই ধরণের কথা (আয়াত) বলা (বানানো) সম্ভব। এমন কথা তার মুখ শুনে তাৎক্ষণিক আমি তার সঙ্গ ত্যাগ করি।
সে কারণে প্রায়শ আমর বিন উসমান হাল্লাজকে লানত করতে এবং বলতেন- আমার ক্ষমতা থাকলে তাকে নিজ হাতে হত্যা করে ফেলতাম!
আবু জুর’য়া আত তাবারী বলেন, আমি আবু ইয়াকুব আল আকতা’য় কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
-প্রথম দিকে হাল্লাজের দরবেশির প্রতি মুগ্ধ হয়ে আমি আমার বোনকে তার সাথে বিবাহ দিই। কিছু দিন পর আমার কাছে প্রমাণিত হয় সে একজন যাদুকর, প্রতারক, খবীস ও কাফের।
আব্দুর রহমান সুলামী আমর বিন উসমানের সূত্রে বর্ণনা করেন-
আবু বকর বিন মিনশাদের নিকট এক ব্যক্তি আসল। যার সাথে একটি থলে ছিল । রাতে-দিনে কক্ষনো সে থলেটি নিজের কাছ থেকে দূরে রাখত না । লোকেরা কারণ অনুসন্ধানের জন্য থলেটি খুললে মানসুর হাল্লাজ প্রেরিত একটি চিঠি পেল । যার শিরোনাম ছিল- من الرحمن الرحيم الى فلان ابن فلان- রাহমান রাহীমের পক্ষ হতে .........। হাল্লাজ চিঠিটির সত্যতা স্বীকার করল। লোকেরা তাকে প্রশ্ন করল, তুমি কি নিজেকে আল্লাহ্* দাবী কর ? জবাবে সে বলল- না, তবে আল্লাহ্* ও আমি তো একই সত্ত্বা ।
হাল্লাজ তার খাস মুরিদদের মাধ্যমে পাহাড়ী এলাকার সহজ-সরল মূর্খ মানুষদের প্রতারিত করে হাজার হাজার স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা উপার্জন করেছে । তার মিথ্যা কারামতির কৌশল জেনে ফেলায় একজনকে গুপ্ত ঘাতক পাঠিয়ে হত্যার হুমকিও দিয়েছে । এসব প্রতারণার কাহিনী ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে উল্লেখ করেছেন।
শাইখুল ইসলাম আল্লাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রহ: বলেন- 'যে আকীদা পোষণ করার কারণে হাল্লাজকে হত্যা করা হয়েছে, সেই আকীদা যদি কেউ পোষণ করে সে মুসলিমদের ঐক্যমত অনুযায়ী কাফের ও মুরতাদ। মুসলিমরা হুলুল, ওয়াহদাতুল ওজুদ ইত্যাদি আকীদা পোষণ করার কারণে তাকে হত্যা করেছে । যেমন সে বলত- "আমি আল্লাহ। আসমানে এক প্রভু আছে ও জমিনে আরেক প্রভু আছে । তার কিছু
যাদুবিদ্যাতে সে বেশ পারঙ্গম ছিলো।যাদুর উপর কয়েকটি বইও লিখেছিল । (মাজমুয়ুল ফাতাওয়া)
তিনি আরও বলেন-
-আমি মুসলিমদের কোনো বিজ্ঞ আলেম ও মাশায়েখ সম্পর্কে জানিনা, যারা হাল্লাজ সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখেন। তবে কিছু লোক হাল্লাজের আকীদা সম্পর্কে না জানার কারণে তার প্রশংসা করেছে।
বাগদাদের তখনকার সর্বশ্রেষ্ঠ আলেমগণ ও বড় বড় আওলিয়াগণ তাকে 'কাফির' বলে 'ফাতাওয়া'
দিয়েছেন। যার ফলে সরকার তাকে প্রকাশ্যভাবে শূলেচড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছেন।
(৩০৯ হিঃ/৯২২ খ্রিস্টাব্দে হাল্লাজকে মৃত্যু দণ্ড দেওয়া হয়।)
আমার বুঝে আসে না, কতিপয় পীর, ও কণ্ঠধারী বক্তারা তার কুফুরির এত এত প্রমাণাদি পরিস্কার ভাবে অদ্যাপি বিদ্যমান থাকতেও কেনো তাকে 'সূফীকুলশিরোমনি', আল্লাহরওলী' ইত্যাদি বলে থাকে!
বিশেষ করে মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী সাহেব হাফিজাহুল্লাহুর মত বড়দের থেকে কেনো এমন মত পাচ্ছি!
তাছাড়া, কতিপয় উর্দু বা বাংলা বইয়েও তাকে 'অলিকুল' বলা হয়েছে!
মূলত, এসমস্ত বইয়ে ( যেমন : মাআরিফে মাসনুবি ইত্যাদি বইয়ে) কাল্পনিকচরিত্রের লাইলি-মজনু ও শিরি-ফরহাদের মত 'মানসুর হাল্লাজ-এর চরিত্রও রূপকথার ধাঁধানো কথা!
প্রমাণাদি-
১. মাজমুউল ফাতাওয়া (২/৪৮০ পৃ.- ৪৮৪ পৃ.)
২. 'তারিখুল বাগদাদ' লেখক : খতীবে বাগদাদী রহ: (৮/ ১১২ -১৪১)
৩. 'আল মুনতাযাম' লেখক: ইবনুল জাওযী রহ: (১৩/২০১-২০৬)
৪. 'আল বিদায়া অন নিহায়া' লেখক : ইমাম ইবনে কাসীর রহ:
(১১/১৩২-১৪৪)
৫. 'সিয়ারু আ'লাম আন নুবালা' লেখক : ইমাম জাহাবি রহ: (১৪/ ৩১৩-৩৫৪)
أ .اهـ مجموع الفتاوى ( 2/483 )
للاستزادة يراجع :
تاريخ بغداد للخطيب البغدادي ( 8/112-141) . المنتظم لابن الجوزي ( 13/201-206) . سير أعلام النبلاء للذهبي ( 14 / 313-354 ) . البداية والنهاية لابن كثير ( 11/132-144) .
#মানসুর_হাল্লাজ
نعوذ بالله أن نقول عليه ما لم يكن قاله أو نتحمل عليه في أقواله وأفعاله
শুরুতেই আমরা আল্লাহ তায়ালার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি’ কারো বিরুদ্ধে এমন মতবাদ বা এমন কাজের কথা বলতে যা তার মধ্যে নেই বা অাদৌ সে করেনি।
নাম : হুসাইন ইবনে মানসুর ইবনে মাহমী আল-হাল্লাজ আবু মুগীস এবং তাকে আব্দুল্লাহ ও বলা হত। তার দাদা ছিল অগ্নি পূজক। তার (দাদার) নাম ছিল মাহমী। সে ছিল পারস্যের বাইযা শহরের অধিবাসী।
মানসুর হাল্লাজ সম্পর্কে রূপকথায় মত সমাজে অসংখ কল্পকাহিনী প্রচলিত । তাকে সাধারণ মুসলমানদের কেউ ইতিবাচ, কেউ নেতিবাচক হিসেবে গ্রহণ করছে।এতে করে সর্ব সাধারণের ঈমান-আকীদায় বিরাট প্রভাব ফেলছে । ইসলামের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ ইবনে কাসীর (রহ.) প্রণীত “আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া” , খতীব বাগদাদী (রহ.) এর লিখিত 'তারিখে বাগদাদ', ইবনুল জাওজী (রহ.) -এর 'আল মুন্তাজেম' ও ইমাম আয যাহাবী (রহ.) -এর 'সিয়ারু আ’লামিন নুবালা' ইত্যাদি নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে হাল্লাজের আকীদা-বিশ্বাস ও কর্মজীবনের উপর বিশদ বিবরণ এসেছে।
সেগুলো চুম্বকাংশ তুলে ধরা হচ্ছে-
মানসুর হাল্লাজ ২৪৪ হি./৮৫৮ খ্রি. জন্ম গ্রহণ করে। তার দাদা পারস্যের অধিবাসী ও একজন অগ্নি উপাসক ছিল। সে ইরাকের ওয়াসেত শহরে জীবনের একটি অংশ অতিবাহিত করার পর বাগদাদে গমন করে । হজ্জ পালনের জন্য কয়েকবার মক্কায়ও গমন করে । এমনকি বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত, সে যাদু বিদ্যার্জনের লক্ষ্যে ভারতেও আসে ।
যাদু প্রসঙ্গে সে বলত- أدعو به الى الله –আমি যাদুর মাধ্যমে লোকদেরকে আল্লাহ্*র দিকে দাওয়াত দিই । (“আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া”)
অাল্লামা ইবনুল কাইয়ূম আল জাওযী বলেন,
-লোকদের ধোঁকা দেয়ার জন্য বহু কৌশল তার আয়ত্তে ছিল। বেশভূষা পরিবর্তন করে এক শহর থেকে অন্য শহরে ঘুরে বেড়াত। মানুষ তার ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্বে বিভক্ত ছিল। সে Pantheism (সর্বেশ্বরবাদ) ও Zoroastrianism (জরাথ্রুস্ট প্রবর্তিত ও জেনদ্-আবেস্তায় বর্ণিত প্রাচীন পারস্যবাসীর অগ্নি উপাসনার ধর্ম) ইত্যাদি দর্শন দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল । সে সূফীবাদী দর্শন হুলুল ( আল্লাহ্* তায়ালা কোন ব্যক্তি বিশেষের মাঝে প্রবিষ্ট হওয়া ) ও 'ওয়াহদাতুল ওজুদ' ( স্রষ্টা ও সৃষ্টির মাঝে কোন পার্থক্য নেই, স্রষ্টার আলাদা কোন অস্তিত্ব নেই, সকল সৃষ্টির মাঝে তাঁর অস্তিত্ব বিরাজমান ) এর অন্যতম প্রবক্তা । ওয়াহদাতুল ওজুদ তথা একক অস্তিত্ব এই দর্শনে প্রভাবিত হয়ে সে বলত- ما في جبتيي الا الله.- আমার জুব্বার মাঝে যে স্বত্বা রয়েছে তা আল্লাহ্* ছাড়া অন্য কেউ না । أنا الحق - আমি আল্লাহ্* ইত্যাদি ।
হাল্লাজের কবিতা সংকলন ديوان الحلاج- বইয়ে সে মানুষকে সম্বোধন করে হাল্লাজ বলছে:
—তুমি আমাকে দেখার অর্থ তাঁকে (আল্লাহ্*) দেখা
আর তাঁকে (আল্লাহ্*) দেখার অর্থ আমাকে দেখা ।
আল্লাহকে সম্বোধন করে বলছে
—নিঃসন্দেহে আমি হচ্ছি তুমি (আল্লাহ্*)
তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করা আমারই পবিত্রতা ঘোষণা করা ।
তোমার তাওহীদ ঘোষণা করা আমারই তাওহীদ ঘোষণা করা ।
তোমার নাফরমানী করা আমারই নাফরমানী করা ।
আমি তোমার দ্বীনের সাথে কুফরী করেছি, কারণ কুফরী আমার জন্য
ওয়াজিব হয়েছে । যদিও মুসলিমদের নিকটে তা নিন্দনীয় ।
তোমার আত্মা আমার আত্মার সাথে মিশে গেছে
যেরূপে মদ সুপেয় পানির সাথে মিশে যায় ।
তোমাকে কিছু স্পর্শ করলে তা আমাকে স্পর্শ করে,
কারণ সর্বাবস্থায় আমিই তো তুমি।
ইত্যাদি।
আরো আছে-
جبلت روحك في روحي كما … يجبل العنبر بالمسك الفنق … فإذا مسك شيء مسني … وإذا أنت أنا لا نفترق
১. তোমার রুহ আমার রুহে এমন ভাবে প্রবেশ করেছে, যেমনিভাবে মৃগনাভীর সাথে কোমল পানির মিশ্রণ হয়।
সুতরাং যখন কোন জিনিস তোমাকে স্পর্শ করে তা যেন আমাকেই স্পর্শ করে। অতএব তুমিই আমি, আমাদের মাঝে কোন পৃথকতা নেই।
وقوله … مزجت روحك في روحي كما … تمزج الخمرة بالماء الزلال … فإذا مسك شيء مسني … فإذا أنت أنا في كل حال
২. তোমার রুহ আমার রুহের সাথে এমন ভাবে মিশ্রণ ঘটেছে যেভাবে পানির মিশ্রণ ঘটে রঙ্গের সাথে। সুতরাং যখন কোন জিনিস তোমাকে স্পর্শ করে তা যেন আমাকেই স্পর্শ করে। অতএব সর্ব অবস্থায় তুমিই আমি, এবং আমিই তুমি ।
وقوله أيضا … قد تحققتك في سر … ي فخاطبك لساني … فاجتمعنا لمعان … وافترقنا لمعان … إن يكن غيبتك التعظي … م عن لحظ العيان … فلقد صيرك الوج … د من الأحشاء دان
৩. নিঃসন্দেহে আমিই তুমি , সুতরাং তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করা মানেই হচ্ছে আমার পবিত্রতা ঘোষণা করা। এবং তোমার একাত্ব মানেই হচ্ছে আমার একাত্ব, এবং তোমার অবাধ্যতা মানেই হচ্ছে আমার অবাধ্যতা।
হযরত আব্দুর রহমান আস সুলামী আমর বিন উসমানের সূত্রে বর্ণনা করেন, আমর বলেন,
-হজ্জের মৌসুমে আমি একদা হাল্লাজের সাথে মক্কার কোন এক গলিতে হাঁটছিলাম আর কোরআন তেলাওয়াত করছিলাম। হাল্লাজ আমার তেলাওয়াত শুনে বলল, 'আমার পক্ষেও এই ধরণের কথা (আয়াত) বলা (বানানো) সম্ভব। এমন কথা তার মুখ শুনে তাৎক্ষণিক আমি তার সঙ্গ ত্যাগ করি।
সে কারণে প্রায়শ আমর বিন উসমান হাল্লাজকে লানত করতে এবং বলতেন- আমার ক্ষমতা থাকলে তাকে নিজ হাতে হত্যা করে ফেলতাম!
আবু জুর’য়া আত তাবারী বলেন, আমি আবু ইয়াকুব আল আকতা’য় কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন,
-প্রথম দিকে হাল্লাজের দরবেশির প্রতি মুগ্ধ হয়ে আমি আমার বোনকে তার সাথে বিবাহ দিই। কিছু দিন পর আমার কাছে প্রমাণিত হয় সে একজন যাদুকর, প্রতারক, খবীস ও কাফের।
আব্দুর রহমান সুলামী আমর বিন উসমানের সূত্রে বর্ণনা করেন-
আবু বকর বিন মিনশাদের নিকট এক ব্যক্তি আসল। যার সাথে একটি থলে ছিল । রাতে-দিনে কক্ষনো সে থলেটি নিজের কাছ থেকে দূরে রাখত না । লোকেরা কারণ অনুসন্ধানের জন্য থলেটি খুললে মানসুর হাল্লাজ প্রেরিত একটি চিঠি পেল । যার শিরোনাম ছিল- من الرحمن الرحيم الى فلان ابن فلان- রাহমান রাহীমের পক্ষ হতে .........। হাল্লাজ চিঠিটির সত্যতা স্বীকার করল। লোকেরা তাকে প্রশ্ন করল, তুমি কি নিজেকে আল্লাহ্* দাবী কর ? জবাবে সে বলল- না, তবে আল্লাহ্* ও আমি তো একই সত্ত্বা ।
হাল্লাজ তার খাস মুরিদদের মাধ্যমে পাহাড়ী এলাকার সহজ-সরল মূর্খ মানুষদের প্রতারিত করে হাজার হাজার স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা উপার্জন করেছে । তার মিথ্যা কারামতির কৌশল জেনে ফেলায় একজনকে গুপ্ত ঘাতক পাঠিয়ে হত্যার হুমকিও দিয়েছে । এসব প্রতারণার কাহিনী ইবনে কাসীর আল বিদায়া ওয়ান নিহায়াতে উল্লেখ করেছেন।
শাইখুল ইসলাম আল্লাম ইবনু তাইমিয়্যাহ রহ: বলেন- 'যে আকীদা পোষণ করার কারণে হাল্লাজকে হত্যা করা হয়েছে, সেই আকীদা যদি কেউ পোষণ করে সে মুসলিমদের ঐক্যমত অনুযায়ী কাফের ও মুরতাদ। মুসলিমরা হুলুল, ওয়াহদাতুল ওজুদ ইত্যাদি আকীদা পোষণ করার কারণে তাকে হত্যা করেছে । যেমন সে বলত- "আমি আল্লাহ। আসমানে এক প্রভু আছে ও জমিনে আরেক প্রভু আছে । তার কিছু
যাদুবিদ্যাতে সে বেশ পারঙ্গম ছিলো।যাদুর উপর কয়েকটি বইও লিখেছিল । (মাজমুয়ুল ফাতাওয়া)
তিনি আরও বলেন-
-আমি মুসলিমদের কোনো বিজ্ঞ আলেম ও মাশায়েখ সম্পর্কে জানিনা, যারা হাল্লাজ সম্পর্কে ভাল ধারণা রাখেন। তবে কিছু লোক হাল্লাজের আকীদা সম্পর্কে না জানার কারণে তার প্রশংসা করেছে।
বাগদাদের তখনকার সর্বশ্রেষ্ঠ আলেমগণ ও বড় বড় আওলিয়াগণ তাকে 'কাফির' বলে 'ফাতাওয়া'
দিয়েছেন। যার ফলে সরকার তাকে প্রকাশ্যভাবে শূলেচড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছেন।
(৩০৯ হিঃ/৯২২ খ্রিস্টাব্দে হাল্লাজকে মৃত্যু দণ্ড দেওয়া হয়।)
আমার বুঝে আসে না, কতিপয় পীর, ও কণ্ঠধারী বক্তারা তার কুফুরির এত এত প্রমাণাদি পরিস্কার ভাবে অদ্যাপি বিদ্যমান থাকতেও কেনো তাকে 'সূফীকুলশিরোমনি', আল্লাহরওলী' ইত্যাদি বলে থাকে!
বিশেষ করে মাওলানা নূরুল ইসলাম ওলিপুরী সাহেব হাফিজাহুল্লাহুর মত বড়দের থেকে কেনো এমন মত পাচ্ছি!
তাছাড়া, কতিপয় উর্দু বা বাংলা বইয়েও তাকে 'অলিকুল' বলা হয়েছে!
মূলত, এসমস্ত বইয়ে ( যেমন : মাআরিফে মাসনুবি ইত্যাদি বইয়ে) কাল্পনিকচরিত্রের লাইলি-মজনু ও শিরি-ফরহাদের মত 'মানসুর হাল্লাজ-এর চরিত্রও রূপকথার ধাঁধানো কথা!
প্রমাণাদি-
১. মাজমুউল ফাতাওয়া (২/৪৮০ পৃ.- ৪৮৪ পৃ.)
২. 'তারিখুল বাগদাদ' লেখক : খতীবে বাগদাদী রহ: (৮/ ১১২ -১৪১)
৩. 'আল মুনতাযাম' লেখক: ইবনুল জাওযী রহ: (১৩/২০১-২০৬)
৪. 'আল বিদায়া অন নিহায়া' লেখক : ইমাম ইবনে কাসীর রহ:
(১১/১৩২-১৪৪)
৫. 'সিয়ারু আ'লাম আন নুবালা' লেখক : ইমাম জাহাবি রহ: (১৪/ ৩১৩-৩৫৪)
أ .اهـ مجموع الفتاوى ( 2/483 )
للاستزادة يراجع :
تاريخ بغداد للخطيب البغدادي ( 8/112-141) . المنتظم لابن الجوزي ( 13/201-206) . سير أعلام النبلاء للذهبي ( 14 / 313-354 ) . البداية والنهاية لابن كثير ( 11/132-144) .
Comment