Announcement

Collapse
No announcement yet.

খুবই মজার ঘটনা, পড়বেন কি??

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • খুবই মজার ঘটনা, পড়বেন কি??

    তিনি একজন সাধারন মানুষ। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক দিন মজুরের কাজ করে, কাজ না পেলে রাস্তার ধারে কাজের জন্য বসে থাকে। এ শহরে তার কেউ নেই। তার কোন বাড়ি ঘর নেই। তিনি দিন শেষে দামেস্কের মসজিদের সামনে আসেন। ইসলামের ইতিহাসে মহান বিজেতা বীর সালাউদ্দিন আইয়ু্বী এর কবর ও দামেস্কের মসজিদের মাঝে যে দুই হাত ফাকা জায়গা ওখানেই রাত্রে চুপচাপ শোয়ে থাকেন। এমন ভবঘুরে মানুষকে কোথায় তাড়াবে? তাই মসজিদের হর্তাকর্তারা তাকে কিছুই বলে না। মসজিদের পিছনে একটি মাদ্রাসা। মাদ্রাসার চৌবাচ্চায় সবার ওযু গোছল শেষ হয়ে কিছু পানি থাকলে তিনি রাত্রে গোছল করেন।
    এভাবেই তার লক্ষহীন দিন কেটে যাচ্ছিলো।
    এক শীতের রাত্রে তিনি শোয়ে আছেন। চার দিকে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা বাতাস। এমন সময় স্বপ্নদোষে তার গোছলের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলো। তিনি মসজিদের আঙ্গিনায়, তাই সকালের আশায় অবিত্র হয়ে থাকা যাবে না। তিনি মাদ্রাসার চৌবাচ্চায় গোছল করলেন। গোছল শেষে শোয়ে ঘুমিয়ে গেলেন। কিছুক্ষন পরে আবার স্বপ্নদোষে গোছল ফরজ হলো। কনকনে শীত উপেক্ষা করে আবারো গোছল করেন। কিন্তু শীতের রাতে দুবার গোছল করার ধকল শরীর সইতে পারলো না। কাঁপতে কাঁপতে জ্ঞান হারালেন।
    ফজরের সময় তার জ্ঞান ফিরে এলো। ফজরের নামাজের পর মাদ্রাসার এক শিক্ষককে তিনি রাতের সব ঘটনা বললেন। সব শোনে শিক্ষক বললেন ‘ইলম জানেন না তাই আপনাকে কষ্ট পেতে হলো। মাসআলায় বলা আছে, প্রচন্ড ঠান্ডায় শারীরিক অসুস্থতার প্রবল আশংকা দেখা দিলে ফরজ গোছলের পরিবর্তেও তায়াম্মুম করা যায়।‘
    এমন সহজ মাসআলা শোনে তিনি লজ্জিত হলেন। আহা, ইসলাম কত সহজ, মায়াময়। জানিনা বলেই না জানি আর কতো কষ্ট পেতে হবে। তিনি নিয়ত করলেন আজ থেকে সব শিখবেন। তার মনের দৃঢ় বিশ্বাস তিনি আলেম হবেন। সারাদিন দিন মজুরের কাজ করে রাতে মাদ্রাসার শিক্ষকের কাছে পড়তে লাগলেন। এভাবে কেটে গেলো দীর্ঘ ১০টি বৎসর। তিনি আজ আলেম হয়েছেন। দুনিয়ার মোহ ত্যাগ করেছেন, এলমের ভান্ডার পেয়েছেন তিনি। এর শুধুই মাথা উচু করে শাসিয়ে গেছেন পরাক্রমশালী শাষকদের।
    এতোদিন তিনি যে মসজিদের আঙ্গিনায় রাত কাটাতেন, কালের বিবর্তনে আল্লাহর রহমতে সিরিয়ার সেই প্রধান মসজিদের প্রধান খতীব পদে সমাসীন হলেন। সিরিয়ার বাদশা তখন ইসমাঈল। তার চাচাতো ভাই নাজমুদ্দিন আইয়ুব মিসরের বাদশা। কোন এক সাধারন বিষয় নিয়ে তাদের দুই চাচাতো ভাই এর মাঝে বিবাদ লেগে গেলো। এর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য বাদশা ইসমাইল খ্রিষ্টান ফিরিঙ্গিদের সাথে আতাত করলেন। লাজলজ্জার মাথা খেয়ে তিনি ফিরিঙ্গিদের হাতে দুটি মুসলিম এলাকা তোলে দিতে সম্মত হলেন। এর বিনিময়ে ফিরিঙ্গিরা তার চাচাতো ভাইকে শায়েস্তা করবে।
    সব শোনে গর্জে উঠলেন প্রধান খতিব। শুক্রবার বাদশা ইসমাইলের উপস্থিতিতে তিনি মিম্বারে উঠলেন। খুতবায় বাদশাহর কঠোর সমালোচনা করেন। মুসলমানদের সাথে খেয়ানত করায় তাকে ভৎর্সনা করলেন। একজন খতিব রাষ্ট্রিয় ইস্যুতে বাদশার উপস্থিতিতে বাদশাকে শাষাচ্ছেন ইসলাম ছারা অন্য কোন ধর্মে কি এটা ভাবা যায়? এখানেই শেষ নয়। মিম্বার থেকেই তিনি ফতোয়া জারি করলেন ‘যে লোক ব্যাক্তি স্বার্থে মুসলিম অঞ্চল বিধর্মির হাতে তোলে দেয় তিনি মুসলিম অঞ্চলের শাষক হওয়ার অযোগ্য।‘ ফতোয়া মোতাবেক তিনি ইসমাইলকে পদচুত্য ঘোষনা দিলেন।
    নামাজ শেষে বাদশা খতিব সাহেবকে গৃহবন্ধি করলেন। খবরটি বাতাসের আগে সিরিয়ায় সরিয়ে পরলো। রাজ্যজুড়ে তোলপার শুরু হলো। মানুষ সব রাস্তায় নেমে বাদশা ইসমাইলকে কার্যত অবরোধ করে ফেললেন। বাদশা নিরুপায় হয়ে বললেন ‘শায়খ যদি আমার হাতে চুমো দেন, তবে তাকে স্বসম্মানে মুক্তি দিবো।‘ তৎকালীন সময়ে হাতে চুমো দেওয়ার অর্থ ছিলো, তার শাষন মেনে নেওয়া। প্রতিনিধি দল গেলেন শায়খের কাছে। কয়েকবছর আগেও যে সিরিয়ার পথে পথে ঘুরতেন, দিনমজুর ছারা যার আর কোন নাম ছিলো না, আজ তার কাছে রাষ্ট্রিয় সন্ধির প্রস্তাব। তাকে নিয়ে গোটা সিরিয়ায় উৎকন্ঠা। সন্ধির কথা শোনে তিনি সাফ জানিয়ে দিলেন “তোমাদের মালিককে বলে দাও, তার হাতে চুমো খাওয়াতো দূরের কথা, তিনি এসে আমার হাতে চুম্বন করতে চাইলেও অনুমতি দিবো না। যাও, চলে যাও।“
    বাদশা রেগে এবার শায়খকে তার নিজের ঘরের পাশের ঘরে বন্ধি করে রাখলেন। শায়খ কোরআন পড়তেন পাশের রোম থেকে বাদশা শোনতেন। এমতাবস্থায় একদিন ফিরিঙ্গিরা এলো বাদশাহর সাথে পরামর্শ করতে। বাদশা বললেন ‘পাশের ঘর থেকে যার কোরআন পড়ার আওয়াজ পাচ্ছেন আপনাদের দুটি অঞ্চল দেওয়ায় তিনি আমার প্রতি ক্ষুব্ধ। তোমাদের সাথে আপষের সংবাদ শোনে তিনি আমাকে অযোগ্য শাষক ঘোষনা করেছেন, এজন্য তাকে আটকে রেখেছি।“
    ফিরিঙ্গি প্রধান বললেন ‘তার সম্পর্কে সব শোনেছি। এ মানুষটি যদি আমাদের এলাকার ও আমাদের ধর্মের হতো, তবে এমন একজন নির্মোহ জ্ঞানীর পা ধুয়ে আওয় পানি টুকু পান করতাম সৌভাগ্য মনে করে।“ বিধর্মীরা সত্য অনুধাবন করেছিলেন কিন্তু মুসলমান হয়েও ব্যাক্তিস্বার্থের মোহে অন্ধ হয়ে বাদশা ইসমাইল বোঝার শক্তি থেকে বঞ্চিত ছিলেন। অবশেষে জনগনের আন্দোলন ও অব্যাহত চাপ সহ্য করতে না পেরে বাদশা ইসমাইল তাকে স্বসম্মানে মুক্তি দিলেন। কিন্তু ততদিনে তিনি মনস্থির করে ফেলেছেন তিরি সিরিয়া থাকবেন না। কারন সিরিয়ার শাষক মুসলিমদের সাথে খেয়ানতকারী। তার সাহচার্য নিরাপদ নয়। এমন বাদশাহদের নিকট থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।
    ৬৩৯ হিজরীতে তিনি সিরিয়া ছেরে মিসরে চলে গেলেন। মিশরের বাদশা নাজমুদ্দীন আইয়ুব মহান এ লোকের আগমনে খুশি হয়ে তাকে স্বাগত জানালো। মিশরের বাদশা এ শায়খকে মিশরের প্রধান খতীব , প্রধান বিচারপতি সহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ন পদ হাতে তুলে দিলেন। মিসরবাসিও এমন নির্ভিক আলেম ও শায়খকে পেয়ে খুশি।
    বাদশার এতো সমাধর আর দেশবাসীর ভালোবাসা পেয়েও নিজের দ্বায়িত্ব ও কর্তব্যে বিন্দু মাত্র ছাড় দিতে নারাজ এ শায়খ। শাষন ক্ষমতায় বসে কেউ নিজের আখের গোচাচ্ছে কিনা, যে যেই পদে আসিন সে সেই পদের উপযুক্ত কিনা প্রধান বিচারপতি হিসেবে তিনি তাঁর খোজ খবর নিতে লাগলেন। কাউকেই তিনি বিন্দু মাত্র ছাড় দেন নি। প্রমান হিসেবে একটি ঘটনা বর্ননা করতেছি।
    মন্ত্রী উজিরদের সম্পর্কে তদন্ত করে দেখতে পেলেন ক্ষমতাসীন নায়েবে সুলতান যা দেশের ২য় সর্বোচ্চ পদ, সে সহ অনেক মন্ত্রী ও উজির একসময় গোলাম ছিলো কিন্তু তারা আজাদ হয়নি। ইসলামের হুকুম আহকাম গোলাম ও মনিবের জন্য সমান নয়। ইসলামের কিছু বিধান আছে, যেগুলি পালন করতে পূর্ন স্বাধীন হতে হয়। আর যারা শাষন ক্ষমতায়, তাদের স্বাধীন হওয়াতো অপরিহার্য। তাই তিনি স্বপ্রনোদিত হয়ে তার হাইকোর্ট থেকে রুল জারী করলেন “শাষনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত যাদের গোলামী আজাদ করা হয়নি, রাষ্ট্রিয়ভাবে তাদেরকে পুনরায় বিক্রী করা হবে। তারা শরিয়ত মোতাবেক পুনরায় আজাদী লাভ করলে ক্ষমতায় পুনঃবহাল করা হবে। নয়তো এদের হাতে শাষনসস্পর্কিত সমস্ত বিধি-বিধানের চুক্তি ও ক্ষমতা চর্চা অবৈধ বলে গন্য করা হবে।“
    ভিন দেশ থেকে আসা এক আলেম নায়েবে সুলতান সহ অনেক মন্ত্রী ও আমলাকে বিক্রির আদেশ দিয়েছেন এমন রুল শোনে সারা মিসর অবাক ও কৌতুহলি হয়ে উঠলো। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন সাহসি ঘটনা এটাই প্রথম, এটাই শেষ।
    শায়খের এমন রুলের কথা শোনতে পেয়ে ছুটে এলেন শাসক নাজমুদ্দীন আইয়ুব। হাত জোর করে বললেন ‘এ হুকুম বদলে দিন, অন্য কোন উপায় বলুন।‘
    শায়খ বললেন ‘শরিয়তের বিধান পাল্টানোর ক্ষমতা কারো নেই। গোলাম কক্ষনো স্বাধীন লোকের শাসক হতে পারে না। শাসক হতে হলে তাদের আযাদ হতে হবে। ‘
    শায়খের হুকুম শুনে মন্ত্রী আমলারা বিরোধীতা শুরু করলো। তারা কেউ এ রুল মানবে না। শায়খের কানে এ খবর আসা মাত্র তিনি বাদশার নিকট ইস্তফা পত্র পাঠিয়ে দিলেন। তাতে লিখা, “তিনি নিজের জন্য কোন রুল জারি করেননি বা নিজের মতকে রুল হিসেবে জারি করেননি। এটা ইসলামের শরিয়ত। ইসলামের শরিয়তকে প্রধান বিচারপতি রুল হিসেবে জারি করার পর যদি মন্ত্রী আমলারা সেটা না মানে তবে এমন বিচারপতি হওয়ার দরকার নেই। কাজেই এ রুলকে আইন না করার যদি কোন ইচ্ছা না থাকে তবে আমার পদ নিয়ে নিন।“
    বাদশাকে ইস্তফাপত্র দিয়ে তিনি মিসর থেকে চলে যাবার জন্য রওনা দিলেন। খবর ছড়িয়ে পরলো সারা মিসরে, শায়খ মিসর ছেরে চলে যাচ্ছেন। শায়খের মিসর ত্যাগের খবর শোনে মিসরের ছাত্র, শিক্ষক, আলেম, ব্যবসায়ি, সমাজপতিদের অধিকাংশ ও মিসরের সাধারন জনগন শায়খের পিছে ছুটলেন। সমস্ত মিসরবাসি শায়খের সাথে মিসর ত্যাগ করবে। যে দেশের শাসকরা শায়খের কদর বুঝে না, ঐ দেশে তারা থাকবে না।
    বাদশার চোখে তখন অন্ধকার নেমে আসলো। প্রজাই যদি না থাকে রাজা কাকে নিয়ে রাজ্য চালাবেন? শায়খের জনসমর্থন দেখে উপদেষ্টাদের পরামর্শে বাদশা চললেন শায়খকে আটকাতে। দ্রুত গতির ঘোড়া নিয়ে অল্প সময়েই শায়খের নাগাল পেলেন। বিচারপতির রুলকে আইন করে তা বাস্তবায়ন করা হবে এমন প্রতুশ্রুতি দিয়ে শায়খ ও মিসরের জনগনকে মিসরে ফিরিয়ে আনলেন।
    কয়েকদিন পর বিশাল আয়েজন করে মন্ত্রী আমলাদের বিক্রির ব্যবস্থা করা হলো। লোকজন বাইতুল মালে টাকা দিয়ে মন্ত্রী আমলাদের কিনে নিলেন। তারপর তাদের মনিব তাদের আজাদ করার পরেই তাদের আগের পদ পদবী ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন ঘটনা আর ২য়টি হয়নি। মুসলিম ইতিহাসে এমন ঘটনা একটিই। রাজা ও উজিরদের ওপর ছড়ি ঘোরানোর মত অসীম সাহসী এমন একজন আলেম একবারই এসেছিলো ইতিহাসের কোলে। এ ঘটনার পর তার উপাধি হয় ‘আমীরদের বিক্রেতা‘।
    তিনি ৬৬০ হিজরীর ১০ জুমাদাল উলা, ১২৬১ সালে সালে ৮৩ বছর বয়সে মৃত্যুবরন করেন। তাঁর মৃত্যুর পর গোটা মিসর সিরিয়া ও আশেপাশের এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে, সবাই শোকার্ত হয়ে জানাজায় অংশ নেন। জানাজার শুরুর আগে মিসেরের বাদশা নাজমুদ্দিন একটি পাহাড়ে উঠলেন। কিন্তু না, ডানে বামে কোথাও যেন মানুষের শেষ নেই। দৃষ্টি সীমা ছাড়িয়েও মানুষ আর মানুষ তার জানাজায় অংশ নিয়েছিলেন। নাজমুদ্দিন পাশে দাড়ানো উজিরকে বললেন ‘আজ মিসরকে আমার শাষিত মনে হচ্ছে। এ মানুষটি যতদিন বেচে ছিলো ততদিন আমি মিসরের নামে মাত্র শাসক ছিলাম।
    আজ আর এমন কেউ নেই যার সামান্য ইশারায় মিসর কেপে উঠবে। এ বিষয়ে আমি আপাতত নিরাপদ।“ তুমুল জনপ্রিয়তার অধিকারী, শাসকদের অন্যায়ের সাথে আপষহীন, নির্মোহ নির্ভিক এ শায়খের নাম “ইযযুদ্দীন ইবনে আব্দুস সালাম“। তিনি একজন বিচারক ও প্রধান খতীব ছারাও একাধারে তাফসীর, হাদীস, সীরাত, আকিদা, ফিকহ এবং উসূলে ফিকহ শাস্ত্রে গুরুত্বপূর্ন রচনাবলী লিখে গেছেন। কি ছিলেন তিনি আর এলম ও তাকওয়ার জন্য কোথায় এসে পৌছেছেন!
    সংগৃহীত।

  • #2
    আল্লাহু আকবার। এরাই মোদের পূর্বসুরি, যাদের নিয়ে গর্ব করি।

    Comment


    • #3
      ভাই খুবই চমৎকার এমন ঘটনা আমি আগে কখনো শুনি নাই খুব ভাল লাগলো

      Comment

      Working...
      X