রাইফেল পরিচিতি
আজকের বিষয় : প্রাইমারি রাইফেল নলেজ
আজকের বিষয় : প্রাইমারি রাইফেল নলেজ
রাইফেল হতে হলে যা প্রয়োজন তা হল ট্রিগার এডজাসেন্ট ম্যাগাজিন রিসিভার সেট,অটোম্যাটিক রিলোড, রোটেটিং বোল্ট/গ্যাস অপারেটেড অটোম্যাটিক ফায়ারিং সিস্টেম ।
রাইফেল প্রধানত ৩ প্রকার।
১. এম. জি. বা মেশিন গান
২. এস. এম. জি. সাবমেশিন গান
৩. এল. এম. জি. বা লাইট মেশিন গান
বন্দুকের পশ্চাত বেগঃ শব্দটি অনেকেই শুনেছেন। বন্দুক থেকে গুলি বের হওয়ার সময় বন্দুক পেছন দিকে ধাক্কা দেয়। একে বন্দুকের রিকয়েল বলে। যে বন্দুকের রিকয়েল বেশী, তার গুলির ভরবেগ ও বেশী।
রিকয়েল বেশী হলে বুলেটের লক্ষ্য ভুল হয়।
রাউন্ড এককঃ বুলেট গণনার একক রাউন্ড। ১টি বুলেট কে বলা হয় ১ রাউন্ড, ৫টি হলে ৫ রাউন্ড, ১০ টি হলে ১০ রাউন্ড।
মাজেল ভেলোসিটি: রাইফেল থেকে বুলেট ফায়ার করার পর নল থেকে বের হওয়ার সময় যে বেগ প্রাপ্ত হয় তাকে মাজেল ভেলোসিটি বলে।
ম্যাগাজিনঃ এটি হল এক সাথে কত রাউন্ড বুলেট এক সাথে বন্দুকে লোড করা হয় তার সংখ্যা।
ম্যাগাজিন কয়েক প্রকার হয়। যেমন বক্স আকৃতি হলে বক্স ম্যাগাজিন, প্যারালাল বক্স হলে ক্যাসকেট ম্যাগাজিন, চ্যাপ্টা ড্রাম আকৃতি হলে ড্রাম ম্যাগাজিন ইত্যাদি।
ফায়ার রেটঃ এক মিনিটে একটানা রাইফেল যত রাউন্ড গুলি করতে পারে তাকে ফায়ার রেট বলে। সংক্ষেপে একে rpm বা রাউন্ড পার মিনিট বলে।
টার্গেটঃ লক্ষ বস্তুকে টার্গেট বলে। টার্গেট পয়েন্টের ৩ ইঞ্চি ব্যাসার্ধের ভেতর বুলেট আঘাত বা হিট করলে তাকে পয়েন্ট টার্গেট বলে। আর ৫-১০ ইঞ্চির ব্যাসার্ধের ভেতর হলে তাকে এরিয়া টার্গেট বলে।
বোল্টঃ ট্রিগার টিপলে যে পিস্টন টি বুলেট লোডিং, আনলোডিং এর কাজ করে তাকে বোল্ট বলে। বোল্ট রোটেটিং ও ম্যানুয়াল হয়। অটোম্যাটিক রাইফেলে রোটেটিং বোল্ট থাকে।
স্টোকঃ বন্দুকের পেছনের অংশে যে কাঠ বা লোহার বাট থাকে, তাকে স্টোক বলে। স্টোক ২ প্রকার। ১. লং স্টোক,২. সর্ট স্টোক। স্টোক ভাঁজ করা গেলে তাকে ফোল্ডিং স্টোক এবং সার্টারের মত টানা গেলে সার্টার স্টোক বলে (যেমন Mac 10)।
সাইট ও স্কুপঃ বন্দুকের নলের মাথায় জন্মগত ভাবে টার্গেট ফিক্স করার জন্য যে পয়েন্ট দেয়া থাকে তাকে সাইট বলে। জুম করার জন্য যে পয়েন্ট দেয়া থাকে তাকে স্কুপ বলে।
টেলিস্কোপঃ স্কুপ পয়েন্টের সাথে জুম করার জন্য যে দূরবীন বসানো হয় তাকে টেলিস্কোপ বলে।
ব্যারেলঃ বন্দুকের নল। নল ছোট হলে কারবাইন রাইফেল, বড় হলে এসল্ট রাইফেল।
সাইলেন্সারঃ যার সাহায্যে বন্দুকের সাউন্ড বা শব্দ বা নয়েজ কমানো হয় তাকে সাইলেন্সার বলে। যে রাইফেলের সাইলেন্স যত বেশি, তার স্টিলথ ও তত বেশি।
কারবাইনঃ এর ব্যারেল বা নল আকারে খাটো, এবং শব্দ বেশি করে। ফলে অল্প দূরত্বে এই রাইফেল ভালো ব্যবহার করা যায়।
রাইফেলের ভার্সন: একটি রাইফেলের অনেক ভার্সন থাকতে পারে। যেমন:
১. S ভার্সন: এই ভার্সন এর রাইফেলে স্টোক ভাঁজ করা যায়।
২. N ভার্সন: এই ভার্সন এর রাইফেলে অতিরিক্ত নাইট ভিশন স্কোপ থাকে। যার সাহায্যে রাতের বেলাও টার্গেট স্পষ্ট দেখা যায়।
৩. M ভার্সন:মডার্ন ভার্সন। ছোট খাটো ত্রুটি দূর করে ডেভলপ করা হয়েছে এতে।
৪. U ভার্সন: এই ভার্সন এর রাইফেল মূলত কারবাইন হয়।
একটি রাইফেলে অনেক গুলো ভার্সন এক সাথে দেয়া থাকতে পারে।
এম.জি (M.G): অত্যন্ত ভারী, এর গুলি বা কার্টিজ সাইজে বড়। এর রিকয়েল বেশী। ফায়ার রেট বেশি হয়। এর রিকয়েল থেকে বাঁচানোর জন্য স্ট্যান্ড ব্যবহার করা হয়। f.n minimi হল একটি বহুল ব্যবহৃত এম.জি রাইফেল। এম.জি কে H.M.G বা হেভি মেশিন গানও বলা হয়।
এস.এম.জি (S.M.G): এটি তুলনা মূলক কম ভারী, কার্টিজ এম. জি এর সমান বা সাইজে ছোট। রিকয়েল এম.জির তুলনায় কম। ফায়ার রেট প্রায় এম. জির কাছাকাছি, কিছুটা কম। এতে স্ট্যান্ড লাগেনা, অনেকে স্ট্যান্ড ব্যবহার করেন। A.K 47 একটি স্ট্যান্ডার্ড এস.এম.জি যার নাম বাচ্চার বাচ্চাও জানে। (অনেকেই ak47 কে smg এর কাতারে রাখেন, এসল্ট রাইফেল smg হতে পারে।)
এল.এম.জি (L.M.G): এটি হল লাইট মেশিন গান। এর ওজন খুবই হাল্কা, রিকয়েল কম, সাইজে ছোট এবং কার্টিজ ও ছোট, ফায়ার রেট বেশি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্টোক থাকে না। থাকলেও খুবই ছোট, সার্টার টাইপের। এর মজার বিষয় হল ১০০ মিটারের বেশি দূরত্বে এর কার্য ক্ষমতা থাকে না। বিখ্যাত এল. এম. জি হল ম্যাক ১০। কম দূরত্বে ব্রাশ ফায়ার করতে উৎকৃষ্ট।
বুলপাপ: বুলপাপ হল আধুনিক এস.এম.জি যার বিশেষ একটি সুবিধা আছে। তা হল ফিক্সড জুম করা। রেন্জের সর্বোচ্চ দূরত্বে জুম করা থাকে দুটি লেন্সের সাহায্যে। ফলে বার বার জুম ঠিক করার জন্য সময় নষ্ট করে খাটনি করতে হয় না। তবে বুলপাপ এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এর ম্যাগাজিন রিসিভার ট্রিগারের পেছনে থাকে। আরেকটি বৈশিষ্ট্য হল এর ব্যারেল লেন্থ কম হয়। জন প্রিয় কয়েকটি বুলপাপ হল AUG A1, TAVOR, H&K G11 lmg ইত্যাদি।
এবার আসুন কিছু হিসেব কষে রাইফেলের রেটিং করি।
রাইফেলের ওজন, কার্টিজের সাইজ, মাজেল ভেলোসিটি, রেন্জ, ফায়ার রেট, রিকয়েল ইত্যাদি থেকে বোঝা যায় কোন রাইফেল ভালো আর কোনটা বেশি ভালো।
২ টি রাইফেলে তুলনার সময় প্রথমে দেখা হয় রাইফেলের রেন্জ। যার রেন্জ বেশি, তার সাহায্যে তত দূরে টার্গেট হিট করানো যাবে। এর পর দেখা হয় রাইফেলের রিকয়েল। যার রিকয়েল যত কম, তার লক্ষ তত নির্ভুল। এর পর দেখা হয় এক সাথে রাইফেলের কার্টিজ ও মাজেল ভেলোসিটি বা বেগ। কারণ, গতিশক্তি যার বেশি, তার ভেদ করার ক্ষমতাও তত বেশি। গতিশক্তি নির্ভর করে ওজন(ভর) ও বেগের ওপর। ওজন ২গুন বাড়ালে, গতিশক্তি বাড়ে ২গুন। আর বেগ ২ গুন বাড়ালে গতিশক্তি বাড়ে ৪ গুন। তাই, ২ টি সমান গতির বুলেটের যার ওজন বেশি অর্থাৎ যার কার্টিজ বড়, তার ভেদন ক্ষমত তত বেশি। আবার ২টি সমান কার্টিজ এর যার বেগ বেশি, তার ভেদন ক্ষমতা বেশি।
চলবে ইনশাআল্লাহ...
সংগৃহীতঃ আধুনিক সমরাস্ত্র ফেসবুক গ্রুপ।
Comment