আন নাসর মিডিয়া
কর্তৃক প্রকাশিত
নিরাপত্তা: কখন, কোথায়, কেন ও কিভাবে?
-উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ||
এর থেকে
পর্ব- ০১
==================================================
===============================
কর্তৃক প্রকাশিত
নিরাপত্তা: কখন, কোথায়, কেন ও কিভাবে?
-উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ||
এর থেকে
পর্ব- ০১
==================================================
===============================
بسم الله الرحمن الرحيم.
الحمد لله رب العلمين، والصلوة والسلام على رسوله الكريم،
رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي ، يَفْقَهُوا قَوْلِي.
(পূর্বকথা)
الحمد لله رب العلمين، والصلوة والسلام على رسوله الكريم،
رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي وَاحْلُلْ عُقْدَةً مِّن لِّسَانِي ، يَفْقَهُوا قَوْلِي.
(পূর্বকথা)
আজ যে বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করবো, সে বিষয়টি আমাদের আমল এবং জিহাদের বিবেচনায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষকরে যে ময়দানে আমরা কাজ করছি; তার সূত্রে এটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। অথচ বিষয়টি নিয়ে আমাদের মাঝে উদাসীনতা ও সীমালঙ্ঘন উভয়টিই যথেষ্ট পরিমাণে বিদ্যমান। কেউ কেউ বিষয়টিকে মোটেই গুরুত্ব দেয় না! উল্টো এ কথা বলে যে, ভাই! এতে সাথীদের মন নষ্ট হবে এবং বহু সাথী মন খারাপ করবে। অন্যদিকে অনেকে নিরাপত্তার নামে এমন চূড়ান্ত পর্যায়ের সীমালঙ্ঘন করে যে, যেখানে মিথ্যা বলার কোন প্রয়োজন নেই, সেখানেও স্পষ্ট মিথ্যা বলে দেয়। কখনো আবার এমন কথাও বলে, যার কারণে অনেকের হৃদয় পুঁড়ে দগ্ধ হয়। তাই যতক্ষণ পর্যন্ত বিষয়টি সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট করণীয় কি? তা জানা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত যেন বিষয়টিকে আমরা একেবারেই (গুরুত্বহীন) একটি সাধারণ বিষয় মনে না করি এবং এ নিয়ে যেন আমাদের জিহাদ ও পারস্পরিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। কারণ পারস্পরিক সম্পর্ক ঠিক রাখা একান্তই জরুরী ও তা তাকওয়া অর্জনের (অন্যতম) মাধ্যম। সূরা আনফালের এক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
فَاتَّقُوا اللَّهَ وَأَصْلِحُوا ذَاتَ بَيْنِكُمْ … ﴿الأنفال: ١﴾
“অতএব, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং নিজেদের মাঝে বিদ্যমান পরস্পরিক সম্পর্ক সংশোধন কর।”(সূরা আনফাল : ১)
হযরত মাওলানা শফী রহ. বলেন, আল্লাহ তা‘আলা যে যে স্থানে বান্দাকে তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দিয়েছেন, সে সে স্থানে সেই নির্দেশের সাথে এমন কোন ইঙ্গিত বা ইশারাও দিয়ে দিয়েছেন, যার মাধ্যমে বান্দা তাকওয়া অর্জন করতে সক্ষম হবে। আল্লামা শাব্বীর আহমাদ উসমানী রহ. এর বক্তব্য আপনারা হয়তো পড়েছেন। তিনি বলেছেন, তাকওয়া একটি নূরানী অবস্থার নাম। উক্ত আয়াতের মাধ্যমে বুঝে আসে যে, তাকওয়া অর্জনের (অন্যতম) মাধ্যম হলো: পারস্পরিক সম্পর্ক ঠিক রাখা। যদি আপনি পারস্পরিক সম্পর্ক ঠিক রাখার চেষ্টা করেন, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা আপনাকে তাকওয়া অর্জনের তাওফীক দিবেন। এ কারণে আমাদের সবার জন্য আবশ্যক হলো: পারস্পরিক সম্পর্ক ঠিক রাখা। যেন আমরা সবাই তাকওয়া অর্জন করতে পারি।
(মূল আলোচনা)
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ.
কুরআনের আলোকে নিরাপত্তা
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ.
কুরআনের আলোকে নিরাপত্তা
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا خُذُوا حِذْرَكُمْ فَانفِرُوا ثُبَاتٍ أَوِ انفِرُوا جَمِيعًا ﴿النساء: ٧١﴾
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা সতর্কতা অবলম্বন কর, অত:পর পৃথক পৃথক সৈন্যদলে কিংবা সমবেতভাবে (জিহাদে) বেরিয়ে পড়।”(সূরা নিসা : ৭১)
আল্লাহ তা‘আলা যে যে স্থানে মু’মিনদেরকে জিহাদ করার নির্দেশ দিয়েছেন অথবা অন্য যে কোন বিধি-বিধান বর্ণনা করেছেন, সে সে স্থানে তার নিয়ম-পদ্ধতিও শিক্ষা দিয়েছেন। উক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদেরকে সম্বোধন করে দু’টি বিষয়ের প্রতি দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন-
প্রথম বিষয় হলো- خُذُوا حِذْرَكُم অর্থাৎ সতর্কতা অবলম্বন কর, নিরাপত্তা নিশ্চিত কর।
দ্বিতীয় বিষয় হলো- فَانفِرُوا ثُبَاتٍ أَوِ انفِرُوا جَمِيعًا অর্থাৎ অত:পর পৃথক পৃথক সৈন্যদলে কিংবা সমবেতভাবে (জিহাদে) বেরিয়ে পড়।
উলামায়ে কেরামের নিকট (ف) অব্যয়টি পরবর্তী বুঝানোর জন্য আসে। তাই আয়াতটির মর্মার্থ হবে- প্রথমে নিরাপত্তা নিশ্চিত কর, তারপর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বের হও, যুদ্ধ কর। অর্থাৎ নিরাপত্তার বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দাও, তারপর জিহাদ কর।
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদের সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন-
وَلْيَأْخُذُوا حِذْرَهُمْ وَأَسْلِحَتَهُمْ… ﴿النساء: ١٠٢﴾
“তারা যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে।” (সূরা নিসা : ১০২)
এভাবে কুরআনুল কারীমের কয়েক স্থানে আসহাবে কাহাফ (গুহার অধিবাসীগণ), হযরত মূসা (আঃ ও হযরত ইউসুফ (আঃ এর ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। বিশেষভাবে আসহাবে কাহাফের ঘটনা অনেক আয়াতে নিরাপত্তা প্রসঙ্গে এসেছে। যা থেকে নিরাপত্তা অবলম্বনের গুরুত্ব বুঝে আসে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- আসহাবে কাহাফ যখন ঘুম থেকে উঠে, তখন তাদের এক সঙ্গীকে বলেছিলো, বাজার থেকে খাওয়া-দাওয়ার জন্য কিছু নিয়ে আস। লক্ষণীয় বিষয় হলো: তারা তাদের সে সঙ্গীকে কি বলেছিলো? তাদের সে সঙ্গীকে তারা যা বলেছিলো, তা আমাদের জন্যও প্রযোজ্য। কারণ, আমাদের মনে করা উচিত যে, আমরাও তো এ যুগের আসহাবে কাহাফ। (আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে কবুল করুন। আমীন) আমরা যদি আমাদের কোন সঙ্গীকে (বর্তমানেও) বাজারে পাঠানোর সময় সে শব্দগুলোই বলি, তবে তা মোটেও ভুল হবে না। কারণ, তারা তাকে যা বলেছিলো, বর্তমানে তা (তাদের মত) আমাদেরও বলা প্রয়োজন। তাদের সে উক্তিটি আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে এভাবে উল্লেখ করেছেন যে, তারা তাদের সে সঙ্গীকে বলেছিলো-
وَلْيَتَلَطَّفْ وَلَا يُشْعِرَنَّ بِكُمْ أَحَدًا ﴿الكهف: ١٩﴾
“সে যেন নম্রতা সহকারে যায় ও কিছুতেই যেন তোমাদের খবর কাউকে না জানায়।” (সূরা কাহাফ : ১৯)
অর্থাৎ নম্রভাবে কথা বলবে, সতর্কতার সাথে কথা বলবে। এমন কোন কথা বলবে না, যা থেকে অন্যরা আমাদের মূল পরিচয় জেনে যেতে পারে।
আমরা কত জায়গায় যাই- শহরে যাই, এদিক-সেদিক যাই, তা সত্ত্বেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। তারা যেন আমাদের মূল সম্পর্কে জানতে না পারে। মূল মানে আমাদের কার্যক্রম। কারণ তারা যদি আমাদের মূল তথা কার্যক্রম সম্পর্কে জেনে যায়, তাহলে আমাদের ক্ষতি করবে। আমাদের কি ক্ষতি করবে ? আয়াতের পরবর্তী অংশে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
إِنَّهُمْ إِن يَظْهَرُوا عَلَيْكُمْ يَرْجُمُوكُمْ أَوْ يُعِيدُوكُمْ فِي مِلَّتِهِمْ وَلَن تُفْلِحُوا إِذًا أَبَدًا ﴿الكهف: ٢٠﴾
“তারা যদি তোমাদের খবর জানতে পারে, তবে পাথর মেরে তোমাদেরকে হত্যা করবে, অথবা তোমাদেরকে তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নেবে। তাহলে তোমরা কখনই সাফল্য লাভ করবে না।”(সূরা কাহাফ : ২০)
অর্থাৎ ওরা যদি তোমাদের সম্পর্কে জেনে ফেলে يَرْجُمُوكُمْ তবে তোমাদেরকে পাথর মেরে হত্যা করবে। এর পরবর্তী অংশে আরও বলেন- أَوْ يُعِيدُوكُمْ فِي مِلَّتِهِمْ অথবা তোমাদেরকে ফিরিয়ে নিবে ওদের ধর্মে। আল্লাহ না করুন! তখন তোমরা নিজেদের ধর্ম ছেড়ে দিবে।
আল্লাহ না করুন! আল্লাহ না করুন! একজন মুজাহিদ যখন গ্রেফতার হয়। তখন সে কত বড় মুসিবত এবং পরীক্ষার সম্মুখীন হয়! আয়াতের পরবর্তী অংশে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেছেন- তোমরা যদি তাদের ধর্মে ফিরে যাও وَلَن تُفْلِحُوا إِذًا أَبَدًا তাহলে তোমরা আর কিছুতেই সফলকাম হবে না।
তাই আমাদের সাথীদের উদ্দেশ্যে আমাদের একটাই কথা- وَلْيَتَلَطَّفْ وَلَا يُشْعِرَنَّ بِكُمْ أَحَدًا নম্রভাবে কথা বলবে, সতর্কতার সাথে কথা বলবে। এমন কোন কথা বলবে না, যা থেকে অন্যরা আপনাদের মূল পরিচয় জেনে যেতে পারে।
কোন সাথী গ্রামে যেতে চাইলে তাকে বলবে وَلْيَتَلَطَّفْ وَلَا يُشْعِرَنَّ بِكُمْ أَحَدًاখানা দেয়ার সময় বলবে وَلْيَتَلَطَّفْ وَلَا يُشْعِرَنَّ بِكُمْ أَحَدًا প্রভৃতি।
আরও পড়ুন
২য় পর্ব
Comment