আন নাসর মিডিয়া
কর্তৃক প্রকাশিত
নিরাপত্তা: কখন, কোথায়, কেন ও কিভাবে?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ||
এর থেকে
পর্ব- ০২
==================================================
===============================
কর্তৃক প্রকাশিত
নিরাপত্তা: কখন, কোথায়, কেন ও কিভাবে?
উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ||
এর থেকে
পর্ব- ০২
==================================================
===============================
হাদীস ও সীরাতের আলোকে নিরাপত্তা
আপনি যদি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র সীরাতের দিকে দৃষ্টি দেন, তাহলে তাতে দেখতে পাবেন যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মানুষকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করা শুরু করেছেন এবং ইসলামের সূচনালগ্নে দাওয়াতের কাজ আরম্ভ করেছেন, তখন সে কাজ গোপনে করেছেন না প্রকাশ্যে? নিশ্চয় গোপনে। এক আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا … ﴿التحريم: ٦﴾
“তোমরা নিজেদেরকে এবং পরিবার-পরিজনদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর।”(সূরা তাহরীম : ০৬)
আয়াত থেকে বুঝে যাচ্ছে- ইসলামের সূচনাকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতি কাজ ছিল গোপনে। এ দাওয়াতি কাজ এতটাই গোপনে ছিল যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পৃথক পৃথকভাবে এক একজনের কাছে দাওয়াত নিয়ে গেছেন। এমনিভাবে ইসলামের সূচনাকালে যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় সাহাবাদের সাথে সাক্ষাতের ইচ্ছা করতেন, তখন তিনি দারে আরকাম অর্থাৎ হযরত আরকাম রাযি. এর ঘরে সবার সাথে একত্রিত হতেন। সে সময় আরকাম রাযি. এর বয়স ছিলো (মাত্র) ১২ বছর। অন্য অনেক সাহাবীর ঘর থাকা সত্ত্বেও কেন তিনি এত স্বল্প বয়সী ছাহাবীর ঘর দারে আরকামকে নির্বাচন করলেন? এ প্রসঙ্গে প্রথম লক্ষনীয় বিষয় হলো: আরকাম রাযি. এর ঘরটি আবু জাহালের ঘরের একেবারেই নিকটে ছিলো। তাঁর ঘরটি আবু জাহালের ঘরের একেবারেই নিকটে হওয়ায় আবু জাহাল এদিক-ওদিকের খোঁজ-খবর রাখলেও তার খবরই ছিল না যে, তার শক্ররা তার ঘরের নিকটেই এসে একত্রিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন সাহাবাদের সাথে সেখানে একত্রিত হতেন; সীরাতের কিতাবে এসেছে- তখন সেখানেও তিনি তাদের সাথে কানাঘুষা করে, চুপিসারে কথা বলতেন। যেন আওয়াজ দূরে না যায় এবং শত্রুরা বুঝতে না পারে।
হযরত রাসূলে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দীক্ষাপ্রাপ্ত সাহাবীদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন হযরত আনাস রাযি.। তিনি ছিলেন একদম ছোট একটি বাচ্চা। তথাপি তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে থাকতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বিভিন্ন কাজে পাঠাতেন। একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে কোন এক কাজে কোথাও পাঠিয়েছেন। ঘরে ফিরে আসার পর তার মা তাকে বলল, বাবা! এত দেরী করে ঘরে ফিরেছো কেন? তিনি বললেন, আমাকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটা কাজে পাঠিয়ে ছিলেন। মা বলল, তিনি কোন কাজে তোমাকে পাঠিয়ে ছিলেন? তিনি বললেন, মা! আমি আপনাকে সে কাজটির কথা বলতে পারব না।
এ সম্পর্কিত আরও একটি ঘটনা- “একবার রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও হযরত আবু বকর ছিদ্দীক রাযি. মক্কার মুশরিকগণ কর্তৃক নির্যাতনের স্বীকার হন। যার ফলে হযরত আবু বকর রাযি. বেহুশ হয়ে পড়েন। হুশ ফেরার পর তিনি তাঁর মাকে ডেকে বললেন, মা! আপনি গিয়ে হযরত উমর রাযি. এর বোনকে জিজ্ঞাসা করুন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেমন আছেন? তাঁর মা গিয়ে হযরত উমর রাযি.এর বোনকে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন হযরত উমর রাযি. এর বোন বললেন, তাঁর সম্পর্কে আমি কি জানি? এভাবে বলার কারণ ছিল, হযরত উমর রাযি. এর বোন নিশ্চিত ছিলেন না যে, হযরত আবু বকর রাযি. এর মাকে বললে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে কিনা। যখন হযরত আবু বকর রাযি. এর মা বলল, কথাটি আবু বকর-ই জিজ্ঞাসা করেছে। তখন হযরত উমর রাযি. এর বোন বলল, আচ্ছা! ঠিক আছে। তাহলে আমাকে তাঁর কাছে নিয়ে চলুন। যখন সে তাকে হযরত আবু বকর রাযি. এর নিকট নিয়ে গেল, তখন হযরত আবু বকর রাযি. তাকে জিজ্ঞাসা করল, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেমন আছেন? উত্তরে চুপিসারে তিনি বললেন, আপনার মা আমার পিছন থেকে আমাদের কথা শুনছেন! হযরত আবু বকর রাযি. বললেন, কোন অসুবিধা নেই। তিনি বললেন, তাহলে ঠিক আছে, এবার শুনুন।” এমনি ছিল তাদের নিরাপত্তা।
বাইয়াতে আকাবার ঘটনাটি সবার জানা থাকার কথা। যখন আনসারগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে তাদের সময় দিতেন এবং বলতেন, খেয়াল রাখবেন মক্কার মুশরিকগণ যেন বিষয়টি জানতে না পারে। সে জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাত্রিবেলায় তাদের সময় দিতেন। রাতের শেষ প্রহরে সবাই এসে একত্রিত হতো। যেহেতু আনসারগণ সংখ্যায় অধিক ছিল, তাই দু’জন দু’জন করে এসে তাঁর সাথে সাক্ষাত করে ভোরবেলা সূর্যের আলো কিরণ ছড়ানোর পূর্বেই ফিরে যেতো।
আরো দেখুন! “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি যখন হিজরতের নির্দেশ আসে। তখন তিনি হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাযি. এর ঘরে (একটু বেশী) যাতায়াত শুরু করেন। এমনকি তিনি হযরত আবু বকর রা. এর ঘরে যাওয়ার জন্য একটা সময়ও নির্ধারণ করে নেন। সেই সময়টি ছিল ঠিক দুপুর বেলা; যখন সবাই ঘুমিয়ে থাকত। (তাই আজও যদি আমরা কোন ঘরে একত্রিত হই, তাহলে বের হওয়ার জন্য একটা সময় নির্ধারণ করে নেব যে, আমরা কখন বের হব।) যাওয়ার সময় চেহারায় চাদর টেনে নিতেন, যেন কেউ তাকে চিনতে না পারে। সেখানে পৌঁছার পর কোন একটি কামরায় যেতেন। কামরায় ঘরের কেউ থাকলে তিনি তাকে বলতেন, তাঁর সাথে আমার একটু একান্ত আলাপ ছিল। ঘরের মানুষটি যখন বেরিয়ে যেতো এবং হযরত আবু বকর রাযি. বসতেন, তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাথে হিজরতের ব্যাপারে কথা বলতেন যে, আমাকে হিজরতের হুকুম দেওয়া হয়েছে। ইত্যাদি” এমনি ছিল তাদের নিরাপত্তা। আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের সকলকে নিরাপত্তা অবলম্বনের তাওফীক দান করুন। (আল্লাহুম্মা আমীন)
হযরত আলী রাযি. কে নিজের বিছানায় শোয়ানো ও রাতে বের হওয়া, এসবই ছিল নিরাপত্তার অংশ। এছাড়া আরও যত প্রস্তুতি; তা সবই নিরাপত্তার অংশ ছিল।
আরো লক্ষ্য করুন! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন হিজরত করতে বের হয়েছিলেন, তখন কি মক্কার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন নাকি মদিনার? অবশ্যই মদিনার উদ্দেশ্যে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হিজরত করবেন মদিনায়। কিন্তু মদিনার পথে না গিয়ে গারে সাওরের পথে যান। আর গারে সাওর মদিনার পথে নয়। বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনার পথ সম্পূর্ণ ছেড়ে দিয়ে ভিন্ন পথ গ্রহন করেন। আর এমনভাবে সেখানে গিয়েছিলেন যে, কেউ ধারণাও করতে পারবে না যে, এ দিকে তিনি গিয়েছেন। তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনার পথে না গিয়ে ভিন্ন পথে গারে সাওরে পৌঁছালেন এবং সেখানে কিছু কাল অবস্থান করলেন। তারপর তিনি মদিনার পথে যান। একেই বলে নিরাপত্তা।
আরও পড়ুন
Comment