আন নাসর মিডিয়া
কর্তৃক প্রকাশিত
নিরাপত্তা: কখন, কোথায়, কেন ও কিভাবে?
-উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ||
এর থেকে
পর্ব- ০৩
==================================================
===============================
কর্তৃক প্রকাশিত
নিরাপত্তা: কখন, কোথায়, কেন ও কিভাবে?
-উস্তাদ উসামা মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ||
এর থেকে
পর্ব- ০৩
==================================================
===============================
নিরাপত্তা বনাম তাওয়াক্কুল: সংঘাত না সমন্বয়
(নিরাপত্তা প্রসঙ্গে এসে) অনেক সময় আমরা তাওয়াক্কুলের কথা বলি যে, আমাদের সবার তাওয়াক্কুল করা উচিত। অথচ আমরা কি চিন্তা করে দেখেছি যে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর একজন নবী ছিলেন। আল্লাহর সাহায্য ও নেগরানীতে, আল্লাহর পরিপূর্ণ সন্তুষ্টির জন্যই তিনি কাজ করেছেন। অথচ আমাদের কত গোনাহ, ভুল-ক্রটি। তাঁর সীরাত নিয়ে আপনি যত চিন্তা করবেন, দেখবেন- এত কিছুর পরেও তিনি নিরাপত্তা অবলম্বন করেছেন। উম্মতের জন্য এতে অনেক বড় শিক্ষা রয়েছে, আর তাওয়াক্কুলের মর্মও এটিই। আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে নির্দেশ এসেছে- خُذُوا حِذْرَكُم“তোমরা (নিরাপত্তার জন্য) সব ধরণের উপায়-উপকরণ অবলম্বন কর।” তাই তিনি নিরাপত্তা ও সতর্কতার কোন উপকরণ বাদ দেননি বরং নিরাপত্তার জন্য যত ধরণের উপায়-উপকরণের প্রয়োজন ছিল, সবই তিনি অবলম্বন করতেন।
আমাদের অবস্থা এমন যে, আমরা যদি কোন এক কাজ সম্পর্কে অবগত হই। তখন জিজ্ঞাসা করি, এখানে কি আল্লাহর মদদ আছে? আমি বলি, আল্লাহর মদদ ও সাহায্য আল্লাহর বিধান পালন এবং শরীয়তের অনুসরণ-অনুকরণের সাথে সম্পৃক্ত। শরীয়তের নির্দেশ خُذُوا حِذْرَكُم “তোমরা (নিরাপত্তার জন্য) সব ধরণের উপায়-উপকরণ অবলম্বন কর।” যখন আপনি শরীয়তের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করবেন, জিহাদের দিকে অগ্রসর হবেন, তখন আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে মদদ আসবেই। এজন্য এ বিষয়টি আমাদের স্মরণ রাখা উচিত যে, উপায়-উপকরণবিহীন তাওয়াক্কুল বস্তুত: (শরয়ী) তাওয়াক্কুলই নয়। এ ধরণের তাওয়াক্কুল আল্লাহর দরবারে আমাদের জবাবদিহিতার কারণ হতে পারে। তাই আল্লাহ তা‘আলার সামনে যখন আমরা উপস্থিত হব, তখন আল্লাহ না করুন! যদি আমরা এ মর্মে জিজ্ঞাসিত হই যে, তোমরা কেন উপায়-উপকরণ অবলম্বন করোনি? তখন আমরা কি জবাব দিব? তাই পুনরায় বলছি- আল্লাহ তা‘আলার হুকুমের কারণেই মানুষ উপায়-উপকরণের মুখাপেক্ষী। একটি কথা মনে রাখি- আল্লাহ তা‘আলার দু’টি নিয়ম রয়েছে। যথা: এক. শরীয়ত দুই. তাকবিনী। তো আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদেরকে দুটোই গ্রহন করার আদেশ দিয়েছেন।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সীরাত থেকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারি যে, তাওয়াক্কুল হলো: উপায়-উপকরণ অবলম্বন করার পর ফলাফল লাভের বিষয়টি আল্লাহর উপর অর্পণ করা। ফলাফলের জন্য মোটেও মন খারাপ না করা। কারণ হাদিসে এসেছে- তোমরা উপায়-উপকরণ অবলম্বন কর। যেহেতু ফলাফল লাভের বিষয়টি মানুষের হাতে নয়; বরং আল্লাহর হাতে, তাই আল্লাহর উপরই বিষয়টি ছেড়ে দাও। তাছাড়া উপায়-উপকরণ ব্যবহারের নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দিয়েছেন এবং রাসূলের সীরাত থেকে ও বিষয়টি পরিস্কার যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বক্ষেত্রে উপায়-উপকরণ অবলম্বন করেতন। উদাহারণস্বরূপ যুদ্ধে যাওয়ার সময় লৌহ বর্ম পরিধান করা, সওয়ার হওয়ার অবস্থাদি, খানা-পিনার হালাতসমূহ এবং সফরের সময় নিরাপত্তা অবলম্বন করা। যেমন যুদ্ধে যাওয়ার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ পরিমাণ সতর্কতা অবলম্বন করতেন যে, পূর্ব দিকে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে (প্রথমেই পূর্ব দিকে না গিয়ে) পশ্চিম দিক থেকে সফর শুরু করতেন। যেন সেখানে কোন গোয়েন্দা থাকলে, তার পক্ষে সঠিক কোন তথ্য দেওয়া সম্ভব না হয়। এ সবই ছিল উপায়-উপকরণ অবলম্বনের আদর্শ নমুনা।
আরও দেখুন! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বীয় সাহাবীদেরকে কেমন তারবিয়ত করেছেন? যা আজও আমাদের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ। তিনি এক সাহাবীকে কিভাবে তারবিয়ত করেছেন তার নমুনা দেখুন- “জনৈক সাহাবী নিজ উষ্ট্রি না বেধে ছেড়ে দিয়ে রাসূলের কাছে এসে বলল। হে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আমি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তারই কাছে আমার উষ্ট্রিটিকে সোপর্দ করে ছেড়ে দিয়ে এসেছি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, না! (এটা তাওয়াক্কুল নয়)। বরং তুমি প্রথমে গিয়ে উষ্ট্রিটিকে বাধ, তারপর আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল কর।” এটাই হলো প্রকৃত তাওয়াক্কুল।
আরও পড়ুন
Comment