Announcement

Collapse
No announcement yet.

পিআর ফার্ম এবং বট আইডি: মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ডিজিটাল যুদ্ধ এবং এর মোকাবিলা || " সকল পর্ব একত্রে "

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • পিআর ফার্ম এবং বট আইডি: মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ডিজিটাল যুদ্ধ এবং এর মোকাবিলা || " সকল পর্ব একত্রে "

    পিআর ফার্ম এবং বট আইডি: মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ডিজিটাল যুদ্ধ এবং এর মোকাবিলা




    বর্তমান বিশ্বে সোশ্যাল মিডিয়া একটি অপ্রতিরোধ্য মাধ্যম। এটি কেবল ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মতামত প্রকাশের স্থান নয়, বরং এটি রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সামাজিক পরিবেশে গভীর প্রভাব বিস্তার করে। পিআর ফার্ম (পাবলিক রিলেশন ফার্ম) এবং বট আইডি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রভাব বিস্তারে ব্যবহৃত দুটি শক্তিশালী হাতিয়ার। প্রভাবশালী গোষ্ঠী ও রাষ্ট্রগুলো এই প্রযুক্তিগুলো ব্যবহার করে জনমত নিয়ন্ত্রণ, ভ্রান্ত তথ্য প্রচার এবং বিরোধীদের দমন করার কাজ করে।
    .
    মুসলিম উম্মাহ, যারা ইতিমধ্যেই ইসলামফোবিয়া এবং নেতিবাচক প্রচারণার শিকার, এই ডিজিটাল প্রোপাগান্ডার মূল লক্ষ্যবস্তু। পিআর ফার্ম ও বট আইডি কীভাবে কাজ করে, কাদের দ্বারা পরিচালিত হয় এবং কীভাবে মুসলিম উম্মাহ এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে পারে তা বিশদে আলোচনা করা জরুরি।

    পিআর ফার্ম: কী এবং কীভাবে কাজ করে?

    পিআর (পাবলিক রিলেশন) ফার্ম হলো এমন একটি পেশাদার প্রতিষ্ঠান, যা ব্যক্তি, কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল বা এমনকি পুরো একটি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জনমত প্রভাবিত করার জন্য কৌশলগত পরিকল্পনা এবং কার্যক্রম পরিচালনা করে। এসব ফার্মের কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সংবাদ প্রচারণা পরিচালনা করা, ব্র্যান্ড বা ইমেজ তৈরি এবং পুনর্নির্মাণ করা, প্রতিপক্ষকে দুর্বল করে তোলা, এবং নির্দিষ্ট বার্তা বা ন্যারেটিভ প্রচারের মাধ্যমে জনমত গঠন করা।
    .
    পিআর ফার্মগুলো মূলত মিডিয়ার মাধ্যমে নির্দিষ্ট বিষয়গুলোকে সামনে নিয়ে আসে এবং কিছু বিষয় চেপে যায়। তারা সংবাদ মাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মকে কাজে লাগিয়ে জনসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এই কাজের মাধ্যমে তারা একটি নির্দিষ্ট ইস্যুতে ইতিবাচক বা নেতিবাচক জনমত তৈরি করতে পারে। এদের কার্যক্রমের মধ্যে বড় একটা কাজ হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্যাম্পেইন পরিচালনা করা।

    পিআর ফার্মের কার্যক্রম এর কিছু বাস্তব উদাহরণ:

    ১. হিল অ্যান্ড নোল্টন (Hill & Knowlton):

    হিল অ্যান্ড নোল্টন একটি বিখ্যাত পিআর ফার্ম, যা ১৯৯১ সালের গালফ ওয়ার-এর সময় কুয়েত সরকার এবং তাদের মিত্রদের পক্ষ থেকে কাজ করেছিল। এই ফার্মটি "নাইরা টেস্টিমনি" নামে পরিচিত একটি বিতর্কিত ঘটনা পরিচালনা করেছিল। এতে এক কিশোরী সাক্ষ্য দেয় যে, ইরাকি সৈন্যরা কুয়েতের হাসপাতালে প্রবেশ করে শিশুদের ইনকিউবেটর থেকে টেনে বের করে হত্যা করেছে। পরবর্তীতে জানা যায়, এই গল্প ছিল সম্পূর্ণভাবে পরিকল্পিত এবং মিথ্যা, যা কুয়েতি সরকারের স্বার্থে জনমত প্রভাবিত করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।

    ২. এডেলম্যান (Edelman):

    এডেলম্যান বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পিআর ফার্ম, যা বিভিন্ন বৃহৎ কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান এবং রাজনীতিকদের সঙ্গে কাজ করে। উদাহরণস্বরূপ, তারা একসময় ওয়ালমার্টের পক্ষে কাজ করেছে, যেখানে তারা ওয়ালমার্টের শ্রম নীতি এবং স্থানীয় ব্যবসাগুলোর ওপর প্রভাব নিয়ে সমালোচনা মোকাবিলার জন্য প্রচারণা চালিয়েছিল।

    ৩. সাউদার্ন কোম্পানি এবং বুরসন-মারস্টেলার (Burson-Marsteller):

    এই পিআর ফার্মটি জ্বালানি কোম্পানিগুলোর জন্য কাজ করেছে, যেখানে তারা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি করার জন্য পরিকল্পিতভাবে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করেছিল।

    পিআর ফার্মগুলো তাদের কার্যক্রমে বেশ কিছু কৌশল ব্যবহার করে:

    ১. মিডিয়া ম্যানিপুলেশন: সংবাদমাধ্যমে নির্দিষ্ট গল্প প্রচার বা কিছু তথ্য গোপন করে জনমত গঠন।
    ২. ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট: কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নেতিবাচক সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে তা সামাল দেওয়া।
    ৩. সোশ্যাল মিডিয়া ক্যাম্পেইন: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করে জনসাধারণের মনোভাব নিয়ন্ত্রণ।
    ৪. মিথ্যা তথ্য প্রচার: অনেক ক্ষেত্রে কৌশলগতভাবে ভুল বা মিথ্যা তথ্য প্রচার করে জনমত প্রভাবিত করা।
    .
    পিআর ফার্মের সাম্প্রতিক কার্যক্রম - ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা (Cambridge Analytica): যদিও এটি একটি ডেটা অ্যানালিটিক্স কোম্পানি, তবে পিআর ফার্ম হিসেবে তাদের কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তারা ফেসবুকের ডেটা ব্যবহার করে প্রভাবশালী ক্যাম্পেইন পরিচালনা করেছিল, যা ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে জনমত তৈরিতে সাহায্য করেছিল।
    .
    এগুলো থেকে বোঝা যায় যে পিআর ফার্মগুলো কেবল কোনো প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ডিং বা প্রচারণার জন্য কাজ করে না; তারা জনমত প্রভাবিত করতে এমনকি বিশ্ব রাজনীতিতে বড় ভূমিকা রাখতে পারে।

    বট আইডি: কী এবং কীভাবে কাজ করে?

    বট আইডি হলো স্বয়ংক্রিয় সফটওয়্যার প্রোগ্রাম যা সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ডিজাইন করা হয়। এই আইডিগুলো মানব ব্যবহারকারীদের মতো আচরণ করে, তবে মূলত এগুলো প্রোগ্রাম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এগুলোর ব্যবহার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া সমর্থন দেখানো, জনমত প্রভাবিত করা, ট্রেন্ড তৈরি করা, এবং বিরোধীদের আক্রমণ করার মতো কার্যক্রমে দেখা যায়। বট আইডি ব্যবহার করে একই মেসেজ হাজারো আইডি থেকে শেয়ার করা হয়, যার ফলে একটি মিথ্যা প্রচারণা সত্যে পরিণত হয়। এছাড়া জনপ্রিয় হ্যাশট্যাগ তৈরি করা, বিরোধী হ্যাশট্যাগ চাপিয়ে দেওয়া, বা জনমতের দিক পরিবর্তন করাও এর উদ্দেশ্য।

    বট আইডি মূলত বিভিন্ন অ্যালগরিদম এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) মাধ্যমে কাজ করে। এগুলো নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করার জন্য প্রোগ্রাম করা হয় এবং বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সংযুক্ত করা হয়। বট আইডিগুলোর কাজের ধাপগুলো নিম্নরূপ:

    - স্বয়ংক্রিয়ভাবে বা ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হাজারো ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করা হয়, যেগুলো বিভিন্ন নাম, ছবি, এবং ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে মানুষের মতো দেখানো হয়।

    - নির্দিষ্ট বিষয় বা বার্তা একযোগে ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যাতে তা দ্রুত ভাইরাল হয়। এটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ট্রেন্ড তৈরি করার জন্য কার্যকর।

    - জনপ্রিয় হ্যাশট্যাগ তৈরি করার জন্য বট আইডিগুলো একসঙ্গে পোস্ট করে, অথবা বিরোধী হ্যাশট্যাগকে আড়াল করতে বিপুল পরিমাণ পোস্ট করে তা দমিয়ে ফেলে।

    - বট আইডিগুলো একই সময়ে হাজার হাজার শেয়ার এবং কমেন্ট দিয়ে কোনো কন্টেন্টকে প্রভাবিত করে।

    - যেসব ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ভিন্ন মতামত দেয়, তাদের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক মন্তব্য ছড়ানো হয়।

    বাস্তব উদাহরণ এবং পিআর ফার্মের সংশ্লিষ্টতা

    ১. রাশিয়ান ট্রোল ফার্ম এবং ইন্টারনেট রিসার্চ এজেন্সি (Internet Research Agency):

    রাশিয়ার এই পিআর ফার্মটি বট আইডি ব্যবহার করে ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বড় ভূমিকা পালন করেছিল। তারা ফেসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে ভুয়া খবর, বিভ্রান্তিকর তথ্য, এবং প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে জনমত প্রভাবিত করেছিল। প্রায় ৫০,০০০ বট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে লক্ষ লক্ষ পোস্ট শেয়ার করা হয়, যার ফলে নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত হতে পারে বলে অভিযোগ উঠে।

    ২. ভারতের নির্বাচনী প্রচারণা:

    ভারতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সোশ্যাল মিডিয়ায় বট আইডি ব্যবহার করে জনমত প্রভাবিত করার জন্য কাজ করে। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে বেশ কয়েকটি রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, টুইটারে এবং ফেসবুকে বট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ভুয়া সমর্থন দেখানো এবং বিরোধীদের আক্রমণ করা হয়েছিল। বিশেষ করে বিজেপি'র আইটি সেল এই কাজের জন্য কুখ্যাত।

    ৩. সৌদি আরব এবং খাশোগি হত্যাকাণ্ড:

    সৌদি আরব সরকারের পক্ষ থেকে পরিচালিত বট নেটওয়ার্কগুলো সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল। "যুদ্ধ শুরু" বা "মিথ্যা প্রচারণা" দাবি করে বট আইডি ব্যবহার করে সৌদি সরকারের বিরোধী ন্যারেটিভকে দমন করার চেষ্টা করা হয়েছিল।

    ৪. বর্তমানে আওয়ামী লীগের সোশ্যাল মিডিয়া কৌশল:

    সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ সোশ্যাল মিডিয়ায় ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে এক বিশাল প্রচারণা চালাচ্ছে। তারা ফেসবুক, টুইটার এবং ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মে ইউনূস সরকারের সমালোচনামূলক কনটেন্ট তৈরি ও ছড়িয়ে দিচ্ছে। এসব কনটেন্ট মূলত তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে।

    এছাড়া, আওয়ামী লীগের নেতারা ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিকভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন এবং এসব বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপকভাবে প্রচার করা হচ্ছে। তারা ইউনূস সরকারের রাজনৈতিক অবস্থান ও নীতিকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করছে, যা বিভ্রান্তি এবং জনমনে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এই প্রচারণার জন্য আওয়ামী লীগ প্রচুর পরিমাণে পেইড বট আইডি ব্যবহার করছে। এসব বট আইডি আওয়ামী লীগের পক্ষের অখ্যাত পেজ এবং ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে ধারাবাহিকভাবে পোস্ট, মন্তব্য এবং শেয়ারের মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছে। পোস্টগুলোর গঠন এবং সমন্বিত প্রচারণা দেখলেই বোঝা যায়, এটি একটি সুসংগঠিত এবং পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।

    ৫. পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়া কৌশল:

    পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী এবং সরকার দীর্ঘদিন ধরে সোশ্যাল মিডিয়ায় বট অ্যাকাউন্ট এবং সংগঠিত প্রচারণা ব্যবহার করে জনমত প্রভাবিত করার অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) এবং ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) এর ভূমিকা। আইএসআই মূলত দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গোয়েন্দা তৎপরতা চালানোর পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রভাব বিস্তারে সক্রিয়। অন্যদিকে, আইএসপিআর সামরিক বাহিনীর মিডিয়া এবং জনসংযোগ শাখা হিসেবে কাজ করে, যা সশস্ত্র বাহিনীর ভাবমূর্তি রক্ষা এবং তাদের বার্তা প্রচারের জন্য কাজ করে।

    পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি সামরিক বাহিনীও প্রায়ই বট অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রচারণা চালায়। এক্স (সাবেক টুইটার) হলো পাকিস্তানের অন্যতম জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম, যেখানে প্রতিদিনই বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ডিংয়ে উঠে আসে। এই হ্যাশট্যাগগুলো প্রায়শই সামরিক বাহিনী, রাজনৈতিক দল বা সরকারের সমর্থনে অথবা বিরোধীদের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়।
    বেশ কয়েকটি ঘটনার মধ্যে দেখা গেছে, সামরিক বাহিনীর সমালোচনা করার পরপরই কিছু নির্দিষ্ট এক্স হ্যান্ডেলের মাধ্যমে সমালোচকদের লক্ষ্য করে ট্রোলিং এবং কটূক্তি চালানো হয়। এই অ্যাকাউন্টগুলো প্রায়ই সামরিক বাহিনীর পক্ষে সংগঠিত প্রচারণায় জড়িত। এমনকি, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সময় সামরিক বাহিনী তাদের স্বার্থে সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়ন্ত্রিত তথ্য ছড়ানোর জন্য বট এবং ট্রোল অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

    সাম্প্রতিক সময়ে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ইমরান খানের বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর প্রচারণা এবং তার সমর্থকদের লক্ষ্য করে চালানো প্রচারণা বিশেষভাবে আলোচিত হয়েছে। সামরিক বাহিনীর সমালোচনা দমন করতে এবং সরকারের পক্ষে জনমত তৈরি করতে বিশাল পরিমাণে বট অ্যাকাউন্ট সক্রিয় ছিল।

    বট আইডি ব্যবহারের উদ্দেশ্য:

    - নির্বাচনের সময় ভুয়া সমর্থন বা নেতিবাচক প্রচারণা চালানোর জন্য বট আইডি ব্যবহার হয়। উদাহরণস্বরূপ, ডোনাল্ড ট্রাম্পের ২০১৬ সালের প্রচারণার সময় রাশিয়ান বট নেটওয়ার্কের ভূমিকা।

    - সামাজিক বিভাজন তৈরির জন্য বিভিন্ন ধর্মীয় বা জাতিগত ইস্যুতে বট ব্যবহার করে উত্তেজনা ছড়ানো হয়। যেমন ভারতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

    - বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য ছড়িয়ে তাদের ক্ষতি করার জন্য বট ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, অনেক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান প্রতিযোগীদের দুর্বল করতে এমন প্রচারণায় অর্থ ব্যয় করে।

    - একই মেসেজ বারবার শেয়ার করে একটি মিথ্যাকে সত্য মনে করানো হয়।

    - যেসব ইস্যু প্রচার করা প্রয়োজন, সেগুলোকে শীর্ষ ট্রেন্ডে নিয়ে আসা হয়।

    - বিরোধীদের আক্রমণ করে তাদের মতামতকে চাপা দেওয়া হয়।

    বট আইডি মূলত জনমত প্রভাবিত করতে এবং ইচ্ছামতো ন্যারেটিভ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এটি শুধু রাজনীতিতে নয়, কর্পোরেট যুদ্ধ, সামাজিক ইস্যু, এমনকি যুদ্ধকালীন প্রোপাগান্ডার অংশ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বট আইডি এবং পিআর ফার্মের ভূমিকা এতটাই জটিল এবং সুসংগঠিত যে এটি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন ইস্যুতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলছে।

    পিআর ফার্ম এবং বট আইডি: মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ব্যবহার

    পিআর ফার্ম এবং বট আইডির কার্যক্রমের মাধ্যমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে জনমত প্রভাবিত করার এবং ইসলামফোবিয়া ছড়ানোর একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা সারা বিশ্বে দৃশ্যমান। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক পিআর ফার্ম এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বট আইডির সক্রিয় ব্যবহার মুসলিমদের নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার এবং তাদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তিকর বার্তা ছড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হয়েছে। মিডিয়ার মাধ্যমে মুসলিমদের প্রায়শই সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রপন্থার সাথে সংযুক্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। যেকোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটলেই তার সাথে ইসলাম বা মুসলিমদের নাম জড়ানোর মাধ্যমে সারা বিশ্বে ইসলামফোবিয়া বৃদ্ধির একটি পদ্ধতিগত প্রচেষ্টা দেখা যায়। এই কাজগুলোতে পিআর ফার্মগুলো সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে, যারা পরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট বার্তা প্রচার করে এবং বট আইডির মাধ্যমে সেটিকে ব্যাপক জনসমর্থন পাচ্ছে এমন একটি ভুয়া ধারণা তৈরি করে।
    .
    রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতেও এই ফার্মগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন মুসলিম দেশের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোকে আরও জটিল করে তোলার জন্য প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হয়। উদাহরণস্বরূপ, আরব বসন্তের সময়ও পিআর ফার্ম এবং বট আইডি ব্যবহার করেছিল বিভিন্ন সরকার এবং পশ্চিমারা। ফিলিস্তিন সংকটেও এ ধরনের প্রচারণা চালিয়ে ইসরায়েলের স্বার্থ রক্ষা করা হয়েছে। মিডিয়ায় ইচ্ছাকৃতভাবে ফিলিস্তিনের মানবিক সংকটকে আড়াল করে ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রমকে ন্যায্যতা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে একদিকে যেমন মুসলিম দেশগুলোতে বিভক্তি বাড়ছে, অন্যদিকে বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের প্রতি সহানুভূতি হ্রাস পাচ্ছে।
    .
    সামাজিক বিভাজন সৃষ্টিতেও এই কার্যক্রম প্রভাব ফেলছে। মুসলিমদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করার জন্য ভুয়া খবর এবং নেতিবাচক প্রচারণা ছড়ানো হয়। এক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আরেক সম্প্রদায়কে খেপিয়ে তুলে তাদের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি করা হয়। এটি কেবল ধর্মীয় সহিংসতাকেই উস্কে দেয় না, বরং মুসলিম যুবকদের মধ্যে হতাশা এবং বিভ্রান্তি তৈরি করে। এসব প্রচারণার ফলে যুবকরা কখনো কখনো বিভিন্ন ভাবে বিভ্রান্ত হয়। ফলে সমাজে একটি দীর্ঘস্থায়ী বিভক্তি সৃষ্টি হয়, যা কেবল মুসলিম সম্প্রদায় নয়, পুরো বিশ্বেই সামাজিক স্থিতিশীলতাকে ব্যাহত করে।
    .
    এই ধরনের প্রোপাগান্ডা কৌশলগুলো গণমাধ্যম এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের ক্ষমতা ব্যবহার করে প্রায়শই অদৃশ্য থেকে যায়। কিন্তু এর প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী, যা মুসলিমদের বিশ্বব্যাপী ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং মুসলিম-বিরোধী মনোভাবকে জোরদার করে।

    ১. ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকট

    ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংঘাতের সময় ইসরায়েল পিআর ফার্ম এবং বট আইডি ব্যবহার করে নিজস্ব অবস্থানকে বৈধতা দিতে এবং ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালায়।
    - ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিক্ষোভ এবং প্রতিরোধকে "সন্ত্রাসবাদ" হিসেবে উপস্থাপন করে।
    - ফেসবুক এবং টুইটারে ইসরায়েলি পিআর ফার্মগুলো হাজার হাজার ভুয়া পোস্ট ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়, যাতে তাদের সামরিক পদক্ষেপকে আত্মরক্ষা হিসেবে দেখানো হয়।
    - উদাহরণস্বরূপ, সাম্প্রতিক গাজার বোমা হামলার সময় ইসরায়েলি পিআর টিম দাবি করেছিল যে, এটি শুধুমাত্র "সন্ত্রাসী হুমকি" মোকাবিলা করছে।

    ২. বিজেপির আইটি সেল

    ভারতে বিজেপি তাদের আইটি সেল ব্যবহার করে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ এবং বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা চালায়।
    - বিজেপি আইটি সেল সোশ্যাল মিডিয়ায় "লাভ জিহাদ," "ঘর ওয়াপসি" এবং "সন্ত্রাসবাদী মুসলিম" ধারণা ছড়িয়েছে।
    - ২০১৯ সালে দিল্লি দাঙ্গার সময় বিজেপি সমর্থিত বট আইডি এবং পিআর ফার্ম মুসলিমদের দাঙ্গার জন্য দায়ী করে মিথ্যা প্রচারণা চালায়।
    - বিজেপি নেতা অমিত শাহের নেতৃত্বে আইটি সেল মুসলিম বিরোধী হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করিয়ে জনমনে ঘৃণা সৃষ্টি করেছিল।

    ৩. ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা

    ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রচারণায় পিআর ফার্ম এবং বট আইডি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল।
    - কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ডেটা চুরি করে এবং তাদের মানসিক প্রোফাইল তৈরি করে মাইক্রো-টার্গেটিং চালিয়েছিল।
    - মুসলিম নিষেধাজ্ঞার প্রচারণার সময় ট্রাম্প সোশ্যাল মিডিয়ায় ইসলামফোবিক বার্তা ছড়িয়ে ভোটারদের মধ্যে ভয় সৃষ্টি করেন।
    - মিথ্যা প্রচারণা এবং বট আইডি ব্যবহার করে হিলারি ক্লিনটনের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়।
    এগুলো তো মাত্র কয়েকটা উদাহরণ। আপনারা চাইলে আরো সার্চ করতে পারেন এরকম হাজার হাজার ঘটনা পাবেন ইনশাআল্লাহ্‌। বিশেষ করে বিজেপির আইটি সেল এর কাজ অনেক বিশাল। বিজেপির আইটি সেলের কাজ নিয়ে কিছু ঘাটাঘাটি করে দেখলেই বুঝতে পারবেন এই দুনিয়াতে কি চলতেছে!

    মুসলিম উম্মাহর করণীয়:

    ১. নিজেদের মিডিয়া শক্তি তৈরি করা


    মুসলিম উম্মাহর উচিত নিজস্ব পিআর ফার্ম এবং মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা।
    - ফিলিস্তিন বা কাশ্মীরের মতো ইস্যুতে সত্য তুলে ধরতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রচারণা চালানো।
    - ডিজিটাল ইনফ্লুয়েন্সারদের সহায়তায় ইতিবাচক বার্তা ছড়ানো।

    ২. ডিজিটাল শিক্ষা এবং সচেতনতা


    মুসলিম যুবকদের ডিজিটাল মাধ্যমে সচেতন হতে হবে।
    - বট আইডি এবং মিথ্যা তথ্য শনাক্ত করার প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
    - ফ্যাক্ট-চেকিং প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে সত্য এবং মিথ্যার পার্থক্য পরিষ্কার করতে হবে।

    ৩. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার


    ডিজিটাল যুদ্ধ মোকাবিলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করতে হবে।
    - সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্বেষমূলক প্রচারণা শনাক্ত এবং ব্লক করার জন্য সফটওয়্যার তৈরি।
    - প্রোপাগান্ডা এবং ভুয়া তথ্য বিশ্লেষণ করার জন্য ডেটা অ্যানালিটিক্স ব্যবহার।

    ৪. একতাবদ্ধ প্রচারণা চালানো


    মুসলিমরা একত্রিত হয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়া এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় তাদের অবস্থান তুলে ধরতে হবে।
    - এককভাবে নয়, বরং দলবদ্ধ প্রচারণা চালিয়ে ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর করা।
    - উদাহরণস্বরূপ, মুসলিমদের কোন আন্তর্জাতিক সংগঠনের মাধ্যমে একক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা যেতে পারে।
    .
    উপরে যে ৪ টা করনীয়র কথা বলা হলো এগুলো আসলে বর্তমান মুসলিম উম্মাহর হালতে কতটা অসম্ভব আপনারাই বুঝতেছেন। দেখা যায় মুসলিম জনগনের দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা শুধু নামেই মুসলিম, কাজে ইউরোপ থেকেও কড়া সেক্যুলার আবার এক নায়কের মতো শাসন করে থাকে। তাই উপরে এসব করনীয় তখন সম্ভব যখন আসলেই মুসলিম দেশ গুলো প্রকৃত ইসলাম দ্বারা শাসন হবে, আর এটা কবে সম্ভব হবে তা আল্লাহই ভালো জানেন।

    তাহলে কি আমরা কিছু করতে পারবো না এসব পি আর ফার্ম এবং বট আইডির বিরোদ্ধে?

    বিশ্বজুড়ে মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে চলমান প্রোপাগান্ডা এবং ডিজিটাল আক্রমণের বিরুদ্ধে আমাদের ব্যক্তিগতভাবে দায়িত্ব পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান বিশ্বে ইসলামের বিরুদ্ধে যে বহুমুখী প্রচারণা চলছে, তা প্রতিরোধে আমাদের সচেতন ও সংগঠিত হওয়া জরুরি। যেহেতু ইসলামকে কেন্দ্র করে পরিচালিত শক্তিশালী রাষ্ট্র বা শাসক এখন প্রায় অনুপস্থিত, এবং যারা আছেন, তারাও বহির্বিশ্বের চাপের কারণে পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করতে পারছেন না, তাই আমাদের প্রত্যেককেই ব্যক্তিগতভাবে এই যুদ্ধের এক একজন সৈনিক হয়ে কাজ করতে হবে।

    আমরা যেসব পদক্ষেপ নিতে পারি তা হলো:

    ১. সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় ভূমিকা পালন:

    প্রত্যেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় যেমন ফেসবুক, এক্স (টুইটার), ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম প্রভৃতি প্ল্যাটফর্মে বেশি বেশি আইডি তৈরি করে ইসলামের পক্ষে প্রচারণা চালাতে হবে। আমাদের উম্মাহর পক্ষে শক্তিশালী বার্তা তুলে ধরতে হবে এবং মুসলিম-বিরোধী প্রোপাগান্ডার জবাব দিতে হবে। মুলত কমেন্ট এবং রিয়েক্ট দেয়ার জন্যে প্রচুর আইডি দরকার।

    ২. একাধিক আইডি তৈরি ও ব্যবস্থাপনা:

    - নিজের একটি মূল (অরিজিনাল) আইডি রেখে বাকি আইডিগুলোতে ভিন্ন নাম ও ভুয়া তথ্য ব্যবহার করতে হবে।
    - এই ফেক আইডিগুলোকে এমনভাবে সাজাতে হবে, যেন তা আসল মনে হয়।
    - ফেক আইডিগুলোর মাধ্যমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে পরিচালিত প্রচারণার জবাব দেওয়া এবং ইসলামের সঠিক দিক তুলে ধরা।
    - কোনো ফেক আইডিতে ব্যক্তিগত তথ্য বা পরিচিত কারো সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে না। এই ধরনের কাজের কথা ভুলেও কাউকে বলা যাবে না।

    ৩. মুসলিম-বিরোধী প্রচারণার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া:

    - বিরোধী পোস্ট বা মন্তব্যগুলোর বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়ে মন্তব্য করা। এর জন্যে অনেক আলেমদের লিখা দেখা যেতে পারে যা ইন্টার্নেটে সহজেই পাওয়া যাবে গুগোলে সার্চের মাধ্যমে। এই ক্ষেত্রে চ্যাটজিপিটির হেল্পও নিতে পারেন চাইলে।
    - ইসলামফোবিক পোস্টগুলোতে "এ্যাংরি" বা "ব্যাড" রিয়েক্ট দেওয়া।
    - ইসলাম ও মুসলিমদের পক্ষের বার্তা প্রচারের মাধ্যমে ইসলামের সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা।

    ৪. নিয়মিত সময় ব্যয় করা:

    প্রতিদিন নির্দিষ্ট কিছু সময় এই কাজে উৎসর্গ করতে হবে। এটি একটি চলমান যুদ্ধ, যেখানে আমরা সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বড় ভূমিকা রাখতে পারি। দিন শেষে এটি শুধুই দুনিয়ার কাজ নয়; বরং এটি একটি ইবাদতের অংশও হতে পারে।

    ৫. উপযুক্ত সরঞ্জাম ব্যবহার:

    - প্রয়োজন হলে এই কাজে কিছু টাকা খরচ করে (যদি আপনার কাছে এরকম খরচ করার মতো টাকা থাকে) অতিরিক্ত মোবাইল ফোন বা পিসি সংগ্রহ করা যেতে পারে।
    - মোবাইল অ্যাপ ক্লোনিং ব্যবহার করে একই ডিভাইসে একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট লগইন করে কাজ করা। এটি সময় সাশ্রয়ী এবং কার্যকর।

    ৬. আত্মশিক্ষা ও গবেষণা:

    নিজে এসব বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা ও গবেষণা করতে হবে। কীভাবে আরও দক্ষভাবে ইসলাম-বিরোধী প্রচারণার জবাব দেওয়া যায়, সেই কৌশল তৈরি করতে হবে। এটি কেবল তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার জন্যও সহায়ক হবে।

    ৭. অন্যদের উদ্বুদ্ধ করা:

    নিজে শুধু অংশগ্রহণ করলেই হবে না; বরং অন্য মুসলিম ভাই-বোনদেরও এই কাজে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। তাদের কাছে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তুলে ধরতে হবে এবং বোঝাতে হবে যে, আমাদের উম্মাহ এখন বড় সংকটের মুখে রয়েছে।

    ৮. উম্মাহর প্রতি দায়িত্ব পালন:

    মুসলিম উম্মাহ আজ বিশ্বজুড়ে কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের সবার উচিত নিজেদের অবস্থান থেকে যা যা করা সম্ভব, তা করা। কেউ হয়তো সামাজিক প্রচারণার মাধ্যমে অংশ নেবে, কেউ ব্যাখ্যা করে ইসলামিক বার্তা ছড়াবে, আবার কেউ সরাসরি ইসলামফোবিয়ার জবাব দেবে। প্রত্যেকেই তার সামর্থ্য অনুযায়ী এই যুদ্ধে অবদান রাখতে পারে।
    .
    বুঝতেই পারতেছেন কাজ কেমন হওয়া উচিত। অর্থাৎ আমাদেরও পি আর ফার্ম এবং বট আইডির মতো কাজ করতে হবে সবাই মিলে। এবং সবাই মিলে এটা করলে তাদের থেকেই বেশিই করা সম্ভব ইনশাআল্লাহ। আমাদের উম্মাহর জন্য এই সময়ে কিছু না কিছু করা একান্ত প্রয়োজন। এটা শুধু একটি দায়িত্ব নয়; বরং এটি আমাদের ঈমানেরও দাবি। আমাদের নিজেদের শ্রম ও সময় উৎসর্গ করে, পরিকল্পিতভাবে এবং ধৈর্যের সঙ্গে এগিয়ে যেতে হবে। এই দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারব, ইনশাআল্লাহ।
    .
    পিআর ফার্ম এবং বট আইডি আধুনিক যুগে প্রভাব বিস্তারের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। প্রভাবশালী গোষ্ঠী এবং রাষ্ট্রগুলো এই প্রযুক্তির মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান মজবুত করছে এবং মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রচারণা চালাচ্ছে। মুসলিমদের উচিত সোশ্যাল মিডিয়া এবং আধুনিক প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করা। নিজস্ব মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম, ডিজিটাল শিক্ষা, এবং একতাবদ্ধ প্রচারণা চালিয়ে মুসলিম উম্মাহ এই ডিজিটাল যুদ্ধ মোকাবিলা করতে পারে। কারণ, এই লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়া মানেই বিশ্বমঞ্চে নিজেদের অবস্থান হারানো।​
    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 1 week ago.

  • #2
    আল্লাহ তাআলা আমাদের এই ডিজিটাল যুদ্ধ মোকাবেলা করার তাওফিক দিন, আমিন

    Comment


    • #3
      সময়ের সাথে অতি প্রাসঙ্গিক বিষয় খুবই সুন্দরভাবে আকর্ষণীয় পদ্ধতিতে তুলে ধরেছেন মুহতারাম আবু উবাইদাহ আল-হিন্দী
      জাযাকাল্লাহু খাইরান
      ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

      Comment


      • #4
        কাজটা অবশ্যাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মুহতারাম সিকিউরিটি ইস্যু গুলো আমরা কিভাবে মোক্বাবিলা করব?
        ১। আমরা অনেকেই জানিনা সোস্যাল মিডিয়ায় সিকিউরড কিভাবে থাকতে হয়। ভিপিএন/টর ইউজ করে করতে গেলে দেখা যায় একাউন্ট ডিজেবল হয়ে যায়।
        ২। যে সমস্ত ভাইগন সিকিউরলি কাজ গুলো করছেন। উনাদের টেকনিক গুলোও পাবলিকলি প্রচার করা উচিত নয়। তাই সাধারণ ভাইগন কাজ গুলো করতে চাইলেও করতে পারবেননা।
        ৩। যথাসম্ভব মুনাসিব ত্বরিক্বা সমুহ যদি জানানো সম্ভব হয় তবে হয়তো ভাই/বোনেরা কিছু কাজ করতে পারবেন।

        সর্বপরি এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির জন্য অনেক অনেক জাযা-কুমুল্ল-হু খইরন আহসানাল জাযা মুহতারাম।
        আল্লাহ তায়ালা আপনার লেখনী গুলো পূর্ণ ক্ববুল ও উম্মাহর জন্য পূর্ন উপকারী করুক আমিন।
        হয় শাহাদাহ নাহয় বিজয়।

        Comment


        • #5
          অনেক গুরুত্বপূর্ণ পোষ্ট আল্লাহ ভাইয়ের মাহনতকে (মেহনত) কবুল করুন। আমিন...
          Last edited by Rakibul Hassan; 1 week ago.

          Comment


          • #6
            জাজাকাল্লাহু খাইরান আহসানাল যাঝা, মুহতারাম ভাইকে অসংখ্য মোবারকবাদ মুল্যবান পোস্ট করার জন্যে।আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে এই কাজে শরিক হওয়ার তৌফিক দান করুন।

            "যার গুনাহ সবচেয়ে বেশি তার জন্য সর্বোত্তম চিকিৎসা হলো জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ "। শায়েখ ইবনে তাইমিয়া রহ.

            Comment

            Working...
            X