অস্ত্র পরিচিতি - ২
৭.৬২ মিঃ মিঃ এ্যাসল্ট রাইফেল বিডি-০৮ (টি-৮১-১)
বিডি ০৮ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান অ্যাসল্ট রাইফেল। এটা মূলত চীনা টাইপ ৮১ রাইফেল-এর বাংলাদেশী সংস্করণ। টাইপ ৮১ এবং বিডি ০৮ রাইফেল দেখতে অনেকটা এক তবে এর মধ্যে অনেক পরিবর্তন করা হয়েছে। যেমন: এতে ফিক্সড গ্যাস অপারেটর এর বদলে ফ্লোটিং গ্যাস অপারেটর ব্যবহার করা হয়েছে যা ঝাকি কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এর কার্যকরী দুরত্ব প্রায় ৫০০ মিটার। এর দ্বারা গ্রেনেড নিক্ষেপ করা যায় এবং এতে আধুনিক সাইট ও লেজার ব্যবহার করা যায়। এটি ৫০০ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত ৯৯% নির্ভুলভাবে লক্ষ্যভেদ করতে সক্ষম।বিডি ০৮ বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানায় তৈরি হয়।
ইতিহাসঃ
১৯৮১ সালে নাগাদ পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) কর্তৃক চীনে টাইপ ৮১ অ্যাসাল্ট রাইফেল সার্ভিসে চালু করা হয়েছিল কিন্তু ১৯৮০ এর দশকের শেষের দিকে পর্যন্ত তা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। এটি সোভিয়েত এসকেএস কারবিন এবং টাইপ ৫৬ রাইফেল (একটি চীনা লাইসেন্সে নির্মিত একে-৪৭ ধরনের রাইফেল) এর প্রতিস্থাপিত রূপ। ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি সময়ে চীন ও ভিয়েতনামের সীমান্ত বিরোধের সময় এটি প্রথম যুদ্ধের ব্যবহার আসে। পিএলএ তার টাইপ -৮১-এর বেশিরভাগগুলো বর্তমানে টাইপ ৯৫ অথবা টাইপ ০৩ সিরিজের সাথে প্রতিস্থাপিত করেছে, যদিও এটি এখনও রক্ষণাবেক্ষণ এবং সশস্ত্র পুলিশে চীনে ব্যবহৃত হচ্ছে। পরবর্তিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অন্তর্গত বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানায় এর নকশার সংস্করণ ও পরিমার্জনার মাধ্যমে ২০০৮ সালে নাগাদ বিডি-০৮ এর উৎপাদন শুরু হয়।
উৎপাদনঃ
বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানার প্রতিষ্ঠার কাজ প্রথম শুরু হয় ১৯৬৮ সালে চীন সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায়। ১৯৭০ সালের ৬ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানটির অনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠার কাজ শুরু হয়। ১৯৯৮ সালে এটিকে আর্মির চীফ অফ স্ট্যাফ স্যাক্রেটারিয়েটের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং পুরো প্রতিষ্ঠানটিকে নতুন করে সাজানো হয়। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে রাইফেল বিডি-০৮ প্রস্তুতের পরিকল্পনা প্রক্রিয়া শুরু হয়। যা সফলতা পায় ২০০৮ সালে নাগাদ। বর্তমানে বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানায় রাইফেলটির বার্ষিক উৎপাদন বাড়িয়ে ১৪ হাজারে উন্নীত করা হয়েছে।
বাংলাদেশে ব্যবহারকারীঃ
• বাংলাদেশ সেনাবাহিনী
• বাংলাদেশ নৌবাহিনী
• বাংলাদেশ বিমান বাহিনী
• বাংলাদেশ পুলিশ
• বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ
• বাংলাদেশ কোস্টগার্ড
• Rapid Action Battalion (RAB)
এবং বাংলাদেশের অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।
পূর্ণ নামঃ পূর্ণ নাম স্বয়ংক্রিয় ৭.৬২ মিঃ মিঃ এ্যাসল্ট রাইফেল বিডি-০৮ (টি-৮১-১) মেড ইন চায়না।
বৈশিষ্ট্যঃ
ক) সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় কিন্তু একটি করে গুলি ফায়ার করার পদ্ধতিও রয়েছে।
খ) গ্যাস দ্বারা পরিচালিত (রেগুলেটিং গ্যাস ব্লক সহ)
গ) ওজনে হালকা এবং নিঁখুত ফায়ারে সক্ষম।
ঘ) বাতাসে ঠান্ডা হয়।
ঙ) ম্যাগাজিন হতে গুলি পায়।
চ) সম্মুখ যুদ্ধ (সি কিউ বি) এর জন্য আদর্শ।
ছ) সম্মুখ যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য বেয়নেট সংযুক্ত যা প্রয়োজনে আলাদা করা যায়।
জ) ফোল্ডেড বাট।
ঝ) ১০-৬০ ডিগ্রি কোণের মধ্যে গ্রেনেড ফায়ার করতে পারে।
ফায়ারের কার্যকারিতাঃ
ক) দলবদ্ধ শত্রুর উপর - ৪০০ মি/৪৪০ গজ।
খ) সর্বোচ্চ কার্যকর ক্ষমতা - ৩০০ মি।
সাধারন তথ্যঃ
ক) রাইফেল - ৩.৫ কেজি (খালি ম্যাগাজিন সহ)
খ) খালি ম্যাগাজিন - ০.৪২৮ কেজি
গ) রাইফেল এবং এ্যাকসেসরিজ - ৩.৬৮ কেজি (একটি খালি ম্যাগাজিন সহ)
ঘ) বেয়নেট - ০.২৫১ কেজি
ঙ) বেয়নেট এর খাপ - ০.০৮৫ কেজি
এটি ক্যালাশনিকভ সিরিজের রাইফেল গুলোর মত কিন্তু এর কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেমন এই এসল্ট রাইফেল তে ফিক্সড গ্যাস অপারেটিং সিস্টেমের বদলে ফ্লোটিং গ্যাস অপারেটিং সিস্টেম ব্যাবহার করা হয়েছে ফলে এর ঝাঁকুনি কমে আসায় এর একুরেসি বৃদ্ধি পেয়েছে। এটিতে গ্রেনেড লঞ্চার স্থাপন করা যায় এবং গ্রেনেড নিক্ষেপ করা যায়। বাংলাদেশ সমরাস্ত্র কারখানা এটিতে আরেকটু মডিফিকেশন শুরুতেই করায় এর একুরেসি ও রেঞ্জ টাইপ-৮১ এর চাইতে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর পরবর্তি ভার্সন BD-08 Mark-ll খুব দ্রুত সার্ভিসে প্রবেশ করতে চলেছে যা আরো উন্নত এবং মার্ক২ তে আধুনিক সাইট সংযুক্তির ব্যবস্থা রয়েছে।
.
তুলনা করলে বিডি-০৮ অ্যাসাল্ট রাইফেল ভারতের ইনসাস রাইফেল অপেক্ষা অধিক উন্নত।
সোর্সঃ ইন্টারনেট
Comment