প্রকৃত মুমিন কখনো একই গর্ত থেকে দু’বার দংশিত হয় না
সতর্কতার মধ্যম পন্থা
শায়খ আবু মুহাম্মাদ আসিম আল মাকদেসী
পরিবেশনায়
আনসারুল্লাহ বাংলা টিম
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
আল্লাহ রব্বুল আলামীন ঈমানদারদেরকে আদেশ দিয়ে বলছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا خُذُوا حِذْرَكُمْ فَانفِرُوا ثُبَاتٍ أَوْ انفِرُوا جَمِيعًا
হে ঈমানদাররা! তোমরা তোমাদের সতর্কতা অবলম্বন করো, অতঃপর হয় দলে দলে বিভক্ত হয়ে কিংবা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে অভিযানে বেরিয়ে পড়। (সূরা আন নিসা, আয়াত ৭১)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা আরও বলেন-
وَخُذُوا حِذْرَكُمْ إِنَّ اللَّهَ أَعَدَّ لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا
তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ্* তায়ালা কাফেরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সূরা আন নিসা, আয়াত ১০২)
অতএব আল কুরআনের এ সব আয়াত সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে, সতর্কতামুলক উপায় অবলম্বন করা, সতর্ক পদক্ষেপ নেয়া, সাবধান থাকা এবং সতর্কতামুলক পদক্ষেপ হিসেবে প্রয়োজনে বিশেষ কোন তথ্য অন্যের কাছ থেকে গোপন রাখা অবশ্যই শরিয়াহ সম্মত; বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তা ফরয বা আবশ্যক হয়ে দাড়ায় 1। আর একারণে
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে কোন প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখার এমন কি তা সামরিক বিষয়াদি না হলেও। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সতর্কতা অবলম্বন কর এবং লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য প্রার্থনা করো, কেননা যে ব্যক্তিই কোন অনুগ্রহ লাভে ধন্য হয় তাকেই ঈর্ষার পাত্র হতে হয়। 2
রসুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্*র শত্রুদের ব্যপারে সতর্কীকরণের ক্ষেত্রে যে সব শব্দাবলী ব্যবহার করেছেন এক্ষেত্রে তাও বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তিনি তামওয়ীহ শব্দ ব্যবহার করেছেন যার অর্থ হল, মেকি, মিথ্যা ঘটনা সাজানো, জালিয়াতি; তিনি ব্যবহার করেছেন মুখাদা’য়াহ যার অর্থ হল বোকা বানানো, ধোঁকা দেয়া, প্রতারণা করা ইত্যাদি। আল্লাহ্*র রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সতর্কতা বলতে নিছক স্পর্শকাতর তথ্য গোপন করাকেই বুঝাননি বরং এসব শব্দ তিনি প্রয়োগ করেছেন আগ বাড়িয়ে পরিকল্পিতভাবে শত্রু সেনাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব কলহ, মতবিরোধ ও বিভক্তি তৈরী, ফাটল ধরানো, বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করার নির্দেশ দান প্রসঙ্গে। এর প্রধান উদ্দেশ্য শত্রু সেনা ও তাদের গোয়েন্দাদেরকে বিভ্রান্ত করা।3
তাবুক যুদ্ধে দুই সাহাবীর অংশ্রগ্রহণ না করা সম্পর্কিত ঘটনা প্রসঙ্গে সহীহ আল বুখারীর বর্ণনায় কা’ব বিন মালেক রাঃ বলেন ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই কোন সেনা অভিযান প্রেরণ করতেন তখন (কোন অঞ্চলে বা কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করবেন সে সম্পর্কে) অভিযান শুরু হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি সব সময় ভুল তথ্য দিয়ে রাখতেন’।
তিনি তার সাহাবীদের মিশন এবং তার সেনা অভিযানের সফলতার লক্ষে যে সকল বিষয়ের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন তার মধ্যে অন্যতম হল কিতমান বা গোপনীয়তা রক্ষা। যেমন অনেক সময় তিনি কোন দিকে সেনা অভিযান প্রেরণ করতেন কিন্তু স্বয়ং সেই বাহিনীকেও বলতেন না যে তাদের গন্তব্যস্থান কোথায় ও লক্ষবস্তু কি, তিনি তাদেরকে একটি চিঠিতে তাদের গন্তব্য ও লক্ষবস্তুর কথা লিখে দিয়ে নির্দেশ দিতেন যে অমুক স্থানে না গিয়ে বা কোন নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে যেন চিঠিটি না খোলা হয়।
এমনই একটি সেনা অভিযান ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রাঃ এর নেতৃতে পরিচালিত সেই অভিযান যে অভিযানে আল হাদরামী নিহত হয়। এ ঘটনা আমাদেরকে স্পর্শকাতর সামরিক তথ্য গোপন রাখার বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়। এবং শুধু সাধারণ জনগণ নয় বরং স্বয়ং মুজাহিদদের থেকেও অপারেশন বা যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তথ্য গোপন রাখার প্রমাণ রয়েছে। 4
এর উদ্দেশ্য হল, মুজাহিদদের কেউ যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, কিংবা কেউ যদি কাফেরদের হাতে বন্দি হয়ে যায় তাহলে সে যেন তাদের কাছে কোন তথ্য ফাস করে না দিতে পারে5 , এমনকি তাকে যদি কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয় তবুও । 6
এমন আর একটি ঘটনা হল রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের ঘটনা। যে ঘটনার সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের সারসংক্ষেপ বিশ্লেষণ হল এমন যে-
১) তিনি এমন সময় আবু বকর রাঃ এর কাছে এসেছিলেন যে সময়ে তিনি সাধারনতঃ কখনো আসতেন না।
২) তিনি মুখ ঢেকে আসেন।7
৩) সাহাবীদেরকে তার নিজের হিজরতের পূর্বে হিজরত করার নির্দেশ প্রদান; অথচ আবু বকর রাঃ অনুযোগ করে বলেছিলেন ‘তারা আপনার অনুসারী! (কিভাবে তারা আপনাকে এই বিপদের মধ্যে রেখে চলে যাবে?)
৪) আবু বকর রাঃ এর পুত্র আব্দুল্লাহ রাতে তাদের সাথে সেই গোপন স্থানে থাকলেও দিন শুরুর পূর্বেই তাদেরকে রেখে আবার মক্কায় চলে আসতেন, যাতে কুরায়শরা ভাবে যে তিনি রাতেও মক্কাতেই ছিলেন। এবং কাফিররা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আবু বকর রাঃ এর বিরুদ্ধে কি ষড়যন্ত্র করে সে তথ্য সংগ্রহের দিকে সতর্ক দৃষ্টি
রাখতেন। আর রাতের আঁধার নেমে আসার সাথে সাথে তিনি চলে যেতেন সেই পাহাড়ের গুহায় যেখানে তারা লুকিয়ে থাকতেন এবং তাদেরকে সকল বিষয়ে অবহিত করতেন ।8
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাঃ এর বর্ণনায় সহীহ আল বুখারীতে ৩৯০৫ নং হাদিসে হিজরতের যে বিস্তারিত ঘটনা বর্ণীত রয়েছে সেখানে আমাদের এখানে আলোচিত প্রত্যেকটি বিষয় পাওয় যাবে ।9 সে বর্ণনায় এও রয়েছে যে পথিমধ্যে সুরাকার সাথে দেখা
হলে রসুলল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন যে, ‘আমাদের বিষয়টি অন্যদের থেকে গোপন রেখো’।
সহীহ আল বুখারীতে ‘যুদ্ধ মানেই ধোঁকা’ শিরোনামে একটি স্বত্ন্ত্র্য অধ্যায়ই রয়েছে; আর উল্লেখিত এ হাদিসটি সে অধ্যায়েই সংকলিত ।10 হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী
এ হাদিসে উল্লেখিত ধোঁকার ব্যাখ্যায় বলেন ‘ধোঁকা অর্থ হল কোন এক জিনিস প্রকাশ করে তার অন্তরালে অন্য জিনিস গোপন রাখা। এ হাদিসে যুদ্ধে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং কাফিরদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রতারণামূলক কাজ করতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। আর যে ব্যক্তি তার শত্রুদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান রাখে না এবং যে এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন নয় সে তার চারপাশের ঘটনা প্রবাহ তার বিরুদ্ধে চলে যাওয়া থেকে মোটেই নিরাপদ নয়।11
ইমাম বুখারী রহঃ ‘যুদ্ধে মিথ্যা বলা’ 12 নামে আরও একটি অনুচ্ছেদ কায়েম করেছেন, আর এখানে তিনি উল্লেখ করেছেন ইহুদী তাগুত কা’ব বিন আশরাফকে সাহাবায়ে কেরাম
রাঃ কিভাবে হত্যা করেছিলেন। তারা তাকে মিথ্যা কথা বলে এমনভাবে বিভ্রান্ত করেছিলেন যে সে ভাবছিল যে সাহাবায়ে কেরামগন সত্যিই আল্লাহ্*র রসুলের উপর চরমভাবে বিরক্ত, আল্লাহ্*র রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক তাদের উপর আরপিত দান সাদাকা করতে করতে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এভাবে তার সাথে তারা মিথ্যা মিথ্যি কথা বলতে থাকে যতক্ষণ না তারা তাকে সম্পূর্ণরূপে বাগে আনতে পেরেছিলেন এবং অতঃপর আল্লাহ্*র এ দুশমনকে তারা হত্যা করে ফেলেন । 13
হাফেজ ইবনে হাজার এই হাদিসের ব্যখ্যায় তার ফতহুল বারী গ্রন্থে তিনটি ক্ষেত্রে মিথ্যা কথা বলার বৈধতা প্রসঙ্গে অন্য আরও একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন যে হাদিসটি ইমাম তিরমিযী রহঃ তার সুনানে উম্মে কুলসুম রাঃ এর বর্ণনায় সংকলণ করেছেন। এই তিনটি ক্ষেত্রের একটি হল যুদ্ধ। হাফিজ ইবনে হাজার রহঃ হাজ্জাজ ইবনে ইলাতের ঘটনাটিও সেখানে উল্লেখ করেছেন যেখানে দেখা যায় হাজ্জাজ ইবনে ইলাত তার সম্পদ মক্কার লোকদের কাছ থেকে ফেরত পাওয়ার জন্য রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মিথ্যা বলার অনুমতি প্রার্থনা করেন।14
[size=2]
...........
সতর্কতার মধ্যম পন্থা
শায়খ আবু মুহাম্মাদ আসিম আল মাকদেসী
পরিবেশনায়
আনসারুল্লাহ বাংলা টিম
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
আল্লাহ রব্বুল আলামীন ঈমানদারদেরকে আদেশ দিয়ে বলছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا خُذُوا حِذْرَكُمْ فَانفِرُوا ثُبَاتٍ أَوْ انفِرُوا جَمِيعًا
হে ঈমানদাররা! তোমরা তোমাদের সতর্কতা অবলম্বন করো, অতঃপর হয় দলে দলে বিভক্ত হয়ে কিংবা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে অভিযানে বেরিয়ে পড়। (সূরা আন নিসা, আয়াত ৭১)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা আরও বলেন-
وَخُذُوا حِذْرَكُمْ إِنَّ اللَّهَ أَعَدَّ لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا
তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ্* তায়ালা কাফেরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সূরা আন নিসা, আয়াত ১০২)
অতএব আল কুরআনের এ সব আয়াত সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে, সতর্কতামুলক উপায় অবলম্বন করা, সতর্ক পদক্ষেপ নেয়া, সাবধান থাকা এবং সতর্কতামুলক পদক্ষেপ হিসেবে প্রয়োজনে বিশেষ কোন তথ্য অন্যের কাছ থেকে গোপন রাখা অবশ্যই শরিয়াহ সম্মত; বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তা ফরয বা আবশ্যক হয়ে দাড়ায় 1। আর একারণে
রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে কোন প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখার এমন কি তা সামরিক বিষয়াদি না হলেও। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘সতর্কতা অবলম্বন কর এবং লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য প্রার্থনা করো, কেননা যে ব্যক্তিই কোন অনুগ্রহ লাভে ধন্য হয় তাকেই ঈর্ষার পাত্র হতে হয়। 2
রসুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্*র শত্রুদের ব্যপারে সতর্কীকরণের ক্ষেত্রে যে সব শব্দাবলী ব্যবহার করেছেন এক্ষেত্রে তাও বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তিনি তামওয়ীহ শব্দ ব্যবহার করেছেন যার অর্থ হল, মেকি, মিথ্যা ঘটনা সাজানো, জালিয়াতি; তিনি ব্যবহার করেছেন মুখাদা’য়াহ যার অর্থ হল বোকা বানানো, ধোঁকা দেয়া, প্রতারণা করা ইত্যাদি। আল্লাহ্*র রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সতর্কতা বলতে নিছক স্পর্শকাতর তথ্য গোপন করাকেই বুঝাননি বরং এসব শব্দ তিনি প্রয়োগ করেছেন আগ বাড়িয়ে পরিকল্পিতভাবে শত্রু সেনাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব কলহ, মতবিরোধ ও বিভক্তি তৈরী, ফাটল ধরানো, বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করার নির্দেশ দান প্রসঙ্গে। এর প্রধান উদ্দেশ্য শত্রু সেনা ও তাদের গোয়েন্দাদেরকে বিভ্রান্ত করা।3
তাবুক যুদ্ধে দুই সাহাবীর অংশ্রগ্রহণ না করা সম্পর্কিত ঘটনা প্রসঙ্গে সহীহ আল বুখারীর বর্ণনায় কা’ব বিন মালেক রাঃ বলেন ‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই কোন সেনা অভিযান প্রেরণ করতেন তখন (কোন অঞ্চলে বা কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করবেন সে সম্পর্কে) অভিযান শুরু হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি সব সময় ভুল তথ্য দিয়ে রাখতেন’।
তিনি তার সাহাবীদের মিশন এবং তার সেনা অভিযানের সফলতার লক্ষে যে সকল বিষয়ের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন তার মধ্যে অন্যতম হল কিতমান বা গোপনীয়তা রক্ষা। যেমন অনেক সময় তিনি কোন দিকে সেনা অভিযান প্রেরণ করতেন কিন্তু স্বয়ং সেই বাহিনীকেও বলতেন না যে তাদের গন্তব্যস্থান কোথায় ও লক্ষবস্তু কি, তিনি তাদেরকে একটি চিঠিতে তাদের গন্তব্য ও লক্ষবস্তুর কথা লিখে দিয়ে নির্দেশ দিতেন যে অমুক স্থানে না গিয়ে বা কোন নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে যেন চিঠিটি না খোলা হয়।
এমনই একটি সেনা অভিযান ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রাঃ এর নেতৃতে পরিচালিত সেই অভিযান যে অভিযানে আল হাদরামী নিহত হয়। এ ঘটনা আমাদেরকে স্পর্শকাতর সামরিক তথ্য গোপন রাখার বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়। এবং শুধু সাধারণ জনগণ নয় বরং স্বয়ং মুজাহিদদের থেকেও অপারেশন বা যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তথ্য গোপন রাখার প্রমাণ রয়েছে। 4
এর উদ্দেশ্য হল, মুজাহিদদের কেউ যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, কিংবা কেউ যদি কাফেরদের হাতে বন্দি হয়ে যায় তাহলে সে যেন তাদের কাছে কোন তথ্য ফাস করে না দিতে পারে5 , এমনকি তাকে যদি কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয় তবুও । 6
এমন আর একটি ঘটনা হল রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের ঘটনা। যে ঘটনার সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের সারসংক্ষেপ বিশ্লেষণ হল এমন যে-
১) তিনি এমন সময় আবু বকর রাঃ এর কাছে এসেছিলেন যে সময়ে তিনি সাধারনতঃ কখনো আসতেন না।
২) তিনি মুখ ঢেকে আসেন।7
৩) সাহাবীদেরকে তার নিজের হিজরতের পূর্বে হিজরত করার নির্দেশ প্রদান; অথচ আবু বকর রাঃ অনুযোগ করে বলেছিলেন ‘তারা আপনার অনুসারী! (কিভাবে তারা আপনাকে এই বিপদের মধ্যে রেখে চলে যাবে?)
৪) আবু বকর রাঃ এর পুত্র আব্দুল্লাহ রাতে তাদের সাথে সেই গোপন স্থানে থাকলেও দিন শুরুর পূর্বেই তাদেরকে রেখে আবার মক্কায় চলে আসতেন, যাতে কুরায়শরা ভাবে যে তিনি রাতেও মক্কাতেই ছিলেন। এবং কাফিররা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আবু বকর রাঃ এর বিরুদ্ধে কি ষড়যন্ত্র করে সে তথ্য সংগ্রহের দিকে সতর্ক দৃষ্টি
রাখতেন। আর রাতের আঁধার নেমে আসার সাথে সাথে তিনি চলে যেতেন সেই পাহাড়ের গুহায় যেখানে তারা লুকিয়ে থাকতেন এবং তাদেরকে সকল বিষয়ে অবহিত করতেন ।8
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাঃ এর বর্ণনায় সহীহ আল বুখারীতে ৩৯০৫ নং হাদিসে হিজরতের যে বিস্তারিত ঘটনা বর্ণীত রয়েছে সেখানে আমাদের এখানে আলোচিত প্রত্যেকটি বিষয় পাওয় যাবে ।9 সে বর্ণনায় এও রয়েছে যে পথিমধ্যে সুরাকার সাথে দেখা
হলে রসুলল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন যে, ‘আমাদের বিষয়টি অন্যদের থেকে গোপন রেখো’।
সহীহ আল বুখারীতে ‘যুদ্ধ মানেই ধোঁকা’ শিরোনামে একটি স্বত্ন্ত্র্য অধ্যায়ই রয়েছে; আর উল্লেখিত এ হাদিসটি সে অধ্যায়েই সংকলিত ।10 হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী
এ হাদিসে উল্লেখিত ধোঁকার ব্যাখ্যায় বলেন ‘ধোঁকা অর্থ হল কোন এক জিনিস প্রকাশ করে তার অন্তরালে অন্য জিনিস গোপন রাখা। এ হাদিসে যুদ্ধে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং কাফিরদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রতারণামূলক কাজ করতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। আর যে ব্যক্তি তার শত্রুদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান রাখে না এবং যে এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন নয় সে তার চারপাশের ঘটনা প্রবাহ তার বিরুদ্ধে চলে যাওয়া থেকে মোটেই নিরাপদ নয়।11
ইমাম বুখারী রহঃ ‘যুদ্ধে মিথ্যা বলা’ 12 নামে আরও একটি অনুচ্ছেদ কায়েম করেছেন, আর এখানে তিনি উল্লেখ করেছেন ইহুদী তাগুত কা’ব বিন আশরাফকে সাহাবায়ে কেরাম
রাঃ কিভাবে হত্যা করেছিলেন। তারা তাকে মিথ্যা কথা বলে এমনভাবে বিভ্রান্ত করেছিলেন যে সে ভাবছিল যে সাহাবায়ে কেরামগন সত্যিই আল্লাহ্*র রসুলের উপর চরমভাবে বিরক্ত, আল্লাহ্*র রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কর্তৃক তাদের উপর আরপিত দান সাদাকা করতে করতে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এভাবে তার সাথে তারা মিথ্যা মিথ্যি কথা বলতে থাকে যতক্ষণ না তারা তাকে সম্পূর্ণরূপে বাগে আনতে পেরেছিলেন এবং অতঃপর আল্লাহ্*র এ দুশমনকে তারা হত্যা করে ফেলেন । 13
হাফেজ ইবনে হাজার এই হাদিসের ব্যখ্যায় তার ফতহুল বারী গ্রন্থে তিনটি ক্ষেত্রে মিথ্যা কথা বলার বৈধতা প্রসঙ্গে অন্য আরও একটি হাদিস উল্লেখ করেছেন যে হাদিসটি ইমাম তিরমিযী রহঃ তার সুনানে উম্মে কুলসুম রাঃ এর বর্ণনায় সংকলণ করেছেন। এই তিনটি ক্ষেত্রের একটি হল যুদ্ধ। হাফিজ ইবনে হাজার রহঃ হাজ্জাজ ইবনে ইলাতের ঘটনাটিও সেখানে উল্লেখ করেছেন যেখানে দেখা যায় হাজ্জাজ ইবনে ইলাত তার সম্পদ মক্কার লোকদের কাছ থেকে ফেরত পাওয়ার জন্য রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মিথ্যা বলার অনুমতি প্রার্থনা করেন।14
[size=2]
...........
Comment