আজকাল রাস্তাঘাট, বাসাবাড়ি, অফিস-রেস্তোরা, ব্যাংক-বুথ, স্কুল-কলেজ সর্বত্র দেখা যায় সিসিটিভি বা ক্লওজ সার্কিট টিভি ক্যামেরার বাহুল্য। যারা এগুলো ব্যাবহার করে, তারা দাবি করে এর মাধ্যমে সিকিউরিটি বাড়বে, অপরাধীকে ধরা সম্ভব হবে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে- সিসিটিভির মাধ্যমে অপরাধীকে ধরা খুব কমক্ষেত্রেই সম্ভব, এমনকি অপরাধীকে সনাক্ত করার ক্ষেত্রেও সিসিটিভির গুরুত্ব নেই বললেই চলে। আমি আমার এ পোস্টে সিসিটিভি বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করবো।১) ঢাকা শহরে যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যাকাণ্ড ও সিসিটিভি ফুটেজের গুরুত্ব:
কয়েক বছর আগে ঢাকা শহরে যুবলীগ নেতা মিল্কী হত্যাকাণ্ড ঘটে। সে সময় একটি মার্কেটের সামনে লাগানো সিসিটিভি ফুটেজে সেই পুরো ঘটনাটি ভিডিও করা হয়। ইউটিউবে এ লিঙ্কে (https://youtu.be/G7kWXee_23A) আপনারা মিল্কিকে গুলি করার দৃশ্যটি দেখতে পারবেন। কিন্তু এ ভিডিওটি দেখে আপনি কখনই বুঝতে পারবেন না- খুনির চেহারা কেমন, কারণ সিসিটিভি একটি স্থির ক্যামেরা, এটা ক্যামেরাম্যানের হাতে লাগানো ক্যামেরা নয় যে তা জুম করবে, এদিক-ওদিক করে খুনিকে দেখবে। ভিডিওটি দেখার পর এ লিঙ্কে (http://goo.gl/OZm2qX) গিয়ে খুনির ছবি দেখুন, দেখবেন সিসিটিভি ফুটেজ ও ছবির মধ্যে কোন মিল নেই।
এ বিষয়টি দ্বারা প্রমাণ হয়, মূলত অপরাধীর চেহারা সনাক্ত করতে সিসিটিভির তেমন গুরুত্ব নেই। একজন পাকা অপরাধী তার চেহারা এমন করে লুকিয়ে আসবে যেন কোন সিসিটিভি যেন তা বুঝতে না পারে, উল্টো যেন বিভ্রান্ত হয়। তবে এটা ঠিক সিসিটিভি’র লাইভ ফুটেজ সাধারণ পাবলিককে আনন্দ দিতে পারে, তবে সেটা অপরাধী ধরার ক্ষেত্রে দলিল হিসেবে কাজ করতে না, বরং সেটা অনুসরণ করলে উল্টো পুলিশ/গোয়েন্দাদের আরো বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়।
২) উন্নত রাষ্ট্রের দাবিদার ইউরোপ-আমেরিকায় এই সিসিটিভির সফলতা পুরোপুরি প্রশ্নবিদ্ধ। আসুন এ সম্পর্কে ইউরোপ’র কিছু খবর দেখি:
ক) ব্রিটিশ পুলিশ বলেছে, সিসিটিভি মাধ্যমে অপরাধ হ্রাস পায় না। ইউরোপের সবচেয়ে বেশি সিসিটিভি আছে ব্রিটেনে (১০ লক্ষের উপর) কিন্তু অপরাধ দমনে এর তেমন কোন প্রভাব নেই। এর দ্বারা যদি সামান্য কিছু (মাত্র ৩ % সফলতা) আউটপুট আসেও, কিন্তু এর পেছনে যে বিলিয়ন পাউন্ড খরচ হয় সে তুলনায় তা একেবারেই নগণ্য। পাশাপাশি সিসিটিভি'র দুর্বল চিত্র দিয়ে অপরাধী চেহারাও সনাক্ত করা কঠিন এবং কোর্টে তা প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। সিসিটিভি সনাক্তকরণ কঠিন হওয়ায় পুলিশ অনেক সময় সেই পদ্ধতিতেই যায় না। (সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, ডেইলি মেইল---৬ মে ২০০৮)
খ) স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড পুলিশ বলছে: সিসিটিভি কার্যক্ষমতা খুবই কম। ১ হাজার সিসিটিভি দিয়ে ১ বছরে মাত্র ১টি অপরাধ দমন করা সম্ভব। (সূত্র: ডেইলি মেইল, ২৫ আগস্ট ২০০৯)
গ) লন্ডনে ১০ হাজার সিসিক্যামেরা, খরচ ২০০ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু সিসিটিভি'র প্রমাণ দিয়ে ৮০ ভাগ অপরাধের সমাধান করা যায় না। (সূত্র: লন্ডন ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড, ১৯ সেপ্টেম্ব ২০০৭)
ঘ) সিসিটিভি মানুষের গোপনীয়তা নষ্ট করে দেয়। এর মাধ্যমে মানুষের অনেক ব্যক্তিগত মুহুর্ত ধারণ করা সম্ভব, যা দিয়ে পরবর্তীতে জঘন্য অপরাধ ও ব্ল্যাকমেইল সংগঠিত হয়। উল্লেখ্য, লন্ডনের ২০০টি স্কুলের টয়লেট এবং কাপড় পরিবর্তনের রুমে সিসিটিভি সেট করা আছে। (সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, ১২ সেপ্টেম্বর ২০১২)
উপরের আলোচনা দ্বারা যে বিষয়গুলো বোঝা গেলো-
---সিসিটিভির হাত নেই যে, সে অপরাধীকে ধরে ফেলবে।
---সিসিটিভি ক্রয় ও মেইনটেইন্সে যে খরচ করে সে অনুসারে আউটপুট খুবই সামান্য।
-- সিসিটিভি দিয়ে মানুষের ব্যক্তিগত/গোপন বিষয়গুলো ধারণ হয়ে যায়, যা দিয়ে পরবর্তীতে ব্ল্যাক মেইল হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
-- সিসিটিভি ফুটেজ অপরাধী সনান্তকরণে পুলিশের কাছে খুব কম সময়ই দলিল হিসেবে গ্র্রহনযোগ্য হয়।
--সিসিটিভির যদি কোন গুরুত্ব থেকেই থাকে, তবে তা অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পরে। কিন্তু অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগে সিসিটিভি কোন গুরুত্ব নেই। বিষয়টি অনেকটা ‘রোগি মারা যাওয়ার পর ডাক্তার আসিলো’ টাইপের।
সিসিটিভি দিয়ে নিরাপত্তা দিতে গেলে পুরো টাকাই বিদেশে চলে যায়। বিনিময়ে পাওয়া যায় নিম্ন মানের সিকিউরি। যদি সামান্য কিছূ পাওয়া যায়, তাও অপরাধ মানে খুন-খারাপি-চুরি-ডাকাতি সব ঘটে যাওয়ার পর, আগে নয়।
একটি কথা আপনাকে সব সময় মনে রাখতে হবে, সিসিটিভি আপনাকে সিনেমা দেখাতে পারবে, কিন্তু সিকিউরিটি বা নিরাপত্তা দিতে পারে না। যারা এর নাম সিকিউরিটি ক্যামেরা দিয়ে থাকে, তারা ভুল করে।
আর নয়, সবাইকে ধন্যবাদ।
কোপাও নাস্তিক বাচাও দেশ, সাবাস আল কায়েদা বাংলাদেশ
Comment