টেক জায়ান্টগুলো ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি চেয়েও অনেক ক্ষমতাশালী এবং ব্যবহারকারীর গতিবিধি সম্পূর্ণ নজরদারি করে তারা
বিশ্বজুড়ে ফেইসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ২০০ কোটি। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের খুঁটিনাটি তথ্যের অনেক কিছুই আছে ফেইসবুকের কাছে। তাই ফেইসবুক শুধু আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নয়, আদতে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানও। ব্যবহারকারীর গতিবিধির সবটাই নজরে থাকে ফেইসবুকের।
ফেইসবুক কিভাবে আমাদের কাছ থেকে তথ্য সংরক্ষণ করে তার একটি ম্যাপ প্রকাশ করেছে যুগোস্লাভিয়ার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান শেয়ার ল্যাব। বেশ কয়েক বছর ধরেই এখানে কাজ করছেন সার্বিয়ার নোভি সাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ভ্লাদান জোলের। বন্ু্ল ও সহকর্মী বেলগ্রেডকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় তিন বছর ধরে গবেষণা করছেন ফেইসবুক নিয়ে। সহকারী হিসেবে দলে আছেন সাইবার ফরেনসিক বিষয়ে আরো কয়েকজন বিশেষজ্ঞ। ফেইসবুকের তথ্যভাণ্ডারের বিশালতার ব্যাপারে আগেভাগেই কিছুটা ধারণা করতে পেরেছিলেন জোলের। কিন্তু আসল তথ্য হাতে পেয়ে হতভম্ব হয়েছেন তিনি। সদ্য এক যুগ পেরোনো সিলিকন ভ্যালির ফেইসবুক কার্যালয়ে সংরক্ষিত আছে ৩০০ পেটাবাইট (এক হাজার গিগাবাইটে এক পেটাবাইট) ডাটা।
জোলের বলেন, ফেইসবুককে এত লাভবান করার পেছনে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ব্যবহারকারীদের। ফোনের অ্যাপস, ওয়াই-ফাই সংযোগ ও অডিও রেকর্ডিংয়ের অনুমোদন দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের লাইক, শেয়ার, কমেন্ট, সার্চ, স্ট্যাটাস, ছবি, বন্ধুসহ বিভিন্ন তালিকা আমরা তুলে দিচ্ছি ফেইসবুকের হাতে। এ কারণে ব্যবহারকারীর পছন্দ-অপছন্দ নির্ভুলভাবে ধরতে পারে ফেইসবুক। কোরিয়ান খাবার পছন্দ না চায়নিজ, কাজের পরিধি কিংবা বাচ্চার বয়স কত—তা নির্ণয় করার ক্ষমতাও রাখে ফেইসবুক। কোনো কিছু আপলোড, ট্যাগ ও কমেন্ট পোস্ট করা মানেই আমরা ফেইসবুককে সাহায্য করছি। আমাদের পছন্দ আর অপছন্দের তথ্য তুলে দিচ্ছি সাইটটির হাতে। এ তথ্যগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জটিল অ্যালগরিদমকে (কম্পিউটারসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়) আরো শক্তিশালী করে। জোলেরের মতে, এটা আমাদের আচরণকে একটি পণ্যে রূপান্তরিত করছে। ফেইবুকের হাতে কী কী তথ্য আছে তার একটি চিত্র আঁকতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির যে নথি পাওয়া গেছে, তা এককথায় অবিশ্বাস্য।
যৌনতাবিষয়ক আগ্রহ, রাজনৈতিক যোগাযোগ, সামাজিক অবস্থান, ভ্রমণসূচিসহ আরো অনেক বিষয়ে বিশ্লেষণ করে ফেইসবুক আমাদের জাতিগত মিল খুঁজে বের করে। কোনো কিছু পোস্ট করা থেকে শুরু করে পেইজে লাইক দেওয়া এবং অনলাইনে আমাদের গতিবিধি কী রকম তাও লক্ষ করছে ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা ফেইসবুকে লগইন করতে বলা সাইটগুলো। আর এ তথ্যগুলোই প্রবেশ করছে অ্যালগরিদম প্রক্রিয়ায়।
এখানেই শেষ নয়, অনেক ক্ষেত্রে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা অ্যাপগুলোকে ‘অনুমতি’ দেওয়ার মাধ্যমেও ফেইসবুককে তথ্য দেয়। যেগুলো দিয়ে ফোনের এসএমএস, অনুমোদনবিহীনভাবে ডাউনলোড করা ফাইল এবং আমাদের সুনির্দিষ্ট অবস্থানও জেনে যায় ফেইসবুক।
কয়েক বছর ধরেই ফেইসবুক বলে আসছে, তথ্যের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তাকে তারা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাদের দাবি, ফেইসবুকের ডাটা ডেভেলপাররা ব্যবহার করতে পারে না। কারণ প্রতিটি দেশেই তাদের ‘প্রাইভেসি প্রটেকশন আইন’ মেনে চলতে হয়। বিষয়বস্তুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফেইসবুকে হাজার হাজার নতুন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জোলের বলেন, তথ্যের যে ভাণ্ডার গড়া হয়েছে তাতে দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব কী হবে, সেটা নিয়ে তিনি শঙ্কিত। তথ্যগুলো একটি প্রতিষ্ঠানের হাতেই থাকবে। ফেইসবুকের বর্তমান নেতৃত্ব দায়িত্ববান ও আস্থাভাজন; কিন্তু আগামী ২০ বছর পর যখন নতুন নেতৃত্ব আসবে, তখন কী হবে?
প্রযুক্তি আইন ও পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ জুলিয়া পাওয়েল বলেছেন, টেক জায়ান্টগুলো ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি বা স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের চেয়েও অনেক বেশি ক্ষমতাশালী। অনেকেই ভাবতে পারেন, মার্ক জাকারবার্গের রাজত্বে আমাদের কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু সব সময়ই ব্যাপারটি একই রকম থাকবে সে নিশ্চয়তাও দেওয়া যাচ্ছে না। সব কিছুর আগে জনপ্রিয়তাকে বেশি প্রাধান্য দিতে ফেইসবুক আমাদের মানসিকভাবে প্ররোচিত করে। ফলে নিয়ম-কানুনের গুরুত্ব, অনীহা ও পছন্দগুলোর বিকল্প কমে যাচ্ছে।
শেয়ার ল্যাব টেক জায়ান্টগুলোর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যে গবেষণা করছে, তা আসলেই কৃতিত্বপূর্ণ। কিন্তু জোলের এটি স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন, এ সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টগুলোর বাণিজ্যিক গোপনীয়তা ভেদ করে কোনো অ্যালগরিদম প্রক্রিয়া চালছে কি না তাও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
সংগূহিত
বিশ্বজুড়ে ফেইসবুক ব্যবহারকারীর সংখ্যা এখন ২০০ কোটি। এই বিপুলসংখ্যক মানুষের খুঁটিনাটি তথ্যের অনেক কিছুই আছে ফেইসবুকের কাছে। তাই ফেইসবুক শুধু আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নয়, আদতে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানও। ব্যবহারকারীর গতিবিধির সবটাই নজরে থাকে ফেইসবুকের।
ফেইসবুক কিভাবে আমাদের কাছ থেকে তথ্য সংরক্ষণ করে তার একটি ম্যাপ প্রকাশ করেছে যুগোস্লাভিয়ার গবেষণাপ্রতিষ্ঠান শেয়ার ল্যাব। বেশ কয়েক বছর ধরেই এখানে কাজ করছেন সার্বিয়ার নোভি সাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ভ্লাদান জোলের। বন্ু্ল ও সহকর্মী বেলগ্রেডকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় তিন বছর ধরে গবেষণা করছেন ফেইসবুক নিয়ে। সহকারী হিসেবে দলে আছেন সাইবার ফরেনসিক বিষয়ে আরো কয়েকজন বিশেষজ্ঞ। ফেইসবুকের তথ্যভাণ্ডারের বিশালতার ব্যাপারে আগেভাগেই কিছুটা ধারণা করতে পেরেছিলেন জোলের। কিন্তু আসল তথ্য হাতে পেয়ে হতভম্ব হয়েছেন তিনি। সদ্য এক যুগ পেরোনো সিলিকন ভ্যালির ফেইসবুক কার্যালয়ে সংরক্ষিত আছে ৩০০ পেটাবাইট (এক হাজার গিগাবাইটে এক পেটাবাইট) ডাটা।
জোলের বলেন, ফেইসবুককে এত লাভবান করার পেছনে সম্পূর্ণ কৃতিত্ব ব্যবহারকারীদের। ফোনের অ্যাপস, ওয়াই-ফাই সংযোগ ও অডিও রেকর্ডিংয়ের অনুমোদন দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের লাইক, শেয়ার, কমেন্ট, সার্চ, স্ট্যাটাস, ছবি, বন্ধুসহ বিভিন্ন তালিকা আমরা তুলে দিচ্ছি ফেইসবুকের হাতে। এ কারণে ব্যবহারকারীর পছন্দ-অপছন্দ নির্ভুলভাবে ধরতে পারে ফেইসবুক। কোরিয়ান খাবার পছন্দ না চায়নিজ, কাজের পরিধি কিংবা বাচ্চার বয়স কত—তা নির্ণয় করার ক্ষমতাও রাখে ফেইসবুক। কোনো কিছু আপলোড, ট্যাগ ও কমেন্ট পোস্ট করা মানেই আমরা ফেইসবুককে সাহায্য করছি। আমাদের পছন্দ আর অপছন্দের তথ্য তুলে দিচ্ছি সাইটটির হাতে। এ তথ্যগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের জটিল অ্যালগরিদমকে (কম্পিউটারসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়) আরো শক্তিশালী করে। জোলেরের মতে, এটা আমাদের আচরণকে একটি পণ্যে রূপান্তরিত করছে। ফেইবুকের হাতে কী কী তথ্য আছে তার একটি চিত্র আঁকতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির যে নথি পাওয়া গেছে, তা এককথায় অবিশ্বাস্য।
যৌনতাবিষয়ক আগ্রহ, রাজনৈতিক যোগাযোগ, সামাজিক অবস্থান, ভ্রমণসূচিসহ আরো অনেক বিষয়ে বিশ্লেষণ করে ফেইসবুক আমাদের জাতিগত মিল খুঁজে বের করে। কোনো কিছু পোস্ট করা থেকে শুরু করে পেইজে লাইক দেওয়া এবং অনলাইনে আমাদের গতিবিধি কী রকম তাও লক্ষ করছে ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ কিংবা ফেইসবুকে লগইন করতে বলা সাইটগুলো। আর এ তথ্যগুলোই প্রবেশ করছে অ্যালগরিদম প্রক্রিয়ায়।
এখানেই শেষ নয়, অনেক ক্ষেত্রে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা অ্যাপগুলোকে ‘অনুমতি’ দেওয়ার মাধ্যমেও ফেইসবুককে তথ্য দেয়। যেগুলো দিয়ে ফোনের এসএমএস, অনুমোদনবিহীনভাবে ডাউনলোড করা ফাইল এবং আমাদের সুনির্দিষ্ট অবস্থানও জেনে যায় ফেইসবুক।
কয়েক বছর ধরেই ফেইসবুক বলে আসছে, তথ্যের গোপনীয়তা ও নিরাপত্তাকে তারা সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তাদের দাবি, ফেইসবুকের ডাটা ডেভেলপাররা ব্যবহার করতে পারে না। কারণ প্রতিটি দেশেই তাদের ‘প্রাইভেসি প্রটেকশন আইন’ মেনে চলতে হয়। বিষয়বস্তুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফেইসবুকে হাজার হাজার নতুন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জোলের বলেন, তথ্যের যে ভাণ্ডার গড়া হয়েছে তাতে দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব কী হবে, সেটা নিয়ে তিনি শঙ্কিত। তথ্যগুলো একটি প্রতিষ্ঠানের হাতেই থাকবে। ফেইসবুকের বর্তমান নেতৃত্ব দায়িত্ববান ও আস্থাভাজন; কিন্তু আগামী ২০ বছর পর যখন নতুন নেতৃত্ব আসবে, তখন কী হবে?
প্রযুক্তি আইন ও পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ জুলিয়া পাওয়েল বলেছেন, টেক জায়ান্টগুলো ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানি বা স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের চেয়েও অনেক বেশি ক্ষমতাশালী। অনেকেই ভাবতে পারেন, মার্ক জাকারবার্গের রাজত্বে আমাদের কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু সব সময়ই ব্যাপারটি একই রকম থাকবে সে নিশ্চয়তাও দেওয়া যাচ্ছে না। সব কিছুর আগে জনপ্রিয়তাকে বেশি প্রাধান্য দিতে ফেইসবুক আমাদের মানসিকভাবে প্ররোচিত করে। ফলে নিয়ম-কানুনের গুরুত্ব, অনীহা ও পছন্দগুলোর বিকল্প কমে যাচ্ছে।
শেয়ার ল্যাব টেক জায়ান্টগুলোর আধিপত্য বিস্তার নিয়ে যে গবেষণা করছে, তা আসলেই কৃতিত্বপূর্ণ। কিন্তু জোলের এটি স্পষ্ট করেই বলে দিয়েছেন, এ সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টগুলোর বাণিজ্যিক গোপনীয়তা ভেদ করে কোনো অ্যালগরিদম প্রক্রিয়া চালছে কি না তাও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।
সংগূহিত
Comment