নজরদারি চিরকালই চলে আসছে৷ কোনো প্রযুক্তি ছাড়াই তিনি সবকিছু দেখে চলেছেন৷ প্রকৃতির কোলেও মানুষকে সতর্ক থাকতে হয়৷ ষোড়শ শতাব্দীর ডাচ ভাষার এক প্রবাদ বলে, ‘মাঠের চোখ আছে, জঙ্গলের কান আছে'৷ একদল নজরদারির শিকার হবার ভয়ে থাকেন, অন্যরা আবার ভয় পেয়ে নিজেরাই নজরদারি চালান৷
.
কাউন্ট কাল্পনিক নজরদারি যন্ত্র তৈরি করিয়েছিলেন৷ অথচ তার সঙ্গে আজকের সিস্টেমের অবিশ্বাস্য মিল রয়েছে৷ নজরদারির ক্ষেত্রে এই বিশালাকার রাডার স্টেশন আরও এক পদক্ষেপ৷ ফটোগ্রাফি মিউজিয়ামের কিউরেটর ইয়ুকিকো ইয়ামাগাটা বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সরকারি সংস্খাগুলির নজরদারির ক্ষমতা বেড়ে চলায় বিষয়টি ক্রমশ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে৷ যুদ্ধের ফলে মানুষের মনে যে ভয় ও আতঙ্ক জন্মাচ্ছে, তার ফলে এমন নজরদারি সবাই মেনেও নিচ্ছে৷''
.
সে কারণে নিউ ইয়র্ক শহরে মুসলিমদের উপর বছরের পর বছর ধরে নজরদারি চালানো হয়েছিল৷ সংবাদ সংস্থা এপি ২০১১ সালে পুলিশের এক গোপন বিশেষ ইউনিটের নথিপত্র প্রকাশ করে৷ বাজার করা, নামাজ পড়া, খেলাধুলার মতো সাধারণ কার্যকলাপও সেই ব্যবস্থার নজর এড়ায়নি৷ এর ফলে ভয় ও সন্দেহের একটা কঠিন পরিবেশ তৈরি হয়েছিল৷
.
কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানি ছিল এক নজরদারি-কেন্দ্রিক রাষ্ট্র৷ ‘স্টাসি' বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের সংগ্রহশালা এমন দৈনন্দিন কার্যকলাপের নথিপত্রে ভরা৷ সেই জমানায় চিঠিপত্র পেলে যে কেউ সন্দেহের পাত্র হয়ে উঠতো৷
.
নাইন-ইলেভেনের পর থেকে এনএসএ সহ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা নিয়ে দেশে-বিদেশে বিতর্কের শেষ নেই৷ অভিযোগ উঠছে, খোদ অ্যামেরিকার আইনও তোয়াক্কা করে না এনএসএ৷ তাদের বিদেশি সহযোগীরাও আইন ও নিয়ন্ত্রণের ঊর্ধ্বে উঠে বে-আইনি কার্যকলাপ চালাচ্ছে বলে বার বার শোনা যাচ্ছে৷ ব্যক্তি, রাজনীতিক, কোম্পানি সংক্রান্ত সব তথ্যের রাক্ষুসে ক্ষুধার যেন শেষ নেই৷
নজরদারি আজ সর্বত্র৷ রাষ্ট্র তথা গোয়েন্দা সংস্থার কার্যকলাপ থেকে শুরু করে মোবাইল, ইন্টারনেটসহ অনেক পরিষেবার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে নজরদারির বীজ৷ এক প্রদর্শনীতে নজরদারির বিবর্তনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে৷
.
নজরদারি আজ সর্বত্র৷ রাষ্ট্র তথা গোয়েন্দা সংস্থার কার্যকলাপ থেকে শুরু করে মোবাইল, ইন্টারনেটসহ অনেক পরিষেবার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে নজরদারির বীজ৷ এক প্রদর্শনীতে নজরদারির বিবর্তনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে৷
.
বাড়িঘর থেকে শুরু করে প্রকাশ্য স্থান – নানা স্তরে নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে৷ মোবাইল ফোন আমাদের অবস্থান জানিয়ে দেয়, গুগল ব্যবহার করলেই আমাদের ডিজিটাল পরিচয়ের ‘প্রোফাইল'-এ তা যোগ হয়৷ সাধারণ মানুষ থেকে রাজনীতিক, সবাই নিজেদের সম্পর্কে তথ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে৷
.
বার্লিনে এক ছবি প্রদর্শনীর বিষয় – কে, কার উপর, কেন নজরদারি চালাচ্ছে? সত্তরের দশকে দেখা যেত, একজন লোক অসংখ্য মনিটারের সামনে বসে আছে৷ কিন্তু একসঙ্গে এত ছবির উপর নজর রাখা কি সম্ভব? কোনো অপরাধ চোখে পড়লেও ততক্ষণে যা হবার তা হয়ে যায়৷ নজরদারি ক্যামেরার চোখে ব্যাংক ডাকাতির কিছু দৃশ্যও শোভা পাচ্ছে৷ এর মধ্যে প্রযুক্তির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে৷
.
এডওয়ার্ড স্নোডেন আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সাবেক সদস্য যিনি দেশটির ইন্টারনেট নজরদারি কর্মসূচির তথ্য ফাঁস করে দিয়ে বৈশ্বিকভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন।
.
এডওয়ার্ড স্নোডেন ফাঁস করে দিয়েছেন যে প্রিজম কর্মসূচির আওতায় ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট, ইয়াহু, ইউটিউব এবং অ্যাপলসহ বিভিন্ন ইন্টারনেট জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানকে না জানিয়েই তাদের সার্ভারে সরাসরি প্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহ করে আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসআই) ও ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) যা ছিল মারাত্মক এবং অসাংবিধানিক কাজ।
.
২০১৩ এর জানুয়ারিতে স্নোডেন প্রথমে ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র নির্মাতা লরা পয়ট্রাসের সাথে যোগাযোগ করেন। পয়ট্রাসের উক্তি অনুসারে, উইলিয়াম বেনি নামক একজন গোপন নজরদারির তথ্য ফাসকারী এনএসএ-এর কর্মকর্তার উপর পয়ট্রাসের রিপোর্ট দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে দেখার পর স্নোডেন পয়ট্রাসের সাথে যোগাযোগ করে। পয়ট্রাস ফ্রিডম অফ দত প্রেস ফাউন্ডেশনের একজন বোর্ড সদস্য। এনএসএ-এর কর্মকর্তা গ্লেন গ্রিনওয়াল্ড এই ফাউন্ডেশনের একজন বোর্ড সদস্য। দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক রিপোর্টে গ্রিনওয়াল্ড বলেন যে, তিনি ২০১৩ এর ফেব্রুয়ারি থেকে স্নোডেনের সাথে কাজ করেছেন। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক বার্টন গেলম্যানের সাথে স্নোডেনের প্রথম সাক্ষাৎ হয় ২০১৩ এর ১৬ মে। গেলম্যান বলেছেন যে, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট ৭২ ঘন্টার মধ্যে স্নোডেনের দেয়া গোপন তথ্যের দলিলসমূহ প্রকাশের ব্যাপারে নিশ্চয়তা না দিতে পারার কথা বলার পরেই কেবল গ্রিনওয়াল্ড তথ্য ফাঁসের সাথে যুক্ত হয়েছে। গেলম্যান আরও বলেন যে, তাঁর প্রতিষ্ঠান (দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট) কখন বা গোপন তথ্য-সম্বলিত দলিলের কতখানি প্রকাশ করবে, তার নিশ্চয়তা দেয়নি। এরপর স্নোডেন তার সাথে আর কোন যোগাযোগ করতে অস্বীকার করেন।
.
এসমস্ত যোগাযোগের জন্য স্নোডেন এনক্রিপ্টেড ইমেইল ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর কোডনেম ছিল "Verax"। গেলম্যানের দেয়া তথ্য অনুসারে সরাসরি সাক্ষাতের পূর্বে স্নোডেন লিখেছিলেন, "আমি উপলব্ধি করি যে আমার কার্যাবলির জন্য আমাকে ভুগতে হতে পারে। জনগণের কাছে এসমস্ত তথ্য পৌছামাত্র আমার কাজ শেষ হবে।"
.
২০১৩ এর মে মাসে স্নায়ুরোগের কারণে স্নোডেনকে এনএসএ থেকে সাময়িক ছুটির অনুমতি দেয়া হয়। মে-এর ২০ তারিখে স্নোডেন হং কং-এ যান। এনএসএ সংক্রান্ত গোপন তথ্যের প্রাথমিক নিবন্ধ প্রকাশের সময় স্নোডেন হং কং -এ অবস্থান করছিলেন। এসব তথ্যের মাধ্যমে স্নোডেন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু গোপন নজরদারি প্রকল্প ও তাদের কার্যাদির ঘটনা প্রকাশ করেন। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে প্রিজম (নজরদারি প্রকল্প), এনএসএ কল ডাটাবেস, বাউন্ডলেস ইনফরম্যান্ট। তিনি এনএসএ-এর ব্রিটিশ সহযোগী GCHQ-এর গোপন নজরদারি প্রকল্প টেম্পোরা-এর বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেন। ২০১৩ এর জুলাই-এ গ্রিনওয়াল্ড বলেন যে, স্নোডেনের কাছে এনএসএ সম্পর্কে আরো স্পর্শকাতর তথ্য রয়েছে, যা তিনি প্রকাশ করেননি।
.
মজার ব্যাপার হল, স্নোডেন কী পরিমাণ নথিপত্র ডাউনলোড করেছেন তা এখনও অজানা৷ ২০১৩ সালে দ্য গার্ডিয়ান-এর সম্পাদক অ্যালান রুসব্রিজার জানিয়েছিলেন যে, যা তথ্য স্নোডেন দিয়েছেন তার মাত্র এক শতাংশ এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে৷ এবং সেই এক শতাংশই দুনিয়া তোলপাড় করার জন্য যথেষ্ট৷ যে প্রকল্পটির কথা প্রথম প্রকাশিত হয়, তার নাম প্রিজম৷ ২০০৭ সালে মার্কিন সরকার চালু করে এই প্রকল্প৷ এটির মাধ্যমে এনএসএ ন'টি মার্কিন ইন্টারনেট সংস্থার থেকে তথাকথিত 'বিদেশি' নাগরিকদের যাবতীয় বার্তালাপের রেকর্ড সংগ্রহ করে৷ যদিও স্নোডেন-এর নথির উপর ভিত্তি করে দ্য গার্ডিয়ান এবং ওয়াশিংটন পোস্ট যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তাতে বলা হয় যে মার্কিন নাগরিকরাও প্রিজম-এর নজরদারির আওতায় পড়ে৷ সেই প্রতিবেদনের সত্যতা অস্বীকার করে মার্কিন সরকার৷ প্রিজম-এর উৎপত্তি বুশ জমানায়, চালিত হয় ফরেন ইনটেলিজেন্স সার্ভেলেন্স কোর্ট-এর মতো একটি বিশেষ আদালতের পরিদর্শনে৷ যে আদালতের একটি গোপন নির্দেশ অনুসারে ভেরিজনকে প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ মার্কিন নাগরিকের ফোনালাপের রেকর্ড তুলে দিতে হত এনএসএ-র হাতে৷ এটিও জানা যায় এডওয়ার্ড স্নোডেন মারফত৷ জানা যায় এক্সকিস্কোর নামের এক প্রোগ্রামের কথা, যার মাধ্যমে ইন্টারনেটের যে কোনও তথ্য নিমেষে পৌঁছে যেতে পারে এনএসএ-র হাতে৷
.
collected and edited
.
কাউন্ট কাল্পনিক নজরদারি যন্ত্র তৈরি করিয়েছিলেন৷ অথচ তার সঙ্গে আজকের সিস্টেমের অবিশ্বাস্য মিল রয়েছে৷ নজরদারির ক্ষেত্রে এই বিশালাকার রাডার স্টেশন আরও এক পদক্ষেপ৷ ফটোগ্রাফি মিউজিয়ামের কিউরেটর ইয়ুকিকো ইয়ামাগাটা বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সরকারি সংস্খাগুলির নজরদারির ক্ষমতা বেড়ে চলায় বিষয়টি ক্রমশ আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে৷ যুদ্ধের ফলে মানুষের মনে যে ভয় ও আতঙ্ক জন্মাচ্ছে, তার ফলে এমন নজরদারি সবাই মেনেও নিচ্ছে৷''
.
সে কারণে নিউ ইয়র্ক শহরে মুসলিমদের উপর বছরের পর বছর ধরে নজরদারি চালানো হয়েছিল৷ সংবাদ সংস্থা এপি ২০১১ সালে পুলিশের এক গোপন বিশেষ ইউনিটের নথিপত্র প্রকাশ করে৷ বাজার করা, নামাজ পড়া, খেলাধুলার মতো সাধারণ কার্যকলাপও সেই ব্যবস্থার নজর এড়ায়নি৷ এর ফলে ভয় ও সন্দেহের একটা কঠিন পরিবেশ তৈরি হয়েছিল৷
.
কমিউনিস্ট পূর্ব জার্মানি ছিল এক নজরদারি-কেন্দ্রিক রাষ্ট্র৷ ‘স্টাসি' বা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের সংগ্রহশালা এমন দৈনন্দিন কার্যকলাপের নথিপত্রে ভরা৷ সেই জমানায় চিঠিপত্র পেলে যে কেউ সন্দেহের পাত্র হয়ে উঠতো৷
.
নাইন-ইলেভেনের পর থেকে এনএসএ সহ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা নিয়ে দেশে-বিদেশে বিতর্কের শেষ নেই৷ অভিযোগ উঠছে, খোদ অ্যামেরিকার আইনও তোয়াক্কা করে না এনএসএ৷ তাদের বিদেশি সহযোগীরাও আইন ও নিয়ন্ত্রণের ঊর্ধ্বে উঠে বে-আইনি কার্যকলাপ চালাচ্ছে বলে বার বার শোনা যাচ্ছে৷ ব্যক্তি, রাজনীতিক, কোম্পানি সংক্রান্ত সব তথ্যের রাক্ষুসে ক্ষুধার যেন শেষ নেই৷
নজরদারি আজ সর্বত্র৷ রাষ্ট্র তথা গোয়েন্দা সংস্থার কার্যকলাপ থেকে শুরু করে মোবাইল, ইন্টারনেটসহ অনেক পরিষেবার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে নজরদারির বীজ৷ এক প্রদর্শনীতে নজরদারির বিবর্তনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে৷
.
নজরদারি আজ সর্বত্র৷ রাষ্ট্র তথা গোয়েন্দা সংস্থার কার্যকলাপ থেকে শুরু করে মোবাইল, ইন্টারনেটসহ অনেক পরিষেবার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে নজরদারির বীজ৷ এক প্রদর্শনীতে নজরদারির বিবর্তনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে৷
.
বাড়িঘর থেকে শুরু করে প্রকাশ্য স্থান – নানা স্তরে নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে৷ মোবাইল ফোন আমাদের অবস্থান জানিয়ে দেয়, গুগল ব্যবহার করলেই আমাদের ডিজিটাল পরিচয়ের ‘প্রোফাইল'-এ তা যোগ হয়৷ সাধারণ মানুষ থেকে রাজনীতিক, সবাই নিজেদের সম্পর্কে তথ্যের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে৷
.
বার্লিনে এক ছবি প্রদর্শনীর বিষয় – কে, কার উপর, কেন নজরদারি চালাচ্ছে? সত্তরের দশকে দেখা যেত, একজন লোক অসংখ্য মনিটারের সামনে বসে আছে৷ কিন্তু একসঙ্গে এত ছবির উপর নজর রাখা কি সম্ভব? কোনো অপরাধ চোখে পড়লেও ততক্ষণে যা হবার তা হয়ে যায়৷ নজরদারি ক্যামেরার চোখে ব্যাংক ডাকাতির কিছু দৃশ্যও শোভা পাচ্ছে৷ এর মধ্যে প্রযুক্তির যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে৷
.
এডওয়ার্ড স্নোডেন আমেরিকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ’র সাবেক সদস্য যিনি দেশটির ইন্টারনেট নজরদারি কর্মসূচির তথ্য ফাঁস করে দিয়ে বৈশ্বিকভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছেন।
.
এডওয়ার্ড স্নোডেন ফাঁস করে দিয়েছেন যে প্রিজম কর্মসূচির আওতায় ফেসবুক, গুগল, মাইক্রোসফট, ইয়াহু, ইউটিউব এবং অ্যাপলসহ বিভিন্ন ইন্টারনেট জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানকে না জানিয়েই তাদের সার্ভারে সরাসরি প্রবেশ করে তথ্য সংগ্রহ করে আমেরিকার ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি (এনএসআই) ও ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) যা ছিল মারাত্মক এবং অসাংবিধানিক কাজ।
.
২০১৩ এর জানুয়ারিতে স্নোডেন প্রথমে ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র নির্মাতা লরা পয়ট্রাসের সাথে যোগাযোগ করেন। পয়ট্রাসের উক্তি অনুসারে, উইলিয়াম বেনি নামক একজন গোপন নজরদারির তথ্য ফাসকারী এনএসএ-এর কর্মকর্তার উপর পয়ট্রাসের রিপোর্ট দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে দেখার পর স্নোডেন পয়ট্রাসের সাথে যোগাযোগ করে। পয়ট্রাস ফ্রিডম অফ দত প্রেস ফাউন্ডেশনের একজন বোর্ড সদস্য। এনএসএ-এর কর্মকর্তা গ্লেন গ্রিনওয়াল্ড এই ফাউন্ডেশনের একজন বোর্ড সদস্য। দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত এক রিপোর্টে গ্রিনওয়াল্ড বলেন যে, তিনি ২০১৩ এর ফেব্রুয়ারি থেকে স্নোডেনের সাথে কাজ করেছেন। দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের সাংবাদিক বার্টন গেলম্যানের সাথে স্নোডেনের প্রথম সাক্ষাৎ হয় ২০১৩ এর ১৬ মে। গেলম্যান বলেছেন যে, দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট ৭২ ঘন্টার মধ্যে স্নোডেনের দেয়া গোপন তথ্যের দলিলসমূহ প্রকাশের ব্যাপারে নিশ্চয়তা না দিতে পারার কথা বলার পরেই কেবল গ্রিনওয়াল্ড তথ্য ফাঁসের সাথে যুক্ত হয়েছে। গেলম্যান আরও বলেন যে, তাঁর প্রতিষ্ঠান (দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট) কখন বা গোপন তথ্য-সম্বলিত দলিলের কতখানি প্রকাশ করবে, তার নিশ্চয়তা দেয়নি। এরপর স্নোডেন তার সাথে আর কোন যোগাযোগ করতে অস্বীকার করেন।
.
এসমস্ত যোগাযোগের জন্য স্নোডেন এনক্রিপ্টেড ইমেইল ব্যবহার করেছিলেন। তাঁর কোডনেম ছিল "Verax"। গেলম্যানের দেয়া তথ্য অনুসারে সরাসরি সাক্ষাতের পূর্বে স্নোডেন লিখেছিলেন, "আমি উপলব্ধি করি যে আমার কার্যাবলির জন্য আমাকে ভুগতে হতে পারে। জনগণের কাছে এসমস্ত তথ্য পৌছামাত্র আমার কাজ শেষ হবে।"
.
২০১৩ এর মে মাসে স্নায়ুরোগের কারণে স্নোডেনকে এনএসএ থেকে সাময়িক ছুটির অনুমতি দেয়া হয়। মে-এর ২০ তারিখে স্নোডেন হং কং-এ যান। এনএসএ সংক্রান্ত গোপন তথ্যের প্রাথমিক নিবন্ধ প্রকাশের সময় স্নোডেন হং কং -এ অবস্থান করছিলেন। এসব তথ্যের মাধ্যমে স্নোডেন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু গোপন নজরদারি প্রকল্প ও তাদের কার্যাদির ঘটনা প্রকাশ করেন। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে প্রিজম (নজরদারি প্রকল্প), এনএসএ কল ডাটাবেস, বাউন্ডলেস ইনফরম্যান্ট। তিনি এনএসএ-এর ব্রিটিশ সহযোগী GCHQ-এর গোপন নজরদারি প্রকল্প টেম্পোরা-এর বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেন। ২০১৩ এর জুলাই-এ গ্রিনওয়াল্ড বলেন যে, স্নোডেনের কাছে এনএসএ সম্পর্কে আরো স্পর্শকাতর তথ্য রয়েছে, যা তিনি প্রকাশ করেননি।
.
মজার ব্যাপার হল, স্নোডেন কী পরিমাণ নথিপত্র ডাউনলোড করেছেন তা এখনও অজানা৷ ২০১৩ সালে দ্য গার্ডিয়ান-এর সম্পাদক অ্যালান রুসব্রিজার জানিয়েছিলেন যে, যা তথ্য স্নোডেন দিয়েছেন তার মাত্র এক শতাংশ এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত হয়েছে৷ এবং সেই এক শতাংশই দুনিয়া তোলপাড় করার জন্য যথেষ্ট৷ যে প্রকল্পটির কথা প্রথম প্রকাশিত হয়, তার নাম প্রিজম৷ ২০০৭ সালে মার্কিন সরকার চালু করে এই প্রকল্প৷ এটির মাধ্যমে এনএসএ ন'টি মার্কিন ইন্টারনেট সংস্থার থেকে তথাকথিত 'বিদেশি' নাগরিকদের যাবতীয় বার্তালাপের রেকর্ড সংগ্রহ করে৷ যদিও স্নোডেন-এর নথির উপর ভিত্তি করে দ্য গার্ডিয়ান এবং ওয়াশিংটন পোস্ট যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে, তাতে বলা হয় যে মার্কিন নাগরিকরাও প্রিজম-এর নজরদারির আওতায় পড়ে৷ সেই প্রতিবেদনের সত্যতা অস্বীকার করে মার্কিন সরকার৷ প্রিজম-এর উৎপত্তি বুশ জমানায়, চালিত হয় ফরেন ইনটেলিজেন্স সার্ভেলেন্স কোর্ট-এর মতো একটি বিশেষ আদালতের পরিদর্শনে৷ যে আদালতের একটি গোপন নির্দেশ অনুসারে ভেরিজনকে প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ মার্কিন নাগরিকের ফোনালাপের রেকর্ড তুলে দিতে হত এনএসএ-র হাতে৷ এটিও জানা যায় এডওয়ার্ড স্নোডেন মারফত৷ জানা যায় এক্সকিস্কোর নামের এক প্রোগ্রামের কথা, যার মাধ্যমে ইন্টারনেটের যে কোনও তথ্য নিমেষে পৌঁছে যেতে পারে এনএসএ-র হাতে৷
.
collected and edited
Comment