তোমার অন্তর হচ্ছে তোমার ইবাদাতের খুঁটি – আব্দুল্লাহ আযযাম (রাহিমাহুল্লাহ)
হৃদয় হচ্ছে এমন একটি যন্ত্র যা ইবাদাতের চালিকাশক্তিরূপে কাজ করে। এটি পুরো শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে। যতক্ষণ পর্যন্ত অন্তর সজীব থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত দেহের অঙ্গপ্রত্তঙ্গ ও আত্মা আল্লাহর ইবাদাতে সর্বদা উতফুল্ল থাকে। তবে অন্তর যদি ব্যধিগ্রস্থ হয় তাহলে সেই আত্মায় ইবাদাত অনেক কঠিন অনুভূত হয় এবং যে কারণে শেষ পর্যায়ে নাফরমান বান্দায় পরিণত হয় । তাই এরকম অবস্থা থেকে আমরা আল্লাহর আশ্রয় চাই। এজন্যই আল্লাহ সুবহানাহু ও’য়া তাআলা বলেছেন-
“……নামাজ প্রতিষ্ঠা করা (অবশ্যই একটি) কঠিন কাজ, কিন্তু যারা (আল্লাহকে) ভয় করে তাদের কথা আলাদা।” (সূরা আল-বাক্বারাহ: ৪৫)
ইবাদাতে উদাসীনতা আসে এই কারণে নয় যে কারো হাত বা পা এই পথে অগ্রসর হয় না বরং যে জিনিসটা আল্লাহর ইবাদাতের প্রতি মনোযোগ স্থাপন করে সেটি হচ্ছে অন্তর বা আত্মা।
“অবশ্যই মুনাফিকরা প্রতারণা করেছে আল্লাহর সাথে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুঃত তারা যখন নামাযে দাঁড়ায়, একান্ত শিথিলভাবে লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহর অল্পই স্মরণ করে।”(সূরা আন-নিসা: ১৪২)
একারনে অন্তরই হচ্ছে তা যা ইবাদাতের প্রতি একাগ্রতা সৃষ্টি করে। দেহের অঙ্গগুলো সাধারণত হৃদয় থেকে যে সংকেত প্রেরণ করে সে অনুসারে কাজ করে। যদি অন্তর জীবিত থাকে তবে আত্মাও জীবিত থাকে। আর তখন আল্লাহর ইবাদাত অন্তরের ভালোবাসা ও একাগ্রতায় পরিণত হয়। ফলে অন্তর আল্লাহর ইবাদাতের প্রতি ঝোকে পড়ে।
তবে অন্তর যদি ব্যধিগ্রস্থ হয়ে পড়ে তাহলে ইবাদাত তাঁর নিকট অনেক ভারী হয়ে যায়। অন্তর বা হৃদয় হচ্ছে অনেকটা পরিপাকতন্ত্রের মতো; যদি বর্তমানে তোমার সবচেয়ে পছন্দনীয় খাবার হয় মাংস আর তোমার পরিপাকতন্ত্রের কোনো এক জায়গায় যদি আলসার হয়ে যায় এবং এটি মাংসের চর্বি ও তেলের কারনে আরো বেড়ে যায় তাহলে সেই খাবারটি তোমার সবচেয়ে ঘৃণিত খাবারে রূপ নেবে, কেননা এই খাবার তোমার রোগ বৃদ্ধির কারন। মিষ্টান্নও হচ্ছে আরেক পছন্দনীয় খাবার। উদাহরণসরূপ বলা যায়, যদি তুমি এখন রোযাদার থাকো আর মিষ্টি খাবারের মাধ্যমে রোযা ভাঙ্গো তাহলে তোমার আত্মা এতে ভীষণ সন্তুষ্ট হবে, ঠিক কি না? তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা এরূপ মিষ্টান্ন খাবার খেতে সক্ষম হবেন না, যদিও এগুলো তার কাছে পছন্দনীয়।
অন্তর হচ্ছে ঠিক এরকম, ইবাদাতে অধিক মনোযোগী হতে হলে এটাকে অবশ্যই সতেজ ও শক্তিশালী হতে হবে। অন্তরে যত বেশি সজীবতা থাকবে আল্লাহর ইবাদাতে তুমি তত বেশী মনোযোগী হতে পারবে। তুমি রাতে ইবাদাতের জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠো এবং এভাবে ইবাদাতকে লালন করো ও ঘুমকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করো।
আল্লাহ সুবহানাহু ও’য়া তাআলা বলেছেন –
“……তাদের পার্স্বদেশ (রাতের বেলায়) বিছানা থেকে আলাদা থাকে, তারা (নিশুতি রাতে আযাবের) ভয়ে এবং (জান্নাতের) আশায় তাদের মালিককে ডাকে।”—(সূরা আস-সাজদাহ ; ১৬)
সে বিছানার সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করা শুরু করে কারন তার ও বিছানার মধ্যে এক ধরণের ঘৃণার মনোভাব গড়ে ওঠে। সে ইমামের পেছনে নামাজ পড়ে এবং বলে “সে যদি নামাজটা আরো দীর্ঘ করতে পারতো!”- এজন্য যে ইবাদাতের সে মিষ্টতা আরো অনুভব করতে পারে।
একবার আমি জামাতের নামজ কিছুটা দীর্ঘ করেছিলাম। তখন একজন যুবক আমার কাছে আসল এবং এই হাদিসটি বলল, “যারা নামাজে ইমামতি করে তাদের উচিত মুসল্লিদের প্রতি সহজ হওয়া।” হায়রে যুবক!! সেখানে একজন বৃদ্ধ মানুষ ছিলেন যার বয়স ৯০ থেকে ১০০ এর মধ্যে হবে, তার চেহারা ছিল উজ্জ্বল এবং তিনি আমাকে বললেন, “আপনি দীর্ঘ করে নামাজ পড়াতে থাকেন এবং তাদের কথায় কোনো উত্তর দিবেন না”। একজন ৯০ বছরের বৃদ্ধ যে কিনা দীর্ঘ নামাজে আনন্দ পান আর বিশ বছরের যুবক যে কিনা কারাতে এবং কুস্তিতে অনুশীলন করে সে একই নামাজে বিরক্তি প্রকাশ করে।
কেনো?
যদি সে কোনো ফুটবল মাঠে দুই ঘন্টা সময় কাটাতে পারে কোনো বিরক্তি ছাড়া তাহলে পাঁচ মিনিট কোরআন পড়া শুনতে সে বিরক্তি প্রকাশ করে কেনো? ছোটো বা দীর্ঘ নামাজের মধ্যে পার্থক্য থাকে মাত্র পাঁচ মিনিট, তাহলে সে কেনো পাঁচ মিনিট কোরআন পড়ায় বিরক্ত হয়ে যায় , অথচ সে ফুটবলের মাঠে দুই ঘন্টায়ও বিরক্ত হয় না ? কেনো সে বিরক্ত হচ্ছে না দুই ঘন্টা দাঁড়িয়ে ক্যাটক্যাটে একটা চামড়ার বল এর দিকে দৃষ্টিপাত করতে করতে, তার হ্রদয় কি এটার প্রতি সংযুক্ত হয়ে গিয়েছে?
কারন নামাজে যেটি দাঁড় করিয়ে রাখতে পারে সেটি হচ্ছে অন্তর এবং খেলাধুলায় যেটি দাঁড় করিয়ে রাখতে পারে স্বাভাবিকভাবে সেটি হচ্ছে শরীর ও পেশী।
[আর্টিকেলটি সংগ্রহ করা হয়েছে ১৫ জুন ১৯৮৮ সালে আব্দুল্লাহ আযযাম (রাহিঃ) এর দেয়া একটি লেকচার থেকে, যার শিরোনাম ছিল “the true preparation”. এটি পাওয়া যায় “at-tarbiyyah al-jihadiyyah wal-nina” তে; 1/220]
হৃদয় হচ্ছে এমন একটি যন্ত্র যা ইবাদাতের চালিকাশক্তিরূপে কাজ করে। এটি পুরো শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করে। যতক্ষণ পর্যন্ত অন্তর সজীব থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত দেহের অঙ্গপ্রত্তঙ্গ ও আত্মা আল্লাহর ইবাদাতে সর্বদা উতফুল্ল থাকে। তবে অন্তর যদি ব্যধিগ্রস্থ হয় তাহলে সেই আত্মায় ইবাদাত অনেক কঠিন অনুভূত হয় এবং যে কারণে শেষ পর্যায়ে নাফরমান বান্দায় পরিণত হয় । তাই এরকম অবস্থা থেকে আমরা আল্লাহর আশ্রয় চাই। এজন্যই আল্লাহ সুবহানাহু ও’য়া তাআলা বলেছেন-
“……নামাজ প্রতিষ্ঠা করা (অবশ্যই একটি) কঠিন কাজ, কিন্তু যারা (আল্লাহকে) ভয় করে তাদের কথা আলাদা।” (সূরা আল-বাক্বারাহ: ৪৫)
ইবাদাতে উদাসীনতা আসে এই কারণে নয় যে কারো হাত বা পা এই পথে অগ্রসর হয় না বরং যে জিনিসটা আল্লাহর ইবাদাতের প্রতি মনোযোগ স্থাপন করে সেটি হচ্ছে অন্তর বা আত্মা।
“অবশ্যই মুনাফিকরা প্রতারণা করেছে আল্লাহর সাথে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুঃত তারা যখন নামাযে দাঁড়ায়, একান্ত শিথিলভাবে লোক দেখানোর জন্য। আর তারা আল্লাহর অল্পই স্মরণ করে।”(সূরা আন-নিসা: ১৪২)
একারনে অন্তরই হচ্ছে তা যা ইবাদাতের প্রতি একাগ্রতা সৃষ্টি করে। দেহের অঙ্গগুলো সাধারণত হৃদয় থেকে যে সংকেত প্রেরণ করে সে অনুসারে কাজ করে। যদি অন্তর জীবিত থাকে তবে আত্মাও জীবিত থাকে। আর তখন আল্লাহর ইবাদাত অন্তরের ভালোবাসা ও একাগ্রতায় পরিণত হয়। ফলে অন্তর আল্লাহর ইবাদাতের প্রতি ঝোকে পড়ে।
তবে অন্তর যদি ব্যধিগ্রস্থ হয়ে পড়ে তাহলে ইবাদাত তাঁর নিকট অনেক ভারী হয়ে যায়। অন্তর বা হৃদয় হচ্ছে অনেকটা পরিপাকতন্ত্রের মতো; যদি বর্তমানে তোমার সবচেয়ে পছন্দনীয় খাবার হয় মাংস আর তোমার পরিপাকতন্ত্রের কোনো এক জায়গায় যদি আলসার হয়ে যায় এবং এটি মাংসের চর্বি ও তেলের কারনে আরো বেড়ে যায় তাহলে সেই খাবারটি তোমার সবচেয়ে ঘৃণিত খাবারে রূপ নেবে, কেননা এই খাবার তোমার রোগ বৃদ্ধির কারন। মিষ্টান্নও হচ্ছে আরেক পছন্দনীয় খাবার। উদাহরণসরূপ বলা যায়, যদি তুমি এখন রোযাদার থাকো আর মিষ্টি খাবারের মাধ্যমে রোযা ভাঙ্গো তাহলে তোমার আত্মা এতে ভীষণ সন্তুষ্ট হবে, ঠিক কি না? তবে যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা এরূপ মিষ্টান্ন খাবার খেতে সক্ষম হবেন না, যদিও এগুলো তার কাছে পছন্দনীয়।
অন্তর হচ্ছে ঠিক এরকম, ইবাদাতে অধিক মনোযোগী হতে হলে এটাকে অবশ্যই সতেজ ও শক্তিশালী হতে হবে। অন্তরে যত বেশি সজীবতা থাকবে আল্লাহর ইবাদাতে তুমি তত বেশী মনোযোগী হতে পারবে। তুমি রাতে ইবাদাতের জন্য ঘুম থেকে জেগে উঠো এবং এভাবে ইবাদাতকে লালন করো ও ঘুমকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করো।
আল্লাহ সুবহানাহু ও’য়া তাআলা বলেছেন –
“……তাদের পার্স্বদেশ (রাতের বেলায়) বিছানা থেকে আলাদা থাকে, তারা (নিশুতি রাতে আযাবের) ভয়ে এবং (জান্নাতের) আশায় তাদের মালিককে ডাকে।”—(সূরা আস-সাজদাহ ; ১৬)
সে বিছানার সাথে সম্পর্ক ত্যাগ করা শুরু করে কারন তার ও বিছানার মধ্যে এক ধরণের ঘৃণার মনোভাব গড়ে ওঠে। সে ইমামের পেছনে নামাজ পড়ে এবং বলে “সে যদি নামাজটা আরো দীর্ঘ করতে পারতো!”- এজন্য যে ইবাদাতের সে মিষ্টতা আরো অনুভব করতে পারে।
একবার আমি জামাতের নামজ কিছুটা দীর্ঘ করেছিলাম। তখন একজন যুবক আমার কাছে আসল এবং এই হাদিসটি বলল, “যারা নামাজে ইমামতি করে তাদের উচিত মুসল্লিদের প্রতি সহজ হওয়া।” হায়রে যুবক!! সেখানে একজন বৃদ্ধ মানুষ ছিলেন যার বয়স ৯০ থেকে ১০০ এর মধ্যে হবে, তার চেহারা ছিল উজ্জ্বল এবং তিনি আমাকে বললেন, “আপনি দীর্ঘ করে নামাজ পড়াতে থাকেন এবং তাদের কথায় কোনো উত্তর দিবেন না”। একজন ৯০ বছরের বৃদ্ধ যে কিনা দীর্ঘ নামাজে আনন্দ পান আর বিশ বছরের যুবক যে কিনা কারাতে এবং কুস্তিতে অনুশীলন করে সে একই নামাজে বিরক্তি প্রকাশ করে।
কেনো?
যদি সে কোনো ফুটবল মাঠে দুই ঘন্টা সময় কাটাতে পারে কোনো বিরক্তি ছাড়া তাহলে পাঁচ মিনিট কোরআন পড়া শুনতে সে বিরক্তি প্রকাশ করে কেনো? ছোটো বা দীর্ঘ নামাজের মধ্যে পার্থক্য থাকে মাত্র পাঁচ মিনিট, তাহলে সে কেনো পাঁচ মিনিট কোরআন পড়ায় বিরক্ত হয়ে যায় , অথচ সে ফুটবলের মাঠে দুই ঘন্টায়ও বিরক্ত হয় না ? কেনো সে বিরক্ত হচ্ছে না দুই ঘন্টা দাঁড়িয়ে ক্যাটক্যাটে একটা চামড়ার বল এর দিকে দৃষ্টিপাত করতে করতে, তার হ্রদয় কি এটার প্রতি সংযুক্ত হয়ে গিয়েছে?
কারন নামাজে যেটি দাঁড় করিয়ে রাখতে পারে সেটি হচ্ছে অন্তর এবং খেলাধুলায় যেটি দাঁড় করিয়ে রাখতে পারে স্বাভাবিকভাবে সেটি হচ্ছে শরীর ও পেশী।
[আর্টিকেলটি সংগ্রহ করা হয়েছে ১৫ জুন ১৯৮৮ সালে আব্দুল্লাহ আযযাম (রাহিঃ) এর দেয়া একটি লেকচার থেকে, যার শিরোনাম ছিল “the true preparation”. এটি পাওয়া যায় “at-tarbiyyah al-jihadiyyah wal-nina” তে; 1/220]
Comment