শুকনো ফুলের ব্যথা!
মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ
ঝরে যাওয়া ফুলের প্রতি এ কেমন অবজ্ঞা! কেমন অকৃতজ্ঞতা!! যখন বাগানের ফুল ছিলাম, পাপড়ি-মেলা তাজা ফুল, তখন তো ভালোবাসতে! অন্তত ভালোবাসার কথা বলতে!! একটু সুবাস-সান্নিধ্যের জন্য ছুটে আসতে!!!
সুবাস দিতে কার্পণ্য করেছি?!
যখন ডাল থেকে ছিঁড়ে ফুলদানিতে সাজাতে চাইলে, ব্যথা পেলাম, তবু অস্বীকার করিনি। তোমার ঘরে বসে তোমাকে সুবাস দিয়েছি। যখন শুকিয়ে গেলাম, ফুলদানি থেকেও ছুঁড়ে ফেললে! হায়রে নিষ্ঠুর!! হায়রে অকৃতজ্ঞ!!
আমি শুকনো ফুল, মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছি, ভাবছো আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে! নাহ, এখনো পারি তোমাকে সুবাস দিতে, যদি একটু কৃতজ্ঞ থাকো। কৃতজ্ঞতা এখনো ফুল ফোটায়, গোলাব, বেলি, শিউলি, সব রকম ফুল।
বিশ্বাস হলো না! তাহলে যা বলেছি সব ভুল। দয়া করে ভুলে যাও শুকনো ফুলের ভুল। ১[1]
আবু তাহের মেছবাহ
[1] ১. রুচিশীল সাহিত্য-সাধকের চিন্তা হয়ে থাকে খুবই উন্নত, গভীর ও সুদূর প্রসারী। তিনি উপলব্ধি করেন নির্বাক জড়বস্তুর অভিব্যক্তি এবং তাতে আপ্লুত হন। কখনো অন্যকেও আপ্লুত করেন। ঠিক যেমনটি কবি বলেছেন-
خدا اگر دل فطرت شناس دے تجهكو + سكوت لالہ وگل سے كلام پيدا كر
অর্থ : খোদা যদি তোমায় দান করেন প্রকৃতি-বৎসল হৃদয়
তবেই বুঝবে লালা ও গোলাবের ভাষাহীন বাণী।
মাদরাসাতুল মদীনাহ হযরতপুর প্রাঙ্গণে আছে ছোট্ট একটি শিউলি ফুলগাছ। অবিরাম অসংখ্য ফুল দ্বারা যা গোটা পরিবেশকে সুবাসিত করে রেখেছে। ফুল তো সবাই দেখে এবং তার সৌন্দর্য উপভোগ করে, কিন্তু তা থেকে নিত্যনতুন উপলব্ধি গ্রহণ তাওফীকপ্রাপ্ত মানুষের কাজ। উপরের সংক্ষিপ্ত লেখায় এ ধরনেরই এক ভিন্নধর্মী উপলব্ধির সাথে আমাদের পরিচিত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁকে উত্তম বিনিময় দান করুন। সুস্থতা ও নিরাপত্তার সাথে নেক ও দীর্ঘ হায়াত দান করুন। আমীন।
এ লেখা থেকে গ্রহণ করার মতো অনেক কিছুই আছে। তবে প্রথমেই আমার মনে যে দুটি বিষয় এসেছে তা এখানে তুলে ধরছি।
এক. সবকিছুর মধ্যেই সবর ও কোমলতা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। কিন্তু অনেক সময় আমাদের অভ্যাস হল, দীর্ঘদিন ব্যবহারের পর কোনো বস্তু ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেলে তা নির্দয়ভাবে ছুঁড়ে ফেলি। কোনো কিছু পুরনো হয়ে গেলে বা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেলে সাধারণত তার ব্যবহারের সমাপ্তি ঘটাতেই হয়। কিন্তু তা হওয়া চাই কোমলভাবে, কৃতজ্ঞতা ও কৃতার্থতার সাথে। যখন কোনো সাথীকে পুরোনো কলমটা নির্দয়ভাবে ছুঁড়ে মারতে দেখি তখন খুব কষ্ট হয়। এটা হয়তো হাদীসে শেখানো স্থিরতা ও গাম্ভীর্যের পরিপন্থী। হাদীসে দস্তরখানা উঠানোর সময় নিম্নোক্ত দুআর তালকীন করা হয়েছে-
اَلْحَمْدُ لِلهِ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ، غَيْرَ مَكْفِيٍّ وَلَا مُوَدَّعٍ وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا .
এই দুআর মধ্যে غَيْرَ مَكْفِيٍّ وَلَا مُوَدَّعٍ وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا অংশের প্রতিটি বাক্য থেকে উপরোক্ত শিক্ষাই পাওয়া যাচ্ছে।
দুই. যার জীবন ফুলসম তাঁর কাছ থেকে গ্রহণ অব্যহত রাখা উচিত।
ফুলের মতো যার জীবন তার উপরও বিভিন্ন পরিস্থিতি আসতে পারে। এমনকি তার মৃত্যুও হতে পারে। তখন এমন হওয়া উচিত নয় যে, সসম্মানে সমাহিত করেই তার সাথে সব সম্পর্ক শেষ। বরং তাঁর ফুল থেকে আমরা যে সুবাসিত হচ্ছি তার শুকরিয়াস্বরূপ তাঁর জন্য ইস্তিগফার ও ঈসালে সওয়াবের ধারা চালু রাখা। আর ফুলের যে সুবাস তিনি সদকায়ে জারিয়ারূপে রেখে গেছেন তা থেকেও ইস্তেফাদা অব্যাহত রাখা উচিত।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর প্রতিটি নিআমত কাজে লাগানোর এবং নিআমতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের তাওফীক দান করুন। ফুলের যথাযোগ্য মর্যাদা দান এবং ফুলের মতো জীবন অবলম্বনের তাওফীক দান করুন। আমীন। আরো একবার আরজ করছি-
جزاك الله خيراً يا أبا محمد
(মুহাম্মাদ আবদুল মালেক)
মাওলানা আবু তাহের মেসবাহ
ঝরে যাওয়া ফুলের প্রতি এ কেমন অবজ্ঞা! কেমন অকৃতজ্ঞতা!! যখন বাগানের ফুল ছিলাম, পাপড়ি-মেলা তাজা ফুল, তখন তো ভালোবাসতে! অন্তত ভালোবাসার কথা বলতে!! একটু সুবাস-সান্নিধ্যের জন্য ছুটে আসতে!!!
সুবাস দিতে কার্পণ্য করেছি?!
যখন ডাল থেকে ছিঁড়ে ফুলদানিতে সাজাতে চাইলে, ব্যথা পেলাম, তবু অস্বীকার করিনি। তোমার ঘরে বসে তোমাকে সুবাস দিয়েছি। যখন শুকিয়ে গেলাম, ফুলদানি থেকেও ছুঁড়ে ফেললে! হায়রে নিষ্ঠুর!! হায়রে অকৃতজ্ঞ!!
আমি শুকনো ফুল, মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছি, ভাবছো আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে! নাহ, এখনো পারি তোমাকে সুবাস দিতে, যদি একটু কৃতজ্ঞ থাকো। কৃতজ্ঞতা এখনো ফুল ফোটায়, গোলাব, বেলি, শিউলি, সব রকম ফুল।
বিশ্বাস হলো না! তাহলে যা বলেছি সব ভুল। দয়া করে ভুলে যাও শুকনো ফুলের ভুল। ১[1]
আবু তাহের মেছবাহ
[1] ১. রুচিশীল সাহিত্য-সাধকের চিন্তা হয়ে থাকে খুবই উন্নত, গভীর ও সুদূর প্রসারী। তিনি উপলব্ধি করেন নির্বাক জড়বস্তুর অভিব্যক্তি এবং তাতে আপ্লুত হন। কখনো অন্যকেও আপ্লুত করেন। ঠিক যেমনটি কবি বলেছেন-
خدا اگر دل فطرت شناس دے تجهكو + سكوت لالہ وگل سے كلام پيدا كر
অর্থ : খোদা যদি তোমায় দান করেন প্রকৃতি-বৎসল হৃদয়
তবেই বুঝবে লালা ও গোলাবের ভাষাহীন বাণী।
মাদরাসাতুল মদীনাহ হযরতপুর প্রাঙ্গণে আছে ছোট্ট একটি শিউলি ফুলগাছ। অবিরাম অসংখ্য ফুল দ্বারা যা গোটা পরিবেশকে সুবাসিত করে রেখেছে। ফুল তো সবাই দেখে এবং তার সৌন্দর্য উপভোগ করে, কিন্তু তা থেকে নিত্যনতুন উপলব্ধি গ্রহণ তাওফীকপ্রাপ্ত মানুষের কাজ। উপরের সংক্ষিপ্ত লেখায় এ ধরনেরই এক ভিন্নধর্মী উপলব্ধির সাথে আমাদের পরিচিত করা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তাঁকে উত্তম বিনিময় দান করুন। সুস্থতা ও নিরাপত্তার সাথে নেক ও দীর্ঘ হায়াত দান করুন। আমীন।
এ লেখা থেকে গ্রহণ করার মতো অনেক কিছুই আছে। তবে প্রথমেই আমার মনে যে দুটি বিষয় এসেছে তা এখানে তুলে ধরছি।
এক. সবকিছুর মধ্যেই সবর ও কোমলতা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। কিন্তু অনেক সময় আমাদের অভ্যাস হল, দীর্ঘদিন ব্যবহারের পর কোনো বস্তু ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেলে তা নির্দয়ভাবে ছুঁড়ে ফেলি। কোনো কিছু পুরনো হয়ে গেলে বা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে গেলে সাধারণত তার ব্যবহারের সমাপ্তি ঘটাতেই হয়। কিন্তু তা হওয়া চাই কোমলভাবে, কৃতজ্ঞতা ও কৃতার্থতার সাথে। যখন কোনো সাথীকে পুরোনো কলমটা নির্দয়ভাবে ছুঁড়ে মারতে দেখি তখন খুব কষ্ট হয়। এটা হয়তো হাদীসে শেখানো স্থিরতা ও গাম্ভীর্যের পরিপন্থী। হাদীসে দস্তরখানা উঠানোর সময় নিম্নোক্ত দুআর তালকীন করা হয়েছে-
اَلْحَمْدُ لِلهِ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيْهِ، غَيْرَ مَكْفِيٍّ وَلَا مُوَدَّعٍ وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا .
এই দুআর মধ্যে غَيْرَ مَكْفِيٍّ وَلَا مُوَدَّعٍ وَلَا مُسْتَغْنًى عَنْهُ رَبَّنَا অংশের প্রতিটি বাক্য থেকে উপরোক্ত শিক্ষাই পাওয়া যাচ্ছে।
দুই. যার জীবন ফুলসম তাঁর কাছ থেকে গ্রহণ অব্যহত রাখা উচিত।
ফুলের মতো যার জীবন তার উপরও বিভিন্ন পরিস্থিতি আসতে পারে। এমনকি তার মৃত্যুও হতে পারে। তখন এমন হওয়া উচিত নয় যে, সসম্মানে সমাহিত করেই তার সাথে সব সম্পর্ক শেষ। বরং তাঁর ফুল থেকে আমরা যে সুবাসিত হচ্ছি তার শুকরিয়াস্বরূপ তাঁর জন্য ইস্তিগফার ও ঈসালে সওয়াবের ধারা চালু রাখা। আর ফুলের যে সুবাস তিনি সদকায়ে জারিয়ারূপে রেখে গেছেন তা থেকেও ইস্তেফাদা অব্যাহত রাখা উচিত।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর প্রতিটি নিআমত কাজে লাগানোর এবং নিআমতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের তাওফীক দান করুন। ফুলের যথাযোগ্য মর্যাদা দান এবং ফুলের মতো জীবন অবলম্বনের তাওফীক দান করুন। আমীন। আরো একবার আরজ করছি-
جزاك الله خيراً يا أبا محمد
(মুহাম্মাদ আবদুল মালেক)
Comment