التعلق بالله تعلى وحده
শুধু আল্লাহর সাথে সম্পর্ক জোড়া
শুধু আল্লাহর সাথে সম্পর্ক জোড়া
আল্লাহ তাআলা বলেন-
الذين قال لهم الناس إن الناس قد جمعوا لكم فاخشوهم فزادهم إيمانا وقالوا حسبنا الله و نعم الوكيل .
“ যাদেরকে লোকে বলেছিল, লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে জমায়েত হয়েছে; তাই তোমরা তাদেরকে ভয় কর । তখন এটা (এ সংবাদ) তাদের ঈমানের মাত্র আরও বাড়িয়ে দেয় এবং তারা বলে ওঠে, আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ঠ এবং তিনি উত্তম কর্মবিধায়ক ।” [ সূরা আলে ইমরান : ১৭৩]
আল্লামা সা’দী বলেন, অর্থাৎ “লোকেরা তোমাদের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে এবং তোমাদেরকে ধ্বংস করতে সংকল্পবদ্ধ হয়েছে ।” তারা এটা বলেছিল, মুমিনদের মাঝে আতঙ্ক ও ভীতি ছড়ানোর জন্য ; কিন্তু এটা আল্লাহর ওপর তাদের ঈমান ও ভরসাই বৃদ্ধি করেছে । তারা বলে ওঠেছে- আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ঠ । অর্থাৎ আমাদের সকল বিপদের জন্য তিনিই যথেষ্ঠ । তিনিই উত্তম অভিভাবক । বান্দার সকল বিষয়ের ব্যবস্থাপনা তাঁরই দায়িত্বে এবং তিনিই বান্দার সকল সুবিধা-অসুবিধা দেখেন ।
সর্বদা স্মরণ রাখো :
যার আল্লাহর সাথে সম্পর্ক নেই , তথা যে স্বীয় রব থেকে বিচ্ছিন্ন ; আল্লাহ তার অভিভাবক , সাহায্যকারী বা কর্মবিধায়ক হবেন না ।
আর যে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক রাখে , নিজ প্রয়োজন তাঁর থেকে চেয়ে নেয় , তাঁর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে , নিজের বিষয়াদি নিজ রবের দিকে ন্যস্ত করে ; আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন , দিকনির্দেশনা দেন , যে কোনো কঠিন বিষয়কে সহজ করে দেন ।
যে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করে , আল্লাহ তাকে হেফাজত করেন । আর যে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে আল্লাহ তাকে ব্যর্থ করেন ।
যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও সাথে সম্পর্ক করে , আল্লাহ তাকে তার অধীন করে দেন ; কিন্তু যে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করে , সে মযাঁদাবান হয়।
যখন কেউ আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করে, আল্লাহ সকল মানুষের অনিষ্টের বিরুদ্ধে তার পক্ষ থেকে যথেষ্ঠ হয়ে যান । কারণ, সকল সৃষ্টির ভালো-মন্দ তাঁর হাতে । সকলের অন্তর তাঁর নিয়ন্ত্রনে । আর তার ব্যাপারে আল্লাহ যা লেখে রেখেছেন তা-ই ঘটবে । কারণ , কলম ওঠিয়ে নেওয়া হয়েছে, খাতা শুকিয়ে গেছে ।
মুমিনের অবস্থা :
মুমিন যখন আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করে , তখন সকাল-সন্ধ্যা তার অন্তর আল্লাহর সাথে জুড়ে থাকে । সে আল্লাহর জন্যই দাঁড়ায়, আল্লাহর জন্যই বসে , আল্লাহর জন্যই কথা বলে , আল্লাহর জন্যই মানুষের সাথে সম্পর্ক করে ও সম্পর্ক ছিন্ন করে । তার নড়াচড়া, স্থিরতা, শ্বাস নিশ্বাস ও প্রতিটি কথায় আল্লাহর কথায় চিন্তা করে । সে প্রত্যেক এমন জিনিসের পিছু ছুটে ; যাতে আল্লাহর ভালোবাসা রয়েছে । সবশেষে যখন সে এ মহান ও উন্নত স্থরে পৌঁছে এবং আল্লাহর ভালোবাসা ও সন্তুষ্টি লাভ করে , তখন সে দ্বিতীয় যে ফলটি লাভ করে- তা হলো আল্লাহর ভালোবাসার প্রতিফল ।
জনৈক আলেম বলেন , মুমিন বান্দা যখন আল্লাহকে ভালোবাসে , তখন সে তার প্রতিটি কথা ও কাজের মধ্যেই আল্লাহকে সম্পৃক্ত করে ।
যে নিজ প্রয়োজনাদি পূরণে , আল্লাহর নিকট যে বিনিময় রয়েছে তা লাভের জন্য এবং আশঙ্কাজনক ও কষ্টদায়ক জিনিস থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করে , আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য যথেষ্ট হয়ে যান । যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন-
ومن يتوكل على الله فهو حسبه .
“ আর যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে , আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট ।” [সূরা তালাক : ০৩]
কিছু মানুষের অন্তর আল্লাহর সঙ্গে যুক্ত নয় ; অমুক কর্মকর্তা , অমুক বন্ধু বা কিছু পুরাতন কাগজপত্রের সাথে বা বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের সাথে বা শেয়ারের ফলাফলের প্রতীক্ষা- এ জাতীয় বিষয়ের সাথে জড়িত । কিন্তু তাদের মন আল্লাহর থেকে কোনো কিছু পাওয়ার প্রতীক্ষায় থাকে না । আর কিছু মানুষ উপকরণকে অনর্থক মনে করে ; ফলে কোনো উপকারণই অবলম্বন করে না । বস্তুত সবচেয়ে বড় উপকরণ হলো- আল্লাহর সাথে সম্পর্ক।
আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের কিছু নমুনা :
ইয়ারমুকের যুদ্ধের বছর যখন আবু উবাইদা রাযি. কাফেরদের সঙ্গে লড়ার জন্য অতিরিক্ত সাহায্য চেয়ে উমর রাযি. বরাবর পত্র পাঠালেন এবং তাঁকে অবগত করলেন যে , তাঁদের বিরুদ্ধে এত সংখ্যক শত্রু জমা হয়েছে , যাদের বিরুদ্ধে লড়ার মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই । যখন তাঁর এ পত্র পৌঁছল , সব মানুষ কাঁদতে লাগল । সবচেয়ে বেশি কাঁদছিলেন আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাযি . । তিনি স্বয়ং উমর রাযি. কে লোকদের নিয়ে যুদ্ধে বের হওয়ার পরামর্শ দিলেন । উমর রাযি. মনে করলেন , এটা সম্ভব নয় । তাই তিনি আবু উবাইদা রাযি. কে লিখলেন , মুসলিমের ওপর যত বিপদই আসুক না কেন , সে যদি আল্লাহর নিকট থেকে তা সমাধান করাতে চায় ; তাহলে আল্লাহ তার জন্য পথ খুলে দেন এবং সমাধান করে দেন । তাই আমার পত্র যখন তোমার নিকট পৌঁছবে , তখন তুমি আল্লাহর কাছে সাহায্য চেয়ে যুদ্ধ শুরু করে দেবে ।
অনেক মানুষের হিসাবের পাল্লায় উমর রাযি. এর এ অবস্থানটিকে আত্মঘাতী ও নিশ্চিত পরাজয়ের দিকে ঠেলে দেওয়া মনে হবে । কিন্তু উমর রাযি. বিশ্বাস করতেন যে , বিজয় একমাত্র আল্লাহর পক্ষ থেকেই আসে । আর যেহেতু তাঁর অন্তর আল্লাহর সঙ্গে যুক্ত ছিল , এজন্য তিনি সর্বদা আল্লাহর নিকট সাহায্য চেয়েছেন , একমত্র তাঁর সাথেই সম্পর্ক করেছেন , সাথে সাথে সামর্থ্য মতো উপকরণও অবলম্বন করতেন । আর পত্র আসার সেই কঠিন মুহূর্তটিতেও তিনি সেই বাস্তবতাকে ভুলেননি , যার দীক্ষা তিনি লাভ করেছিলেন । তিনি স্মরণ করলেন , আল্লাহই সকল বিষয়ের ঊর্ধ্বে , তিনিই সকল বিষয়ের ওপর ক্ষমতাবান । তাই তিনি পরিপূর্ণ আস্থা ও গভীর ঈমানের সাথে এ কথা বলেছিলেন ।
উন্নত মনোবল :
এটাই সেই বস্তু , যা বান্দাকে এমন উন্নত মানুষে পরিনত করে ; যার ফলে তার পা থাকে মাটিতে আর আত্মা ও অন্তর যুক্ত থাকে আল্লাহর সঙ্গে । এটাই বান্দাকে এমন উন্নত মানুষে পরিণত করে । যার ফলে , প্রতিটি জিনিসের মধ্যেই তার অন্তর আল্লাহর সঙ্গে যুক্ত থাকে । সে আল্লাহ ব্যতীত কাউকে ভয় করে না , আল্লাহ ব্যতীত কারও নিকট আশা করে না , আল্লাহ ব্যতীত কারও কাছে নত হয় না , আল্লাহ ব্যতীত কারও নিকট কিছু চায় না , আল্লাহ ব্যতীত কারও সাহায্য প্রার্থনা করে না । তার সকল বিষয় আল্লাহর সঙ্গে যুক্ত থাকে । কোনো মানষ ও দুনিয়ার কোন শক্তির প্রতি সে ভ্রুক্ষেপ করে না । দুনিয়ার বস্তুরাজি তার সংকল্প , দৃঢ়তা , ঈমান ও ইয়াকীনকে একটুও টলাতে পারে না । হাদীসের মধ্যে রয়েছে-
واعلم أن الأمة لو اجتمعوا على أن ينفعك بشيء لم إلا بشيء قد كتبه الله لك ، وان اجتمعوا على أن يضروك بشيء لم يضروك إلا بشيء قد كتبه الله عليك ، رفعت الأقلام وجفت الصحف .
“ জেনে রেখ , যদি সকল মানুষও একত্রিত হয়ে তোমারা উপকার করতে চায় ; তথাপি আল্লাহ তোমার জন্য যা লিখে রেখেছেন তার চেয়ে বেশি কোনো উপকার করতে পারবে না । অনুরূপ যদি সকল মানুষ তোমার কোনো ক্ষতি করতে একত্রিত হয় ; তাহলেও আল্লাহ যা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন , তার থেকে অধিক কোনো ক্ষতি করতে পারবে না । কলম ওঠিয়ে নেওয়া হয়েছে , খাতা শুকিয়ে গেছে ।” [সুনানে তিরমিযী ২৫১৬]
আল্লাহর শপথ ! আল্লাহর কোনো বান্দা এমন নেই যে , সে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করেছে ; কিন্তু অবশেষে সে এ সম্পর্কে ব্যর্থ হয়েছে । আর যাকেই আল্লাহ বিপদে তাঁর নিকট দুআ করার তাওফীক দান করেন , তার দুআ অবশ্যই কবুল হবে এবং তাকে অবশ্যই সাহায্য করা হবে ।
বদর যুদ্ধ ও আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক :
উপকরণের অবস্থান যত ঊর্ধ্বেই পৌঁছে যাক না কেন , তা উপকরণ হওয়ার মাঝেই সীমাবদ্ধ । সুতরাং এর সঙ্গে অন্তর যুক্ত করা উচিত নয় । বরং সেই আল্লাহর সঙ্গে অন্তর যুক্ত করা উচিত ; আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী যাঁর মালিকানাধীন । আল্লাহ তাআলা বদর যুদ্ধে মুসলিমদেরকে ফেরেশতাদের মাধ্যমে সাহায্য করার কথা আলোচনা করতে গিয়ে এ বাস্তবতার প্রতিও গুরুত্ব দিয়ে বলেন-
إذ تستغيثون ربكم فاستجاب لكم أني ممدكم بألف من الملائكة مردفين وما جعله الله إلا بشرى ولتطمئن به قلوبكم وما النصر إلا من عند الله إن الله عزيز حكيم .
“ স্মরণ করো, যখন তোমরা নিজ প্রতিপালকের কাছে ফরিয়াদ করেছিলে , তখন তিনি তোমাদের ফরিয়াদে সাড়া দিলেন । (বললেন) আমি তোমাদের সাহায্যার্থে এক হাজার ফেরেশতার একটি বাহিনী পাঠাচ্ছি ; যাঁরা একের পর এক আসবে । এ প্রতিশ্রুতি আল্লাহ কেবল এজন্যই দিয়েছেন ; যাতে এটা তোমাদের জন্য সুসংবাদ হয় এবং যাতে এর দ্বারা তোমাদের অন্তর প্রশান্তি লাভ করে । নিশ্চয়ই আল্লাই মহাক্ষমতাবান , প্রজ্ঞাময় ।” [সূরা আনফাল ৯-১০]
সুতরাং ফেরেশতাগণ হলেন মাধ্যম মাত্র । অন্তর তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত নয় ; বরং অন্তর যুক্ত হবে প্রকৃত সাহায্যকারী আল্লাহ তাআলার সঙ্গে।
বাস্তব প্রশিক্ষণ :
কেনই বা তুমি তোমার সন্তানকে অঙ্কুরেই আল্লাহ তাআলা’র সাথে সম্পর্কের ওপর গড়ে তুলছ না ?
সে যখন কোনো উপকারী জিনিস চাইবে ; তিন্তু তুমি তা দিতে পারবে না, তখন তুমি তাকে বলবে বাবা চলো, আমরা দুই রাকাত নামাজ পড়ে আল্লাহর নিকট চাই । কারণ , আল্লাহই রিযিকদাতা । তিনিই আমাদের সকল কিছুর ব্যবস্থাপক । আর তিনি যদি তোমাকে এটা এনে দেওয়ার মতো অর্থ আমাকে না দেন ; তাহলে বুঝতে হবে এটা এখন আমাদের জন্য উপকারী নয় । কারণ , আল্লাহই এটা আমাদের থেকে ফিরিয়ে রেখেছেন।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে তাঁর আদেশ নিষেধ মেনে চলে , আল্লাহর সাথে সুসম্পর্ক করার তাওফিক দান করুন ।
আমিন ।
Comment