দ্বীনে আসার পর স্বাভাবিকভাবেই এক জোশ কাজ করে। স্বয়ং আল্লাহর একমাত্র মনোনীত দ্বীনে পরিপূর্ণরূপে প্রবেশেই যে অনন্তের মুক্তি রয়েছে তা উপলব্ধির পর জোশ কাজ করাই স্বাভাবিক। যে ছেলেটি কিছুদিন আগেও সমাজের নিয়ামকে চলতো, একই সমাজে দাড়ি-জুব্বার আবরণে সেই আবদুল্লাহ অচেনা হতে শুরু করে। যে মেয়েটির সাজসজ্জায় আগে মানুষ মুগ্ধ হতো, সেই আমাতুল্লাহ ঢেকে যায় রব্বের ফারজিয়্যাত পর্দায়। এভাবে শুরু হয় নবজীবনের পথচলা। একইসাথে আল্লাহর দ্বীনের যে সৌন্দর্য্য ও শান্তি সে উপলব্ধি করতে থাকে, তা আশেপাশের মানুষগুলোর কাছে পৌঁছে দেওয়ার এক চরম ইচ্ছা মনকে ছাপিয়ে রাখে।
এভাবেই নিজেদের সাধ্যানুযায়ী সবাই কমবেশি আল্লাহর দ্বীনের দাঈ’ হয়ে যায়। হয়তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের গন্ডিতে লিখে, কিছু বলে বা ভিডিও বানিয়ে আল্লাহর দ্বীনের খাদিম হতে চায় বান্দা। কিন্তু সেসময় নিয়্যাতগুলো আন্তরিক হলেও সঠিক সোহবতের অভাবে, উপকারি ইলম বা পরিচর্যার অভাবে দাওয়াতের পথে অজস্র ভুলকে, ভুল ধারণাকে আলিঙ্গন করে সাথে নিয়ে যাওয়া হয়।
শিখতে থাকা বান্দার ইখলাস চলার পথে হয়তো কিছু ভুলকে শুধরে দেয়, আর কিছু হয়তো থেকেই যায়। আদবে, আমলে বা ইলমে।
.
এইদিকে সময়ের সাথে সাথে লিখনি, বক্তব্য, ইডিটিং বা অন্যকোনো গুণে হয়তো কিছু গুণগ্রাহী জমে যায় বান্দার। আর শয়তানের তিল তিল চেষ্টা তো রয়েছেই। যে হৃদয়ে ইখলাস নিয়ে শুরু হয়েছিল পথচলা, সময়ে সেই হৃদয়ে হয়তো একটু আধটু অহমিকা গড়ে উঠে। ফলে আদব, আমল বা ইলমের যে গর্তগুলো আজোবধি রয়ে গিয়েছিল, সেগুলো যে কখন সেই অহমিকা দিয়ে পূরণ হওয়া শুরু হয় তা হয়তো খেয়ালও থাকে না।
কখনোবা হয়তো সাহাবাদের সম্পর্কে কীভাবে কথা বলতে হবে, তাঁদের ইসলাম গ্রহণের পূর্বের শত্রুভাবাপন্ন ঘটনার সাথে কীভাবে আদব ইনসাফ রক্ষা করতে হবে তাতে থেকে যায় ঘাটতি। কখনো হয়তো স্বয়ং আল্লাহর বিধান বা দ্বীনের মৌলিক উসুল বিকৃতি, আল্লাহর রাসূল ﷺ সাহাবা আজমাঈনদের ঘটনা বা শিক্ষা বিকৃতি এক নিত্য অভ্যাসে পরিণত হয়। নিজের মত, পথ বা খাহেশাতের নিমিত্তে আল্লাহর দ্বীনকে বিকৃত করা বা দ্বীনের বিধান গোপন করা হয়ে যায় ঠুনকো ব্যাপার। কখনও ইখতিলাফি বিষয়ে রীতিমত ওয়াল বারা’ প্রয়োগ হয় তো কখনও ইখতিলাফি বিষয়ে ‘ছাড়ের উসুল’ অকাট্য এবং অবিসংবাদী বিষয়েও প্রয়োগ করতে দেখা যায়।
.
এভাবেই ধীরে ধীরে বিচ্যুতি একসময় এমন পাহাড় গড়ে, যা থেকে খাঁটি ইখলাস আর আল্লাহর ভয়কে অবলম্বন করা ছাড়া, লজ্জিত হওয়া ছাড়া নেমে আসার কোনোই উপায় থাকে না। সমস্ত সিদ্ধান্ত কেবল দুইটি বিষয়ে এসে পৌঁছে — বিশুদ্ধ ইখলাস নয়তো আত্নসম্মানের অহমিকা।
.
مَن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا وَزِينَتَہَا نُوَفِّ إِلَيۡہِمۡ أَعۡمَـٰلَهُمۡ فِيہَا وَهُمۡ فِيہَا لَا يُبۡخَسُونَ ( ١٥ ) أُوْلَـٰٓٮِٕكَ ٱلَّذِينَ لَيۡسَ لَهُمۡ فِى ٱلۡأَخِرَةِ إِلَّا ٱلنَّارُ*ۖ وَحَبِطَ مَا صَنَعُواْ فِيہَا وَبَـٰطِلٌ۬ مَّا ڪَانُواْ يَعۡمَلُونَ ( ١٦ )
“যে ব্যক্তি পার্থিবজীবন ও তার চাকচিক্যই কামনা করে, আমি তাদের দুনিয়াতেই তাদের আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দেব এবং তাতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হয় না।
এরাই হল সেসব লোক আখিরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া কিছু নেই। তারা এখানে যা কিছু করেছিল সবই বরবাদ করেছে; আর যা কিছু উপার্জন করেছিল, সবই বিনষ্ট হল।”
[সূরা হুদ, ১৫-১৬]
.
ইয়া আবদুল্লাহ, ইয়া আমাতুল্লাহ, চিন্তা করে দেখুন তো এই অবস্থার শুরুটা কোথায় হয়েছিল। ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহিমাহুল্লাহ) বলতেন,
“জবানের মধ্যে দুইটি বড় বিপদ রয়েছে। একটি হল কথা বলার বিপদ, আরেকটি হল চুপ থাকার বিপদ। আপন আপন সময়ে প্রত্যেকটিই অপরটি থেকে বড় বিপদ হতে পারে। যেমন, যে হক কথা বলা থেকে চুপ থাকে সে হল বোবা শয়তান, আল্লাহর অবাধ্য, রিয়াকারী ও শৈথিল্যকারী। আর যে ভ্রান্ত কথা বলে সে হল বাকশীল শয়তান, আল্লাহর অবাধ্য।
বেশিরভাগ মানুষই কথা বলা ও চুপ থাকার ক্ষেত্রে সঠিক অবস্থা থেকে বিচ্যুত। তারা উপরের দুইটির যেকোনো এক অবস্থায় লিপ্ত থাকে। আর মধ্যমপন্থিরাই হচ্ছে সরল, সঠিক পথের অনুসারী। যারা নিজেদেরকে বাতিল কথা থেকে হিফাজত করে আর যা পরকালে উপকারি হবে, তা বর্ণনা করে।”
.
আল্লাহর দ্বীন কিন্তু কারও উপর নির্ভরশীল নয়। ইখলাসপূর্ণ বান্দাদের নিদারুণ প্রচেষ্টার দ্বারা আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে ধীরে হলেও বিজয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যান। অপরদিকে সময়ের সাথে সাথে যারা বিচ্যুত হয়, আল্লাহর দ্বীনকে প্রকাশ্যে বিকৃত করে বা অবিসংবাদী বিষয়াদি গোপন করে, তাদের কিছু খিদমত হয়তো সাময়িকভাবে দ্বীনের কল্যাণ বয়ে আনে। কিন্তু সময়ে সেগুলো উবে যায়। আর আল্লাহ তো জাহান্নামিদের দিয়েও দ্বীনের খিদমত করিয়ে নেন। তাহলে কী আমাকে আর-রহমানের দিকে ইখলাসের সাথে ফিরে যাওয়া থেকে বিরত রাখল?
আল্লাহর দ্বীনের খিদমত করতে গিয়ে তো অজস্র ভুলে পতিত হই। অসংখ্যবার হয় সীমালঙ্ঘন। আল্লাহ এই অধমকে ক্ষমা করুন। একইসাথে অন্যায়ভাবে যাদের হক নষ্ট করা হয়েছে, তাদের নিকটও ক্ষমা চাই। আল্লাহ এর বিনিময়ে আখিরাতে ভাইবোনদের উত্তম বিনিময় দিন।
নিশ্চয়ই আল্লাহর দ্বীনের যাবতীয় বিকৃতি, গোপন করার প্রয়াস সবকিছু বিলীন হয়ে যাবে। আরও বিলীন হয়ে যাবে ইখলাসবিহীন সমস্ত আমাল, দাওয়াহ, খিদমত।
.
كَذَٲلِكَ يَضۡرِبُ ٱللَّهُ ٱلۡحَقَّ وَٱلۡبَـٰطِلَ*ۚ فَأَمَّا ٱلزَّبَدُ فَيَذۡهَبُ جُفَآءً۬*ۖ وَأَمَّا مَا يَنفَعُ ٱلنَّاسَ فَيَمۡكُثُ فِى ٱلۡأَرۡضِ*ۚ كَذَٲلِكَ يَضۡرِبُ ٱللَّهُ ٱلۡأَمۡثَالَ ( ١٧ )
“এমনিভাবে আল্লাহ সত্য ও মিথ্যার দৃষ্টান্ত প্রদান করেন। অতএব, ফেনা তো শুকিয়ে খতম হয়ে যায় এবং যা মানুষের উপকারে আসে, তা জমিতে অবশিষ্ট থাকে। আল্লাহ এমনিভাবে দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন।”
[সূরা রাদ, ১৭]
.
أَلَمۡ تَرَ كَيۡفَ ضَرَبَ ٱللَّهُ مَثَلاً۬ كَلِمَةً۬ طَيِّبَةً۬ كَشَجَرَةٍ۬ طَيِّبَةٍ أَصۡلُهَا ثَابِتٌ۬ وَفَرۡعُهَا فِى ٱلسَّمَآءِ ( ٢٤ ) تُؤۡتِىٓ أُڪُلَهَا كُلَّ حِينِۭ بِإِذۡنِ رَبِّهَا*ۗ وَيَضۡرِبُ ٱللَّهُ ٱلۡأَمۡثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ يَتَذَڪَّرُونَ ( ٢٥ )
وَمَثَلُ كَلِمَةٍ خَبِيثَةٍ۬ كَشَجَرَةٍ خَبِيثَةٍ ٱجۡتُثَّتۡ مِن فَوۡقِ ٱلۡأَرۡضِ مَا لَهَا مِن قَرَارٍ۬ ( ٢٦ ) يُثَبِّتُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱلۡقَوۡلِ ٱلثَّابِتِ فِى ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَفِى ٱلۡأَخِرَةِ*ۖ وَيُضِلُّ ٱللَّهُ ٱلظَّـٰلِمِينَ*ۚ وَيَفۡعَلُ ٱللَّهُ مَا يَشَآءُ ( ٢٧ )
“আপনি কি লক্ষ্য করেন না, আল্লাহ তা’আলা কেমন উপমা বর্ণনা করেছেন — পবিত্র বাক্য হলো পবিত্র বৃক্ষের মত। তার শিকড় মজবুত এবং শাখা আকাশে উত্থিত। সে পালনকর্তার নির্দেশে অহরহ ফল দান করে। আল্লাহ মানুষের জন্যে দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেন — যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।
আর নোংরা বাক্যের উদাহরণ হলো নোংরা বৃক্ষ। একে মাটির উপর থেকে উপড়ে নেওয়া হয়েছে। এর কোন স্থিতি নেই। আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা মজবুত করেন। পার্থিবজীবনে এবং পরকালে। এবং আল্লাহ জালিমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা, তা করেন।”
[সূরা ইবরাহিম, ২৪-২৭]
.
স্বয়ং রব্বের এমন হুঁশিয়ারির পর বান্দাদের জন্য ইখলাসের সাথে হককে আঁকড়ে ধরা ব্যতীত ভিন্ন কোনো পথই তো খোলা নেই! তাই দাওয়াতের পথে যদি কখনও হয়ে যায় ভুল, তবে ফিরে এসো রব্বের কাছে। অহংকার ছুঁড়ে ফেলে ইস্তিগফার আর তাওবাহে পুনরায় শুরু করো তোমার যাত্রা… ইখলাসের সাথে, সিরতল মুস্তাকিমের পথে।
লেখকঃ ভাই Tanvir Ahmed
এভাবেই নিজেদের সাধ্যানুযায়ী সবাই কমবেশি আল্লাহর দ্বীনের দাঈ’ হয়ে যায়। হয়তো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের গন্ডিতে লিখে, কিছু বলে বা ভিডিও বানিয়ে আল্লাহর দ্বীনের খাদিম হতে চায় বান্দা। কিন্তু সেসময় নিয়্যাতগুলো আন্তরিক হলেও সঠিক সোহবতের অভাবে, উপকারি ইলম বা পরিচর্যার অভাবে দাওয়াতের পথে অজস্র ভুলকে, ভুল ধারণাকে আলিঙ্গন করে সাথে নিয়ে যাওয়া হয়।
শিখতে থাকা বান্দার ইখলাস চলার পথে হয়তো কিছু ভুলকে শুধরে দেয়, আর কিছু হয়তো থেকেই যায়। আদবে, আমলে বা ইলমে।
.
এইদিকে সময়ের সাথে সাথে লিখনি, বক্তব্য, ইডিটিং বা অন্যকোনো গুণে হয়তো কিছু গুণগ্রাহী জমে যায় বান্দার। আর শয়তানের তিল তিল চেষ্টা তো রয়েছেই। যে হৃদয়ে ইখলাস নিয়ে শুরু হয়েছিল পথচলা, সময়ে সেই হৃদয়ে হয়তো একটু আধটু অহমিকা গড়ে উঠে। ফলে আদব, আমল বা ইলমের যে গর্তগুলো আজোবধি রয়ে গিয়েছিল, সেগুলো যে কখন সেই অহমিকা দিয়ে পূরণ হওয়া শুরু হয় তা হয়তো খেয়ালও থাকে না।
কখনোবা হয়তো সাহাবাদের সম্পর্কে কীভাবে কথা বলতে হবে, তাঁদের ইসলাম গ্রহণের পূর্বের শত্রুভাবাপন্ন ঘটনার সাথে কীভাবে আদব ইনসাফ রক্ষা করতে হবে তাতে থেকে যায় ঘাটতি। কখনো হয়তো স্বয়ং আল্লাহর বিধান বা দ্বীনের মৌলিক উসুল বিকৃতি, আল্লাহর রাসূল ﷺ সাহাবা আজমাঈনদের ঘটনা বা শিক্ষা বিকৃতি এক নিত্য অভ্যাসে পরিণত হয়। নিজের মত, পথ বা খাহেশাতের নিমিত্তে আল্লাহর দ্বীনকে বিকৃত করা বা দ্বীনের বিধান গোপন করা হয়ে যায় ঠুনকো ব্যাপার। কখনও ইখতিলাফি বিষয়ে রীতিমত ওয়াল বারা’ প্রয়োগ হয় তো কখনও ইখতিলাফি বিষয়ে ‘ছাড়ের উসুল’ অকাট্য এবং অবিসংবাদী বিষয়েও প্রয়োগ করতে দেখা যায়।
.
এভাবেই ধীরে ধীরে বিচ্যুতি একসময় এমন পাহাড় গড়ে, যা থেকে খাঁটি ইখলাস আর আল্লাহর ভয়কে অবলম্বন করা ছাড়া, লজ্জিত হওয়া ছাড়া নেমে আসার কোনোই উপায় থাকে না। সমস্ত সিদ্ধান্ত কেবল দুইটি বিষয়ে এসে পৌঁছে — বিশুদ্ধ ইখলাস নয়তো আত্নসম্মানের অহমিকা।
.
مَن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡحَيَوٰةَ ٱلدُّنۡيَا وَزِينَتَہَا نُوَفِّ إِلَيۡہِمۡ أَعۡمَـٰلَهُمۡ فِيہَا وَهُمۡ فِيہَا لَا يُبۡخَسُونَ ( ١٥ ) أُوْلَـٰٓٮِٕكَ ٱلَّذِينَ لَيۡسَ لَهُمۡ فِى ٱلۡأَخِرَةِ إِلَّا ٱلنَّارُ*ۖ وَحَبِطَ مَا صَنَعُواْ فِيہَا وَبَـٰطِلٌ۬ مَّا ڪَانُواْ يَعۡمَلُونَ ( ١٦ )
“যে ব্যক্তি পার্থিবজীবন ও তার চাকচিক্যই কামনা করে, আমি তাদের দুনিয়াতেই তাদের আমলের প্রতিফল ভোগ করিয়ে দেব এবং তাতে তাদের প্রতি কিছুমাত্র কমতি করা হয় না।
এরাই হল সেসব লোক আখিরাতে যাদের জন্য আগুন ছাড়া কিছু নেই। তারা এখানে যা কিছু করেছিল সবই বরবাদ করেছে; আর যা কিছু উপার্জন করেছিল, সবই বিনষ্ট হল।”
[সূরা হুদ, ১৫-১৬]
.
ইয়া আবদুল্লাহ, ইয়া আমাতুল্লাহ, চিন্তা করে দেখুন তো এই অবস্থার শুরুটা কোথায় হয়েছিল। ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রহিমাহুল্লাহ) বলতেন,
“জবানের মধ্যে দুইটি বড় বিপদ রয়েছে। একটি হল কথা বলার বিপদ, আরেকটি হল চুপ থাকার বিপদ। আপন আপন সময়ে প্রত্যেকটিই অপরটি থেকে বড় বিপদ হতে পারে। যেমন, যে হক কথা বলা থেকে চুপ থাকে সে হল বোবা শয়তান, আল্লাহর অবাধ্য, রিয়াকারী ও শৈথিল্যকারী। আর যে ভ্রান্ত কথা বলে সে হল বাকশীল শয়তান, আল্লাহর অবাধ্য।
বেশিরভাগ মানুষই কথা বলা ও চুপ থাকার ক্ষেত্রে সঠিক অবস্থা থেকে বিচ্যুত। তারা উপরের দুইটির যেকোনো এক অবস্থায় লিপ্ত থাকে। আর মধ্যমপন্থিরাই হচ্ছে সরল, সঠিক পথের অনুসারী। যারা নিজেদেরকে বাতিল কথা থেকে হিফাজত করে আর যা পরকালে উপকারি হবে, তা বর্ণনা করে।”
.
আল্লাহর দ্বীন কিন্তু কারও উপর নির্ভরশীল নয়। ইখলাসপূর্ণ বান্দাদের নিদারুণ প্রচেষ্টার দ্বারা আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে ধীরে হলেও বিজয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যান। অপরদিকে সময়ের সাথে সাথে যারা বিচ্যুত হয়, আল্লাহর দ্বীনকে প্রকাশ্যে বিকৃত করে বা অবিসংবাদী বিষয়াদি গোপন করে, তাদের কিছু খিদমত হয়তো সাময়িকভাবে দ্বীনের কল্যাণ বয়ে আনে। কিন্তু সময়ে সেগুলো উবে যায়। আর আল্লাহ তো জাহান্নামিদের দিয়েও দ্বীনের খিদমত করিয়ে নেন। তাহলে কী আমাকে আর-রহমানের দিকে ইখলাসের সাথে ফিরে যাওয়া থেকে বিরত রাখল?
আল্লাহর দ্বীনের খিদমত করতে গিয়ে তো অজস্র ভুলে পতিত হই। অসংখ্যবার হয় সীমালঙ্ঘন। আল্লাহ এই অধমকে ক্ষমা করুন। একইসাথে অন্যায়ভাবে যাদের হক নষ্ট করা হয়েছে, তাদের নিকটও ক্ষমা চাই। আল্লাহ এর বিনিময়ে আখিরাতে ভাইবোনদের উত্তম বিনিময় দিন।
নিশ্চয়ই আল্লাহর দ্বীনের যাবতীয় বিকৃতি, গোপন করার প্রয়াস সবকিছু বিলীন হয়ে যাবে। আরও বিলীন হয়ে যাবে ইখলাসবিহীন সমস্ত আমাল, দাওয়াহ, খিদমত।
.
كَذَٲلِكَ يَضۡرِبُ ٱللَّهُ ٱلۡحَقَّ وَٱلۡبَـٰطِلَ*ۚ فَأَمَّا ٱلزَّبَدُ فَيَذۡهَبُ جُفَآءً۬*ۖ وَأَمَّا مَا يَنفَعُ ٱلنَّاسَ فَيَمۡكُثُ فِى ٱلۡأَرۡضِ*ۚ كَذَٲلِكَ يَضۡرِبُ ٱللَّهُ ٱلۡأَمۡثَالَ ( ١٧ )
“এমনিভাবে আল্লাহ সত্য ও মিথ্যার দৃষ্টান্ত প্রদান করেন। অতএব, ফেনা তো শুকিয়ে খতম হয়ে যায় এবং যা মানুষের উপকারে আসে, তা জমিতে অবশিষ্ট থাকে। আল্লাহ এমনিভাবে দৃষ্টান্তসমূহ বর্ণনা করেন।”
[সূরা রাদ, ১৭]
.
أَلَمۡ تَرَ كَيۡفَ ضَرَبَ ٱللَّهُ مَثَلاً۬ كَلِمَةً۬ طَيِّبَةً۬ كَشَجَرَةٍ۬ طَيِّبَةٍ أَصۡلُهَا ثَابِتٌ۬ وَفَرۡعُهَا فِى ٱلسَّمَآءِ ( ٢٤ ) تُؤۡتِىٓ أُڪُلَهَا كُلَّ حِينِۭ بِإِذۡنِ رَبِّهَا*ۗ وَيَضۡرِبُ ٱللَّهُ ٱلۡأَمۡثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمۡ يَتَذَڪَّرُونَ ( ٢٥ )
وَمَثَلُ كَلِمَةٍ خَبِيثَةٍ۬ كَشَجَرَةٍ خَبِيثَةٍ ٱجۡتُثَّتۡ مِن فَوۡقِ ٱلۡأَرۡضِ مَا لَهَا مِن قَرَارٍ۬ ( ٢٦ ) يُثَبِّتُ ٱللَّهُ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ بِٱلۡقَوۡلِ ٱلثَّابِتِ فِى ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا وَفِى ٱلۡأَخِرَةِ*ۖ وَيُضِلُّ ٱللَّهُ ٱلظَّـٰلِمِينَ*ۚ وَيَفۡعَلُ ٱللَّهُ مَا يَشَآءُ ( ٢٧ )
“আপনি কি লক্ষ্য করেন না, আল্লাহ তা’আলা কেমন উপমা বর্ণনা করেছেন — পবিত্র বাক্য হলো পবিত্র বৃক্ষের মত। তার শিকড় মজবুত এবং শাখা আকাশে উত্থিত। সে পালনকর্তার নির্দেশে অহরহ ফল দান করে। আল্লাহ মানুষের জন্যে দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেন — যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।
আর নোংরা বাক্যের উদাহরণ হলো নোংরা বৃক্ষ। একে মাটির উপর থেকে উপড়ে নেওয়া হয়েছে। এর কোন স্থিতি নেই। আল্লাহ তা’আলা মুমিনদেরকে মজবুত বাক্য দ্বারা মজবুত করেন। পার্থিবজীবনে এবং পরকালে। এবং আল্লাহ জালিমদেরকে পথভ্রষ্ট করেন। আল্লাহ যা ইচ্ছা, তা করেন।”
[সূরা ইবরাহিম, ২৪-২৭]
.
স্বয়ং রব্বের এমন হুঁশিয়ারির পর বান্দাদের জন্য ইখলাসের সাথে হককে আঁকড়ে ধরা ব্যতীত ভিন্ন কোনো পথই তো খোলা নেই! তাই দাওয়াতের পথে যদি কখনও হয়ে যায় ভুল, তবে ফিরে এসো রব্বের কাছে। অহংকার ছুঁড়ে ফেলে ইস্তিগফার আর তাওবাহে পুনরায় শুরু করো তোমার যাত্রা… ইখলাসের সাথে, সিরতল মুস্তাকিমের পথে।
লেখকঃ ভাই Tanvir Ahmed
Comment