পৃথিবী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। আমাদের করণীয় কী?
পাঁচটি মহাযুদ্ধ
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, ‘পৃথিবীর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মানুষের মহাযুদ্ধ পাচঁটি। দুটি এই উম্মতের আগে সংঘটিত হয়েছে। অবশিষ্ট তিনটি এই উম্মতের মাঝে সংঘটিত হবে। একটি তুর্কি মহাযুদ্ধ। একটি রোমানদের মহাযুদ্ধ। তৃতীয়টি দাজ্জালের মহাযুদ্ধ। দাজ্জালের পর আর কোনো মহাযুদ্ধ হবে না।’ (আল-ফিতান, পৃষ্ঠা : ৫৪৮, আসসুনানুল ওয়ারিদাতু ফিল ফিতান)
এই উম্মতের দুটি মহাযুদ্ধ ইতোমধ্যে সংঘটিত হয়েছে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে একটি পক্ষের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার ছিল তুর্কি-উসমানিয়রা। তাদেরকে বলা হতো অক্ষশক্তি। অক্ষশক্তির অন্য দেশগুলো- অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরী, জার্মান ও বুলগেরিয়া। সার্বিয়া, রাশিয়া, বৃটেন, ফ্রান্স, জাপান, ইতালি ও আমেরিকা ছিল মিত্রশক্তিতে। ১৯১৪ সালের ১৮ জুলাই থেকে ১১ নভেম্বর ১৯১৮ পর্যন্ত এই যুদ্ধ স্থায়ী হয়। এই মহাযুদ্ধে ৯০ লাখ যোদ্ধাসহ ৫০ লাখ মানুষ নিহত হয়। এটি ছিল ইতোপূর্বে সংঘটিত যে-কোনো যুদ্ধের চেয়ে ব্যয়বহুল ও প্রাণসংহারি।
দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ ইউরোপিয় খৃস্টান ও অন্য অবিশ্বাসী শক্তিগুলোর পারষ্পরিক হানাহানিমূলক যুদ্ধ। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় সাড়ে ৮ কোটি মানুষ এই যুদ্ধে নিহত হয়। মানবসভ্যতার ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এবং সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ এটি। ১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত ছয় বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়সীমা ধরা হলেও ১৯৩৯ সালের আগে এশিয়ায় সংঘটিত কয়েকটি সংঘর্ষকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অংশ হিসাবে গণ্য করা হয়। তৎকালীন বিশ্বের সমস্ত পরাশক্তি এবং বেশিরভাগ রাষ্ট্রই এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। সৃষ্টি হয় দুটি বিপরীত সামরিক জোট। ৩০টি দেশের প্রায় ১০ কোটি সৈনিক যুদ্ধে অংশ নেয়। ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস এই যুদ্ধে নিহত হয় ৬ থেকে সাড়ে ৮ কোটি মানুষ। এখন অবশিষ্ট আছে আরেকটি মহাযুদ্ধ। এটি মুসলিমদের সঙ্গে ইসলাম বিদ্বেষী শক্তিগুলোর যুদ্ধ। হাদিসে একে ‘মালহামাতুল কুবরা’ বলা হয়েছে। এই মহাযুদ্ধে ইসলাম বিদ্বেষী শক্তির নেতৃত্বে থাকবে ‘রোমান বা খৃস্টানজগত। মুসলমানদের পক্ষে নেতৃত্ব দিবেন মাহদী। সবশেষে দাজ্জাল আত্মপ্রকাশ করে অশুভশক্তির নেতৃত্ব গ্রহন করবে। দাজ্জালের আত্মপ্রকাশ ঘটলে ঈসা ইবনে মরিয়ম আলাইহিস সালাম অবতরণ করবেন। দাজ্জাল তাঁর হাতে নিহত হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, এটি মানবজাতির সর্বশেষ সংঘাত। এরপর আর কোন যুদ্ধ-বিগ্রহ হবে না।
(সূত্র: সিরিয়া মহাযুদ্ধের কাল, জসিম উদদীন আহমাদ, পৃষ্ঠা : ৯৬-৯৭)
মুহতারাম ভাইয়েরা-
একটু নির্জনে বসে ভাবুন তো... বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দামামা বেজে উঠেছে সর্বত্র। যেকোন সময় চূড়ান্ত যুদ্ধ শুরু হয়ে যেতে পারে। চূড়ান্ত যুদ্ধের সময় এবং তার আগে ও পরে কত মানুষ মারা যেতে পারে? তার কোন ইয়েত্তা আছে? মোটেও না। যেমনটা আমরা উপরের লেখাতে দেখেছি যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেশী মানুষ মারা গিয়েছিল। তাহলে এর দ্বারা তো সহজেই এ কথা অনুমেয় যে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে আরো বেশী মানুষ মারা যাবে। তাহলে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতির আলোকে আমাদের কি করণীয়? আমাদের জন্য কি মৃত্যুর প্রস্তুতি নেওয়া জরুরী নয়? কারণ, বলা তো যায় না; কখন কার ডাক এসে যায়। আর এটা তো একটা স্বাভাবিক ব্যাপার যে, তখন সমগ্র মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। একদিকে মুসলিম উম্মাহ ও অন্য দিকে কাফির সম্প্রদায়। একদিকে আল্লাহর বাহিনী ও অন্যদিকে শয়তানের বাহিনী কাজ করে যাবে। তাই আমাদের জন্য এটা উচিত নয় কি যে, আমরা অতি দ্রুত আল্লাহর বাহিনীর সাথে মিলে যাব? অবশ্যই উচিত। বিশেষত: মুজাহিদ বাহিনীদের সাথে মিলে যাওয়া খুব জরুরী ও আবশ্যক। যাতে আমরা আল্লাহর পথে শাহাদাতের মৃত্যু লাভ করতে পারি। তাই হে ভাইয়েরা- আর একা একা বিচ্ছিন্নভাবে থাকবেন না, কোন হকপন্থী জিহাদী তানযিমের সাথে জুড়ে যান। হৃদয়ে শাহাদাতের তামান্না জাগ্রত করে ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর খেদমতে নিবেদিত হয়ে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে জিহাদের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ুন।
ভাইয়েরা আমার, এখন তো আর দুনিয়া সাজানোর সময় নেই। দুনিয়ার চাকচিক্যে নজর বুলানোর সময় নেই। দুনিয়ার সুখ-ভোগ করার পর্যাপ্ত সময় নেই। কারণ, পৃথিবী তার আয়ুষ্কাল ফুরিয়ে ধ্বংস হওয়ার পথে রয়েছে। যদিও দুনিয়াদার বোকা লোকেরা দুনিয়া সাজাতেই এখনো ব্যস্ত। দুনিয়ার ধন-সম্পদ আরো বাড়ানোর ফিকিরে লিপ্ত। তাই বলে কি আমিও তাদের মত হয়ে যাব? নাহ..এটা তো হতে পারে না! আমি তো তাদের মত হলে চলবে না। আমি তো চির সফলকামীদের অন্তর্ভক্ত হতে চাই। আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি চাই..তাঁর পথে নিজের জীবন ও সম্পদ বিলিয়ে দিতে চাই। এর জন্য আমাকে এই মুহূর্তেই প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাওফিক দান করুন। আমীন
সবশেষে আবারো বলছি- বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে, ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর করুণ হালাত নিয়ে ভাবুন ও নিজের করণীয় নির্ধারণ করুন। সর্বোপরি শাহাদাত লাভের তামান্না নিয়ে ফিকির করুন। কিভাবে তা অর্জন করা যায়।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে সহীহ বুঝ দান করুন এবং শাহাদাতের মৃত্যু লাভের প্রস্তুতি নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আল্লাহুম্মা আমীন
*************************************
আপনাদের নেক দু‘আয় মুজাহিদীনে কেরামকে ভুলে যাবেন না।
Comment