গোপন নেক আমলের এক অপূর্ব দৃষ্টান্ত
ঘটনাটি ইসলামের প্রথম শতাব্দীর। মুসলমানরা তখন ইসলামের বিজয় পতাকা নিয়ে পৃথিবীর দিকবিদিক ছুটে যাচ্ছিল আর একের পর এক শত্রুদের বিভিন্ন শহরে ইসলামের ঝান্ডা বুলন্দ করছিল। মুসলমানদের এমনই একটি দল তখন রোমানদের সঙ্গে যুদ্ধরত ছিল। তারা রোমানদের একটি দুর্গ অবরোধ করে রেখেছিল। দুর্গটি ছিল খুবই মজবুত ও দুর্বোধ্য। অবরোধের সময় দীর্ঘ হচ্ছিল। চূড়ান্ত কোন যুদ্ধও ছিল না। প্রতিদিন সকালবেলা মুসলমানরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে শহরের মূল ফটকের সামনে অপেক্ষা করত। কিন্তু ভিতরের কাফেরদের সাহস হতো না বাইরে বের হয়ে মুসলমানদের মোকাবেলা করার।
এক রাতের ঘটনা। এক মুসলিম সৈনিকের মাথায় এল অদ্ভুত বুদ্ধি। তিনি হাতে কোদাল নিয়ে একা বের হলেন। শহরের মূল ফটকের কাছাকাছি একটি জায়গা নির্বাচন করে দেয়ালের নিচে সুড়ঙ্গ খুঁড়তে শুরু করলেন। আল্লাহর ইচ্ছায় এক রাতেই তিনি সুরঙ্গ করে ফেলতে সক্ষম হন এবং সেই সুরঙ্গ দিয়ে ভিতরে ঢুকে শহরের কিছু অবস্থাও বুঝে আসতে সক্ষম হন। ভোর হওয়ার আগে আগেই তিনি নিজ তাবুতে ফিরে আসেন। ঘটনাটি সম্পর্কে কেউ টের পায়নি। পরদিন ভোরবেলা মুসলিম সৈনিকরা অন্যান্য দিনের মতো শহরের মূল ফটকের সামনে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়ায়। তখন সুরঙ্গখননকারী সেই সৈনিক সবার অগোচরে ছোট্ট সেই সুরঙ্গ দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়েন এবং চোখের পলকে ফটক খুলে দেন। মুহূর্তেই মুসলমানগণ ভিতর ঢুকে পড়েন। তারা শুধু এটুকু দেখতে পেল যে, তাদেরই এক ভাই কোন ভাবে ভিতরে ঢুকে দরজা খুলে দিয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে বাহিনীর ভিতরে হারিয়ে গেছে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো শহর মুসলমানরা বিজয় করতে সক্ষম হন। যুদ্ধ শেষ। মুসলিম সেনাপতি সবার সামনে ঘোষণা দিলেন, সুরঙ্গ খননকারী ভাই! আপনি সামনে আসুন। বেশ কয়েকবার ঘোষণা দিলেন। কেউ এলো না। পরদিন আবার ঘোষণা দিলেন। এদিনও কেউ এলো না। তৃতীয় দিন আবার ঘোষণা দিলেন। এ দিনও কেউ এলো না। তখন তিনি বললেন, সুরঙ্গ খননকারী ভাইকে লক্ষ্য করে বলছি, আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিচ্ছি, দিনে কিংবা রাতে যে কোন সময় আপনি আমার তাবুতে একটু আসুন। ওদিন সন্ধ্যাবেলা। সেনাপতি নিজ তাবুতে বসা। হঠাৎ কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকা এক ব্যক্তি সালাম দিল। তিনি সালামের উত্তর নিয়ে ভিতরে আসতে বললেন। ভিতরে আসার সাথে সাথেই তাকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনিই কি সুরঙ্গ খননকারী? তখন লোকটি বলল, সুরঙ্গ খননকারী আপনার সাথে দেখা করবে তবে তার তিনটি শর্ত রয়েছে। বললেন, কী শর্ত? লোকটি বলল, সে আপনার সঙ্গে দেখা করবে তবে আপনি তার নাম জিজ্ঞেস করতে পারবেন না? দ্বিতীয় শর্ত, তার চেহারা কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকবে আপনি তার চেহারার কাপড় সরাতে বলবেন না। তৃতীয় শর্ত, আপনি তাকে কোন পুরস্কার দিতে চাইবেন না। বললেন, ঠিক আছে। সবগুলো শর্তই মানবো। তখন লোকটি বলল, আমি সেই সেই লোক। অপলক দৃষ্টিতে তিনি কতক্ষণ লোকটির দুই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। লোকটি আর কোন কথা বলল না। সালাম দিয়ে তাবু থেকে বেরিয়ে গেল। এরপর থেকে সেই সেনাপতি প্রায় তাঁর দোয়ায় বলতেন, হে আল্লাহ! আমার হাশর যেন সুরঙ্গ খননকারী ভাইটির সাথে হয়। (আরবি থেকে অনুবাদ)
আপনিও কিছু করুন
আপনিও নিয়মিত কিছু 'গোপন নেক আমল' করুন, যা সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানবে না। হোক তা একদমই সামান্য কোন আমল। হতে পারে ওই নেক আমলের উসিলায় আপনি নিজেও নাজাত পাবেন এবং আপনার মাধ্যমে আরো অনেকে নাজাত পাবে ইনশাআল্লাহ। তাছাড়া গোপন নেক আমলের উসিলায় দুনিয়াতেও বান্দা বিপদ আপদ থেকে মুক্তি পায়।
সহী বুখারীতে বর্ণিত গুহায় আটকে পড়া তিন ব্যক্তি নিজ নিজ গোপন নেক আমলের কথা উল্লেখ করে দোয়া করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া কবুল করেছিলেন এবং সেই বিপদ থেকে তাদেরকে মুক্তি দিয়েছিলেন। তারা প্রত্যেকেই এভাবে দোয়া করেছিল যে,
اللَّهُمَّ إنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذلِكَ ابِتِغَاءَ وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنّي مَا أنا فِيهِ .
হে আল্লাহ! আমি যদি ওই আমলটি একমাত্র আপনাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে করে থাকি তাহলে এর উসিলায় আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করুন। সহী বুখারী; হাদিস : 2272
ঘটনাটি ইসলামের প্রথম শতাব্দীর। মুসলমানরা তখন ইসলামের বিজয় পতাকা নিয়ে পৃথিবীর দিকবিদিক ছুটে যাচ্ছিল আর একের পর এক শত্রুদের বিভিন্ন শহরে ইসলামের ঝান্ডা বুলন্দ করছিল। মুসলমানদের এমনই একটি দল তখন রোমানদের সঙ্গে যুদ্ধরত ছিল। তারা রোমানদের একটি দুর্গ অবরোধ করে রেখেছিল। দুর্গটি ছিল খুবই মজবুত ও দুর্বোধ্য। অবরোধের সময় দীর্ঘ হচ্ছিল। চূড়ান্ত কোন যুদ্ধও ছিল না। প্রতিদিন সকালবেলা মুসলমানরা যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে শহরের মূল ফটকের সামনে অপেক্ষা করত। কিন্তু ভিতরের কাফেরদের সাহস হতো না বাইরে বের হয়ে মুসলমানদের মোকাবেলা করার।
এক রাতের ঘটনা। এক মুসলিম সৈনিকের মাথায় এল অদ্ভুত বুদ্ধি। তিনি হাতে কোদাল নিয়ে একা বের হলেন। শহরের মূল ফটকের কাছাকাছি একটি জায়গা নির্বাচন করে দেয়ালের নিচে সুড়ঙ্গ খুঁড়তে শুরু করলেন। আল্লাহর ইচ্ছায় এক রাতেই তিনি সুরঙ্গ করে ফেলতে সক্ষম হন এবং সেই সুরঙ্গ দিয়ে ভিতরে ঢুকে শহরের কিছু অবস্থাও বুঝে আসতে সক্ষম হন। ভোর হওয়ার আগে আগেই তিনি নিজ তাবুতে ফিরে আসেন। ঘটনাটি সম্পর্কে কেউ টের পায়নি। পরদিন ভোরবেলা মুসলিম সৈনিকরা অন্যান্য দিনের মতো শহরের মূল ফটকের সামনে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়ায়। তখন সুরঙ্গখননকারী সেই সৈনিক সবার অগোচরে ছোট্ট সেই সুরঙ্গ দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়েন এবং চোখের পলকে ফটক খুলে দেন। মুহূর্তেই মুসলমানগণ ভিতর ঢুকে পড়েন। তারা শুধু এটুকু দেখতে পেল যে, তাদেরই এক ভাই কোন ভাবে ভিতরে ঢুকে দরজা খুলে দিয়েছে এবং সঙ্গে সঙ্গে বাহিনীর ভিতরে হারিয়ে গেছে। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই পুরো শহর মুসলমানরা বিজয় করতে সক্ষম হন। যুদ্ধ শেষ। মুসলিম সেনাপতি সবার সামনে ঘোষণা দিলেন, সুরঙ্গ খননকারী ভাই! আপনি সামনে আসুন। বেশ কয়েকবার ঘোষণা দিলেন। কেউ এলো না। পরদিন আবার ঘোষণা দিলেন। এদিনও কেউ এলো না। তৃতীয় দিন আবার ঘোষণা দিলেন। এ দিনও কেউ এলো না। তখন তিনি বললেন, সুরঙ্গ খননকারী ভাইকে লক্ষ্য করে বলছি, আমি আপনাকে আল্লাহর কসম দিচ্ছি, দিনে কিংবা রাতে যে কোন সময় আপনি আমার তাবুতে একটু আসুন। ওদিন সন্ধ্যাবেলা। সেনাপতি নিজ তাবুতে বসা। হঠাৎ কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকা এক ব্যক্তি সালাম দিল। তিনি সালামের উত্তর নিয়ে ভিতরে আসতে বললেন। ভিতরে আসার সাথে সাথেই তাকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনিই কি সুরঙ্গ খননকারী? তখন লোকটি বলল, সুরঙ্গ খননকারী আপনার সাথে দেখা করবে তবে তার তিনটি শর্ত রয়েছে। বললেন, কী শর্ত? লোকটি বলল, সে আপনার সঙ্গে দেখা করবে তবে আপনি তার নাম জিজ্ঞেস করতে পারবেন না? দ্বিতীয় শর্ত, তার চেহারা কাপড় দিয়ে ঢাকা থাকবে আপনি তার চেহারার কাপড় সরাতে বলবেন না। তৃতীয় শর্ত, আপনি তাকে কোন পুরস্কার দিতে চাইবেন না। বললেন, ঠিক আছে। সবগুলো শর্তই মানবো। তখন লোকটি বলল, আমি সেই সেই লোক। অপলক দৃষ্টিতে তিনি কতক্ষণ লোকটির দুই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। লোকটি আর কোন কথা বলল না। সালাম দিয়ে তাবু থেকে বেরিয়ে গেল। এরপর থেকে সেই সেনাপতি প্রায় তাঁর দোয়ায় বলতেন, হে আল্লাহ! আমার হাশর যেন সুরঙ্গ খননকারী ভাইটির সাথে হয়। (আরবি থেকে অনুবাদ)
আপনিও কিছু করুন
আপনিও নিয়মিত কিছু 'গোপন নেক আমল' করুন, যা সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জানবে না। হোক তা একদমই সামান্য কোন আমল। হতে পারে ওই নেক আমলের উসিলায় আপনি নিজেও নাজাত পাবেন এবং আপনার মাধ্যমে আরো অনেকে নাজাত পাবে ইনশাআল্লাহ। তাছাড়া গোপন নেক আমলের উসিলায় দুনিয়াতেও বান্দা বিপদ আপদ থেকে মুক্তি পায়।
সহী বুখারীতে বর্ণিত গুহায় আটকে পড়া তিন ব্যক্তি নিজ নিজ গোপন নেক আমলের কথা উল্লেখ করে দোয়া করেছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাদের দোয়া কবুল করেছিলেন এবং সেই বিপদ থেকে তাদেরকে মুক্তি দিয়েছিলেন। তারা প্রত্যেকেই এভাবে দোয়া করেছিল যে,
اللَّهُمَّ إنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذلِكَ ابِتِغَاءَ وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنّي مَا أنا فِيهِ .
হে আল্লাহ! আমি যদি ওই আমলটি একমাত্র আপনাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে করে থাকি তাহলে এর উসিলায় আমাকে এই বিপদ থেকে উদ্ধার করুন। সহী বুখারী; হাদিস : 2272
Comment