কুরআন_বোঝার_মজা_২
।।। এখন আমি বদলে গেছি ।।।
ভালো কোন বাড়ি দেখলে বা দামী কোন গাড়ি দেখলে একটা সময় আমার মনে এমন চিন্তার উদয় হতো যে, 'ইশ! আমারও যদি এমন একটা বাড়ি কিংবা এমন একটা গাড়ি থাকতো!' এখন তো কতো কষ্ট করে পাবলিক বাসে ঝুলে ঝুলে যেতে হয়। রাস্তার ধুলো আর গাড়ির ধোঁয়া খেয়েখেয়ে কাহিল অবস্থা। তখন কতো আরামে যেতে পারতাম! পায়ের উপর পা তুলে সাহেবের মতো যেখানে যাবার যেতাম। গাড়ির বন্ধ গ্লাসের ভেতর দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ছুটেচলা মানুষজন আর গাড়িঘোড়াকে দেখার মজাই আলাদ।
বাড়ি হলে জীবিকা নিয়ে টেনশন থাকতো না। প্রতিমাসে ভাড়া এসে জমা হয়ে যেতো মানিব্যাগে। এবার শুধু চোখ বন্ধ করে যা কেনার কেনো। আরও যা যা করার করো। চাকরি জীবনের নয়টা-পাঁচটা করা লাগতো না। একটু কিছু হলে কারও ঝাড়ি খাওয়া লাগতো না। পায়ের উপর পা তুলে আরামসে জীবন কাটাতাম। কী মজাটাই না হতো!
সত্যিই যদি এমন কিছু হতো তাহলে বেশি বেশি দান-খয়রাত করারও একটা সুযোগ সৃষ্টি হতো। এখন তো নিজেই টানাপোড়নের ভেতর বসবাস করি। তখন দুঃখী মানুষের পাশে দাড়াতে পারতাম। কন্যাগ্রস্ত পিতার হাতে কিছু টাকা তুলে দিয়ে বলতে পারতাম- 'যান, মেয়েকে এবার নিশ্চিন্তে বিয়ে দিয়ে দেন।' টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে না পারা লোকটাকে চিকিৎসার খরচ দিতাম। যে ছেলেটা সাংসারিক অভাবের স্রোতে পড়ে বিদ্যালয়ে অধ্যয়নের চাকা সচল রাখতে পারছে না তাকে পড়ালেখার খরচ দিতাম। এমন আরও কতো শতো চিন্তা মাথায় এসে কিলবিল করতে শুরু করে। ভাবনার পায়রাগুলো উড়ে বেড়ায় খোলা আকাশে। আমি বাধা দেই না। ভাবনার জন্য তো আর পয়সা খসে না। সো ভাবনাগুলোকে নিজের মতো চলতে-ফিরতে দিতে দোষ কী!
একদিন দেখা হলো কুরআনের একটি আয়াতের সাথে। এই আয়াত জীবনে বহুবার পড়েছি। হিফজখানার জীবনে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে অসংখ্যবার তিলাওয়াত করেছি। তারাবির সালাতের আগে-পরে আওড়িয়েছি অসংখ্যবার। সেই পড়া ছিলো কেবলই পড়ার জন্য, ভাবনার জন্য না। তাই আয়াতটিকে সাথে করে পড়ার সীমানা পেরিয়ে ভাবনার অঞ্চলে ঢোকার সুযোগ হয়নি আগে কখনও।
এবার যখন আয়াতটি পড়লাম ও ভাবনার জাগতে তাকে নিয়ে প্রবেশ করলাম তখন দেখতে পেলাম এক বিশাল ঢেউ এসে আমার হৃদয়-তটে তৈরি হওয়া উপরের ভাবনাগুলোর সৌধকে ছিন্নভিন্ন করে বিক্ষিপ্ত করে দিয়েছে। তারপর আরও চিন্তা করলাম। আরও বড় বড় ঢেউ এলো। হৃদয়ের দু'কূল ছাপিয়ে তা পৌঁছে গেলো মনের মধ্যগগনে। এসকল হাহুতাশ ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেলো। আমি যেন দেখা পেলাম কুয়াশাবিহীন ফকফকা এক নতুন সকালের।
যেই আয়াতটি ঢেউ হয়ে আমার দুনিয়াবি সেসব চিন্তার সৌধকে ধ্বসিয়ে দিয়েছিলো, তা হলো :
وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهِۦٓ أَزْوٰجًا مِّنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ ۚ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَأَبْقٰى
"আর তুমি কখনো প্রসারিত করো না তোমার দু’চোখ সে সবের প্রতি, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে দুনিয়ার জীবনের জাঁক-জমকস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি। যাতে আমি সে বিষয়ে তাদেরকে পরীক্ষা করে নিতে পারি। আর তোমার রবের প্রদত্ত রিযিক সর্বোৎকৃষ্ট ও অধিকতর স্থায়ী। (সূরা ত্বহা : ১৩১)
ঢাকা শহরের রাস্তা দিয়ে হাঁটি। বড় বড় দালান মাথার উপর দাড়িয়ে থাকে পাহাড়ের মতো। একটার চেয়ে আরেকটার সৌন্দর্য বেশি। যেন কে কার আগে যেতে পারে প্রতিযোগিতা চলছে। আমি গুনগুনিয়ে তিলাওয়াত করতে থাকি- 'লাতামুদ্দান্না আইনাইকা ইলা মা... তুমি তোমার চোখ দিও না সেদিকে...
লোকাল বাসে বসে যখন দরদরিয়ে ঘামতে থাকি, বাহিরে থাকা দারুন দারুন এসিওয়ালা গাড়ির সারি দেখে গুনগুনিয়ে পড়তে থাকি- 'লাতামুদ্দান্না আইনাইকা ইলা মা... তুমি তোমার চোখ দিও না সেদিকে...
দুনিয়ার এসব দালানকোঠা, রং-বেরঙের গাড়িঘোড়া, মোটা অংকের ব্যাংক ব্যালেন্স আর নিত্য নতুন আমোদ-প্রমোদ কোন কিছুই সেভাবে আর আফসোস জাগাতে পারেনি মনে। একটা আয়াত এমনভাবে মনের উপর ঘর বেঁধেছে যে, কেমন যেন সেটি লাঠি হাতে দণ্ডায়মান দারোয়ান। এসব খেয়াল আসতে চাইলেই লাঠি হাতে দেয় দৌড়ানি। আর অমনি সে খেয়ালগুলো পড়িমরি করে ছুটে পালায়। আমিও সস্থির নিশ্বাস ফেলে বলি- আলহামদুলিল্লাহ।
এভাবে মনের ভেতর যে ভাবনা এখন তৈরি হয়েছে সেটা অনেকটা এমন-
কোথাও যাবো। আপনিও গেলেন আমিও গেলাম। আপনি গেলেন নিজ গাড়িতে চড়ে, আমি গেলাম পাবলিক বাসে বসে বা কোনমতে ঝুলে। তো শেষমেশ সেখানে উপস্থিত হবার প্রশ্নে আপনি-আমি সমান। পার্থক্য কেবল এদ্দুর যে, আপনি আমার চেয়ে কিঞ্চিৎ আরামে গিয়েছেন। এমন কতো কিঞ্চিৎ আরামই তো আমি আবার আপনার থেকে বেশি পাই অন্য ক্ষেত্রে।
আমি খেলাম ভর্তা-ভাত। আপনি খেলেন পোলাও-কোর্মা। পেট আপনারটা যেমন ভরেছে, আমারটাও ভরেছে। গলার নিচে নেমে যাবার পর আপনার দামী খাবার আর আমার কমদামী খাবারে তেমন কোন তারতম্য থাকে না। শুধু মুখে যতোক্ষণ চিবানো হচ্ছে ততোক্ষণ আপনি রসনাযোগে কিছুটা স্বাদ বেশি পেলেন আমার চেয়ে, এই তো! এ আর তেমন কি!
এভাবে প্রতিটি বিষয় স্বাভাবিকভাবে ভেবে নেওয়ার মতো মানসিকতা তৈরি হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ, সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।
আসলে আল্লাহ তাআলা আমাদের তাকদীরে যা বরাদ্দ রেখেছেন আমরা ঠিক ততোটুকুই পাবো, এর বেশি না। এই বিশ্বাসটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন এক হাতিয়ার, যার মাধ্যমে আপনি মনের কোনে জমা হওয়া দুনিয়াকে অর্জন না করার সব হায়-হুতাশ আর আফসোসকে ঝেটিয়ে তাড়িয়ে দিতে পারেন। সেই সাথে আরেকটি বিশ্বাসও গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো, এমন দৃঢ় বিশ্বাস মনের ভেতর গেঁথে নেওয়া যে, আমি যা পাই নি তা পেলে আমার জন্য অমঙ্গল হতে পারতো। আল্লাহ চাননি আমার অমঙ্গল হোক, তাই তিনি তা আমাকে দেননি। এসব বিশ্বাস আমাদের ভেতরটাকে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে।
ইবনু আওন রাহিমাহুল্লাহ এর চমৎকার একটি বক্তব্য দিয়ে ইতি টানি। তিনি বলেছেন, 'স্বাচ্ছন্দ্য ও কাঠিন্য উভয় অবস্থায় আল্লাহর তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্ট থাকো। এতে তোমার অস্থিরতা কমবে এবং আখিরাতের জন্য লাভজনক হবে। জেনে রেখো, বান্দা ততোক্ষণ সত্যিকারের সন্তুষ্টি লাভ করতে পারবে না, যতোক্ষণ না কার দরিদ্র অবস্থার সন্তুষ্টি সচ্ছলতার অবস্থার সন্তুষ্টির সমান হচ্ছে। আল্লাহর ইচ্ছাকে নিজের কামনা বাসনার বিপরীত দেখতে পেয়ে কী করে তুমি অসন্তুষ্ট হতে পারো? অথচ তুমি আল্লাহকে তোমার অবস্থার দেখভাল করার অনুরোধ করেছ। এমনটা হতেই পারে যে, তোমার ইচ্ছেমতো সবকিছু হলে তুমি ধবংস হয়ে যেতে। অথচ আল্লাহর নির্ধারিত বিষয় তোমার ইচ্ছের সাথে মিললে তুমি খুশি হয়ে ওঠো। উভয় অবস্থার কারণ হলো গায়েবের ব্যাপারে তোমার নিতান্ত অজ্ঞতা। এই অবস্থা নিয়ে বিচার দিবসে যাওয়ার সাহস হয় কী করে! তুমি নিজের প্রতি সদ্ব্যবহার করোনি। সন্তুষ্টির সঠিক মাত্রায়ও পৌঁছতে পারোনি।'*
-----------------------------------
[ * নবীজির পদাঙ্ক অনুসরণ, ইবনু রজব হাম্বলী : ৯০; সীরাত পাবলিকেশন ]
।।। এখন আমি বদলে গেছি ।।।
ভালো কোন বাড়ি দেখলে বা দামী কোন গাড়ি দেখলে একটা সময় আমার মনে এমন চিন্তার উদয় হতো যে, 'ইশ! আমারও যদি এমন একটা বাড়ি কিংবা এমন একটা গাড়ি থাকতো!' এখন তো কতো কষ্ট করে পাবলিক বাসে ঝুলে ঝুলে যেতে হয়। রাস্তার ধুলো আর গাড়ির ধোঁয়া খেয়েখেয়ে কাহিল অবস্থা। তখন কতো আরামে যেতে পারতাম! পায়ের উপর পা তুলে সাহেবের মতো যেখানে যাবার যেতাম। গাড়ির বন্ধ গ্লাসের ভেতর দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে ছুটেচলা মানুষজন আর গাড়িঘোড়াকে দেখার মজাই আলাদ।
বাড়ি হলে জীবিকা নিয়ে টেনশন থাকতো না। প্রতিমাসে ভাড়া এসে জমা হয়ে যেতো মানিব্যাগে। এবার শুধু চোখ বন্ধ করে যা কেনার কেনো। আরও যা যা করার করো। চাকরি জীবনের নয়টা-পাঁচটা করা লাগতো না। একটু কিছু হলে কারও ঝাড়ি খাওয়া লাগতো না। পায়ের উপর পা তুলে আরামসে জীবন কাটাতাম। কী মজাটাই না হতো!
সত্যিই যদি এমন কিছু হতো তাহলে বেশি বেশি দান-খয়রাত করারও একটা সুযোগ সৃষ্টি হতো। এখন তো নিজেই টানাপোড়নের ভেতর বসবাস করি। তখন দুঃখী মানুষের পাশে দাড়াতে পারতাম। কন্যাগ্রস্ত পিতার হাতে কিছু টাকা তুলে দিয়ে বলতে পারতাম- 'যান, মেয়েকে এবার নিশ্চিন্তে বিয়ে দিয়ে দেন।' টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে না পারা লোকটাকে চিকিৎসার খরচ দিতাম। যে ছেলেটা সাংসারিক অভাবের স্রোতে পড়ে বিদ্যালয়ে অধ্যয়নের চাকা সচল রাখতে পারছে না তাকে পড়ালেখার খরচ দিতাম। এমন আরও কতো শতো চিন্তা মাথায় এসে কিলবিল করতে শুরু করে। ভাবনার পায়রাগুলো উড়ে বেড়ায় খোলা আকাশে। আমি বাধা দেই না। ভাবনার জন্য তো আর পয়সা খসে না। সো ভাবনাগুলোকে নিজের মতো চলতে-ফিরতে দিতে দোষ কী!
একদিন দেখা হলো কুরআনের একটি আয়াতের সাথে। এই আয়াত জীবনে বহুবার পড়েছি। হিফজখানার জীবনে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে অসংখ্যবার তিলাওয়াত করেছি। তারাবির সালাতের আগে-পরে আওড়িয়েছি অসংখ্যবার। সেই পড়া ছিলো কেবলই পড়ার জন্য, ভাবনার জন্য না। তাই আয়াতটিকে সাথে করে পড়ার সীমানা পেরিয়ে ভাবনার অঞ্চলে ঢোকার সুযোগ হয়নি আগে কখনও।
এবার যখন আয়াতটি পড়লাম ও ভাবনার জাগতে তাকে নিয়ে প্রবেশ করলাম তখন দেখতে পেলাম এক বিশাল ঢেউ এসে আমার হৃদয়-তটে তৈরি হওয়া উপরের ভাবনাগুলোর সৌধকে ছিন্নভিন্ন করে বিক্ষিপ্ত করে দিয়েছে। তারপর আরও চিন্তা করলাম। আরও বড় বড় ঢেউ এলো। হৃদয়ের দু'কূল ছাপিয়ে তা পৌঁছে গেলো মনের মধ্যগগনে। এসকল হাহুতাশ ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গেলো। আমি যেন দেখা পেলাম কুয়াশাবিহীন ফকফকা এক নতুন সকালের।
যেই আয়াতটি ঢেউ হয়ে আমার দুনিয়াবি সেসব চিন্তার সৌধকে ধ্বসিয়ে দিয়েছিলো, তা হলো :
وَلَا تَمُدَّنَّ عَيْنَيْكَ إِلٰى مَا مَتَّعْنَا بِهِۦٓ أَزْوٰجًا مِّنْهُمْ زَهْرَةَ الْحَيٰوةِ الدُّنْيَا لِنَفْتِنَهُمْ فِيهِ ۚ وَرِزْقُ رَبِّكَ خَيْرٌ وَأَبْقٰى
"আর তুমি কখনো প্রসারিত করো না তোমার দু’চোখ সে সবের প্রতি, যা আমি তাদের বিভিন্ন শ্রেণীকে দুনিয়ার জীবনের জাঁক-জমকস্বরূপ উপভোগের উপকরণ হিসেবে দিয়েছি। যাতে আমি সে বিষয়ে তাদেরকে পরীক্ষা করে নিতে পারি। আর তোমার রবের প্রদত্ত রিযিক সর্বোৎকৃষ্ট ও অধিকতর স্থায়ী। (সূরা ত্বহা : ১৩১)
ঢাকা শহরের রাস্তা দিয়ে হাঁটি। বড় বড় দালান মাথার উপর দাড়িয়ে থাকে পাহাড়ের মতো। একটার চেয়ে আরেকটার সৌন্দর্য বেশি। যেন কে কার আগে যেতে পারে প্রতিযোগিতা চলছে। আমি গুনগুনিয়ে তিলাওয়াত করতে থাকি- 'লাতামুদ্দান্না আইনাইকা ইলা মা... তুমি তোমার চোখ দিও না সেদিকে...
লোকাল বাসে বসে যখন দরদরিয়ে ঘামতে থাকি, বাহিরে থাকা দারুন দারুন এসিওয়ালা গাড়ির সারি দেখে গুনগুনিয়ে পড়তে থাকি- 'লাতামুদ্দান্না আইনাইকা ইলা মা... তুমি তোমার চোখ দিও না সেদিকে...
দুনিয়ার এসব দালানকোঠা, রং-বেরঙের গাড়িঘোড়া, মোটা অংকের ব্যাংক ব্যালেন্স আর নিত্য নতুন আমোদ-প্রমোদ কোন কিছুই সেভাবে আর আফসোস জাগাতে পারেনি মনে। একটা আয়াত এমনভাবে মনের উপর ঘর বেঁধেছে যে, কেমন যেন সেটি লাঠি হাতে দণ্ডায়মান দারোয়ান। এসব খেয়াল আসতে চাইলেই লাঠি হাতে দেয় দৌড়ানি। আর অমনি সে খেয়ালগুলো পড়িমরি করে ছুটে পালায়। আমিও সস্থির নিশ্বাস ফেলে বলি- আলহামদুলিল্লাহ।
এভাবে মনের ভেতর যে ভাবনা এখন তৈরি হয়েছে সেটা অনেকটা এমন-
কোথাও যাবো। আপনিও গেলেন আমিও গেলাম। আপনি গেলেন নিজ গাড়িতে চড়ে, আমি গেলাম পাবলিক বাসে বসে বা কোনমতে ঝুলে। তো শেষমেশ সেখানে উপস্থিত হবার প্রশ্নে আপনি-আমি সমান। পার্থক্য কেবল এদ্দুর যে, আপনি আমার চেয়ে কিঞ্চিৎ আরামে গিয়েছেন। এমন কতো কিঞ্চিৎ আরামই তো আমি আবার আপনার থেকে বেশি পাই অন্য ক্ষেত্রে।
আমি খেলাম ভর্তা-ভাত। আপনি খেলেন পোলাও-কোর্মা। পেট আপনারটা যেমন ভরেছে, আমারটাও ভরেছে। গলার নিচে নেমে যাবার পর আপনার দামী খাবার আর আমার কমদামী খাবারে তেমন কোন তারতম্য থাকে না। শুধু মুখে যতোক্ষণ চিবানো হচ্ছে ততোক্ষণ আপনি রসনাযোগে কিছুটা স্বাদ বেশি পেলেন আমার চেয়ে, এই তো! এ আর তেমন কি!
এভাবে প্রতিটি বিষয় স্বাভাবিকভাবে ভেবে নেওয়ার মতো মানসিকতা তৈরি হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ, সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।
আসলে আল্লাহ তাআলা আমাদের তাকদীরে যা বরাদ্দ রেখেছেন আমরা ঠিক ততোটুকুই পাবো, এর বেশি না। এই বিশ্বাসটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটি এমন এক হাতিয়ার, যার মাধ্যমে আপনি মনের কোনে জমা হওয়া দুনিয়াকে অর্জন না করার সব হায়-হুতাশ আর আফসোসকে ঝেটিয়ে তাড়িয়ে দিতে পারেন। সেই সাথে আরেকটি বিশ্বাসও গুরুত্বপূর্ণ। তা হলো, এমন দৃঢ় বিশ্বাস মনের ভেতর গেঁথে নেওয়া যে, আমি যা পাই নি তা পেলে আমার জন্য অমঙ্গল হতে পারতো। আল্লাহ চাননি আমার অমঙ্গল হোক, তাই তিনি তা আমাকে দেননি। এসব বিশ্বাস আমাদের ভেতরটাকে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে।
ইবনু আওন রাহিমাহুল্লাহ এর চমৎকার একটি বক্তব্য দিয়ে ইতি টানি। তিনি বলেছেন, 'স্বাচ্ছন্দ্য ও কাঠিন্য উভয় অবস্থায় আল্লাহর তাকদীরের প্রতি সন্তুষ্ট থাকো। এতে তোমার অস্থিরতা কমবে এবং আখিরাতের জন্য লাভজনক হবে। জেনে রেখো, বান্দা ততোক্ষণ সত্যিকারের সন্তুষ্টি লাভ করতে পারবে না, যতোক্ষণ না কার দরিদ্র অবস্থার সন্তুষ্টি সচ্ছলতার অবস্থার সন্তুষ্টির সমান হচ্ছে। আল্লাহর ইচ্ছাকে নিজের কামনা বাসনার বিপরীত দেখতে পেয়ে কী করে তুমি অসন্তুষ্ট হতে পারো? অথচ তুমি আল্লাহকে তোমার অবস্থার দেখভাল করার অনুরোধ করেছ। এমনটা হতেই পারে যে, তোমার ইচ্ছেমতো সবকিছু হলে তুমি ধবংস হয়ে যেতে। অথচ আল্লাহর নির্ধারিত বিষয় তোমার ইচ্ছের সাথে মিললে তুমি খুশি হয়ে ওঠো। উভয় অবস্থার কারণ হলো গায়েবের ব্যাপারে তোমার নিতান্ত অজ্ঞতা। এই অবস্থা নিয়ে বিচার দিবসে যাওয়ার সাহস হয় কী করে! তুমি নিজের প্রতি সদ্ব্যবহার করোনি। সন্তুষ্টির সঠিক মাত্রায়ও পৌঁছতে পারোনি।'*
-----------------------------------
[ * নবীজির পদাঙ্ক অনুসরণ, ইবনু রজব হাম্বলী : ৯০; সীরাত পাবলিকেশন ]
Comment