Announcement

Collapse
No announcement yet.

জান্নাত কাঁটা দিয়ে ঘেরা

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • জান্নাত কাঁটা দিয়ে ঘেরা

    তিরমিযীতে আবু হুরায়রাহ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত একটি সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন,
    “আল্লাহ যখন জান্নাত সৃষ্টি করলেন তখন তিনি জিবরীলকে সেখানে পাঠিয়ে বললেন, “দেখে এসো জান্নাত এবং জান্নাতের আরাম-আয়েশ যা আমি তাঁর অধিবাসীদের জন্য তৈরি করেছি”। জিবরীল গিয়ে তা দেখে এলেন এবং আল্লাহ কে বললেন, “আপনার বড়ত্বের শপথ, যে-ই শুনবে সে-ই এতে প্রবেশ করবে (অর্থাৎ এতে প্রবেশ করতে যা করা দরকার তাঁর সবই করবে)। তারপর আল্লাহ জান্নাতকে আদেশ দিলেন দুঃখ-কষ্ট, বিপদ–আপদ ও অপছন্দনীয় জিনিস দিয়ে পরিবেষ্টিত হয়ে যেতে। তিনি জিবরীলকে বললেন, “ফিরে যাও এবং দেখে আসো সেই জান্নাত ও তার অধিবাসীদের জন্য আমি কী প্রস্তুত করে রেখেছি”। জিবরীল জান্নাতে ফিরে গিয়ে একে বিপদ আপদ ও অপছন্দনীয় জিনিস দিয়ে ঘেরা অবস্থায় পেলেন। তিনি ফিরে এসে আল্লাহকে বললেন, “আপনার বড়ত্বের শপথ, আমি ভয় করি যে কেউই এতে প্রবেশ করবেনা। (অর্থাৎ সে এটি এড়ানোর জন্য যা করা দরকার তা-ই করবে)”।
    অতঃপর আল্লাহ জিবরীল কে বললেন, “জাহান্নামে যাও এবং দেখে এসো এর শাস্তিসমূহ যা আমি এর অধিবাসীদের জন্য তৈরি করেছি”। জিবরীল জাহান্নামের দিকে দেখলেন এবং তার কাছে তা অত্যন্ত ভয়ংকর লাগলো, তাই তিনি আল্লাহ কে বললেন, “আপনার বড়ত্বের শপথ, যে-ই এর কথা শুনবে সে-ই এটি থেকে বাঁচতে চাইবে”। তারপর আল্লাহ জাহান্নামকে আদেশ দিলেন কামনা ও বিলাসিতা দিয়ে পরিবেষ্টিত হয়ে যেতে এবং জিবরীলকে বললেন, “ওখানে ফিরে যাও”। জিবরীল সেখানে গেলেন ও বললেন, “আপনার বড়ত্বের শপথ, কেউই এ থেকে বাঁচতে পারবেনা”।
    আপনার জীবন কী জান্নাত অভিমুখী নাকি জাহান্নাম – এই প্রশ্নের জবাব পেতে আপনার জীবনের দিকে লক্ষ করুন। যদি আপনি আল্লাহর ইবাদাত করেন আর আপনার জীবন কষ্ট আর অপছন্দনীয় জিনিস দ্বারা পূর্ণ থাকে, তবে সেটি আপনার জন্য ভালো লক্ষণ। মানুষ কি অপছন্দ করে? সে অপছন্দ করে ভয়, ক্ষুধা, দারিদ্র, তৃষ্ণা, নিরাপত্তার অভাব, আশ্রয়ের অভাব, বন্দীত্ব, বঞ্চনা, আপনজনের বিচ্ছেদ, একাকীত্ব, অনিশ্চয়তা এবং এরকম আরো অনেক কিছু, যা দিয়ে জান্নাত ঘেরা। জীবনে এসবের উপস্থিতি নির্দেশ করে যে একজন মু’মিন জান্নাতের পথে আছে কি না।
    এবার ভাবুন কোন জিনিসগুলো একজন ব্যক্তি তার জীবনে পেতে চায় বা ভালোবাসে? সম্পদ, সন্তান-সন্ততি, সুপ্রশস্ত বাড়ি, নিরাপত্তা, প্রচুর খাদ্য ও পানীয়, দামী কাপড়, প্রিয়জনের সান্নিধ্য – এরকম আরো অনেক কিছু। জাহান্নাম কিন্তু এসব দিয়েই ঘেরা। মু’মিনের জীবনের এসবের উপস্থিতি জানান দেয় সে ধ্বংসের পথে অভিমুখী কি না।
    এজন্য অনেক ধনী সাহাবী সূরা আহক্বাফ এই আয়াত গুলো পড়ার সময় অঝোরে কাঁদতেন (৪৬:২০),
    “এবং সেই দিন কাফিরদের আগুনে নিক্ষেপ করা হবে, বলা হবে, ‘ তোমরা পার্থিব জীবনে আনন্দ ফুর্তি করেছো, এবং তা উপভোগ করেছো, অতএব এই দিনে তোমাদের চরম লাঞ্ছনাকর শাস্তিতে ভূষিত করা হবে কারণ তোমরা পৃথিবীর বুকে অনধিকারমূলকভাবে অহংকারী ছিলে এবং নিশ্চয় তোমরা অবাধ্য।”
    উমার বিন আল খাত্তাব, আব্দুর রাহমান বিন আউফ এবং অন্যেরা (রাঃ) এই আয়াতটি প্রায়ই উল্লেখ করতেন, এমনকি খুব সামান্য খাওয়া দেখে আনন্দিত হলে তখনও।
    কামনার অনুসরণ জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। এজন্য সালাফরা বলতেন, “যদি আল্লাহর আনুগত্য করতে চাও তাহলে তোমার নাফসকে (প্রবৃত্তি, কামনা) অমান্য কর”। যেমনটা ইমাম আশ শাফি’র একটি কবিতায় আছে (আব্দুল্লাহ্ বিন মুবারক ও এটি উদ্ধৃত করেছেন বলে জানা যায়), “নাফসের জন্য সবচেয়ে উপকারী হচ্ছে তাকে অমান্য করা”।
    অতএব, যদি আল্লাহকে মান্য করতে চান, তাহলে আপনার মনের সাথে কথা বলুন এবং আপনার প্রবৃত্তি যা করতে আদেশ দেয় তার উল্টো কাজটি করুন।
    যদি আপনার প্রবৃত্তি আদেশ দেয়ে সালাত না পড়ে ঘুমাতে, উঠে পড়ে সালাত আদায় করুন। যদি আপনার প্রবৃত্তি কৃপণতার আদেশ দেয়, তাহলে আপনার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুটি খরচ করুন। আল্লাহ সূরা আলে-ইমরানে বলেন (৩:৯২), “তুমি কখনোই সত্যিকারের তাক্বওয়া অর্জন করতে পারবে না, যতক্ষণ না যা তুমি ভালবাসো তা থেকে খরচ করছো”। যদি আপনার প্রবৃত্তি ঘরে সালাত পড়তে আদেশ দেয়, তবে মাসজিদে চলে যান। যদি আপনার প্রবৃত্তি আদেশ দেয়ে অসুস্থ মুসলিম ভাইকে দেখতে না গিয়ে ঘরে বসে আরাম করতে তো উঠে চলে যান এবং তাকে দেখে আসুন, কারণ আল্লাহকে আপনি তার সাথে পাবেন।
    অতএব, নিজের জীবনকে নিয়ে ভাবুন এবং নিজেই নিজের বিচারক হোন। আল্লাহ যদি আপনার উপর বিলাসিতার উপর বিলাসিতা, সম্পদের উপর সম্পদ, আরামের উপর আরাম ঢেলে দেন, তার মানে কোনো একটা সমস্যা আছে আর এমন হওয়া আপনার জন্য দুশ্চিন্তার বিষয়। উপরন্তু, এমন প্রাচুর্যের ছড়াছড়ি যদি আপনি আল্লাহর প্রতি অবাধ্য ও তাঁর আদেশ সমূহের প্রতি উদাসীন থাকা অবস্থায় ঘটে, তবে এটি আপনার আসন্ন ধ্বংসের আলামত। বিলাসিতা ও আরাম-আয়েশ মানুষকে আল্লাহর ব্যাপারে বিস্মৃত করে এবং স্বীয় দায়িত্বের ব্যাপারে গাফেল করে।
    অপরদিকে, আপনি সাধ্যমত আল্লাহর উপাসনা ও তাঁর আদেশ সমূহের প্রতি মনোযোগী হওয়া সত্ত্বেও যদি আপনার জীবন বিপদ-আপদ ও অপছন্দের জিনিসে ভরে যায়, তবে খুশী হোন। কারণ এটি একটি শুভ লক্ষণ যে আপনি জান্নাতের পথে আছেন। বিপদ-আপদ মু’মিনকে আল্লাহর কথা স্মরণ করায় এবং আন্তরিকতার সাথে আল্লাহর দিকে মুখ ফেরাতে সাহায্য করে। একটি বহুল প্রচলিত কথা হলো: “কষ্ট জীবনের কাছে যতটা অপছন্দের, আত্মার জন্য ততটাই উপকারের আর আরাম জীবনের কাছে যতটা পছন্দের, আত্মার জন্য তা ততই ক্ষতির কারণ।
    কাজেই, হে আল্লাহর পথের বন্দী, দুঃখ করবেন না যখন আপনাকে নিম্ন মানের খাদ্য ও ছেঁড়া কাপড় পরতে দেয়া হয়, পরিবার আর প্রিয়জন থেকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়। দুঃখ করবেন না যদি দেখেন অন্যরা সম্পদ ও সন্তানে আপনাকে ছাড়িয়ে যায়, বরং খুশি হোন, কারণ, আপনি তো সেই জান্নাতের পথেই আছেন যা এতটা দুঃখ-কষ্ট দিয়ে আবৃত যে ফেরেশতা জিবরীল পর্যন্ত আশংকা করেছিলেন যে কেউই এতে প্রবেশ করতে সমর্থ হবে না।
    ১৩ শতকের বিখ্যাত ‘আলিম আল–‘ইযয্ বিন আব্দুস সালাম বলেন, “দুঃখ-কষ্ট ও দুর্ভোগ মানুষকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর দিকে ধাবিত করে, যেখানে সুস্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধি তাকে আল্লাহর কাছ থেকে দূরে ঠেলে দেয়, যেমনটা আল্লাহ আল-কুরআনে বলেন, “এবং যখন বিপদ মানুষকে স্পর্শ করে, সে আমাদের ডাকে, শায়িত বা উপবিষ্ট বা দন্ডায়মান অবস্থায়। কিন্তু যখন আমরা তার উপর হতে বিপদ সরিয়ে দেই, সে এমনভাবে চলাফেরা করে যেন সে কোনদিন বিপদে পড়ে আমাকে ডাকেনি”। (সূরা ইউনুস:১২)
    হাসান আল বাসরি (র)বলেন, “তোমার উপর বিপদ আপতিত হলে সেটি ঘৃণা কোরো না, কেননা তুমি যা অপছন্দ করছ, সেটি হয়তো তোমার নাজাতের কারণ এবং যা তুমি পছন্দ করছ তা হয়তো তোমার ধ্বংসের কারণ”।
    সবশেষে বর্ণিত আছে যে, আলী বিন আবি তালিব (রাঃ) বলেছেন, “হে আদম সন্তান! ধনী হওয়ার ব্যাপারে খুশী হয়ো না এবং দারিদ্রের ব্যাপারে দুঃখী হয়ো না। দুর্দশার সময়ে দুঃখ করোনা এবং সমৃদ্ধির ব্যাপারে আনন্দ কোরো না। কারণ স্বর্ণ যেভাবে আগুনে পরীক্ষিত হয়, মুত্তাক্বীরা তেমনি পরীক্ষিত হন দুঃখ-কষ্ট দ্বারা। কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না যদি না তুমি পছন্দের জিনিসকে ত্যাগ করার ক্ষমতা রাখো। ধৈর্যের সাথে ঘৃণিত জিনিসকে সহ্য করার ক্ষমতা রাখো এবং যা তোমার উপর বাধ্যতামূলক করা হয়েছে তা পালনের সর্বাত্মক চেষ্টা কর।”
    শাইখ বাবর আহমেদ (ফাক্কাল্লাহু আশরাহ) এর কথা থেকে সংগৃহীত।
    Last edited by the unknown; 11-14-2019, 11:51 PM.

  • #2
    মাশাআল্লাহ, খুব-ই উপকারী পোষ্ট।
    আল্লাহ তা‘আলা আপনার মেহনত ও খেদমতকে কবুল করুন ও উত্তম জাযা দান করুন। আমীন
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

    Comment


    • #3
      প্রিয় আখি,আপনাকে ধন্যবাদ। প্রিয় আখি, আপনার লিখাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু যদি রেফারেন্সগুলো সাথে দেওয়া থাকতো আরো সুন্দর হতো। আল্লাহ তাওফিক দান করুন আমীন।
      والیتلطف ولا یشعرن بکم احدا٠انهم ان یظهروا علیکم یرجموکم او یعیدو کم فی ملتهم ولن تفلحو اذا ابدا

      Comment


      • #4
        ভাইজান আপনার লিখা আরোকবার মনে ঈমানের প্রদীপকে জালিয়ে দিয়েছে
        জিহাদই হলো মুমিন ও মুনাফিকের মাঝে
        পার্থক্যকারী একটি ইবাদাহ

        Comment

        Working...
        X