দরিদ্রতা থেকে মুক্তির আমল: প্রতি রাতে সূরা ওয়াক্বিয়া তিলাওয়াত করা।
অন্তিম রোগশয্যায় আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. এর শিক্ষাপ্রদ কথোপকথন:
ইবনে কাসীর ইবনে আসাকীরের বরাত দিয়ে এই ঘটনা বর্ণনা করেন যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. যখন অন্তিম রোগশয্যায় শায়িত ছিলেন, তখন আমীরুল মু'মিনীন হযরত ওসমান রাযি. তাঁকে দেখতে যান৷ তখন তাঁদের মধ্যে শিক্ষাপ্রদ যে কথোপকথন হয়, তা নিম্নে উদ্ধৃত করা হল:
→হযরত ওসমান গণী রাযি.- ما تشتكي আপনার অসুখটা কি?
→হযরত ইবনে মাসউদ রাযি.- ذنوبي আমার পাপসমূহই আমার অসুখ৷
→ওসমান গণী রাযি.- ما تشتهي আপনার বাসনা কি?
→ইবনে মাসউদ রাযি.- رحمة ربي আমার পালনকর্তার রহমত কামনা করি৷
→ওসমান গণী রাযি.- আমি আপনার জন্যে কোন চিকিৎসক ডাকব কি?
→ইবনে মাসউদ রাযি.- الطبيب امرضني চিকিৎসকই আমাকে রোগাক্রান্ত করেছেন৷
→ওসমান গনী রাযি.- আমি আপনার জন্যে সরকারী বায়তুল মাল থেকে কোন উপটৌকন পাঠিয়ে দেব কি?
→ইবনে মাসউদ রাযি.- لاحاجة لي فيها এর কোন প্রয়োজন নেই৷
→ওসমান গণী রাযি.- উপটৌকন গ্রহণ করুন৷ তা আপনার পর আপনার কন্যাদের উপকারে আসবে৷
→ইবনে মাসউদ রাযি.- আপনি চিন্তা করছেন যে, আমার কন্যারা দারিদ্র ও উপবাসে পতিত হবে৷ কিন্তু আমি এরূপ চিন্তা করি না৷ কারণ, আমি কন্যাদেরকে জোর নির্দেশ দিয়ে রেখেছি যে, তারা যেন প্রতি রাতে সূরা ওয়াক্কিয়া পাঠ করে৷ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি-
من قرأ سورةالواقعة كل ليلة لم تصبه فاقة ابدا
অর্থাৎ, যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সূরা ওয়াক্কিয়া পাঠ করবে, সে কখনও উপবাস করবে না৷
সূত্র: তাফসীরে মারেফুল কুরআন, অষ্টম খণ্ড, পৃ: ২৬৭ (ই. ফা.)
وعن ابن مسعود قال : قال رسول الله صلى الله عليه و سلم : " من قرأ سورة الواقعة في كل ليلة لم تصبه فاقة ابدا " . وكان ابن مسعود يأمر بناته يقرأن بها في كل ليلة . رواه البيهقي في شعب الإيمان
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন রাতে সূরা ওয়াক্বিয়াহ তেলাওয়াত করবে, তাকে কখনো দরিদ্রতা স্পর্শ করবে না। হজরত ইবনে মাসউদ রাযি. তাঁর মেয়েদেরকে প্রত্যেক রাতে এ সূরা তেলাওয়াত করার আদেশ করতেন। [বাইহাকি: শুআবুল ঈমান-২৪৯৮]
সূরা আর রাহমান, সূরা হাদিদ ও সূরা ওয়াক্বিয়া’র তেলাওয়াতকারীকে কেয়ামতের দিন জান্নাতুল ফিরদাউসের অধিবাসী হিসেবে ডাকা হবে। অন্য এক হাদিসে আছে, সূরা ওয়াকিয়াহ হলো: ধনাঢ্যতার সূরা, সুতরাং তোমরা নিজেরা তা পড় এবং তোমাদের সন্তানদেরকেও এ সূরার শিক্ষা দাও। অন্য এক বর্ণনায় আছে: তোমাদের নারীদেরকে এ সূরার শিক্ষা দাও। আম্মাজান আয়েশা রাযি. কে এ সূরা তেলাওয়াত করার জন্য আদেশ করা হয়েছিল।
তাছাড়া অভাবের সময় এ সূরার আমলের কথাটা তো হাদিস দ্বারাই প্রমাণিত। এমনকি বর্ণিত আছে যে হযরত ইবনে মাসউদ রাযি. কে যখন তার সন্তানদের জন্য একটি দিনারও রেখে না যাওয়ার কারণে তিরস্কার করা হলো, তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন, তাদের জন্য আমি সূরা ওয়াকিয়াহ রেখে গেলাম। [ফয়জুল কাদির-৪/৪১]
সুবহানাল্লাহ! মহান রাব্বুল ইজ্জতের পবিত্র কালামের বরকত কত পাওয়ারফুল আপনি-আমি তা অনুধাবন করতে পারি কি?
তাই আসুন! আমরা সকলে সূরা ওয়াক্বিয়া পাঠের এই অতি মূল্যবান আমলটি প্রতিদিন আদায় করার চেষ্টা করি৷ আল্লাহ তা‘আলা আমাদের প্রত্যেককে আমল করার তাওফীক দান করুন৷ আমীন
************************
সংগ্রহীত ও সম্পাদিত
Comment