بسم الله الرحمن الرحيم
সবুজ পাখির গল্প-১
অতিরিক্ত মদ পানে ছেলেটি মাতাল হয়ে আবোলতাবোল বকছে। সবাই তাকে নিয়ে হাসাহাসি করছে। সে তার মতো বকেই চলছে। নেশার ঘোর কেটে যাবার পর সে বাড়ির দিকে হাঁটা দিল। কলিং-বেলের বুতামে চাপ দিলে মাঝবয়সী একমহিলা দরজা খোলো দিল। বলছিলাম আদনানের গল্প। আফনান ডাক্তারি পাশ করেছে। খুশির অন্ত নেই। ভালো রেজাল্ট করেছে সে। তাই সরকারি হাসপাতালে চাকরি পেতে দেরি হলো না। শুরু হলো কর্মজীবন।
হাসপাতালে তার বরাবর সামনে বসে রুগী দেখেন সদ্যপাশ করা এক যুবতী ডাক্তার। তার রূপে-গুণে মুগ্ধ হয়ে আফনান তাকে বিয়ে করে ফেললো। বিয়ের তিন বছরের মাথায় তাদের ঘর আলোকিত করলো এক ফুটফুটে পুত্র সন্তান। নাম রাখলো আদনান। মা-বাবা উভয়েই চাকুরীজীবী। তাই সন্তানের দিকে খেয়াল রাখার সময় নেই। কর্মস্থল থেকে ফিরে বাচ্চাকে আদর করার সময় খুব কমই পায়। আদনান কাজের বুয়ার কাছে পালিত হতে লাগলো।
ছয় বছর পর তাকে ভর্তি করা হলো কেজি স্কুলে। কেজি শেষ করে হাইস্কুল। কলেজ শেষ করে ভার্সিটিতে পা রেখেছে মাত্র। আদনান এর পিতা-মাতা কেউ নামাজ পড়ে না। শুধু মাত্র নামে মুসলিম। বাবা আফনান মাঝে মাঝে শুক্রবারে মসজিদে হাজিরা দিয়ে আসে। বাসায় টিভি আছে। মা-বাবা বাসায় এসেই টিভি ছেড়ে সিরিয়াল দেখায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আদনানও এদের চেয়ে কম না। দুই ঈদের মুসল্লি। গান-শুনা আর আড্ডা দেয়াই তার কাম। প্রতিদিন দশটি সিগারেট ধ্বংস করে। ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে মদ খাওয়া শুরু করে। এবং এতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
আজকে একটু বেশী খাওয়ায় মাতাল হয়ে পড়ে ছিল। মাতলামি শেষ হলে সে বাসার দিকে রওনা দেয়। ইতিমধ্যে সে বুঝতে পেরেছে. তাকে নিয়ে লোকজন হাসাহাসি করেছে। তাই মন খারাপ। বাসার কলিংবেল টিপতেই তার মা দরজা খুলে দিলো। মদ খাওয়ায় তার মা আচ্ছা মতো বকাঝকা করলো। এতদিন কিছু বলেনি। কারণ, তার বাবাও সিগারেট খায়। মার বকা আর রাস্তার লোকদের হাসাহাসি তাকে ভীষণ ক্ষেপীয়ে তুললো।
মাকে বললো,
তুমি আমার বিষয়ে কোন কথা বলবে না। আমি যা ইচ্ছা তাই করবো।
- বলবো না মানে? তুই পড়া লেখা করিস না। আবার মদও খাওয়া শুরু করেছিস। তোর কি ভবিষ্যত নেই?
- আমার ভবিষ্যত আমি দেখবো।
- পড়া লেখা না করে তুই কি দেখবি? তুইতো সুইপারের কাজও পাবি না।
- দেখো মা এত কথা বলনা। তুমি শুধু বেশী কথা বলো।
এটা বলে সে তার রুমে চলে গেল। মাথা ঠান্ডা করার জন্য গান শুনবে বলে নেটে সার্চ দিলো। মাথা গরম বিধায় গানে সার্চ না দিয়ে তার নাম লিখেই ইউটিউবে সার্চ দিল। কি ব্যাপার? গান এলনো কেন? এগুলো কি এসেছে? ভালো মত খেয়াল করে দেখলো তার নামের সাথে মিল এক শায়খের বয়ান। মাউসে ক্লিক করে একটি বয়ান চালু করলো। শুরু হলো শায়খ তামিম আল আদনানী হাফিজাহুল্লাহর হৃদয়-স্পর্শী মধুমাখা বয়ান। “হে যুবক! আর কতদিন গাফেল থাকবে? কতদিন তুমার যৌবন থাকবে? তুমি কি বৃদ্ধ হবে না? হে যুবক! তুমি কি মরবে না? তুমাকে কি আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে হবে না? এসো! নামাজের দিকে। আল্লাহর দিকে।”
আদনান তন্ময় হয়ে শাইখের বয়ান শুনছে। তার মনো হলো, শাইখ যেন তাকেই সম্বোধন করে বলছে। বয়ানটা কয়েকবার শুনলো। শাইখের প্রত্যেকটি কথা তার কানে প্রতিধ্বনি হতে লাগলো। হৃদয়ে নাড়া দিল। চোখ থেকে কয়েকফোটা অশ্রু ঝরলো। শাইখের ভালোবাসা প্রোথিত হলো তার অন্তরে।
……… চলবে ইনশাআল্লাহ।
Comment