কিছু কথা,কিছু ব্যাথাঃআত্নসমালোচনা-১
দুই দিন যাবৎ দিল্লির চলমান পরিস্হিতি পর্যবেক্ষণ করছি।আমার মতো আরো অনেকেই পর্যবেক্ষণ করছেন।
পরিস্হিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি এবার আমি আরো একটা কাজ করেছি।
সেটা হল-অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতকে সামনে রেখে নিজের মন-মনন ও মানসিক অবস্হারও একটা পর্যবেক্ষণ করা।
এমন পরিস্হিতি এবারই প্রথম না।এর আগে অল্প পরিসরের এ জীবনে দেখতে হয়েছে আরাকান পরিস্হিতি,দেখতে হয়েছে শাহবাগ থেকে শাপলা চত্বর, বাবরি মসজিদ,লাল মসজিদ, জামিয়া হাফসা,ওয়াজিরিস্তান গণহত্যা,ফিলিস্তিনের গাজা গণহত্যা,সিরিয়ার দীর্ঘকাল যাবৎ চলা ট্রাজেডি,আসাদ বাহিনীর ভয়াবহ পৈশাচিক নির্যাতন।
এবং আরো অনেক অনেক দৃশ্য-চিত্র যার দাস্তান অনেক দীর্ঘ, ফিরিস্তি অনেক লম্বা।
অনেক গুনাহগার হওয়ার পরও অন্তত একজন মুমিন হিসেবে বারবার চোখ ভিজে ওঠেছে।
হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে ওঠেছে।সমস্ত ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে তছনছ হয়ে গেছে-কিন্তু..
কিন্তু এখন যে কথাটা বারবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে-তা হল এই ঘটনাগুলোর প্রতিক্রিয়া আমার জীবনে কতটুকু দীর্ঘস্হায়ী হয়েছে।
উপরোল্লিখিত প্রতিটি ঘটনাই যে কারো সমস্ত জীবনের গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।বরং ব্যক্তিগতভাবে পরিবর্তনের ছোঁয়ায় পাল্টে যাওয়া কোন একজন মুমিনের মাধ্যমে পুরো উম্মাহর সামগ্রিক সংগ্রামেও বড় ধরনের প্রভাবক হতে পারে। পুরনো ঘুনেধরা মরচে পড়া জীবনের অবসান ঘটিয়ে এক নতুন আলোকদ্বীপ্ত জীবনের সুচনার জন্য এক একটি উদ্দীপক ছিল।উম্মাহর সামগ্রিক বিজয়কে ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে "সৃষ্টির প্রসব বেদনার" মতো এক একটি নিয়ামক ছিল।
কিন্তু ব্যাক্তিগত ভাবে আমার জীবনে ফিকির করে আমি অনেক বেদনা নিয়ে আবিষ্কার করলাম-শুধুমাত্র হেফাজতে ইসলামের ইস্যুটা ব্যতিক্রম-(মহান রব্বে কারীমের ইচ্ছায় আমার জীবনের একটা পরিবর্তনের সুচনা এরপরে হয়েছে,কিন্তু রব্বে কারীমের নেয়ামতগুলোর যেন যথাযথ শোকর আদায় করতে পারছিনা।)
এ ছাড়া অন্যান্য দৃশ্যগুলোতে যেন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি- আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন এবং সংশোধন করে দিন-সাময়িক তীব্র প্রতিক্রিয়া শেষ হওয়ার পর যেন ভুলে যেতে শুরু করি, জীবনের দীর্ঘস্হায়ী, সর্বব্যাপী কোন পরিবর্তন কেন যেন করতে পারি না,কেন যেন বেদনাগুলো স্হায়ী হয়ে শক্তিতে পরিণত হয়না।বারবার নফসের কুমন্ত্রণায় মতজানু হয়ে পড়ি।
এমন একটা ঘটনা যখন ঘটে তখন হয়তো হৃদয়ের সবটুকু আকুতি নিয়ে রব্বে কারীমের দরবারে হাত তুলে দোয়া করা হয়,শেষ রাতে ঘুম ভেঙে গেলে তাহাজ্জুদ পড়া হয়, তাওহিদের হক্ব আদায়ের জন্য সাধ্যমতো চেটা করা হয়-কিন্তু কেন যেন তা স্হায়ী হয়না।
এটা ভাবা যায়-এত কিছুর পরও অঘোর ঘুমে রাত কেটে যায়,নফসের কাছে পরাজিত হয়ে গুনাহে লিপ্ত হওয়া যায়,মাঝে মাঝে দীর্ঘসময় দোয়া কান্নাকাটির কথা ভুলে গিয়ে গাফলতের দীর্ঘ চাদরে ডুবে থাকা যায়,খুশু-খুজু ছাড়াই ওয়াক্তের পর ওয়াক্ত সলাত পড়ে ফেলা যায়,নিজের ত্রুটি বিচ্যুতির যথাযথ অনুশোচনা হয়না, উম্মাহর এই সামগ্রিক সংগ্রামে শতগুন বেশি অাত্ননিয়োগ করা হয়না,স্হায়ী এক কল্যানময় পরিবর্তনের হাওয়া জীবনের সমস্ত আঙিনাটা জুড়ে বয়ে যায়না।আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন এবং সংশোধন করে দিন,আমীন।
এর একটা মৌলিক কারণ - চিন্তা ফিকির তাদাব্বুরে অভ্যস্ত না হওয়া।তাৎক্ষণিকভাবে অতটুকু চিন্তাই করা হয় যতটুকু করতে পরিস্হিতি আমাদের বাধ্য করে,নিভু নিভু করে জ্বলা ইমানী চেতনা এবং পরিপার্শ্বিক পরিস্হিতির কারণে চাইলেও মনকে তখন নির্দিষ্ট পরিস্হিতি থেকে অন্যদিকে ফেরানো যায়না।
কিন্তু ঘটনার ঘনঘটা কমে এলে খুব দ্রুত ভুলে যাই,অকল্পনীয় দ্রুত গতিতে ভুলে যাই।চিন্তাকে হায়ী রূপ দেওয়া এবং সর্বদা চিন্তাশীল হওয়া যেন একটা কঠিন বোঝার মতো হয়ে দাঁড়ায় মনের উপর,পেছনের চলে যাওয়া ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সবসময় নতুন নতুন চিন্তা নতুন নতুন ভাবনা নব নব প্ল্যান পরিকল্পনা তৈরী করা আর হয়ে ওঠেনা।অতি হালকা একটা দাগ ফেলেই মন থেকে বিদায় নেয় এত বড় বড় ঘটনাগুলো।
কিন্তু এ অবস্হা কিছুতেই কাম্য হতে পারেনা,নিশ্চয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে চিন্তার ক্ষণস্হায়িত্ব আর গাফলতের স্হায়িত্ব কিছুতেই প্রিয় হতে পারেনা।
বরং আল্লাহ যখন বান্দার অন্তরে ভালো কোন প্রতিক্রিয়া ঢেলে দেন তখন তার শুকরিয়া জ্ঞাপনের পদ্ধতি হল তাকে স্হায়ী ভালোতে রূপ দেওয়া আর কোনোভাবেই ভুলে না যাওয়া।তাৎক্ষণিক মুহূর্তে যা কিছু দায়িত্ব ছিল-কিন্তু আদায় করা সম্ভব হয়নি,যা কিছু করণীয় ছিল কিন্তু অক্ষমতার কারণে করা যায়নি-সেসব আদায়ের চেষ্টা ও ফিকির করতে থাকা,অক্ষমতাগুলোকে কাটিয়ে উঠে দায়িত্ব আদায়ে লেগে যাওয়া।এর জন্য দরকার প্রত্যয়,চিন্তার স্হায়ীত্ব ও ইচ্ছার দৃঢ়তা।এর চেয়েও বেশি দরকার রব্বে কারীমের রহমত ও তাওফিক আর এর জন্য প্রয়োজন তাঁর কাছে কাতর প্রার্থনা ও সবিনয় মিনতি।
সাইয়েদুনা হামজা রাদিয়াল্লাহু আনহুর জীবনে পরিবর্তন এসেছিল একটি মাত্র ঘটনাকে কেন্দ্র করে- কিন্তু সেটা তাকে নিয়ে গিয়েছিল স্হায়ী কল্যাণের পথে।তিনি উন্নতির পথে উত্তরোত্তর আরোহণ করে গেছেন আর রব্বে কারীমের দরবারে শ্রেষ্ঠতম শহীদ হিসেবে তার নামটি লেখা হয়েছে।
রব্বে কারীম যেন আমাদের জীবনেও পরিবর্তন ও প্রতিক্রিয়াগুলোকে স্হায়ীভাবে কল্যাণকর বানিয়ে দেন আর আমাদেরকে দান করুন সঠিক চিন্তা,দৃঢ় ইচ্ছা আর প্রত্যয়ের নিআমত।আমীন।
দুই দিন যাবৎ দিল্লির চলমান পরিস্হিতি পর্যবেক্ষণ করছি।আমার মতো আরো অনেকেই পর্যবেক্ষণ করছেন।
পরিস্হিতি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি এবার আমি আরো একটা কাজ করেছি।
সেটা হল-অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যতকে সামনে রেখে নিজের মন-মনন ও মানসিক অবস্হারও একটা পর্যবেক্ষণ করা।
এমন পরিস্হিতি এবারই প্রথম না।এর আগে অল্প পরিসরের এ জীবনে দেখতে হয়েছে আরাকান পরিস্হিতি,দেখতে হয়েছে শাহবাগ থেকে শাপলা চত্বর, বাবরি মসজিদ,লাল মসজিদ, জামিয়া হাফসা,ওয়াজিরিস্তান গণহত্যা,ফিলিস্তিনের গাজা গণহত্যা,সিরিয়ার দীর্ঘকাল যাবৎ চলা ট্রাজেডি,আসাদ বাহিনীর ভয়াবহ পৈশাচিক নির্যাতন।
এবং আরো অনেক অনেক দৃশ্য-চিত্র যার দাস্তান অনেক দীর্ঘ, ফিরিস্তি অনেক লম্বা।
অনেক গুনাহগার হওয়ার পরও অন্তত একজন মুমিন হিসেবে বারবার চোখ ভিজে ওঠেছে।
হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে ওঠেছে।সমস্ত ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে তছনছ হয়ে গেছে-কিন্তু..
কিন্তু এখন যে কথাটা বারবার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে-তা হল এই ঘটনাগুলোর প্রতিক্রিয়া আমার জীবনে কতটুকু দীর্ঘস্হায়ী হয়েছে।
উপরোল্লিখিত প্রতিটি ঘটনাই যে কারো সমস্ত জীবনের গতিপথ ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল।বরং ব্যক্তিগতভাবে পরিবর্তনের ছোঁয়ায় পাল্টে যাওয়া কোন একজন মুমিনের মাধ্যমে পুরো উম্মাহর সামগ্রিক সংগ্রামেও বড় ধরনের প্রভাবক হতে পারে। পুরনো ঘুনেধরা মরচে পড়া জীবনের অবসান ঘটিয়ে এক নতুন আলোকদ্বীপ্ত জীবনের সুচনার জন্য এক একটি উদ্দীপক ছিল।উম্মাহর সামগ্রিক বিজয়কে ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে "সৃষ্টির প্রসব বেদনার" মতো এক একটি নিয়ামক ছিল।
কিন্তু ব্যাক্তিগত ভাবে আমার জীবনে ফিকির করে আমি অনেক বেদনা নিয়ে আবিষ্কার করলাম-শুধুমাত্র হেফাজতে ইসলামের ইস্যুটা ব্যতিক্রম-(মহান রব্বে কারীমের ইচ্ছায় আমার জীবনের একটা পরিবর্তনের সুচনা এরপরে হয়েছে,কিন্তু রব্বে কারীমের নেয়ামতগুলোর যেন যথাযথ শোকর আদায় করতে পারছিনা।)
এ ছাড়া অন্যান্য দৃশ্যগুলোতে যেন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি- আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন এবং সংশোধন করে দিন-সাময়িক তীব্র প্রতিক্রিয়া শেষ হওয়ার পর যেন ভুলে যেতে শুরু করি, জীবনের দীর্ঘস্হায়ী, সর্বব্যাপী কোন পরিবর্তন কেন যেন করতে পারি না,কেন যেন বেদনাগুলো স্হায়ী হয়ে শক্তিতে পরিণত হয়না।বারবার নফসের কুমন্ত্রণায় মতজানু হয়ে পড়ি।
এমন একটা ঘটনা যখন ঘটে তখন হয়তো হৃদয়ের সবটুকু আকুতি নিয়ে রব্বে কারীমের দরবারে হাত তুলে দোয়া করা হয়,শেষ রাতে ঘুম ভেঙে গেলে তাহাজ্জুদ পড়া হয়, তাওহিদের হক্ব আদায়ের জন্য সাধ্যমতো চেটা করা হয়-কিন্তু কেন যেন তা স্হায়ী হয়না।
এটা ভাবা যায়-এত কিছুর পরও অঘোর ঘুমে রাত কেটে যায়,নফসের কাছে পরাজিত হয়ে গুনাহে লিপ্ত হওয়া যায়,মাঝে মাঝে দীর্ঘসময় দোয়া কান্নাকাটির কথা ভুলে গিয়ে গাফলতের দীর্ঘ চাদরে ডুবে থাকা যায়,খুশু-খুজু ছাড়াই ওয়াক্তের পর ওয়াক্ত সলাত পড়ে ফেলা যায়,নিজের ত্রুটি বিচ্যুতির যথাযথ অনুশোচনা হয়না, উম্মাহর এই সামগ্রিক সংগ্রামে শতগুন বেশি অাত্ননিয়োগ করা হয়না,স্হায়ী এক কল্যানময় পরিবর্তনের হাওয়া জীবনের সমস্ত আঙিনাটা জুড়ে বয়ে যায়না।আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন এবং সংশোধন করে দিন,আমীন।
এর একটা মৌলিক কারণ - চিন্তা ফিকির তাদাব্বুরে অভ্যস্ত না হওয়া।তাৎক্ষণিকভাবে অতটুকু চিন্তাই করা হয় যতটুকু করতে পরিস্হিতি আমাদের বাধ্য করে,নিভু নিভু করে জ্বলা ইমানী চেতনা এবং পরিপার্শ্বিক পরিস্হিতির কারণে চাইলেও মনকে তখন নির্দিষ্ট পরিস্হিতি থেকে অন্যদিকে ফেরানো যায়না।
কিন্তু ঘটনার ঘনঘটা কমে এলে খুব দ্রুত ভুলে যাই,অকল্পনীয় দ্রুত গতিতে ভুলে যাই।চিন্তাকে হায়ী রূপ দেওয়া এবং সর্বদা চিন্তাশীল হওয়া যেন একটা কঠিন বোঝার মতো হয়ে দাঁড়ায় মনের উপর,পেছনের চলে যাওয়া ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় সবসময় নতুন নতুন চিন্তা নতুন নতুন ভাবনা নব নব প্ল্যান পরিকল্পনা তৈরী করা আর হয়ে ওঠেনা।অতি হালকা একটা দাগ ফেলেই মন থেকে বিদায় নেয় এত বড় বড় ঘটনাগুলো।
কিন্তু এ অবস্হা কিছুতেই কাম্য হতে পারেনা,নিশ্চয় আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে চিন্তার ক্ষণস্হায়িত্ব আর গাফলতের স্হায়িত্ব কিছুতেই প্রিয় হতে পারেনা।
বরং আল্লাহ যখন বান্দার অন্তরে ভালো কোন প্রতিক্রিয়া ঢেলে দেন তখন তার শুকরিয়া জ্ঞাপনের পদ্ধতি হল তাকে স্হায়ী ভালোতে রূপ দেওয়া আর কোনোভাবেই ভুলে না যাওয়া।তাৎক্ষণিক মুহূর্তে যা কিছু দায়িত্ব ছিল-কিন্তু আদায় করা সম্ভব হয়নি,যা কিছু করণীয় ছিল কিন্তু অক্ষমতার কারণে করা যায়নি-সেসব আদায়ের চেষ্টা ও ফিকির করতে থাকা,অক্ষমতাগুলোকে কাটিয়ে উঠে দায়িত্ব আদায়ে লেগে যাওয়া।এর জন্য দরকার প্রত্যয়,চিন্তার স্হায়ীত্ব ও ইচ্ছার দৃঢ়তা।এর চেয়েও বেশি দরকার রব্বে কারীমের রহমত ও তাওফিক আর এর জন্য প্রয়োজন তাঁর কাছে কাতর প্রার্থনা ও সবিনয় মিনতি।
সাইয়েদুনা হামজা রাদিয়াল্লাহু আনহুর জীবনে পরিবর্তন এসেছিল একটি মাত্র ঘটনাকে কেন্দ্র করে- কিন্তু সেটা তাকে নিয়ে গিয়েছিল স্হায়ী কল্যাণের পথে।তিনি উন্নতির পথে উত্তরোত্তর আরোহণ করে গেছেন আর রব্বে কারীমের দরবারে শ্রেষ্ঠতম শহীদ হিসেবে তার নামটি লেখা হয়েছে।
রব্বে কারীম যেন আমাদের জীবনেও পরিবর্তন ও প্রতিক্রিয়াগুলোকে স্হায়ীভাবে কল্যাণকর বানিয়ে দেন আর আমাদেরকে দান করুন সঠিক চিন্তা,দৃঢ় ইচ্ছা আর প্রত্যয়ের নিআমত।আমীন।
Comment