ভাইয়ের দুঃখে দিল কাঁদে না- আমি কেমন ঈমানদার
জিহাদের কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু জিহাদ মানে কি আমরা ফিকির করেছি কি? ফিকির করলে বুঝবো, জিহাদ মানে আমার ভাইয়ের জন্য জীবন দেয়া। আমার মুসলিম ভাইয়ের জন্য। চিন্তা করুন, দুনিয়ার এক প্রান্তে আমার কিছু মুসলিম ভাই বোন নির্যাতিত। আল্লাহ তাআলা তাদের উদ্ধারের জন্য আমার উপর জিহাদ ফরয করেছেন।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاءِ وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ وَلِيًّا وَاجْعَلْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ نَصِيرًا
“তোমাদের কী হলো! তোমরা কিতাল করছো না আল্লাহর রাস্তায় এবং ঐ সকল অসহায় নর-নারী ও শিশুদের (উদ্ধারের) জন্য? যারা (ফরিয়াদ করে) বলে, ‘হে আমাদের রব! আমাদেরকে বের করে নিন এ জনপদ থেকে, যার অধিবাসীরা যালিম। আমাদের জন্য আপনার পক্ষ থেকে কোনো অভিভাবক নির্ধারণ করে দিন এবং নিযুক্ত করে দিন আপনার পক্ষ থেকে কোনো সাহায্যকারী।” -নিসা ৭৫আয়াতে কারীমাটিতে আবারও ফিকির করুন। নির্যাতিত কে? আমিও নই, আমার পরিবারও নয়, আমার বংশও নয়। এমনকি আমার অধিবাস ভূমিরও কেউ নয়। এমন কিছু লোক যাদেরকে আমি কখনও দেখিনি। শুধু এতটুকু জানি যে, তারা মুসলিম। আর এতটুকু যে, তারা নির্যাতিত। আল্লাহ তাআলা কি বলছেন? আল্লাহ তাআলা বলছেন, তাদের উদ্ধারের জন্য কিতাল কর। আর আমি কেন করছি না এজন্য আল্লাহ তাআলা আমাকে তিরস্কার করছেন। আমার কাছে কৈফিয়ত তলব করছেন। জবাবদিহি চাচ্ছেন কেন করছি না।
আল্লাহ তাআলা কি শব্দটি ব্যবহার করেছেন দেখেছেন তো? وَمَا لَكُمْ لَا تُقَاتِلُونَ- তোমাদের কী হলো! তোমরা কিতাল করছো না?
কিতাল মানে কি? আমি তাকে কতল করতে চাই, সে আমাকে কতল করতে চায়। এর নাম কিতাল। জীবন দেয়া নেয়ার খেলা। আল্লাহ তাআলা আমাকে ধমক দিচ্ছেন, কেন আমি আমার মুসলিম ভাইয়ের জন্য আমার প্রাণটা দিয়ে দেয়ার খেলায় নামছি না। দেখুন! শুধু বয়ান বক্তৃতা না কিন্তু। জীবন দেয়া নেয়ার খেলা। কাদের জন্য? কিছু মুসলিম ভাই বোনের জন্য। যাদেরকে আমি কখনও দেখিনি। যাদেরকে আমি চিনি না। আমার রব তাদের চেনেন। আমার রবের উপর তাদের ঈমান আছে। আমার রবের সাথে তাদের বন্ধুত্ব আছে। তারা আমার রবকে ভালবাসেন। আমার রবও তাদের ভালবাসেন। আমার রবের সেই প্রিয় বন্ধুদের উদ্ধারের জন্য তিনি আমাকে আদেশ দিয়েছেন। শুধু বয়ান বক্তৃতা নয়। শুধু পোস্ট কলম নয়। জীবন দেয়া আর জীবন নেয়ার।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا
“আল্লাহ তাআলা যারা ঈমান এনেছে তাদের বন্ধু।” –বাকারা ২৫৭
“আল্লাহ তাআলা যারা ঈমান এনেছে তাদের বন্ধু।” –বাকারা ২৫৭
এবার আমি নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি কি আল্লাহকে ভালবাসি? যদি ভালবেসে থাকি তাহলে তার বন্ধুদেরকেও ভালবাসতে হবে। নয়তো আল্লাহর সাথে বন্ধুত্ব থাকবে না। আমার বন্ধুদের যে ভালবাসে না, তাদের বিপদে যে এগিয়ে আসে না, সে আমার বন্ধু হতে পারে না। যদি আমি ঈমানের দাবিতে সত্য হয়ে থাকি তাহলে আল্লাহর বন্ধুদের ভালবাসতে হবে। তাদের বিপদে এগিয়ে আসতে হবে। আল্লাহর সাথে যেমন বন্ধুত্ব তাদের সাথেও বন্ধুত্ব। তারাও আমার বন্ধু। তাই সকল মুমিন আমার বন্ধু। আমি তাদের চিনি আর না চিনি তারা আমার বন্ধু। এ বন্ধুত্ব আল্লাহ তাআলার জন্য। এ বন্ধুত্ব আল্লাহ তাআলার নির্দেশ।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ
“মুমিন নর-নারীরা একে অপরের বন্ধু।” -তাওবা ৭১
“মুমিন নর-নারীরা একে অপরের বন্ধু।” -তাওবা ৭১
আরো ইরশাদ করেন,
إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ
“মুমিনগণ পরস্পরে ভাই ভাই।” -হুজরাত ১০
“মুমিনগণ পরস্পরে ভাই ভাই।” -হুজরাত ১০
কেমন বন্ধু আর কেমন ভাই? তাদের সুখ আমার সুখ। তাদের দুঃখ আমার দুঃখ। তাদের পায়ে কাঁটা বিঁধলে আমার কলিজায় আঘাত লাগে। তাদের গায়ে জ্বর আসলে আমার ঘুম হারাম হয়ে যায়।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ চিত্রটিই তুলে ধরেছেন,
مثل المؤمنين فى توادهم وتراحمهم وتعاطفهم مثل الجسد إذا اشتكى منه عضو تداعى له سائر الجسد بالسهر والحمى
“পরস্পর ভালবাসা, রহমত ও সাহায্যের বেলায় মুমিনদের অবস্থা একটি দেহের মতো। তার কোন অঙ্গ অসুস্থ হলে গোটা দেহ বিনিদ্রা ও জ্বরাক্রান্ত হয়ে পড়ে।” -সহীহ বুখারি ৫৬৬৫, সহীহ মুসলিম ৬৭৫১গোট মুসলিম জাতি এক দেহ। আমার নিজের দেহ নিজের প্রাণ আমার কাছে যেমন প্রিয় তারাও আমার কাছে এমনই প্রিয়। আমার চোখে ব্যথা হলে যেমন ঘুম আসে না, কোনো মুমিনের গায়ে আঘাত আসলেও তেমনি আমার ঘুম আসে না। যেন তারাই আমি আমিই তারা। তারা ভিন্ন কেউ নয় আমি ভিন্ন কেউ নই। এক দেহ এক প্রাণ।
আশ্চর্যের বিষয়, দুনিয়ার কোথাও একটা কাফেরের উপর আঘাত আসলে সারা দুনিয়ার কুফফার গোষ্ঠীর হৈ চৈ শুরু হয়ে যায়। কুফরের বাঁধন তাদেরকে এক ডোরে বেঁধে ফেলেছে। কিন্তু আমি মুমিন, আমার মুমিন ভাইয়ের ব্যথায় আমার ব্যথা নেই। এই আমার ঈমানের হাল।
আল্লাহর কসম! আমার ভাইয়ের পায়ের কাঁটা আমার গায়ে ব্যথা না দিলে আমি মুমিন হতে পারবো না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী পরিষ্কার,
لا تدخلون الجنة حتى تؤمنوا ولا تؤمنوا حتى تحابوا.
“যতক্ষণ তোমরা মুমিন না হবে, জান্নাতে যেতে পারবে না। আর মুমিন ততক্ষণ হতে পারবে না, যতক্ষণ একে অপরকে ভাল না বাসবে।” –সহীহ মুসলিম ২০৩অন্যত্র ইরশাদ করেন,
والذى نفسى بيده لا يؤمن عبد حتى يحب لأخيه ما يحب لنفسه
“ঐ জাতে পাকের কসম যার হাতে আমার জান, কোনো বান্দা মুমিন হতে পারবে না যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তাই পছন্দ করে যা তার নিজের জন্য করে।” –সহীহ মুসলিম ১৮০আমি ঈমানের দাবিদার, কিন্তু আমার ভাইয়ের দুঃখে আমার দিল কাঁদে না, বুঝতে হবে আমার ঈমানে যথেষ্ট কমতি আছে।
আজ যদি আমি বন্দি হতাম? আমার ভাইকে যদি ধরে নেয়া হতো? কিংবা আমার বোনকে যদি তুলে নেয়া হতো? তাহলে আমার কি হাল হতো? আজ আরাকান-কাশ্মির-হিন্দের ভাই বোনদের জন্য আমার দিল কাঁদে না। বুঝতে হবে আমার ঈমান দুর্বল হয়ে আছে। যতটুকু আল্লাহ তাআলার নির্দেশ ততটুকু ঈমান আমার হাসিল হয়নি। আল্লাহ তাআলার মহব্বতের দাবিতে আমি এখনও পূর্ণ সত্যবাদি নই।
আমি অনেক বড় কেউ হতে পারি, কিন্তু আল্লাহ তাআলার দরবারে আমি এখনও অপরাধী। এ অপরাধের খাতা থেকে নাম কাটাবার একটাই পথ, ভাইয়ের পাশে দাঁড়ানো। আমার জান নিয়ে। আমার মাল নিয়ে। প্রয়োজনে ঘর ছেড়ে, বাড়ি ছেড়ে। পরিবার পরিজন আত্মীয় স্বজনকে বিদায় জানিয়ে হিজরত করে। অন্যথায় রাব্বুল আলামিনের সেই ওয়াদার অপেক্ষায় থাকি, যে ওয়াদা তিনি করেছেন- আর আল্লাহ তার ওয়াদায় ব্যতিক্রম করেন না-
قُلْ إِنْ كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ
“বলুন (হে নবী!) তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের সে সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, আর সে ব্যবসা যার মন্দা হওয়ার আশঙ্কা তোমরা করছ এবং সে বাসস্থান যা তোমরা পছন্দ করছ- যদি (এগুলো) তোমাদের কাছে অধিক প্রিয় হয় আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে, তবে তোমরা অপেক্ষা কর আল্লাহ তাআলার (আযাবের) ঘোষণা আসা পর্যন্ত। আর আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।” -তাওবা ২৪***
كيف القرار وكيف يهدأ مسلم ... والمسلمات مع العدو المعتدي
الضاربات خدودهن برنة ... الداعيات نبيهن محمد
القائلات إذا خشين فضيحة ... جهد المقالة ليتنا لم نولد
ما تستطيع وما لها من حيلة ... إلا التستر من أخيها باليد
# কিভাবে স্থির থাকা যায়? কিভাবে কোনো মুসলিম শান্তিতে থাকতে পারে? যেখানে মুসলিম নারীরা সীমালঙ্গনকারী শত্রুদের হাতে বন্দী?!
# তারা তাদের নবী মুহাম্মাদকে ডেকে ডেকে মুখ চাপড়িয়ে রোনাজারি করে কাঁদছে।
# সম্ভ্রমহানির ভয়ে যখন তারা শঙ্কিত, শত আফসোস করে বলছে, হায়! যদি আমাদের জন্মই না হত!
# নেই তার কোন শক্তি, নেই কোন উপায়। হাত ঠেকিয়ে ভাই থেকে মুখ লুকানো ছাড়া কিছুই নেই করার।
***
Comment