ইবাদাত আল্লাহ তায়ালার জন্যে নাকি করোনা’র জন্যে
আমরা সবাই জানি, করোনা গোত্রীয় এক ভাইরাস কিছু দেশের ব্যপক ভাবে ছড়িয়েছে বাকি আরো অনেক দেশ ছড়ানোর আশংকায় রয়েছে। এই মুহুর্তে সবার উপর করনীয় কি হবে তা নিয়ে আমাদের দেশে অনেক মতানৈক্য রয়েছে। কেহ অতি সতর্ক হয়ে কয়েক মাসের খাবার কিনে ঘরে বন্দি হয়ে যাচ্ছেন আবার অনেকে রয়েছেন অতি বেখেয়ালে। অনেকে ভাবছেন করোনা সংক্রমন অসম্ভব আবার অনেকে ভাবছেন করোনা থেকে বাচার কোন রাস্তা নেই।
এই ব্যপারে শরিয়াতের দৃষ্টিভঙ্গি জানার জন্যে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি আলোচনা করা হয়ে তা সংক্রমন নিয়ে প্রশিদ্ধ একটি হাদীস। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ (لا عدوي و لا طيرة)। এই হাদিসের শুরুতে لا শব্দটি নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। প্রচলিত অর্থে এটাকে “নফী জিনস” এর জন্যে ধরে অর্থ করা হয়; (সংক্রমন রোগ ও কুলক্ষণ বলতে কিছু নেই।) কিন্তু হাদীসের পরের অংশের দিকে খেয়াল করলে পূর্নভাবে সংক্রমনকে অস্বীকার করা হয়েছে বুঝা যায় না। কারণ এই হাদীসের এক বর্ননায় রয়েছে, (এক সাহাবী জিজ্ঞাস করলেনঃ অসুস্থ উট যখন সুস্থ উটের কাছে যায় তখন সব অসুস্থ হয়ে পরে কেন? তখন রাসূল আলাইহিস সালাম বলেছেনঃ প্রথম উটটির রোগ সৃষ্টি করল কে?) উত্তরের মধ্যে সরাসরি সংক্রমনকে অস্বিকার করে বলা হয় নি, প্রত্যেকটা উটকেই আল্লাহ তায়ালা সরাসরি অসুস্থ করেন। বরং বলা হচ্ছে, কোন ভাইরাস নিজে থেকেই সংক্রমন শুরু করতে পারে না, আল্লাহ তায়ালা যখন তাঁকে অনুমতি দিয়ে প্রথম ঊটে রোগাক্রান্ত করেন তখন সেটা সংক্রমিত হতে থাকে।
হাদীসের শেষে অন্য উটগুলোকে অসুস্থ উট থেকে দূরে রাখার আদেশ থেকেও এমনটাই স্পষ্ট হয়। এই হাদীসের আরেক বর্ননার শেষ রয়েছেঃ (কুষ্ঠরোগী থেকে দূরে থাক, যেভাবে বাঘ থেকে দূরে থাক) যদি সংক্রমন বলতে কিছু নাই থাকত তাহলে দূরে রাখতে ও থাকতে বলা হত না। যার ফলে বর্তমানের সব আলেমরাই এই হাদীসের অর্থ করছেনঃ (আল্লাহর ইচ্ছা ছাড়া সংক্রমন বলতে কিছু নাই) অর্থাৎ অন্য সকল রোগের মত সংক্রমন রোগটাও আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছাতেই ছড়াতে থাকে।
অনেক মুফাসসির لا শব্দটাকে ‘নাহী’র জন্যে ধরে অর্থ করেছেনঃ (কেহ যাতে অন্যকে সংক্রমন না করে) যেমনটা হজ্জের আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ (فَلَا رَفَثَ وَلَا فُسُوقَ وَلَا جِدَالَ فِي الْحَجِّ) (স্ত্রীর সাথে সহবাস করবে না, অশোভন কাজ করবে না ও ঝগড়া করবে না হজ্জের মধ্যে) আর এই অর্থের ক্ষেত্রে পূর্বের মত তা’বীল করে সংক্রমনকে স্বীকার করার দরকার নেই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের অন্যান্য হাদীসেও মহামারী নিয়ে যে সমস্ত আদেশ এসেছে, তা থেকেও সংক্রমনকে ইসলাম স্বীকার করে নেয়া বুঝা যায়। যেমনঃ (অসুস্থ ব্যক্তি যেন সুস্থ ব্যক্তির কাছে না যায়)। সাক্বীফ গোত্রের লোকেরা যখন ইসলাম গ্রহন করতে আসে তখন তাদের মাঝে একজন ভাইরাসে আক্রান্ত ছিল। তখন উনার থেকে সরসারি বায়আত না নিয়ে দূর থেকে বায়আত গ্রহনের কথা বলে সংবাদ পাঠান।
ইসলাম বাহ্যিক সংক্রমনের পাশাপাশি মানসিক ও আভ্যন্তরিন সংক্রমনকেও স্বীকার করে। হাদীসে এসেছেঃ (সালেহ ব্যক্তির সংসর্গ হল মেশক বিক্রেতার মত, তাঁর থেকে কিছু না পেলেও সুঘ্রান পাবে। এবং খারাপ ব্যক্তির সংসর্গ হল কামারের মত, যদি কালি না লাগে অন্তুত ধোয়া লাগবেই) এই জন্যে তাওহীদের ক্ষেত্রে তাগুত্বের সংসর্গ ত্যাগ করাকে ঈমানের অংশ বানিয়ে দেয়া হয়েছে। আর সঠিক ইলম ও ফিক্বহের জন্যে জিহাদ ছেড়ে বসে থাকা ব্যক্তিদের সংসর্গ অপছন্দ করাকে আবশ্যক করে দেয়া হয়েছে।
এই সংক্রমন থেকে বাচার জন্যে আমাদের করনীয় কি হবে তা নিয়ে অনেক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে, যা আসবাব হিসেবে মান্য করা আবশ্যক। কারণ আমাদের শরীরের মালিক আমরা নই যে, যেমন ইচ্ছা ব্যবহার করতে পারব, তাই সতর্কতার আল্লাহ তায়ালার সম্পদকে রক্ষা করা সবার উপর আবশ্যক। আর যদি অবহেলায় আমাদের মাধ্যমে অন্য কাহারো সংক্রমন হয়, তাহলে আখেরাতে এর দায়ভার কোনভাবে এড়ানো যাবে বলে মনে হয় না। করোনা সংক্রমন থেকে বাচার জন্যে করনীয়ের ক্ষেত্রে আমাদের সামনে সবচেয়ে বড় উদাহারণ হতে পারে উমর রাজিঃ এর সময়ের মহামারী থেকে সুস্থতার স্বীদ্ধান্তগুলো।
উমর রাজিঃ এর সময়ে শামের আমওয়াস নামক স্থানে ব্যপক ভাবে মহামারী ছড়িয়ে গেলে তা কোনভাবে ঠেকানো যাচ্ছিল না। ২৫ হাজার ও কোন বর্ননামতে ৬০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিল। শুধু খালেন রাজিঃর ৪০ জন সন্তান মারা গিয়েছিল, আবু উবাইদাহ ও মুয়াজ বিন জাবাল রাজিঃ সহ ১০ হাজার সাহাবী মারা গিয়েছিলেন। কোনভাবেই ডাক্তাররা এর কোন সমাধান বের করতে পারছিলেন না। শেষে উমর রাজিঃ তখনকার সময়ে পূরা আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ বুদ্ধিমান আমর বিন আ’স রাজিঃকে ডাক্তার না হওয়া সত্বেও এই ভাইরাসের সমাধান বের করতে চিঠি লিখেন। তখন আমর রাজিঃ এমন সমাধান বের করেন যার ফলে তিন দিনেই মহামারী বন্ধ হয়ে যায়।
তিনি বলেনঃ আমি খুব ভাল করে লক্ষ্য করে দেখলাম মহামারী ছড়ায় ১/ মানুষের জনসমাগমে ২/ ঘর-বাড়িতে, পাহাড় ও মরুভূমিতে রোগ ছড়ায় না। তাই তিনি আদেশ দিলেন; সবাই যাতে শহর ছেড়ে পাহাড় ও মরুভূমিতে ছড়িয়ে পরে এবং কোন ২ ব্যক্তি যাতে একসাথে না থাকে। যার ফলে তিন দিনেই মহামারী শেষ হয়ে যায়। আমরা যদি বর্তমান করোনা অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উনার স্বীদ্ধান্তকে যাচাই করি তাহলে দেখব, উনার সমাধান এতটাই পার্ফেক্ট ছিল যা আজ পর্যন্ত কেহ এর থেকে ভাল সমাধান দিতে পারে নি। প্রত্যেক ব্যক্তি একে অপরের থেকে আলাদা হওয়ার বিষয়টা তো সবাই বুঝি, আর ঘরের আসবাব-পত্রে ভাইরাস যত ধীর্ঘ সময় অবস্থান করতে পারে, পাহাড়ে-মরূভূমিতে ধূলার উপরে তেমনটা সম্ভব নয়। আর এত বিশাল এলাকায় একজনের ভাইরাসের উপরে আরেকজনের হাতের স্পর্শের সম্ভাবনাও তেমন নেই। আর এই অভুতপূর্ব কাজের ফলে তখনকার সময়ে ভাইরাস সনাক্ত করে আলাদা করা বা কীটনাশক স্প্রে করা ছাড়াই সব সমাধান হয়ে গিয়েছিল।
এই ঘটনা থেকে আমাদেরকেও শিক্ষ গ্রহন করে যতটা সম্ভব খুলা স্থানে থাকা ও প্রত্যেক ব্যক্তি থেকে দূরে থাকা উচিত। কারণ করোনা ভাইরাস আলামত প্রকাশ করা ছাড়াই অনেক দিন টিকে থাকতে পারে। তাঁর মানে শুধু অসুস্থ মানুষ থেকে দূরে থাকলেই চলবে না, সুস্থ মানুষরাও ১৪ দিন আলাদা থাকতে হবে যদি ব্যপক ভাবে সমাজে ছড়িয়ে পরে। সেই সাথে বিশেষ ভাবে চেহাড়াকে হাত-কাপড় সহ যেকোন জিনিসের স্পর্শ থেকে বাচিয়ে রাখতে হবে।
সালাফরা বলেছেনঃ মহামারী ঈমানের জন্যে ফিতনা হিসেবে অবতির্ন হয়। বর্তমানে আমাদের সমাজেও করোনা ভাইরাসের ফলে মৌলিক কয়েক ধরনের আকীদাগত সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
প্রথমত এই সমস্ত সতর্কতার কথা বললেই অনেকে বলেন, আপনার মধ্যে কোন তাওয়াক্কুল নেই। এটা সম্পূর্ন ভূয়া কথা, আসবাব গ্রহন ছাড়া তো তাওয়াক্কুলই হবে না। আমরা যত বেশি আসবাব গ্রহন করব তত বেশি তাওয়াক্কুল হবে। কারণ তাওয়াক্কুল হচ্ছেঃ (আসবাব গ্রহনের পর আসবাবের উপর থেকে ভরসা উঠিয়ে পূর্নভাবে আল্লাহ তায়ালার উপরে ভরসা করা) যে যত বেশি আসবাব গ্রহন করবে তাঁর আল্লাহ তায়ালার উপরে মানসিক ভাবে ভরসা করতে তত কষ্ট হবে, আর এই দৃশ্যমান বিষয়ের উপর থেকে বিশ্বাস উঠিয়ে অদৃশ্যের উপরে বিশ্বাসের নামই তাওয়াক্কুল।
আবার অনেকে মাস্ক লাগিয়ে, হাইড্রোক্লোরুকুইন ঔষুধ আর কয়েক বস্তা চাল কিনে ভাবতে থাকে, ভাইরাস আমাকে কোন ক্ষতিই করতে পারবে না। তারা এখানে আসবাবের উপরেই পূর্ন ভরসা করে ফেলছেন, যা ঈমানের জন্যে ক্ষতিকর। বরং এই বিশ্বাস রাখতে হবে, আমরা যতই মানুষ থেকে দূরে থাকি বা মাস্ক ব্যবহার করি আর সাবান ব্যবহার করি, আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা হলে কোন কিছুই আমাকে রোগ থেকে বাচাতে পারবে না। হাদীসে শেষ অংশে; (প্রথমটাকে কে আক্রান্ত করল?) এর দ্বারা আল্লাহর রাসূল আলাইহিস সালাম আমাদেরকে এই বিষয়টা বুঝাতে চেয়েছেন। এখানে সব আসবাব গ্রহন করেও পূর্ন তাওয়াক্কুল করতে হবে।
অনেকে বলছেন, মুসলিমকে কোনভাবেই আক্রান্ত হবে না, উজু-নামাজ তাঁকে বাচিয়ে রাখবে। যদি এমন হয় তাহলে সাহাবীরা কেন মারা গিয়েছেন তাঁর উত্তর তাদের কাছে নেই। অনেকে এমনটাও বলে ফেলছেন; যদি আমরা আক্রান্ত হই তাহলে কুরআন-হাদীস মিথ্যা হয়ে যাবে বা আক্রান্ত ব্যক্তি কাফের ও মুনাফিক হিসেবে গন্য হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এই সমস্ত জাহালত থেকে রক্ষা করুন। সালাত ও সবর আল্লাহ কাছে সাহায্য চাওয়ার মাধ্যম, এগুলো আমাদেরকে রক্ষা করতে পারে না। তাই উজু, দোয়া, সালাত ও আজকার আদায়কে শুধু আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার মাধ্যমের মধ্যেই স্বীমাবদ্ধ রাখতে হবে।
আবার অনেকে এতটাই হতাশ যে, ভাবছেন বাচার কোন আশাই নেই। তাই মৃত্যুর জন্যে প্রস্তুতি নিয়ে বসে আছেন। আল্লাহ তায়ালার রহমত থেকে এমনভাবে হতাশ হয়ে যাওয়াও কুফুরীর দিকে ধাবিত করে। কারণ এখানে ভাইরাসকে সর্বোচ্চ শক্তিশালী ভাবা হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালার রহমতের ব্যপারে নিরাশা তৈরি হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালার ব্যপারে উত্তম ধারনা করা হচ্ছে না বরং ভুল ধারনা করা হচ্ছে।
মহামারীতে মারা গেলে শাহাদাতের মর্যাদা লাভের কথা এসেছে হাদীসে। আল্লাহর পথে শাহাদাতের মর্যাদা অনেক, কিন্তু সেই সাথে আমাদের মনে রাখতে আল্লাহর পথে মৃত্যু বরনের চেয়ে আল্লাহর পথে বেচে থেকে দ্বীন প্রতিষ্ঠার মেহনত করে যাওয়ার ফজিলত অনেক বেশি। আবু বকর রাজিঃ শহীদ ছিলেন না, তারপরেও তিনি কিন্তু উম্মতের সবার চেয়ে বেশি মর্যাদাবান। কুরআনেই তো সিদ্দীকদের মর্যাদা শহীদদের থেকে বেশি বলা হয়েছে। তাই হতাশ হয়ে শাহাদাতের মৃত্যু কামনার চেয়ে ঈমানের সাথে সিদ্দীকের মত বেচে থাকার তাওফীক কামনা করতে হবে।
করোনা ভাইরাসের লক্ষন হচ্ছে, প্রথম ১/২ দিন জ্বর হয় ও সাথে মাথা ব্যথ্যা ও সর্দি হতে পারে। ৩,৪ দিনের গলা ব্যথা হয় ও তা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। ৪-৫ দিনে শুকনো কাশি ও ভারী কফ-সর্দি হয়, ডায়রিয়াও হতে পারে। তবে ৮০% রোগীর ক্ষেত্রে ৭-৮ দিনের ভিতরেই গলা ব্যথা কমে ভাইরাস মুক্ত হয়ে যায়। আর যদি এন্টিবডি ভাইরাসকে শেষ করতে না পারে তখন তা ফুসফুসে চলে যায় ও পূরা বডিতে অক্সিজেন সাপ্লাইয়ের রাস্তাগুলো বন্ধ করে দিতে থাকে। ফলে শরীর ব্যথা হয়ে দূর্বল হয়ে যেতে থাকে এবং কিডনী বা অন্য কোন অঙ্গ আগে থেকে অসুস্থ থাকলে তা ড্যাম্যজ হয়ে যায় ও মারা যায়। এই সময়ে প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট হয়ে তা বাড়তে থাকে, জ্বর ১০৪-১০৫ উঠানামা করতে থাকে। লাইফ সাপোর্ট ও আইসিউ দরকার হয়।
অনেক ডাক্তার বলেছেন, যে ২০% সিরিয়াস পর্যায়ে চলে যায় তাদের মধ্যে ৭০-৮০% এর পিছনে দায়ী তাদের মানসিক আতংক। কারণ কেহ যখন করোনা ভাইরাস হয়েছে শুনে আতংকিত হয়ে যায় তখন তাঁর অন্টিবডি দূর্বল হয়ে পরে, শরীরের কোষগুলো শিথিল হয়ে ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পরে। অন্যদিকে কেহ যদি মানসিক ভাবে সতর্ক হয় তখন তাঁর অন্টিবডি যে কোন রোগের বিরোদ্ধে শক্তিশালী হয়ে উঠে আল্লাহর ইচ্ছায়। তাই আমাদেরকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে।
সর্বশেষ বিষয় হচ্ছে, এখন আমাদেরকে মানসিকভাবে ঈমান, ইখলাস ও তাওয়াক্কুল বৃদ্ধি ও বাহ্যিকভাবে ইবাদাতে সর্বোচ্চ মনযোগী হতে হবে। যা ইদানিং অনেকের মধ্যেই দেখা যাচ্ছে মাশাআল্লাহ। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, আমরা ইবাদাতগুলো কি উদ্দ্যেশ্যে করব?
কিছু মানুষ আছে যারা ব্যপকভাবে গোনাহে লিপ্ত থাকে, যতক্ষণ না আল্লাহ তায়ালা তাঁর কোন নিয়ামতকে ছিনিয়ে নেন। যখনই কোন নিয়ামত ছিনিয়ে নেন তখন সেই নিয়ামত ফিরিয়ে আনার জন্যে আল্লাহ তায়ালাকে ডাকতে থাকেন। পরে যখন ফিরিয়ে দেয়া হয় তখন আবার সে গোনাহের জীবনে ফিরে যায়। এদেরকে আল্লাহ তায়ালা ‘মুসরিফ’ বলে সম্ভোধন করেছেন। কুরআনে এসেছেঃ (যখন মানুষ কষ্টের সম্মুখীন হয়, শুয়ে, বসে, দাঁড়িয়ে আমাকে ডাকতে থাকে। তারপর আমি যখন তা থেকে মুক্ত করে দেই, সে কষ্ট যখন চলে যায় তখন মনে হয় কখনো কোন কষ্টেরই সম্মুখীন হয়ে যেন আমাকে ডাকেইনি। সূরা ইউনুস-১২)। আমাদেরকে এমন হওয়া চলবে না।
এই সমস্ত ব্যক্তিদের আরেকটা অবস্থা হচ্ছে, তারা নির্দিষ্ট পরিমান ইবাদাত করার পরেও যখন দেখে আল্লাহ তায়ালা তাদের নিয়ামতকে ফিরিয়ে দিচ্ছেন না, তখন তারা আল্লাহ তায়ালার ব্যপারে হতাশ হয়ে ইবাদাত করা ছেড়ে দেয়া এবং বিভিন্ন ধরনের কুধারনা করতে থাকে। অনেকে বলেঃ আল্লাহ কেন শুধু আমাকেই বিপদ দেন? আমাদেরকে কেন এখনো বিপদ মুক্তি দিচ্ছেন না? অবস্থা কেমন যেন এটা বুঝায়, আমি তো আমার দায়িত্ব আদায় করেছি কিন্তু আল্লাহ তায়ালা উনার দায়িত্ব আদায় করছেন না। মা’আযাল্লাহ। এদেরকে আরবীতে বলা হয় ‘হাবশাত্বী’ আল্লাহ তায়ালার প্রতি যাদের ভালবাসা শর্তযুক্ত। তাই আমাদের ইবাদাত হবে শুধুই আল্লাহর জন্যে। করোনা থেকে বাচলেও ইবাদাত হবে, আল্লাহ না করুন, করোনা আক্রমণ করলেও ইবাদাত করেই যাব ইনশাআল্লাহ।
একবার মহামারীতে ইবনে হাজার রাহিঃর মেয়ে মারা যান। সেই কষ্টে উনি মহামারী নিয়ে সারে চারশ পৃষ্ঠার এক কিতাব লিখে ফেলেন। সেখানে তিনি উল্ল্যেখ করেছেনঃ (অনেক মহামারী শীতকালে হয় আবার অনেকগুলো গ্রীষ্মকালে। তবে মুসলিমদের ইতিহাসে অধিকাংশ মহামারী বসন্ত কালে হয়ে গৃষ্মকাল শুরু হলেই শেষ হয়ে যায়।) যদি আল্লাহ তায়ালার ফায়সালা এমনটাই হয় তাহলে আশা করা যায় গ্রীষ্মকালে করোনা ভাইরাস থাকবে না, বাকি সবকিছু আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন।
আল্লাহ তায়ালা করোনা ভাইরাসকে কাফেরদের জন্যে আযাব ও মুসলিমদের রহমত ও দ্বীন-ঈমানের পথে এগিয়ে আসার মাধ্যম হিসেবে কবুল করুন। আমাদের সবাইকে সুস্থ রাখুন, আমীন।
Comment