আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার ৪টি শর্ত
وَ اِنِّیۡ لَغَفَّارٌ لِّمَنۡ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهتدي ﴿۸۲﴾
“এবং আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার প্রতি যে তাওবা করে, ঈমান আনে, নেক আমল করে ও সৎ পথে অবিচল থাকে।” [১]
আমরা সবাই-ই পাপী। জীবনটা ডুবে আছে পাপাচারে। জেনে, না জেনে, বুঝে, না বুঝে করে চলেছি অসংখ্য পাপ। অপরদিকে মহান আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আমরা যদি তাঁর দিকে এক বিঘত এগিয়ে যাই, তিনি আমাদের দিকে এগিয়ে আসবেন এক হাত, আমরা তাঁর দিকে যদি হেঁটে হেঁটে যাই, তিনি আমাদের দিকে দৌড়ে দৌড়ে আসবেন [২]। তিনি তো বলেছেন তাঁর রহমত থেকে নিরাশ না হতে [৩]। তাই আমরা তাঁর রহমতের আশায় আছি – নিশ্চয় তিনি আমাদেরকে ক্ষমা করবেন।
তবে মহান রবের ক্ষমা পাওয়ার কিছু শর্ত আছে। আলোচনার শুরুতে বর্ণিত আয়াতে আল্লাহ রব্বুল আলামীন ক্ষমা পাওয়ার ৪টি শর্ত উল্লেখ করেছেন।
১. তাওবা করা।
২. ঈমান আনা।
৩. নেক আমল করা।
৪. সৎ পথে অবিচল থাকা।
চলুন, আজ এ ৪টি শর্ত নিয়ে সংক্ষেপে খানিকটা আলোচনা করি।
♦ তাওবা করা :
আমাদের পাপের কোনো শেষ নেই। পাপের ফলাফল নির্ঘাত ‘জাহান্নাম’। তবে কোনো পাপীও উত্তম হতে পারে, যদি সে তাওবা করে ফিরে আসে [৪]। আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে তাওবা করে ফিরে আসা। সব ধরনের গুনাহ থেকে তাওবা করতে হবে – শিরক, কুফর, কবীরা, সগীরা। গুনাহের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। তাওবা করার পর আর ফিরে যাওয়া যাবে না সেসব পাপাচারে। যদিও তাওবা আমাদের জন্যেই, আমাদের পাপমুক্তির জন্যেই, তবে আমাদের তাওবায় মহান রব প্রচণ্ড খুশি হন [৫]। সুতরাং দেখা যাচ্ছে তাওবার মাধ্যমে একই সাথে দু’টি লাভ – আল্লাহর ক্ষমা লাভ এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন।
♦ ঈমান আনা :
ঈমান – মানবজীবনের সবচেয়ে দামি সম্পদ। ঈমানের এক যাররা নিয়ে যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে, তবুও সে দশ দুনিয়ার সমান জান্নাত লাভ করবে [৬]। অথচ এ দামি সম্পদটি নিয়ে আজকাল আমরা বড্ড উদাসীন। নিজ ঈমানের পরিচর্যার প্রতি কোনো মনোযোগ নেই। জন্মসূত্রে ঈমান পেয়েছি, এ ঈমান কখনোই নষ্ট হবে না – এমন একটা ধ্যানধারণা কাজ করে আমাদের ভেতর। তাইতো যে মুখে ‘আল্লাহু আকবার’ বলি, সে মুখেই কুফুরি আইনের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিই ; তাইতো যে হাতে মাসজিদে দান করি, সে হাতেই আবার হোলি খেলি হিন্দুদের সাথে ; তাইতো নামাজে ‘সূরা কাফিরুন’ পড়ে কুফর-শিরকের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের স্পষ্ট ঘোষণা দিই, নামাজ শেষে অসাম্প্রদায়িকতার বুলি আওড়িয়ে পূজা অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছাও জ্ঞাপন করি। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। এ জাতীয় ঈমান আদৌ আমাদের কাজে আসবে কিনা, তা সংশয়ের বিষয়। আল্লাহ আমাদেরকে প্রকৃত মুমিন হিসেবে কবুল করে নিন।
♦ নেক আমল :
ঈমান কেবল মুখে স্বীকৃতির নামই নয়, বরং কাজে পরিণত করারও বিষয়। আল্লাহ আমাদের ওপর রহম করেছেন – ছোট্ট ছোট্ট আমলেও রয়েছে অশেষ প্রতিদান। আলহামদুলিল্লাহ। একটি নমুনা দেখি চলুন। আপনি কেবল ১ বার পড়লেন, “সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”, আপনার ১০টি গুনাহ মুছে ফেলা হলো, ১০টি সাওয়াব লিখা হলো, ১০টি রহমত আপনার ওপর বর্ষিত হলো, আপনার ১০টি মর্যাদা উন্নীত হলো [৭]। এত সহজ আমলেও যদি থাকে এত বিশাল প্রতিদান, তাহলে ইসলামের সর্বোচ্চ শেখর হিসেবে যে আমলের কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে গিয়েছেন, তাতে কী পরিমাণ প্রতিদান থাকতে পারে একবার ভাবুন তো। সে আমলটি হচ্ছে ‘জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ’ [৮]।
♦ সৎ পথে অবিচল থাকা :
ঈমান এনেছেন, ঈমানের ঘোষণা দিয়েছেন, ঈমানী দায়িত্ব (নেক আমল) পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন, অথচ আপনার ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালানো হবে না, তা আসলে সম্ভব নয়। প্রায় সকল নবী-রাসূলকেই (আলাইহিমুস সালাম) বরণ করতে হয়েছে অকথ্য নির্যাতন। এ নির্যাতন আপনার জন্যে রবের পক্ষ থেকে পরীক্ষা। “ঈমান এনেছি” বললেই রব আপনাকে ছেড়ে দেবে না, বরং আপনার কথার প্রমাণও নেবেন [৯]। তাই এমতাবস্থায় সবরের সাথে হক পথে অটল থাকা আবশ্যক। কেননা আল্লাহ তো সবরকারীদের সাথেই থাকেন [১০]।
ওপরের ৪টি গুণ যদি আমাদের মাঝে থাকে, আমরা যদি এ ৪টি শর্ত পূরণ করতে পারি, তাহলে আমরা মহান রব্বুল আলামীনের ক্ষমা আশা করতে পারি ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিক। আমীন।
_____________________________
পাদটীকা :
১. সূরা ত্বহা,২০: ৮২
২. সহীহ বুখারী : ৭৪০৫
৩. সূরা যুমার ৩৯:৫৩
৪. জামেউত তিরমিজি : ২৪৯৯
৫. সহীহ মুসলিম : ২৭৪৭
৬. সহীহ মুসলিম : ৩৪৯
৭. জামেউত তিরমিজি : ৪৮৫, সুনানে নাসায়ী : ১২৯৭
৮. জামেউত তিরমিজি : ২৬১৬
৯. সূরা আনকাবুত : ০২, ০৩
১০. সূরা বাকারা : ১৫৩
----------------------------------
লেখক: আব্দুল্লাহ আবু উসামা, ইসলামী চিন্তাবিদ।
সূত্র: https://alfirdaws.org/2020/04/04/35558/
وَ اِنِّیۡ لَغَفَّارٌ لِّمَنۡ تَابَ وَ اٰمَنَ وَ عَمِلَ صَالِحًا ثُمَّ اهتدي ﴿۸۲﴾
“এবং আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার প্রতি যে তাওবা করে, ঈমান আনে, নেক আমল করে ও সৎ পথে অবিচল থাকে।” [১]
আমরা সবাই-ই পাপী। জীবনটা ডুবে আছে পাপাচারে। জেনে, না জেনে, বুঝে, না বুঝে করে চলেছি অসংখ্য পাপ। অপরদিকে মহান আল্লাহ হলেন ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আমরা যদি তাঁর দিকে এক বিঘত এগিয়ে যাই, তিনি আমাদের দিকে এগিয়ে আসবেন এক হাত, আমরা তাঁর দিকে যদি হেঁটে হেঁটে যাই, তিনি আমাদের দিকে দৌড়ে দৌড়ে আসবেন [২]। তিনি তো বলেছেন তাঁর রহমত থেকে নিরাশ না হতে [৩]। তাই আমরা তাঁর রহমতের আশায় আছি – নিশ্চয় তিনি আমাদেরকে ক্ষমা করবেন।
তবে মহান রবের ক্ষমা পাওয়ার কিছু শর্ত আছে। আলোচনার শুরুতে বর্ণিত আয়াতে আল্লাহ রব্বুল আলামীন ক্ষমা পাওয়ার ৪টি শর্ত উল্লেখ করেছেন।
১. তাওবা করা।
২. ঈমান আনা।
৩. নেক আমল করা।
৪. সৎ পথে অবিচল থাকা।
চলুন, আজ এ ৪টি শর্ত নিয়ে সংক্ষেপে খানিকটা আলোচনা করি।
♦ তাওবা করা :
আমাদের পাপের কোনো শেষ নেই। পাপের ফলাফল নির্ঘাত ‘জাহান্নাম’। তবে কোনো পাপীও উত্তম হতে পারে, যদি সে তাওবা করে ফিরে আসে [৪]। আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে তাওবা করে ফিরে আসা। সব ধরনের গুনাহ থেকে তাওবা করতে হবে – শিরক, কুফর, কবীরা, সগীরা। গুনাহের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। তাওবা করার পর আর ফিরে যাওয়া যাবে না সেসব পাপাচারে। যদিও তাওবা আমাদের জন্যেই, আমাদের পাপমুক্তির জন্যেই, তবে আমাদের তাওবায় মহান রব প্রচণ্ড খুশি হন [৫]। সুতরাং দেখা যাচ্ছে তাওবার মাধ্যমে একই সাথে দু’টি লাভ – আল্লাহর ক্ষমা লাভ এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন।
♦ ঈমান আনা :
ঈমান – মানবজীবনের সবচেয়ে দামি সম্পদ। ঈমানের এক যাররা নিয়ে যদি কেউ মৃত্যুবরণ করে, তবুও সে দশ দুনিয়ার সমান জান্নাত লাভ করবে [৬]। অথচ এ দামি সম্পদটি নিয়ে আজকাল আমরা বড্ড উদাসীন। নিজ ঈমানের পরিচর্যার প্রতি কোনো মনোযোগ নেই। জন্মসূত্রে ঈমান পেয়েছি, এ ঈমান কখনোই নষ্ট হবে না – এমন একটা ধ্যানধারণা কাজ করে আমাদের ভেতর। তাইতো যে মুখে ‘আল্লাহু আকবার’ বলি, সে মুখেই কুফুরি আইনের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিই ; তাইতো যে হাতে মাসজিদে দান করি, সে হাতেই আবার হোলি খেলি হিন্দুদের সাথে ; তাইতো নামাজে ‘সূরা কাফিরুন’ পড়ে কুফর-শিরকের সাথে সম্পর্ক ছিন্নের স্পষ্ট ঘোষণা দিই, নামাজ শেষে অসাম্প্রদায়িকতার বুলি আওড়িয়ে পূজা অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছাও জ্ঞাপন করি। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। এ জাতীয় ঈমান আদৌ আমাদের কাজে আসবে কিনা, তা সংশয়ের বিষয়। আল্লাহ আমাদেরকে প্রকৃত মুমিন হিসেবে কবুল করে নিন।
♦ নেক আমল :
ঈমান কেবল মুখে স্বীকৃতির নামই নয়, বরং কাজে পরিণত করারও বিষয়। আল্লাহ আমাদের ওপর রহম করেছেন – ছোট্ট ছোট্ট আমলেও রয়েছে অশেষ প্রতিদান। আলহামদুলিল্লাহ। একটি নমুনা দেখি চলুন। আপনি কেবল ১ বার পড়লেন, “সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম”, আপনার ১০টি গুনাহ মুছে ফেলা হলো, ১০টি সাওয়াব লিখা হলো, ১০টি রহমত আপনার ওপর বর্ষিত হলো, আপনার ১০টি মর্যাদা উন্নীত হলো [৭]। এত সহজ আমলেও যদি থাকে এত বিশাল প্রতিদান, তাহলে ইসলামের সর্বোচ্চ শেখর হিসেবে যে আমলের কথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে গিয়েছেন, তাতে কী পরিমাণ প্রতিদান থাকতে পারে একবার ভাবুন তো। সে আমলটি হচ্ছে ‘জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ’ [৮]।
♦ সৎ পথে অবিচল থাকা :
ঈমান এনেছেন, ঈমানের ঘোষণা দিয়েছেন, ঈমানী দায়িত্ব (নেক আমল) পালনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন, অথচ আপনার ওপর অত্যাচারের স্টিমরোলার চালানো হবে না, তা আসলে সম্ভব নয়। প্রায় সকল নবী-রাসূলকেই (আলাইহিমুস সালাম) বরণ করতে হয়েছে অকথ্য নির্যাতন। এ নির্যাতন আপনার জন্যে রবের পক্ষ থেকে পরীক্ষা। “ঈমান এনেছি” বললেই রব আপনাকে ছেড়ে দেবে না, বরং আপনার কথার প্রমাণও নেবেন [৯]। তাই এমতাবস্থায় সবরের সাথে হক পথে অটল থাকা আবশ্যক। কেননা আল্লাহ তো সবরকারীদের সাথেই থাকেন [১০]।
ওপরের ৪টি গুণ যদি আমাদের মাঝে থাকে, আমরা যদি এ ৪টি শর্ত পূরণ করতে পারি, তাহলে আমরা মহান রব্বুল আলামীনের ক্ষমা আশা করতে পারি ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিক। আমীন।
_____________________________
পাদটীকা :
১. সূরা ত্বহা,২০: ৮২
২. সহীহ বুখারী : ৭৪০৫
৩. সূরা যুমার ৩৯:৫৩
৪. জামেউত তিরমিজি : ২৪৯৯
৫. সহীহ মুসলিম : ২৭৪৭
৬. সহীহ মুসলিম : ৩৪৯
৭. জামেউত তিরমিজি : ৪৮৫, সুনানে নাসায়ী : ১২৯৭
৮. জামেউত তিরমিজি : ২৬১৬
৯. সূরা আনকাবুত : ০২, ০৩
১০. সূরা বাকারা : ১৫৩
----------------------------------
লেখক: আব্দুল্লাহ আবু উসামা, ইসলামী চিন্তাবিদ।
সূত্র: https://alfirdaws.org/2020/04/04/35558/
Comment