ধারাবাহিক "অন্তরের ব্যাধি" সিরিজ।
প্রথম অধিবেশনঃ অন্তরের পরিচয়।
বিসমিল্লাহির-রহমানির-রহিম।
আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন। নাহমাদুহু ওয়া নাস্তায়ীনুহু ওয়া নাস্তাগফিরুহু ওয়া নাউুজু বিল্লাহি মিন শুরুরি আনফুসিনা ওয়া মিন সায়্যিআ-তি আ'মালিনা, মাই্যাহদিহিল্লাহু ফালা মুদিল্লালাহু ওয়া মাই্যুদলিলহু ফালা হাদিয়ালাহু ওয়া নাশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লহু ওয়াহ দাহু লা শারিকালাহ, ওয়া নাশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু।
আম্মা বা'দপ্রথম অধিবেশনঃ অন্তরের পরিচয়।
বিসমিল্লাহির-রহমানির-রহিম।
আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন। নাহমাদুহু ওয়া নাস্তায়ীনুহু ওয়া নাস্তাগফিরুহু ওয়া নাউুজু বিল্লাহি মিন শুরুরি আনফুসিনা ওয়া মিন সায়্যিআ-তি আ'মালিনা, মাই্যাহদিহিল্লাহু ফালা মুদিল্লালাহু ওয়া মাই্যুদলিলহু ফালা হাদিয়ালাহু ওয়া নাশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লহু ওয়াহ দাহু লা শারিকালাহ, ওয়া নাশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আব্দুহু ওয়া রাসুলুহু।
প্রিয় ভাইয়েরা!
অন্তরে ব্যাধি সিরিজটি শুরু করার পূর্বে অন্তর কি সেটা জানা খুবই প্রয়োজন।
তাই আমরা প্রথমে অন্তর-কলবের পরিচয় সম্পর্কে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
"অন্তর" যাকে আরবিতে বলা হয় "কলব"। কলব এ কারণে বলা হয় যে, কলব অর্থ পরিবর্তন করা, আর অন্তর যেহেতু কোন একটি অবস্থার উপর স্হীর থাকেনা কয়েকটি অবস্থায় পরিবর্তনশীল সেহেতু তাকে কলব বলা হয়।
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বলেছেনঃ অন্তর হলো পালকতুল্য, উন্মুক্ত মাঠে বাতাস তাকে যেদিকে ইচ্ছা উল্টাতে-পাল্টাতে থাকে।
[সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৮৮
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।]
এ কারণেই রাসুলে আকরাম সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশি বেশি এই দোয়া করতেনঃ
يا مقلب القلوب والأبصــار ثبت قلبي على دينــــك
"হে অন্তর ও দৃষ্টিসুমুহের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর অবিচল রাখুন!"
একজন মুসলিমের আবশ্যক হলো সর্বদা তার কলব-অন্তরকে পর্যবেক্ষণে রাখা যে তাহা কোন দিকে পরিবর্তিত হলো(?) এবং কলব-অন্তরকে সর্বদা পরিশুদ্ধ রাখারার সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
ইয়াহইয়া বিন মু'আজ বলেনঃ একজন মুসলিমের অন্তরের উদাহরণ একজন বাগানির বাগানের মত। বাগানির বাগানে যেমন কখনো কখনো গোলাপ ও বিভিন্ন ফুলে ভরপুর থাকে তেমনি কখনো কখনো বাগানে কাঁটা ও ঝড়া পাতাও জমে থাকে, যাকে সে কষ্ট করে হলেও পরিস্কার করতে হয়। তেমনি একজন মুসলিমের অন্তর কখনো কখনো পরিশুদ্ধ থাকে যাহা খুবই ভালো। আবার কখনো তাতে বিভিন্ন ব্যাধি এসে বাসা বাঁধে, যাকে খুব কষ্ট করে হলেও চিকিৎসা করতে হয়, এবং সুস্থ সবল রাখতে হয়।
এই নাফস, কলব, অন্তর কেন এত গুরুত্বের বিষয়ঃ
একঃ বিশুদ্ধ ও সুস্থ কলবের মাধ্যমে ক্ষতস্থান ও অঙ্গসমুহের সুস্থতা ও বিশুদ্ধতা অর্জন হয়। আর নষ্ট ও অসুস্থ কলবের মাধ্যমে ক্ষতস্থান ও অঙ্গসমুহ নষ্ট ও অসুস্থ হয়ে পরেঃ
রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ জেনে রাখ! শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ! সে গোশতের টুকরোটি হল ক্বলব (অন্তর)।
[সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫২
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস]
দুইঃ অন্তর হলো আল্লাহ তায়ালার দৃষ্টিপাতের একটি স্হানঃ
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বলেছেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের বাহ্যিক চাল-চলন, ধনসম্পদ, ও দেহকায়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করেন না, বরং "তিনি দৃষ্টি দিয়ে থাকেন তোমাদের অন্তর' ও ‘আমলের প্রতি।"
[সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৪৩৭
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস]
তিনঃ অন্তর-কলব শ্রদ্ধা ও বিনয় ও নিষ্ঠার স্থানঃ
রসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া করতেনঃ
اللهم إني أعوذ بك من قلب لا يخشع
"হে আল্লাহ, আমি এমন অন্তর-কলব থেকে আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি, যা আপনার ভয়ে ভীত হয়ে শ্রদ্ধায় মাথা নত করেনা।"
[সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৭৯৯
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।]
�� প্রিয় ভাইয়েরা আমার! যে কলবে খুশু' [আল্লাহ তায়ালার ভয়ে ভীত হয়ে শ্রদ্ধায় মাথা নত করা] থাকেনা সে কুরআন তিলাওয়াত করে বা শুনে কাঁদতে পারে না, নামাজে দাঁড়িয়েও কাঁদতে পারে না। সে বিভিন্ন গান বাজনা ও অনর্থক কাজে উৎসাহিত হয়ে যায়। জেনে নাও! এমন হৃদয় অসুস্থ।
চারঃ অন্তর-কলব ইমানের স্থানঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম, বলেছেনঃ হে সেসব লোক যারা কেবল মুখেই ঈমান এনেছে কিন্তু "ঈমান অন্তরে প্রবেশ করেনি!" তোমরা মুসলিমদের গীবত করবে না ও দোষত্রুটি তালাশ করবে না। কারণ যারা তাদের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়াবে আল্লাহও তাদের দোষত্রুটি খুঁজবেন। আর আল্লাহ কারো দোষত্রুটি তালাশ করলে তাকে তার ঘরের মধ্যেই অপদস্থ করে ছাড়বেন। [আল্লাহ তায়ালা আমাদিগকে হিফাজত করুন আমিন!]
[সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৮৮০
হাদিসের মান: হাসান সহিহ।]
পাঁচঃ কলব-অন্তর হলো তাকওয়া "আল্লাহ-ভিতি"র স্হানঃ
রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ‘আল্লাহ ভীরুতা এইখানে থাকে' বলার সময় তিনি স্বীয় বক্ষস্থলের প্রতি তিনবার ইঙ্গিত করেছিলেন।
[বুলুগুল মারাম, হাদিস নং ১৪৯৬ে
হাদিসের মান: সহিহ হাদিস]
ওয়াবিছহ রাযিয়াল্লহু তায়ালা আনহু বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসলাম এবং সকল পূন্য ও পাপ সম্পর্কে জানতে চাইলাম। সেখানে অনেক মানুষের সমাগম ছিল। আমি বললাম আমাকে তার কাছে যেতে দাও! কেননা তিনিই আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ।
অতপর রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেনঃ ওয়াবিছহ আস! আমার কাছে আস! আমি তাঁর "সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম" এত নিকটে গেলাম যে আমার হাঁটুদয় তাঁর হাঁটুদয়কে স্পর্শ করছে।
প্রিয় ভায়েরা আমার!
আপনারা কি এই সফলতা ও নেয়ামতের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করতে পারছেন?! যে ওয়াবিছহ রাযিয়াল্লহু তায়ালা আনহু রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এত, এত নিকটবর্তী হতে পেরেছিলেন যে প্রানের চেয়েও প্রিয় নবী সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাঁটুর সাথে তার হাঁটু ছুয়েগেছে! আল্লাহু আকবার!
হয় যদি আমারো সে সৌভাগ্য হতো?!
আপনারা কি এই সফলতা ও নেয়ামতের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করতে পারছেন?! যে ওয়াবিছহ রাযিয়াল্লহু তায়ালা আনহু রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর এত, এত নিকটবর্তী হতে পেরেছিলেন যে প্রানের চেয়েও প্রিয় নবী সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাঁটুর সাথে তার হাঁটু ছুয়েগেছে! আল্লাহু আকবার!
হয় যদি আমারো সে সৌভাগ্য হতো?!
তিনি সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনঃ ওয়াবিছহ! আমি কি তোমাকে বলেদিব তুমি কি জানতে এসেছ?
আমি বললামঃ জ্বি আমাকে বলুন হে আল্লাহর রাসুল!
তিনি বললেনঃ তুমি আমার নিকট পূণ্য ও পাপ সম্পর্কে জানতে এসেছ।
আমি বললামঃ জ্বি।
অতপর রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনার তিনটি আঙুল একত্রিত করে আমার বুকে লাগিয়ে বললেন ‘‘তুমি তোমার অন্তরকে (ফতোয়া) জিজ্ঞাসা কর। পুণ্য হল তা, যার প্রতি তোমার মন প্রশান্ত হয় এবং অন্তর পরিতৃপ্ত হয়। আর পাপ হল তা, যা মনে খট্*কা সৃষ্টি করে এবং অন্তর সন্দিহান হয়। যদিও লোকেরা তোমাকে (তার বৈধ হওয়ার) ফতোয়া দিয়ে থাকে।’’
[আহমাদ ১৭৫৩৮, ১৭৫৪০, ১৭৫৪৫, দারেমী ২৫৩৩, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ৫৯৬। হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।]
সুতরাং বুঝাগেল অন্তরের খুবই মাহাত্ম্য রয়েছে, যে মাহাত্ম্য গুলো লাভের জন্য অবশ্যই আমাদের অন্তরকে পবিত্র, সুস্থ, ও পরিশুদ্ধ রাখতে হবে, কারণ অপবিত্র স্হানে পবিত্র জিনিসের যায়গা হয়না। তাই আমরা এই সিরিজের সামনের পর্ব গুলোতে অন্তরের ব্যাধি সমুহ ও তা থেকে পরিত্রাণের বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। ওয়ামা তাওফি-কি- ইল্লা-বিল্লা-হ।
আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে অন্তরের ব্যাধি সমুহ জানার ও তা থেকে পরিত্রাণ লাভের তাওফিক দান করুন আমিন!
আমাদের নেক দোয়ায় মাজলুম উম্মাহ এবং মুজাহিদীনগনকে যেন ভুলে না যাই!
আল্ল-হুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লাম ওয়া বা-রিক আলা- নাবিয়্যিনা- মুহাম্মাদ ওয়া আলা- আ-লি মুহাম্মাদ কামা- সল্লাইতা ওয়া সাল্লামতা ওয়া বা-রকতা আলা- ইবর-হী-ম ওয়া আলা- আ-লি ইবর-হী-ম ইন্নাকা হামি-দুম্মাজি-দ।
চলবে ইনশাআল্লাহ.............!
Comment