লোভ ও শাহাওয়াত থেকে কিভাবে বাচা সম্ভব?
মনে করুন, আপনার সামনে কোন ব্যক্তি অনেক সম্পদের অধিকারী কিন্তু আপনার পক্ষে তার থেকে সেই সম্পদ অর্জন সম্ভব নয় বা এমন কোন মেয়েকে দেখলেন যাকে বিয়ে করা বা কাছে পাওয়া অসম্ভব, এমতাবস্থায় কি সেই সম্পদ বা মেয়েকে পাওয়ার চাহিদা তৈরি হবে? ঠিক তেমনি ভাবে যে ক্ষমতা আপনার পক্ষে অর্জন সম্ভব নয় সেই ক্ষমতার প্রতি কি লোভ লাগে?
আমাদের মনে যে সমস্ত জিনিসের প্রতি শাহাওয়াত বা লোভ জাগ্রত হয়, সেগুলোতে একটু খেয়াল করলেই দেখবেন তা সাধারনত এমন বিষয় হয়ে থাকে যা আমাদের হাতের নাগালে থাকে, যা আমরা অর্জন করা সম্ভব মনে করি। এখানে সেই ব্যক্তিদের কথা বলা হচ্ছে না যারা সর্বদাই গোনাহ করে, কারন তাদের অন্তরে সব জিনিসের প্রতিই আকর্ষন জাগ্রত হয়। কিন্তু যারা নিজেদেরকে বাচিয়ে রাখার চেষ্টা করেন তাদের সাধারনত এমন কোন মেয়ে বা ছোট ছেলের প্রতি আকর্ষন তৈরি হয় যারা তাদের আয়ত্বের ভিতরে থাকে। যাদের ব্যপারে শয়তান কুমন্ত্রনা দেয়, আরেহ তুমি তো ইচ্ছা করলেই তাঁকে বিয়ে করতে পার বা কাছে পেতে পার। অথবা সেই সম্পদ যা তার পক্ষে অর্জন করা সম্ভব, যেমন আমি তো ইচ্ছা করলেই অনেক ব্যবসা বা চাকরী করে অনেক টাকা কামাতে পারি, অথবা অমুক থেকে ছিনিয়ে আনা বা চুরি করতে পারি ইত্যাদি।
এর সমস্যার মূল কারণ হচ্ছে, জৈবিক চাহিদা বা লোভ জাগ্রতই হয় এমন জিনিসের প্রতি যেখান থেকে দুনায়াবী স্বার্থ অর্জন সম্ভব হয়। যেখান থেকে হারাম স্বার্থ আদায় সম্ভব নয় সেখানে সাধারনত খারাপ আগ্রহ, মহাব্বত, প্রেম, ধীর্ঘ মেয়াদী কু-বাসনা তৈরি হয় না।
তাই শাহাওয়াত বা লোভ থেকে বাচার একটা অনেক কার্যকরী সমাধান হচ্ছে, যখনই আপনার কোন মেয়ের প্রতি চোখ পড়বে সাথে সাথেই ভাববেন 'তার সাথে আমার কোন দুনায়াবী স্বার্থ পাওয়া সম্ভব নয় বা প্রয়োজন নেই, কারণ আল্লাহ তায়ালা নিষেধ করেছেন' বারবার মনকে এই বুঝটা দেয়ার চেষ্টা করবেন, দেখবেন দ্রুতই তা অন্তর থেকে সরে যাচ্ছে। এখনই একটু মনে মনে পরিক্ষা করে দেখুন, বুঝতে পারবেন ইনশাআল্লাহ। আর যাদের মানসিক অবস্থা বেশি দুর্বল হবে তারা সেই সাথে এটাও ভাবতে পারেন, 'তার প্রতি আমার আখেরাতের স্বার্থ রয়েছে অর্থাৎ আমি এমনভাবে দ্বীন প্রচার ও প্রতিষ্ঠার করব যাতে সেও দ্বীনের পথে চলতে পারে, কিন্তু ব্যক্তিগত কোন স্বার্থ নেই বাঁ সম্ভব নয়।
কখনো কি ভেবেছেন, মা-বোনদের প্রতি কেন শাহাওয়াত জাগ্রত হয় না? বৃদ্ধ মহিলার প্রতি শাহাওয়াত জাগ্রত হয় না? পেট ভরে খাওয়ার পর কেন খেতে ইচ্ছা করে না? কোন ত্বাগুতী প্রশাসনের ক্ষমতা পাওয়ার ইচ্ছা কেন জাগ্রত হয় না? অন্য কোন বড় ব্যক্তির সম্পদের প্রতি কেন ব্যক্তিগত লোভ হয় না?
ঠিক তেমনি ভাবে আমরা সম্পদ, ক্ষমতা বা দুনিয়াবী অন্য যেকোন বিষয়ের প্রতি যখন ভাবব এখান থেকে আমার কোন সার্থ অর্জনের ইচ্ছা নেই বা সম্ভব নয় তখন তা বেশিক্ষন আমাদের মনে থাকবে না ইনশাআল্লাহ। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন হচ্ছে, জিহাদের ফরজ আদায়ের ক্ষেত্রে যখন স্ত্রী, চাকরী, সম্পদ, পরিবার বা অন্য যেকোন কিছু মহাব্বত আমাদের সামনে বাধা হয়ে দাড়াতে চাইবে, তখনই এটা ভাবতে শুরু করব দ্বীনের কাজ বাদ দিয়ে এখান থেকে আমার কোন স্বার্থ আদায় সম্ভব নয়, কারণ আল্লাহ তায়ালাই নিষেধ করে অসম্ভব করে দিয়েছে। এবং আমি দ্বীনের কাজ ফেলে কোন উপকার অর্জন করতে চাই না বা এই ধরনের উপকার আমার প্রয়োজন নেই। বারবার মনে এই চিন্তা জাগ্রত করার চেষ্টা করুন, দেখবেন অনেক উপকার পাওয়া যাচ্ছে ইনশাআল্লাহ।
মহান আল্লাহ তায়ালা বলেছেনঃ
زُيِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّهَوَاتِ مِنَ النِّسَاءِ وَالْبَنِينَ وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنطَرَةِ مِنَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ وَالْخَيْلِ الْمُسَوَّمَةِ وَالْأَنْعَامِ وَالْحَرْثِ ۗ ذَٰلِكَ مَتَاعُ الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَاللَّهُ عِندَهُ حُسْنُ الْمَآبِ * قُلْ أَؤُنَبِّئُكُم بِخَيْرٍ مِّن ذَٰلِكُمْ ۚ لِلَّذِينَ اتَّقَوْا عِندَ رَبِّهِمْ جَنَّاتٌ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَأَزْوَاجٌ مُّطَهَّرَةٌ وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِالْعِبَادِ
মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে নারী, সন্তান-সন্ততি, রাশিকৃত স্বর্ণ-রৌপ্য, চিহ্নিত অশ্ব, গবাদি পশুরাজি এবং ক্ষেত-খামারের মত আকর্ষণীয় বস্তুসামগ্রী। এসবই হচ্ছে পার্থিব জীবনের ভোগ্য বস্তু। আল্লাহর নিকটই হলো উত্তম আশ্রয়। বলুন, আমি কি তোমাদেরকে এসবের চাইতেও উত্তম বিষয়ের সন্ধান বলবো? যারা ত্বাকওয়া অবলম্বন করে, আল্লাহর নিকট তাদের জন্যে রয়েছে বেহেশত, যার তলদেশে প্রস্রবণ প্রবাহিত-তারা সেখানে থাকবে অনন্তকাল। আর রয়েছে পরিচ্ছন্ন সঙ্গিনীগণ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি সুদৃষ্টি রাখেন।
চিন্তা করে দেখুন, এখানে মহান আল্লাহ তায়ালা বলছেন এই সমস্ত বিষয়ের প্রতি শাহওয়াত বা দুনিয়াবী স্বার্থের মহাব্বতকে মানুষের কাছে সাজিয়ে দেয়া হয়েছে অর্থাৎ এই সমস্ত বিষয়ের প্রতি মানুষের যে হারাম মহাব্বত তৈরি হয় তা দুনিয়াবী স্বার্থের থেকে হয়ে থাকে। পরের আয়াতেই দুই ধাপে এর সমাধান বলেছেনঃ-
প্রথমতঃ যারা ত্বাকওয়া অবলম্বন করবে অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার ভয়ে নিজের অন্তর থেকে এই দুনিয়াবী সার্থের মহাব্বতটাকে দূর করে দিবে, আল্লাহ তায়ালা সার্থ অর্জনে নিষেধ করে দেয়ার ফলে এগুলোর প্রতি নিজের কোন সার্থ নেই মনে করবে, তাদের সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
দ্বিতিয়তঃ আল্লাহ তায়ালা জানেন মানুষের অন্তর থেকে আগ্রহ একেবারে দূর হওয়া সম্ভব নয়, তাই যাতে বৈধ বিষয়ের প্রতি মহাব্বত তৈরি হয় তার জন্যে পুরুষ্কারের ক্ষেত্রে জান্নাতের নেয়ামত ও পবিত্র স্ত্রীদের কথা বলছেন, যাতে আমাদের আগ্রহ সেদিকে নিয়ে যেতে পারি। আর সর্বশেষ আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টির কথা বলছেন, কেননা وَرِضْوَانٌ مِّنَ اللَّهِ أَكْبَرُ এ সমুদয়ের মাঝে সবচেয়ে বড় হল আল্লাহর সন্তুষ্টি।
তাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদের অন্তরকে দুনিয়াবী সমস্ত শাহাওয়াত ও লোভ থেকে বাচিয় রাখেন ও তার সন্তুষ্টির সাথে জান্নাতের নেয়ামত সমূহ দান করেন, আমীন।
Comment