ধারাবাহিক "ভাষার ভয়াবহতা" সিরিজ। প্রথম ভলিউমঃ
যবান হেফাজতের গুরুত্ব।
যবান হেফাজতের গুরুত্ব।
বিসমিল্লাহির-রহমানির-রহিম।
আলহামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামীন। ওয়াস্-সলা-তু ওয়াস্-সালা-মু আলা- সাইয়িদিল আম্বিয়া-ই ওয়াল-মুরসালী-ন, ওয়া আলা- আ-লিহী-, ওয়া আসহাবিহী-, ওয়ামান তাবিয়াহুম বি ইহসা-নিন ইলা- ইয়াওমিদ্দী-ন, মিনাল উলামা-ই ওয়াল মুজাহিদী-ন, ওয়া আ-ম্মাতিল মুসলিমীন, আমী-ন ইয়া- রাব্বাল আ’-লামীন।
মুহতারাম ভাইয়েরা!
প্রথমে আমরা সকলেই একবার দুরূদ শরীফ পড়ে নিই।
আল্লহুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম ওয়া বারিক আলা- নাবিয়্যিনা- মুহাম্মাদ ওয়া আলা- আলি মুহাম্মাদ কামা- সল্লাইতা ওয়া সাল্লামতা ওয়া বা-রকতা আলা- ইবরাহীমা ওয়া আলা- আলি ইবরহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
প্রথমে আমরা সকলেই একবার দুরূদ শরীফ পড়ে নিই।
আল্লহুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম ওয়া বারিক আলা- নাবিয়্যিনা- মুহাম্মাদ ওয়া আলা- আলি মুহাম্মাদ কামা- সল্লাইতা ওয়া সাল্লামতা ওয়া বা-রকতা আলা- ইবরাহীমা ওয়া আলা- আলি ইবরহীমা ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ!
আমাদের জীবন চলার পথে অধিকাংশ সময় কাউকে ছোট করা কিংবা কাউকে লাঞ্ছিত করার পিছনেই কেটে যায়। প্রকৃত পক্ষে এটা একটা অনর্থক কাজ।
ভাষার অনেক বিপদ জনক বিষয় রয়েছে। যেমনঃ কত এমন পরিবার আছে যাহা কেবলই কথার কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। কত সম্পদ এমন আছে যাহা কেবলি কথার কারণেই ছুড়ে ফেলা হয়েছে। কত মানুষ এমন আছে যাহারা শুধুমাত্র কথার কারণেই দ্বীন থেকে বিচ্ছুত হয়ে গেছে। বহু মানুষ তার এই সামান্য কথার কারণে চাকরি হারিয়েছে।
সুতরাং আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন ভাষার কতো গুরুত্ব।
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ!
অধিকাংশ মানুষই তার মুখ দিয়ে কী বের হয় সে তা উপলব্ধি করতে পারেনা।
গুনাহের ক্ষেত্রে আমাদের বিশ্বাস হলো যে, আমরা বড় গুনাহ বলতে বুঝি ডাকাতি করা, কাউকে অন্যায় ভাবে হত্যা করা কিংবা কারো সাথে যিনা ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া অথবা নামাজ ছেড়ে দেওয়া।
অথচ আমরা একটা কবিরা গুনাহ কে ভূলে আছি আর তা হলো "জিহ্বার আক্রমণ" যা দুনিয়াও আখেরাত সবখানেই একটা ধ্বংসাত্মক কাজ।এই জন্য সকল ঈমানদারের উচিত বাহ্যিক উপকারী কথা ব্যতিত অন্যান্য সকল কথা থেকে তার যবান কে হেফাজত করা।
যখন কথা সম্পূর্ণ হয়ে যায়। তখন অতিরিক্ত কথা থেকে বিরত থাকাই সুন্নত। কেননা কোন ঐচ্ছিক কথা হারাম কিংবা মাকরুহ এর দিকে নিয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রাখে। আর যবানের বিপদ টা হচ্ছে মহা বিপদ। একমাত্র চুপ থাকাটাই তার থেকে মুক্তির পথ। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে লোক নীরব থাকলো, সে নাজাত (মুক্তি) পেলো।
[জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৫০১
হাদিসের মান: সহীহ ]
উকবা ইবনু আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
একদা আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে সাক্ষাত করলাম এবং বললাম, নাজাতের উপায় কি? তিনি বললেন, ‘নিজের জিহ্বা আয়ত্তে রাখো, নিজের ঘরে পড়ে থাকো এবং নিজের পাপের জন্য ক্রন্দন করো।
[আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৮৩৭; বাংলা মিশকাত হা/৪৬২৬, হাদিসের মান: সহীহ]
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্* জিনিসের বদৌলতে বেশিরভাগ লোক জান্নাতে প্রবেশ করবে। তিনি বলেনঃ তাক্বওয়া ও সচ্চরিত্রের বদৌলতে। তাকে আরও জিজ্ঞেস করা হলো, কোন্* জিনিসের কারণে অধিকাংশ লোক জাহান্নামে যাবে? তিনি বলেনঃ দু’টি অঙ্গ "মুখ ও লজ্জাস্থান"।
[সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪২৪৬
হাদিসের মান: সহীহ ]
মু‘আয ইবনু জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, হে আল্লাহ্*র নাবী! আমরা যে কথা-বার্তা বলি এগুলো সম্পর্কেও কি পাকড়াও করা (জবাবদিহি) হবে? তিনি বললেনঃ হে মু‘আয! তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! মানুষকে শুধুমাত্র জিহ্বার উপার্জনের কারণেই অধঃমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
[সহীহঃ ইবনু মা-জাহ (৩৯৭৩)। জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৬১৬ হাদিসের মান: সহীহ।]
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “কোন বান্দার ঈমান দুরস্ত হয় না; যতক্ষণ পর্যন্ত না তার হৃদয় দুরস্ত হয় এবং তার হৃদয়ও দুরস্ত হয় না যতক্ষণ পর্যন্ত না তার জিহ্বা দুরস্ত হয়। আর সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে না, যার প্রতিবেশী তার অনিষ্ট থেকে নিরাপত্তা না পায়।”
[আহমাদ ১৩০৪৮, ত্বাবারানী ১০৪০১ নং হাদীস]
এই হাদীসের অর্থের প্রতি লক্ষ্য করুন, যে যবানের হেফাজত এটা মানুষের আনুগত্য ও ঈমান উভয়টা দুরস্ত হওয়ার আলামত কিংবা দলিল।
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ মানুষ সকালে ঘুম হতে উঠার সময় তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিনীতভাবে জিহ্বাকে বলে, তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলাকে ভয় করো। আমরা তো তোমার সাথে সম্পৃক্ত। তুমি যদি সোজা পথে দৃঢ় থাক তাহলে আমরাও দৃঢ় থাকতে পারি। আর তুমি যদি বাঁকা পথে যাও তাহলে আমরাও বাঁকা পথে যেতে বাধ্য।
[জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৪০৭
হাদিসের মান: সহীহ]
অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা আবশ্যক।
আর তা হলো জিহ্বা হচ্ছে এমন একটা জিনিস যা মনের ভাব প্রকাশ করতে সাহায্যে করে। সুতরাং অন্তর টা হচ্ছে পাত্রের ন্যায়। আর জিহ্বাটা টা হচ্ছে একটি চামচের ন্যায়। যতক্ষণ হৃদয় দয়ায় পূর্ণ থাকে, আমরা ভাল কথা শুনি, আর যখন হৃদয় মন্দ দ্বারা পূর্ণ থাকে, আমরা মন্দ কথা শুনি। এবং মিথ্যা, হিংসা, গিবত, অনর্থক গল্পকরি এবং অশ্লীল কথা বলি। ফলে অন্তর যবানের অনুসরণ করে ও যবান অন্তরের অনুসরণ করে।
অধিকাংশ মানুষ কথা বলার ক্ষেত্রে গালাগাল কিংবা অশ্লিল কথা বলে। এবং সে ধারণা করে তার অন্তর ঠিক আছে। অথচ তার ধারনাটাই ভূল।
জিহ্বা হচ্ছে এমন এক মহা জিনিস যা ব্যতিত সুস্পষ্ট ভাবে মনের ভাব প্রকাশ করা যায় না। সুতরাং এ মহান জিনিসকে খারাপ কাজে ব্যবহার না করে সর্বোত্তম কাজে ব্যবহার করা উচিৎ।
জিহ্বা হচ্ছে এমন এক মহা জিনিস যা ব্যতিত সুস্পষ্ট ভাবে মনের ভাব প্রকাশ করা যায় না। সুতরাং এ মহান জিনিসকে খারাপ কাজে ব্যবহার না করে সর্বোত্তম কাজে ব্যবহার করা উচিৎ।
"ভাষার ভয়াবহতা" সিরিজের প্রথম ভলিউম এই পর্যন্তই, পরবর্তী ভলিউম অচিরেই আসছে......... ইনশাআল্লাহ।
আজ এপর্যন্তই। "ভাষার ভয়াবহতা" সিরিজের প্রথম ভলিউম ধৈর্যের সাথে পড়ার জন্য জাযাকাল্লহু খাইরান আহসানাল জাযা...
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে এবং পুরো উম্মাহকে জবানের সকল অপব্যবহার থেকে হেফাজত করে ঈমান ঠিক রাখার তাওফীক দান করুন! আমিন! এবং আমাদের সবাইকে ইখলাসের সাথে জিহাদ ও শাহাদাতের পথে অবিচল থাকার তাওফীক দান করুন! আমিন!
আমাদের নেক দোয়ায় মাজলুম উম্মাহ এবং মুজাহিদগনকে যেন ভুলে না যাই
আল্লাহুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লিম ওয়া বা-রিক আলা- নাবিয়্যিনা- মুহাম্মাদ ওয়া আলা- আ-লি মুহাম্মাদ কামা- সল্লাইতা ওয়া সাল্লামতা ওয়া বা-রকতা আলা- ইবরাহীমা ওয়া আলা- আলি ইবরহীম ইন্নাকা হামীদুম্মাজীদ।
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله
واصحابه اجمعين
وآخردعوانا ان الحمد لله ربالعالمين
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله
واصحابه اجمعين
وآخردعوانا ان الحمد لله ربالعالمين
Comment