ধারাবাহিক অন্তরের ব্যাধি সিরিজ। তৃতীয় অধিবেশনঃ
অসুস্থ ক্বলবের লক্ষণ সমূহ।
বিসমইল্লাহির-রহমানির-রহিম।
আলহামদুলিল্লা-হি রব্বিল আ-লামী-ন। ওয়াস্-সলা-তু ওয়াস্-সালা-মু আলা- সাইয়িদিল আম্বিয়া-ই ওয়াল-মুরসালী-ন, ওয়া আলা- আ-লিহী-, ওয়া আসহা-বিহী-, ওয়ামান তাবিয়াহুম বি ইহসা-নিন ইলা- ইয়াওমিদ্দী-ন, মিনাল উলামা-ই ওয়াল মুজাহিদী-ন, ওয়া আ-ম্মাতিল মুসলিমীন, আমী-ন ইয়া- রাব্বাল আ’-লামীন।
আম্মা বা’দ,
মুহতারাম ভাইয়েরা!
প্রথমে আমরা সকলেই একবার দুরূদ শরীফ পড়ে নিই।
আল্ল-হুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লাম ওয়া বা-রিক আলা- নাবিয়্যিনা- মুহাম্মাদ ওয়া আলা- আ-লি মুহাম্মাদ কামা- সল্লাইতা ওয়া সাল্লামতা ওয়া বা-রকতা আলা- ইবর-হী-মা ওয়া আলা- আ-লি ইবর-হী-মা ইন্নাকা হামি-দুম্মাজি-দ।
মুহতারাম ভাইয়েরা!
গত অধিবেশনে আমরা আলোচনা করেছিলাম অন্তর অসুস্থ হওয়ার ফল কি হয়? এবং অন্তরের দায়ীত্ব ও তা পালনে বাঁধা সমুহ কি কি।
তো আজ আমরা আলোচনা করবো অসুস্থ ক্বলবের লক্ষণ সমূহ নিয়ে! ওয়ামা তাওফিকি ইল্লাবিল্লাহ।
অসুস্থ ক্বলবের লক্ষণ সমূহঃ
১) অসুস্থ ক্বলবের অধিকারী আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা এবং তাঁর রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আনুগত্য এবং নেক কাজ করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে না।
সে অবাধ্যতায় লিপ্ত থাকতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করে।
২) সে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার জিকির করতেও স্বাচ্ছন্দ বোধ করে না, ভালো ও উত্তম স্হানে গমন করতে ও স্বাচ্ছন্দ বোধ করে না।
সে খারাপ যায়গাগুলোর সাথেই সখ্যতা গড়ে তুলতে চায়।
৩) এমনিভাবে সে আহলে ইলম, দওয়াত ও জিহাদের প্রতি আহ্বায়কদের মত ভালোমানুষদেরকেও ভালোবাসেনা।
সে সকল খারাপ মানুষ গুলোকে ভালোবাসে।
ইমাম কুরতুবি রাহিমাহুল্লহু তায়ালা তিনার তাফসীর গ্রন্থে অসুস্থ ক্বলবের দশটি লক্ষণ উল্লেখ করেছেনঃ
১) (তবা') মোহর আঁটা ক্বলব। ২) (খতাম) মোহর আঁটা ক্বলব। ৩) সংকীর্ণ ক্বলব। ৪) অসুস্থ ক্বলব। ৫) (রা-ন) গোনাহ এর উপর গোনাহকারী যাকে বলে চক্র বৃদ্ধি হারে গোনাহ কারী ক্বলব। ৬) মৃত ক্বলব। ৭) পাষন্ড ক্বলব। ৮) সীমালঙ্ঘনকারী ক্বলব। ১০) অস্বীকার কারী ক্বলব।
নিন্মে কয়েকটি লক্ষ্যন নিয়ে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
◆- পাষণ্ড হৃদয় অধিকারীর ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ
أَفَمَن شَرَحَ ٱللَّهُ صَدْرَهُۥ لِلْإِسْلَٰمِ فَهُوَ عَلَىٰ نُورٍ مِّن رَّبِّهِۦۚ فَوَيْلٌ لِّلْقَٰسِيَةِ قُلُوبُهُم مِّن ذِكْرِ ٱللَّهِۚ أُو۟لَٰٓئِكَ فِى ضَلَٰلٍ مُّبِينٍ
ইসলামের জন্য আল্লাহ যার বক্ষ উন্মোচিত করে দিয়েছেন, যার ফলে সে তার প্রতিপালকের দেয়া আলোর উপর রয়েছে (সে কি তার সমান যে কঠোর হৃদয়ের)?।
ধ্বংস তাদের জন্য যাদের অন্তর আল্লাহ স্মরণের ব্যাপারে আরো শক্ত হয়ে গেছে।
তারা আছে স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে।
[আজ-জুমার ৩৯ঃ২২]
◆- (রা-ন)চক্র বৃদ্ধি হারে গোনাহ কারী ক্বলব এর অধিকারী সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
كَلَّاۖ بَلْۜ رَانَ عَلَىٰ قُلُوبِهِم مَّا كَانُوا۟ يَكْسِبُونَ
কক্ষনো না, বরং তাদের চক্রবৃদ্ধি হারে পাপকর্মই তাদের অন্তরে জং ধরিয়ে দিয়েছে।
[আল মুতফ-ফিফিন ৮৩ঃ১৪]
◆- রুগ্ন হৃদয় অধিকারী সম্পর্কে বলেনঃ
فَتَرَى ٱلَّذِينَ فِى قُلُوبِهِم مَّرَضٌ يُسَٰرِعُونَ فِيهِمْ يَقُولُونَ نَخْشَىٰٓ أَن تُصِيبَنَا دَآئِرَةٌۚ فَعَسَى ٱللَّهُ أَن يَأْتِىَ بِٱلْفَتْحِ أَوْ أَمْرٍ مِّنْ عِندِهِۦ فَيُصْبِحُوا۟ عَلَىٰ مَآ أَسَرُّوا۟ فِىٓ أَنفُسِهِمْ نَٰدِمِينَ
যাদের অন্তরে ব্যাধি আছে তুমি তাদেরকে দেখবে তারা তাদের (অর্থাত ইয়াহূদী, নাসারা মুশরিকদের) দৌড়ে গিয়ে বলবে, আমাদের ভয় হয় আমরা বিপদের চক্করে পড়ে না যাই। হয়তো আল্লাহ বিজয় দান করবেন কিংবা নিজের পক্ষ হতে এমন কিছু দিবেন যাতে তারা তাদের অন্তরে যা লুকিয়ে রেখেছিল তার কারণে লজ্জিত হবে।
[আলমা-ইদাহ ০৫ঃ৫২]
সংকীর্ণ হৃদয়ের অধিকারী সম্পর্কে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ
فَمَن يُرِدِ ٱللَّهُ أَن يَهْدِيَهُۥ يَشْرَحْ صَدْرَهُۥ لِلْإِسْلَٰمِۖ وَمَن يُرِدْ أَن يُضِلَّهُۥ يَجْعَلْ صَدْرَهُۥ ضَيِّقًا حَرَجًا كَأَنَّمَا يَصَّعَّدُ فِى ٱلسَّمَآءِۚ كَذَٰلِكَ يَجْعَلُ ٱللَّهُ ٱلرِّجْسَ عَلَى ٱلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ
আল্লাহ যাকে সৎপথ দেখাতে চান, তার অন্তরকে ইসলামের জন্য খুলে দেন, আর যাকে পথভ্রষ্ট করতে চান তার অন্তরকে সংকীর্ণ সংকুচিত করে দেন, (তার জন্য ইসলাম মান্য করা এমনি কঠিন) যেন সে আকাশে আরোহণ করছে। যারা ঈমান আনে না তাদের উপর আল্লাহ এভাবে লাঞ্ছনা চাপিয়ে দেন।
[আল-আন'আম ০৬ঃ১২৫]
◆- (তবা')মোহর আঁটা ক্বলবের অধিকারী সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ ءَامَنُوا۟ ثُمَّ كَفَرُوا۟ فَطُبِعَ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَفْقَهُونَ
তার কারণ এই যে, তারা ঈমান আনে, অতঃপর কুফুরী করে। এজন্য তাদের অন্তরে মোহর লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। যার ফলে তারা কিছুই বুঝে না
[আল-মুনাফিকুন ৬৩ঃ০৩]
◆- (খতাম) মোহর আঁটা ক্বলবের অধিকারী সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
خَتَمَ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ وَعَلَىٰ سَمْعِهِمْۖ وَعَلَىٰٓ أَبْصَٰرِهِمْ غِشَٰوَةٌۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
আল্লাহ তাদের অন্তর ও কানের উপর মোহর করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখে আছে আবরণ আর তাদের জন্য আছে মহা শাস্তি।
[আল-বাকারাহ ০২ঃ০৭]
একদা হাসান আল-বসরী রাহিমাহুল্লহু তায়ালাকে প্রশ্ন করা হলো "রা-ন" কি?
তিনি বললেনঃ এত মাত্রায় গুনাহের উপর গুনাহ করা যে ক্বলব অন্ধ হয়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
أَفَلَمْ يَسِيرُوا۟ فِى ٱلْأَرْضِ فَتَكُونَ لَهُمْ قُلُوبٌ يَعْقِلُونَ بِهَآ أَوْ ءَاذَانٌ يَسْمَعُونَ بِهَاۖ فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى ٱلْأَبْصَٰرُ وَلَٰكِن تَعْمَى ٱلْقُلُوبُ ٱلَّتِى فِى ٱلصُّدُورِ
তারা কি যমীনে ভ্রমণ করে না? তাহলে তারা হৃদয় দিয়ে বুঝতে পারত, আর তাদের কান শুনতে পারত। প্রকৃতপক্ষে চোখ অন্ধ নয়, বরং বুকের ভিতর যে হৃদয় আছে তা-ই অন্ধ।
[আল-হাজ্ব ২২ঃ৪৬]
ইমাম ইবে কাসীর 'রাহিমাহুল্লহু তায়ালা' নিন্মোক্ত আয়াতের চিহ্নিত অংশের ব্যাখ্যায় বললেনঃ
وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ ٱلْجِنِّ وَٱلْإِنسِۖ لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ ءَاذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَآۚ أُو۟لَٰٓئِكَ كَٱلْأَنْعَٰمِ بَلْ هُمْ أَضَلُّۚ أُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْغَٰفِلُونَ
আমি বহু সংখ্যক জ্বীন আর মানুষকে জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছি, তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তা দিয়ে উপলব্ধি করে না, তাদের চোখ আছে কিন্তু তা দিয়ে দেখে না, তাদের কান আছে কিন্তু তা দিয়ে শোনে না, তারা জন্তু-জানোয়ারের মত, বরং তার চেয়েও পথভ্রষ্ট, তারা একেবারে বে-খবর।
[আল-আ'রাফ ০৭ঃ১৭৯]
অর্থাৎ এই অঙ্গসমুহ যেগুলোকে হিদায়াত লাভের উপকরণ হিসেবে আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে দিয়েছিল সে গুলো থেকে তারা এক বিন্দু ও উপকৃত হতে পারেনি।
নিন্মোক্ত আয়াতের চিহ্নিত অংশের ব্যাখ্যায় ইমাম বাইযাওয়ী রাহিমাহুল্লহু তায়ালা বলেনঃ
خَتَمَ ٱللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ وَعَلَىٰ سَمْعِهِمْۖ وَعَلَىٰٓ أَبْصَٰرِهِمْ غِشَٰوَةٌۖ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
আল্লাহ তাদের অন্তর ও কানের উপর মোহর করে দিয়েছেন, আর তাদের চোখে আছে আবরণ আর তাদের জন্য আছে মহা শাস্তি।
[আল-বাকারাহ ০২ঃ০৭]
"খতাম-মোহর এঁটে দেওয়া" এর মানে হলো এমন ভাবে ক্বলব কে থেকে দেওয়া যে সেখানে না হক্ব প্রবেশ করতে পারে আর না সেখান থেকে বাতিল বের হতে পারে। [নাউজু বিল্লাহি মিন জালিক]
মুহতারাম ভাইয়েরা!
আগামী অধিবেশনে আমরা আলোচনা করব কিভাবে ক্বলব রোগাক্রান্ত হয় সে বিষয়ে। ইনশাআল্লাহ।
আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করছি। অধিবেশন শেষ পর্যন্ত ধৈর্যের সাথে অধ্যায়নের জন্য "জাযাকাল্লহু খইরান আহসানাল জাযা"
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে এবং পুরো উম্মাহকে অন্তরের সকল ব্যাধি থেকে মুক্ত করে হৃদয় কে সদা সুস্থ সবল রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করার তাওফীক দান করুন! আমিন! এবং আমাদের সবাইকে ইখলাসের সাথে জিহাদ ও শাহাদাতের পথে অবিচল থাকার তাওফীক দান করুন! আমিন!
আমাদের নেক দোয়ায় মাজলুম উম্মাহ এবং মুজাহিদগনকে যেন ভুলে না যাই!
আল্ল-হুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লাম ওয়া বা-রিক আলা- নাবিয়্যিনা- মুহাম্মাদ ওয়া আলা- আ-লি মুহাম্মাদ কামা- সল্লাইতা ওয়া সাল্লামতা ওয়া বা-রকতা আলা- ইবর-হী-ম ওয়া আলা- আ-লি ইবর-হী-ম ইন্নাকা হামি-দুম্মাজি-দ।
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله
واصحابه اجمعين
وآخردعوانا ان الحمد لله ربالعالمين
আল্ল-হুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লাম ওয়া বা-রিক আলা- নাবিয়্যিনা- মুহাম্মাদ ওয়া আলা- আ-লি মুহাম্মাদ কামা- সল্লাইতা ওয়া সাল্লামতা ওয়া বা-রকতা আলা- ইবর-হী-ম ওয়া আলা- আ-লি ইবর-হী-ম ইন্নাকা হামি-দুম্মাজি-দ।
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله
واصحابه اجمعين
وآخردعوانا ان الحمد لله ربالعالمين
চলবে ইনশাআল্লাহ.............!
Comment