ধারাবাহিক অন্তরের ব্যাধি সিরিজ। চতুর্থ অধিবেশনঃ
কিভাবে ক্বলব অসুস্থ হয়! এবং কোন জিনিস ক্বলবকে কলুষিত করে।
আলহামদুলিল্লা-হি রব্বিল আ-লামী-ন। ওয়াস্-সলা-তু ওয়াস্-সালা-মু আলা- সাইয়িদিল আম্বিয়া-ই ওয়াল-মুরসালী-ন, ওয়া আলা- আ-লিহী-, ওয়া আসহা-বিহী-, ওয়ামান তাবিয়াহুম বি ইহসা-নিন ইলা- ইয়াওমিদ্দী-ন, মিনাল উলামা-ই ওয়াল মুজাহিদী-ন, ওয়া আ-ম্মাতিল মুসলিমীন, আমী-ন ইয়া- রাব্বাল আ’-লামীন।
আম্মা বা’দ,
মুহতারাম ভাইয়েরা!
প্রথমে আমরা সকলেই একবার দুরূদ শরীফ পড়ে নিই।
আল্ল-হুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লাম ওয়া বা-রিক আলা- নাবিয়্যিনা- মুহাম্মাদ ওয়া আলা- আ-লি মুহাম্মাদ কামা- সল্লাইতা ওয়া সাল্লামতা ওয়া বা-রকতা আলা- ইবর-হী-মা ওয়া আলা- আ-লি ইবর-হী-মা ইন্নাকা হামি-দুম্মাজি-দ।
প্রথমে আমরা সকলেই একবার দুরূদ শরীফ পড়ে নিই।
আল্ল-হুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লাম ওয়া বা-রিক আলা- নাবিয়্যিনা- মুহাম্মাদ ওয়া আলা- আ-লি মুহাম্মাদ কামা- সল্লাইতা ওয়া সাল্লামতা ওয়া বা-রকতা আলা- ইবর-হী-মা ওয়া আলা- আ-লি ইবর-হী-মা ইন্নাকা হামি-দুম্মাজি-দ।
মুহতারাম ভাইয়েরা!
গত অধিবেশনে আমরা আলোচনা করেছিলাম অসুস্থ ক্বলবের লক্ষণ সমূহ নিয়ে! তো আজ আমরা আলোচনা করবো কিভাবে ক্বলব অসুস্থ হয় এবং কোন জিনিস ক্বলবকে কলুষিত করে এ বিষয়ে। ওয়ামা তাওফিকি ইল্লাবিল্লাহ।
কিভাবে ক্বলব অসুস্থ হয়ঃ
এক,
ফিতনায় ইতিবাচক অবস্থানের কারণেঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ “মানুষের হৃদয়ে চাটাইয়ের পাতা (বা ছিলকার) মত একটির পর একটি করে ক্রমান্বয়ে ফিতনা প্রাদুর্ভূত হবে।
"সুতরাং যে হৃদয়ে সে ফিতনা সঞ্চারিত হবে সে হৃদয়ে একটি কালো দাগ পড়ে যাবে। এবং যে হৃদয় তার নিন্দা ও প্রতিবাদ করবে সে হৃদয়ে একটি সাদা দাগ অঙ্কিত হবে।"
পরিশেষে (সকল মানুষের) হৃদয়গুলি দুই শ্রেণীর হৃদয়ে পরিণত হবে।
প্রথম শ্রেণীর হৃদয় হবে মসৃণ পাথরের ন্যায় সাদা; এমন হৃদয় আকাশ-পৃথিবী অবশিষ্ট থাকা অবধি-কাল পর্যন্ত কোন ফিতনা দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।
আর দ্বিতীয় শ্রেণীর হৃদয় হবে উবুড় করা কলসীর মত ছাই রঙের; এমন হৃদয় তার সঞ্চারিত ধারণা ছাড়া কোন ভালোকে ভালো বলে জানবে না এবং মন্দকে মন্দ মনে করবে না (তার প্রতিবাদও করবে না)।” (নাউ-জু বিল্লা-হি মিন জা-লিক)
[মুসলিম ৩৮৬, হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।]
দুই,
তার গুনাহের কারনেঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মুমিন ব্যক্তি যখন গুনাহ করে তখন তার কলবে একটি কালো দাগ পড়ে। অতঃপর সে তওবা করলে, পাপ কাজ ত্যাগ করলে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করলে তার কলব পরিচ্ছন্ন হয়ে যায়।
(আর যদি তাওবা না করে) সে আরও গুনাহ করে সেই কালো দাগ বেড়ে যায়। এই সেই মরিচা যা আল্লাহ তাঁর কিতাবে উল্লেখ করেছেন (অনুবাদ) : “কক্ষনো নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের অন্তরে জং (মরিচা) ধরিয়েছে” (সূরা আল-মুতাফফিফীনঃ ১৪)
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪২৪৪
হাদিসের মান: হাসান হাদিস
কোন জিনিস ক্বলবকে কলুষিত করে
ক্বলব কে কলুষিত করার অনেক কারণ রয়েছে আমরা এখানে কয়েকটি আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
এক,
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার "জিকির" থেকে গাফেল হলে।
দুই,
কল্পনা জল্পনা, বিভ্রান্তি ও স্বপ্নের সাগরে ক্বলব হাবুডুবু খাওয়াঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা আদম সন্তানের ব্যভিচারের অংশ লিখে দিয়েছেন, যা সে অবশ্যই পেয়ে থাকবে। সুতরাং চক্ষুর ব্যভিচার দর্শন, জিহ্বার ব্যভিচার হল কথন, মন আশা ও কামনা করে এবং লজ্জাস্থান তা সত্যায়ন অথবা মিথ্যায়ন করে।
[বুখারী ৬২৪৩, ৬৬১২, মুসলিম ৬৯২৪ হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।]
তিন,
অবাধ্যতা ও বেশি মাত্রায় পাপ করাঃ
সালাফদের কেহ কেহ বলেনঃ ভালোকাজ ক্বলবে নূরে প্রজ্বলিত করে। দেহে শক্তি সঞ্চার করে। চেহারা উজ্জ্বল করে। রিজিক প্রশস্ত করে। সৃষ্টির হৃদয়ে ভালোবাসা তৈরি করে।
আর পাপ কাজ ক্বলবকে অন্ধকার করে। চেহারা বিবর্ণ করে। দেহকে দূর্বল করে। রিজিক বিনষ্ট করে। সৃষ্টির হৃদয়ে ঘৃণা ও ক্ষোভ সৃষ্টি করে।
অবাধ্যতার মাত্রা যখন বেড়েই চলে তখন তাহা ক্বলবে পর্দা এঁটে দেয়। সালাফদের কেহ কেহ নিন্মোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেনঃ “কক্ষনো নয়, বরং তাদের কৃতকর্মই তাদের অন্তরে জং (মরিচা) ধরিয়েছে” (সূরা আল-মুতাফফিফীনঃ ১৪) নিজ কৃত কর্ম হলো গুনাহের পর গুনাহে লিপ্ত থাকা যার ফলে ক্বলব আলো হারিয়ে ফেলে অতপর ক্বলব বেশিমাত্রায় গোনাহপ আগ্রহী হয়ে যায় ফলে তার ক্বলবে মোহর এঁটে দেওয়া হয় যার ফলে তার ক্বলব পর্দায় আচ্ছাদিত হয়ে যায়।
পাপ সমুহ ক্বলবের জন্য সমস্ত বিষাক্ত উপাদান, অসুস্থতা ও মৃত্যুর কারণ। যেমন বিষ দেহের ক্ষতির কারণ।
আব্দুল্লাহ বিন মুবারক রাহিমাহুল্লহু তায়ালা বলেনঃ
আমি দেখেছি পাপ ক্বলব কে মেরে ফেলে।
যে পাপের নেশায় বুঁদ হয়ে যায় তাকে অপমানিত ও করে।
পাপরাজি ছুড়ে ফেলাই ক্বলবের জীবন।
তোমার জন্য ভালো হবে পাপ ছাড় তরে আজীবন
যে পাপের নেশায় বুঁদ হয়ে যায় তাকে অপমানিত ও করে।
পাপরাজি ছুড়ে ফেলাই ক্বলবের জীবন।
তোমার জন্য ভালো হবে পাপ ছাড় তরে আজীবন
চার,
হিংসা করাঃ
হিংসুক আল্লাহ তায়ালার নিয়ামত তাঁর বান্দাকে দেয় দেখে রাগান্বিত হয়। সে চায় ঐ বান্দার নেয়ামত শেষ হয়ে যাক। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
أَمْ يَحْسُدُونَ ٱلنَّاسَ عَلَىٰ مَآ ءَاتَىٰهُمُ ٱللَّهُ مِن فَضْلِهِۦۖ فَقَدْ ءَاتَيْنَآ ءَالَ إِبْرَٰهِيمَ ٱلْكِتَٰبَ وَٱلْحِكْمَةَ وَءَاتَيْنَٰهُم مُّلْكًا عَظِيمًا
কিংবা আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে লোকেদেরকে যেসব নি‘মাত দান করেছেন, সেজন্য কি এরা তাদের হিংসা করে, আমি ইবরাহীমের বংশধরদেরকেও তো কিতাব ও হিকমাত দিয়েছিলাম, তাদেরকে সুবিশাল রাজ্যও প্রদান করেছিলাম।
[আন-নিসা ০৪ঃ৫৪]
(হাদিসের সারমর্ম) এক ব্যক্তিকে নবী করীম সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু মাত্র অন্য ভাই-এর কল্যাণ দেখা হিংসা করেনা এ কারণে জান্নাতি বলে দিয়ে ছিলেন। সুবহানাল্লহ। (মুসনাদে আহমদ)
পাঁচ,
অনর্থক, হারাম, মিথ্যা, গিবত, চোগলখুরী মুলক কথা বলাঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আল্লাহ্* তা’আলার যিকির ছাড়া বেশী কথা বলো না। কেননা, আল্লাহ্* তা’আলার যিকির ছাড়া বেশী কথা বললে অন্তর কঠিন হয়ে যায়। আর নিঃসন্দেহে কঠিন অন্তরের লোকই আল্লাহ্* তা’আলা থেকে সবচেয়ে বেশী দূরে থাকে।
[জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৪১১, হাদিসের মান: দুর্বল হাদিস তবে এটা এমন দূর্বল ও নয় যে আমলের ফজিলতের ক্ষেত্রে নেওয়া যাবেনা।]
আল্লাহ সুবহানাল্লহ ওয়া তায়ালা বলেনঃ
يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ لَا يَحْزُنكَ ٱلَّذِينَ يُسَٰرِعُونَ فِى ٱلْكُفْرِ مِنَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓا۟ ءَامَنَّا بِأَفْوَٰهِهِمْ وَلَمْ تُؤْمِن قُلُوبُهُمْۛ وَمِنَ ٱلَّذِينَ هَادُوا۟ۛ سَمَّٰعُونَ لِلْكَذِبِ سَمَّٰعُونَ لِقَوْمٍ ءَاخَرِينَ لَمْ يَأْتُوكَۖ يُحَرِّفُونَ ٱلْكَلِمَ مِنۢ بَعْدِ مَوَاضِعِهِۦۖ يَقُولُونَ إِنْ أُوتِيتُمْ هَٰذَا فَخُذُوهُ وَإِن لَّمْ تُؤْتَوْهُ فَٱحْذَرُوا۟ۚ وَمَن يُرِدِ ٱللَّهُ فِتْنَتَهُۥ فَلَن تَمْلِكَ لَهُۥ مِنَ ٱللَّهِ شَيْـًٔاۚ أُو۟لَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَمْ يُرِدِ ٱللَّهُ أَن يُطَهِّرَ قُلُوبَهُمْۚ لَهُمْ فِى ٱلدُّنْيَا خِزْىٌۖ وَلَهُمْ فِى ٱلْءَاخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ
হে রসূল! কুফরীর ব্যাপারে তাদের প্রতিযোগিতা যেন তোমাকে দুঃখ না দেয়, যারা মুখে বলে ঈমান এনেছি কিন্তু তাদের অন্তর ঈমান আনেনি। আর যারা ইয়াহূদী, তারা মিথ্যা কথা শুনতে বিশেষ পারদর্শী, তারা তোমার কথাগুলো অন্য সম্প্রদায়ের স্বার্থে কান পেতে শোনে যারা তোমার নিকট (কখনো) আসেনি, এরা আল্লাহর কিতাবের শব্দগুলোকে প্রকৃত অর্থ হতে বিকৃত করে। তারা বলে, তোমরা এ রকম নির্দেশপ্রাপ্ত হলে মানবে, আর তা না হলে বর্জন করবে। বস্তুত আল্লাহই যাকে ফিতনায় ফেলতে চান, তার জন্য আল্লাহর কাছে তোমার কিছুই করার নেই। ওরা হল সেই লোক, যাদের অন্তরাত্মাকে আল্লাহ পবিত্র করতে চান না। তাদের জন্য দুনিয়াতে আছে লাঞ্ছনা, আর তাদের জন্য আখেরাতে আছে মহা শাস্তি।
[আল-মাইদাহ ০৫ঃ৪১]
ছয়,
মুনাফেকী, কুফুরি, ফাসেকী, বিভ্রান্তি ও পাপের অন্ধকারঃ
মুনাফিকদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
مَثَلُهُمْ كَمَثَلِ ٱلَّذِى ٱسْتَوْقَدَ نَارًا فَلَمَّآ أَضَآءَتْ مَا حَوْلَهُۥ ذَهَبَ ٱللَّهُ بِنُورِهِمْ وَتَرَكَهُمْ فِى ظُلُمَٰتٍ لَّا يُبْصِرُونَ- صُمٌّۢ بُكْمٌ عُمْىٌ فَهُمْ لَا يَرْجِعُونَ
তাদের উদাহরণ, যেমন এক ব্যক্তি আগুন জ্বালালো, তা যখন তার চারদিক আলোকিত করল আল্লাহ তখন তাদের জ্যোতি অপসারণ করে দিলেন এবং তাদেরকে এমন ঘন অন্ধকারে ফেলে দিলেন যে, তারা কিছুই দেখতে পায় না। তারা বধির, মুক-বোবা, অন্ধ; কাজেই তারা (হিদায়াতের দিকে) ফিরে আসবে না।
আল-বাকারাহ ০২ঃ ১৭-১৮
তারা হক্ব শুনতে ও কবুল করতে বধির। আর সঠিক পথ দেখতে তারা অন্ধ, আর সত্যকে সাহায্য করতে তারা বোবা, বস্তুত এ সবি হৃদয় অন্ধকার হওয়ার বহিঃপ্রকাশ।
সাত,
নাফসের কামনা বাসনাঃ
বাহ্যিক কামনা-বাসনা যেমনঃ পানাহার।
আভ্যন্তরীণ কামনা-বাসনা যেমনঃ লোক দেখানো মনোভাব। নিজ ভাই থেকে (মাফ করা যায় এমন বিষয় বা নিজের কৃতকর্মের জন্য প্রাপ্য সাজার) প্রতিশোধ গ্রহণের মনোভাব।
মুহতারাম ভাইয়েরা!
আগামী অধিবেশনে আমরা আলোচনা করব ক্বলবের প্রকারভেদ নিয়ে। ইনশাআল্লাহ। আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করছি। অধিবেশন শেষ পর্যন্ত ধৈর্যের সাথে অধ্যায়নের জন্য "জাযাকাল্লহু খইরান আহসানাল জাযা"
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সবাইকে এবং পুরো উম্মাহকে অন্তরের সকল ব্যাধি থেকে মুক্ত করে হৃদয় কে সদা সুস্থ সবল রাখার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করার তাওফীক দান করুন! আমিন! এবং আমাদের সবাইকে ইখলাসের সাথে জিহাদ ও শাহাদাতের পথে অবিচল থাকার তাওফীক দান করুন! আমিন!
আমাদের নেক দোয়ায় মাজলুম উম্মাহ এবং মুজাহিদগনকে যেন ভুলে না যাই!
আল্ল-হুম্মা সল্লি ওয়া সাল্লাম ওয়া বা-রিক আলা- নাবিয়্যিনা- মুহাম্মাদ ওয়া আলা- আ-লি মুহাম্মাদ কামা- সল্লাইতা ওয়া সাল্লামতা ওয়া বা-রকতা আলা- ইবর-হী-ম ওয়া আলা- আ-লি ইবর-হী-ম ইন্নাকা হামি-দুম্মাজি-দ।
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله
واصحابه اجمعين
وآخردعوانا ان الحمد لله ربالعالمين
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله
واصحابه اجمعين
وآخردعوانا ان الحمد لله ربالعالمين
চলবে ইনশাআল্লাহ.............!
..........
Comment