Announcement

Collapse
No announcement yet.

টপিক-১ঃ আপনার ব্যাক্তিত্ব বিকশিত করুন by ড. মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান আল-আরিফী

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • টপিক-১ঃ আপনার ব্যাক্তিত্ব বিকশিত করুন by ড. মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান আল-আরিফী

    সবার ব্যাক্তিত্বের বিকাশ একরকম নয়। অনেকে তো এমন যে, এ ক্ষেত্রে তার কোনো উন্নতিই নেই। চলছে তো চলছেই। এ রকম বিশ বছরের কোনো যুবকের সাথে আপনি কিছুক্ষণ বসলে দেখবেন তার নির্দিষ্ট লাইফ স্টাইল, বাচনভঙ্গি ও চিন্তাধারা রয়েছে। দশ বছর পর আবার তাকে দেখুন। দেখবেন, তার সার্বিক অবস্থা আগের মতোই রয়ে গেছে। তার কোনো উন্নতিই হয় নি।

    তবে এমন অনেক যুবকের দেখাও আপনি পাবেন, যাদের ব্যক্তিত্ব প্রতিদিনই বিকশিত হচ্ছে। আগের দিনের চেয়েও পরের দিন তার ব্যক্তিত্ব উল্লেখযোগ্য হারে উন্নত হচ্ছে; বরং বলা যায় প্রতি মুহুর্তেই সে আত্নোন্নয়নের ধাপ অতিক্রম করে চলছে। এমন কেন হয়? বিষয়টি নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক।

    মনে করুন, দু'জন ব্যক্তি নিয়মিত টিভি চ্যানেল দেখে। এদের একজন এমনসব প্রোগ্রাম দেখে যেগুলো তার চিন্তাশক্তিকে সমৃদ্ব করে ও মেধার বিকাশে সহায়ক হয় এবং জ্ঞানগর্ভ সংলাপ ও টকশো থেকে অন্যদের অভিজ্ঞতাসমূহকে জেনে তা নিজের জীবনে কাজে লাগায়। এর মাধ্যমে সে চমৎকার বিশ্লেষণী ক্ষমতা, ভাষাগত দক্ষতা, বুদ্ধিমত্তা, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ও বিতর্কের কলা-কৌশল আয়ত্ত করতে পারে। অপরপক্ষে দ্বিতীয়জন শুধু প্রেমকাহিনীনির্ভর নাটক, সিরিজ, আবেগপূর্ণ চলচ্চিত্র ও এ্যাকশনধর্মী ছায়াছবি দেখে সময় কাটায়।

    পাঁচ-দশ বছর পর দু'জনের চিন্তাধারা ও ব্যক্তিত্ব কেমন হবে? দু'জনের মধ্যে কার আত্নশক্তি বেশি সমৃদ্ধ হবে? জেনারেল নলেজের দক্ষতা, বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের পরিধি, অপরকে প্রভাবিত করার যোগ্যতা ও প্রতিকূল পরিবেশে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর সফলতার ক্ষেত্রে উভয়ের সক্ষমতা কি এক রকম হবে? কখনো নয়; বরং এসব ক্ষেত্রে প্রথমজনের দক্ষতা ও যোগ্যতা হবে দ্বিতীয়জনের তুলনায় অনেক বেশি ও ভিন্নধর্মী।
    দু'জনের কথাবার্তার ঢং ও উদ্ধৃতি দেয়ার পদ্ধতিও হবে ভিন্নরকম। প্রথমজন কুরআন, হাদিস, সঠিক তথ্য ও পরিসংখ্যানের মাধ্যমে উদ্ধৃতি দেবে। আর অপর দিকে দ্বিতীয় জন অভিনেতা ও নায়ক-নায়িকাদের সংলাপ ও গানের কলি দিয়ে উদ্ধৃতি দেবে।

    এ ধরনের একজন ব্যক্তি একদিন আমার সঙ্গে কথা বলার সময় হঠাৎ বললো, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, 'হে বান্দা! তুমি চেষ্টা কর। আমিও তোমার সঙ্গে চেষ্টা করব'।

    আমি তাকে সতর্ক করে বললাম, 'ভাইজান, আপনি এটা কি বলছেন! এটা তো কুরআনের আয়াত তথা আল্লাহর কথা নয়।'

    আমার কথা শুনে লোকটার চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। সে একেবারে থ বনে গেল। পরবর্তীতে তার কথাটির উৎস নিয়ে আমি অনেক খোজাখুজি করলাম। আমার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এলো যে, এটা ছিল মিশরীয় একটি প্রবাদ বাক্য। যা কোনো ধারাবাহিক নাটক থেকে শুনে তার মনে গেঁথে গেছে। বস্তুত যে পাত্রে যা থাকে তা থেকে তাই ঝরে।

    আরেকটি বিষয় প্রনিধানযোগ্য, পত্র- পত্রিকা তো অনেকেই পড়েন কিন্তু কয়জন পাঠক এমন আছেন যারা উপকারী সংবাদ, তথ্যবহুল ফিচার ও সম্পাদকীয় কলাম পড়েন, যা তাদের আত্মবিকাশ, দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রজ্ঞার উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে। এ ধরনের পাঠকের সংখ্যা খুবই কম। অথচ খেলার খবর ও বিনোদনের পাতা পড়ার মতো লোকের অভাব নাই। এ কারনেই পত্র পত্রিকাগুলোতে বর্তমানে খেলার খবর ও বিনোদনের পাতার কলেবর বাড়ানোর প্রতিযোগিতা চলছে।

    শুধু যে পত্র পত্রিকা পাঠের ব্যাপারে এ মনোভাব বিরাজ করছে তা নয়; বরং আমাদের বিভিন্ন আলোচনার আসরগুলোর ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আমাদের সময় কাটানোর ক্ষেত্রগুলোতেও অনুরূপ অবস্থা বিরাজমান। সব জায়গায় আমরা অহেতুক বিষয় নিয়ে ব্যস্ত থাকি।

    আপনি যদি 'লেজ' না হয়ে 'মাথা' হতে চান, জীবনে বড় কিছু করতে চান তাহলে জীবনের প্রতি মুহুর্তে আপনাকে আত্নবিকাশে মনোযোগী হতে হবে। নিজের যোগ্যতা ও প্রতিভা বিকাশে সহায়ক এমন কাজ করতে হবে। এজন্য আপনাকে প্রচুর অনুশীলন করতে হবে।

    আব্দুল্লাহ নামে এক উদ্যমী ব্যক্তি ছিল। কিন্তু তার মধ্যে অভিজ্ঞতার কিছুটা ঘাটতি ছিল। একদিন সে জোহরের নামাজ পড়ার জন্যে মসজিদের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো। নামাযের প্রতি তার ছিল প্রচুর আগ্রহ। দীনের প্রতি সীমাহীন অনুরাগ তাকে মসজিদের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো। পাছে জামাত মিস হয়ে যায় কিনা এ আশংকায় সে দ্রুত হাটছিলেন। কিন্তু মসজিদে যাওয়ার পথে সে একজন লোককে দেখলো, লোকটি খেজুর গাছের উপর বসে খেজুরের কাদি ঠিক করছে। ভাবখানা দেখে মনে হচ্ছিল যে, সে আযান শুনে নি কিংবা নামায পড়ার কোনো গরজ অনুভব করছে না। এটা দেখে তো আব্দুল্লাহ রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে গেল। সে ঝাঝালো স্বরে বললো, 'এ বেটা! নামাযের জন্যে তাড়াতাড়ি গাছ থেকে নেমে আয়।' লোকটি শান্তভাবে উত্তর দিল, 'ঠিক আছে ভাই আসছি'। আব্দুল্লাহ বললো, ' তাড়াতাড়ি কর। বেটা গাধা কোথাকার!'

    গাধা শব্দটি শোনার সাথে সাথে লোকটির মাথায় রক্ত উঠে গেল। সে রাগে খেজুরের গাছ থেকে একটি শাখা কেটে নিয়ে বললো কী বললে আমি গাধা? একটু দাড়াও তোমার বারোটা বাজিয়ে দেব।

    অবস্থা খারাপ দেখে লোকটি যেন তাকে না চিনতে পারে তাই সে রুমাল দিয়ে চেহারা ঢেকে মসজিদের দিকে দৌড় দিল। এদিকে লোকটি গাছ থেকে নেমে আব্দুল্লাহকে না পেয়ে বাড়ি চলে গেল এবং নামাজ পড়ে কিছুটা শান্ত হলো। হালকা বিশ্রাম নিয়ে অবশিষ্ট কাজ শেষ করার জন্যে আবার গাছে চড়লো।

    আসরের সময় আব্দুল্লাহ নামাজ পড়তে বের হলো। লোকটিও আগের মতোই গাছের উপর বসে কাজ করেছিলেন। আব্দুল্লাহ এবার দাওয়াতের রীতি পরিবর্তন করে ফেললেন। সে লোকটিকে সালাম দিয়ে বললো, 'ভাইজান! কেমন আছেন?'
    লোকটি বললো, ' আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি'।
    এরপর আব্দুল্লাহ জিজ্ঞেস করলেন, ' এবছর খেজুর কেমন হয়েছে?'
    লোকটি বললো, ' আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে'।

    এর জবাবে আব্দুল্লাহ লোকটির জন্যে দোয়া করলো- ' আল্লাহ আপনাকে তৌফিক দান করুণ। আপনার ফল ও ফসলে বরকত দান করুণ। আপনার রিযিক বাড়িয়ে দিন। আপনার পরিশ্রমের উত্তম প্রতিদান দান করুণ। আব্দুল্লাহর দোয়া শুনে লোকটি খুশি হয়ে আমিন আমিন বলতে লাগলেন। এরপর তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো।

    এরপর আব্দুল্লাহ বললো, মনে হচ্ছে, কাজের ব্যস্ততায় আসরের আযান শুনতে পাননি। আসরের আযান তো হয়ে গেছে। একামতের সময়ও হয়ে গেছে। এখন একটু কাজে বিরতি দিয়ে নামাজটা পড়ে নিন। নামাযের শেষে অবশিষ্ট কাজ করতে পারবেন। আল্লাহ আপনার শরীর সুস্থ রাখুন।

    লোকটি খুশি হয়ে বললো, ' ইনশাআল্লাহ ইনশাআল্লাহ '।

    এরপর সে আস্তে আস্তে গাছ থেকে নামলো। এবং নীচে নেমে আব্দুল্লাহ এর সাথে করমর্দন করল। আর বলল, " এমন অমায়িক ব্যবহারের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ। তবে যোহরের সময় যে লোকটার সাথে আমার কথা হয়েছিল, তাকে ধরতে পারলে বুঝিয়ে দিতাম গাধা কে?!'

    ফলাফল...
    আপনি অন্যদের সাথে যেমন আচরণ করবেন,
    অন্যরাও আপনার সাথে তেমন আচরণ করবে।
    ©©©

  • #2
    মাশাআল্লাহ। আল্লাহ আপনার কাজে বারাকাহ দান করুন। খু-উ-ব জ্ঞানগর্ব আলোচনা ।

    Comment


    • #3
      Masallah onek sundor lekha..

      Comment


      • #4
        খুব সুন্দর লিখেছেন ।
        "জিহাদ ঈমানের একটি অংশ ৷"-ইমাম বোখারী রহিমাহুল্লাহ

        Comment


        • #5
          জাযাকাল্লাহ ভাই খুব সুন্দর একটা পোস্ট করেছেন।
          ইমাম মাহদির সৈন্য মোরা, ভয় করিনা কাউকে আল্লাহ ছাড়া।

          Comment


          • #6
            এ বিষয়ে অডিও লেকচার দেওয়ার জন্য সব ভাইদের নিকট অনুরোধ।
            ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدةولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القعدین.

            Comment

            Working...
            X