আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ
হে আমার প্রিয় ভাই, আমি আল্লাহর দরবারে দুয়া করি আল্লাহ যেন আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে উত্তম হালাতে রাখেন। আল্লাহ্ যেন আমাদের ক্ষমা করে দেন এবং আমাদের উপরে সন্তুষ্ট হয়ে যান।
হঠাৎ করেই আমার মনে হলো−ভাইদের উদ্দেশে কিছু লিখি; কারণ আমাদের অবস্থা তো এমন যে, আমরা চাইলেই নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারি না। তাই ভাবলাম কিছু লিখে ফেলি। এই লেখার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের পরস্পরের জন্য নাসিহা হিসেবে কিছু কথা বলা, অন্তত চেষ্টা করা। আমি আশা করি আল্লাহ্ আমাকে এবং আমাদেরকে এর থেকে কল্যাণ দান করবেন ইনশাআল্লাহ্। আল্লাহ্ আমাদের এমন এক দ্বীন দিয়েছেন যার সৌন্দর্য বলে শেষ করা সম্ভব নয়; আর প্রিয় ভাই, এ কথা আমি অন্তর থেকেই বলছি। আমাদের দ্বীনে সামান্য একটা কথা আল্লাহর ইচ্ছায় হয়ে যেতে পারে কারো জন্য হেদায়েতের মাধ্যম। আর সে কথা তাহলে কতোইনা উত্তম কথার মধ্যে শামিল হবে! আমাদের সামান্য হাসি হয়ে যেতে পারে সাদাকাহ, এমন কি আমাদের চোখের পানি হয়ে যেতে পারে জাহান্নাম থেকে নাজাতের উপায়। আমাদের এক হওয়া কিংবা আলাদা হওয়া−হয়ে যেতে পারে আল্লাহর আরশের নিচে স্থান পাবার উপায়! এক উস্তাদ বলছিলেন, জান্নাতে আমার বিশাল কোনো বালাখানা দরকার নাই, আমি জান্নাতের রাস্তার ধারে থাকতে পারলেই খুশি। এমন অবস্থায় কথা হচ্ছে, আল্লাহর আরশের নিচে অবস্থানের। যে দিনটিকে আল্লাহ্ ইয়াওম আল আজিম, মহা কঠিন এক দিন হিসেবে জানিয়েছেন, ৫০ হাজার বছরের সে কঠিন সময়ে আল্লাহর আরশের নিচের অবস্থান কতোইনা মূল্যবান হতে পারে! আর এমন অবস্থান যাদের জন্য তাদের এক শ্রেণী হচ্ছেন এমন মুমিন বান্দা যারা আল্লাহর জন্যই মিলিত হোন, আর আল্লাহর জন্যই আলাদা হয়ে যান। এই আমাদের দ্বীন, আর তিনিই আমাদের রব্ব, বান্দাকে দিতে কতোইনা ভালোবাসেন তিনি! আমি যখন ভাবি, আল্লাহ্ কতো দিতে চান আর কতো দিতে সক্ষম, তখন আমি খুব বেশী দূর যেতে পারিনা। কারণ আল্লাহর সেই কথা আমাকে থামিয়ে দেয়, তিনি বলেন: (ভাবার্থে) জিন্ন এবং ইনসান সবাই মিলে যদি আমার কাছে চাইতেই থাকে আর আমি দিতেই থাকি এভাবে আমি যদি তাদের সমস্ত চাওয়া পূরণ করে দেই তবে আমার রাজত্ব থেকে শুধু তেমনই কমে যাবে যেমন সাগর থেকে সুই ডুবিয়ে উঠিয়ে আনলে সাগরের পানি কমে থাকে! এমন রব্ব যখন আমাদের আর এমন দ্বীন যখন আমাদের আল্লাহ্ দিয়েছেন, তখন সেই রব্ব-এর সন্তুষ্টির জন্য সামান্য কথাও অনেক হয়ে যেতে পারে; যদি তা আরশের মালিক দয়া করে কবুল করে নেন। এ লেখার অন্যতম একটি উদ্দেশ্যও তাই, আমি আশা রাখি আমার রব্ব আমার এই চেষ্টায় সন্তুষ্ট হবেন, আমার ভাইয়েরা আমার জন্য দুয়া করবেন।
কী লিখব? কোন প্রসঙ্গে লিখব? আর এমন সম্ভাবনাই খুব বেশী যে, এই লেখা যাঁরা পড়বেন ইনশাআল্লাহ তাঁরা আমার চেয়ে সবদিক থেকে কল্যাণের পথে অধিক অগ্রগামী। তাই আমার জন্য এটি কিছুটা চিন্তার বিষয় যে, আমি এমন ভাইদের সামনে কীই-বা কথা পেশ করতে পারি। পরে ভাবলাম, আমার নিজের জীবনের চলার পথে এমন দু-চার কিছু কথা যা আমাদের নিজেদের মাঝে আলাপচারিতার মতো হতে পারে এবং একই সাথে আমাদের জন্য কল্যাণকরও হতে পারে ইনশাআল্লাহ্− তেমন কিছু উল্লেখ করি। অনেকটা এমন যে, আমার মনের কিছু কথা আরেক ভাইয়ের মনের সামনে পেশ করা। আল্লাহ্ই তাউফিক দাতা।
আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম, আল্লাহ তোমাকে দ্বীনের বুঝ দেয়ার পর থেকে কী কী বিষয় তোমার জন্য চিন্তার খোরাক হয়েছিলো, কোন কোন বিষয় তোমাকে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছিলো, আর কোন বিষয় তোমার পাথরের মত মনটাকে নাড়াচাড়া দিতে পেরেছিলো? আমি ভাবলাম এর মধ্যে থেকেই কিছু আপনাদের সামনে পেশ করি।
১। দ্বীন বুঝার পর থেকে আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়টি হচ্ছে− আল্লাহকে বুঝা। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক। প্রত্যেকটি বান্দার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক বিদ্যমান। আল্লাহ্ কখনোই তাঁর বান্দার সাথে এই সম্পর্ক ছিন্ন করেন না, যতোক্ষণ না বান্দা নিজে তা করে ফেলে, আল্লাহর পানাহ। তবে কথা হচ্ছে, এই সম্পর্ক শব্দটি এই বিষয়টিকে প্রকাশ করার জন্য যথেষ্ট না। কারণ, প্রতিটি বান্দার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক এবং সম্পর্কের গভীরতা আলাদা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেই পবিত্র কথা - "বাল, রফিক আল আ'লা" এর দ্বারা আল্লাহর সাথে যে সম্পর্ক কিংবা আল্লাহর কোনো আউলিয়ার সাথে আল্লাহর যে সম্পর্ক কিংবা আমাদের মধ্য থেকে আল্লাহর অনুগ্রহ ধন্য কারো সাথে আল্লাহর যে সম্পর্ক− তা কি কখনো এক! কখনোই না। কিন্তু প্রত্যেক ক্ষেত্রে শব্দটা সেই একই−“সম্পর্ক”। এ কথাগুলো এজন্য বললাম যেন একটা ধারণা ফুটে উঠে যে, সম্পর্ক আসলে কতো গভীর থেকে গভীরে যেতে পারে। বলতে চাচ্ছি, আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক যদি সত্যই সামনের দিকে অগ্রসর হয় তবে তা আল্লাহর অনুগ্রহে গভীর থেকে গভীরে যেতে যেতে এমন পর্যায়ে চলে যাওয়া সম্ভব যেই পর্যায়ে গিয়ে বান্দা আল্লাহর প্রেমিক হয়ে যায়! বান্দা আল্লাহ্-কে ভালোবাসতে শিখে যায়। আহ! কী এক অবস্থা, বান্দা তখন আল্লাহ্ ছাড়া আর অন্য কিছুর মধ্যেই পরিপূর্ণ ভালোবাসা খুঁজে পায় না, শান্তি খুঁজে পায় না, ‘সাকিনা’ খুঁজে পায় না। এমনও হয়, সে আল্লাহর জন্য পাগল হয়ে যায় আর ছটফট করতে থাকে কখন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতে দাঁড়াতে পারবে! কোথাও পড়েছিলাম, যদি আমি ভুল না হই তাহলে মোটামুটি এমন যে, জান্নাতের বিছানায় যখন শহীদগণ বসে থাকবেন বা গড়াগড়ি দিবেন তখন আল্লাহ্ রব্বুল ইজ্জাহ তাঁদের দিকে তাকিয়ে হাসবেন আর বলবেন এরা আমার (প্রেমে) পাগল বান্দা! হায়রে দুনিয়ার জীবন, এটা তার কাছে মাছির পাখার চেয়েও কম মূল্যের হয়ে যায়! আমি তো শুধু বান্দার দিক থেকে বললাম, আল্লাহর দিক থেকে বলার সামর্থ্য আমার ভাষায় নাই; তাই আল্লাহ যা বলেছেন সেটাই বলি। আল্লাহ্ বলেন, "... অতঃপর আমি আমার বান্দাকে ভালোবেসে ফেলি আর আমি হয়ে যাই তার চোখ যা দিয়ে সে দেখে, আমি হয়ে যাই তার হাত, আমি হয়ে যাই তার পা ..." আমি যখন চিন্তা করি আরশের অধিপতি কতোটুকু ভালোবাসা নিয়ে তাঁর তুচ্ছ বান্দাদের জন্য এমন কথা উপহার দিতে পারেন - "অতঃপর আমি আমার বান্দাকে ভালোবেসে ফেলি..." আমার জীবন কুরবান হয়ে যাক এমন রব্বের এক ঝিলিক সন্তুষ্টির জন্য! আরশের মালিক আল্লাহ রব্বুল ইজ্জাহ'র এই কথার সামনে মাথা নিচু করা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখিনা। এটি কেবল একটি উদাহরণ!
তো বিষয়টি ছিলো−আল্লাহর সাথে সম্পর্ক। আমার যতোটুকু স্মরণে আসে, একটা ঘটনা পড়েছিলাম− এক ডাকাত এক ব্যক্তিকে ধরাশায়ী করে। তার ধন-সম্পদ তো নিবেই এমনকি তাকে হত্যাও করে ফেলবে। সেই ব্যক্তি তখন ডাকাতকে বলে, আমাকে দুই রাকাত নামাজ পড়তে দাও। নামাজ পড়ে সে দুয়া করে। দুয়াটির শেষ অংশটুকু আমার মনে আছে - "ইয়া মুগিছু আগিছ নি" "ও (আল্লাহ্)! আপনিই সাহায্য করে থাকেন, সাহায্য করুন" দুয়া শেষ করার আগেই এক ঘোড়সওয়ার (ফেরেশতা) এসে খোলা তরবারী দিয়ে সেই ডাকাতকে দু-টুকরা করে ফেলে। আমি এটা শুনে ভাবছিলাম− আহা! আল্লাহর সাথে এমন সম্পর্ক হয়ে গেলে কতোইনা ভালো হয়! এরপরে কোনো একদিন রাস্তায় চলার পথে আমাকে তেমন কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ তাগুতরা ঘিরে ফেলে। আমি একা, আমাকে ঘিরে চারপাশে অনেক তাগুত। আমার মনে পড়ে গেলো "ইয়া মুগিছু আগিছ নি" আল্লাহর দয়া! আমার গায়ে একটি টোকা পর্যন্ত না দিয়ে তারা আমাকে চলে যেতে দিলো! এই পুরা ঘটনায় আমার নিজের দিকে সম্পৃক্ত করার মতো কিছুই নাই, যা আল্লাহ্ আরো উত্তম জানেন। বরং সবটুকুই হচ্ছে আমার মতো গুনাহগারের উপরে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত। আমি আশা করি আমার আল্লাহ্ আমাকে তাঁর সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক করার তাউফিক দিয়ে ধন্য করবেন। কথা এই যে, ভাই আল্লাহ্-কে তালাশ করতে থাকা, আশপাশে দৃষ্টি দিয়ে আল্লাহর করুণা, দয়া, ভালোবাসা−এগুলোকে অন্তরে নিয়ে আসা এমনভাবে যে, মা তার সন্তানকে ভালোবাসেন এ কথা বলার পরে যেমন আমাদের কোনো কল্পনা করার দরকার হয়না, তেমনি আল্লাহর কথা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে যেন আমাদের জন্য আল্লাহর ভালোবাসার উপলব্ধিও চলে আসে। আল্লাহ্-কে ভালোবাসতে চাওয়ার এবং ভালোবাসতে পারার সাহস করা এবং আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে সেই দুয়া করা। নিঃসন্দেহে ভালোবাসার জন্য এবং ভালোবাসা পাবার জন্য আল্লাহ্ এবং একমাত্র আল্লাহ্ই সর্বোত্তম!
আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে আরেকটি বিষয় আমাকে খুব প্রভাবিত করেছিলো আলহামদুলিল্লাহ। আমি কোথাও শুনেছিলাম, আল্লাহ্ ভালোবাসেন সেই ব্যক্তিকে যে আল্লাহকে ভালোবাসে। আল্লাহ্ ভালোবাসেন সেই ব্যক্তিকে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ যাকে ভালোবাসেন তাকে ভালোবাসে। আল্লাহ্ ভালোবাসেন সেই ব্যক্তিকে যে অন্যকে আল্লাহ্-কে ভালোবাসতে শেখায়। আল্লাহর বড়ত্ব, মহত্ত্ব, আল্লাহর ভালোবাসার কথা বলে, অর্থাৎ অন্যের সামনে আল্লাহ্-কে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে। আল্লাহর বড়ত্ব, আল্লাহর মহত্ত্ব, আল্লাহর ভালোবাসা, আল্লাহর সিফাত−এগুলো এমন সুন্দরভাবে অন্যের সামনে উপস্থাপন করা যেন, আল্লাহর ইচ্ছায় সেও আল্লাহ্-কে ভালোবাসতে ইচ্ছা করে। এ বিষয়টি আমার খুব মনে ধরেছিলো আলহামদুলিল্লাহ। আমার ব্যাপারটি ছিলো এমন যে, আমি আল্লাহ্-কে ভালোবাসি এমন কথা সাহস করে বলতে পারি না। আল্লাহ্ আমি আপনাকে ভালোবাসি এ কথার দাবী এবং ব্যাপকতার সামনে আমি নিতান্তই নগন্য, আল্লাহ্ আমার উপর রহম করুন। একই সাথে আল্লাহ্ যাদের ভালোবাসেন তাদেরকে আমি ভালোবাসি−এ কথার সত্যতা কেবল আল্লাহই উত্তম জানেন। আমি ভাবলাম আমি বরং চেষ্টা করি, আল্লাহ্-কে অন্যের সামনে উপস্থাপন করার। আসলে এটা আমাদেরই কাজ, যেহেতু আমরাই দুনিয়ায় আল্লাহর খলিফা। আর প্রতিনিধি তার রব্বের ব্যাপারে কথা বলবে না তো আর কে বলবে? আল্লাহর ব্যাপারে কথা বলার জন্য আগে তাহলে আল্লাহ্-কে জানতে হবে, অন্তত জানার চেষ্টা করতে হবে। এবং আল্লাহর তাউফিকে আমি যৎসামান্য যাই জানতে পারলাম তা সর্বপ্রথম আমার নিজের অন্তরের জন্য প্রশান্তি ছিলো আলহামদুলিল্লাহ!
প্রিয় ভাই আমার, আল্লাহ্র ব্যাপারে কথা বলা যে কতো সম্মানের কাজ! এ কাজ ছিলো নবী রাসুলদের। সেই একই কাজ আল্লাহ্ আমাদেরও করার সুযোগ দিয়ে ধন্য করেছেন। আল্লাহর ব্যাপারে যা জানেন তা অন্যকে জানান, অন্যের সাথে শেয়ার করেন। পরিসর যতো ক্ষুদ্রই হোক না কেন! আপনি আল্লাহ্-কে আরেক বান্দার সামনে উপস্থাপন করবেন, পরিচয় করিয়ে দিবেন এ কাজ কেমন সম্মানের হতে পারে! আর এই কাজের পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ্ আমাদের ভালোবাসবেন। তাই যতো ছোটই হোক কিংবা বড় বিষয়ই হোক, সে বিষয়ের সাথে কিছু না কিছু কথা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করে রাখা। আল্লাহ্ ব্যতীত আমাদের কোনো কাজ, কথা সম্ভব না। আর আমরা আল্লাহর প্রশংসা করে কখনোই শেষ করতে বা হক্ক আদায় করতে পারবো না। তাই আমরা যা করতে পারি তা হলো, আমাদের কাজ এবং কথা থেকে কিছু অংশ আল্লাহর স্মরণ, আল্লাহর পরিচয়, আল্লাহর উপস্থাপনের জন্য বরাদ্দ রাখার চেষ্টা করা। ছোট ছোট কথা, কিন্তু আল্লাহ্ চাইলে তা কোনো একদিন আমাদের অন্তরে আল্লাহকে ভালোবাসার ইচ্ছা নিয়ে আসবে ইনশাআল্লাহ! যেসব ভাইকে আল্লাহ্ ইলম এবং হিকমাহর নিয়ামত দানে ধন্য করেছেন, সেসব সম্মানিত ভাইদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আপনারা আপনাদের কঠিন ব্যস্ততার মাঝেও কিছু সময় যদি বের করা সম্ভব হয় আমাদের মত ভাইদের জন্য। আল্লাহর ব্যাপারে স্মরনিকা আমাদের প্রত্যেকের জন্য কল্যাণই বয়ে নিয়ে আসবে ইনশাআল্লাহ। হতে পারে ছোট কিছু হালাকা, হতে পারে কিছু লেখা, চিঠি, নাসিহা, হতে পারে বয়ান, হতে পারে কিছু আয়াতের তাফসিরের সহজবোধ্য শিক্ষা, বুঝ এবং উপলব্ধি। একই সাথে অন্য ভাইদের মধ্যে যাদের পক্ষে সম্ভব হবে ব্যস্ততার ফাঁকেও একটু চিন্তা করা যে, আজ আল্লাহর জন্য আমি নতুন কী প্রেজেন্টেশন শিখতে পারি? হতে পারে এক-দুইটি আয়াত, হতে পারে আল্লাহর কোনো একটি নাম, হতে পারে কোনো ঘটনা−এমন যে কোনো কিছু।
২। দ্বিতীয় যে বিষয়টি আমার চিন্তায় প্রভাব ফেলেছে তা হচ্ছে−কালামুল্লাহ। কথা আর সামান্য বাড়ানোর আগেই এই স্বীকারোক্তি প্রয়োজন আমি এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য উপযুক্ত কেউ না, কারণ আমার সে যোগ্যতা নাই। আমি শুধু এ বিষয়ে আমার অন্তরের কিছু কথা পেশ করবো ইনশাআল্লাহ্। কালামুল্লাহ এর ব্যাপারে একটি ঘটনা না বলে পারছিনা− শাহবাগ থেকে যখন চেতনার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছিলো সেই সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় টুকটাক কিছু লেখায় আমি কুরআন থেকে আয়াত কোট করতাম। দেখা যেতো, কেবল বিষয়ভিত্তিক আয়াত আমি খুঁজে দেখতাম। একদিন লজ্জা লাগলো, এ কেমন কথা। আমি এই কিতাবের থেকে মাত্র দু-এক লাইনের দিকে তাকাচ্ছি, তা-ও কিনা আমার মনমতো! যদি আমার বুঝের ভুল হয়, আগপিছের লাইনগুলোর দায়িত্ব কার জিম্মায়? শানে নুজুল কার জিম্মায়? কুরআন নিয়ে এ কেমন আচরণ! এরপরে আমি চেষ্টা করতে থাকলাম কুরআন আরেকটু ভালোভাবে বুঝার। কিন্তু আমার অনেক সীমাবদ্ধতা ছিলো, বিশেষ করে আরবী। যাইহোক, আলহামদুলিল্লাহ এদিক-সেদিক বিভিন্ন বিষয় দেখতে দেখতে এক সময় আল্লাহ্ বুঝার তাউফিক দিলেন এই কুরআন আসলে মিরাকল! এই কুরআন আসলে অনবদ্য! এর আসলেই কোনো তুলনা হয় না। সত্য করে বলার চেষ্টা করি, এ অনুভূতি অনেকটা নতুন গাড়ি চালানোর মতো, এক অজানা আনন্দ, এক নতুন রোমাঞ্চকর অনুভূতি। মনে হতো অদ্ভুত! এর ভিতরে এই বিষয় লুকিয়ে ছিলো! মজার ব্যাপার সেটা না যা আমি বুঝতে পারলাম, বরং রোমাঞ্চকর অনুভূতিটা ছিলো, আমি নিশ্চিত বুঝতে পারতাম আমি যাই বুঝেছি সেটা হচ্ছে দুধের পেয়ালায় সামান্য চুমুক দেয়া মাত্র, এখনো পুরা পেয়ালা বাকি পড়েই আছে। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি আমি যাই বুঝতে পারি না কেন, সেটা বুঝার সাথে সাথে এটুকুও বুঝতে পারতাম আমি আসল মর্মের স্বাদ এখনো পাইনি। যা বুঝেছি এটা হয়তো ঝিনুকের খোলস, মুক্তা এখনো ভিতরেই আছে! ভাববেন না আমি অতিরঞ্জন করছি, আল্লাহর পানাহ। হতে পারে আমি সুন্দর শব্দ ব্যবহার করছি, কিন্তু অতিরঞ্জন থেকে আল্লাহর পানাহ চাই। আমি এমন বলছি কারণ আমি যা বুঝতে পারছিলাম তার কোনো কিছুই মূল আরবি বুঝে নয় বরং অনুবাদ বা তাফসির থেকে, আমার সঙ্কীর্ণ বুঝের উপরে। আরবী ভাষার ব্যাপারে যথেষ্ট দখল, শুধু আরবীই নয় বরং “কুরআনের আরবির” ব্যাপারে উত্তম দখল ব্যতীত কুরআনের স্বাদ পাওয়া সম্ভব না। হ্যাঁ, আল্লাহর রহমতে আমি হয়তো এতোটুকু বুঝতে পারছিলাম− নিশ্চয়ই এ কুরআন মানুষের জন্য হেদায়েত, এর সামনে বাতিল দাঁড়াতে পারবে এমন কোনো সুযোগই নাই।
কুরআনের ব্যাপারে বিষয়টি এমন যে, এটাকে আসলে বাস্তব জীবনে নিয়ে এসে দেখা দরকার। নিজেদের জীবনের প্রতিটি দিনে, প্রতিটি কাজে কুরআনকে সামনে রাখলে দেখা যাবে আমাদের জীবন, জীবনের দিনগুলো এবং জীবনের কাজগুলো সম্পূর্ণ অন্যরকম হয়ে যাবে! আমি বলছি না এটা সহজ, বরং সত্য হচ্ছে এটা বেশ কঠিন। কিন্তু এটাই কুরআনের প্রকৃত অনুশীলন। দোকানে যে জামা ঝুলানো থাকে তা দেখে হয়তো আপনার কাছে সুন্দর লাগে, কিন্তু আপনি এই জামা থেকে আরাম-কল্যাণ তখনই পাবেন যখন আপনি এই জামা নিজের শরীরে পরে নিবেন। এর আগ পর্যন্ত সুন্দর জামাটি সুন্দর, তবে তা আপনার জন্য সরাসরি কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। কুরআনও এমন। এটাকে বাস্তব জীবনের আলোকে না দেখলে এটার মূল কল্যাণ অধরাই থেকে যাবে এবং এর মূল মুজিজা, এর অনবদ্যতা, এর হেদায়েতের নূর, এর হিকমাহ, এর অমূল্য জ্ঞানের বাস্তব মূল্যায়ন এ সবকিছুই অধরা থেকে যাবে। কুরআনের কোনো আয়াতের শুধু তিলাওয়াত আর সেই একই আয়াতের অর্থ উপলব্ধিসহ এবং আরো একধাপ এগিয়ে সেই উপলব্ধিকে নিজের জীবনে খুঁজে দেখে এর পরে তিলাওয়াত এর মধ্যে আসমান এবং জমিন ব্যবধান।
কখনো চিন্তা করি কীভাবে সাহাবাগণ, সালাফগণ সারারাত কুরআন তিলাওয়াতে কাটিয়ে দিতেন! কীভাবে তাঁরা পারতেন একটি মাত্র আয়াত তিলাওয়াত করতে করতে রাত পার করে দিতে! মূল রহস্যটা কী ছিলো? আমি এখনো এই উত্তরের উপলব্ধি লাভ করতে পারিনি। তবে আঁচ করতে পারি এটি হচ্ছে কুরআনের সেই মহিমা যে, যখন তা নিজের জীবনের বুঝের সাথে, চেতনার সাথে, উপলব্ধির সাথে মিলে যাবে তখন এই কুরআন তিলাওয়াতের গভীরতার সামনে রাতের গভীরতা কিছুই না! এভাবেই কুরআন অন্তরকে শান্তি দেয়, শরীরকে প্রশান্ত করে। এগুলো নিজে নিজেই হয়ে যাবে এমন নয়, বরং এর জন্য যথাযথ উস্তাদের কাছে শিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজন। তবে আপাতভাবে তাফসির পড়া আমাদের মতো দুর্বলদের জন্য কুরআনের সাথে পরিচিত হবার ভালো একটা শুরু হতে পারে ইনশাআল্লাহ্।
কিছুদিন আগে কোনো এক কারণে আমি অস্থির ছিলাম, পেরেশান ছিলাম। আমি ভাবলাম আল্লাহ্ যদি আমাকে এই ব্যাপারে কোন সাইন/নিদর্শন দেখাতেন তাহলে আমার অন্তরটা ইতমিনান হতো। আবার মনে হলো, সাইন(নিদর্শন) দেখলেই যে অন্তর ইতমিনান হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই, কারণ শয়তান নিদর্শন দেখার পরেও মনের অবস্থা পরিবর্তন করে দিতে কিংবা অন্তত ওয়াসওয়াসা দিতে সক্ষম। বরং মনের ইতমিনান এর জন্য আল্লাহর কালামই বেশী কার্যকর। এই কালামই পারে অন্তরকে আরো স্থির করতে, প্রশান্ত করতে। বিষয়টা এমন যে, কারো মাথা ব্যাথা করছে। এখন তাকে যদি খুব সুন্দর কিছু দেখতে দেয়া হয়, তার মাথা ব্যাথা কমে যাবে না, কিন্তু আপাতভাবে সুন্দর কিছু দেখার কারণে সে ব্যাথার বিষয়টি কিছুক্ষণের জন্য ভুলে থাকতে পারবে। তবে কিছুক্ষণ পরেই সেই রেশ কেটে যাবে এবং তার মাথা ব্যাথা আগের মতোই অনুভূত হবে। এমন অবস্থায় সে যদি কোনো ওষুধ খায়, আল্লাহর ইচ্ছায় তার মাথা ব্যাথা সেরে যাবে ইনশাআল্লাহ্। সে জানে না কিংবা দেখে না যে ওষুধের ভিতরে কী আছে বা তা কীভাবে কাজ করে, কিন্তু ওষুধের ভিতরে এমন কিছু দিয়ে দেয়া আছে যা আল্লাহর ইচ্ছায় মাথা ব্যাথার মোকাবেলা করবে। এর জন্য তার এটা জানা জরুরি না যে, তা কীভাবে কাজ করে। একইভাবে দিলের প্রশান্তি আল্লাহ্ কুরআনের ভিতরেই রেখে দিয়েছেন, এর জন্য এটা বুঝা জরুরি নয় তা কীভাবে! কোনো নিদর্শন বা সাইনের প্রভাব চলে যাবে, ফ্যাকাশে হয়ে যাবে কিন্তু আল্লাহর কালামের প্রভাব কিয়ামতের আগ পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে।
যাইহোক, এ ব্যাপারে সার কথা এই যে− কুরআন আমাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম সাথী! কুরআন এমন এক সাথী যা আমাদেরকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করে দিবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর ভালোবাসার রাস্তা দেখাবে। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের দশটি উপায়-এ একটি উপায় উল্লেখ করেছেন কুরআনের অর্থ বুঝে উপলব্ধি সহকারে তিলাওয়াত করা। এ কুরআন এমন এক সাথী যা ছেড়ে যাবে না এই দুনিয়ায়, এবং পরের দুনিয়ায়। যে কুরআনকে ধরলো সে আল্লাহর রজ্জুকেই ধরলো, আর যে কুরআনকে ছেড়ে দিল সে আল্লাহর রজ্জুকেই ছেড়ে দিলো। আপনি যে অবস্থারই হোন না কেন, কুরআন আপনাকে ব্যস্ত রাখার জন্য যথেষ্ট হবে, কুরআন আপনার প্রশান্তি এবং সাকিনাহ এর জন্য যথেষ্ট ইনশাআল্লাহ্। আল্লাহর কাছে দুয়া করবেন আল্লাহ্ যেন এই অধমকে কুরআনের বুঝ এবং কুরআনের অনুসরণের উপরে কবুল করে নেন। এই অধমকে কুরআনের সাথী এবং কুরআনকে এই অধমের সাথী বানিয়ে দেন।
৩। তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে দুয়া। এটি আমার মতো মিসকিনের জন্য সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। এটি এমন এক বিষয় যা বান্দাকে আক্ষরিক অর্থে এক অফুরান নেয়ামতের দরজা খুলে দেয় আলহামদুলিল্লাহ। প্রিয় ভাই, দুয়া ছাড়া আমার মতো মিসকিনের আসলে আর তেমন কোনো সম্বল নেই। আমার মনে হয় দুয়া হচ্ছে আল্লাহর সাথে বান্দার সরাসরি হটলাইন। কোনো মাধ্যম দরকার নাই, কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট দরকার নাই, কোনো হাদিয়া-তোহফা দরকার নাই, সরাসরি আল্লাহ্-কে ডাকো। চাও, আল্লাহর কাছে চাও। চাইতে থাকো, বেশী বেশী চাও, সবচেয়ে উত্তমটা চাও, আল্লাহর ব্যাপারে ধারণা করতে অন্তত কৃপণ হইয়ো না। চাও সবচেয়ে উত্তমটা এবং তারপরেও আল্লাহ্ আরো বেশী দিবেন! আল্লাহ্ আমাদের শিখিয়ে দিচ্ছেন কী চাইতে হবে, কীভাবে চাইতে হবে এবং এর বাইরে আরো যা মনে চায় (হালালের সীমার ভিতরে)। আল্লাহ্ সুরা ফাতিহাতে তাঁর প্রশংসা, তাঁর পরিচয় শেষ করেই আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন− "আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে চাই" ও আমার বান্দারা তোমরা হয়তো ভুলে গেছিলে যে আমারই কাছে চাইতে হয়, তাই আমি শিখিয়ে দিচ্ছি, স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, বল− "আমরা তোমারই ইবাদত করি, এবং তোমারই কাছে চাই"−সুবহানআল্লাহ্ কতো সুন্দর!
যখনই দুয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ হয় কুরআনে আল্লাহ্ সেসব আয়াতকে কতো সুন্দর করে বর্ণনা করেন। যেমন সুরা সাফফাত এর ৭৫ নম্বর আয়াতে নূহ আলাইহিস সালামের দুয়ার কথা উল্লেখ করে আল্লাহ বলছেন,
وَلَقَدْ نَادَانَا نُوحٌ فَلَنِعْمَ الْمُجِيبُونَ
"নুহ আমাকে ডেকেছিলো, আর আমি কতোইনা উত্তম সাড়া দানকারী!"
আমি চিন্তা করি, আল্লাহ্ নিজেই যদি বলেন− "আমি কতোইনা উত্তম সাড়া দানকারী" তাহলে আসলে বিষয়টি কেমন উত্তম হতে পারে! দুয়ার ব্যাপারে যে আয়াতগুলো আছে এবং যে হাদিসে কুদসিগুলো আছে, সেগুলোও অন্তরকে প্রশান্ত করে দেয়ার মতো। কী অদ্ভুত, আল্লাহর কাছে না চাইলে তিনি সুবহানাহু ওয়াতায়ালা রাগ করেন! আল্লাহর কাছে চাওয়ার ব্যাপারে কোনো জড়তা না রাখা, আল্লাহ্ কি আমাকে এটা দিবেন! আমি কি এটার যোগ্য! এটা কীভাবে সম্ভব? সম্ভব, অসম্ভব আমাদের পরিভাষা। আল্লাহর জন্য অসম্ভব কিছুই না। আমাদের কাজ শুধু দুয়া করা। দুয়া যদি কবুল হয় তাহলে আমরা তো খুশি হয়েই গেলাম, যদি কবুল না-ও হয় তাতে আমাদের আরো বড় খুশি আছে। আল্লাহ্ সেই দুয়ার পরিবর্তে কিয়ামতের দিন নেকী দিয়ে দিবেন! দুয়া করলে একমাত্র লাভ ছাড়া আর কোনো ক্ষতিই নাই। দুয়ার ব্যাপারে এতো এতো ফাজায়েল আছে আমি অধম এই ব্যাপারে আর তেমন কিছু না বলাই ভালো। শেষ কথা এই যে, আমি যদি পাপ করতে করতে সবচেয়ে নিচু অবস্থানে চলে যাই যে আমার চেয়ে পাপী আর কেউ নাই তাহলে সেই অবস্থাতেও আল্লাহকে ডাকার জন্য আমার মাধ্যম হচ্ছে দুয়া এবং আমি তা নিজেই সরাসরি আল্লাহ্-কে ডেকে করতে পারি। আবার যদি আমি নেক আমল করতে করতে সবচেয়ে বড় আবিদ হয়ে যাই এবং তখন যদি আমি আল্লাহ্-কে ডাকতে চাই তাহলে সেই অবস্থাতেও আল্লাহকে ডাকার জন্য আমার মাধ্যম হচ্ছে দুয়া এবং আমি তা নিজেই সরাসরি আল্লাহ্ ডেকে করতে পারি। আমার অবস্থান যেমনই হোক না কেন - দুয়ার সুযোগ, দুয়া কবুলের মালিক পর্যন্ত পৌঁছানোর মাধ্যম এবং দুয়া কবুলের মালিক, কোনোটিরই কোনো পরিবর্তন নাই! শুধু এটুকুই কি দুয়ার জন্য উৎসাহিত হবার ক্ষেত্রে যথেষ্ট না!
প্রিয় ভাই, আমার কথা প্রায় শেষ। আল্লাহ্ আপনার সময়ের উত্তম বদলা দিবেন ইনশাআল্লাহ। শেষ করার আগে আমি আপনাদের কাছে একটি অনুরোধ করতে চাই। সেটি হচ্ছে আমি আপনাদের নিকট খাসভাবে দুয়া চাই। যখন আমি এই লেখা লিখছি, আল্লাহ্ জানেন আমি একটি খাস নিয়াতে আপনাদের কাছে দুয়া চাচ্ছি। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ উত্তমভাবেই জানেন সেটি কী। আপনারা আমার জন্য দুয়া করবেন আল্লাহ্ যেন আমার জন্য উক্ত বিষয়ে কল্যাণের ফায়সালা করে দেন এবং আমার দুয়া কবুল করে নেন। হতেই পারে আমার জন্য করা আপনার সেই দুয়া আল্লাহ্ খুব পছন্দ করলেন আর আমাকে কবুল করে নিলেন! আপনার হাত তুলে কিছু সময় কিন্তু আমার জন্য তা মাগফিরাত এবং জান্নাতের চাবি হয়ে যেতে পারে ইনশাআল্লাহ্!
এবং আল্লাহর কাছে এই দুয়া করবেন আল্লাহ্ যেন− আমাকে এবং আমার পরিবারকে বিনা শর্তে মাফ করে দেন, আমাকে এবং আমার পরিবারকে আল্লাহর জন্য শাহাদাত নসিব করেন।
সবশেষে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ এক এবং তাঁর শরীক আর কেউ নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা এবং রাসুল।
নিশ্চয়ই সফলতা হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং নিশ্চয়ই ব্যর্থতা হচ্ছে আল্লাহর ক্রোধ। নিশ্চয়ই দুনিয়ার জীবন শেষ হয়ে যাবে কিন্তু আখিরাতের জীবন অনন্ত।
ইয়া আল্লাহ্! আপনি আমাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ঈমানের উপরে এবং আমলের উপরে আপনার সন্তুষ্টি অনুযায়ী অবিচলতা দান করেন এবং আমাদেরকে সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত কইরেন না। আমাদের উপরে জালিমদের বিজয়ী কইরেন না এবং জালিমদের ব্যাপারে আমাদেরকে আপনার আশ্রয়ে আশ্রয় দান করেন। ইয়া আল্লাহ্ আমাদের কদমগুলো মজবুত করে দেন, আমাদের ঈমানকে আপনার রঙে রঙ্গিন করে দেন।
ইয়া আল্লাহ্ দুশমনদের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরগুলোকে পাথরের মতো করে দেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের চোখে আগুন জ্বালিয়ে দেন। ইয়া আল্লাহ্! আপনার দুশমন আমার কাছ থেকে যেন কঠোরতা ছাড়া আর কিছুই দেখতে না পায়। ইয়া রব্ব! আমাকে কবুল করেন, কবুল করেন আমার রক্ত, কবুল করেন হাড়ের টুকরাগুলো, কবুল করেন আমার গোশত। ইয়া রব্ব! আমাদের কবুল করেন আপনারই জন্য, শুধুই আপনার জন্য, আমিন ইয়া রব্বাশ শুহাদা।
ইয়া রব্ব! এই লেখার নিয়াতে এবং লেখায়, ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় যে ভুল রয়ে গেছে আপনি তা ক্ষমা করে দেন, পরিশুদ্ধ করে দেন এবং কবুল করে নেন। আমিন।
ওয়াসসালাম
নোট:
এক ভাইয়ের লেখা। ফোরামে পোস্ট করার জন্য আরেকজন ভাই আমাকে দিলেন। এমন উত্তম একটি লেখা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে সত্যিই আমি আনন্দিত। আল্লাহ আমাকে কিছু সাওয়াব অর্জনের সুযোগ দিয়েছেন। কেননা এ লেখাটি আপনারা পড়ার কারণে লেখকের পাশাপাশি আমিও কিছু সাওয়াব পাবো আশা রাখি ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ লেখক ভাইকে সর্বোত্তম বিনিময় দিন, যে ভাইয়ের মাধ্যমে লেখাটি আমার হাতে এসেছে তাঁকেও আল্লাহ তাঁর শান অনুযায়ী সর্বোত্তম বিনিময় দিন। আর আমাদেরকে এ লেখা থেকে সর্বোচ্চ উপকার হাসিল করার তৌফিক দান করুন, আমাদেরকে তাঁর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন, শত্রুর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে লড়াইরত অবস্থায় শাহাদাত নসিব করেন, আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন।
হে আমার প্রিয় ভাই, আমি আল্লাহর দরবারে দুয়া করি আল্লাহ যেন আপনাকে এবং আপনার পরিবারকে উত্তম হালাতে রাখেন। আল্লাহ্ যেন আমাদের ক্ষমা করে দেন এবং আমাদের উপরে সন্তুষ্ট হয়ে যান।
হঠাৎ করেই আমার মনে হলো−ভাইদের উদ্দেশে কিছু লিখি; কারণ আমাদের অবস্থা তো এমন যে, আমরা চাইলেই নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারি না। তাই ভাবলাম কিছু লিখে ফেলি। এই লেখার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আমাদের পরস্পরের জন্য নাসিহা হিসেবে কিছু কথা বলা, অন্তত চেষ্টা করা। আমি আশা করি আল্লাহ্ আমাকে এবং আমাদেরকে এর থেকে কল্যাণ দান করবেন ইনশাআল্লাহ্। আল্লাহ্ আমাদের এমন এক দ্বীন দিয়েছেন যার সৌন্দর্য বলে শেষ করা সম্ভব নয়; আর প্রিয় ভাই, এ কথা আমি অন্তর থেকেই বলছি। আমাদের দ্বীনে সামান্য একটা কথা আল্লাহর ইচ্ছায় হয়ে যেতে পারে কারো জন্য হেদায়েতের মাধ্যম। আর সে কথা তাহলে কতোইনা উত্তম কথার মধ্যে শামিল হবে! আমাদের সামান্য হাসি হয়ে যেতে পারে সাদাকাহ, এমন কি আমাদের চোখের পানি হয়ে যেতে পারে জাহান্নাম থেকে নাজাতের উপায়। আমাদের এক হওয়া কিংবা আলাদা হওয়া−হয়ে যেতে পারে আল্লাহর আরশের নিচে স্থান পাবার উপায়! এক উস্তাদ বলছিলেন, জান্নাতে আমার বিশাল কোনো বালাখানা দরকার নাই, আমি জান্নাতের রাস্তার ধারে থাকতে পারলেই খুশি। এমন অবস্থায় কথা হচ্ছে, আল্লাহর আরশের নিচে অবস্থানের। যে দিনটিকে আল্লাহ্ ইয়াওম আল আজিম, মহা কঠিন এক দিন হিসেবে জানিয়েছেন, ৫০ হাজার বছরের সে কঠিন সময়ে আল্লাহর আরশের নিচের অবস্থান কতোইনা মূল্যবান হতে পারে! আর এমন অবস্থান যাদের জন্য তাদের এক শ্রেণী হচ্ছেন এমন মুমিন বান্দা যারা আল্লাহর জন্যই মিলিত হোন, আর আল্লাহর জন্যই আলাদা হয়ে যান। এই আমাদের দ্বীন, আর তিনিই আমাদের রব্ব, বান্দাকে দিতে কতোইনা ভালোবাসেন তিনি! আমি যখন ভাবি, আল্লাহ্ কতো দিতে চান আর কতো দিতে সক্ষম, তখন আমি খুব বেশী দূর যেতে পারিনা। কারণ আল্লাহর সেই কথা আমাকে থামিয়ে দেয়, তিনি বলেন: (ভাবার্থে) জিন্ন এবং ইনসান সবাই মিলে যদি আমার কাছে চাইতেই থাকে আর আমি দিতেই থাকি এভাবে আমি যদি তাদের সমস্ত চাওয়া পূরণ করে দেই তবে আমার রাজত্ব থেকে শুধু তেমনই কমে যাবে যেমন সাগর থেকে সুই ডুবিয়ে উঠিয়ে আনলে সাগরের পানি কমে থাকে! এমন রব্ব যখন আমাদের আর এমন দ্বীন যখন আমাদের আল্লাহ্ দিয়েছেন, তখন সেই রব্ব-এর সন্তুষ্টির জন্য সামান্য কথাও অনেক হয়ে যেতে পারে; যদি তা আরশের মালিক দয়া করে কবুল করে নেন। এ লেখার অন্যতম একটি উদ্দেশ্যও তাই, আমি আশা রাখি আমার রব্ব আমার এই চেষ্টায় সন্তুষ্ট হবেন, আমার ভাইয়েরা আমার জন্য দুয়া করবেন।
কী লিখব? কোন প্রসঙ্গে লিখব? আর এমন সম্ভাবনাই খুব বেশী যে, এই লেখা যাঁরা পড়বেন ইনশাআল্লাহ তাঁরা আমার চেয়ে সবদিক থেকে কল্যাণের পথে অধিক অগ্রগামী। তাই আমার জন্য এটি কিছুটা চিন্তার বিষয় যে, আমি এমন ভাইদের সামনে কীই-বা কথা পেশ করতে পারি। পরে ভাবলাম, আমার নিজের জীবনের চলার পথে এমন দু-চার কিছু কথা যা আমাদের নিজেদের মাঝে আলাপচারিতার মতো হতে পারে এবং একই সাথে আমাদের জন্য কল্যাণকরও হতে পারে ইনশাআল্লাহ্− তেমন কিছু উল্লেখ করি। অনেকটা এমন যে, আমার মনের কিছু কথা আরেক ভাইয়ের মনের সামনে পেশ করা। আল্লাহ্ই তাউফিক দাতা।
আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম, আল্লাহ তোমাকে দ্বীনের বুঝ দেয়ার পর থেকে কী কী বিষয় তোমার জন্য চিন্তার খোরাক হয়েছিলো, কোন কোন বিষয় তোমাকে নতুনভাবে ভাবতে শিখিয়েছিলো, আর কোন বিষয় তোমার পাথরের মত মনটাকে নাড়াচাড়া দিতে পেরেছিলো? আমি ভাবলাম এর মধ্যে থেকেই কিছু আপনাদের সামনে পেশ করি।
১। দ্বীন বুঝার পর থেকে আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয়টি হচ্ছে− আল্লাহকে বুঝা। আল্লাহর সাথে সম্পর্ক। প্রত্যেকটি বান্দার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক বিদ্যমান। আল্লাহ্ কখনোই তাঁর বান্দার সাথে এই সম্পর্ক ছিন্ন করেন না, যতোক্ষণ না বান্দা নিজে তা করে ফেলে, আল্লাহর পানাহ। তবে কথা হচ্ছে, এই সম্পর্ক শব্দটি এই বিষয়টিকে প্রকাশ করার জন্য যথেষ্ট না। কারণ, প্রতিটি বান্দার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক এবং সম্পর্কের গভীরতা আলাদা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেই পবিত্র কথা - "বাল, রফিক আল আ'লা" এর দ্বারা আল্লাহর সাথে যে সম্পর্ক কিংবা আল্লাহর কোনো আউলিয়ার সাথে আল্লাহর যে সম্পর্ক কিংবা আমাদের মধ্য থেকে আল্লাহর অনুগ্রহ ধন্য কারো সাথে আল্লাহর যে সম্পর্ক− তা কি কখনো এক! কখনোই না। কিন্তু প্রত্যেক ক্ষেত্রে শব্দটা সেই একই−“সম্পর্ক”। এ কথাগুলো এজন্য বললাম যেন একটা ধারণা ফুটে উঠে যে, সম্পর্ক আসলে কতো গভীর থেকে গভীরে যেতে পারে। বলতে চাচ্ছি, আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্ক যদি সত্যই সামনের দিকে অগ্রসর হয় তবে তা আল্লাহর অনুগ্রহে গভীর থেকে গভীরে যেতে যেতে এমন পর্যায়ে চলে যাওয়া সম্ভব যেই পর্যায়ে গিয়ে বান্দা আল্লাহর প্রেমিক হয়ে যায়! বান্দা আল্লাহ্-কে ভালোবাসতে শিখে যায়। আহ! কী এক অবস্থা, বান্দা তখন আল্লাহ্ ছাড়া আর অন্য কিছুর মধ্যেই পরিপূর্ণ ভালোবাসা খুঁজে পায় না, শান্তি খুঁজে পায় না, ‘সাকিনা’ খুঁজে পায় না। এমনও হয়, সে আল্লাহর জন্য পাগল হয়ে যায় আর ছটফট করতে থাকে কখন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাতে দাঁড়াতে পারবে! কোথাও পড়েছিলাম, যদি আমি ভুল না হই তাহলে মোটামুটি এমন যে, জান্নাতের বিছানায় যখন শহীদগণ বসে থাকবেন বা গড়াগড়ি দিবেন তখন আল্লাহ্ রব্বুল ইজ্জাহ তাঁদের দিকে তাকিয়ে হাসবেন আর বলবেন এরা আমার (প্রেমে) পাগল বান্দা! হায়রে দুনিয়ার জীবন, এটা তার কাছে মাছির পাখার চেয়েও কম মূল্যের হয়ে যায়! আমি তো শুধু বান্দার দিক থেকে বললাম, আল্লাহর দিক থেকে বলার সামর্থ্য আমার ভাষায় নাই; তাই আল্লাহ যা বলেছেন সেটাই বলি। আল্লাহ্ বলেন, "... অতঃপর আমি আমার বান্দাকে ভালোবেসে ফেলি আর আমি হয়ে যাই তার চোখ যা দিয়ে সে দেখে, আমি হয়ে যাই তার হাত, আমি হয়ে যাই তার পা ..." আমি যখন চিন্তা করি আরশের অধিপতি কতোটুকু ভালোবাসা নিয়ে তাঁর তুচ্ছ বান্দাদের জন্য এমন কথা উপহার দিতে পারেন - "অতঃপর আমি আমার বান্দাকে ভালোবেসে ফেলি..." আমার জীবন কুরবান হয়ে যাক এমন রব্বের এক ঝিলিক সন্তুষ্টির জন্য! আরশের মালিক আল্লাহ রব্বুল ইজ্জাহ'র এই কথার সামনে মাথা নিচু করা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখিনা। এটি কেবল একটি উদাহরণ!
তো বিষয়টি ছিলো−আল্লাহর সাথে সম্পর্ক। আমার যতোটুকু স্মরণে আসে, একটা ঘটনা পড়েছিলাম− এক ডাকাত এক ব্যক্তিকে ধরাশায়ী করে। তার ধন-সম্পদ তো নিবেই এমনকি তাকে হত্যাও করে ফেলবে। সেই ব্যক্তি তখন ডাকাতকে বলে, আমাকে দুই রাকাত নামাজ পড়তে দাও। নামাজ পড়ে সে দুয়া করে। দুয়াটির শেষ অংশটুকু আমার মনে আছে - "ইয়া মুগিছু আগিছ নি" "ও (আল্লাহ্)! আপনিই সাহায্য করে থাকেন, সাহায্য করুন" দুয়া শেষ করার আগেই এক ঘোড়সওয়ার (ফেরেশতা) এসে খোলা তরবারী দিয়ে সেই ডাকাতকে দু-টুকরা করে ফেলে। আমি এটা শুনে ভাবছিলাম− আহা! আল্লাহর সাথে এমন সম্পর্ক হয়ে গেলে কতোইনা ভালো হয়! এরপরে কোনো একদিন রাস্তায় চলার পথে আমাকে তেমন কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ তাগুতরা ঘিরে ফেলে। আমি একা, আমাকে ঘিরে চারপাশে অনেক তাগুত। আমার মনে পড়ে গেলো "ইয়া মুগিছু আগিছ নি" আল্লাহর দয়া! আমার গায়ে একটি টোকা পর্যন্ত না দিয়ে তারা আমাকে চলে যেতে দিলো! এই পুরা ঘটনায় আমার নিজের দিকে সম্পৃক্ত করার মতো কিছুই নাই, যা আল্লাহ্ আরো উত্তম জানেন। বরং সবটুকুই হচ্ছে আমার মতো গুনাহগারের উপরে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিয়ামত। আমি আশা করি আমার আল্লাহ্ আমাকে তাঁর সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক করার তাউফিক দিয়ে ধন্য করবেন। কথা এই যে, ভাই আল্লাহ্-কে তালাশ করতে থাকা, আশপাশে দৃষ্টি দিয়ে আল্লাহর করুণা, দয়া, ভালোবাসা−এগুলোকে অন্তরে নিয়ে আসা এমনভাবে যে, মা তার সন্তানকে ভালোবাসেন এ কথা বলার পরে যেমন আমাদের কোনো কল্পনা করার দরকার হয়না, তেমনি আল্লাহর কথা স্মরণ হওয়ার সাথে সাথে যেন আমাদের জন্য আল্লাহর ভালোবাসার উপলব্ধিও চলে আসে। আল্লাহ্-কে ভালোবাসতে চাওয়ার এবং ভালোবাসতে পারার সাহস করা এবং আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে সেই দুয়া করা। নিঃসন্দেহে ভালোবাসার জন্য এবং ভালোবাসা পাবার জন্য আল্লাহ্ এবং একমাত্র আল্লাহ্ই সর্বোত্তম!
আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে আরেকটি বিষয় আমাকে খুব প্রভাবিত করেছিলো আলহামদুলিল্লাহ। আমি কোথাও শুনেছিলাম, আল্লাহ্ ভালোবাসেন সেই ব্যক্তিকে যে আল্লাহকে ভালোবাসে। আল্লাহ্ ভালোবাসেন সেই ব্যক্তিকে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ যাকে ভালোবাসেন তাকে ভালোবাসে। আল্লাহ্ ভালোবাসেন সেই ব্যক্তিকে যে অন্যকে আল্লাহ্-কে ভালোবাসতে শেখায়। আল্লাহর বড়ত্ব, মহত্ত্ব, আল্লাহর ভালোবাসার কথা বলে, অর্থাৎ অন্যের সামনে আল্লাহ্-কে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করে। আল্লাহর বড়ত্ব, আল্লাহর মহত্ত্ব, আল্লাহর ভালোবাসা, আল্লাহর সিফাত−এগুলো এমন সুন্দরভাবে অন্যের সামনে উপস্থাপন করা যেন, আল্লাহর ইচ্ছায় সেও আল্লাহ্-কে ভালোবাসতে ইচ্ছা করে। এ বিষয়টি আমার খুব মনে ধরেছিলো আলহামদুলিল্লাহ। আমার ব্যাপারটি ছিলো এমন যে, আমি আল্লাহ্-কে ভালোবাসি এমন কথা সাহস করে বলতে পারি না। আল্লাহ্ আমি আপনাকে ভালোবাসি এ কথার দাবী এবং ব্যাপকতার সামনে আমি নিতান্তই নগন্য, আল্লাহ্ আমার উপর রহম করুন। একই সাথে আল্লাহ্ যাদের ভালোবাসেন তাদেরকে আমি ভালোবাসি−এ কথার সত্যতা কেবল আল্লাহই উত্তম জানেন। আমি ভাবলাম আমি বরং চেষ্টা করি, আল্লাহ্-কে অন্যের সামনে উপস্থাপন করার। আসলে এটা আমাদেরই কাজ, যেহেতু আমরাই দুনিয়ায় আল্লাহর খলিফা। আর প্রতিনিধি তার রব্বের ব্যাপারে কথা বলবে না তো আর কে বলবে? আল্লাহর ব্যাপারে কথা বলার জন্য আগে তাহলে আল্লাহ্-কে জানতে হবে, অন্তত জানার চেষ্টা করতে হবে। এবং আল্লাহর তাউফিকে আমি যৎসামান্য যাই জানতে পারলাম তা সর্বপ্রথম আমার নিজের অন্তরের জন্য প্রশান্তি ছিলো আলহামদুলিল্লাহ!
প্রিয় ভাই আমার, আল্লাহ্র ব্যাপারে কথা বলা যে কতো সম্মানের কাজ! এ কাজ ছিলো নবী রাসুলদের। সেই একই কাজ আল্লাহ্ আমাদেরও করার সুযোগ দিয়ে ধন্য করেছেন। আল্লাহর ব্যাপারে যা জানেন তা অন্যকে জানান, অন্যের সাথে শেয়ার করেন। পরিসর যতো ক্ষুদ্রই হোক না কেন! আপনি আল্লাহ্-কে আরেক বান্দার সামনে উপস্থাপন করবেন, পরিচয় করিয়ে দিবেন এ কাজ কেমন সম্মানের হতে পারে! আর এই কাজের পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ্ আমাদের ভালোবাসবেন। তাই যতো ছোটই হোক কিংবা বড় বিষয়ই হোক, সে বিষয়ের সাথে কিছু না কিছু কথা আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করে রাখা। আল্লাহ্ ব্যতীত আমাদের কোনো কাজ, কথা সম্ভব না। আর আমরা আল্লাহর প্রশংসা করে কখনোই শেষ করতে বা হক্ক আদায় করতে পারবো না। তাই আমরা যা করতে পারি তা হলো, আমাদের কাজ এবং কথা থেকে কিছু অংশ আল্লাহর স্মরণ, আল্লাহর পরিচয়, আল্লাহর উপস্থাপনের জন্য বরাদ্দ রাখার চেষ্টা করা। ছোট ছোট কথা, কিন্তু আল্লাহ্ চাইলে তা কোনো একদিন আমাদের অন্তরে আল্লাহকে ভালোবাসার ইচ্ছা নিয়ে আসবে ইনশাআল্লাহ! যেসব ভাইকে আল্লাহ্ ইলম এবং হিকমাহর নিয়ামত দানে ধন্য করেছেন, সেসব সম্মানিত ভাইদের কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আপনারা আপনাদের কঠিন ব্যস্ততার মাঝেও কিছু সময় যদি বের করা সম্ভব হয় আমাদের মত ভাইদের জন্য। আল্লাহর ব্যাপারে স্মরনিকা আমাদের প্রত্যেকের জন্য কল্যাণই বয়ে নিয়ে আসবে ইনশাআল্লাহ। হতে পারে ছোট কিছু হালাকা, হতে পারে কিছু লেখা, চিঠি, নাসিহা, হতে পারে বয়ান, হতে পারে কিছু আয়াতের তাফসিরের সহজবোধ্য শিক্ষা, বুঝ এবং উপলব্ধি। একই সাথে অন্য ভাইদের মধ্যে যাদের পক্ষে সম্ভব হবে ব্যস্ততার ফাঁকেও একটু চিন্তা করা যে, আজ আল্লাহর জন্য আমি নতুন কী প্রেজেন্টেশন শিখতে পারি? হতে পারে এক-দুইটি আয়াত, হতে পারে আল্লাহর কোনো একটি নাম, হতে পারে কোনো ঘটনা−এমন যে কোনো কিছু।
২। দ্বিতীয় যে বিষয়টি আমার চিন্তায় প্রভাব ফেলেছে তা হচ্ছে−কালামুল্লাহ। কথা আর সামান্য বাড়ানোর আগেই এই স্বীকারোক্তি প্রয়োজন আমি এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য উপযুক্ত কেউ না, কারণ আমার সে যোগ্যতা নাই। আমি শুধু এ বিষয়ে আমার অন্তরের কিছু কথা পেশ করবো ইনশাআল্লাহ্। কালামুল্লাহ এর ব্যাপারে একটি ঘটনা না বলে পারছিনা− শাহবাগ থেকে যখন চেতনার বিষবাষ্প ছড়াচ্ছিলো সেই সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় টুকটাক কিছু লেখায় আমি কুরআন থেকে আয়াত কোট করতাম। দেখা যেতো, কেবল বিষয়ভিত্তিক আয়াত আমি খুঁজে দেখতাম। একদিন লজ্জা লাগলো, এ কেমন কথা। আমি এই কিতাবের থেকে মাত্র দু-এক লাইনের দিকে তাকাচ্ছি, তা-ও কিনা আমার মনমতো! যদি আমার বুঝের ভুল হয়, আগপিছের লাইনগুলোর দায়িত্ব কার জিম্মায়? শানে নুজুল কার জিম্মায়? কুরআন নিয়ে এ কেমন আচরণ! এরপরে আমি চেষ্টা করতে থাকলাম কুরআন আরেকটু ভালোভাবে বুঝার। কিন্তু আমার অনেক সীমাবদ্ধতা ছিলো, বিশেষ করে আরবী। যাইহোক, আলহামদুলিল্লাহ এদিক-সেদিক বিভিন্ন বিষয় দেখতে দেখতে এক সময় আল্লাহ্ বুঝার তাউফিক দিলেন এই কুরআন আসলে মিরাকল! এই কুরআন আসলে অনবদ্য! এর আসলেই কোনো তুলনা হয় না। সত্য করে বলার চেষ্টা করি, এ অনুভূতি অনেকটা নতুন গাড়ি চালানোর মতো, এক অজানা আনন্দ, এক নতুন রোমাঞ্চকর অনুভূতি। মনে হতো অদ্ভুত! এর ভিতরে এই বিষয় লুকিয়ে ছিলো! মজার ব্যাপার সেটা না যা আমি বুঝতে পারলাম, বরং রোমাঞ্চকর অনুভূতিটা ছিলো, আমি নিশ্চিত বুঝতে পারতাম আমি যাই বুঝেছি সেটা হচ্ছে দুধের পেয়ালায় সামান্য চুমুক দেয়া মাত্র, এখনো পুরা পেয়ালা বাকি পড়েই আছে। অর্থাৎ আমি বলতে চাচ্ছি আমি যাই বুঝতে পারি না কেন, সেটা বুঝার সাথে সাথে এটুকুও বুঝতে পারতাম আমি আসল মর্মের স্বাদ এখনো পাইনি। যা বুঝেছি এটা হয়তো ঝিনুকের খোলস, মুক্তা এখনো ভিতরেই আছে! ভাববেন না আমি অতিরঞ্জন করছি, আল্লাহর পানাহ। হতে পারে আমি সুন্দর শব্দ ব্যবহার করছি, কিন্তু অতিরঞ্জন থেকে আল্লাহর পানাহ চাই। আমি এমন বলছি কারণ আমি যা বুঝতে পারছিলাম তার কোনো কিছুই মূল আরবি বুঝে নয় বরং অনুবাদ বা তাফসির থেকে, আমার সঙ্কীর্ণ বুঝের উপরে। আরবী ভাষার ব্যাপারে যথেষ্ট দখল, শুধু আরবীই নয় বরং “কুরআনের আরবির” ব্যাপারে উত্তম দখল ব্যতীত কুরআনের স্বাদ পাওয়া সম্ভব না। হ্যাঁ, আল্লাহর রহমতে আমি হয়তো এতোটুকু বুঝতে পারছিলাম− নিশ্চয়ই এ কুরআন মানুষের জন্য হেদায়েত, এর সামনে বাতিল দাঁড়াতে পারবে এমন কোনো সুযোগই নাই।
কুরআনের ব্যাপারে বিষয়টি এমন যে, এটাকে আসলে বাস্তব জীবনে নিয়ে এসে দেখা দরকার। নিজেদের জীবনের প্রতিটি দিনে, প্রতিটি কাজে কুরআনকে সামনে রাখলে দেখা যাবে আমাদের জীবন, জীবনের দিনগুলো এবং জীবনের কাজগুলো সম্পূর্ণ অন্যরকম হয়ে যাবে! আমি বলছি না এটা সহজ, বরং সত্য হচ্ছে এটা বেশ কঠিন। কিন্তু এটাই কুরআনের প্রকৃত অনুশীলন। দোকানে যে জামা ঝুলানো থাকে তা দেখে হয়তো আপনার কাছে সুন্দর লাগে, কিন্তু আপনি এই জামা থেকে আরাম-কল্যাণ তখনই পাবেন যখন আপনি এই জামা নিজের শরীরে পরে নিবেন। এর আগ পর্যন্ত সুন্দর জামাটি সুন্দর, তবে তা আপনার জন্য সরাসরি কোনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। কুরআনও এমন। এটাকে বাস্তব জীবনের আলোকে না দেখলে এটার মূল কল্যাণ অধরাই থেকে যাবে এবং এর মূল মুজিজা, এর অনবদ্যতা, এর হেদায়েতের নূর, এর হিকমাহ, এর অমূল্য জ্ঞানের বাস্তব মূল্যায়ন এ সবকিছুই অধরা থেকে যাবে। কুরআনের কোনো আয়াতের শুধু তিলাওয়াত আর সেই একই আয়াতের অর্থ উপলব্ধিসহ এবং আরো একধাপ এগিয়ে সেই উপলব্ধিকে নিজের জীবনে খুঁজে দেখে এর পরে তিলাওয়াত এর মধ্যে আসমান এবং জমিন ব্যবধান।
কখনো চিন্তা করি কীভাবে সাহাবাগণ, সালাফগণ সারারাত কুরআন তিলাওয়াতে কাটিয়ে দিতেন! কীভাবে তাঁরা পারতেন একটি মাত্র আয়াত তিলাওয়াত করতে করতে রাত পার করে দিতে! মূল রহস্যটা কী ছিলো? আমি এখনো এই উত্তরের উপলব্ধি লাভ করতে পারিনি। তবে আঁচ করতে পারি এটি হচ্ছে কুরআনের সেই মহিমা যে, যখন তা নিজের জীবনের বুঝের সাথে, চেতনার সাথে, উপলব্ধির সাথে মিলে যাবে তখন এই কুরআন তিলাওয়াতের গভীরতার সামনে রাতের গভীরতা কিছুই না! এভাবেই কুরআন অন্তরকে শান্তি দেয়, শরীরকে প্রশান্ত করে। এগুলো নিজে নিজেই হয়ে যাবে এমন নয়, বরং এর জন্য যথাযথ উস্তাদের কাছে শিক্ষা গ্রহণের প্রয়োজন। তবে আপাতভাবে তাফসির পড়া আমাদের মতো দুর্বলদের জন্য কুরআনের সাথে পরিচিত হবার ভালো একটা শুরু হতে পারে ইনশাআল্লাহ্।
কিছুদিন আগে কোনো এক কারণে আমি অস্থির ছিলাম, পেরেশান ছিলাম। আমি ভাবলাম আল্লাহ্ যদি আমাকে এই ব্যাপারে কোন সাইন/নিদর্শন দেখাতেন তাহলে আমার অন্তরটা ইতমিনান হতো। আবার মনে হলো, সাইন(নিদর্শন) দেখলেই যে অন্তর ইতমিনান হবে এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই, কারণ শয়তান নিদর্শন দেখার পরেও মনের অবস্থা পরিবর্তন করে দিতে কিংবা অন্তত ওয়াসওয়াসা দিতে সক্ষম। বরং মনের ইতমিনান এর জন্য আল্লাহর কালামই বেশী কার্যকর। এই কালামই পারে অন্তরকে আরো স্থির করতে, প্রশান্ত করতে। বিষয়টা এমন যে, কারো মাথা ব্যাথা করছে। এখন তাকে যদি খুব সুন্দর কিছু দেখতে দেয়া হয়, তার মাথা ব্যাথা কমে যাবে না, কিন্তু আপাতভাবে সুন্দর কিছু দেখার কারণে সে ব্যাথার বিষয়টি কিছুক্ষণের জন্য ভুলে থাকতে পারবে। তবে কিছুক্ষণ পরেই সেই রেশ কেটে যাবে এবং তার মাথা ব্যাথা আগের মতোই অনুভূত হবে। এমন অবস্থায় সে যদি কোনো ওষুধ খায়, আল্লাহর ইচ্ছায় তার মাথা ব্যাথা সেরে যাবে ইনশাআল্লাহ্। সে জানে না কিংবা দেখে না যে ওষুধের ভিতরে কী আছে বা তা কীভাবে কাজ করে, কিন্তু ওষুধের ভিতরে এমন কিছু দিয়ে দেয়া আছে যা আল্লাহর ইচ্ছায় মাথা ব্যাথার মোকাবেলা করবে। এর জন্য তার এটা জানা জরুরি না যে, তা কীভাবে কাজ করে। একইভাবে দিলের প্রশান্তি আল্লাহ্ কুরআনের ভিতরেই রেখে দিয়েছেন, এর জন্য এটা বুঝা জরুরি নয় তা কীভাবে! কোনো নিদর্শন বা সাইনের প্রভাব চলে যাবে, ফ্যাকাশে হয়ে যাবে কিন্তু আল্লাহর কালামের প্রভাব কিয়ামতের আগ পর্যন্ত উপস্থিত থাকবে।
যাইহোক, এ ব্যাপারে সার কথা এই যে− কুরআন আমাদের জন্য সবচেয়ে উত্তম সাথী! কুরআন এমন এক সাথী যা আমাদেরকে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক করে দিবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহর ভালোবাসার রাস্তা দেখাবে। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের দশটি উপায়-এ একটি উপায় উল্লেখ করেছেন কুরআনের অর্থ বুঝে উপলব্ধি সহকারে তিলাওয়াত করা। এ কুরআন এমন এক সাথী যা ছেড়ে যাবে না এই দুনিয়ায়, এবং পরের দুনিয়ায়। যে কুরআনকে ধরলো সে আল্লাহর রজ্জুকেই ধরলো, আর যে কুরআনকে ছেড়ে দিল সে আল্লাহর রজ্জুকেই ছেড়ে দিলো। আপনি যে অবস্থারই হোন না কেন, কুরআন আপনাকে ব্যস্ত রাখার জন্য যথেষ্ট হবে, কুরআন আপনার প্রশান্তি এবং সাকিনাহ এর জন্য যথেষ্ট ইনশাআল্লাহ্। আল্লাহর কাছে দুয়া করবেন আল্লাহ্ যেন এই অধমকে কুরআনের বুঝ এবং কুরআনের অনুসরণের উপরে কবুল করে নেন। এই অধমকে কুরআনের সাথী এবং কুরআনকে এই অধমের সাথী বানিয়ে দেন।
৩। তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে দুয়া। এটি আমার মতো মিসকিনের জন্য সবচেয়ে প্রিয় বিষয়। এটি এমন এক বিষয় যা বান্দাকে আক্ষরিক অর্থে এক অফুরান নেয়ামতের দরজা খুলে দেয় আলহামদুলিল্লাহ। প্রিয় ভাই, দুয়া ছাড়া আমার মতো মিসকিনের আসলে আর তেমন কোনো সম্বল নেই। আমার মনে হয় দুয়া হচ্ছে আল্লাহর সাথে বান্দার সরাসরি হটলাইন। কোনো মাধ্যম দরকার নাই, কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট দরকার নাই, কোনো হাদিয়া-তোহফা দরকার নাই, সরাসরি আল্লাহ্-কে ডাকো। চাও, আল্লাহর কাছে চাও। চাইতে থাকো, বেশী বেশী চাও, সবচেয়ে উত্তমটা চাও, আল্লাহর ব্যাপারে ধারণা করতে অন্তত কৃপণ হইয়ো না। চাও সবচেয়ে উত্তমটা এবং তারপরেও আল্লাহ্ আরো বেশী দিবেন! আল্লাহ্ আমাদের শিখিয়ে দিচ্ছেন কী চাইতে হবে, কীভাবে চাইতে হবে এবং এর বাইরে আরো যা মনে চায় (হালালের সীমার ভিতরে)। আল্লাহ্ সুরা ফাতিহাতে তাঁর প্রশংসা, তাঁর পরিচয় শেষ করেই আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন− "আমরা তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে চাই" ও আমার বান্দারা তোমরা হয়তো ভুলে গেছিলে যে আমারই কাছে চাইতে হয়, তাই আমি শিখিয়ে দিচ্ছি, স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, বল− "আমরা তোমারই ইবাদত করি, এবং তোমারই কাছে চাই"−সুবহানআল্লাহ্ কতো সুন্দর!
যখনই দুয়ার প্রসঙ্গ উল্লেখ হয় কুরআনে আল্লাহ্ সেসব আয়াতকে কতো সুন্দর করে বর্ণনা করেন। যেমন সুরা সাফফাত এর ৭৫ নম্বর আয়াতে নূহ আলাইহিস সালামের দুয়ার কথা উল্লেখ করে আল্লাহ বলছেন,
وَلَقَدْ نَادَانَا نُوحٌ فَلَنِعْمَ الْمُجِيبُونَ
"নুহ আমাকে ডেকেছিলো, আর আমি কতোইনা উত্তম সাড়া দানকারী!"
আমি চিন্তা করি, আল্লাহ্ নিজেই যদি বলেন− "আমি কতোইনা উত্তম সাড়া দানকারী" তাহলে আসলে বিষয়টি কেমন উত্তম হতে পারে! দুয়ার ব্যাপারে যে আয়াতগুলো আছে এবং যে হাদিসে কুদসিগুলো আছে, সেগুলোও অন্তরকে প্রশান্ত করে দেয়ার মতো। কী অদ্ভুত, আল্লাহর কাছে না চাইলে তিনি সুবহানাহু ওয়াতায়ালা রাগ করেন! আল্লাহর কাছে চাওয়ার ব্যাপারে কোনো জড়তা না রাখা, আল্লাহ্ কি আমাকে এটা দিবেন! আমি কি এটার যোগ্য! এটা কীভাবে সম্ভব? সম্ভব, অসম্ভব আমাদের পরিভাষা। আল্লাহর জন্য অসম্ভব কিছুই না। আমাদের কাজ শুধু দুয়া করা। দুয়া যদি কবুল হয় তাহলে আমরা তো খুশি হয়েই গেলাম, যদি কবুল না-ও হয় তাতে আমাদের আরো বড় খুশি আছে। আল্লাহ্ সেই দুয়ার পরিবর্তে কিয়ামতের দিন নেকী দিয়ে দিবেন! দুয়া করলে একমাত্র লাভ ছাড়া আর কোনো ক্ষতিই নাই। দুয়ার ব্যাপারে এতো এতো ফাজায়েল আছে আমি অধম এই ব্যাপারে আর তেমন কিছু না বলাই ভালো। শেষ কথা এই যে, আমি যদি পাপ করতে করতে সবচেয়ে নিচু অবস্থানে চলে যাই যে আমার চেয়ে পাপী আর কেউ নাই তাহলে সেই অবস্থাতেও আল্লাহকে ডাকার জন্য আমার মাধ্যম হচ্ছে দুয়া এবং আমি তা নিজেই সরাসরি আল্লাহ্-কে ডেকে করতে পারি। আবার যদি আমি নেক আমল করতে করতে সবচেয়ে বড় আবিদ হয়ে যাই এবং তখন যদি আমি আল্লাহ্-কে ডাকতে চাই তাহলে সেই অবস্থাতেও আল্লাহকে ডাকার জন্য আমার মাধ্যম হচ্ছে দুয়া এবং আমি তা নিজেই সরাসরি আল্লাহ্ ডেকে করতে পারি। আমার অবস্থান যেমনই হোক না কেন - দুয়ার সুযোগ, দুয়া কবুলের মালিক পর্যন্ত পৌঁছানোর মাধ্যম এবং দুয়া কবুলের মালিক, কোনোটিরই কোনো পরিবর্তন নাই! শুধু এটুকুই কি দুয়ার জন্য উৎসাহিত হবার ক্ষেত্রে যথেষ্ট না!
প্রিয় ভাই, আমার কথা প্রায় শেষ। আল্লাহ্ আপনার সময়ের উত্তম বদলা দিবেন ইনশাআল্লাহ। শেষ করার আগে আমি আপনাদের কাছে একটি অনুরোধ করতে চাই। সেটি হচ্ছে আমি আপনাদের নিকট খাসভাবে দুয়া চাই। যখন আমি এই লেখা লিখছি, আল্লাহ্ জানেন আমি একটি খাস নিয়াতে আপনাদের কাছে দুয়া চাচ্ছি। নিশ্চয়ই আল্লাহ্ উত্তমভাবেই জানেন সেটি কী। আপনারা আমার জন্য দুয়া করবেন আল্লাহ্ যেন আমার জন্য উক্ত বিষয়ে কল্যাণের ফায়সালা করে দেন এবং আমার দুয়া কবুল করে নেন। হতেই পারে আমার জন্য করা আপনার সেই দুয়া আল্লাহ্ খুব পছন্দ করলেন আর আমাকে কবুল করে নিলেন! আপনার হাত তুলে কিছু সময় কিন্তু আমার জন্য তা মাগফিরাত এবং জান্নাতের চাবি হয়ে যেতে পারে ইনশাআল্লাহ্!
এবং আল্লাহর কাছে এই দুয়া করবেন আল্লাহ্ যেন− আমাকে এবং আমার পরিবারকে বিনা শর্তে মাফ করে দেন, আমাকে এবং আমার পরিবারকে আল্লাহর জন্য শাহাদাত নসিব করেন।
সবশেষে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ এক এবং তাঁর শরীক আর কেউ নাই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর বান্দা এবং রাসুল।
নিশ্চয়ই সফলতা হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং নিশ্চয়ই ব্যর্থতা হচ্ছে আল্লাহর ক্রোধ। নিশ্চয়ই দুনিয়ার জীবন শেষ হয়ে যাবে কিন্তু আখিরাতের জীবন অনন্ত।
ইয়া আল্লাহ্! আপনি আমাদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ঈমানের উপরে এবং আমলের উপরে আপনার সন্তুষ্টি অনুযায়ী অবিচলতা দান করেন এবং আমাদেরকে সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত কইরেন না। আমাদের উপরে জালিমদের বিজয়ী কইরেন না এবং জালিমদের ব্যাপারে আমাদেরকে আপনার আশ্রয়ে আশ্রয় দান করেন। ইয়া আল্লাহ্ আমাদের কদমগুলো মজবুত করে দেন, আমাদের ঈমানকে আপনার রঙে রঙ্গিন করে দেন।
ইয়া আল্লাহ্ দুশমনদের বিরুদ্ধে আমাদের সাহায্য করেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরগুলোকে পাথরের মতো করে দেন, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের চোখে আগুন জ্বালিয়ে দেন। ইয়া আল্লাহ্! আপনার দুশমন আমার কাছ থেকে যেন কঠোরতা ছাড়া আর কিছুই দেখতে না পায়। ইয়া রব্ব! আমাকে কবুল করেন, কবুল করেন আমার রক্ত, কবুল করেন হাড়ের টুকরাগুলো, কবুল করেন আমার গোশত। ইয়া রব্ব! আমাদের কবুল করেন আপনারই জন্য, শুধুই আপনার জন্য, আমিন ইয়া রব্বাশ শুহাদা।
ইয়া রব্ব! এই লেখার নিয়াতে এবং লেখায়, ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় যে ভুল রয়ে গেছে আপনি তা ক্ষমা করে দেন, পরিশুদ্ধ করে দেন এবং কবুল করে নেন। আমিন।
ওয়াসসালাম
নোট:
এক ভাইয়ের লেখা। ফোরামে পোস্ট করার জন্য আরেকজন ভাই আমাকে দিলেন। এমন উত্তম একটি লেখা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে সত্যিই আমি আনন্দিত। আল্লাহ আমাকে কিছু সাওয়াব অর্জনের সুযোগ দিয়েছেন। কেননা এ লেখাটি আপনারা পড়ার কারণে লেখকের পাশাপাশি আমিও কিছু সাওয়াব পাবো আশা রাখি ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ লেখক ভাইকে সর্বোত্তম বিনিময় দিন, যে ভাইয়ের মাধ্যমে লেখাটি আমার হাতে এসেছে তাঁকেও আল্লাহ তাঁর শান অনুযায়ী সর্বোত্তম বিনিময় দিন। আর আমাদেরকে এ লেখা থেকে সর্বোচ্চ উপকার হাসিল করার তৌফিক দান করুন, আমাদেরকে তাঁর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন, শত্রুর বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে লড়াইরত অবস্থায় শাহাদাত নসিব করেন, আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন।
Comment