الحمد للہ رب العالمین عدد خلقہ ورضا نفسہ وزنة عرشہ مداد کلماتہ والصلاة والسلام علی سید ساٸر الانبیاء والمرسلین اما بعد-
সম্মানিত ভাইয়েরা আমার! মহান রব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন-
قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَ نُسُکِیۡ وَ مَحۡیَایَ وَ مَمَاتِیۡ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ (الانعام:١٦٢)
"(হে নবী) আপনি বলে দিন! নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও মরণ উভয় জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তা'আলার জন্য।" (সূরা আনআম:১৬২)
وقال تَعَالَى: {لا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُمْ بِالمَنِّ وَالأَذَى كالَّذِي يُنْفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ}(البقرة: ٢٦٤)
"তোমরা খোটাদান ও কষ্ট প্রকাশের মাধ্যমে তোমাদের সাদাকাগুলো বাতিল করে দিওনা ঐসকল লোকদের ন্যায়, যারা লোক দেখানোর জন্য তাদের মাল খরচ করে।"(সূরা বাকারা:২৬৪)
قَالَ اللهُ تَعَالَى: {وَمَا أُمِرُوا إِلا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ} (البينة: ٥)
"তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, সালাত কায়েম, করবে এবং যাকাত আদায় করবে; আর এটাই সঠিক ধর্ম।(সূরা বায়্যিনাহ:৫)
وَقالَ تَعَالَى: {لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ} (الحج:٣٧)
আল্লাহর নিকট কখনোই পৌঁছেনা কোরবানির পশুর মাংস ও রক্ত। বরং আল্লাহর কাছে পৌঁছে তোমাদের (দিলের) তাকওয়া। (সূরা হজ্জ্ব:৩৭)
وَقالَ تَعَالَى: {قُلْ إِنْ تُخْفُوا مَا فِي صُدُورِكُمْ أَوْ تُبْدُوهُ يَعْلَمْهُ اللَّهُ} (آل عمران: ٢٩)
(হে নবী) আপনি বলে দিন! তোমাদের অন্তরে তোমরা যা কিছু গোপন করো কিংবা যা কিছু তোমরা প্রকাশ করো-এর সবই আল্লাহ তা'আলা জানেন। (সূরা আলে ইমরান : ২৯)
এব্যপারে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
💠 وعن امیر المٶمنین عمرَ بنِ الخطابِ رضي الله عنه قالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يقُولُ: ((إنّمَا الأَعْمَالُ بالنِّيّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هجرته إلى الله ورسوله، فهجرته إلى الله ورسوله، ومن كانت هِجْرَتُهُ لِدُنْيَا يُصيبُهَا، أَوْ امْرَأَةٍ يَنْكَحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلى مَا هَاجَرَ إِلَيْه)) ۔البخاری و مسلم
"আমিরুল মু'মিনিন উমার ইবনুল খাত্তাব রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রাসুলুল্লাহ সা: কে বলতে শুনেছি; নিশ্চয়ই! কর্মের প্রতিদান নিয়তের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই, যা সে নিয়ত করে। সুতরাং, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হিজরত করে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্যই হবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়া উপার্জনের জন্য কিংবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার জন্য হিজরত করে, তবে তার হিজরত সেজন্যই (গৃহিত) হবে। (বুখারী ও মুসলিম )
💠 وعنْ أبي هريرةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: ((إنَّ الله لا ينْظُرُ إِلَى أَجْسَامِكُمْ، ولا إِلى صُوَرِكمْ، وَلَكن ينْظُرُ إلى قُلُوبِكمْ)). رواه مسلم
"আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা: বলেন- নিশ্চয়ই! আল্লাহ তা'আলা তোমাদের দেহ ও আকৃতির দিকে তাকান না। বরং, তিনি তোমাদের অন্তরসমূহের দিকে তাকান। (মুসলিম)
💠 وعن أبي موسى رضي الله عنه قَالَ: سُئِلَ رسولُ الله صلى الله عليه وسلم عَنِ الرَّجُلِ يُقاتلُ شَجَاعَةً، ويُقَاتِلُ حَمِيَّةً، ويُقَاتِلُ رِيَاءً، أَيُّ ذلِكَ في سبيلِ الله؟ فقال رَسُول الله صلى الله عليه وسلم: ((مَنْ قَاتَلَ لِتَكونَ كَلِمَةُ اللهِ هي العُلْيَا، فَهوَ في سبيلِ اللهِ)). مُتَّفَقٌ عَلَيهِ.
"আবু মুসা আশআরী রা: থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা: কে জিজ্ঞেস করা হলো- কেউ যুদ্ধ করে বিরত্ব প্রদর্শনের জন্য, কেউ যুদ্ধ করে গৌত্রীয় মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য, কেউ যুদ্ধ করে লোক দেখানোর জন্য, এদের মধ্যে কে আল্লাহর রাস্তায়? তখন রাসুলুল্লাহ সা: বললেন - যে আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য যুদ্ধ করে, সেই আল্লাহর রাস্তায়। (বুখারী ও মুসলিম)
💠 وعن عبد الله ابن العبَّاسِ رضِيَ اللهُ عنهما، عن رَسُول الله صلى الله عليه وسلم فيما يروي عن ربهِ تباركَ وتعالى قَالَ: ((إنَّ اللهَ كَتَبَ الحَسَنَاتِ والسَّيِّئَاتِ ثُمَّ بَيَّنَ ذلِكَ، فَمَنْ هَمَّ بحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَها اللهُ تَبَارَكَ وتَعَالى عِنْدَهُ حَسَنَةً كامِلَةً، وَإنْ هَمَّ بهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللهُ عَشْرَ حَسَناتٍ إِلى سَبْعمائةِ ضِعْفٍ إِلى أَضعَافٍ كَثيرةٍ، وإنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللهُ عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلةً، وَإنْ هَمَّ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللهُ سَيِّئَةً وَاحِدَةً)). مُتَّفَقٌ عليهِ
"আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, নবী সা: মহামান্বিত রবের এরশাদ নকল করে বলেন- আল্লাহ তা'আলা নেককাজ ও পাপকাজের সীমা চিহ্নিত করে দিয়েছেন। এবং সেগুলোর বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সুতরাং, যে ব্যক্তি একটি নেককাজের নিয়ত করলো, কিন্তু এখনো তা সম্পাদন করেনি; আল্লাহ তা'আলা এর বিনিময়ে তার জন্য একটি নেকী লিখার নির্দেশ দেন। আর যে ব্যক্তি নেককাজের নিয়তের সাথে সাথে তা সম্পাদনও করে, আল্লাহ তা'আলা তার জন্য দশ থেকে শুরু করে সাতশতগুন এমনকি এরচেয়ে আরো বেশি নেকী লিখার নির্দেশ দেন। আর যে ব্যক্তি একটি গুনাহের নিয়ত করে, কিন্তু এখনো তা করেনি, তবে আল্লাহ তা'আলা তার জন্য একটি নেকী লিখার নির্দেশ দেন
আর যদি সে পাপকাজটি করে ফেলে, তাহলে একটি গুনাহ লিখার নির্দেশ দেন। (বুখারী ও মুসলিম)
💠 وعن أَبي هريرة رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رسول الله صلى الله عليه وسلم: ((مَنْ تَعَلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللهِ عز وجل لا يَتَعَلَّمُهُ إِلا لِيُصِيبَ بِهِ عَرَضًا مِنَ الدُّنْيَا، لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الجَنَّةِ يَوْمَ القِيَامَةِ)) رواه أَبُو داود بإسنادٍ صحيحٍ
"আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা: বলেন- যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যর পাশাপাশি দুনিয়ার সাজ-সরঞ্জাম অর্জনের জন্য ইলম শেখে, কিয়ামতের দিন সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবেনা। (আবু দাউদ হাদিসটি সহিহ সনদে বর্ণনা করেছেন।)
💠وعن جُندب بن عبد اللهِ بن سفيان رضي الله عنه قَالَ: قَالَ النبيُّ صلى الله عليه وسلم: ((مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ الله بِهِ، وَمَنْ يُرائِي يُرائي اللهُ بِهِ)). متفق عَلَيْهِ.
"জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে সুফিয়ান রা: থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা: বলেন- যে ব্যক্তি নিজের জন্য খ্যাতিলাভ করতে চায়, আল্লাহ তা'আলা তার খ্যাতিলাভের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে ব্যক্তি লোকদেখানোর জন্য আমল করে, আল্লাহ তা'আলা তার জন্য লোক দেখানোর ব্যবস্থা করে দেন। (বুখারী ও মুসলিম)
সুতরাং, প্রিয় ভাইয়েরা আমার! উল্লেখিত আয়াতসমূহ ও হাদিসসমূহ থেকে আমরা বুঝতে পারলাম- আমাদের প্রতিটি কাজ এক আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যই হতে হবে। তাহলেই আমাদের আমল মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হবে। অন্যথায় নিয়ত ও এখলাসের বিশুদ্ধতা না থাকলে চরম ও নির্মম পরিণতির সম্মুখিন হতে হবে। তাই আমাদের প্রতিটি কাজে নিয়ত ও এখলাসের বিশুদ্ধতা অতি প্রয়োজন। এবং প্রয়োজন নিয়ত ও এখলাসের বিশুদ্ধতার যাচায়িকরণ। আর সেই প্রয়োজনবোধ থেকেই আমরা নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে পারি-
🔻আমি আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সময়কে ব্যয় করে যে পোষ্ট ও কমেন্ট করেছি, তা কেনো? কোন উদ্দেশ্য? কাকে খুশি করার জন্য করেছি?
🔻আমি জাযাকাল্লাহ পাওয়ার জন্য পোষ্ট, কমেন্ট করিনি তো?
🔻নাকি শুধুমাত্র সময় কাটানোর জন্য আমার এই পোষ্ট, কমেন্ট?
সম্মানিত ভাইয়েরা আমার! দাওয়া-ইলাল্লাহতে পোষ্ট, কমেন্ট করা কিংবা জাযাকাল্লাহ দেয়া-এগুলো দাওয়া ও তাহরিদের মতো দুটি, ইবাদতের অংশ, যার দ্বারা আমরা আমাদের মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জন করি এবং তাঁর কাছেই এর বিনিময় প্রত্যাশা করি। অতএব, মহান আল্লাহর দরবারে কেবল সে আমল দ্বারাই নৈকট্যশীল হওয়া যায়, যা এখলাসপূর্ণ এবং রিয়া ও যশখ্যাতির আকাঙ্ক্ষা থেকে মুক্ত।
তাই বারবার নিয়ত ও এখলাসের বিশুদ্ধতার যাচায়িকরণ জরুরি। কেননা, শয়তান বড়ই নারাজ যে, আমরা এর মাধ্যমে আমাদের মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জন করে নিচ্ছি। তাই সে এসব ভালো কাজগুলোর এমন দিকগুলোর ব্যপারে আমাদেরকে আনন্দিত করে তুলে, যা বিশুদ্ধ নিয়ত ও এখলাসের পরিপন্থী। যেমন- শয়তান কারো দিলে একথা ভাবিয়ে আনন্দ দিলো যে, হুম! আমার পোষ্টটি সর্বাধিক পঠিত! কিংবা আমার পোষ্টটি এত,এত পড়া হয়েছে! কিংবা অমুকের পোষ্টের চেয়ে বেশি পড়া হয়েছে! অথবা অনেক জাযাকাল্লাহ (লাইক) পড়েছে!! অথচ, এখানে আনন্দিত হওয়ার বা গর্বিত হওয়ার কিছুই নেই। এটা শয়তানের পক্ষ থেকে আমল বরবাদির প্ররোচনা। বরং, এই ভেবে আনন্দিত হওয়া যেতে পারে যে, আল্লাহ তা'আলা আমাকে দাওয়া ও তাহরিদের কাজে অংশগ্রহণের তাওফিক দিয়েছেন এবং এর দ্বারা কিছু ভাইকে উপকৃত করেছেন আলহামদুলিল্লাহ। কেননা, এর মাধ্যমে আপনি আল্লাহর নৈকট্যশীল হওয়ার পথে আগে বেড়েছেন বিইজনিল্লাহ।
প্রিয় ভাইয়েরা আমার! এজন্য শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচতে আমাদের প্রাণপণ চেষ্টা করা আবশ্যক। যেনো সে কোনভাবেই আমাদের শ্রমগুলোকে বিনষ্ট করতে না পারে। আর এরই প্রেক্ষিতে আমরা নিচের পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করতে পারি ইনশাআল্লাহ।
🔻পোষ্ট ও কমেন্ট লিখার আগেই (যখন কল্পনায় থাকে) দাওয়া ও তাহরিদের নিয়ত করা।
🔻লিখার সময় আল্লাহর প্রতি পূর্ণ মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করা এবং দোয়া করা - ইয়া রব্বি! আপনিই তাওফিকদাতা। সুতরাং, আমাকে এমন কিছু শব্দ ও বাক্য লিখার তাওফিক দিন, যা দ্বারা উম্মাহ উপকৃত হতে পারে এবং তা আমার উম্মাহর জন্য আপনার নৈকট্যের কারণ হতে পারে।
🔻লিখার পর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। তারপর, শুকরিয়া ও আন্তরিকতার সাথে পোষ্ট, কমেন্ট সাবমিট করা।
🔻সম্ভব হলে কিছু সাদাকা করা।
🔻এবং শয়তানের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকতে আল্লাহর নিকট বেশি বেশি আশ্রয় চাওয়া।
সম্মানিত ভাইয়েরা আমার! মহান রব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে এরশাদ করেন-
قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَ نُسُکِیۡ وَ مَحۡیَایَ وَ مَمَاتِیۡ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ (الانعام:١٦٢)
"(হে নবী) আপনি বলে দিন! নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও মরণ উভয় জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ তা'আলার জন্য।" (সূরা আনআম:১৬২)
وقال تَعَالَى: {لا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُمْ بِالمَنِّ وَالأَذَى كالَّذِي يُنْفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ}(البقرة: ٢٦٤)
"তোমরা খোটাদান ও কষ্ট প্রকাশের মাধ্যমে তোমাদের সাদাকাগুলো বাতিল করে দিওনা ঐসকল লোকদের ন্যায়, যারা লোক দেখানোর জন্য তাদের মাল খরচ করে।"(সূরা বাকারা:২৬৪)
قَالَ اللهُ تَعَالَى: {وَمَا أُمِرُوا إِلا لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ وَيُقِيمُوا الصَّلاةَ وَيُؤْتُوا الزَّكَاةَ وَذَلِكَ دِينُ الْقَيِّمَةِ} (البينة: ٥)
"তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, সালাত কায়েম, করবে এবং যাকাত আদায় করবে; আর এটাই সঠিক ধর্ম।(সূরা বায়্যিনাহ:৫)
وَقالَ تَعَالَى: {لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ} (الحج:٣٧)
আল্লাহর নিকট কখনোই পৌঁছেনা কোরবানির পশুর মাংস ও রক্ত। বরং আল্লাহর কাছে পৌঁছে তোমাদের (দিলের) তাকওয়া। (সূরা হজ্জ্ব:৩৭)
وَقالَ تَعَالَى: {قُلْ إِنْ تُخْفُوا مَا فِي صُدُورِكُمْ أَوْ تُبْدُوهُ يَعْلَمْهُ اللَّهُ} (آل عمران: ٢٩)
(হে নবী) আপনি বলে দিন! তোমাদের অন্তরে তোমরা যা কিছু গোপন করো কিংবা যা কিছু তোমরা প্রকাশ করো-এর সবই আল্লাহ তা'আলা জানেন। (সূরা আলে ইমরান : ২৯)
এব্যপারে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
💠 وعن امیر المٶمنین عمرَ بنِ الخطابِ رضي الله عنه قالَ: سَمِعتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يقُولُ: ((إنّمَا الأَعْمَالُ بالنِّيّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هجرته إلى الله ورسوله، فهجرته إلى الله ورسوله، ومن كانت هِجْرَتُهُ لِدُنْيَا يُصيبُهَا، أَوْ امْرَأَةٍ يَنْكَحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلى مَا هَاجَرَ إِلَيْه)) ۔البخاری و مسلم
"আমিরুল মু'মিনিন উমার ইবনুল খাত্তাব রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রাসুলুল্লাহ সা: কে বলতে শুনেছি; নিশ্চয়ই! কর্মের প্রতিদান নিয়তের উপর নির্ভরশীল। প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য তাই, যা সে নিয়ত করে। সুতরাং, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে হিজরত করে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্যই হবে। আর যে ব্যক্তি দুনিয়া উপার্জনের জন্য কিংবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার জন্য হিজরত করে, তবে তার হিজরত সেজন্যই (গৃহিত) হবে। (বুখারী ও মুসলিম )
💠 وعنْ أبي هريرةَ رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رَسُولُ الله صلى الله عليه وسلم: ((إنَّ الله لا ينْظُرُ إِلَى أَجْسَامِكُمْ، ولا إِلى صُوَرِكمْ، وَلَكن ينْظُرُ إلى قُلُوبِكمْ)). رواه مسلم
"আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা: বলেন- নিশ্চয়ই! আল্লাহ তা'আলা তোমাদের দেহ ও আকৃতির দিকে তাকান না। বরং, তিনি তোমাদের অন্তরসমূহের দিকে তাকান। (মুসলিম)
💠 وعن أبي موسى رضي الله عنه قَالَ: سُئِلَ رسولُ الله صلى الله عليه وسلم عَنِ الرَّجُلِ يُقاتلُ شَجَاعَةً، ويُقَاتِلُ حَمِيَّةً، ويُقَاتِلُ رِيَاءً، أَيُّ ذلِكَ في سبيلِ الله؟ فقال رَسُول الله صلى الله عليه وسلم: ((مَنْ قَاتَلَ لِتَكونَ كَلِمَةُ اللهِ هي العُلْيَا، فَهوَ في سبيلِ اللهِ)). مُتَّفَقٌ عَلَيهِ.
"আবু মুসা আশআরী রা: থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা: কে জিজ্ঞেস করা হলো- কেউ যুদ্ধ করে বিরত্ব প্রদর্শনের জন্য, কেউ যুদ্ধ করে গৌত্রীয় মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য, কেউ যুদ্ধ করে লোক দেখানোর জন্য, এদের মধ্যে কে আল্লাহর রাস্তায়? তখন রাসুলুল্লাহ সা: বললেন - যে আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার জন্য যুদ্ধ করে, সেই আল্লাহর রাস্তায়। (বুখারী ও মুসলিম)
💠 وعن عبد الله ابن العبَّاسِ رضِيَ اللهُ عنهما، عن رَسُول الله صلى الله عليه وسلم فيما يروي عن ربهِ تباركَ وتعالى قَالَ: ((إنَّ اللهَ كَتَبَ الحَسَنَاتِ والسَّيِّئَاتِ ثُمَّ بَيَّنَ ذلِكَ، فَمَنْ هَمَّ بحَسَنَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَها اللهُ تَبَارَكَ وتَعَالى عِنْدَهُ حَسَنَةً كامِلَةً، وَإنْ هَمَّ بهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللهُ عَشْرَ حَسَناتٍ إِلى سَبْعمائةِ ضِعْفٍ إِلى أَضعَافٍ كَثيرةٍ، وإنْ هَمَّ بِسَيِّئَةٍ فَلَمْ يَعْمَلْهَا كَتَبَهَا اللهُ عِنْدَهُ حَسَنَةً كَامِلةً، وَإنْ هَمَّ بِهَا فَعَمِلَهَا كَتَبَهَا اللهُ سَيِّئَةً وَاحِدَةً)). مُتَّفَقٌ عليهِ
"আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, নবী সা: মহামান্বিত রবের এরশাদ নকল করে বলেন- আল্লাহ তা'আলা নেককাজ ও পাপকাজের সীমা চিহ্নিত করে দিয়েছেন। এবং সেগুলোর বৈশিষ্ট্য স্পষ্ট করে দিয়েছেন। সুতরাং, যে ব্যক্তি একটি নেককাজের নিয়ত করলো, কিন্তু এখনো তা সম্পাদন করেনি; আল্লাহ তা'আলা এর বিনিময়ে তার জন্য একটি নেকী লিখার নির্দেশ দেন। আর যে ব্যক্তি নেককাজের নিয়তের সাথে সাথে তা সম্পাদনও করে, আল্লাহ তা'আলা তার জন্য দশ থেকে শুরু করে সাতশতগুন এমনকি এরচেয়ে আরো বেশি নেকী লিখার নির্দেশ দেন। আর যে ব্যক্তি একটি গুনাহের নিয়ত করে, কিন্তু এখনো তা করেনি, তবে আল্লাহ তা'আলা তার জন্য একটি নেকী লিখার নির্দেশ দেন
আর যদি সে পাপকাজটি করে ফেলে, তাহলে একটি গুনাহ লিখার নির্দেশ দেন। (বুখারী ও মুসলিম)
💠 وعن أَبي هريرة رضي الله عنه قَالَ: قَالَ رسول الله صلى الله عليه وسلم: ((مَنْ تَعَلَّمَ عِلْمًا مِمَّا يُبْتَغَى بِهِ وَجْهُ اللهِ عز وجل لا يَتَعَلَّمُهُ إِلا لِيُصِيبَ بِهِ عَرَضًا مِنَ الدُّنْيَا، لَمْ يَجِدْ عَرْفَ الجَنَّةِ يَوْمَ القِيَامَةِ)) رواه أَبُو داود بإسنادٍ صحيحٍ
"আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা: বলেন- যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যর পাশাপাশি দুনিয়ার সাজ-সরঞ্জাম অর্জনের জন্য ইলম শেখে, কিয়ামতের দিন সে জান্নাতের ঘ্রাণও পাবেনা। (আবু দাউদ হাদিসটি সহিহ সনদে বর্ণনা করেছেন।)
💠وعن جُندب بن عبد اللهِ بن سفيان رضي الله عنه قَالَ: قَالَ النبيُّ صلى الله عليه وسلم: ((مَنْ سَمَّعَ سَمَّعَ الله بِهِ، وَمَنْ يُرائِي يُرائي اللهُ بِهِ)). متفق عَلَيْهِ.
"জুনদুব ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে সুফিয়ান রা: থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা: বলেন- যে ব্যক্তি নিজের জন্য খ্যাতিলাভ করতে চায়, আল্লাহ তা'আলা তার খ্যাতিলাভের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে ব্যক্তি লোকদেখানোর জন্য আমল করে, আল্লাহ তা'আলা তার জন্য লোক দেখানোর ব্যবস্থা করে দেন। (বুখারী ও মুসলিম)
সুতরাং, প্রিয় ভাইয়েরা আমার! উল্লেখিত আয়াতসমূহ ও হাদিসসমূহ থেকে আমরা বুঝতে পারলাম- আমাদের প্রতিটি কাজ এক আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যই হতে হবে। তাহলেই আমাদের আমল মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হবে। অন্যথায় নিয়ত ও এখলাসের বিশুদ্ধতা না থাকলে চরম ও নির্মম পরিণতির সম্মুখিন হতে হবে। তাই আমাদের প্রতিটি কাজে নিয়ত ও এখলাসের বিশুদ্ধতা অতি প্রয়োজন। এবং প্রয়োজন নিয়ত ও এখলাসের বিশুদ্ধতার যাচায়িকরণ। আর সেই প্রয়োজনবোধ থেকেই আমরা নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে পারি-
🔻আমি আমার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ সময়কে ব্যয় করে যে পোষ্ট ও কমেন্ট করেছি, তা কেনো? কোন উদ্দেশ্য? কাকে খুশি করার জন্য করেছি?
🔻আমি জাযাকাল্লাহ পাওয়ার জন্য পোষ্ট, কমেন্ট করিনি তো?
🔻নাকি শুধুমাত্র সময় কাটানোর জন্য আমার এই পোষ্ট, কমেন্ট?
সম্মানিত ভাইয়েরা আমার! দাওয়া-ইলাল্লাহতে পোষ্ট, কমেন্ট করা কিংবা জাযাকাল্লাহ দেয়া-এগুলো দাওয়া ও তাহরিদের মতো দুটি, ইবাদতের অংশ, যার দ্বারা আমরা আমাদের মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জন করি এবং তাঁর কাছেই এর বিনিময় প্রত্যাশা করি। অতএব, মহান আল্লাহর দরবারে কেবল সে আমল দ্বারাই নৈকট্যশীল হওয়া যায়, যা এখলাসপূর্ণ এবং রিয়া ও যশখ্যাতির আকাঙ্ক্ষা থেকে মুক্ত।
তাই বারবার নিয়ত ও এখলাসের বিশুদ্ধতার যাচায়িকরণ জরুরি। কেননা, শয়তান বড়ই নারাজ যে, আমরা এর মাধ্যমে আমাদের মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জন করে নিচ্ছি। তাই সে এসব ভালো কাজগুলোর এমন দিকগুলোর ব্যপারে আমাদেরকে আনন্দিত করে তুলে, যা বিশুদ্ধ নিয়ত ও এখলাসের পরিপন্থী। যেমন- শয়তান কারো দিলে একথা ভাবিয়ে আনন্দ দিলো যে, হুম! আমার পোষ্টটি সর্বাধিক পঠিত! কিংবা আমার পোষ্টটি এত,এত পড়া হয়েছে! কিংবা অমুকের পোষ্টের চেয়ে বেশি পড়া হয়েছে! অথবা অনেক জাযাকাল্লাহ (লাইক) পড়েছে!! অথচ, এখানে আনন্দিত হওয়ার বা গর্বিত হওয়ার কিছুই নেই। এটা শয়তানের পক্ষ থেকে আমল বরবাদির প্ররোচনা। বরং, এই ভেবে আনন্দিত হওয়া যেতে পারে যে, আল্লাহ তা'আলা আমাকে দাওয়া ও তাহরিদের কাজে অংশগ্রহণের তাওফিক দিয়েছেন এবং এর দ্বারা কিছু ভাইকে উপকৃত করেছেন আলহামদুলিল্লাহ। কেননা, এর মাধ্যমে আপনি আল্লাহর নৈকট্যশীল হওয়ার পথে আগে বেড়েছেন বিইজনিল্লাহ।
প্রিয় ভাইয়েরা আমার! এজন্য শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচতে আমাদের প্রাণপণ চেষ্টা করা আবশ্যক। যেনো সে কোনভাবেই আমাদের শ্রমগুলোকে বিনষ্ট করতে না পারে। আর এরই প্রেক্ষিতে আমরা নিচের পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করতে পারি ইনশাআল্লাহ।
🔻পোষ্ট ও কমেন্ট লিখার আগেই (যখন কল্পনায় থাকে) দাওয়া ও তাহরিদের নিয়ত করা।
🔻লিখার সময় আল্লাহর প্রতি পূর্ণ মুখাপেক্ষিতা প্রকাশ করা এবং দোয়া করা - ইয়া রব্বি! আপনিই তাওফিকদাতা। সুতরাং, আমাকে এমন কিছু শব্দ ও বাক্য লিখার তাওফিক দিন, যা দ্বারা উম্মাহ উপকৃত হতে পারে এবং তা আমার উম্মাহর জন্য আপনার নৈকট্যের কারণ হতে পারে।
🔻লিখার পর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা। তারপর, শুকরিয়া ও আন্তরিকতার সাথে পোষ্ট, কমেন্ট সাবমিট করা।
🔻সম্ভব হলে কিছু সাদাকা করা।
🔻এবং শয়তানের ধোঁকা থেকে বেঁচে থাকতে আল্লাহর নিকট বেশি বেশি আশ্রয় চাওয়া।
Comment