কেমন হবে মুজাহিদের আখলাক? পর্বঃ ৩
★ নুসরাতঃ
"أنصر اخاك ظالما أو مظلوما"
" তুমি তোমার ভাইকে সাহায্য কর, জালেমকেও(তার জূলুম থেকে বাধা দিয়ে, এবং মজলূমকেও(জুলুম থেকে রক্ষা করে)।
নুসরাত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো একজন মুসলিমের এমন গায়রত এবং ঈমানী ভ্রাতৃত্বের চেতনা যা তাকে তাঁর দুর্বল মুসলিম ভাই বোনদেরকে জালেমের জুলুম থেকে রক্ষা করতে এবং তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াতে বাধ্য করে।
একজন মুসলিম এই আদর্শকে তার দৈনন্দিন জীবনে যতটা অনুশীলন করবে, জালেম ও নাফরমানদের বিরুদ্ধের জিহাদে সে ততটা শক্তিশালী হবে।
মুসলিম ভ্রাতৃত্বের প্রতিকৃতিই হলো জুলুম- অন্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্বল মুসলিম ভাই- বোনদেরকে সাহায্য করা। এটা ঈমানের দাবী এবং মুসলিম ভাই-বোনের অধিকার। মুসলিমদের এই নুসরাতের অধিকার আদায়কারী ব্যক্তি এবং পরিত্যাগকারী ব্যক্তি উভয়ে আখেরাতের পুর্বে দুনিয়াতেই নিজ নিজ কর্মের ফল ভোগ করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
" مَا مِنِ امْرِئٍ*يَخْذُلُ امْرَأً مُسْلِمًا*عِنْدَ مَوْطِنٍ تُنْتَهَكُ فِيهِ حُرْمَتُهُ، وَيُنْتَقَصُ فِيهِ مِنْ عِرْضِهِ إِلَّا خَذَلَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي مَوْطِنٍ يُحِبُّ فِيهِ نُصْرَتَهُ، وَمَا مِنِ امْرِئٍ يَنْصُرُ امْرَأً مُسْلِمًا فِي مَوْطِنٍ يُنْتَقَصُ فِيهِ مِنْ عِرْضِهِ، وَيُنْتَهَكُ فِيهِ مِنْ حُرْمَتِهِ إِلَّا نَصَرَهُ اللَّهُ فِي مَوْطِنٍ يُحِبُّ فِيهِ نُصْرَتَهُ ".
" যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে এমন জায়গায় সাহায্য করা পরিত্যাগ করল যেখানে তার ইজ্জত- সম্মানকে লুন্ঠন করা হয়, তবে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন জায়গায় লাঞ্ছিত করবেন যেখানে তার সাহায্যের প্রয়োজন হবে। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে অপমান ও লাঞ্ছনার স্থানে সাহায্য করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন জায়গায় সাহায্য করবেন যেখানে সে সাহায্যের মুখাপেক্ষী হবে। (মুসনাদে আহমদ, ৪/৩০)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি কাজের আদেশ করেছেন আর সাতটি কাজের নিষেধ করেছেন, যে সাতটি কাজের আদেশ করেছেন তার একটি হলঃ " نصر المظلوم'
" মুজলুমের সাহায্য করা"।
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ*رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ : أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِسَبْعٍ ؛ بِعِيَادَةِ الْمَرِيضِ، وَاتِّبَاعِ الْجَنَائِزِ،وَتَشْمِيتِ*الْعَاطِسِ، وَنَصْرِ الضَّعِيفِ، وَعَوْنِ الْمَظْلُومِ، وَإِفْشَاءِ السَّلَامِ، وَإِبْرَارِ الْمُقْسِمِ.
" রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি কাজের আদেশ করেছেনঃ ১/ অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করা, ২/ জানাযার পিছু নেয়া, ৩/ হাঁচি দাতার উত্তর দেয়া, ৪/ দুর্বল এবং ৫/ মাজলুমকে সাহায্য করা, ৬/ সালামের প্রসার ঘটানো, ৭/ কসম পুরা করা। ( সহীহ বুখারী হাদীস নং ৬২৩৫)
জুলুম হলো মহা বড় অপরাধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
" الظلم ظلمات يوم القيامة"
" জুলুম কিয়ামতের দিন ভীষণ অন্ধকার রুপে আবির্ভূত হবে"। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৪৭)
জুলুম কেন এতো বড় অপরাধ? তার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেনঃ " জুলুম অন্যান্য গুনাহ থেকে অধিক কঠিন গুনাহ, কারণ জুলুম সাধারণত এমন লোকদের সাথে করা হয় যারা দুর্বল-অসহায়, এবং কোন প্রতিশোধ নিতে পারে না"। ( ফাতহুল বারী ৫/১০০, কিঃ মাজালিম, অধ্যায়: ৮)
একজন মুসলিমের উপর জুলুম দেখে চুপ থাকা কিংবা তাকে জালেমের হাতে ছেড়ে দেয়া কোনো মুসলিমের শান নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
"الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ،*لَا يَظْلِمُهُ، وَلَا*يُسْلِمُهُ*، وَمَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ، كَانَ اللَّهُ فِي حَاجَتِهِ، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ".
" মুসলিম মুসলিমের ভাই, সে তাকে জুলুম করবে না এবং কোনো জালেমের হাতে ছেড়েও দেবে না, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পুরণ করবে আল্লাহ তায়ালা তার প্রয়োজন পুরণ করবেন, আর যে ব্যক্তি তার কোনো মুসলিম ভাইয়ের দুঃখ কষ্ট এবং বিপদকে লাঘব করবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দুঃখ কষ্ট এবং বিপদকে লাঘব করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দোষ ত্রুটি গোপন রাখবেন"। ( সহীহ বুখারী, কিঃমাজালিম, অধ্যায়: ৩, হাদীস নং ২৪৪২)
এরপরেও কি কোনো মুসলিম তার মুসলিম ভাইয়ের উপর মুসিবত সংঘটিত হতে দেখতে পারে? এবং তাকে জুলুম অন্যায়ের কাছে ছেড়ে দিতে পারে, এবং তাকে সাহায্য থেকে বঞ্ছিত রাখতে পারে?? না কখনোই না।
বরং সে তার ধমনীতে প্রতিশোধের তপ্ত খুনের সঞ্চালন করবে, তার নিদ্রায় সুখ আসবে না যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের মুসিবত এবং বিপদ উদ্ধারে নিজের যথাসাধ্য শক্তি সামর্থ ব্যয় করে।
জাহেলি যুগের লোকেরা একে অপরকে সাহায্য করার জন্য মিত্র- চুক্তি স্থাপন করত। এবং এই চুক্তির মধ্যে ন্যায় অন্যায়ের কোনো পার্থক্য থাকতো না। ফলে প্রত্যেক গোষ্ঠী তার মিত্র পক্ষকে ন্যায় অন্যায় সব ক্ষেত্রেই সাহায্য করত। ইসলাম এসে এই নীতির গোড়ায় নতুন করে পানি সেচ করে, এবং অন্যায়ের দিকটাকে নির্মূল করে শুধুমাত্র ন্যায়ের দিকটাকে জীবিত রাখে। ইসলাম বলেঃ
" أنصر اخاك ظالما أو مظلوما"
"তুমি তোমার ভাইকে সাহায্য কর, জালেমকেও(তার জূলুম থেকে বাধা দিয়ে, এবং মজলূমকেও(জুলুম থেকে রক্ষা করে)"।
এক সাহাবী রাঃ জিজ্ঞেস করলেনঃ " ইয়া রাসুলুল্লাহ মজলুমকে সাহায্য করতে হবে, বুঝলাম কিন্তু জালেমকে সাহায্য করব কিভাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ " তাকে জুলুম করতে বাধা দাও, আর এটাই তাকে সাহায্য করা"। (সহীহ বুখারী, কিঃইকরাহ, অধ্যায়ঃ ৭, হাদীস নং ৬৯৫২)
সুতরাং তুমি যদি তোমার জাতি, তোমার গোত্র, তোমার সম্প্রদায় এবং তোমার দলকে কোনো মুসলিমের প্রতি জুলুম করতে বাধা প্রদান কর তবে এটাই হবে নুসরাত। আর যদি এমনটি না কর তবে সেটাই হবে পঁচা দুর্গন্ধ যুক্ত সাম্প্রদায়িকতা। আমাদেরকে যা বর্জন করতে আদেশ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সাম্প্রদায়িক চেতনাধারী ব্যক্তিকে ধ্বংস প্রাপ্ত উটের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
عَنْ*عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ*، عَنْ*أَبِيهِ*قَالَ :مَنْ نَصَرَ قَوْمَهُ عَلَى غَيْرِ الْحَقِّ،*فَهُوَ كَالْبَعِيرِ الَّذِي رَدَى فَهُوَ يُنْزَعُ بِذَنَبِهِ.
"যে ব্যক্তি তার কওমকে হকের বিপরীতে সাহায্য করল সে হলো লেজ হেঁচড়ানো ধ্বংস প্রায় উটের মত"। ( সুনানে আবু দাউদ, কিঃআদব, হাদীস নং ৫১১৮/৫১১৭)
যে ব্যক্তি সামর্থ রাখা সত্বেও কোনো বিপদগ্রস্ত মুসলিমকে কোনো কথা দিয়ে অথবা সুপারিশ করে অথবা সৎ পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করলো না, প্রকৃত অর্থে সে তার মুসলিম ভাইয়ের লাঞ্ছনা দেখতে পছন্দ করে। এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন সমস্ত মাখলুকের সামনে অপমানিত করবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
عَنْ*أَبِي أُمَامَةَ بْنِ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ، عَنْ*أَبِيهِ*، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ : "*مَنْ أُذِلَّ عِنْدَهُ*مُؤْمِنٌ، فَلَمْ يَنْصُرْهُ، وَهُوَ قَادِرٌ عَلَى أَنْ يَنْصُرَهُ ؛ أَذَلَّهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى رُءُوسِ الْخَلَائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ".
" যে ব্যক্তির সামনে তার কোনো মুসলিম ভাইকে লাঞ্ছিত করা হলো কিন্তু সে সামর্থ রাখা সত্বেও তাকে সাহায্য করলো না, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাকে সমস্ত মাখলুকের সামনে অপমানিত করবেন"। ( মুসনাদে আহমদ ৩/৪৮৭)
"নুসরাত" ছাড়া দাওয়াহর মধ্যে প্রাণ আসে না। এজন্য দাওয়াতী কাজে এমন কিছু ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন যারা "নুসরাত" নৈতিকতায় হবে টইটম্বুর।
নুসরাতের সর্বনিম্ন স্তর হলো বিপদ আপদে সহায়তা করা, জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। আর সর্বোচ্চ স্তর হলো আন-নুসরাত ফিল জিহাদ, তথা জিহাদের অঙ্গনে নুসরাতের উন্নত ভুমিকা রাখা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্বের মৌসুমে আগত লোকদের সামনে দ্বীনে হকের দাওয়াহ পেশ করতেন আর বলতেনঃ " কে আছে আমাকে আশ্রয় দেবে? কে আছে আমাকে সাহায্য করবে?"
যখন বায়আ'তে আকাবাহ অনুষ্ঠিত হয় তখন তার প্রধান শর্তটিই ছিল "নুসরাত"। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা থেকে আগত মুমিনদেরকে বললেনঃ "আমি তোমাদের কাছে আমার জন্য এবং আমার আসহাবের জন্য এটা তলব করছি যে, তোমরা আমাদেরকে আশ্রয় দেবে, সাহায্য করবে, এবং শত্রুদের থেকে রক্ষা করবে যেভাবে তোমরা নিজেদেরকে রক্ষা করে থাক, বিনিময়ে তোমরা জান্নাতের অধিকারী হবে"।
জাহালাতের অন্ধকার আকাশে যখন রিসালাতের সুর্য উঁকি মারে তখন ওরাকাহ বিন নাওফল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেনঃ " যদি তোমার দিনটা আমাকে পেয়ে যায় তাহলে অবশ্যই আমি তোমাকে ভরপুর সাহায্য করব"। ( সহীহ বুখারী,বদউল ওহ্য়ী, অধ্যায় ৩, হাদীস নং ৩।)
আল্লাহ তায়ালা নিজেই তাঁর রাসূলকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহায্য করতে সক্ষম, তদুপরি তিনি মুমিনদেরকে সাহায্য করতে বলেছেন যাতে নুসরাতের মধ্যে মুমিনদের একটি অংশ থাকে যে কারণে তারা আল্লাহ তায়ালার কাছে জিজ্ঞাসিতও হবে আবার প্রতিদানও প্রাপ্ত হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, " তিনিই তোমাকে তাঁর সাহায্য দিয়ে এবং মুমিনদের দ্বারা শক্তিশালী করেছেন"। ( আনফাল ৬২)
আর সফলকাম তাঁরাই যাঁরা
" آمنوا به وعزروه نصروه"
তাঁর উপর ঈমান আনল, তাঁকে সমর্থন করল এবং তাঁকে সাহায্য করল"। ( আরাফ ১৫৭)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আল্লাহ্ তায়ালার কাছে সাহায্যের জন্য কায়মনোবাক্যে দো'য়া করা শিখিয়েছেন। হাদীসে পাকের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দো'য়াটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে,
عَنِ*ابْنِ عَبَّاسٍ*قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُو : "*رَبِّ أَعِنِّي*وَلَا تُعِنْ عَلَيَّ، وَانْصُرْنِي وَلَا تَنْصُرْ عَلَيَّ، وَامْكُرْ لِي وَلَا تَمْكُرْ عَلَيَّ، وَاهْدِنِي وَيَسِّرْ هُدَايَ إِلَيَّ، وَانْصُرْنِي عَلَى مَنْ بَغَى عَلَيَّ الخ...
" হে রব! তুমি আমায় সাহায্য কর, আমার বিরুদ্ধে সাহায্য কর না, তুমি আমার জন্য সহায় হও, আমার বিরুদ্ধে সহায় হয়ো না, তুমি আমার জন্য কৌশল কর আমার বিরুদ্ধে কৌশল কর না। আমাকে সঠিক পথে চালাও এবং সৎপথকে আমার জন্য সহজ করে দাও। আর যে আমার উপর চড়াও হয় তার উপর আমাকে বিজয়ী কর"। (সংক্ষিপ্ত, সুনানে আবু দাউদ, কিঃসালাত, হাদীস নং ১৫১০/১৫১১)
কিন্তু সাহায্য অজানা কোন মাধ্যম ধরে আসবে না, বরং তার জন্য আমাদেরকে উপকরণ গ্রহণ করতে হবে এবং সামর্থ্যের জোগাড় করতে হবে। যাতে প্রয়োজন মুহূর্তে সুষ্ঠু ভাবে নুসরাত করতে পারি। এবং এর ফলে আমাদের ঈমানী তীব্রতা এবং গায়রতও যেন অক্ষুন্ন থাকে। কারণ প্রয়োজনের মুহূর্তে সাহায্য পরিত্যাগ করা হলো মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য যা তারা আপন বন্ধুদের সাথে করে, আল্লাহ তায়ালা এদের প্রসঙ্গেই বলেনঃ
" لئن أخرجوا لايخرجون معهم و لئن قوتلوا لاينصرونهم".
" যদি তাদের (যুদ্ধে) বের করা হয় তবে তারা তাদের (বন্ধুদের) সাথে বের হবে না, আর যদি যুদ্ধে বের হয়ো তবে তাদেরকে সাহায্য করবে না"।(হাশর:১২)
যে লোকদের অভ্যাস হলো রাস্তার ধারে বসে আড্ডা দেয়া আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এভাবে বসতে নিষেধ করেছেন। তবে যারা রাস্তায় বসার জন্য নাছোড় তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই শর্ত জুড়ে দিয়েছেন যে, তোমরা যদি রাস্তায় বসতেই চাও তাহলে মানুষদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দাও, সালামের উত্তর দাও, এবং মাজলূমকে সাহায্য কর"।( মুসনাদে আহমদ: ৪/২৮২, সহীহ)
প্রকৃত নুসরাত হলো মুসলিম ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার সাহায্য করা। কারণ অনুপস্থিত অবস্থাতে ভ্রাতৃত্বের অনুভূতিতে এবং সৌহার্দ্য-সৌজন্যতায় ঘাটতি পড়ে। সুতরাং যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে সাহায্য করার উদ্যোগ নেবে, এবং তার নুসরাতকে আল্লাহর জন্য খালেছ করবে, আল্লাহ তায়ালা এমন ব্যক্তিকে দুনিয়া আখেরাতে একা ছেড়ে দেবেন না, দুনিয়াতে তার জন্য এমন কিছু বান্দাকে অনুগত করে দিবেন যারা তার পার্শ্ব নেবে, এবং তাকে সাহায্য করবে । আর আখেরাতে আল্লাহ তায়ালা নিজেই তার বন্ধু হবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
" من نصر أخاه بظهر الغيب نصره الله في الدنيا والآخرة".
" যে ব্যক্তি তার ভাইকে অনুপস্থিত অবস্থাতে সাহায্য করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে সাহায্য করবেন"। ( সহীহ আল জামে, হাদীস নং ৬৫৭৪, হাসান।)
"নুসরাত" এর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং ফরজ দিকটি হলো শাসক শ্রেণীর, এবং ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী লোকদের হাত থেকে রক্ষা করা এবং তাদের জুলুম- অন্যায়কে রুখে দেয়া। কারণ এই শ্রেণীর লোকদের জুলুম-শোষণ অধিক কঠিন এবং তার ধরণও অনেক প্রচন্ড হয়ে থাকে। তাছাড়া সাধারণত তাদেরকে নিভৃতকারী এবং উপদেশকারীদের সংখ্যা অনেক কম আর তোষামোদকারীদের সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে থাকে। যে তোষামোদ আর সৌজন্যতার আড়ালে বহু হককে বিনষ্ট করা হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন লোকদের থেকে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছেন যারা শাসকশ্রেণীর জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয় না এবং তাদেরকে জুলুমকে বাধা দিয়ে তাদের আত্নাকে সাহায্য করে না।
عَنْ*كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ*قَالَ : خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ تِسْعَةٌ، فَقَالَ : " إِنَّهُ سَتَكُونُ بَعْدِي أُمَرَاءُ، مَنْ صَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ، وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ فَلَيْسَ مِنِّي وَلَسْتُ مِنْهُ، وَلَيْسَ بِوَارِدٍ عَلَيَّ الْحَوْضَ، وَمَنْ لَمْ يُصَدِّقْهُمْ بِكَذِبِهِمْ، وَلَمْ يُعِنْهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ فَهُوَ مِنِّي وَأَنَا مِنْهُ، وَهُوَ وَارِدٌ عَلَيَّ الْحَوْضَ ".
" নিশ্চয়ই আমার পরে এমন অনেক শাসক হবে যারা তাদের মিথ্যাকে সত্যায়ন করবে এবং তাদেরকে জুলুমের উপর সাহায্য করবে সে আমার থেকে নয় এবং আমি তার থেকে নই, এবং সে আমার হাউজের নিকট অবতরণ করবে না। আর যে ব্যক্তি তাদের মিথ্যাকে সত্যায়ন করবে না এবং তাদেরকে জুলুমের উপর সাহায্য করবে না সে আমার থেকে আমি তার থেকে এবং সে আমার হাউজে অবতরণ করবে"। ( সুনানে নাসায়ী, কিঃবায়আ'ত, হাদীস নং ৪২০৭)
দুর্বল ও অসহায়দেরকে সাহায্য করা এবং সাধারণ জনগণকে শাসকদের দমন পীড়ন থেকে রক্ষা করা একটি উৎকৃষ্টতম গুণ। এই গুণের কারণে হাদীসের মধ্যে রূমীদের ( পশ্চিমাদের) অনেক প্রশংসা করা হয়েছে।
عن مُوسَى بْنُ عُلَيٍّ*، عَنْ*أَبِيهِ*، قَالَ : قَالَ المستورد الْقُرَشِيُّ*عِنْدَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ ع
َلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : " تَقُومُ السَّاعَةُ وَالرُّومُ أَكْثَرُ النَّاسِ ". فَقَالَ لَهُ عَمْرٌو : أَبْصِرْ مَا تَقُولُ. قَالَ : أَقُولُ مَا سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. قَالَ : لَئِنْ قُلْتَ ذَلِكَ،*إِنَّ فِيهِمْ لَخِصَالًا أَرْبَعًا*: إِنَّهُمْ لَأَحْلَمُ النَّاسِ عِنْدَ فِتْنَةٍ، وَأَسْرَعُهُمْ إِفَاقَةً بَعْدَ مُصِيبَةٍ، وَأَوْشَكُهُمْ كَرَّةً بَعْدَ فَرَّةٍ، وَخَيْرُهُمْ لِمِسْكِينٍ وَيَتِيمٍ وَضَعِيفٍ، وَخَامِسَةٌ حَسَنَةٌ جَمِيلَةٌ : وَأَمْنَعُهُمْ مِنْ ظُلْمِ الْمُلُوكِ.
" আমর বিন আস (রাঃ) বলেনঃ " নিশ্চয়ই তাদের (রুমীদের) মধ্যে চারটি ভালো স্বভাব রয়েছে, ১/ তারা বিপদে অন্যদের তুলনায় অধিক ধৈর্যশীল। ২/ মুসিবত ও দুর্যোগের পর দ্রুততর উন্নতি লাভকারী। ৩/ যুদ্ধে পশ্চাৎপসরণের পর দ্রুততর প্রত্যাবর্তনকারী। ৪/ অসহায়- দুঃস্থ এবং এতিমদের কল্যাণ সাধনাকারী। আর তাদের পঞ্চম সুন্দর গুনটি হলো শাসকদের জুলুম নিপীড়ণ থেকে মানুষদেরকে রক্ষা করা।( সহীহ মুসলিম, কিঃ ফিতান, অধ্যায়,১০, হাদীস নং ৩৫/২৮৯৮)
জাহিলি রীতিমতো এবং সাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে অন্যায় ও জুলুমের সাহায্য করা আল্লাহ তায়ালার ক্রোধ ও অভিশাপের কারণ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
" من اعان على خصومة بظلم أو يعين على ظلم لم يزل في سخط الله حتى ينزع"
" যে ব্যক্তি কোন মামলা মোকদ্দমায় অন্যায়ের সাহায্য করল সে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালার ক্রোধে পতিত থাকবে।( সুনানে ইবনে মাজাহ, কিঃআহকাম, অধ্যায় ৬ হাদীস নং ১৮৭৮/২৩২০,সহীহ।)
সুতরাং তুমি সত্যের সাহায্যকারী হও, সত্য যেখানেই থাকুক না কেন!! নতুবা তুমি জিহাদের উচ্চ চুড়ায় আরোহণের ইচ্ছা কর না এবং শাহাদাতের পেয়ালা পানের কামনা করো না।
আলোচনার সারসংক্ষেপঃ
– অসহায়- মজলুমদের সাহায্য করা ঈমানী ভ্রাতৃত্বের প্রকৃতি।
– সাহেবে নুসরাতকে আল্লাহ তায়ালা এমন জায়গায় সাহায্য করবেন যেখানে সে সাহায্যের মুখাপেক্ষী হবে।
– জুলুম নীপিড়ণ সাধারণত দুর্বলদের সাথে করা হয় সুতরাং তুমি তাদেরকে ছেড়ে দিতে পারো না এবং তার সাহায্য পরিত্যাগ করতে পারো না।
– নুসরাত এর দ্বারা দাওয়াহর মধ্যে প্রাণ আসে এবং শক্তিশালী হয়।
– জুলুমের স্থানে উপস্থিত থাকলে কিংবা সে সম্পর্কে অবগত হলে, জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করা এবং মাজলুমকে সাহায্য আমরা নিজেদের উপর ওয়াজিব মনে করি।
– প্রকৃত নুসরাত হলো মুসলিম ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার কল্যাণ কামনা করা।
– নুসরাত এর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং ফরজ দিকটি হলো শাসক শ্রেণীর জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
– সাম্প্রদায়িকতা এবং দলান্ধতার কারণে অন্যায়ের সাহায্য করা এবং বাতিলের পক্ষ নেয়া আল্লাহ তায়ালার ক্রোধের কারণ।
اللهم اغفرلنا واجعلنا من الأنصار الذين ضحوا بأنفسهم واموالهم في سبيلك حتى رضيت عنهم.
★ নুসরাতঃ
"أنصر اخاك ظالما أو مظلوما"
" তুমি তোমার ভাইকে সাহায্য কর, জালেমকেও(তার জূলুম থেকে বাধা দিয়ে, এবং মজলূমকেও(জুলুম থেকে রক্ষা করে)।
নুসরাত দ্বারা উদ্দেশ্য হলো একজন মুসলিমের এমন গায়রত এবং ঈমানী ভ্রাতৃত্বের চেতনা যা তাকে তাঁর দুর্বল মুসলিম ভাই বোনদেরকে জালেমের জুলুম থেকে রক্ষা করতে এবং তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াতে বাধ্য করে।
একজন মুসলিম এই আদর্শকে তার দৈনন্দিন জীবনে যতটা অনুশীলন করবে, জালেম ও নাফরমানদের বিরুদ্ধের জিহাদে সে ততটা শক্তিশালী হবে।
মুসলিম ভ্রাতৃত্বের প্রতিকৃতিই হলো জুলুম- অন্যায়ের বিরুদ্ধে দুর্বল মুসলিম ভাই- বোনদেরকে সাহায্য করা। এটা ঈমানের দাবী এবং মুসলিম ভাই-বোনের অধিকার। মুসলিমদের এই নুসরাতের অধিকার আদায়কারী ব্যক্তি এবং পরিত্যাগকারী ব্যক্তি উভয়ে আখেরাতের পুর্বে দুনিয়াতেই নিজ নিজ কর্মের ফল ভোগ করবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
" مَا مِنِ امْرِئٍ*يَخْذُلُ امْرَأً مُسْلِمًا*عِنْدَ مَوْطِنٍ تُنْتَهَكُ فِيهِ حُرْمَتُهُ، وَيُنْتَقَصُ فِيهِ مِنْ عِرْضِهِ إِلَّا خَذَلَهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ فِي مَوْطِنٍ يُحِبُّ فِيهِ نُصْرَتَهُ، وَمَا مِنِ امْرِئٍ يَنْصُرُ امْرَأً مُسْلِمًا فِي مَوْطِنٍ يُنْتَقَصُ فِيهِ مِنْ عِرْضِهِ، وَيُنْتَهَكُ فِيهِ مِنْ حُرْمَتِهِ إِلَّا نَصَرَهُ اللَّهُ فِي مَوْطِنٍ يُحِبُّ فِيهِ نُصْرَتَهُ ".
" যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে এমন জায়গায় সাহায্য করা পরিত্যাগ করল যেখানে তার ইজ্জত- সম্মানকে লুন্ঠন করা হয়, তবে অবশ্যই আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন জায়গায় লাঞ্ছিত করবেন যেখানে তার সাহায্যের প্রয়োজন হবে। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমকে অপমান ও লাঞ্ছনার স্থানে সাহায্য করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে এমন জায়গায় সাহায্য করবেন যেখানে সে সাহায্যের মুখাপেক্ষী হবে। (মুসনাদে আহমদ, ৪/৩০)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি কাজের আদেশ করেছেন আর সাতটি কাজের নিষেধ করেছেন, যে সাতটি কাজের আদেশ করেছেন তার একটি হলঃ " نصر المظلوم'
" মুজলুমের সাহায্য করা"।
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ*رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ : أَمَرَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِسَبْعٍ ؛ بِعِيَادَةِ الْمَرِيضِ، وَاتِّبَاعِ الْجَنَائِزِ،وَتَشْمِيتِ*الْعَاطِسِ، وَنَصْرِ الضَّعِيفِ، وَعَوْنِ الْمَظْلُومِ، وَإِفْشَاءِ السَّلَامِ، وَإِبْرَارِ الْمُقْسِمِ.
" রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সাতটি কাজের আদেশ করেছেনঃ ১/ অসুস্থ ব্যক্তির সেবা করা, ২/ জানাযার পিছু নেয়া, ৩/ হাঁচি দাতার উত্তর দেয়া, ৪/ দুর্বল এবং ৫/ মাজলুমকে সাহায্য করা, ৬/ সালামের প্রসার ঘটানো, ৭/ কসম পুরা করা। ( সহীহ বুখারী হাদীস নং ৬২৩৫)
জুলুম হলো মহা বড় অপরাধ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
" الظلم ظلمات يوم القيامة"
" জুলুম কিয়ামতের দিন ভীষণ অন্ধকার রুপে আবির্ভূত হবে"। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং ২৪৪৭)
জুলুম কেন এতো বড় অপরাধ? তার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে ইবনুল জাওযী (রহঃ) বলেনঃ " জুলুম অন্যান্য গুনাহ থেকে অধিক কঠিন গুনাহ, কারণ জুলুম সাধারণত এমন লোকদের সাথে করা হয় যারা দুর্বল-অসহায়, এবং কোন প্রতিশোধ নিতে পারে না"। ( ফাতহুল বারী ৫/১০০, কিঃ মাজালিম, অধ্যায়: ৮)
একজন মুসলিমের উপর জুলুম দেখে চুপ থাকা কিংবা তাকে জালেমের হাতে ছেড়ে দেয়া কোনো মুসলিমের শান নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
"الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ،*لَا يَظْلِمُهُ، وَلَا*يُسْلِمُهُ*، وَمَنْ كَانَ فِي حَاجَةِ أَخِيهِ، كَانَ اللَّهُ فِي حَاجَتِهِ، وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللَّهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ، وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ".
" মুসলিম মুসলিমের ভাই, সে তাকে জুলুম করবে না এবং কোনো জালেমের হাতে ছেড়েও দেবে না, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের প্রয়োজন পুরণ করবে আল্লাহ তায়ালা তার প্রয়োজন পুরণ করবেন, আর যে ব্যক্তি তার কোনো মুসলিম ভাইয়ের দুঃখ কষ্ট এবং বিপদকে লাঘব করবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দুঃখ কষ্ট এবং বিপদকে লাঘব করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দোষ ত্রুটি গোপন রাখবেন"। ( সহীহ বুখারী, কিঃমাজালিম, অধ্যায়: ৩, হাদীস নং ২৪৪২)
এরপরেও কি কোনো মুসলিম তার মুসলিম ভাইয়ের উপর মুসিবত সংঘটিত হতে দেখতে পারে? এবং তাকে জুলুম অন্যায়ের কাছে ছেড়ে দিতে পারে, এবং তাকে সাহায্য থেকে বঞ্ছিত রাখতে পারে?? না কখনোই না।
বরং সে তার ধমনীতে প্রতিশোধের তপ্ত খুনের সঞ্চালন করবে, তার নিদ্রায় সুখ আসবে না যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের মুসিবত এবং বিপদ উদ্ধারে নিজের যথাসাধ্য শক্তি সামর্থ ব্যয় করে।
জাহেলি যুগের লোকেরা একে অপরকে সাহায্য করার জন্য মিত্র- চুক্তি স্থাপন করত। এবং এই চুক্তির মধ্যে ন্যায় অন্যায়ের কোনো পার্থক্য থাকতো না। ফলে প্রত্যেক গোষ্ঠী তার মিত্র পক্ষকে ন্যায় অন্যায় সব ক্ষেত্রেই সাহায্য করত। ইসলাম এসে এই নীতির গোড়ায় নতুন করে পানি সেচ করে, এবং অন্যায়ের দিকটাকে নির্মূল করে শুধুমাত্র ন্যায়ের দিকটাকে জীবিত রাখে। ইসলাম বলেঃ
" أنصر اخاك ظالما أو مظلوما"
"তুমি তোমার ভাইকে সাহায্য কর, জালেমকেও(তার জূলুম থেকে বাধা দিয়ে, এবং মজলূমকেও(জুলুম থেকে রক্ষা করে)"।
এক সাহাবী রাঃ জিজ্ঞেস করলেনঃ " ইয়া রাসুলুল্লাহ মজলুমকে সাহায্য করতে হবে, বুঝলাম কিন্তু জালেমকে সাহায্য করব কিভাবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ " তাকে জুলুম করতে বাধা দাও, আর এটাই তাকে সাহায্য করা"। (সহীহ বুখারী, কিঃইকরাহ, অধ্যায়ঃ ৭, হাদীস নং ৬৯৫২)
সুতরাং তুমি যদি তোমার জাতি, তোমার গোত্র, তোমার সম্প্রদায় এবং তোমার দলকে কোনো মুসলিমের প্রতি জুলুম করতে বাধা প্রদান কর তবে এটাই হবে নুসরাত। আর যদি এমনটি না কর তবে সেটাই হবে পঁচা দুর্গন্ধ যুক্ত সাম্প্রদায়িকতা। আমাদেরকে যা বর্জন করতে আদেশ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন সাম্প্রদায়িক চেতনাধারী ব্যক্তিকে ধ্বংস প্রাপ্ত উটের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
عَنْ*عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ*، عَنْ*أَبِيهِ*قَالَ :مَنْ نَصَرَ قَوْمَهُ عَلَى غَيْرِ الْحَقِّ،*فَهُوَ كَالْبَعِيرِ الَّذِي رَدَى فَهُوَ يُنْزَعُ بِذَنَبِهِ.
"যে ব্যক্তি তার কওমকে হকের বিপরীতে সাহায্য করল সে হলো লেজ হেঁচড়ানো ধ্বংস প্রায় উটের মত"। ( সুনানে আবু দাউদ, কিঃআদব, হাদীস নং ৫১১৮/৫১১৭)
যে ব্যক্তি সামর্থ রাখা সত্বেও কোনো বিপদগ্রস্ত মুসলিমকে কোনো কথা দিয়ে অথবা সুপারিশ করে অথবা সৎ পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করলো না, প্রকৃত অর্থে সে তার মুসলিম ভাইয়ের লাঞ্ছনা দেখতে পছন্দ করে। এমন ব্যক্তিকে আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন সমস্ত মাখলুকের সামনে অপমানিত করবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
عَنْ*أَبِي أُمَامَةَ بْنِ سَهْلِ بْنِ حُنَيْفٍ، عَنْ*أَبِيهِ*، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ : "*مَنْ أُذِلَّ عِنْدَهُ*مُؤْمِنٌ، فَلَمْ يَنْصُرْهُ، وَهُوَ قَادِرٌ عَلَى أَنْ يَنْصُرَهُ ؛ أَذَلَّهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى رُءُوسِ الْخَلَائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ".
" যে ব্যক্তির সামনে তার কোনো মুসলিম ভাইকে লাঞ্ছিত করা হলো কিন্তু সে সামর্থ রাখা সত্বেও তাকে সাহায্য করলো না, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালা তাকে সমস্ত মাখলুকের সামনে অপমানিত করবেন"। ( মুসনাদে আহমদ ৩/৪৮৭)
"নুসরাত" ছাড়া দাওয়াহর মধ্যে প্রাণ আসে না। এজন্য দাওয়াতী কাজে এমন কিছু ব্যক্তিত্বের প্রয়োজন যারা "নুসরাত" নৈতিকতায় হবে টইটম্বুর।
নুসরাতের সর্বনিম্ন স্তর হলো বিপদ আপদে সহায়তা করা, জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। আর সর্বোচ্চ স্তর হলো আন-নুসরাত ফিল জিহাদ, তথা জিহাদের অঙ্গনে নুসরাতের উন্নত ভুমিকা রাখা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হজ্বের মৌসুমে আগত লোকদের সামনে দ্বীনে হকের দাওয়াহ পেশ করতেন আর বলতেনঃ " কে আছে আমাকে আশ্রয় দেবে? কে আছে আমাকে সাহায্য করবে?"
যখন বায়আ'তে আকাবাহ অনুষ্ঠিত হয় তখন তার প্রধান শর্তটিই ছিল "নুসরাত"। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনা থেকে আগত মুমিনদেরকে বললেনঃ "আমি তোমাদের কাছে আমার জন্য এবং আমার আসহাবের জন্য এটা তলব করছি যে, তোমরা আমাদেরকে আশ্রয় দেবে, সাহায্য করবে, এবং শত্রুদের থেকে রক্ষা করবে যেভাবে তোমরা নিজেদেরকে রক্ষা করে থাক, বিনিময়ে তোমরা জান্নাতের অধিকারী হবে"।
জাহালাতের অন্ধকার আকাশে যখন রিসালাতের সুর্য উঁকি মারে তখন ওরাকাহ বিন নাওফল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিলেনঃ " যদি তোমার দিনটা আমাকে পেয়ে যায় তাহলে অবশ্যই আমি তোমাকে ভরপুর সাহায্য করব"। ( সহীহ বুখারী,বদউল ওহ্য়ী, অধ্যায় ৩, হাদীস নং ৩।)
আল্লাহ তায়ালা নিজেই তাঁর রাসূলকে সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহায্য করতে সক্ষম, তদুপরি তিনি মুমিনদেরকে সাহায্য করতে বলেছেন যাতে নুসরাতের মধ্যে মুমিনদের একটি অংশ থাকে যে কারণে তারা আল্লাহ তায়ালার কাছে জিজ্ঞাসিতও হবে আবার প্রতিদানও প্রাপ্ত হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, " তিনিই তোমাকে তাঁর সাহায্য দিয়ে এবং মুমিনদের দ্বারা শক্তিশালী করেছেন"। ( আনফাল ৬২)
আর সফলকাম তাঁরাই যাঁরা
" آمنوا به وعزروه نصروه"
তাঁর উপর ঈমান আনল, তাঁকে সমর্থন করল এবং তাঁকে সাহায্য করল"। ( আরাফ ১৫৭)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে আল্লাহ্ তায়ালার কাছে সাহায্যের জন্য কায়মনোবাক্যে দো'য়া করা শিখিয়েছেন। হাদীসে পাকের মধ্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে দো'য়াটি এভাবে বর্ণিত হয়েছে,
عَنِ*ابْنِ عَبَّاسٍ*قَالَ : كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدْعُو : "*رَبِّ أَعِنِّي*وَلَا تُعِنْ عَلَيَّ، وَانْصُرْنِي وَلَا تَنْصُرْ عَلَيَّ، وَامْكُرْ لِي وَلَا تَمْكُرْ عَلَيَّ، وَاهْدِنِي وَيَسِّرْ هُدَايَ إِلَيَّ، وَانْصُرْنِي عَلَى مَنْ بَغَى عَلَيَّ الخ...
" হে রব! তুমি আমায় সাহায্য কর, আমার বিরুদ্ধে সাহায্য কর না, তুমি আমার জন্য সহায় হও, আমার বিরুদ্ধে সহায় হয়ো না, তুমি আমার জন্য কৌশল কর আমার বিরুদ্ধে কৌশল কর না। আমাকে সঠিক পথে চালাও এবং সৎপথকে আমার জন্য সহজ করে দাও। আর যে আমার উপর চড়াও হয় তার উপর আমাকে বিজয়ী কর"। (সংক্ষিপ্ত, সুনানে আবু দাউদ, কিঃসালাত, হাদীস নং ১৫১০/১৫১১)
কিন্তু সাহায্য অজানা কোন মাধ্যম ধরে আসবে না, বরং তার জন্য আমাদেরকে উপকরণ গ্রহণ করতে হবে এবং সামর্থ্যের জোগাড় করতে হবে। যাতে প্রয়োজন মুহূর্তে সুষ্ঠু ভাবে নুসরাত করতে পারি। এবং এর ফলে আমাদের ঈমানী তীব্রতা এবং গায়রতও যেন অক্ষুন্ন থাকে। কারণ প্রয়োজনের মুহূর্তে সাহায্য পরিত্যাগ করা হলো মুনাফিকদের বৈশিষ্ট্য যা তারা আপন বন্ধুদের সাথে করে, আল্লাহ তায়ালা এদের প্রসঙ্গেই বলেনঃ
" لئن أخرجوا لايخرجون معهم و لئن قوتلوا لاينصرونهم".
" যদি তাদের (যুদ্ধে) বের করা হয় তবে তারা তাদের (বন্ধুদের) সাথে বের হবে না, আর যদি যুদ্ধে বের হয়ো তবে তাদেরকে সাহায্য করবে না"।(হাশর:১২)
যে লোকদের অভ্যাস হলো রাস্তার ধারে বসে আড্ডা দেয়া আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে এভাবে বসতে নিষেধ করেছেন। তবে যারা রাস্তায় বসার জন্য নাছোড় তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই শর্ত জুড়ে দিয়েছেন যে, তোমরা যদি রাস্তায় বসতেই চাও তাহলে মানুষদেরকে সঠিক পথের সন্ধান দাও, সালামের উত্তর দাও, এবং মাজলূমকে সাহায্য কর"।( মুসনাদে আহমদ: ৪/২৮২, সহীহ)
প্রকৃত নুসরাত হলো মুসলিম ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার সাহায্য করা। কারণ অনুপস্থিত অবস্থাতে ভ্রাতৃত্বের অনুভূতিতে এবং সৌহার্দ্য-সৌজন্যতায় ঘাটতি পড়ে। সুতরাং যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে সাহায্য করার উদ্যোগ নেবে, এবং তার নুসরাতকে আল্লাহর জন্য খালেছ করবে, আল্লাহ তায়ালা এমন ব্যক্তিকে দুনিয়া আখেরাতে একা ছেড়ে দেবেন না, দুনিয়াতে তার জন্য এমন কিছু বান্দাকে অনুগত করে দিবেন যারা তার পার্শ্ব নেবে, এবং তাকে সাহায্য করবে । আর আখেরাতে আল্লাহ তায়ালা নিজেই তার বন্ধু হবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
" من نصر أخاه بظهر الغيب نصره الله في الدنيا والآخرة".
" যে ব্যক্তি তার ভাইকে অনুপস্থিত অবস্থাতে সাহায্য করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে দুনিয়া ও আখেরাতে সাহায্য করবেন"। ( সহীহ আল জামে, হাদীস নং ৬৫৭৪, হাসান।)
"নুসরাত" এর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং ফরজ দিকটি হলো শাসক শ্রেণীর, এবং ক্ষমতাধর ও প্রভাবশালী লোকদের হাত থেকে রক্ষা করা এবং তাদের জুলুম- অন্যায়কে রুখে দেয়া। কারণ এই শ্রেণীর লোকদের জুলুম-শোষণ অধিক কঠিন এবং তার ধরণও অনেক প্রচন্ড হয়ে থাকে। তাছাড়া সাধারণত তাদেরকে নিভৃতকারী এবং উপদেশকারীদের সংখ্যা অনেক কম আর তোষামোদকারীদের সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে থাকে। যে তোষামোদ আর সৌজন্যতার আড়ালে বহু হককে বিনষ্ট করা হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন লোকদের থেকে সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছেন যারা শাসকশ্রেণীর জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয় না এবং তাদেরকে জুলুমকে বাধা দিয়ে তাদের আত্নাকে সাহায্য করে না।
عَنْ*كَعْبِ بْنِ عُجْرَةَ*قَالَ : خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ تِسْعَةٌ، فَقَالَ : " إِنَّهُ سَتَكُونُ بَعْدِي أُمَرَاءُ، مَنْ صَدَّقَهُمْ بِكَذِبِهِمْ، وَأَعَانَهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ فَلَيْسَ مِنِّي وَلَسْتُ مِنْهُ، وَلَيْسَ بِوَارِدٍ عَلَيَّ الْحَوْضَ، وَمَنْ لَمْ يُصَدِّقْهُمْ بِكَذِبِهِمْ، وَلَمْ يُعِنْهُمْ عَلَى ظُلْمِهِمْ فَهُوَ مِنِّي وَأَنَا مِنْهُ، وَهُوَ وَارِدٌ عَلَيَّ الْحَوْضَ ".
" নিশ্চয়ই আমার পরে এমন অনেক শাসক হবে যারা তাদের মিথ্যাকে সত্যায়ন করবে এবং তাদেরকে জুলুমের উপর সাহায্য করবে সে আমার থেকে নয় এবং আমি তার থেকে নই, এবং সে আমার হাউজের নিকট অবতরণ করবে না। আর যে ব্যক্তি তাদের মিথ্যাকে সত্যায়ন করবে না এবং তাদেরকে জুলুমের উপর সাহায্য করবে না সে আমার থেকে আমি তার থেকে এবং সে আমার হাউজে অবতরণ করবে"। ( সুনানে নাসায়ী, কিঃবায়আ'ত, হাদীস নং ৪২০৭)
দুর্বল ও অসহায়দেরকে সাহায্য করা এবং সাধারণ জনগণকে শাসকদের দমন পীড়ন থেকে রক্ষা করা একটি উৎকৃষ্টতম গুণ। এই গুণের কারণে হাদীসের মধ্যে রূমীদের ( পশ্চিমাদের) অনেক প্রশংসা করা হয়েছে।
عن مُوسَى بْنُ عُلَيٍّ*، عَنْ*أَبِيهِ*، قَالَ : قَالَ المستورد الْقُرَشِيُّ*عِنْدَ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ : سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ ع
َلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ : " تَقُومُ السَّاعَةُ وَالرُّومُ أَكْثَرُ النَّاسِ ". فَقَالَ لَهُ عَمْرٌو : أَبْصِرْ مَا تَقُولُ. قَالَ : أَقُولُ مَا سَمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. قَالَ : لَئِنْ قُلْتَ ذَلِكَ،*إِنَّ فِيهِمْ لَخِصَالًا أَرْبَعًا*: إِنَّهُمْ لَأَحْلَمُ النَّاسِ عِنْدَ فِتْنَةٍ، وَأَسْرَعُهُمْ إِفَاقَةً بَعْدَ مُصِيبَةٍ، وَأَوْشَكُهُمْ كَرَّةً بَعْدَ فَرَّةٍ، وَخَيْرُهُمْ لِمِسْكِينٍ وَيَتِيمٍ وَضَعِيفٍ، وَخَامِسَةٌ حَسَنَةٌ جَمِيلَةٌ : وَأَمْنَعُهُمْ مِنْ ظُلْمِ الْمُلُوكِ.
" আমর বিন আস (রাঃ) বলেনঃ " নিশ্চয়ই তাদের (রুমীদের) মধ্যে চারটি ভালো স্বভাব রয়েছে, ১/ তারা বিপদে অন্যদের তুলনায় অধিক ধৈর্যশীল। ২/ মুসিবত ও দুর্যোগের পর দ্রুততর উন্নতি লাভকারী। ৩/ যুদ্ধে পশ্চাৎপসরণের পর দ্রুততর প্রত্যাবর্তনকারী। ৪/ অসহায়- দুঃস্থ এবং এতিমদের কল্যাণ সাধনাকারী। আর তাদের পঞ্চম সুন্দর গুনটি হলো শাসকদের জুলুম নিপীড়ণ থেকে মানুষদেরকে রক্ষা করা।( সহীহ মুসলিম, কিঃ ফিতান, অধ্যায়,১০, হাদীস নং ৩৫/২৮৯৮)
জাহিলি রীতিমতো এবং সাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে অন্যায় ও জুলুমের সাহায্য করা আল্লাহ তায়ালার ক্রোধ ও অভিশাপের কারণ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ
" من اعان على خصومة بظلم أو يعين على ظلم لم يزل في سخط الله حتى ينزع"
" যে ব্যক্তি কোন মামলা মোকদ্দমায় অন্যায়ের সাহায্য করল সে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহ তায়ালার ক্রোধে পতিত থাকবে।( সুনানে ইবনে মাজাহ, কিঃআহকাম, অধ্যায় ৬ হাদীস নং ১৮৭৮/২৩২০,সহীহ।)
সুতরাং তুমি সত্যের সাহায্যকারী হও, সত্য যেখানেই থাকুক না কেন!! নতুবা তুমি জিহাদের উচ্চ চুড়ায় আরোহণের ইচ্ছা কর না এবং শাহাদাতের পেয়ালা পানের কামনা করো না।
আলোচনার সারসংক্ষেপঃ
– অসহায়- মজলুমদের সাহায্য করা ঈমানী ভ্রাতৃত্বের প্রকৃতি।
– সাহেবে নুসরাতকে আল্লাহ তায়ালা এমন জায়গায় সাহায্য করবেন যেখানে সে সাহায্যের মুখাপেক্ষী হবে।
– জুলুম নীপিড়ণ সাধারণত দুর্বলদের সাথে করা হয় সুতরাং তুমি তাদেরকে ছেড়ে দিতে পারো না এবং তার সাহায্য পরিত্যাগ করতে পারো না।
– নুসরাত এর দ্বারা দাওয়াহর মধ্যে প্রাণ আসে এবং শক্তিশালী হয়।
– জুলুমের স্থানে উপস্থিত থাকলে কিংবা সে সম্পর্কে অবগত হলে, জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করা এবং মাজলুমকে সাহায্য আমরা নিজেদের উপর ওয়াজিব মনে করি।
– প্রকৃত নুসরাত হলো মুসলিম ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার কল্যাণ কামনা করা।
– নুসরাত এর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং ফরজ দিকটি হলো শাসক শ্রেণীর জুলুম অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
– সাম্প্রদায়িকতা এবং দলান্ধতার কারণে অন্যায়ের সাহায্য করা এবং বাতিলের পক্ষ নেয়া আল্লাহ তায়ালার ক্রোধের কারণ।
اللهم اغفرلنا واجعلنا من الأنصار الذين ضحوا بأنفسهم واموالهم في سبيلك حتى رضيت عنهم.
Comment