কেমন হবে মুজাহিদের আখলাক? পর্ব: ৪
* প্রতিশোধ গ্রহণঃ
"وَالَّذِينَ إِذَا أَصَابَهُمُ الْبَغْيُ هُمْ يَنْتَصِرُونَ "
"যারা আক্রান্ত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে"
★প্রতিশোধ গ্রহণ মুমিনের নৈতিক গুণঃ
ভারসম্যতা হলো দ্বীনে ইসলামের অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য। এজন্য ইসলাম তার প্রত্যেক অনূসারীকে বিণয়ী-নম্রতা, দয়া ও ক্ষমার এবং রাগ-ক্রোধ, ও কঠোরতার আচরণগুলোতে ভারত্ব বজায় রাখার প্রতি জোর তাগিদ দিয়েছে। তাই স্থান-কাল, পাত্র ভেদে অপরাধীর প্রতি উদারতা এবং দয়া ও ক্ষমার আচরণ করা, অথবা রাগান্বিত হয়া এবং কঠোরতা করা ও প্রতিশোধ নেয়া, অনুরূপভাবে জালেমের হাত থেকে মজলূমকে রক্ষা করা এবং এ ক্ষেত্রে নিজের শক্তি ও বীরত্ব জাহির করা, এমনকি নিজের ব্যক্তিত্ব ও অধিকার রক্ষায় কঠোর ও আত্বমর্যাদাশীল হয়াও একজন মুসলিমের নৈতিক গুণ।
★ প্রতিশোধ কখন গ্রহণ করবেঃ
"لَا يُحِبُّ اللَّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلَّا مَنْ ظُلِمَ وَكَانَ اللَّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا "
" আল্লাহ কোন মন্দ বিষয় প্রকাশ করাকে পছন্দ করেন না, তবে কাউকে জুলুম করা হলে তা ভিন্ন"।
আয়াতের: "الا من ظلم" এই অংশের আরেক অর্থ হলো: " তবে যে জুলুম করল তার কথা ভিন্ন"।
উভয় অর্থই বেশ তাৎপর্যপূর্ণ , অর্থাৎ আয়াতের মূল বক্তব্য হলো: আল্লাহ তায়ালা মন্দ প্রকৃতির কোন কথাকে পছন্দ করেন না, তবে যদি তা জুলুমের ভিত্তিতে হয়, তাহলে জুলুমের প্রতিউত্তরমূলক তার অনুরূপ মন্দ কথাকে (অর্থাৎ তার প্রতিশোধ গ্রহণকে) আল্লাহ অপছন্দ করেন না। এই কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই হাদীস থেকে স্পষ্ট হয়:
" أنصر اخاك ظالما أو مظلوما"
অর্থাৎ: অপরাধকারী যখন জালেম হবে তখন তার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করা অপছন্দনীয় নয়।
ইবনুল আরাবী রহঃ বলেনঃ " অপরাধী ব্যক্তি যখন বার বার অন্যায় করে , অথবা প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজ করে, সর্বসাধারণের মাঝে নির্লজ্জ হয়, এবং ছোট-বড় সবাইকে কষ্ট দেয় তখন তার থেকে প্রতিশোধ নেয়া উত্তম। আর যদি তার থেকে ঘটনাক্রমে কোন অপরাধ প্রকাশ পায় এবং সে অপরাধের কথা শিকার করে ও ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে তাকে ক্ষমা করা উত্তম"।
ইবরাহিম নাখায়ী রহঃ, ইমাম ত্ববারী রহঃ, ইমাম কুরতুবী রহঃ প্রমুখ আলেমগণের বক্তব্য থেকে এমনটিই বুঝা যায় যে, অপরাধী যদি অনুতপ্ত হয় এবং অপরাধ থেকে ফিরে আসে তাহলে তাকে ক্ষমা করাই উত্তম। পক্ষান্তরে যদি সে বার বার অপরাধ করে এবং অপরাধ শিকার না করে তাহলে তার থেকে প্রতিশোধ নেয়া এবং তাকে ক্ষমা না করাই উত্তম ।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ "
"নিশ্চয়ই যে সবর করে এবং ক্ষমা করে অবশ্যই সেটা তার সাহসিকতার কাজ"।
ইমাম কুরতুবি রহঃ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন:"অন্যায়ের মোকাবেলায় সবর ও ক্ষমা তখন প্রযোজ্য যখন অন্যায়কারী জালেম না হয় এবং তার অন্যায় সীমা অতিক্রম না করে। অনুরূপভাবে সক্ষমতা সত্বেও প্রতিশোধের ক্রোধকে নিবারণ করা উত্তম এবং প্রশংসনীয় যখন অন্যায়কারী সত্য সত্যি অনুতপ্ত হয় এবং তাওবা করে। অথবা ক্ষমা তার জন্য যে পদস্খলিত হয়েছে এবং অন্যায়টি তার থেকে ঘটনাক্রমে সংঘটিত হয়েছে, এবং সে এখন আর উক্ত ভুলের উপর বহাল নেই"।
সালাফগণ নিজেদেরকে এতটা নরম কিংবা বিণয়ী জাহির করতেন না যে, জালিমরা তাদেরকে দুর্বল ভেবে বসে।
ইমাম আহমদ ইবনে আহমদ আস-স্বাবী রহঃ তাফসীরে জালালাইনের টীকায় লেখেনঃ " উদ্দেশ্য অর্জন হলে সে ক্ষেত্রে নম্রতা দেখানো এবং ক্ষমা করাই উত্তম। তবে নম্রতা দেখাতে এবং ক্ষমা করতে যেয়ে নিজের ব্যক্তিত্ব এবং মর্যাদা খোয়ানো যাবে না। আর যখন আল্লাহ তায়ালার সম্মান মর্যদার প্রশ্ন দাঁড়ায় তখন নম্রতা নয় ক্রোধণ্বিত হয়া আবশ্যক"।
ইমাম শাফিয়ী রহঃ বলেন: " যে ব্যক্তি ক্রোধের জাগায় ক্রোধণ্বিত হয় না, সে একটা গাধা। কবি বলেনঃ" অপাত্রে নম্রতা দেখানো মুর্খতা"।
ইবনুল আরাবী রহঃ আরও বলেনঃ "জালেমকে ছেড়ে দেয়া উচিত নয়, কারণ তাতে সে অহংকারী হবে এবং অন্যায় কাজে আরও লাগামহীন হয়ে উঠবে"।
★ প্রতিশোধ নেয়ার জন্য অপরাধীর
অমুসলিম হয়া জরুরি নয়ঃ
وَالَّذِينَ إِذَا أَصَابَهُمُ الْبَغْيُ هُمْ يَنْتَصِرُونَ "
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবী রহঃ বলেনঃ " এটা প্রত্যেক জালেমকেই অন্তর্ভুক্ত করে, চাই সে কাফের হোক বা মুসলিম"।
প্রতিশোধ গ্রহণ করার মূল উদ্দেশ্য হলো: সকল অন্যায়- অপরাধ এবং অনিষ্টের শিকড় উপড়ে ফেলা এবং জুলুম-শোষণের দরজা বন্ধ করে দেয়া। তাই জালেম যেই হোক না কেন, তার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করাই শ্রেয়।
★ প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন করা যাবে নাঃ
ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিশোধ গ্রহণ প্রশংসনীয় হলেও সে ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
"وجزاء سيئة سيئة مثلها"
" আর মন্দের প্রতিদান তার অনুরূপ মন্দ"।(শূরা:৩৯-৪০)
প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন না করাটাই বীরত্ব। তাই আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের প্রশংসার স্থানে উত্তম গুণাবলীর মধ্যে প্রতিশোধ গ্রহণের অনুমতি দানের পাশাপাশি সীমালঙ্ঘন না করার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। যাতে একথা বোধদয় হয় যে শুধু প্রতিশোধ গ্রহণ করাটাই বীরত্ব এবং প্রশংসনীয় নয়, বরং সে ক্ষেত্রেও অতিরঞ্জন না করে ইনসাফ রক্ষা করা জরুরি।
কারণ অতিরঞ্জন এবং সীমালঙ্ঘন করা শয়তানের কাজ।
সুনানে আবু দাউদের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপস্থিতিতে এক ব্যক্তি হযরত আবু বকর রাঃকে গালমন্দ করল, যখন সে বার বার এরকম করল তখন হযরত আবু বকর রাঃ তার প্রতিউত্তর করতে উদ্যত হলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে গেলেন। আবু বকর সিদ্দিক রাঃ বললেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: লোকটি যখন তোমাকে গালমন্দ করে তখন তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করতে আসমান থেকে ফেরেস্তা অবতরণ করছিল, কিন্তু তুমি যখন তার থেকে প্রতিশোধ নিতে যাও তখন এখানে শয়তান এসে পড়ে। আর যেখানে শয়তান অবস্থান করছে আমি সেখানে বসব না।
আল্লামা খাত্তাবী ঘটনার বিশ্লেষণে বলেনঃ " আবু বকর সিদ্দিক রাঃ এর কর্তৃক প্রতিশোধ গ্রহণ কালে শয়তান এজন্য হাজির হয়েছে যে, যাতে সে হযরত আবু বকর রাঃ কে উত্তেজিত করে তুলতে পারে এর ফলে তিনি প্রতিশোধ প্রবন অবস্থায় সীমালঙ্ঘন করেন, এবং তাঁর প্রতিপক্ষের মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতি সাধন করে বসেন"।
★ জুলুম-অন্যায়ের উপর কখন সবর করবে এবং জালেমের বিরুদ্ধে কখন দোয়া করবে?
আল্লাহ তায়ালা তাঁর পবিত্র কালামের মধ্যে তাঁর প্রিয় বান্দা হযরত নূহ আঃ এর এই দোয়াটি বর্ণনা করেছেনঃ
"فَدَعَا رَبَّهُ أَنِّي مَغْلُوبٌ فَانْتَصِرْ "
"অতঃপর সে তার পালনকর্তাকে ডেকে বলল আমি অপারগ, সুতরাং তুমি প্রতিশোধ গ্রহণ কর"।
হযরত নূহ আঃ নিজ কওমের অবাধ্যতা, জুলুম- নির্যাতন এবং অন্যায়ের উপর জীবনের একটি দ্বীর্ঘ সময় পর্যন্ত সবর করেছেন। জীবনের এক চুড়ান্ত পর্যায় পৌঁছে যখন দেখলেন যে, এই জাতিরপিছনে জীবনের সর্বোচ্চ শক্তি ও সামর্থ ব্যয় করেও তাদের কল্যাণের পথে ফিরে আসার আর কোনো দিক অবশিষ্ট নেই, নিজের শক্তি সামর্থ নিঃশেষ হয়া দেখে যখন তিনি নিজের দুর্বলতা এবং অক্ষমতা বুঝতে পারলেন তখন তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন:
"اني مغلوب فانتصر"
"আমি অক্ষম তুমিই প্রতিশোধ নাও"
সুতরাং যে ব্যক্তি শরীয়তের সীমার মধ্যে থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করার সক্ষমতা রাখে তার জন্য জালেমের সামনে নত হয়া এবং তাকে এমনিতেই ছেড়ে দেয়ার কোনো অবকাশ নেই।
সুতরাং আমাদেরকে পুনর্বার প্রতিশোধ গ্রহণের চেতনা জাগ্রত করতে হবে এবং ভুলে যাওয়া ইসলামের এই শিক্ষাকে সর্বময় জিন্দা করতে হবে । প্রতিশোধ গ্রহণের স্পৃহা ব্যতীত না উম্মাহ কখনো তার শান ফিরে পাবে, আর না আল্লাহর জমিনে কখনো কুফুর ও জুলুমের রাজ্যের অবশান হবে!!
কেননা জুলুমের সামনে শান্ত, আর বাঞ্ছনা-অপমানের কাছে নম্র হয়া যখন কোন জাতির নীতি হয়ে যায় সে জাতির মনোবল বলতে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। এমন নির্জীব- নিঃপ্রাণ জাতির মধ্যে না আমর বিল–মা'রূফ এবং নাহি আনিল মুনকারের কোনো শক্তি থাকে, আর না জিহাদের কোনো প্রাণ থাকে!!
اللهم انصر الاسلام والمسلمين، اللهم أعز الاسلام و المسلمين و اجعلنا من المنتصرين للاسلام و المسلمين من اعداءك و أعداءهم يا رب العالمين.
* প্রতিশোধ গ্রহণঃ
"وَالَّذِينَ إِذَا أَصَابَهُمُ الْبَغْيُ هُمْ يَنْتَصِرُونَ "
"যারা আক্রান্ত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে"
★প্রতিশোধ গ্রহণ মুমিনের নৈতিক গুণঃ
ভারসম্যতা হলো দ্বীনে ইসলামের অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য। এজন্য ইসলাম তার প্রত্যেক অনূসারীকে বিণয়ী-নম্রতা, দয়া ও ক্ষমার এবং রাগ-ক্রোধ, ও কঠোরতার আচরণগুলোতে ভারত্ব বজায় রাখার প্রতি জোর তাগিদ দিয়েছে। তাই স্থান-কাল, পাত্র ভেদে অপরাধীর প্রতি উদারতা এবং দয়া ও ক্ষমার আচরণ করা, অথবা রাগান্বিত হয়া এবং কঠোরতা করা ও প্রতিশোধ নেয়া, অনুরূপভাবে জালেমের হাত থেকে মজলূমকে রক্ষা করা এবং এ ক্ষেত্রে নিজের শক্তি ও বীরত্ব জাহির করা, এমনকি নিজের ব্যক্তিত্ব ও অধিকার রক্ষায় কঠোর ও আত্বমর্যাদাশীল হয়াও একজন মুসলিমের নৈতিক গুণ।
★ প্রতিশোধ কখন গ্রহণ করবেঃ
"لَا يُحِبُّ اللَّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلَّا مَنْ ظُلِمَ وَكَانَ اللَّهُ سَمِيعًا عَلِيمًا "
" আল্লাহ কোন মন্দ বিষয় প্রকাশ করাকে পছন্দ করেন না, তবে কাউকে জুলুম করা হলে তা ভিন্ন"।
আয়াতের: "الا من ظلم" এই অংশের আরেক অর্থ হলো: " তবে যে জুলুম করল তার কথা ভিন্ন"।
উভয় অর্থই বেশ তাৎপর্যপূর্ণ , অর্থাৎ আয়াতের মূল বক্তব্য হলো: আল্লাহ তায়ালা মন্দ প্রকৃতির কোন কথাকে পছন্দ করেন না, তবে যদি তা জুলুমের ভিত্তিতে হয়, তাহলে জুলুমের প্রতিউত্তরমূলক তার অনুরূপ মন্দ কথাকে (অর্থাৎ তার প্রতিশোধ গ্রহণকে) আল্লাহ অপছন্দ করেন না। এই কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই হাদীস থেকে স্পষ্ট হয়:
" أنصر اخاك ظالما أو مظلوما"
অর্থাৎ: অপরাধকারী যখন জালেম হবে তখন তার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করা অপছন্দনীয় নয়।
ইবনুল আরাবী রহঃ বলেনঃ " অপরাধী ব্যক্তি যখন বার বার অন্যায় করে , অথবা প্রকাশ্যে অশ্লীল কাজ করে, সর্বসাধারণের মাঝে নির্লজ্জ হয়, এবং ছোট-বড় সবাইকে কষ্ট দেয় তখন তার থেকে প্রতিশোধ নেয়া উত্তম। আর যদি তার থেকে ঘটনাক্রমে কোন অপরাধ প্রকাশ পায় এবং সে অপরাধের কথা শিকার করে ও ক্ষমা প্রার্থনা করে তাহলে তাকে ক্ষমা করা উত্তম"।
ইবরাহিম নাখায়ী রহঃ, ইমাম ত্ববারী রহঃ, ইমাম কুরতুবী রহঃ প্রমুখ আলেমগণের বক্তব্য থেকে এমনটিই বুঝা যায় যে, অপরাধী যদি অনুতপ্ত হয় এবং অপরাধ থেকে ফিরে আসে তাহলে তাকে ক্ষমা করাই উত্তম। পক্ষান্তরে যদি সে বার বার অপরাধ করে এবং অপরাধ শিকার না করে তাহলে তার থেকে প্রতিশোধ নেয়া এবং তাকে ক্ষমা না করাই উত্তম ।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
وَلَمَنْ صَبَرَ وَغَفَرَ إِنَّ ذَلِكَ لَمِنْ عَزْمِ الْأُمُورِ "
"নিশ্চয়ই যে সবর করে এবং ক্ষমা করে অবশ্যই সেটা তার সাহসিকতার কাজ"।
ইমাম কুরতুবি রহঃ এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন:"অন্যায়ের মোকাবেলায় সবর ও ক্ষমা তখন প্রযোজ্য যখন অন্যায়কারী জালেম না হয় এবং তার অন্যায় সীমা অতিক্রম না করে। অনুরূপভাবে সক্ষমতা সত্বেও প্রতিশোধের ক্রোধকে নিবারণ করা উত্তম এবং প্রশংসনীয় যখন অন্যায়কারী সত্য সত্যি অনুতপ্ত হয় এবং তাওবা করে। অথবা ক্ষমা তার জন্য যে পদস্খলিত হয়েছে এবং অন্যায়টি তার থেকে ঘটনাক্রমে সংঘটিত হয়েছে, এবং সে এখন আর উক্ত ভুলের উপর বহাল নেই"।
সালাফগণ নিজেদেরকে এতটা নরম কিংবা বিণয়ী জাহির করতেন না যে, জালিমরা তাদেরকে দুর্বল ভেবে বসে।
ইমাম আহমদ ইবনে আহমদ আস-স্বাবী রহঃ তাফসীরে জালালাইনের টীকায় লেখেনঃ " উদ্দেশ্য অর্জন হলে সে ক্ষেত্রে নম্রতা দেখানো এবং ক্ষমা করাই উত্তম। তবে নম্রতা দেখাতে এবং ক্ষমা করতে যেয়ে নিজের ব্যক্তিত্ব এবং মর্যাদা খোয়ানো যাবে না। আর যখন আল্লাহ তায়ালার সম্মান মর্যদার প্রশ্ন দাঁড়ায় তখন নম্রতা নয় ক্রোধণ্বিত হয়া আবশ্যক"।
ইমাম শাফিয়ী রহঃ বলেন: " যে ব্যক্তি ক্রোধের জাগায় ক্রোধণ্বিত হয় না, সে একটা গাধা। কবি বলেনঃ" অপাত্রে নম্রতা দেখানো মুর্খতা"।
ইবনুল আরাবী রহঃ আরও বলেনঃ "জালেমকে ছেড়ে দেয়া উচিত নয়, কারণ তাতে সে অহংকারী হবে এবং অন্যায় কাজে আরও লাগামহীন হয়ে উঠবে"।
★ প্রতিশোধ নেয়ার জন্য অপরাধীর
অমুসলিম হয়া জরুরি নয়ঃ
وَالَّذِينَ إِذَا أَصَابَهُمُ الْبَغْيُ هُمْ يَنْتَصِرُونَ "
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবী রহঃ বলেনঃ " এটা প্রত্যেক জালেমকেই অন্তর্ভুক্ত করে, চাই সে কাফের হোক বা মুসলিম"।
প্রতিশোধ গ্রহণ করার মূল উদ্দেশ্য হলো: সকল অন্যায়- অপরাধ এবং অনিষ্টের শিকড় উপড়ে ফেলা এবং জুলুম-শোষণের দরজা বন্ধ করে দেয়া। তাই জালেম যেই হোক না কেন, তার থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করাই শ্রেয়।
★ প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন করা যাবে নাঃ
ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিশোধ গ্রহণ প্রশংসনীয় হলেও সে ক্ষেত্রে সীমা লঙ্ঘন করা যাবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
"وجزاء سيئة سيئة مثلها"
" আর মন্দের প্রতিদান তার অনুরূপ মন্দ"।(শূরা:৩৯-৪০)
প্রতিশোধ গ্রহণের ক্ষেত্রে অতিরঞ্জন না করাটাই বীরত্ব। তাই আল্লাহ তায়ালা মুমিনদের প্রশংসার স্থানে উত্তম গুণাবলীর মধ্যে প্রতিশোধ গ্রহণের অনুমতি দানের পাশাপাশি সীমালঙ্ঘন না করার শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। যাতে একথা বোধদয় হয় যে শুধু প্রতিশোধ গ্রহণ করাটাই বীরত্ব এবং প্রশংসনীয় নয়, বরং সে ক্ষেত্রেও অতিরঞ্জন না করে ইনসাফ রক্ষা করা জরুরি।
কারণ অতিরঞ্জন এবং সীমালঙ্ঘন করা শয়তানের কাজ।
সুনানে আবু দাউদের মধ্যে বর্ণিত হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপস্থিতিতে এক ব্যক্তি হযরত আবু বকর রাঃকে গালমন্দ করল, যখন সে বার বার এরকম করল তখন হযরত আবু বকর রাঃ তার প্রতিউত্তর করতে উদ্যত হলেন। এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে গেলেন। আবু বকর সিদ্দিক রাঃ বললেন ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনি কি আমার উপর রাগ করেছেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: লোকটি যখন তোমাকে গালমন্দ করে তখন তাকে মিথ্যা সাব্যস্ত করতে আসমান থেকে ফেরেস্তা অবতরণ করছিল, কিন্তু তুমি যখন তার থেকে প্রতিশোধ নিতে যাও তখন এখানে শয়তান এসে পড়ে। আর যেখানে শয়তান অবস্থান করছে আমি সেখানে বসব না।
আল্লামা খাত্তাবী ঘটনার বিশ্লেষণে বলেনঃ " আবু বকর সিদ্দিক রাঃ এর কর্তৃক প্রতিশোধ গ্রহণ কালে শয়তান এজন্য হাজির হয়েছে যে, যাতে সে হযরত আবু বকর রাঃ কে উত্তেজিত করে তুলতে পারে এর ফলে তিনি প্রতিশোধ প্রবন অবস্থায় সীমালঙ্ঘন করেন, এবং তাঁর প্রতিপক্ষের মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতি সাধন করে বসেন"।
★ জুলুম-অন্যায়ের উপর কখন সবর করবে এবং জালেমের বিরুদ্ধে কখন দোয়া করবে?
আল্লাহ তায়ালা তাঁর পবিত্র কালামের মধ্যে তাঁর প্রিয় বান্দা হযরত নূহ আঃ এর এই দোয়াটি বর্ণনা করেছেনঃ
"فَدَعَا رَبَّهُ أَنِّي مَغْلُوبٌ فَانْتَصِرْ "
"অতঃপর সে তার পালনকর্তাকে ডেকে বলল আমি অপারগ, সুতরাং তুমি প্রতিশোধ গ্রহণ কর"।
হযরত নূহ আঃ নিজ কওমের অবাধ্যতা, জুলুম- নির্যাতন এবং অন্যায়ের উপর জীবনের একটি দ্বীর্ঘ সময় পর্যন্ত সবর করেছেন। জীবনের এক চুড়ান্ত পর্যায় পৌঁছে যখন দেখলেন যে, এই জাতিরপিছনে জীবনের সর্বোচ্চ শক্তি ও সামর্থ ব্যয় করেও তাদের কল্যাণের পথে ফিরে আসার আর কোনো দিক অবশিষ্ট নেই, নিজের শক্তি সামর্থ নিঃশেষ হয়া দেখে যখন তিনি নিজের দুর্বলতা এবং অক্ষমতা বুঝতে পারলেন তখন তিনি আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন:
"اني مغلوب فانتصر"
"আমি অক্ষম তুমিই প্রতিশোধ নাও"
সুতরাং যে ব্যক্তি শরীয়তের সীমার মধ্যে থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করার সক্ষমতা রাখে তার জন্য জালেমের সামনে নত হয়া এবং তাকে এমনিতেই ছেড়ে দেয়ার কোনো অবকাশ নেই।
সুতরাং আমাদেরকে পুনর্বার প্রতিশোধ গ্রহণের চেতনা জাগ্রত করতে হবে এবং ভুলে যাওয়া ইসলামের এই শিক্ষাকে সর্বময় জিন্দা করতে হবে । প্রতিশোধ গ্রহণের স্পৃহা ব্যতীত না উম্মাহ কখনো তার শান ফিরে পাবে, আর না আল্লাহর জমিনে কখনো কুফুর ও জুলুমের রাজ্যের অবশান হবে!!
কেননা জুলুমের সামনে শান্ত, আর বাঞ্ছনা-অপমানের কাছে নম্র হয়া যখন কোন জাতির নীতি হয়ে যায় সে জাতির মনোবল বলতে কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। এমন নির্জীব- নিঃপ্রাণ জাতির মধ্যে না আমর বিল–মা'রূফ এবং নাহি আনিল মুনকারের কোনো শক্তি থাকে, আর না জিহাদের কোনো প্রাণ থাকে!!
اللهم انصر الاسلام والمسلمين، اللهم أعز الاسلام و المسلمين و اجعلنا من المنتصرين للاسلام و المسلمين من اعداءك و أعداءهم يا رب العالمين.
------------------------------------------
কেমন হবে মুজাহিদদের আখলাক?
১ম পর্বের লিংক:
২য় পর্বের লিংক:
৩য় পর্বের লিংক:
*************************
Comment