Announcement

Collapse
No announcement yet.

শেকলে বাঁধা স্বাধীনতা : ড. ইয়াদ কুনাইবি

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • শেকলে বাঁধা স্বাধীনতা : ড. ইয়াদ কুনাইবি

    শেকলে বাঁধা স্বাধীনতা : ড. ইয়াদ কুনাইবি

    প্রজারা যতক্ষণ মুক্তি কিংবা বিদ্রোহের ব্যাপারে বেখবর থাকে, রাজা ততক্ষণ নাচগান, মদ আর মাংস নিয়ে তাদের উন্মাদনায় বাগড়া দেয় না; বরং সস্তা সুখ নিয়ে গোলামদের ব্যস্ততার সুযোগে নির্বিঘ্নে ছিনিয়ে নেয় তাদের সম্মান আর মানবতা। এই হলো আজকের আধুনিক প্রজাদের ‘মুক্তি’ আর ‘অধিকার’-এর বাস্তবতা। অধিকার আর স্বাধীনতা হলো ওইসব সস্তা সুখ আর সাময়িক বিনোদন কেনার সক্ষমতা, যা দাসত্বকে টিকিয়ে রাখে; দীর্ঘায়িত করে। এ এক শেকলে বাঁধা স্বাধীনতা।

    রাজারা জনগণের ধনসম্পদ, সহায়-সম্বল ‘বৈধভাবে’ লুট করে। দেনার বোঝা কাঁধে নিয়ে আত্মহত্যা করে মানুষ। শেয়ারবাজারে সর্বস্ব হারিয়ে ঝাপসা চোখে ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে মধ্যবিত্ত। বাধ্য হয়ে ডাস্টবিনে কুকুরের পাশে উবু হয়ে বসে খাবারের খোঁজ করে শিশু। বেকার হয়ে ডিগ্রি হাতে দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় যুবক। নিজ ভিটে থেকে বিতাড়িত হয় কৃষক। পঙ্গু হয়ে যায় অর্থনীতি। কাল যে সম্মানিত ছিল আজ সে হয় লাঞ্ছিত। অন্যদিকে রাজা আর তার সাঙ্গপাঙ্গরা গাড়ি-বাড়ি, পোশাক থেকে শুরু করে খাবার-দাবার, এমনকি হাতঘড়ির পেছনেও ওড়ায় কোটি কোটি টাকা। এই রাজারাই মুসলিম উম্মাহর ধন-সম্পদ তুলে দেয় উম্মাহর শত্রুদের হাতে। লুট করা সেই টাকা দিয়ে বানানো মিসাইলের আঘাতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয় মুসলিম শিশুদের দেহ। এই হলো আমাদের আজকের বাস্তবতা।

    দুরবস্থার এই সময়ে প্রজাদের কী দেয় রাজারা? গোলামকে শান্ত করতে কী দেয় মনিব? মনিব তার গোলামদের ‘স্বাধীনতার সীমানা’ বাড়িয়ে দেয়। কেমন স্বাধীনতা জানেন? গোলাম চাইলে ইচ্ছেমতো নাচতে পারবে, গাইতে পারবে, মাতাল হবে, নগ্ন হবে। যখন ইচ্ছে যার সাথে ইচ্ছে শোবে, নেশা করবে। সব সীমালঙ্ঘন করবে, দ্বীনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। এভাবে স্বাধীনতার তোড়ে দিন দিন বাড়বে ওদের পরাধীনতা। গোলামের গায়ে আরও শক্ত হয়ে চেপে বসবে শেকলের বাঁধন। এ এক অদ্ভুত স্বাধীনতা, জনগণের নতুন আফিম। কৌশলটা চমৎকার। আমরা এক ঢিলে দুই পাখি মারার কথা বলি। আর এই কৌশলে এক ঢিলে তিন পাখি মারা পড়ে :

    ১। শোষিত, নির্যাতিত জনগণ চেপে রাখা আবেগ, কষ্ট, ক্ষোভ উগড়ে দেওয়ার একটা পথ পায়। তারা বিদ্রোহ করে। তবে শোষকের বিরুদ্ধে না। তারা বিদ্রোহ করে ওই দ্বীনের বিরুদ্ধে, যা তাদের মানুষের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে।

    ২। ‘স্বাধীনতা’ নামের আফিম দিয়ে অনুভূতির দেয়াল অবশ করে ছিনিয়ে নেওয়া হয় মানুষের মুক্তি ও সম্মান। ছিনিয়ে নেওয়া হয় যুলমের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সবচেয়ে বড় চালিকাশক্তি—দ্বীন। মুক্তি, সম্মান, দ্বীন হারিয়ে মানুষ পরিণত হয় নফস আর কামনা দ্বারা চালিত পশুতে। যাকে নিশ্চিন্তে গোলামির বাঁধনে আজীবন আটকে রাখা যায়।

    ৩। রাজা আর প্রজা দুজনেই আন্তর্জাতিক ক্রুসেইডার-যায়োনিস্ট শাসকগোষ্ঠীর গোলাম থেকে যায়।

    পরিকল্পনাটা প্রায় নিখুঁত বলা চলে। তবে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের একটা শর্ত আছে। আগে সরিয়ে দিতে হবে এতে বাগড়া দেয়ার মতো সব মানুষগুলোকে। ওইসব মানুষকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হবে যারা সাহাবি রিবি ইবনু আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে মানুষকে বলে, আল্লাহ আমাদের পাঠিয়েছেন, মানুষকে সৃষ্টির দাসত্ব থেকে স্রষ্টার দাসত্বে নিয়ে আসতে। সমস্ত বাতিল ধর্মের যুলম থেকে মানুষকে মুক্ত করে দ্বীন ইসলামের ইনসাফের দিকে আনতে এবং দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করে দুনিয়া ও আখিরাতের প্রশস্ততার দিকে নিয়ে যেতে। [ইবনু কাসির, আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া : ৭/৪৩-৪৪]

    একবার এমন চিন্তা করা, এমন কথা বলা মানুষগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে পারলে নিশ্চিন্তে বাস্তবায়ন করা যাবে মাস্টারপ্ল্যান। সবাইকে সস্তা সুখের উল্লাসে ব্যস্ত রেখে লুটে নেওয়া যাবে মানবজাতির দুনিয়া ও আখিরাত। তাই আজ আন্তর্জাতিক শাসকগোষ্ঠী আর আঞ্চলিক রাজাদের প্রথম টার্গেট এই মানুষগুলো। সব অস্ত্র তাক করা তাদের বুকে। সব প্রোপাগান্ডার তির তাদের দিকে। তাঁদেরই থামাতে মহাসমারোহের আয়োজন।

    _______

    [ সংগ্রহসূত্র : আয়নাঘর ]
    গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷
Working...
X