★ আলোর পথের যাত্রা★
★যা জানবেন এই লিখাতেঃরাসূল সাঃ এর সময়ে যারাই ইমান আনতো তারাই শত কষ্ট সহ্য করেও ইমানের উপর অটল থাকতো। যখন যে বিধান নাযিল হতো তখন সে বিধান পালন করতেন।যখন মদ হারামের আয়াত নাযিল হলো তখন সাথে সাথে উনারা তা পালন করলেন, কিন্তু আজ নিজেকে মুসলিম দাবী করার পরেও কেন সামান্য বিড়ি, সিগারেট ছাড়তে পারে না? ইসলাম মানলেও কেন পরিপূর্ণ পালন করতে পারে না এসবের উত্তর সংক্ষিপ্ত ভাবে জানা যাবে ইনশাআল্লাহ। হিদায়েতের মালিক আল্লাহ।তবে আমাদের কাজ হলো রবের দেখানো পদ্বতিতে চেষ্টা করা, কেননা প্রবাদ আছে," বাদশাহর কথাও কথার বাদশাহ"। আল্লাহ যেমন মহান, তার দেখানো পথ ও পদ্বতিও সর্বশ্রেষ্ট ও মহান। তাই কেউ যদি নিজেকে পরিবর্তন করতে চায় বা সমাজ পরিবর্তন করতে চায় তাকে তার দেখানো পদ্বতিতেই পরিবর্তন হতে হবে।যদি নিজের মনগড়াভাবে সমাজ বা নিজেকে পরিবর্তন করতে চায় তাহলে সে নিজের ও উম্মাহর ক্ষতিই বৃদ্ধি করবে। আজ যেমন কুরআন ও হাদীস আছে সাহাবীদের সময়েও সেই কুরআন, হাদীস ছিলো,ইখতেলাফও ছিলো। কিন্তু মতের বিরোধ তাদের মনের বিরোধের কারন হয় নি। ইমামদের মাঝেও ইখতেলাফ ছিলো, কিন্তু তা তাদের মনের বিরোধ হয় নি। কিন্তু কেন হয় নি? এসব বিষয়ে পাঠক সংক্ষিপ্তভাবে কিছু জানবেন এই লিখাটিতে ইনশাআল্লাহ।
★মূল আলোচনাঃরাসূল সাঃ যখন মক্কা নগরীতে দাওয়াত দেওয়া শুরু করেন তখন মক্কার পরিবেশ বড়ই খারাপ ছিলো। মানুষ গুলো ভয়ংকর সব পাপ, অশ্লিলতায় লিপ্ত ছিলো।কিন্তু রাসূল সাঃ তাদেরকে পরিবর্তনের জন্য যে দাওয়াত দিয়েছেন, সে দাওয়াতের বিষয়বস্ত ছিলো তাওহীদ, রেসালাত, জান্নাত,জাহান্নাম, পূর্ববর্তী জাতিদের ধ্বংসের ইতিহাস ও নবীদের ইতিহাস ইত্যাদি। পবিত্র কুরআনে এসকল বিষয় মক্কায় তেরো বছর ব্যাপি আয়াত নাযিল হয়েছিলো।জান্নাত জাহান্নাম, আল্লাহ পরিচয়, ও পূর্ববর্তী জাতিদের ইতিহাস নিয়ে সব আয়াত এক সাথে নাযিল হয় নি, এমনকি দেখা যায় একই ঘটনা কয়েকবার কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলোঃ কেন আল্লাহর পরিচয়, জান্নাত জাহান্নাম ইত্যাদি বিষয়ের উপর সব আয়াত একত্রে নাযিল হয় নি? কেন একই ঘটনা দেখা যায় বার বার নাযিল হয়েছে?
এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে প্রথমে একটি ঘটনা জানতে হবে। ঘটনাটি হলো ইউসুফ (আঃ) যখন জ্বেলখানায় বন্দী, হন তখন উনার সাথে বাদশাহকে হত্যার অপরাধে আরো দুই ব্যক্তি বন্দী হন।এই দুই ব্যক্তি বন্দী হওয়ার পর দুই জনে দুইটা স্বপ্ন দেখেন এবং দুইজনেই তাদের স্বপ্ন ইউসুফ আঃ এর নিকট বর্ননা করেন। ফলে ইউসুফ (আঃ) তাদের স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেন এবং ব্যাখ্যা অনুযায়ী তাদের একজনে মুক্তি পান ও বাদশাহকে সরাব পান করার দায়িত্ব পান আর আরেক জনের মৃত্যুদন্ড হয়। ইউসুফ আঃ এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী যে ব্যক্তি মুক্তি পান তাকে ইউসুফ আঃ একটা কথা বলেন। আর সেই কথাটা পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ উল্লেখ করে দেন। মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَ قَالَ لِلَّذِیۡ ظَنَّ اَنَّہٗ نَاجٍ مِّنۡہُمَا اذۡکُرۡنِیۡ عِنۡدَ رَبِّکَ ۫ فَاَنۡسٰہُ الشَّیۡطٰنُ ذِکۡرَ رَبِّہٖ فَلَبِثَ فِی السِّجۡنِ بِضۡعَ سِنِیۡنَ ﴿ؕ۴۲﴾
ইউসুফ তাদের মধ্যে যে মুক্তি পাবে মনে করল, তাকে বলল, ‘তোমার প্রভুর কাছে আমার কথা বলো।’ কিন্তু শয়তান তাকে তার প্রভুর কাছে তার বিষয় বলবার কথা ভুলিয়ে দিল; সুতরাং ইউসুফ কয়েক বছর কারাগারে থেকে গেল। ( সুরা ইউসুফ ৪২)
অর্থাৎ মুক্তি প্রাপ্ত ব্যক্তিকে ইউসুফ আঃ বলেন যে,সে মুক্তি পাওয়ার পর তার প্রভুকে ( মিশরের বাদশাহ) কে ইউসুফ আঃ এর উপর হওয়া জুলুম সম্পর্কে যেন অবগত করে। কিন্তু শয়তান তাকে কথাটা ভুলিয়ে দেয়,যার কারনে সে বাদশাহ কাছে ইউসুফ আঃ এর ঘটনা বলতে পারে নি।অবশ্য পরবর্তীতে ঘটনাক্রমে ইউসুফ আঃ এর বিষয় টা বাদশাহর নিকট বলেছে। কিন্তু দেখুন, মুক্তি প্রাপ্ত ব্যক্তিটি জানতো ইউসুফ আঃ সত্য নবী এবং সে ইউসুফ আঃ এর মোজেজাও দেখেছে। মুক্তি প্রাপ্ত ব্যক্তিটির ইচ্ছাও ছিলো ইউসুফ আঃ সম্পর্কে বলার। কিন্তু শয়তান তাকে ভুলিয়ে দেওয়ার কারনে সে এতো মহান কাজটি করতে পারে নি। আসলে মানুষ ভুলে যায়, শয়তান মানুষকে ভুলিয়ে দেয়। যার ধরুন মানুষের ইচ্ছে থাকার পরেও অনেক কাজ করতে পারে না বা অনেক পাপ কাজ করে। আর তাই আমাদের মহান রব কুরআনে তার পরিচয়, জান্নাত, জাহান্নাম, ধ্বংস প্রাপ্ত জাতির ইতিহাস বার বার তুলে ধরেছেন। মানুষকে বার বার স্মরন করিয়ে দিয়েছেন।মুমিনদের ইমান মজবুত করার জন্য দেখা যায় একই নবীর ঘটনা কয়েকবার বর্ননা করেছেন। পূর্ববর্তী জাতির সমুহ ধ্বংসের জায়গাগুলো ছিলো মক্কার আশপাশেই,মক্কা থেকে খুব বেশি দূরে ছিলো না সে সকল জায়গা। কিন্তু তবুও আল্লাহ আদ, সমুদ ইত্যাদি জাতির ইতিহাস বহুবার বর্ননা করেছেন। মানুষকে স্মরন করিয়ে দিছেন।আস্তে আস্তে কুরআন নাযিল করে রাসূল সাঃ ও মুমিনদের অন্তর সুদৃঢ় করেছেন।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَ قَالَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لَوۡ لَا نُزِّلَ عَلَیۡہِ الۡقُرۡاٰنُ جُمۡلَۃً وَّاحِدَۃً ۚۛ کَذٰلِکَ ۚۛ لِنُثَبِّتَ بِہٖ فُؤَادَکَ وَ رَتَّلۡنٰہُ تَرۡتِیۡلًا ﴿۳۲﴾ অবিশ্বাসীরা বলে, ‘সমগ্র কুরআন তার নিকট একেবারে অবতীর্ণ করা হল না কেন?’ এ আমি তোমার নিকট এভাবেই (কিছু কিছু করে) অবতীর্ণ করেছি এবং ক্রমে ক্রমে স্পষ্টভাবে আবৃত্তি করেছি তোমার হৃদয়কে শক্ত ও দৃঢ় করার জন্য। ( সুরা ফুরকান ৩২)
আল্লাহ তা'য়ালা তেইশ বছর ব্যাপি কুরআনের আয়াত নাযিল করেছেন আর তেরো বছর ব্যাপি তাওহীদ, জান্নাত জাহান্নাম ইত্যাদির উপর আয়াত নাযিল করেছেন, তেরোটি বছর এসব বিষয়ে আস্তে আস্তে আয়াত নাযিল করে বার বার এসব বিষয় স্মরন করিয়ে দিয়েছেন। রাসূল (সাঃ)অন্তর সুদৃঢ় করেছেন আর রাসূল সাঃ এর মাধ্যমে সাহাবীদের অন্তর সুদৃঢ় হয়েছে।সাহাবীদের অন্তর এতটাই সুদৃঢ় হয়েছে যে,দ্বীনের জন্য সাহাবীরা যেকোন ত্যাগ দিতে পারতেন। এজন্য দেখা যায় একই নবীর ঘটনাও কয়েক জায়গায় বর্ননা করা হয়েছে। মহান আল্লাহই সকলকে জ্ঞান দিয়েছেন, সুতরাং তিনিই জানেন কোনটা উত্তম। তিনি যে পদ্বতিতে রাসূল সাঃ মাধ্যমে মানুষকে পরিবর্তন করেছেন সেই পথ ও পদ্বতিই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্বতি। সেই পদ্বতিতেই যদি সমাজকে ও নিজেকে পরিবর্তন না করা হয় তাহলেই ক্ষতি হবে।মহান আল্লাহ রাসূল সাঃ এর মাধ্যমে সাহাবীদের যেভাবে প্রশিক্ষন দিয়েছেন, কোন তালিবে সেভাবে গড়ে না উঠলে তার দ্বারা ফেতনা ছড়াতে পারে। কিন্তু আজ জান্নাত, জাহান্নাম সম্পর্কে ও আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে মানুষকে স্মরন করিয়ে দেওয়া তো দূরের কথা, মানুষ আল্লাহর পরিচয়, জান্নাত জাহান্নাম, দুনিয়ার বাস্তবতা ইত্যাদি সম্পর্কে জানেই না।অধিকাংশ মুসলমান জান্নাত, জাহান্নাম সম্পর্কে পাঁচ মিনিট বলতে পারবে না।আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে কিছুই বলতে পারবে না। আল্লাহর গুনবাচক নাম সমুহের উপর দুই মিনিটও কথা বলতে পারবে না।নিরানব্বইটি নামের মাঝে ঠিক মত পাঁচটি নামের ব্যাখ্যাও মানুষ জানে না। অথচ এসব বিষয় প্রতিটি মুহূর্তে মনে রাখতে হয়। অন্তরে ভালোভাবে গেঁথে রাখতে হয়। আপনি যদি একটি পাথরে কয়েক মন পানি একত্রে ঢালতে থাকেন তাহলে দেখা যাবে, পাথরে কোন গর্ত তৈরী হবে না। কিন্তু যদি টপটপ করে পানি পড়ে তাহলে দেখা যায় পাথরেও গর্ত তৈরী হয়। যখন কোন বিষয় বার বার আলোচনা হতে থাকবে তখন দেখা যাবে সে আলোচনা গুলো মানুষ মূহুর্তের জন্যও ভুলবে না। কিন্তু দেখা যায় আমরা এসব বিষয় বছরে বা সারা জীবনেই একবার পড়া যথেষ্ট মনে করি।অথচ প্রতিনিয়ত এসব নিয়ে পড়াশুনা, চিন্তা করতে হয়। একটু চিন্তা করে দেখুন,রাসূল সাঃ প্রতি রাতে সূরা মূলক তেলোয়াত করতে বলেছেন।ফলে আল্লাহ আপনার কবরের আযাব মাপ করে দিবেন। আপনি একটু খেয়াল করলে দেখবেন রাসূল সাঃ এই সূরা তেলোয়াতের যে ফজিলত বর্ননা করেছেন তার সাথে সুরার মিল রয়েছে। আপনি যদি সূরা মূলক ভালোভাবে পড়েন তাহলে দেখবেন এই সূরাটিতে আল্লাহর দয়া,সৃষ্টির উদ্দেশ্য, আযাবের বর্ননা দেওয়া হয়েছে। যা একজন মুমিন তাদাব্বুর সহ পড়ার পর অন্তর কেঁপে উঠে। সাধারনত মানুষের অন্তর রাতের বেলায় শান্ত থাকে,আর রাসূল সাঃ সূরাটি পড়তে বলেছেনও রাতে। কেউ যখন সারা দিন ভুলত্রুটি করার পর নিয়মিত রাতের বেলা অর্থ ও তাফসীরের দিকে খেয়াল সুরাটি পড়ে তখন তার অন্তর নাড়া দিবে। সে ভীত হবে ইনশাআল্লাহ, ফলে দিনের কাজ কর্মের ব্যাপারে তাওবা করবে। ভবিষ্যত দিনের জন্য সতর্ক হবে এভাবে সারা জিবন যখন রাতের বেলা সূরা মূলক পড়বে তখন সারা জীবনই এই আযাবের কথা মনে পড়বে।আল্লাহর পরিচয়, তার দয়ার কথা স্মরন হবে।আর এরকম পড়তে পড়তে মরতে পারলে তার কবরের আযাব মাপ করবেন, যার কবরের আযাব মাপ হবে সেতো জান্নাতী হবে। সাহাবীরাতো আরবী পারতেন তাই উনারা পড়ার সাথে সাথে বুঝতেন সুরা মূলকে আল্লাহ কি বলেছেন। আমরা যদি ভালোভাবে সুরা মূলক অর্থ তাফসীর সহ ভালোভাবে মুখস্ত করে নিতাম তাহলে আমরা প্রতিদিন পড়ার সাথে গুনাহের ব্যাপারে অনুশোচনা আসতো,আযাবের ভয়ে কাঁদতাম। রাসূল সাঃ এই সূরাটি সম্পর্কে অন্য হাদিসে আরো বলেন যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা)-এর রেওয়ায়েতক্রমে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন আমার আন্তরিক বাসনা এই যে, সূরা মূলক প্ৰত্যেক মু'মিনের অন্তরে থাকুক।( মারেফুল কোরআন) রাসূল সাঃ কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন এই সূরা কে নিয়ে। কিন্ত আজ সুরা মূলক সহ অন্যান্য মাক্কী সুরা সমূহের তাফসীর জানি না। রাসূল সাঃ সুরা মূলকের সাথে আরো একটি সুরা প্রতি রাতে পড়তেন।
জাবের রা. বলেন-
كَانَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ لَا يَنَامُ حَتّى يَقْرَأَ بِتَنْزِيلُ السّجْدَةِ، وَبِتَبَارَكَ.
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা সাজদাহ ও সূরা মুলক তিলাওয়াত না করা পর্যন্ত ঘুমাতেন না। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৪০৪; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৩৫৪৫; দেখুন,সুরা সাজদাহও মাক্কী সুরা। তাতেও আল্লাহর পরিচয়, দয়া, আযাবের বর্ননা দেওয়া হয়েছে। যা একজন মানুষ গভীর চিন্তা সহ পড়লে অন্তর কেঁপে উঠে। চিন্তা করুন আল্লাহ পরিচয়, দয়া, জান্নাত, জাহান্নামের আলোচনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এসব বছরে একবার বা জিবনে একবার পড়া বা আলোচনার বিষয় নয়, বরং প্রতি রাতে, প্রতি দিনেই স্মরন করতে হয়, । রাসূল সাঃ প্রত্যেক নামাযের পর আয়াতুল কুরসি পড়তে বলেছেন এবং তার বিশাল ফজিলত বর্ননা করেছেন। কিন্তু সেই আয়াতটিও আল্লাহর পরিচয় নিয়ে।একজন ব্যক্তি অর্থ তাফসীরের দিকে খেয়াল করে নামাযের পর যতবারই পড়বে ততবারই তার অন্তরে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস বাড়বে। বার বার রবের পরিচয় মনে পড়বে। দরকার ছিলো প্রতিদিন মাক্কী সুরা থেকে কোন না কোন সূরা তাফসীর সহ পড়া, প্রতি জুমায়, প্রতি ওয়াজে আলোচনা করা।মক্কার তেরোটি বছর যে বিষয়সমূহ নিয়ে ওহী নাযিল হলো, আমরা অনেকেই সারাজীবনে তেরোটি দিনও এসব বিষয় নিয়ে পড়ি না।
দেখুন, রাসূল সাঃ কত শক্তিশালী পুরুষ ছিলেন, কত বিপদ উনার উপর দিয়ে গেছে, কত পেরেশানি, কত দুঃখ কষ্ট উনাকে সহ্য করতে হয়েছে,তায়েফে রক্ত ঝরিয়েছেন, উহুদে সত্তর জন প্রিয় সাহাবীর দাফন হয়েছে উনার সামনে দিয়ে,নিজের প্রিয় স্ত্রী, প্রিয় চাচা হারানোর ব্যাথা সহ্য করেছেন,একে একে চারজন সন্তান মারা গেছেন, অথচ এত কিছুতেও উনার চুল পেকে যায়নি। কিন্তু কুরআনের কয়েকটি সুরা উনাকে বার্ধক্য করে দিয়েছে, চুল মোবারক সাদা হয়ে গেছে।
حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بِشْرٍ ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ صَالِحٍ ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ ، عَنْ أَبِي جُحَيْفَةَ ، قَالَ : قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، نَرَاكَ قَدْ شِبْتَ ، قَالَ : " قَدْ شَيَّبَتْنِي هُودٌ وَأَخَوَاتُهَا " .
আবু জুহাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদা সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার বয়োবৃদ্ধ হওয়ার স্পষ্ট নিদর্শন লক্ষ্য করছি। তিনি বললেন, হুদ এবং তদানুরূপ সূরাগুলো আমাকে বার্ধক্যে উপণীত করেছে। মুজামুল কাবীর লিত তাবরানী, হা/১৭৭৭৪ মুসনাদে আবু ই'আলা, হা/৮৮০: মিশকাত, হা/৫৩৫৩।
حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاءِ ، قَالَ
: حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ هِشَامٍ ، عَنْ شَيْبَانَ ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ ، عَنْ عِكْرِمَةَ ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : قَالَ أَبُو بَكْرٍ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، قَدْ شِبْتَ ، قَالَ : " شَيَّبَتْنِي هُودٌ ، وَالْوَاقِعَةُ ، وَالْمُرْسَلاتُ ، وَعَمَّ يَتَسَاءَلُونَ ، وَإِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ " .
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আবু বকর (রাঃ) আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার চুল তো সাদা হয়ে গিয়েছে। আপনি বার্ধক্যে পৌছে গেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সূরা হূদ, ওয়াকিয়া, মুরসালাত, আম্মা ইয়াতাসা-আলূন, ইযাশ-শামসু কুভভিরাত আমাকে বৃদ্ধ বানিয়ে দিয়েছে।মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৩১৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪১৭৫; জামেউস সগীর, হা/৬০৩৬; সিলসিলা সহীহাহ,হা/৯৫৫।
এখানে যে সুরা সমুহের কথা বলা হয়েছে প্রায় সবই মাক্কী সুরা ও আল্লাহর পরিচয়, আযাব ও প্রতিদান সংক্রান্ত। আজ এসব সুরা আমাদের নাড়া দেয় না, আমরাতো পড়িই না, নাড়া দিবে কোথা থেকে?যে সূরা সমূহ রাসূল সাঃ এর চুল মোবারক সাদা বানিয়ে দিয়েছে, সে সূরা দিয়ে আমরা দাওয়াতি কাজ করি না। অথচ মানুষের হিদায়েতের জন্য এর চেয়ে উত্তম কোন দাওয়াত নেই।তাযকিয়ার জন্য এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ আলোচনা আর নেই। একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন, যে সূরা সমূহ নাযিলের পর রাসূল সাঃ এর চুল মোবারক সাদা হয়ে গেছে, যে সুরা রাসূল সাঃ কে বার্ধক্য বানিয়ে দিয়েছে সে সূরা সমূহ যদি পড়ার পর একটুও কলব নাড়া না দেয়,তাহলে বুঝে নিবেন কলব কত কঠিন হতে পারে , নফস কত কলুসিত হতে পারে।তাই দ্রুত নফসের চিকিৎসা করুন, কেননা এমন নফস নিয়ে দ্বিনের কাজ করলে দ্বীনের ক্ষতি করার সম্ভবনা থাকে,হক্ব জামায়াতের সাথে থেকেও ইসলামের ক্ষতি করতে পারেন৷
মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَ قَدۡ خَابَ مَنۡ دَسّٰىہَا ﴿ؕ۱۰﴾
এবং সে ব্যর্থ হবে, যে তা ( নাফস)কে কলুষিত করবে। ( সুরা শামস ১০)
যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার নফস পরিশুদ্ধ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি ব্যর্থতার মধ্যেই থাকবেন। আপনি সফল হবেন না। আর যে নিজেই ব্যর্থতার মধ্যে ডুবে আছে সে কিভাবে উম্মাহর সফলতা জন্য কাজ করবে?তাই দ্বীনের ব্যাপারে কিছু বলার আগে নিজের নফসের দিকে একটু খেয়াল করুন। কেননা যে নিজেই নফসের গোলামী করে সেতো মানুষকে রবের গোলামীর দিকে কিভাবে ডাকবে? [নফস কলুষিত হওয়ার কারনেই মানুষ সারাক্ষণ দুনিয়া নিয়ে টেনশান করে, দুনিয়া নিয়ে কত প্লান করে।অথচ পরকালের জীবনই হলো প্রকৃত চিন্তার বিষয়।দুনিয়ায় এতো বিপদে পড়েও রাসূল সাঃ এর চুল মোবারক সাদা হয় নি অথচ কয়েকটি সূরা রাসূল সাঃ চুল মোবারক সাদা করে দিয়েছে। রাসূল সাঃ এর নফসতো সবচেয়ে বেশি পরিশুদ্ধ।আর আমাদের নফস এতটাই কলুসিত যে সারা জীবনেও এক ফোঁটা চোখের পানি ফেলতে পারি না।মহান আল্লাহ মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন, আর তিনিই জানেন কোথায় মানুষের আসল সফলতা ও কোথায় ব্যর্থতা।তিনি যেটাতে ব্যর্থতা বলেছেন আপনি সেটা ঠিক না করে সারা পৃথিবীর সব ধনসম্পদ, ক্ষমতা ও ইলমও যদি লাভ করেন তবুও আপনি ব্যর্থ। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেনঃ"বাহিরের শত্রু আমার কি ক্ষতি করবে?যখন আমার সবচেয়ে বড় শত্রু আমার নফস।"]
একটু চিন্তা করে দেখুন, মক্কার কাফেরদের অন্তর কতটা কঠোর ছিলো,দিনের পর দিন তারা পাপাচারে লিপ্ত ছিলো, তারা জাহান্নামের একদম কাছে চলে গেছে। কিন্তু এরকম মানুষগুলোকে পরিবর্তনের জন্য রাসূল সাঃ এই বিষয়গুলো দিয়েই তো দাওয়াত দিতেন। আবার যারা ইমান আনতো তাদের উপর চলে আসতো অসহনীয় নির্যাতন। নানান ধরনের বিপদ।তখন তাদের জন্য কত উঁচু মাপের ইমান বৃদ্ধিকারী আলোচনার প্রয়োজন ছিলো। আর রাসূল সাঃ তাদেরকেও এই বিষয়গুলোর উপরেই আলোচনা করতেন।ফলে সাহাবীরা ইমান আনার পর শত কষ্টের পরেও দ্বীনের উপর অটল থাকতেন, আর আজ দেখা যায় বহু মানুষ কয়েক দিন ভালো ভাবে আমল করার পর আবার পাপ কাজে ফিরে যায়।অথবা দিনের সব বিধিনিষেধ মানতে তারা প্রস্তুত থাকে না। অপরদিকে সাহাবীদের কলব তাকওয়ায় ভরপুর ছিলো।যার ফলে কুরআনে যখন যে সম্পর্কে আয়াত নাযিল হতো তখন সে আয়াতের উপর আমল করেছেন। কেননা এই কুরআন রয়েছে। তাকওয়াবানদের(আল্লাহ ভীরুদের) জন্যই হিদায়েত।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
ذٰلِکَ الۡکِتٰبُ لَا رَیۡبَ ۚۖۛ فِیۡہِ ۚۛ ہُدًی لِّلۡمُتَّقِیۡنَ ۙ﴿۲﴾
এ গ্রন্থ; (কুরআন) এতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের ( ভীতি অবলম্বনকারীদের) জন্য এ (গ্রন্থ) পথ-নির্দেশক।(সুরা বাকারা ২)
পবিত্র কুরআন তাকওয়াবানদের জন্যই হিদায়েত।রাসূল সাঃ দিনের পর দিন সাহাবীদের মাঝে এসব বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেছেন,আর সাহাবীরা হয়ে গেলেন শ্রেষ্ঠ মুত্তাকী। যার ফলে পবিত্র কুরআনে যখন যে বিধান নাযিল হয়েছে, তখন সে বিধান সাহাবীরা বিনা যুক্তিতে মেনে নিয়েছেন। যখন মদের আয়াত নাযিল হয়েছে সবাই মদ ত্যাগ করেছেন। এমনকি যাদের মদের ব্যবসা ছিলো তারা ব্যবসা পর্যন্ত ত্যাগ করেছেন।আর এখন একজন ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম দাবীর পরেও সামান্য বিড়ি সিগারেট ছাড়তে পারে না।এরপরে সুদের ব্যাপারে বিধান নাযিল হলে সবাই সুদ ত্যাগ করেছেন। কারন তারা ছিলো মুত্তাকী। তাদের উপর যখন যা ফরয হত তখন তা পরিপূর্ণ ভাবে পালন করতেন।আপনি একজন ব্যক্তি সব দ্বীনের সব ইলম পৌঁছাতে পারবেন না।কেননা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে। আবার দেখা যায় যে সময় ইলম প্রয়োজন সে ইলম পৌছাতে পারবেন না। কিন্তু যদি আপনার আলোচনা দ্বারা একজন ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করতে শুরু করে তখন স্বয়ং আল্লাহই তার শিক্ষক হয়ে যান। যখন যে ইলম প্রয়োজন তখন সে ইলম আল্লাহ পৌঁছিয়ে দেন,আল্লাহই তার শিক্ষক হয়ে যাবেন। মহান আল্লাহ বলেনঃ
(وَاتَّقُواْ اللّهَ وَيُعَلِّمُكُمُ اللّهُ وَاللّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ)
অর্থঃ "তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, আল্লাহ তোমাদের শিক্ষা দিবেন (ইলম দান করবেন), আর আল্লাহ সব বিষয়ে মহা জ্ঞানি। [সূরা বাকারা আয়াতঃ ২৮২]
কিন্তু যাহা জানলে মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয় বাড়বে আমরা এসব বিষয় সম্পর্কে একদমই জানি না ও আলোচনাও হয় না। অথচ প্রতি নিয়ত এসব সম্পর্কে আলোচনা হওয়ার দরকার ছিলো। আজ সরাসরি কুরআন ও হাদিস থেকে এমনিতেই পড়া হয় বা আলোচনা হয় খুব কম। আর হলেও যেসকল বিষয় নিয়ে পূর্ববর্তী ইমামরা মীমাংসা করে গেছেন সেই সকল বিষয় নিয়ে কত গভেষনা, কত ইখতেলাফ। কিন্তু মাক্কী সুরা সমূহ ও জান্নাত, জাহান্নাম সংক্রান্ত কুরআন হাদিস নিয়ে পড়াশুনা বা আলোচনা একবারেই খুব কম। বর্তমানে মুসলিমদের এতো দূরাবস্থা কেন? হাদীসে এসেছে إِذَا تَبَايَعْتُمْ بِالْعِينَةِ وَأَخَذْتُمْ أَذْنَابَ الْبَقَرِ وَرَضِيتُمْ بِالزَّرْعِ وَتَرَكْتُمُ الْجِهَادَ سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ ذُلًّا لَا يَنْزِعُهُ حَتَّى تَرْجِعُوا إِلَى دِينِكُمْ
“যখন তোমরা ‘ঈনাহ’ অর্থাৎ এক ধরণের সুদী বেচা-কেনা করবে, গাভীর লেজ ধরে থাকবে, কৃষক হয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে যাবে এবং জিহাদ পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ তা’আলা তখন তোমাদের ওপর অপমান চাপিয়ে দিবেন এবং তা তোমরা হটাতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা নিজের দ্বীনের দিকে পত্যাবর্তন করো।” (আবু দাঊদ, আহমাদ)
মুসলিমদের এতো দূরাবস্থার কারন হলো দুনিয়াকে ভালোবাসা ও জিহাদ পরিত্যাগ করা। আজকের মানুষ দুনিয়াকে যত ভালোভাবে জানে ও বুঝে পরকালকে হাজার ভাগের এক ভাগও জানে না।দুনিয়া সম্পর্কে যত মোটিভেশনাল কথা শুনে পরকাল সম্পর্কে এতোটা জানেও না । দুনিয়াকে পরকালের উপর প্রাধান্য দিচ্ছে। একজন ব্যক্তি যখন পরকালকে ভালোবাসবে, জান্নাত লাভের আশা করবে তখনতো সে কোন আমল দ্বারা রবের বেশি সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় ও জান্নাত লাভ সহজে করা যায় সে চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে। আজ আমরা দ্বীন মানলে কিভাবে দুনিয়াবী সফলতা পাবো সে সকল বিষয় জানতে আগ্রহী বা আলোচনা করি। শুধু মাত্র দুনিয়াবী লাভ ক্ষতি আলোচনা করে মানুষকে পাপ থেকে বাঁচানো যায় না। যদি যেত তাহলে সিগারেটের গায়ে লিখাটি পড়ার পর কেউ সিগারেট খেতো না। সাহাবীরা দ্বীন পালন করার কারনে দুনিয়াবী সফলতা অর্জনের সুযোগ পেয়েও তা গ্রহন করতেন না। কারন তারা আখিরাত ও দুনিয়ার বাস্তবতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতেন, তারা জান্নাত সম্পর্কে ভালোভাবে জানতেন। যেমনঃ একবার এক অসহায়, দারিদ্র সাহাবী( রাবীয়া বিন কাব রাঃ)কে রাসূল সাঃ বললেন আমার নিকট কিছু চাও। সে যদি বাড়ি, নারী, সম্পদ চাইতো তাহলে রাসূল সাঃ তার জন্য দোয়া করতেন, আর আল্লাহ সাথে সাথে কবুল করতেন। আর তখন সে সাহাবীর এসবের দরকারও ছিলো। কেননা একদমই অসহায় অবস্থায় ছিলেন তিনি,তিনি ছিলেন আসহাবে সুফফার সদস্য অর্থাৎ যাদের কোন সহায় সম্পদ বলতে কিছুই ছিলো না ।কিন্তু সাহাবী ভেবেছিন্তে বললেন আমি জান্নাতে আপনার সাথে থাকতে চাই। সাহাবী শুধু জান্নাতই চায় না, বরং রাসূল সাঃ এর সাথে থাকতে চায়। সাহাবীরা কত বেশি জান্নাত চিনেছেন। হযরত ওসমান (রাঃ) কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কাঁদতেন।অপরদিকে আমরা গোটা বছরেও দেখা যায় কবর নিয়ে একবার ভাবি না।আমরা কবরের আযাব সম্পর্কেই তো জানি না। অথচ জান্নাত, জাহান্নাম কবর নিয়ে সার্বক্ষনিক চিন্তা থাকতে হয়। আজ বিজ্ঞান দিয়ে বা যুক্তি দিয়ে কত তাত্ত্বিক আলোচনা করা হয়।যুবকদের পাপ থেকে ফিরানোর জন্য কত রকমের নিজস্ব মতামত পেশ করা হয়।আল্লাহর কালাম বাদ দিয়ে তাযকিয়ার জন্য মনগড়া কত আলোচনা করা হয়। দেখুন,মদীনাতে এক মহিলা যিনা করার পর চলে আসছে রাসূল সাঃ এর নিকট। যাতে তার উপর হদ বাস্তবায়ন করা হয়। অথচ মদীনার রাষ্ট্র তার এই খবর জানতো না। কিন্তু মহিলা নিজেই চলে আসছে। সে জানতো তাকে পাথর নিক্ষেপ করে সবার সামনে হত্যা করা হবে। তবুও সে চলে আসছে। চিন্তুা করুন, সে আল্লাহ কে ও পরকালকে কত ভালো ভাবে চিনেছে। এভাবে আরো কয়েকটা ঘটনা আছে। আজতো জাহান্নাম নিয়ে কিছু কিছু আলোচনা হলেও আল্লাহর পরিচয় ও জান্নাত নিয়ে একদম মানুষ জানেই না বললেই চলে।[আর জাহান্নাম নিয়ে যে আলোচনার হয় তাও হয় বেশির ভাগ নিজের থেকে। কুরআন ও হাদীস থেকে হয় না] অথচ কুরআনে যেখানেই জাহান্নামের আলোচনা করা হয়েছে সেখানেই জান্নাতের আলোচনা এসেছে। মানুষ তার আসল বাড়ির খবরের বিবরন জানে না। মানুষ জানে না কিসের বিনিময়ে সে কি হারাচ্ছে।জান্নাত নিয়ে না জানার কারনে মানুষ তার প্রকৃত লক্ষ্য সম্পর্কে জানে না। প্রকৃত সফলতা সম্পর্কে জানে না। একজন মুমিনের আসল লক্ষ্য হবে জান্নাত।আর দুনিয়াবী সব কিছু করবে এই লক্ষ্য কে কেন্দ্র করে। যদি জান্নাত পাওয়ার জন্য সে সব হারায় তবুও সে আপসোস করবে না এজন্য যে, তার জান্নাতের জন্যই সে সব হারাচ্ছে।মানুষের তবিয়ত হলো যখন কোন কিছুর উপকারিতা জানে তখন সে জিনিস মানুষ পেতে চায়।সাহাবীরা এই জান্নাত লাভের জন্যই কত পাগলপারা ছিলেন। বদর যুদ্বে হযরত ওমায়ের রাঃ রাসূল সাঃ পবিত্র জবান থেকে জান্নাতের বর্ননা শুনার পর হাতের খেজুর পর্যন্ত পেলে দিয়েছেন। কারন উনার জান্নাতে যেতে দেরি হচ্ছে।নিজের পরিবার পরিজন ত্যাগ দিয়ে তিনি বদরে শহিদ হয়ে গেলেন। অথচ আজকের যুবকরা জান্নাতের জন্য নিজের প্রেমিকা ছাড়তে পারে না। কারন তারাতো জান্নাত সম্পর্কেই জানেই না। মনে রাখবেন অন্তরে জাহান্নামের ভয়ের পাশাপাশি জান্নাত হারানোর ভয়ও থাকতে হয়,আল্লাহর অসীম অনুগ্রহ সম্পর্কে জানতে হয়।মানুষ যখন কোন লক্ষ্য কে কেন্দ্র করে ত্যাগ কষ্ট শুরু করে তখন সেই লক্ষের প্রতি অন্তরে ভালোবাসা চলে আসে।যখন লক্ষ্য পৌছার জন্য পথ চলা শুরু করে তখন অনেকদূর পৌছার পর আর ফিরে আসতে চায় না। কেননা তখন অনেক পথ পাড়ি দেওয়ার কষ্ট বৃথা যেতে দেয় না। মানুষের প্রধান লক্ষ্য যদি জান্নাত হতো আর সে লক্ষ্যের জন্য যখন ত্যাগ শুরু করতো তখন জান্নাতের এক আলাদা ভালোবাসা, বিশ্বাস চলে আসতে। মাঝে মাঝে শয়তান ধৌকা দিলেও জান্নাতের জন্য অতীতের করা কষ্ট গুলো বৃথা যাওয়ার ভয়ে সতর্ক থাকতো। আজ যদি জান্নাত নিয়ে আলোচনা ব্যাপক হতো তাহলে মানুষ খারাপ কাজ করার আগে একটু চিন্তা করতো যে,আমার না জানি কোন কাজটি করার পর এতো সুন্দর জান্নাত মিছ হয়ে যায়, কোন কথার কারনে জান্নাত মিছ করে ফেলি। মানুষ হিসেব নিকেষ করে কথা বলতো৷এক দল আরেক দলের বিরুদ্ধে, বা এক আলেম আরেক আলেমের বিরুদ্ধে বলতে চিন্তাভাবনা করতো। আজতো আমরা নিজেরা হক্বের উপর পরিপূর্ণ আছি কি না তা নিয়ে কোন চিন্তা নাই। নিজেদের মাঝে শিরক কুফর প্রবেশ করলো কিনা তা নিয়ে কোন ভাবনা নাই। অথচ ওমর রাঃ জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়ায় পরেও তিনি হযরত হুযাইফা (রাঃ)এর নিকট জানতে চেয়েছেন যে,মুনাফিকদের তালিকায় উনার নাম আছে কিনা। অপরদিকে আমাদের নিজেদের ভিতর শিরক বিদায়াত প্রবেশ করলো কিনা তা নিয়ে কোন অনুসন্ধান নাই। একজন ব্যক্তির অন্তরে যখন জান্নাত হারানোর ভয়, জাহান্নামে যাওয়ার ভয় জাগ্রত হয়, তখন তার হক্ব জানার ও মানার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। আর কারো অন্তরে এরকম আগ্রহ বাড়লে আল্লাহ তার সামনে সত্যকে স্পষ্ট করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।দেখুন বদর যুদ্বে দুইজন বালক অংশগ্রহণ করেছেন, অথচ উনাদের জিহাদে যাওয়ার বয়স হয় নি, কিন্তু তারা ইসলামের সবচেয়ে মার্যাদা পূর্ন জিহাদে অংশগ্রহন করতে পেরেছিলো,এমনকি উনারা ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রুকে হত্যা করতে পেরেছিলো। কেননা তাদের ছিলো সীমাহীন আগ্রহ, ফলে আল্লাহ উনাদের কবুল করেছেন। তাই হক্বকে খুজে পেতে হলে মৃত্যু পর্যন্ত হক্ব জানার আগ্রহ থাকতে হবে।মৃত্যু পর্যন্ত শিরক, কুফরে জড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভয় থাকতে হবে। কেননা শিরক কুফরতো সবসময় একরকম থাকে না। যেমনঃ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহঃ সময় খুলুকে কুরআন নিয়ে যে ফিতনার সৃষ্টি হয়েছে তাতো রাসূলের যুগে ছিলো না। আবার বর্তমান যুগের গনতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্রের কুফরিও রাসূল সাঃ এর সময় ছিলো না। কিন্তু যুগের এসব শিরক কুফর সম্পর্কে অনেকে অবগত হয় না বা হওয়ার ইচ্ছেও নাই। কারন তাদের পরকাল নিয়ে চিন্তা নাই,জান্নাত নিয়ে তাদের ভাবনা নাই। এটা চিন্তা করে না যে,একটি শিরক বা কুফরের কারনে যদি আমরা এত সুন্দর জান্নাত হারিয়ে ফেলি তাহলে এর চেয়ে বড় আপসোস আর কি আছে। কিয়ামতের পূর্বে মানুষ সকালে মুমিন থাকবে বিকালে কাফির হবে।যে সময় শিরক কুফর নিয়ে মানুষ বেশি সতর্ক থাকার কথা সে সময় মানুষ এ সম্পর্কে উদাসীন । অনেকে দ্বীনের ব্যাপারে পড়াশুনা না করে যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই বলে। অথচ এটা চিন্তা করে না যে,যে উম্মতের জন্য রাসূল সাঃ তায়েফে রক্ত ঝরালেন, উহুদে রক্তা ঝরালেন, দিনের পর দিন না খেয়ে কত কষ্ট করেছেন, খন্দকের যুদ্বে পেটে পাথর বেঁধে মাটির বোঝা বহন করেছেন। সকল নবীর একটি দোয়া ছিলো, যে দোয়া উনারা দুনিয়ায় করে ফেলেছেন, অথচ রাসূল সাঃ সেটা উম্মতের জন্য রেখে দিছেন, সেই নবীর উম্মত যদি আমার বা আপনার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়,সে উম্মতের ভিতর যদি কোন শিরক কুফর প্রবেশ করে তাহলে কিয়ামতে আমাদের কি করুন পরিনতি হবে। মানুষ আজ পরকালকে ভুলে গিয়ে নিজের ও উম্মাহার ক্ষতি করছে।যদি পরকালের চিন্তা সবসময় মাথায় থাকতো তাহলে হক্বের উপর আছে কিনা তা নিয়ে সবসময় সতর্ক থাকতো। আল্লাহর নিকট দোয়া করতো,শিরক, কুফর থেকে আশ্রয় চাইতো।আর মানুষ যদি সকল প্রকার শিরক, কুফর থেকে মুক্ত না হয়, তাহলে সেই মানুষকে যতই জান্নাত জাহান্নাম সম্পর্কে বলা হবে অথবা যতই ইবাদাত করবে তাতে কোনই লাভ হবে না। শুধুমাত্র এই সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে লাভ নাই, যদি শিরক, কুফর, তাগুত সম্পর্কে মানুষকে অবগত না করা হয়,মানবরচিত বিধান শিরক সম্পর্কে সতর্ক না হয়।পূর্ববর্তী যে সকল জাতি ধ্বংস হয়েছিলো, তারা প্রথমত ইমান আনে নাই দ্বীতিয়ত তারা বিভিন্ন ভয়ংকর খারাপ কাজে লিপ্ত ছিলো।তাদের ধ্বংস হওয়ার আগ পর্যন্ত ইমানও ঠিক হয় নাই, আর খারাপ কাজ থেকেও তারা ফিরতে পারে নাই।এজন্য ইমান ঠিক না হলে যতই পাপ থেকে ফিরানোর চেষ্টা করা হোক না কেন তা সম্ভব নয়। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আকিদা হলো ইমান বাড়ে ও কমে। কিন্তু একজন ব্যক্তির যদি ইমান ই না থাকে তাহলে তা বাড়বে বা কমবে কিভাবে? রাসূল সাঃ এর মজলিসে সাহাবীরাও বসতেন এবং মুনাফিকরাও বসতো।সাহাবীরা রাসূল সাঃ এর ওয়াজ শুনে ইমান বাড়তো অপরদিকে মুনাফিকরা রাসূল সাঃ ও সাহাবীদের বিরুদ্ধে গোপনে ষড়যন্ত্র করতো। তাই ইমান ঠিক হতে হবে আগে। আর মানুষের আরেকটা সমস্যা হলো, এসব বিষয় নিয়ে অনেকে পড়লেও তা নিয়ে চিন্তা করে না,একটু গভীরভাবে ভাবে না । আপনি কোন বিষয় যতই জানবেন কোন লাভ হবে না, যতক্ষণ না তা নিয়ে গভীর চিন্তা করবেন।গভীরভাবে কোন কিছু নিয়ে না ভাবলে অনেক গুরুত্ব বিষয়ও হালকা মনে হয়৷ আর আল্লাহ তা'য়ালা তো বলেছেন কোরআন নিয়ে যেন গভীর চিন্তা করে। মহান আল্লাহ বলেনঃ اَفَلَا یَتَدَبَّرُوۡنَ الۡقُرۡاٰنَ اَمۡ عَلٰی قُلُوۡبٍ اَقۡفَالُہَا (২৪) তবে কি তারা কুরআন সম্বন্ধে অভিনিবেশ সহকারে চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?( সুরা মুহাম্মদ ২৪) আমরা কয়দিন কুরআনের মাক্কী সুরা সমূহ নিয়ে গভীর চিন্তা করেছি?আমরা জান্নাত জাহান্নাম নিয়ে শেষ কবে গভীর চিন্তা করে চোখের পানি ফেলেছি?অথচ হাদিসে বলা হয়েছেঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لاَ يَلِجُ النَّارَ رَجُلٌ بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ حَتَّى يَعُودَ اللَّبَنُ فِي الضَّرْعِ، وَلَا يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ ‘ আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীর জাহান্নামে যাওয়া এরূপ অসম্ভব যেরূপ দোহনকৃত দুধ পুনরায় পালানে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। আর আল্লাহর পথের ধুলা ও জাহান্নামের ধোঁয়া কখনও একত্রিত হবে না’।(তিরমিজি) এ হাদিসখানা অনেকে স্বাভাবিক ভাবেই নিতে পারে,অনেকে মনে করতে পারে আল্লাহর ভয়ে কাঁদা কঠিন কিছু না। কিন্তু আল্লাহর ভয়ে কাঁদা কোন সাধারন কথা নয়।সত্যিকারে খুব কম লোকই তার ভয়ে কাঁদতে পারে।যেখানে রবের ভয়ে কান্নাকাটি করার এতো বড় ফজিলত বর্ননা করা হয়েছে সেখানে রবের ভয়ে কাঁদা এতো সহজ নয়। কোটি টাকা খরচ করেও আপনি এক ফোঁটা চোখের পানি ফেলতে পারবেন না যদি আপনার কলব কঠোর হয়। কারন যারা রবের ভয়ে কাঁদে তারা অনেক ইবাদাত বন্দেগি করতে হয়,গুনাহ থেকে বাঁচতে হয়,নফস পরিশুদ্ব হতে হয়। আর রবের ভয়ে কাঁদতে পারলে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে বাঁচার মত আমল করার তাওফিক দিবেন এবং জান্নাত লাভের আমল করার তাওফিক দিবেন ইনশাআল্লাহ। যখন কেউ রবের ভয়ে কাঁদবে তখন সে চিন্তা করবে তার দ্বারা রবের কোন কোন হুকুম মানা হচ্ছে না। আরেকটি হাদীছে এসেছে, ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি
, عَيْنَانِ لاَ تَمَسُّهُمَا النَّارُ: عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ، وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، ‘
জাহান্নামের আগুন দু’টি চোখকে স্পর্শ করবে না। এক- আল্লাহর ভয়ে যে চোখ ক্রন্দন করে এবং দুই- আল্লাহর রাস্তায় যে চোখ পাহারা দিয়ে বিনিদ্র রাত অতিবাহিত করে’।[তিরমিজি, মেশকাত ]
তিনি আরো বলেনঃযখন মুসলমানের অন্তর আল্লাহর ভয়ে কম্পিত হয়, তখন তা থেকে পাপরাশি এমনভাবে ঝরে পড়ে, যেমন ঝরে পড়ে গাছপালা থেকে শুকনো পাতা । (মুসনাদে আহমাদ: ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭২)
আমরা চোখের পানি ঝরানো তো দূরের কথা, আমরা যা নিয়ে চোখের পানি ঝরাবো তা সম্পর্কে ই জানি না৷সর্বশেষ একটা কথা মনে রাখবেন,রাসূল সাঃ আমাদেরকে দ্বীনের কাজ করার যে পদ্বতি দেখিয়ে গেছেন তা বাদ দিয়ে অন্য সহজ পদ্বতি , বা নিজের পছন্দের পদ্বতি অবলম্বন করি তাহলে এর দ্বারা গোটা মুসলিম উম্মাহের ক্ষতি হবে। তাই দ্বীনের কাজ করার আগে দ্বীন সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন। আল্লাহ আমাদের দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন।
★যা জানবেন এই লিখাতেঃরাসূল সাঃ এর সময়ে যারাই ইমান আনতো তারাই শত কষ্ট সহ্য করেও ইমানের উপর অটল থাকতো। যখন যে বিধান নাযিল হতো তখন সে বিধান পালন করতেন।যখন মদ হারামের আয়াত নাযিল হলো তখন সাথে সাথে উনারা তা পালন করলেন, কিন্তু আজ নিজেকে মুসলিম দাবী করার পরেও কেন সামান্য বিড়ি, সিগারেট ছাড়তে পারে না? ইসলাম মানলেও কেন পরিপূর্ণ পালন করতে পারে না এসবের উত্তর সংক্ষিপ্ত ভাবে জানা যাবে ইনশাআল্লাহ। হিদায়েতের মালিক আল্লাহ।তবে আমাদের কাজ হলো রবের দেখানো পদ্বতিতে চেষ্টা করা, কেননা প্রবাদ আছে," বাদশাহর কথাও কথার বাদশাহ"। আল্লাহ যেমন মহান, তার দেখানো পথ ও পদ্বতিও সর্বশ্রেষ্ট ও মহান। তাই কেউ যদি নিজেকে পরিবর্তন করতে চায় বা সমাজ পরিবর্তন করতে চায় তাকে তার দেখানো পদ্বতিতেই পরিবর্তন হতে হবে।যদি নিজের মনগড়াভাবে সমাজ বা নিজেকে পরিবর্তন করতে চায় তাহলে সে নিজের ও উম্মাহর ক্ষতিই বৃদ্ধি করবে। আজ যেমন কুরআন ও হাদীস আছে সাহাবীদের সময়েও সেই কুরআন, হাদীস ছিলো,ইখতেলাফও ছিলো। কিন্তু মতের বিরোধ তাদের মনের বিরোধের কারন হয় নি। ইমামদের মাঝেও ইখতেলাফ ছিলো, কিন্তু তা তাদের মনের বিরোধ হয় নি। কিন্তু কেন হয় নি? এসব বিষয়ে পাঠক সংক্ষিপ্তভাবে কিছু জানবেন এই লিখাটিতে ইনশাআল্লাহ।
★মূল আলোচনাঃরাসূল সাঃ যখন মক্কা নগরীতে দাওয়াত দেওয়া শুরু করেন তখন মক্কার পরিবেশ বড়ই খারাপ ছিলো। মানুষ গুলো ভয়ংকর সব পাপ, অশ্লিলতায় লিপ্ত ছিলো।কিন্তু রাসূল সাঃ তাদেরকে পরিবর্তনের জন্য যে দাওয়াত দিয়েছেন, সে দাওয়াতের বিষয়বস্ত ছিলো তাওহীদ, রেসালাত, জান্নাত,জাহান্নাম, পূর্ববর্তী জাতিদের ধ্বংসের ইতিহাস ও নবীদের ইতিহাস ইত্যাদি। পবিত্র কুরআনে এসকল বিষয় মক্কায় তেরো বছর ব্যাপি আয়াত নাযিল হয়েছিলো।জান্নাত জাহান্নাম, আল্লাহ পরিচয়, ও পূর্ববর্তী জাতিদের ইতিহাস নিয়ে সব আয়াত এক সাথে নাযিল হয় নি, এমনকি দেখা যায় একই ঘটনা কয়েকবার কুরআনে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলোঃ কেন আল্লাহর পরিচয়, জান্নাত জাহান্নাম ইত্যাদি বিষয়ের উপর সব আয়াত একত্রে নাযিল হয় নি? কেন একই ঘটনা দেখা যায় বার বার নাযিল হয়েছে?
এ প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে প্রথমে একটি ঘটনা জানতে হবে। ঘটনাটি হলো ইউসুফ (আঃ) যখন জ্বেলখানায় বন্দী, হন তখন উনার সাথে বাদশাহকে হত্যার অপরাধে আরো দুই ব্যক্তি বন্দী হন।এই দুই ব্যক্তি বন্দী হওয়ার পর দুই জনে দুইটা স্বপ্ন দেখেন এবং দুইজনেই তাদের স্বপ্ন ইউসুফ আঃ এর নিকট বর্ননা করেন। ফলে ইউসুফ (আঃ) তাদের স্বপ্নের ব্যাখ্যা দেন এবং ব্যাখ্যা অনুযায়ী তাদের একজনে মুক্তি পান ও বাদশাহকে সরাব পান করার দায়িত্ব পান আর আরেক জনের মৃত্যুদন্ড হয়। ইউসুফ আঃ এর ব্যাখ্যা অনুযায়ী যে ব্যক্তি মুক্তি পান তাকে ইউসুফ আঃ একটা কথা বলেন। আর সেই কথাটা পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ উল্লেখ করে দেন। মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَ قَالَ لِلَّذِیۡ ظَنَّ اَنَّہٗ نَاجٍ مِّنۡہُمَا اذۡکُرۡنِیۡ عِنۡدَ رَبِّکَ ۫ فَاَنۡسٰہُ الشَّیۡطٰنُ ذِکۡرَ رَبِّہٖ فَلَبِثَ فِی السِّجۡنِ بِضۡعَ سِنِیۡنَ ﴿ؕ۴۲﴾
ইউসুফ তাদের মধ্যে যে মুক্তি পাবে মনে করল, তাকে বলল, ‘তোমার প্রভুর কাছে আমার কথা বলো।’ কিন্তু শয়তান তাকে তার প্রভুর কাছে তার বিষয় বলবার কথা ভুলিয়ে দিল; সুতরাং ইউসুফ কয়েক বছর কারাগারে থেকে গেল। ( সুরা ইউসুফ ৪২)
অর্থাৎ মুক্তি প্রাপ্ত ব্যক্তিকে ইউসুফ আঃ বলেন যে,সে মুক্তি পাওয়ার পর তার প্রভুকে ( মিশরের বাদশাহ) কে ইউসুফ আঃ এর উপর হওয়া জুলুম সম্পর্কে যেন অবগত করে। কিন্তু শয়তান তাকে কথাটা ভুলিয়ে দেয়,যার কারনে সে বাদশাহ কাছে ইউসুফ আঃ এর ঘটনা বলতে পারে নি।অবশ্য পরবর্তীতে ঘটনাক্রমে ইউসুফ আঃ এর বিষয় টা বাদশাহর নিকট বলেছে। কিন্তু দেখুন, মুক্তি প্রাপ্ত ব্যক্তিটি জানতো ইউসুফ আঃ সত্য নবী এবং সে ইউসুফ আঃ এর মোজেজাও দেখেছে। মুক্তি প্রাপ্ত ব্যক্তিটির ইচ্ছাও ছিলো ইউসুফ আঃ সম্পর্কে বলার। কিন্তু শয়তান তাকে ভুলিয়ে দেওয়ার কারনে সে এতো মহান কাজটি করতে পারে নি। আসলে মানুষ ভুলে যায়, শয়তান মানুষকে ভুলিয়ে দেয়। যার ধরুন মানুষের ইচ্ছে থাকার পরেও অনেক কাজ করতে পারে না বা অনেক পাপ কাজ করে। আর তাই আমাদের মহান রব কুরআনে তার পরিচয়, জান্নাত, জাহান্নাম, ধ্বংস প্রাপ্ত জাতির ইতিহাস বার বার তুলে ধরেছেন। মানুষকে বার বার স্মরন করিয়ে দিয়েছেন।মুমিনদের ইমান মজবুত করার জন্য দেখা যায় একই নবীর ঘটনা কয়েকবার বর্ননা করেছেন। পূর্ববর্তী জাতির সমুহ ধ্বংসের জায়গাগুলো ছিলো মক্কার আশপাশেই,মক্কা থেকে খুব বেশি দূরে ছিলো না সে সকল জায়গা। কিন্তু তবুও আল্লাহ আদ, সমুদ ইত্যাদি জাতির ইতিহাস বহুবার বর্ননা করেছেন। মানুষকে স্মরন করিয়ে দিছেন।আস্তে আস্তে কুরআন নাযিল করে রাসূল সাঃ ও মুমিনদের অন্তর সুদৃঢ় করেছেন।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَ قَالَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لَوۡ لَا نُزِّلَ عَلَیۡہِ الۡقُرۡاٰنُ جُمۡلَۃً وَّاحِدَۃً ۚۛ کَذٰلِکَ ۚۛ لِنُثَبِّتَ بِہٖ فُؤَادَکَ وَ رَتَّلۡنٰہُ تَرۡتِیۡلًا ﴿۳۲﴾ অবিশ্বাসীরা বলে, ‘সমগ্র কুরআন তার নিকট একেবারে অবতীর্ণ করা হল না কেন?’ এ আমি তোমার নিকট এভাবেই (কিছু কিছু করে) অবতীর্ণ করেছি এবং ক্রমে ক্রমে স্পষ্টভাবে আবৃত্তি করেছি তোমার হৃদয়কে শক্ত ও দৃঢ় করার জন্য। ( সুরা ফুরকান ৩২)
আল্লাহ তা'য়ালা তেইশ বছর ব্যাপি কুরআনের আয়াত নাযিল করেছেন আর তেরো বছর ব্যাপি তাওহীদ, জান্নাত জাহান্নাম ইত্যাদির উপর আয়াত নাযিল করেছেন, তেরোটি বছর এসব বিষয়ে আস্তে আস্তে আয়াত নাযিল করে বার বার এসব বিষয় স্মরন করিয়ে দিয়েছেন। রাসূল (সাঃ)অন্তর সুদৃঢ় করেছেন আর রাসূল সাঃ এর মাধ্যমে সাহাবীদের অন্তর সুদৃঢ় হয়েছে।সাহাবীদের অন্তর এতটাই সুদৃঢ় হয়েছে যে,দ্বীনের জন্য সাহাবীরা যেকোন ত্যাগ দিতে পারতেন। এজন্য দেখা যায় একই নবীর ঘটনাও কয়েক জায়গায় বর্ননা করা হয়েছে। মহান আল্লাহই সকলকে জ্ঞান দিয়েছেন, সুতরাং তিনিই জানেন কোনটা উত্তম। তিনি যে পদ্বতিতে রাসূল সাঃ মাধ্যমে মানুষকে পরিবর্তন করেছেন সেই পথ ও পদ্বতিই হলো সর্বশ্রেষ্ঠ পদ্বতি। সেই পদ্বতিতেই যদি সমাজকে ও নিজেকে পরিবর্তন না করা হয় তাহলেই ক্ষতি হবে।মহান আল্লাহ রাসূল সাঃ এর মাধ্যমে সাহাবীদের যেভাবে প্রশিক্ষন দিয়েছেন, কোন তালিবে সেভাবে গড়ে না উঠলে তার দ্বারা ফেতনা ছড়াতে পারে। কিন্তু আজ জান্নাত, জাহান্নাম সম্পর্কে ও আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে মানুষকে স্মরন করিয়ে দেওয়া তো দূরের কথা, মানুষ আল্লাহর পরিচয়, জান্নাত জাহান্নাম, দুনিয়ার বাস্তবতা ইত্যাদি সম্পর্কে জানেই না।অধিকাংশ মুসলমান জান্নাত, জাহান্নাম সম্পর্কে পাঁচ মিনিট বলতে পারবে না।আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে কিছুই বলতে পারবে না। আল্লাহর গুনবাচক নাম সমুহের উপর দুই মিনিটও কথা বলতে পারবে না।নিরানব্বইটি নামের মাঝে ঠিক মত পাঁচটি নামের ব্যাখ্যাও মানুষ জানে না। অথচ এসব বিষয় প্রতিটি মুহূর্তে মনে রাখতে হয়। অন্তরে ভালোভাবে গেঁথে রাখতে হয়। আপনি যদি একটি পাথরে কয়েক মন পানি একত্রে ঢালতে থাকেন তাহলে দেখা যাবে, পাথরে কোন গর্ত তৈরী হবে না। কিন্তু যদি টপটপ করে পানি পড়ে তাহলে দেখা যায় পাথরেও গর্ত তৈরী হয়। যখন কোন বিষয় বার বার আলোচনা হতে থাকবে তখন দেখা যাবে সে আলোচনা গুলো মানুষ মূহুর্তের জন্যও ভুলবে না। কিন্তু দেখা যায় আমরা এসব বিষয় বছরে বা সারা জীবনেই একবার পড়া যথেষ্ট মনে করি।অথচ প্রতিনিয়ত এসব নিয়ে পড়াশুনা, চিন্তা করতে হয়। একটু চিন্তা করে দেখুন,রাসূল সাঃ প্রতি রাতে সূরা মূলক তেলোয়াত করতে বলেছেন।ফলে আল্লাহ আপনার কবরের আযাব মাপ করে দিবেন। আপনি একটু খেয়াল করলে দেখবেন রাসূল সাঃ এই সূরা তেলোয়াতের যে ফজিলত বর্ননা করেছেন তার সাথে সুরার মিল রয়েছে। আপনি যদি সূরা মূলক ভালোভাবে পড়েন তাহলে দেখবেন এই সূরাটিতে আল্লাহর দয়া,সৃষ্টির উদ্দেশ্য, আযাবের বর্ননা দেওয়া হয়েছে। যা একজন মুমিন তাদাব্বুর সহ পড়ার পর অন্তর কেঁপে উঠে। সাধারনত মানুষের অন্তর রাতের বেলায় শান্ত থাকে,আর রাসূল সাঃ সূরাটি পড়তে বলেছেনও রাতে। কেউ যখন সারা দিন ভুলত্রুটি করার পর নিয়মিত রাতের বেলা অর্থ ও তাফসীরের দিকে খেয়াল সুরাটি পড়ে তখন তার অন্তর নাড়া দিবে। সে ভীত হবে ইনশাআল্লাহ, ফলে দিনের কাজ কর্মের ব্যাপারে তাওবা করবে। ভবিষ্যত দিনের জন্য সতর্ক হবে এভাবে সারা জিবন যখন রাতের বেলা সূরা মূলক পড়বে তখন সারা জীবনই এই আযাবের কথা মনে পড়বে।আল্লাহর পরিচয়, তার দয়ার কথা স্মরন হবে।আর এরকম পড়তে পড়তে মরতে পারলে তার কবরের আযাব মাপ করবেন, যার কবরের আযাব মাপ হবে সেতো জান্নাতী হবে। সাহাবীরাতো আরবী পারতেন তাই উনারা পড়ার সাথে সাথে বুঝতেন সুরা মূলকে আল্লাহ কি বলেছেন। আমরা যদি ভালোভাবে সুরা মূলক অর্থ তাফসীর সহ ভালোভাবে মুখস্ত করে নিতাম তাহলে আমরা প্রতিদিন পড়ার সাথে গুনাহের ব্যাপারে অনুশোচনা আসতো,আযাবের ভয়ে কাঁদতাম। রাসূল সাঃ এই সূরাটি সম্পর্কে অন্য হাদিসে আরো বলেন যে, হযরত ইবনে আব্বাস (রা)-এর রেওয়ায়েতক্রমে রসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেন আমার আন্তরিক বাসনা এই যে, সূরা মূলক প্ৰত্যেক মু'মিনের অন্তরে থাকুক।( মারেফুল কোরআন) রাসূল সাঃ কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন এই সূরা কে নিয়ে। কিন্ত আজ সুরা মূলক সহ অন্যান্য মাক্কী সুরা সমূহের তাফসীর জানি না। রাসূল সাঃ সুরা মূলকের সাথে আরো একটি সুরা প্রতি রাতে পড়তেন।
জাবের রা. বলেন-
كَانَ النّبِيّ صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ لَا يَنَامُ حَتّى يَقْرَأَ بِتَنْزِيلُ السّجْدَةِ، وَبِتَبَارَكَ.
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূরা সাজদাহ ও সূরা মুলক তিলাওয়াত না করা পর্যন্ত ঘুমাতেন না। -জামে তিরমিযী, হাদীস ৩৪০৪; মুসতাদরাকে হাকেম, হাদীস ৩৫৪৫; দেখুন,সুরা সাজদাহও মাক্কী সুরা। তাতেও আল্লাহর পরিচয়, দয়া, আযাবের বর্ননা দেওয়া হয়েছে। যা একজন মানুষ গভীর চিন্তা সহ পড়লে অন্তর কেঁপে উঠে। চিন্তা করুন আল্লাহ পরিচয়, দয়া, জান্নাত, জাহান্নামের আলোচনা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, এসব বছরে একবার বা জিবনে একবার পড়া বা আলোচনার বিষয় নয়, বরং প্রতি রাতে, প্রতি দিনেই স্মরন করতে হয়, । রাসূল সাঃ প্রত্যেক নামাযের পর আয়াতুল কুরসি পড়তে বলেছেন এবং তার বিশাল ফজিলত বর্ননা করেছেন। কিন্তু সেই আয়াতটিও আল্লাহর পরিচয় নিয়ে।একজন ব্যক্তি অর্থ তাফসীরের দিকে খেয়াল করে নামাযের পর যতবারই পড়বে ততবারই তার অন্তরে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস বাড়বে। বার বার রবের পরিচয় মনে পড়বে। দরকার ছিলো প্রতিদিন মাক্কী সুরা থেকে কোন না কোন সূরা তাফসীর সহ পড়া, প্রতি জুমায়, প্রতি ওয়াজে আলোচনা করা।মক্কার তেরোটি বছর যে বিষয়সমূহ নিয়ে ওহী নাযিল হলো, আমরা অনেকেই সারাজীবনে তেরোটি দিনও এসব বিষয় নিয়ে পড়ি না।
দেখুন, রাসূল সাঃ কত শক্তিশালী পুরুষ ছিলেন, কত বিপদ উনার উপর দিয়ে গেছে, কত পেরেশানি, কত দুঃখ কষ্ট উনাকে সহ্য করতে হয়েছে,তায়েফে রক্ত ঝরিয়েছেন, উহুদে সত্তর জন প্রিয় সাহাবীর দাফন হয়েছে উনার সামনে দিয়ে,নিজের প্রিয় স্ত্রী, প্রিয় চাচা হারানোর ব্যাথা সহ্য করেছেন,একে একে চারজন সন্তান মারা গেছেন, অথচ এত কিছুতেও উনার চুল পেকে যায়নি। কিন্তু কুরআনের কয়েকটি সুরা উনাকে বার্ধক্য করে দিয়েছে, চুল মোবারক সাদা হয়ে গেছে।
حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بِشْرٍ ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ صَالِحٍ ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ ، عَنْ أَبِي جُحَيْفَةَ ، قَالَ : قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، نَرَاكَ قَدْ شِبْتَ ، قَالَ : " قَدْ شَيَّبَتْنِي هُودٌ وَأَخَوَاتُهَا " .
আবু জুহাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একদা সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার বয়োবৃদ্ধ হওয়ার স্পষ্ট নিদর্শন লক্ষ্য করছি। তিনি বললেন, হুদ এবং তদানুরূপ সূরাগুলো আমাকে বার্ধক্যে উপণীত করেছে। মুজামুল কাবীর লিত তাবরানী, হা/১৭৭৭৪ মুসনাদে আবু ই'আলা, হা/৮৮০: মিশকাত, হা/৫৩৫৩।
حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاءِ ، قَالَ
: حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ هِشَامٍ ، عَنْ شَيْبَانَ ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ ، عَنْ عِكْرِمَةَ ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : قَالَ أَبُو بَكْرٍ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، قَدْ شِبْتَ ، قَالَ : " شَيَّبَتْنِي هُودٌ ، وَالْوَاقِعَةُ ، وَالْمُرْسَلاتُ ، وَعَمَّ يَتَسَاءَلُونَ ، وَإِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ " .
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, আবু বকর (রাঃ) আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার চুল তো সাদা হয়ে গিয়েছে। আপনি বার্ধক্যে পৌছে গেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সূরা হূদ, ওয়াকিয়া, মুরসালাত, আম্মা ইয়াতাসা-আলূন, ইযাশ-শামসু কুভভিরাত আমাকে বৃদ্ধ বানিয়ে দিয়েছে।মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৩১৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪১৭৫; জামেউস সগীর, হা/৬০৩৬; সিলসিলা সহীহাহ,হা/৯৫৫।
এখানে যে সুরা সমুহের কথা বলা হয়েছে প্রায় সবই মাক্কী সুরা ও আল্লাহর পরিচয়, আযাব ও প্রতিদান সংক্রান্ত। আজ এসব সুরা আমাদের নাড়া দেয় না, আমরাতো পড়িই না, নাড়া দিবে কোথা থেকে?যে সূরা সমূহ রাসূল সাঃ এর চুল মোবারক সাদা বানিয়ে দিয়েছে, সে সূরা দিয়ে আমরা দাওয়াতি কাজ করি না। অথচ মানুষের হিদায়েতের জন্য এর চেয়ে উত্তম কোন দাওয়াত নেই।তাযকিয়ার জন্য এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ আলোচনা আর নেই। একটা কথা সবসময় মনে রাখবেন, যে সূরা সমূহ নাযিলের পর রাসূল সাঃ এর চুল মোবারক সাদা হয়ে গেছে, যে সুরা রাসূল সাঃ কে বার্ধক্য বানিয়ে দিয়েছে সে সূরা সমূহ যদি পড়ার পর একটুও কলব নাড়া না দেয়,তাহলে বুঝে নিবেন কলব কত কঠিন হতে পারে , নফস কত কলুসিত হতে পারে।তাই দ্রুত নফসের চিকিৎসা করুন, কেননা এমন নফস নিয়ে দ্বিনের কাজ করলে দ্বীনের ক্ষতি করার সম্ভবনা থাকে,হক্ব জামায়াতের সাথে থেকেও ইসলামের ক্ষতি করতে পারেন৷
মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَ قَدۡ خَابَ مَنۡ دَسّٰىہَا ﴿ؕ۱۰﴾
এবং সে ব্যর্থ হবে, যে তা ( নাফস)কে কলুষিত করবে। ( সুরা শামস ১০)
যতক্ষণ পর্যন্ত আপনার নফস পরিশুদ্ধ না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি ব্যর্থতার মধ্যেই থাকবেন। আপনি সফল হবেন না। আর যে নিজেই ব্যর্থতার মধ্যে ডুবে আছে সে কিভাবে উম্মাহর সফলতা জন্য কাজ করবে?তাই দ্বীনের ব্যাপারে কিছু বলার আগে নিজের নফসের দিকে একটু খেয়াল করুন। কেননা যে নিজেই নফসের গোলামী করে সেতো মানুষকে রবের গোলামীর দিকে কিভাবে ডাকবে? [নফস কলুষিত হওয়ার কারনেই মানুষ সারাক্ষণ দুনিয়া নিয়ে টেনশান করে, দুনিয়া নিয়ে কত প্লান করে।অথচ পরকালের জীবনই হলো প্রকৃত চিন্তার বিষয়।দুনিয়ায় এতো বিপদে পড়েও রাসূল সাঃ এর চুল মোবারক সাদা হয় নি অথচ কয়েকটি সূরা রাসূল সাঃ চুল মোবারক সাদা করে দিয়েছে। রাসূল সাঃ এর নফসতো সবচেয়ে বেশি পরিশুদ্ধ।আর আমাদের নফস এতটাই কলুসিত যে সারা জীবনেও এক ফোঁটা চোখের পানি ফেলতে পারি না।মহান আল্লাহ মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন, আর তিনিই জানেন কোথায় মানুষের আসল সফলতা ও কোথায় ব্যর্থতা।তিনি যেটাতে ব্যর্থতা বলেছেন আপনি সেটা ঠিক না করে সারা পৃথিবীর সব ধনসম্পদ, ক্ষমতা ও ইলমও যদি লাভ করেন তবুও আপনি ব্যর্থ। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেনঃ"বাহিরের শত্রু আমার কি ক্ষতি করবে?যখন আমার সবচেয়ে বড় শত্রু আমার নফস।"]
একটু চিন্তা করে দেখুন, মক্কার কাফেরদের অন্তর কতটা কঠোর ছিলো,দিনের পর দিন তারা পাপাচারে লিপ্ত ছিলো, তারা জাহান্নামের একদম কাছে চলে গেছে। কিন্তু এরকম মানুষগুলোকে পরিবর্তনের জন্য রাসূল সাঃ এই বিষয়গুলো দিয়েই তো দাওয়াত দিতেন। আবার যারা ইমান আনতো তাদের উপর চলে আসতো অসহনীয় নির্যাতন। নানান ধরনের বিপদ।তখন তাদের জন্য কত উঁচু মাপের ইমান বৃদ্ধিকারী আলোচনার প্রয়োজন ছিলো। আর রাসূল সাঃ তাদেরকেও এই বিষয়গুলোর উপরেই আলোচনা করতেন।ফলে সাহাবীরা ইমান আনার পর শত কষ্টের পরেও দ্বীনের উপর অটল থাকতেন, আর আজ দেখা যায় বহু মানুষ কয়েক দিন ভালো ভাবে আমল করার পর আবার পাপ কাজে ফিরে যায়।অথবা দিনের সব বিধিনিষেধ মানতে তারা প্রস্তুত থাকে না। অপরদিকে সাহাবীদের কলব তাকওয়ায় ভরপুর ছিলো।যার ফলে কুরআনে যখন যে সম্পর্কে আয়াত নাযিল হতো তখন সে আয়াতের উপর আমল করেছেন। কেননা এই কুরআন রয়েছে। তাকওয়াবানদের(আল্লাহ ভীরুদের) জন্যই হিদায়েত।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
ذٰلِکَ الۡکِتٰبُ لَا رَیۡبَ ۚۖۛ فِیۡہِ ۚۛ ہُدًی لِّلۡمُتَّقِیۡنَ ۙ﴿۲﴾
এ গ্রন্থ; (কুরআন) এতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের ( ভীতি অবলম্বনকারীদের) জন্য এ (গ্রন্থ) পথ-নির্দেশক।(সুরা বাকারা ২)
পবিত্র কুরআন তাকওয়াবানদের জন্যই হিদায়েত।রাসূল সাঃ দিনের পর দিন সাহাবীদের মাঝে এসব বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করেছেন,আর সাহাবীরা হয়ে গেলেন শ্রেষ্ঠ মুত্তাকী। যার ফলে পবিত্র কুরআনে যখন যে বিধান নাযিল হয়েছে, তখন সে বিধান সাহাবীরা বিনা যুক্তিতে মেনে নিয়েছেন। যখন মদের আয়াত নাযিল হয়েছে সবাই মদ ত্যাগ করেছেন। এমনকি যাদের মদের ব্যবসা ছিলো তারা ব্যবসা পর্যন্ত ত্যাগ করেছেন।আর এখন একজন ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম দাবীর পরেও সামান্য বিড়ি সিগারেট ছাড়তে পারে না।এরপরে সুদের ব্যাপারে বিধান নাযিল হলে সবাই সুদ ত্যাগ করেছেন। কারন তারা ছিলো মুত্তাকী। তাদের উপর যখন যা ফরয হত তখন তা পরিপূর্ণ ভাবে পালন করতেন।আপনি একজন ব্যক্তি সব দ্বীনের সব ইলম পৌঁছাতে পারবেন না।কেননা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে। আবার দেখা যায় যে সময় ইলম প্রয়োজন সে ইলম পৌছাতে পারবেন না। কিন্তু যদি আপনার আলোচনা দ্বারা একজন ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করতে শুরু করে তখন স্বয়ং আল্লাহই তার শিক্ষক হয়ে যান। যখন যে ইলম প্রয়োজন তখন সে ইলম আল্লাহ পৌঁছিয়ে দেন,আল্লাহই তার শিক্ষক হয়ে যাবেন। মহান আল্লাহ বলেনঃ
(وَاتَّقُواْ اللّهَ وَيُعَلِّمُكُمُ اللّهُ وَاللّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ)
অর্থঃ "তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, আল্লাহ তোমাদের শিক্ষা দিবেন (ইলম দান করবেন), আর আল্লাহ সব বিষয়ে মহা জ্ঞানি। [সূরা বাকারা আয়াতঃ ২৮২]
কিন্তু যাহা জানলে মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয় বাড়বে আমরা এসব বিষয় সম্পর্কে একদমই জানি না ও আলোচনাও হয় না। অথচ প্রতি নিয়ত এসব সম্পর্কে আলোচনা হওয়ার দরকার ছিলো। আজ সরাসরি কুরআন ও হাদিস থেকে এমনিতেই পড়া হয় বা আলোচনা হয় খুব কম। আর হলেও যেসকল বিষয় নিয়ে পূর্ববর্তী ইমামরা মীমাংসা করে গেছেন সেই সকল বিষয় নিয়ে কত গভেষনা, কত ইখতেলাফ। কিন্তু মাক্কী সুরা সমূহ ও জান্নাত, জাহান্নাম সংক্রান্ত কুরআন হাদিস নিয়ে পড়াশুনা বা আলোচনা একবারেই খুব কম। বর্তমানে মুসলিমদের এতো দূরাবস্থা কেন? হাদীসে এসেছে إِذَا تَبَايَعْتُمْ بِالْعِينَةِ وَأَخَذْتُمْ أَذْنَابَ الْبَقَرِ وَرَضِيتُمْ بِالزَّرْعِ وَتَرَكْتُمُ الْجِهَادَ سَلَّطَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ ذُلًّا لَا يَنْزِعُهُ حَتَّى تَرْجِعُوا إِلَى دِينِكُمْ
“যখন তোমরা ‘ঈনাহ’ অর্থাৎ এক ধরণের সুদী বেচা-কেনা করবে, গাভীর লেজ ধরে থাকবে, কৃষক হয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে যাবে এবং জিহাদ পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ তা’আলা তখন তোমাদের ওপর অপমান চাপিয়ে দিবেন এবং তা তোমরা হটাতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা নিজের দ্বীনের দিকে পত্যাবর্তন করো।” (আবু দাঊদ, আহমাদ)
মুসলিমদের এতো দূরাবস্থার কারন হলো দুনিয়াকে ভালোবাসা ও জিহাদ পরিত্যাগ করা। আজকের মানুষ দুনিয়াকে যত ভালোভাবে জানে ও বুঝে পরকালকে হাজার ভাগের এক ভাগও জানে না।দুনিয়া সম্পর্কে যত মোটিভেশনাল কথা শুনে পরকাল সম্পর্কে এতোটা জানেও না । দুনিয়াকে পরকালের উপর প্রাধান্য দিচ্ছে। একজন ব্যক্তি যখন পরকালকে ভালোবাসবে, জান্নাত লাভের আশা করবে তখনতো সে কোন আমল দ্বারা রবের বেশি সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় ও জান্নাত লাভ সহজে করা যায় সে চিন্তায় ব্যস্ত থাকবে। আজ আমরা দ্বীন মানলে কিভাবে দুনিয়াবী সফলতা পাবো সে সকল বিষয় জানতে আগ্রহী বা আলোচনা করি। শুধু মাত্র দুনিয়াবী লাভ ক্ষতি আলোচনা করে মানুষকে পাপ থেকে বাঁচানো যায় না। যদি যেত তাহলে সিগারেটের গায়ে লিখাটি পড়ার পর কেউ সিগারেট খেতো না। সাহাবীরা দ্বীন পালন করার কারনে দুনিয়াবী সফলতা অর্জনের সুযোগ পেয়েও তা গ্রহন করতেন না। কারন তারা আখিরাত ও দুনিয়ার বাস্তবতা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতেন, তারা জান্নাত সম্পর্কে ভালোভাবে জানতেন। যেমনঃ একবার এক অসহায়, দারিদ্র সাহাবী( রাবীয়া বিন কাব রাঃ)কে রাসূল সাঃ বললেন আমার নিকট কিছু চাও। সে যদি বাড়ি, নারী, সম্পদ চাইতো তাহলে রাসূল সাঃ তার জন্য দোয়া করতেন, আর আল্লাহ সাথে সাথে কবুল করতেন। আর তখন সে সাহাবীর এসবের দরকারও ছিলো। কেননা একদমই অসহায় অবস্থায় ছিলেন তিনি,তিনি ছিলেন আসহাবে সুফফার সদস্য অর্থাৎ যাদের কোন সহায় সম্পদ বলতে কিছুই ছিলো না ।কিন্তু সাহাবী ভেবেছিন্তে বললেন আমি জান্নাতে আপনার সাথে থাকতে চাই। সাহাবী শুধু জান্নাতই চায় না, বরং রাসূল সাঃ এর সাথে থাকতে চায়। সাহাবীরা কত বেশি জান্নাত চিনেছেন। হযরত ওসমান (রাঃ) কবরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কাঁদতেন।অপরদিকে আমরা গোটা বছরেও দেখা যায় কবর নিয়ে একবার ভাবি না।আমরা কবরের আযাব সম্পর্কেই তো জানি না। অথচ জান্নাত, জাহান্নাম কবর নিয়ে সার্বক্ষনিক চিন্তা থাকতে হয়। আজ বিজ্ঞান দিয়ে বা যুক্তি দিয়ে কত তাত্ত্বিক আলোচনা করা হয়।যুবকদের পাপ থেকে ফিরানোর জন্য কত রকমের নিজস্ব মতামত পেশ করা হয়।আল্লাহর কালাম বাদ দিয়ে তাযকিয়ার জন্য মনগড়া কত আলোচনা করা হয়। দেখুন,মদীনাতে এক মহিলা যিনা করার পর চলে আসছে রাসূল সাঃ এর নিকট। যাতে তার উপর হদ বাস্তবায়ন করা হয়। অথচ মদীনার রাষ্ট্র তার এই খবর জানতো না। কিন্তু মহিলা নিজেই চলে আসছে। সে জানতো তাকে পাথর নিক্ষেপ করে সবার সামনে হত্যা করা হবে। তবুও সে চলে আসছে। চিন্তুা করুন, সে আল্লাহ কে ও পরকালকে কত ভালো ভাবে চিনেছে। এভাবে আরো কয়েকটা ঘটনা আছে। আজতো জাহান্নাম নিয়ে কিছু কিছু আলোচনা হলেও আল্লাহর পরিচয় ও জান্নাত নিয়ে একদম মানুষ জানেই না বললেই চলে।[আর জাহান্নাম নিয়ে যে আলোচনার হয় তাও হয় বেশির ভাগ নিজের থেকে। কুরআন ও হাদীস থেকে হয় না] অথচ কুরআনে যেখানেই জাহান্নামের আলোচনা করা হয়েছে সেখানেই জান্নাতের আলোচনা এসেছে। মানুষ তার আসল বাড়ির খবরের বিবরন জানে না। মানুষ জানে না কিসের বিনিময়ে সে কি হারাচ্ছে।জান্নাত নিয়ে না জানার কারনে মানুষ তার প্রকৃত লক্ষ্য সম্পর্কে জানে না। প্রকৃত সফলতা সম্পর্কে জানে না। একজন মুমিনের আসল লক্ষ্য হবে জান্নাত।আর দুনিয়াবী সব কিছু করবে এই লক্ষ্য কে কেন্দ্র করে। যদি জান্নাত পাওয়ার জন্য সে সব হারায় তবুও সে আপসোস করবে না এজন্য যে, তার জান্নাতের জন্যই সে সব হারাচ্ছে।মানুষের তবিয়ত হলো যখন কোন কিছুর উপকারিতা জানে তখন সে জিনিস মানুষ পেতে চায়।সাহাবীরা এই জান্নাত লাভের জন্যই কত পাগলপারা ছিলেন। বদর যুদ্বে হযরত ওমায়ের রাঃ রাসূল সাঃ পবিত্র জবান থেকে জান্নাতের বর্ননা শুনার পর হাতের খেজুর পর্যন্ত পেলে দিয়েছেন। কারন উনার জান্নাতে যেতে দেরি হচ্ছে।নিজের পরিবার পরিজন ত্যাগ দিয়ে তিনি বদরে শহিদ হয়ে গেলেন। অথচ আজকের যুবকরা জান্নাতের জন্য নিজের প্রেমিকা ছাড়তে পারে না। কারন তারাতো জান্নাত সম্পর্কেই জানেই না। মনে রাখবেন অন্তরে জাহান্নামের ভয়ের পাশাপাশি জান্নাত হারানোর ভয়ও থাকতে হয়,আল্লাহর অসীম অনুগ্রহ সম্পর্কে জানতে হয়।মানুষ যখন কোন লক্ষ্য কে কেন্দ্র করে ত্যাগ কষ্ট শুরু করে তখন সেই লক্ষের প্রতি অন্তরে ভালোবাসা চলে আসে।যখন লক্ষ্য পৌছার জন্য পথ চলা শুরু করে তখন অনেকদূর পৌছার পর আর ফিরে আসতে চায় না। কেননা তখন অনেক পথ পাড়ি দেওয়ার কষ্ট বৃথা যেতে দেয় না। মানুষের প্রধান লক্ষ্য যদি জান্নাত হতো আর সে লক্ষ্যের জন্য যখন ত্যাগ শুরু করতো তখন জান্নাতের এক আলাদা ভালোবাসা, বিশ্বাস চলে আসতে। মাঝে মাঝে শয়তান ধৌকা দিলেও জান্নাতের জন্য অতীতের করা কষ্ট গুলো বৃথা যাওয়ার ভয়ে সতর্ক থাকতো। আজ যদি জান্নাত নিয়ে আলোচনা ব্যাপক হতো তাহলে মানুষ খারাপ কাজ করার আগে একটু চিন্তা করতো যে,আমার না জানি কোন কাজটি করার পর এতো সুন্দর জান্নাত মিছ হয়ে যায়, কোন কথার কারনে জান্নাত মিছ করে ফেলি। মানুষ হিসেব নিকেষ করে কথা বলতো৷এক দল আরেক দলের বিরুদ্ধে, বা এক আলেম আরেক আলেমের বিরুদ্ধে বলতে চিন্তাভাবনা করতো। আজতো আমরা নিজেরা হক্বের উপর পরিপূর্ণ আছি কি না তা নিয়ে কোন চিন্তা নাই। নিজেদের মাঝে শিরক কুফর প্রবেশ করলো কিনা তা নিয়ে কোন ভাবনা নাই। অথচ ওমর রাঃ জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়ায় পরেও তিনি হযরত হুযাইফা (রাঃ)এর নিকট জানতে চেয়েছেন যে,মুনাফিকদের তালিকায় উনার নাম আছে কিনা। অপরদিকে আমাদের নিজেদের ভিতর শিরক বিদায়াত প্রবেশ করলো কিনা তা নিয়ে কোন অনুসন্ধান নাই। একজন ব্যক্তির অন্তরে যখন জান্নাত হারানোর ভয়, জাহান্নামে যাওয়ার ভয় জাগ্রত হয়, তখন তার হক্ব জানার ও মানার প্রতি আগ্রহ বাড়ে। আর কারো অন্তরে এরকম আগ্রহ বাড়লে আল্লাহ তার সামনে সত্যকে স্পষ্ট করে দিবেন ইনশাআল্লাহ।দেখুন বদর যুদ্বে দুইজন বালক অংশগ্রহণ করেছেন, অথচ উনাদের জিহাদে যাওয়ার বয়স হয় নি, কিন্তু তারা ইসলামের সবচেয়ে মার্যাদা পূর্ন জিহাদে অংশগ্রহন করতে পেরেছিলো,এমনকি উনারা ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রুকে হত্যা করতে পেরেছিলো। কেননা তাদের ছিলো সীমাহীন আগ্রহ, ফলে আল্লাহ উনাদের কবুল করেছেন। তাই হক্বকে খুজে পেতে হলে মৃত্যু পর্যন্ত হক্ব জানার আগ্রহ থাকতে হবে।মৃত্যু পর্যন্ত শিরক, কুফরে জড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভয় থাকতে হবে। কেননা শিরক কুফরতো সবসময় একরকম থাকে না। যেমনঃ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহঃ সময় খুলুকে কুরআন নিয়ে যে ফিতনার সৃষ্টি হয়েছে তাতো রাসূলের যুগে ছিলো না। আবার বর্তমান যুগের গনতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্রের কুফরিও রাসূল সাঃ এর সময় ছিলো না। কিন্তু যুগের এসব শিরক কুফর সম্পর্কে অনেকে অবগত হয় না বা হওয়ার ইচ্ছেও নাই। কারন তাদের পরকাল নিয়ে চিন্তা নাই,জান্নাত নিয়ে তাদের ভাবনা নাই। এটা চিন্তা করে না যে,একটি শিরক বা কুফরের কারনে যদি আমরা এত সুন্দর জান্নাত হারিয়ে ফেলি তাহলে এর চেয়ে বড় আপসোস আর কি আছে। কিয়ামতের পূর্বে মানুষ সকালে মুমিন থাকবে বিকালে কাফির হবে।যে সময় শিরক কুফর নিয়ে মানুষ বেশি সতর্ক থাকার কথা সে সময় মানুষ এ সম্পর্কে উদাসীন । অনেকে দ্বীনের ব্যাপারে পড়াশুনা না করে যেভাবে ইচ্ছে সেভাবেই বলে। অথচ এটা চিন্তা করে না যে,যে উম্মতের জন্য রাসূল সাঃ তায়েফে রক্ত ঝরালেন, উহুদে রক্তা ঝরালেন, দিনের পর দিন না খেয়ে কত কষ্ট করেছেন, খন্দকের যুদ্বে পেটে পাথর বেঁধে মাটির বোঝা বহন করেছেন। সকল নবীর একটি দোয়া ছিলো, যে দোয়া উনারা দুনিয়ায় করে ফেলেছেন, অথচ রাসূল সাঃ সেটা উম্মতের জন্য রেখে দিছেন, সেই নবীর উম্মত যদি আমার বা আপনার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়,সে উম্মতের ভিতর যদি কোন শিরক কুফর প্রবেশ করে তাহলে কিয়ামতে আমাদের কি করুন পরিনতি হবে। মানুষ আজ পরকালকে ভুলে গিয়ে নিজের ও উম্মাহার ক্ষতি করছে।যদি পরকালের চিন্তা সবসময় মাথায় থাকতো তাহলে হক্বের উপর আছে কিনা তা নিয়ে সবসময় সতর্ক থাকতো। আল্লাহর নিকট দোয়া করতো,শিরক, কুফর থেকে আশ্রয় চাইতো।আর মানুষ যদি সকল প্রকার শিরক, কুফর থেকে মুক্ত না হয়, তাহলে সেই মানুষকে যতই জান্নাত জাহান্নাম সম্পর্কে বলা হবে অথবা যতই ইবাদাত করবে তাতে কোনই লাভ হবে না। শুধুমাত্র এই সকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করে লাভ নাই, যদি শিরক, কুফর, তাগুত সম্পর্কে মানুষকে অবগত না করা হয়,মানবরচিত বিধান শিরক সম্পর্কে সতর্ক না হয়।পূর্ববর্তী যে সকল জাতি ধ্বংস হয়েছিলো, তারা প্রথমত ইমান আনে নাই দ্বীতিয়ত তারা বিভিন্ন ভয়ংকর খারাপ কাজে লিপ্ত ছিলো।তাদের ধ্বংস হওয়ার আগ পর্যন্ত ইমানও ঠিক হয় নাই, আর খারাপ কাজ থেকেও তারা ফিরতে পারে নাই।এজন্য ইমান ঠিক না হলে যতই পাপ থেকে ফিরানোর চেষ্টা করা হোক না কেন তা সম্ভব নয়। আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আকিদা হলো ইমান বাড়ে ও কমে। কিন্তু একজন ব্যক্তির যদি ইমান ই না থাকে তাহলে তা বাড়বে বা কমবে কিভাবে? রাসূল সাঃ এর মজলিসে সাহাবীরাও বসতেন এবং মুনাফিকরাও বসতো।সাহাবীরা রাসূল সাঃ এর ওয়াজ শুনে ইমান বাড়তো অপরদিকে মুনাফিকরা রাসূল সাঃ ও সাহাবীদের বিরুদ্ধে গোপনে ষড়যন্ত্র করতো। তাই ইমান ঠিক হতে হবে আগে। আর মানুষের আরেকটা সমস্যা হলো, এসব বিষয় নিয়ে অনেকে পড়লেও তা নিয়ে চিন্তা করে না,একটু গভীরভাবে ভাবে না । আপনি কোন বিষয় যতই জানবেন কোন লাভ হবে না, যতক্ষণ না তা নিয়ে গভীর চিন্তা করবেন।গভীরভাবে কোন কিছু নিয়ে না ভাবলে অনেক গুরুত্ব বিষয়ও হালকা মনে হয়৷ আর আল্লাহ তা'য়ালা তো বলেছেন কোরআন নিয়ে যেন গভীর চিন্তা করে। মহান আল্লাহ বলেনঃ اَفَلَا یَتَدَبَّرُوۡنَ الۡقُرۡاٰنَ اَمۡ عَلٰی قُلُوۡبٍ اَقۡفَالُہَا (২৪) তবে কি তারা কুরআন সম্বন্ধে অভিনিবেশ সহকারে চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?( সুরা মুহাম্মদ ২৪) আমরা কয়দিন কুরআনের মাক্কী সুরা সমূহ নিয়ে গভীর চিন্তা করেছি?আমরা জান্নাত জাহান্নাম নিয়ে শেষ কবে গভীর চিন্তা করে চোখের পানি ফেলেছি?অথচ হাদিসে বলা হয়েছেঃ আবূ হুরায়রা (রাঃ) হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, لاَ يَلِجُ النَّارَ رَجُلٌ بَكَى مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ حَتَّى يَعُودَ اللَّبَنُ فِي الضَّرْعِ، وَلَا يَجْتَمِعُ غُبَارٌ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَدُخَانُ جَهَنَّمَ ‘ আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীর জাহান্নামে যাওয়া এরূপ অসম্ভব যেরূপ দোহনকৃত দুধ পুনরায় পালানে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। আর আল্লাহর পথের ধুলা ও জাহান্নামের ধোঁয়া কখনও একত্রিত হবে না’।(তিরমিজি) এ হাদিসখানা অনেকে স্বাভাবিক ভাবেই নিতে পারে,অনেকে মনে করতে পারে আল্লাহর ভয়ে কাঁদা কঠিন কিছু না। কিন্তু আল্লাহর ভয়ে কাঁদা কোন সাধারন কথা নয়।সত্যিকারে খুব কম লোকই তার ভয়ে কাঁদতে পারে।যেখানে রবের ভয়ে কান্নাকাটি করার এতো বড় ফজিলত বর্ননা করা হয়েছে সেখানে রবের ভয়ে কাঁদা এতো সহজ নয়। কোটি টাকা খরচ করেও আপনি এক ফোঁটা চোখের পানি ফেলতে পারবেন না যদি আপনার কলব কঠোর হয়। কারন যারা রবের ভয়ে কাঁদে তারা অনেক ইবাদাত বন্দেগি করতে হয়,গুনাহ থেকে বাঁচতে হয়,নফস পরিশুদ্ব হতে হয়। আর রবের ভয়ে কাঁদতে পারলে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে বাঁচার মত আমল করার তাওফিক দিবেন এবং জান্নাত লাভের আমল করার তাওফিক দিবেন ইনশাআল্লাহ। যখন কেউ রবের ভয়ে কাঁদবে তখন সে চিন্তা করবে তার দ্বারা রবের কোন কোন হুকুম মানা হচ্ছে না। আরেকটি হাদীছে এসেছে, ইবনু আববাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি
, عَيْنَانِ لاَ تَمَسُّهُمَا النَّارُ: عَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ، وَعَيْنٌ بَاتَتْ تَحْرُسُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ، ‘
জাহান্নামের আগুন দু’টি চোখকে স্পর্শ করবে না। এক- আল্লাহর ভয়ে যে চোখ ক্রন্দন করে এবং দুই- আল্লাহর রাস্তায় যে চোখ পাহারা দিয়ে বিনিদ্র রাত অতিবাহিত করে’।[তিরমিজি, মেশকাত ]
তিনি আরো বলেনঃযখন মুসলমানের অন্তর আল্লাহর ভয়ে কম্পিত হয়, তখন তা থেকে পাপরাশি এমনভাবে ঝরে পড়ে, যেমন ঝরে পড়ে গাছপালা থেকে শুকনো পাতা । (মুসনাদে আহমাদ: ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭২)
আমরা চোখের পানি ঝরানো তো দূরের কথা, আমরা যা নিয়ে চোখের পানি ঝরাবো তা সম্পর্কে ই জানি না৷সর্বশেষ একটা কথা মনে রাখবেন,রাসূল সাঃ আমাদেরকে দ্বীনের কাজ করার যে পদ্বতি দেখিয়ে গেছেন তা বাদ দিয়ে অন্য সহজ পদ্বতি , বা নিজের পছন্দের পদ্বতি অবলম্বন করি তাহলে এর দ্বারা গোটা মুসলিম উম্মাহের ক্ষতি হবে। তাই দ্বীনের কাজ করার আগে দ্বীন সম্পর্কে ভালোভাবে জানুন। আল্লাহ আমাদের দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করুন।
Comment