★কিসের বিনিময়ে কি হারাচ্ছি?
ভুমিকাঃ আমরা হলাম মুসাফির, আমাদের আসল বাড়ি জান্নাত।অথচ আমরা আমাদের আসল বাড়ির কথা ভুলে গেছি। আমরা জান্নাত জাহান্নাম সম্পর্কে পড়ি না, পড়লেও জীবনে একবার পড়া যথেষ্ট মনে করি অথচ জান্নাত জাহান্নাম সম্পর্কে সর্বদা জানা থাকতে হয়। মানুষ তার বাড়ি ঘর সম্পর্কে যতটা জানে তার চেয়ে বেশি জানা থাকতে হয়।আর আমরা জানলেও তা নিয়ে কোন গভীর চিন্তা করি না। নিম্নের লিখাটি আসা করি আমাদের কিছুটা হলেও বিবেককে নাড়া দিবে ইনশাআল্লাহ।
জান্নাত ও দুনিয়ার বাস্তবতাঃ
# এই পৃথিবীতে একজন মানুষ যতই তার আনন্দদায়ক কাজে মগ্ন থাকে, হঠাৎ করে যদি তাকে কোন মশা কামড় দেয় বা সুঁই দিয়ে আঘাত করা হয় সাথে সাথে তার মনোযোগ ওই আঘাতপ্রাপ্ত জায়গার দিকে চলে যাবে। অথচ মিশরের সুন্দরী নারীরা যখন হযরত ইউসুফ আঃ কে দেখেছিলো তখন ফল কাঁটতে গিয়ে তারা হাত কেঁটে ফেলেছিলো। কিন্তু তারা মালুম করতে পারে নি। কত সুন্দর ছিলেন ইউসুফ (আঃ)।
আর ইউসুফ আঃ কে যে মহান রব সৃষ্টি করলেন সেই আল্লাহ তা'য়ালা কত সুন্দর সুবহানাল্লাহ। যারা জান্নাতে যাবে তারাই মহান রবকে দেখতে পাবে, কত আনন্দদায়ক হবে, কত সুখের হবে সেই দেখা।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেনঃ
إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ قَالَ : يَقُولُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالٰى تُرِيدُونَ شَيْئًا أَزِيدُكُمْ؟ فَيَقُولُونَ أَلَمْ تُبَيِّضْ وُجُوهَنَا أَلَمْ تُدْخِلْنَا الْجَنَّةَ وَتُنَجِّنَا مِنَ النَّارِ؟ قَالَ : فَيَكْشِفُ الْحِجَابَ، فَمَا أُعْطُوا شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلٰى رَبِّهِمْ عَزَّ وَجَلَّ ثُمَّ تَلاَ : لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنٰى وَزِيَادَةٌ-
‘জান্নাতবাসীরা জান্নাতে প্রবেশের পর আল্লাহ তাদের জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কি অতিরিক্ত আরও কিছু চাও? তারা বলবে, আপনি কি আমাদের চেহারা উজ্জ্বল করেননি? আপনি কি আমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাননি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেননি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অতঃপর আল্লাহ স্বীয় পর্দা উন্মোচন করবেন। তখন তাঁকে দেখার চাইতে প্রিয়তর কোন বস্ত্ত আর থাকবে না’। আর এটিই হ’ল ‘অতিরিক্ত’। অতঃপর তিনি পাঠ করলেন,لِلَّذِيْنَ أَحْسَنُوا الْحُسْنٰى وَزِيَادَةٌ، ‘যারা সৎকাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত ও আরও কিছু অতিরিক্ত অর্থাৎ আল্লাহর দর্শন লাভ’ (ইউনুস ১০/২৬)।(মুসলিম,মিশকাত)
হযরত জাবের (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে, ‘আল্লাহ সেদিন উজ্জ্বল চেহারায় হাসতে হাসতে মুমিনদের সাক্ষাৎ দিবেন...(মুসলিম হা/১৯১)
আজকে যদি আপনি প্রিয় নবী (সাঃ) কে স্বপ্নে দেখেন এবং যদি স্বপ্নে দেখেন তিনি হাসছেন তখন আপনার নিকট কেমন লাগবে?এই একটি স্বপ্ন সারাটি জীবন আপনাকে কত আনন্দিত করবে। কিন্তু যখন জান্নাতিরা সবকিছুর মালিক মহান আল্লাহ কে দেখবেন, যখন তিনি হাসবেন তখন জান্নাতিদের জন্য কত আনন্দের হবে, কত সুখের হবে যা কোন মানুষ চিন্তাও করতে পারে না। জান্নাতের সবচেয়ে বড় নেয়ামতই হবে মহান রবের দর্শন লাভ করা।
#এই পৃথিবীতে অধিকাংশ মানুষ সবদিক থেকে সুখী হতে চায়। সুন্দর বাড়ি, দামী গাড়ি, সুন্দরী নারী, সুস্বাস্থ্য, সুন্দর চেহারা, চোখশীতল কারী সন্তান,ক্ষমতা,জায়গাজমি সহ সুখী হওয়ার সব উপকরন কামনা করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এটাতো সব দিক থেকে সুখী হওয়ার জায়গা নয় ।একজন ব্যক্তি যদি সব দিক থেকে সুখী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সারা জীবন কষ্ট করে তাহলে সে শুধু কষ্টই করবে কিন্তু সব দিক থেকে সুখী হতে পারবে না।যা চাইতে তাহা পাবে না।সব দিক থেকে সুখী হওয়ার জায়গা হলো একমাত্র জান্নাত।যেখানে সব দিক থেকে একজন ব্যক্তি সুখী হতে পারবে। আপসোসের বিষয় হলো যে ব্যক্তি সবদিক থেকে সুখী হতে চায় সে যদি জান্নাতে না যায় তাহলে তার সারাজীবনের স্বপ্ন কখনই আর বাস্তবায়ন হবে না, সব স্বপ্ন নিয়ে সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে।
অপরদিকে যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে তার চাওয়া তো পুরন হবেই, বরং তার চেয়ে বহু গুন পাবে যা কল্পনাও করা যায় না।হাদীসে এসেছে,
আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমি অবশ্যই চিনি জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভকারী সর্বশেষ জাহান্নামী ও জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতিকেঃ জনৈক ব্যক্তি হামাগুড়ি দিয়ে জাহান্নাম থেকে বের হবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ কর, সে জান্নাতে আসবে, তাকে ধারণা দেয়া হবে জান্নাত পূর্ণ। সে ফিরে এসে বলবেঃ হে আমার রব আমি তা পূর্ণ পেয়েছি, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তিনি বলেনঃ সে জান্নাতে আসবে তাকে ধারণা দেয়া হবে জান্নাত পূর্ণ। সে ফিরে এসে বলবেঃ হে আমার রব, আমি তা পূর্ণ পেয়েছি। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ কর, তোমার জন্য দুনিয়ার সমান ও তার দশগুণ জান্নাত রয়েছে, -অথবা তোমার জন্য দুনিয়ার দশগুণ জান্নাত রয়েছে,- তিনি বলেনঃ সে বলবেঃ হে আমার রব আপনি আমার সাথে মশকরা করছেন অথবা আমাকে নিয়ে হাসছেন অথচ আপনি বাদশাহ?” তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে দেখেছি হাসতে, তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত বের হয়েছিল। তিনি বলেনঃ তখন বলা হতঃ এ হচ্ছে মর্যাদার বিবেচনায় সবচেয়ে নিম্ন জান্নাত”। [বুখারি ও মুসলিম]
অন্য হাদিসে আছে, সর্বশেষ জান্নাতিকে চাইতে বলা হবে, তখন সে চাইতে থাকবে। এমনকি মহান আল্লাহ তাকে স্মরন করিয়ে দিবেন, বলবেন এটা চাও, ওটা চাও, যখন সব চাওয়া শেষ হবে তখন তাকে তার সব চাওয়া ও তার দশগুণ দেওয়া হবে।
প্রিয় পাঠক, চিন্তা করে দেখুন এই হলো সর্বশেষ জান্নাতির অবস্থা। যাকে তার সব
চাওয়া ও তার অনুরুপ দশ গুন দেওয়া হবে। এই হলো সর্বশেষ জান্নাতির অবস্থা আর যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে,জাহান্নামে যাওয়া ছাড়াই জান্নাতি হবে তাদেরকে মহান আল্লাহ কত কিছু দিবেন। অথচ আমরা এমন এক দুনিয়ার পাগল যেখানে হাজার চাওয়া, স্বপ্ন থাকে কিন্তু পূরন হয় অল্প কিছুই।মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِيَ أَنفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدْعُونَ ۳۱ نُزُلًا مِّنْ غَفُورٍ رَّحِيم ۳۲ ) [فصلت:
অর্থঃ ‘সেখানে তোমরা যা কিছু চাও এবং যা ইচ্ছে করবে সাথে সাথে তাই হবে। এটা হচ্ছে ক্ষমাশীল ও দয়াবান আল্লাহর তরফ হতে মেহমানদারী।' (সূরা হা-মীম আস-সিজদা: ৩০-৩১)
কল্পনা করুন, আপনি সেখান যা চাচ্ছেন তাই পাচ্ছেন , তখন কেমন লাগবে আপনার নিকট?
#এই পৃথিবীতে আপনি যত সুন্দর দৃশ্য দেখেন, কিংবা যত সুন্দর পুরুষ বা যত সুন্দর নারীই দেখুন না কেন সেটার সাথে জান্নাতের তুলনা করতে পারবেন না।
আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য দেখে মনে মনে এটা ভাবতে পারবে না যে,জান্নাতের দৃশ্য এমন হতে পারে।আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী বা সবচেয়ে সুন্দর পুরুষটি কে দেখে এটা ভাবতে পারবেন না যে, জান্নাতের পুরুষ বা হুর হয়ত এমন হতে পারে কেননা হাদিসে বলা হয়েছেঃ
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
قَالَ اللهُ أَعْدَدْتُ لِعِبَادِى الصَّالِحِيْنَ مَا لاَ عَيْنَ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنَ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ، فَاقْرَءُوْا إِنْ شِئْتُمْ: فَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِىَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ-
‘আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেছেন, আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস প্রস্ত্তত করেছি, যা কখনও কোন চুক্ষ দেখেনি, কোন কান কখনও শুনেনি এবং মানুষের অন্তঃকরণ যা কখনও কল্পনাও করেনি। তিনি বলেন, (এর সত্যতা প্রমাণে) তোমরা ইচ্ছা করলে এই আয়াতটি তেলাওয়াত করতে পার। অর্থাৎ কেউই জানে না তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর কি লুক্কায়িত রাখা হয়েছে, তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ’।( বুখারী৩২৪৪, মুসলিম)
জান্নাতে মহান রব যা লুকিয়ে রেখেছেন তা কোন চোখ দেখি নি, এমনকি কল্পনাও করতে পারে না।
#আমরা যে দুনিয়া নিয়ে এতো স্বপ্ন দেখি যেই দুনিয়া নিয়ে প্লান পরিকল্পনা করতে গিয়ে আখেরাত নিয়ে ভাবার সময় হয় না সেই দুনিয়া মহান রবের নিকট মাছির ডানার সমতুল্য নয়।হাদিসে এসেছে
عن سهل بن سعد الساعدي ـرضي الله عنه- قَالَ رَسُول اللَّه -صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم-: «لو كانت الدنيا تَعدل عند الله جَناح بَعوضة، ما سَقَى كافراً منها شَرْبَة ماء».
সাহাল ইবন সা‘দ আস-সা‘য়েদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফূ‘ হিসেবে বর্ণিত, “দুনিয়া যদি আল্লাহর নিকট মাছির ডানার সমান হতো, তাহলে তিনি কোনো কাফেরকে তার এক ঢোক পানিও পান করাতেন না।”
সহীহ - এটি তিরমিযী বর্ণনা করেছেন।
যেই দুনিয়ার জন্য আমরা জান্নাতকে ভুলে গেলাম এবার আমরা সেই জান্নাত নিয়ে একটু জানি।
হাদিসে এসেছেঃ
مَوْضِعُ سَوْط في الجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا
'জান্নাতের চাবুক পরিমাণ সামান্য জায়গাও দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে, তার চেয়ে উত্তম।( বুখারী,তিরমিজি)
চিন্তা করুন,এই পৃথিবীটা কত বিশাল, কত ধন সম্পদ, কত পাহাড় কত সমুদ্র, কত গাছগাছালি, কত দেশ,এই পৃথিবীর মধ্যে আছে।অথচ জান্নাতের চাবুক পরিমান জায়গা পৃথিবী ও তার মাঝে যা আছে তার চেয়ে উত্তম।
তবুও মানুষ জান্নাতকে ভুলে গিয়ে পৃথিবীতে সামান্য কয়েক বিঘা জমির জন্য সারা জীবন কত কষ্ট করে। রাসূল( সাঃ) বলেনঃ
لَوْ أَنَّ مَا يُقِلُّ ظُفُر مِمَّا فِي الجَنَّةِ بَدَا لَتَزَخْرَفَتْ لَهُ مَا بَيْنَ خَوَافِق السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، وَلَوْ أَنَّ رَجُلاً مِنْ أَهْل الجَنَّةِ اطلَعَ فَبَدَا أَسَاوِرة لطْمَسَ ضَوْءَ الشَّمْسِ كَمَا تَطْمِسُ الشَّمْسُ ضَوْءَ النُّجُومِ
যদি জান্নাতের কোনো জিনিসের এক চিমটি পরিমাণও (পৃথিবীতে) আসতে পারত, তাহলে আসমান-জমিন সকল স্থান আলোকিত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়ে যেত। কোনো জান্নাতি যদি দুনিয়াতে উঁকি দিত, আর তার হস্তালংকার প্রকাশিত হয়ে পড়ত, তাহলে তা সূর্যের আলোকে নিস্তেজ করে দিত, যেভাবে সূর্যের আলো নক্ষত্রসমূহের আলোকে নিস্তেজ করে দেয়।( মুসনাদে আহমদ১৪৪৯, তিরমিজি)
দিনের বেলা সূর্য উঠলে আকাশের চাঁদ এবং নক্ষত্র মোটেও দেখা যায় না। অথচ এমনকি সারা পৃথিবীর সব বাতি দিনের বেলা প্রখর রোদের সময় কোন মাঠে জ্বালিয়ে দিলে সেই বাতির আলো দেখা যায় না। অথচ সেই সূর্যের আলোকেও নিস্তেজ করে দিবে জান্নাতির হস্তালংকার।একজন জান্নাতির হস্তালংকার যদি এতোটা সুন্দর হয় তাহলে জান্নাতি নারী ও পুরুষরা কত সুন্দর হবে সুবহানাল্লাহ।
ভেবে দেখুন কিসের বিনিময়ে আপনি কি হারাচ্ছেন!
#এই পৃথিবীতে যখন মানুষ বাজার ঘাটে উঠে তখন নিজের চাইতে সুন্দর চেহারার কাউকে দেখলে স্বাভাবিক ভাবে অধিকাংশ মানুষের মনে একটা আকাঙ্ক্ষা জাগে যে,নিজের চেহারাটাও যদি এমন সুন্দর হতো।কিন্তু এটাতো দুনিয়া, যেখানে কোটি টাকা দিয়েও নিজের চেহারা পরিবর্তন করা যায় না।
কিন্তু জান্নাতের বাজারের ব্যাপারে হাদিসে এসেছে রাসূলে কারীম (সা.) বলেন, জান্নাতে এমন একটি বাজার থাকবে, যাতে মানুষের প্রতিকৃতি ব্যতীত কিছুই ক্রয়-বিক্রয় হবে না। যদি কেউ কোনো প্রতিকৃতি পছন্দ করে তৎক্ষণাৎ সে ওই প্রতিকৃতিতে রূপান্তরিত হবে। (তিরমিজি : ২৫৫০)।
চিন্তু করুন, জান্নাতের বাজারে লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি ছবি থাকবে।সেখান থেকে যেটা আপনি পছন্দ করবেন সাথে সাথে আপনার চেহারা ওই রকমই হয়ে যাবে।
দুনিয়াতেতো বাজার ঘাটে উঠলে অনেক সময় নিজের পছন্দের জামা কাপড়ও টাকার অভাবে মানুষ কিনতে পারে না। কিন্তু জান্নাতে যখন নিজের পছন্দের ছবিটির মত আপনার চেহারা হয়ে যাবে তখন কেমন লাগবে আপনার নিকট।
#দুনিয়াতে একজন মানুষ ( হোক নারী কিংবা পুরুষ) যত সুন্দর হোক না কেন আস্তে আস্তে তার সৌন্দর্য কমতে থাকে। একটা পর্যায়ে তার প্রতি মানুষের আর্কষন থাকেই না৷ আপনি যত সুন্দর নারীকেই বিবাহ করুন সেই নারী একটা সময় বুড়ি হয়ে যায়। রুপ কমে যায়। এমন অনেক বুড়ি আছে যারা এক সময় অনেক সুন্দরী ছিলো। কত ছেলে তাদের পাগল ছিলো, একবার দেখলে ভুলে যাওয়া অনেক কঠিন হতো। কিন্তু আজ তাদের চামড়া ভাঁজ হয়ে গেছে, কেউ তাদের দিকে তাকায় না,এমন বহু সুন্দরী নারী পৃথিবীতে ছিলো যারা আজ মাটির সাথে মিশে গেছে, কোথায় তাদের দেহ? কোথায় আজ তাদের রুপ? তারা বহু আগেই কবরে পোকামাকড়ের খাবার হয়ে গেছে। । অথচ জান্নাত কোন মানুষের সৌন্দর্যতো কমবেই না বরং শুধু বাড়তেই থাকবে। হাদীসে এসেছেঃ
আনাস বিন মালিক রাসুল থেকে যে হাদিস বর্ণন করেছেন, তা শুনে দেখুন। রাসুল বলেন :
إن في الجنَّةِ لَسُوفًا، يَأْتُونَهَا كُلَّ جُمعَةٍ، فَتَهُبُّ رِيحُ الشَّمَالِ فَتَحْفُو في وُجُوهِهِمْ وَثِيَابِهِمْ، فَيَزْدَادُونَ حُسْنًا وَجَمَالاً، فَيَرْجِعُونَ إِلَى أَهْلِيهِمْ وَقَدِ ازْدَادُوا حَسَنًا وَجَمَالًا، فَيَقُولُ لَهُمْ أَهْلُوهُمْ وَاللَّهِ لَقَدِ ازْدَدْتُمْ بَعْدَنَا حُسْنًا وَجَمالًا، فَيَقُولُونَ: وَأَنْتُمْ، وَاللَّهِ لَقَدِ ازْدَدْتُمْ بَعْدَنَا حُسْنًا وَجَمَالًا
"জান্নাতে একটি বাজার হবে, যেখানে জান্নাতিগণ প্রত্যেক জুমআবার আসবে। তখন উত্তর দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হবে, যা তাদের চেহারা ও কাপড়ে সুগন্ধি ছড়িয়ে দেবে। ফলে তাদের শোভা- সৌন্দর্য আরও বেড়ে যাবে। অতঃপর তারা রূপ-সৌন্দর্যের বৃদ্ধি নিয়ে তাদের স্ত্রীগণের কাছে ফিরবে। তখন তারা তাদেরকে দেখে বলবে, “আল্লাহর কসম, আমাদের কাছ থেকে যাওয়ার পর আপনাদের রূপ-সৌন্দর্য বেড়ে গেছে।” তারাও বলে উঠবে, “আল্লাহর শপথ, আমাদের যাওয়ার পর তোমাদেরও রূপ-সৌন্দর্য বেড়ে গেছে।( সহিহ বুখারী ২৮৩৩)
চিন্তা করুন জান্নাতে একবার প্রবেশ করলে আর বের হবে না৷ অন্ততকাল সেখানে থাকবে, কত কোটি কোটি জুমারদিন সেখানে পাবে যার কোন হিসেব নাই। আর প্রতি জুমাবারে সৌন্দর্য শুধু বাড়তেই থাকবে। আপনার জান্নাতির স্ত্রীর সৌন্দর্য শুধু বাড়তেই থাকবে।
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
«وَلَوْ أَنَّ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ اطَّلَعَتْ إِلَى أَهْلِ الأَرْضِ لَأَضَاءَتْ مَا بَيْنَهُمَا، وَلَمَلَأَتْهُ رِيحًا، وَلَنَصِيفُهَا عَلَى رَأْسِهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا»
‘জান্নাতীগণের স্ত্রীদের মধ্যে থেকে কোনো একজন স্ত্রী যদি পৃথিবীর দিকে উঁকি মেরো দেখতো তবে আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী সবকিছু আলোকিত হয়ে যেতো এবং গোটা পৃথিবী সুগন্ধে ভরে যেতো। তার মাথার উড়নাটিও পৃথিবী এবং পৃথিবীর সমস্ত বস্তুর চেয়ে দামী।’ (বুখারী, ২৭৯৬)
আপনি আজ দুনিয়ার কত মেয়ের ফেতনায় পড়ে নিজের ইমান আমল শেষ করছেন, অথচ যেই নারীর সৌন্দর্যের ফেতনায় পড়ে আপনি নিজের ইমান আমল শেষ করছেন সেই নারীর সৌন্দর্য একদিন থাকবে না।
আর আপনার জান্নাতি স্ত্রী হবে চিরকুমারী এবং প্রেমময়ী।
আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّآ أَنشَأۡنَٰهُنَّ إِنشَآءٗ ٣٥ فَجَعَلۡنَٰهُنَّ أَبۡكَارًا ٣٦ عُرُبًا أَتۡرَابٗا ٣٧﴾ [الواقعة: ٣٥، ٣٧]
“আমি জান্নাতী নারীদেরকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। তারপর তাদেরকে চিরকুমারী, কামিনী ও সমবয়স্কা বানিয়েছি।” (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ৩৫-৩৮)
আল্লাহ বলেন:
﴿ وَحُورٌ عِينٞ ٢٢ كَأَمۡثَٰلِ ٱللُّؤۡلُوِٕ ٱلۡمَكۡنُونِ ٢٣ ﴾ [الواقعة: ٢٢، ٢٣]
“হুরের উদাহরণ হলো, আবরণে রক্ষিত মুক্তার মতো সুন্দর ও উজ্জ্বল এবং আয়তলোচনা। ”(সূরা ওয়াকি‘আহ্: ২৩)
দুনিয়াতে যে নারীর ফেতনায় পড়ে আপনি পরকাল ভুলে গেছেন সেই নারী হয়ত আপনার চেয়ে সুন্দর কাউকে ফেলে তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। অথচ আপনার জান্নাতি হুর সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
আল্লাহ আরো বলেন,
﴿وَعِندَهُمۡ قَٰصِرَٰتُ ٱلطَّرۡفِ عِينٞ ٤٨ كَأَنَّهُنَّ بَيۡضٞ مَّكۡنُونٞ ٤٩﴾ [الصافات: ٤٨، ٤٩]
“তাদের চোখ সর্বদাই অবনত (পবিত্রা যারা অন্যের দিকে তাকায় না), সুন্দর চোখ বিশিষ্ট এবং তারা যেন ডিমের আবরণের ভেতর সুপ্ত উজ্জ্বল।” (সূরা সাফ্ফাত:৪৮- ৪৯)
আপনার জন্য আল্লাহ এমন হুর রেখেছেন তারা আপনি ব্যতিত অন্য কাউকে কামনা করাতো দূরের কথা কারো দিকে তাকাবেও না। তাদের নিয়ে আপনি চিন্তিত হতে হবে না। তারা আপনার প্রতি রাগ করবে না।তাদের রুপ সম্পর্কে আরো বলা হয়েছেঃ
إِنَّ أَوَّلَ زُمْرَةٍ يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ يَوْمَ القِيَامَةِ ضَوْءُ وُجُوهِهِمْ عَلَى مِثْلِ ضَوْءِ القَمَرِ لَيْلَةَ البَدْرِ، وَالزُّمْرَةُ الثَّانِيَةُ عَلَى مِثْلِ أَحْسَنِ كَوْكَبٍ دُرِّيٍّ فِي السَّمَاءِ، لِكُلِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ عَلَى كُلِّ زَوْجَةٍ سَبْعُونَ حُلَّةً يُرَى مُخُّ سَاقِهَا مِنْ وَرَائِهَا»
“প্রথম যারা কিয়ামতের দিন জান্নাতে যাবে, তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল দেখা যাবে, আর দ্বিতীয় দল, তারা যেন সৌন্দর্যে আকাশের ধ্রুব তারা, তাদের প্রত্যেকের জন্য থাকবে দু’জন স্ত্রী, প্রত্যেক স্ত্রীর উপর থাকবে সত্তরটি কাপড়, তথাপি তার ভেতর থেকেও পায়ের নলার ভিতরের মগজ দৃষ্টিগোচর হবে।” (তিরমিযী, ২৫৩৫)
দুনিয়াতে একজন নারী কিংবা পুরুষ যতই সুন্দর হোক তার মাঝে এমন অনেক কিছু থাকে যা খুব ঘৃনিত। কিন্তু জান্নাতে এসব থাকবে না। হাদিসে বলা হয়েছেঃ
«لايبولون ولا يتغطون ولا يتفلون ولا يمتخطون»
‘‘তাদেরকে পেশাব পায়খানা করতে হবে না, মুখে থুথু আসবে না, আর নাকে কোনরূপ ময়লা জমবে না।’’ (বুখারী, ৩৩২৭; মুসলিম, ২৮৩৪)
# দুনিয়াতে অধিকাংশ মানুষ সারা জীবন কষ্ট করেও একটা ইট পরিমান স্বর্নের মালিক হতে পারে না।আর দুনিয়াতে একটা ইট পরিমান স্বর্ন দিয়ে অনেকগুলো প্রাসাদ করা যায় অথচ মহান রব আপনাকে জান্নাতে যে প্রাসাদ দিবেন তার ইট হবে, স্বর্ন ও রৌপ্যের।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
لَبِنَةٌ مِنْ فِضَّةٍ وَلَبِنَةٌ مِنْ ذَهَبٍ وَمِلاَطُهَا الْمِسْكُ الأَذْفَرُ وَحَصْبَاؤُهَا اللُّؤْلُؤُ وَالْيَاقُوتُ وَتُرْبَتُهَا الزَّعْفَرَانُ
‘একটি ইট স্বর্ণের এবং একটি ইট রৌপ্যের এভাবে গাঁথুনি দেয়া হয়েছে। আর মিশক হচ্ছে তার সিমেন্ট এবং মণি-মুক্তা ও ইয়াকূত পাথর হচ্ছে তার সুরকি। মেঝে বানানো হয়েছে জাফরান দিয়ে’।( তিরমিজি)
মহান রব আপনাকে জান্নাতে যে খাট দিবেন সেই খাটটিও হবে স্বর্নের।মহান আল্লাহ বলেনঃ
﴿عَلَىٰ سُرُرٖ مَّوۡضُونَةٖ ١٥ مُّتَّكِِٔينَ عَلَيۡهَا مُتَقَٰبِلِينَ ١٦﴾ [الواقعة:١٥، ١٦]
“জান্নাতীরা সোনার খাটে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে হেলান দিয়ে আরামের সাথে আলাপচারিতা করবে।” (সূরা ওয়াকি‘আহ্ : ১৫-১৬)
জান্নাতের স্বর্নতো দুনিয়ার স্বর্নের মত নয়, কেননা একটু আগেই পড়েছেন যে জান্নাতের চিমটি পরিমান কোন কিছু দুনিয়ায় প্রকাশিত হলে গোটা দুনিয়া এমন ভাবে আলোকিত হবে যে,সূর্যের আলোকে পর্যন্ত নিস্তেজ করে দিবে।
#একটু কল্পনা করে দেখুন, আকাশে অনেক গুলো সুন্দর সুন্দর পাখি উড়ে যাচ্ছে। আপনি পাখিগুলো ডাকার সাথে সাথে কাছে চলে আসলো, এরপর আপনি সেই পাখিগুলো রান্নাবান্না করে খেলেন। এমন যদি হয় তাহলে কেমন লাগবে আপনার নিকট? কিন্তু দুনিয়াতেতো এমন হবে না। অথচ জান্নাতে সুন্দর সুন্দর পাখি উড়ে যাবে আর আপনি সেখান থেকে কোন পাখি খেতে চাইলে তা সাথে সাথে খেতে পারবেন। মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَ لَحۡمِ طَیۡرٍ مِّمَّا یَشۡتَہُوۡنَ ﴿ؕ۲۱﴾
আর তাদের পছন্দমত পাখীর গোশত নিয়ে।( সুরা ওয়াকিয়া ২১)
সেখানে আপনি পছন্দ মত পাখীর গোশত খেতে পারবেন৷ হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কাউসার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, এটা এমন এক নাহর যা আমাকে আল্লাহ্ জান্নাতে দান করেছেন। যার মাটি মিসকের, যার পানি দুধের চেয়েও সাদা, আর যা মধু থেকেও সুমিষ্ট। সেখানে এমন এমন উঁচু ঘাড়বিশিষ্ট পাখিসমূহ পড়বে যেগুলো দেখতে উটের ঘাড়ের মত। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এগুলো তো অত্যন্ত আকর্ষণীয় হবে। তিনি বললেন, যারা সেগুলো খাবে তারা তাদের থেকেও আকর্ষণীয়।” [মুসনাদে আহমাদ; ৩/২৩৬, তিরমিযী: ২৫৪২, আল-মুখতারাহ: ২২৫৮]
দুনিয়াতে অনেক কোটিপতিও যা ইচ্ছে খেতে পারে না। বিভিন্ন বিধি নিষেধ মানতে হয়। দেখা যায়, খাবারের অভাব নাই কিন্তু চাহিদা কম বা কোন রোগের কারনে খেতে পারছে না। অথবা কেউ অর্থের অভাবে খেতে পারে না।আবার দেখা যায় সব খাবার সব মৌসুমে পাওয়াও যায় না কিংবা পেলেও সেই খাবারে বিভিন্ন বেজাল মিশ্রিত থাকে কিন্তু জান্নাত আপনি যা খেতে চাইবেন তাই পাবেন। কুরআনে বলা হয়েছেঃ
﴿ وَأَمۡدَدۡنَٰهُم بِفَٰكِهَةٖ وَلَحۡمٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢٢ ﴾ [الطور: ٢٢]
“এবং আমি জান্নাতীদেরকে তাদের ইচ্ছানুযায়ী ফল ও গোশত প্রদান করতে থাকবো।’ (সূরা আত-তূর: ২২
#যদি কোন ব্যবসায়ী তার পন্যের ব্যাপারে নিজেই বলে যে,আমার পন্য ভালো না,আমার পন্য দুই নাম্বার। তাহলে তার পন্য কি কেউ কিনবে? অবশ্যই না,কিনলেও কম দামেই কিনবে। মহান আল্লাহ এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তিনিই বলেছেনঃ
وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ ﴿۱۸۵﴾
আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়(সুরা আলে ইমরান ১৮৫)
এই দুনিয়াতে আপনি যে শরীরের এতো যত্ন নেন , একটা সময় শরীরটা দূর্বল হয়ে যায়, অসুস্থ হয়ে যায়।
কোটি টাকা বা ক্ষমতা দিয়ে নিজের যৌবন ধরে রাখা যায় না। দেখা যায় অনেকের আরামের বিছানা আছে কিন্তু ঘুম নাই, বিলাসবহুল বাড়ি আছে কিন্তু সুখ নেই এটাই দুনিয়া।
কিন্তু হাদিসে জান্নাতের ব্যাপারে বলা হয়েছে। নবিজি বলেন :
ينَادِي مُنَادٍ: إِنَّ لَكُمْ أَنْ تَصِحُوا فَلَا تَسْقَمُوا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَحْبَوا فلا تَمُوتُوا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَشِبُوا فَلَا تَهْرَمُوا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَنْعَمُوا فَلَا تَبْأَسُوا أَبَدًا
“জান্নাতিদের মাঝে একজন ঘোষক ঘোষণা দেবেন, এখন হতে তোমরা সুস্থ থাকবে, কখনো অসুস্থ হবে না; তোমরা জীবিত থাকবে,কখনো মরবে না; তোমরা যুবক থাকবে, কখনো বৃদ্ধ হবে না: তোমরা অফুরন্ত ভোগবিলাসের ভেতর থাকবে, অভাব-অনটন কখনো তোমাদের স্পর্শ করবে না।(সহিহ মুসলিম ২৮৩৭)
আহ দুনিয়ার মোহে পড়ে আমরা এমন জান্নাতকে ভুলে গেলাম যেখানে কোন অসুস্থতা, অভাব অনটন থাকবে না। অথচ দুনিয়া সম্পর্কে রাসূল সাঃ বলেছেনঃ
নবিজি একদিন শপথ করে বলেছেন :
وَاللَّهِ مَا الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا مِثْلُ مَا يَجْعَلُ أَحَدُكُمْ إِصْبَعَهُ هَذِهِ فِي الْيَمِّ، فَلْيَنْظُرْ بِمَ تَرْجِعُ
'আল্লাহর শপথ, দুনিয়া আখিরাতের তুলনায় এতটুকু, যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রের পানিতে তার একটি আঙুল ডুবিয়ে তুলে আনল, সে দেখুক তার আঙুল কতটুকু পানি নিয়ে ফিরেছে।( মুসনাদে আহমাদ,মুসলিম)
আমরা আজ ৬০/৭০ বছরের একটা জীবন নিয়ে সারা দিন কত চিন্তা করি, কত প্লান, পরিকল্পনা করি,।অপরদিকে অনন্তকালের জীবন নিয়ে ১০/১৫ বছরেও পাঁচ মিনিট চিন্তা করার সময় হয় না।
#এই পৃথিবীতে কত মানুষের সন্তান হয় না। আরেকজনের সুন্দর চেহারার সন্তান দেখলে কত আপসোস করে।
আবার দেখা যায় অনেকের সন্তান হলে সেই সন্তান সুন্দর চেহারার হয় না। মানুষ চায় সবসময় তার আশপাশে চোখশীতল কারী ছেলে মেয়ে ঘুরাফেরা করুক। কিন্তু দুনিয়াতে তো এটা সম্ভব নয়। হাদীসে এসেছেঃ
المُؤْمِنُ إِذا اشْتَفى الولد في الجنَّةِ، كَانَ حَملُهُ وَوَضْعُهُ وَلهُ فِي وَاحِدَةٍ كَمَا يَشْتَهِي
'কোনো মুমিন লোক যদি জান্নাতে সন্তানের আকাঙ্ক্ষা করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী গর্ভধারণ করবে এবং সন্তান প্রসব করবে আর সন্তানটি বয়সে হবে উপযুক্ত বয়সের (যুবক)। তার ইচ্ছা অনুযায়ী মুহূর্তের মধ্যেই এসব হয়ে যাবে।( সুনানে তিরমিজি ২৫৬৩)
মহান আল্লাহ বলেনঃ
یَطُوۡفُ عَلَیۡہِمۡ وِلۡدَانٌ مُّخَلَّدُوۡنَ ﴿ۙ۱۷﴾
তাদের সেবায় ঘোরাফেরা করবে চির কিশোররা।( সুরা ওয়াকিয়া ১৭)
আরও বলা হয়েছে, “তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে চিরকিশোরগণ, যখন আপনি তাদেরকে দেখবেন তখন মনে করবেন তারা যেন বিক্ষিপ্ত মুক্তা।” [সূরা আল-ইনসান: ১৯]
সেই দৃশ্য কেমন হবে যখন আপনার চারদিকে সুন্দর সুন্দর কিশোরেরা ঘুরাফেরা করবে?
# এই পৃথিবীতে এমন ব্যক্তি নেই যাদের ভিতর কোন ভয় বা দুশ্চিন্তা নেই। যার টাকা পয়সা আছে তার এগুলো হারানোর ভয় থাকে, যার ক্ষমতা আছে তার ক্ষমতা হারানোর ভয় ও দুশ্চিন্তা থাকে, যার সন্তান আছে তার সন্তান নিয়ে ভয় বা দুশ্চিন্তা থাকে। অথচ সকলেই চায় ভয় ও দুশ্চিন্তাহীন একটি জীবন।বাস্তবতা হলো এমন জীবনতো দুনিয়াতে কেউই পায় না।অথচ জান্নাতিদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ বলেনঃ
আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَهُمْ مِنْ فَزَع يَوْمَئِذٍ آمِنُونَ
'সেদিন তারা ভীতি-শঙ্কা থেকে নিরাপদ থাকবে।(সুরা আন-নামল, ২৭ : ৮৯।)
আল্লাহ তাআলা জান্নাতিদের ব্যাপারে আরও বলেন :
وَقَالُوا الحَمْدُ لِلهِ الَّذِي أَذهَبْ عَنَّا الحزن
“আর তারা বলবে, “যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ- কষ্ট দূর করে দিয়েছেন।( সুরা ফাতির ৩৫ঃ৩৪)
প্রত্যেক মানুষ চায় ভয় দুশ্চিন্তা হীন একটি জীবন, যা একমাত্র জান্নাতেই পাবে।ভেবে দেখুন যে জীবনে কোন ভয় নেই, কোন দুশ্চিন্তা নেই সেই জীবন কত মধুর, কত আনন্দের। সেই জীবন যে লাভ করবে না সেই প্রকৃত হতভাগা।
#এই পৃথিবীতে সবারই মন চায় কিছু চাষাবাদ করার।কেউ পেশা হিসেবে চাষাবাদ করে আর কেউ অনেক সম্পদের মালিক হওয়ার পরেও শখের বশে বিভিন্ন চাষাবাদ করে। চাষাবাদ করার পর যখন ভালো ফলন পায় তখন খুব আনন্দ লাগে,তাকিয়ে থাকতে মন চায়৷ কিন্তু কেউ জমির অভাবে শখ করে চাষাবাদ করতে পারে না। আবার কেউ করলেও আশানুরূপ ফল পায় না। অপরদিকে জান্নাতে কেউ যদি চাষবাদ করতে চায় মহান আল্লাহ তাকে সেই আনন্দ লাভের সুযোগ করে দিবেন। হাদীসে এসেছে
নবিজি -এর এই বাণী :
أَنَّ رَجُلًا مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ اسْتَأْذَنَ رَبَّهُ فِي الزَّرْعِ، فَقَالَ لَهُ: أَلَسْتَ فِيمَا شِئْتَ؟ قَالَ: بَلَ، وَلَكِنِّي أُحِبُّ أَنْ أَزْرَعَ، قَالَ: فَبَدْرَ، فَبَادَرَ الطَّرْفَ نَبَاتُهُ وَاسْتِوَاؤُهُ وَاسْتِحْصَادُهُ، فَكَانَ أَمْثَالَ الجِبَالِ فَيَقُولُ اللهُ: دُونَكَ يَا ابْنَ آدَمَ، فَإِنَّهُ لَا
يُشْبِعُكَ شَيْءٌ
‘জান্নাতবাসীদের কোনো একজন তার রবের কাছে চাষাবাদের অনুমতি চাইবে। তখন আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেন, “তুমি কি যা চাও, তা পাচ্ছ না?” সে বলবে, “হ্যাঁ, নিশ্চয় পাচ্ছি; কিন্তু আমার চাষ করার খুবই শখ।” নবিজি বললেন, “তখন সে বীজ বুনবে এবং তা চারা হওয়া, গাছ বড় হওয়া ও ফসল কাটা সবকিছু পলকের মধ্যে হয়ে যাবে। আর তা (ফসল) পাহাড় সমান হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ বলবেন, “হে আদম-সন্তান, এগুলো নিয়ে নাও। কোনো কিছুই তোমাকে তৃপ্ত করে না। (সহিহ বুখারী, মুসনাদে আহমাদ)
মনে করুন, আপনি কাহারো খুব সুন্দর আঙ্গুর ফলের বাগানে প্রবেশ করলেন, আপনার মন জুড়িয়ে গেলো। আপনি যখন তার কাছে বাগানটির প্রশংসা করলেন সাথে সাথে সে বললো বাগানটি এখন তোমার। কেমন লাগবে তখন আপনার নিকট? এবার চিন্তুা করুন জান্নাতের চাষাবাদ তো দুনিয়ার চাষাবাদের চেয়ে কৌটি কোটি গুন সুন্দর যা কল্পনাও করা যায় না। মহান আল্লাহ যখন সেই সুন্দর, নয়নাবিরাম চাষাবাদ করার আনন্দ ভোগ করতে দিবেন তখন কেমন লাগবে!
# আপনি কোন সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে গেলেন, কিন্তু সেই সৈকতে পানি নেই।সেই সৈকতে আছে স্বচ্ছ ধবধবে সাদা দুধ। ভেবে দেখুন কেমন লাগবে সেই দৃশ্য, কতটা মনোরম হবে? কেউ সেখান থেকে আসতে চাইবে? দুধ এমন এক খাদ্য যা খেলে অন্য কোন খাবার না খেয়েই দিনের পর দিন বাঁচতে পারে৷ কিন্তু দুনিয়াতে এমন দুধের নদীতো কোথাও পাওয়া যাবে না। দুনিয়াতে মানুষ একটু খাঁটি মধু খেতে পারে না।অথচ সবাই একটু খাঁটি মধু খেতে কত আগ্রহী। এরপর দুনিয়াতেতো মদ হারাম, আর যারা খায় তারাও সবসময় খেতে পারে না, আর সেই মদ খেলেও মাথা ঘুরায়, হুশ জ্ঞান হারায়।
কিন্তু জান্নাতে থাকবে দুধ, মধু, ও সরাবের নদী।মহান আল্লাহ বলেন,
مَّثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ ۖ فِيهَا أَنْهَارٌ مِّن مَّاءٍ غَيْرِ آسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِّن لَّبَنٍ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى ۖ وَلَهُمْ فِيهَا مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِّن رَّبِّهِمْ
অর্থাৎ, সাবধানীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হলঃ ওতে আছে নির্মল পানির নদীমালা, আছে দুধের নদীমালা যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নদীমালা, আছে পরিশোধিত মধুর নদীমালা। আর সেখানে তাদের জন্য আছে বিবিধ ফলমূল ও তাদের প্রতিপালকের ক্ষমা। সাবধানীরা কি তাদের মত, যারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে এবং যাদেরকে পান করতে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি; যা তাদের নাড়ীভুড়ি ছিন্ন-ভিন্ন করে দেবে? (মুহাম্মাদঃ ১৫)।
আমরা আজ এমন জান্নাতকে ভুলে গেলাম যেখানে দুনিয়ার মত অল্প অল্প দুধ বা মদ, মধু থাকবে না। বরং থাকবে দুধের নদী, মদের নদী, মধুর নদী। তাও সেই দুধ, মধু স্বাদ দুনিয়ার মত নয়। সেটার স্বাদ, রং এমন, যা কল্পনাও করা যায় না। আপনি সেখানে যত ইচ্ছে খেতে পারবেন।কতই না সুন্দর হবে সেই সাদা দুধের নহর, মধুর নহর।
প্রিয় পাঠক, আজ আমরা যে দুনিয়ার পাগল সেই দুনিয়ায় এমন অনেক মানুষ বসবাস করেছে যারা পশু পাখির পায়খানায় পরিনত হয়েছে। এমন অনেক গোরস্থান আছে যেখানে কবর দেওয়ার পর রাতের বেলা সেই কবর খুড়ে শরীরের মাংস রক্ত খেয়ে রাস্তার এক পাশে পায়খানা করে চলে যায়। কত মানুষ মারা যাওয়ার পর শকুনের খাদ্যে পরিনত হয়। শকুন মানুষকে খেয়ে তাও পায়খানা করে।
যেই মানুষটা হাটত, চলতো, কথাবার্তা বলতো সেই মানুষটাই আজ প্রানীর খাদ্যে পরিনত হলো।
আমাদের সামনে এমন অনেক বয়স্ক মানুষ আছে যাদের এক সময় কত শক্তি কত চাহিদা ছিলো, কিন্তু আজ তাদের একটাই চাহিদা, তা হলো শরীরটা যেন একটু সুস্থ থাকে, আশপাশের মানুষ যেন একটু মুল্যায়ন করে। আর এটাই হলো দুনিয়ার বাস্তবতা।দুনিয়া হলো এক ধুসর মরীচিকা। মরুভুমিতে পিপাসিত মানুষ হাঁটতে হাঁটতে এক পর্যায়ে অনেক দূরে পানি দেখতে পায়, কিন্তু কাছে গিয়ে দেখে সেটা পানি নয় বরং মরীচিকা । যারা দুনিয়ার পাগল তাদের অবস্থা ও এমন। তারা মনে করে ক্ষমতা পেলে,বা কয়েক কোটি টাকার মালিক হলে, খুব সুন্দর বাড়ি হলে হয়ত অনেক সুখে থাকবে অথচ সুখ আর বাড়ে না। বরং সে হয়ে যায় তার সম্পদ, ক্ষমতার পাহারাদার। আর এভাবেই একদিন সে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়। তার কষ্টের বাড়ি, গাড়ি দিয়ে অন্যরা সুখ করে। অথচ পরকালের জীবনই আসল জীবন। মহান আল্লাহ বলেনঃ
بَلۡ تُؤۡثِرُوۡنَ الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا ﴿۫ۖ۱۶﴾ وَ الۡاٰخِرَۃُ خَیۡرٌ وَّ اَبۡقٰی ﴿ؕ۱۷﴾
বরং তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে থাক।অথচ পরকালের জীবনই উত্তম ও চিরস্থায়ী। ( সুরা আলা ১৬ -১৭)
যিনি সকলের জ্ঞানদাতা তিনিই বলতেছেন পরকালের জীবনই উত্তম।আপসোস আমরা তবুও দুনিয়ার মোহে রবকে ভুলে যাই। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।
★জান্নাত পেতে হলে করনীয়।
জান্নাত যাওয়ার প্রথম শর্ত হলো ইমান।যার ইমান নেই সে কখনও জান্নাতে যাবে না। সে থাকবে চিরকাল জাহান্নামে। অনেকেই নিজেকে মুমিন দাবি করে অথচ
তাদের ইমান নেই। কবেই তাদের ইমান চলে গেছে তারা জানে না। আজ অধিকাংশ মানুষ ইমান ভঙ্গের কারন জানে না, কালের শর্ত ও রোকন জানে না।
তাগুত সম্পর্কে জানে না, তাগুত কত প্রকার ও কি কি তাও একজন ব্যক্তি জানে না অথচ একজন ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করা ব্যতিত মুমিনই হতে পারবে না৷ মহান আল্লাহ বলেনঃ
فَمَنۡ یَّکۡفُرۡ بِالطَّاغُوۡتِ وَ یُؤۡمِنۡۢ بِاللّٰہِ فَقَدِ اسۡتَمۡسَکَ بِالۡعُرۡوَۃِ الۡوُثۡقٰی ٭ لَا انۡفِصَامَ لَہَا ؕ وَ اللّٰہُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۲۵۶﴾
সুতরাং যে তাগূতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহকে বিশ্বাস করবে, নিশ্চয় সে এমন এক শক্ত হাতল ধরবে, যা কখনো ভাঙ্গার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।( সুরা বাকারা ২৫৬)
ইমান সম্পর্কে জানা ফরয, শিরক কুফর সম্পর্কে জানা ফরয অথচ কয়জন ব্যক্তি এ সম্পর্কে জানতে চায়? শিরক কত প্রকার, কুফর কাকে ইত্যাদি সম্পর্কে কয় জনে জানে?
জান্নাতে যাওয়ার দ্বিতীয় শর্ত হলো আমলে সলেহ তথা নেক আমল। আমলে সলেহ সম্পর্কে অনেক বয়ান ও বই আছে আশা করি একজন পাঠক জেনে নিবেন ইনশাআল্লাহ ।
★জাহান্নামের আযাবের সংক্ষিপ্ত বর্ননা।
যদি আপনার ইবাদাতে অলসতা কিংবা গুনাহ ছাড়তে কষ্ট হয় তাহলে আগুনের কাছে গিয়ে একটু চিন্তা করুন।আপনি কোন কামারের দোকানের পাশে গিয়ে একটু গভীর ভাবে চিন্তা করুন। কামার যখন আগুনের মধ্যে শক্ত লোহা দেয় তখন আগুন সেই শক্ত লোহাকেও নরম করে দেয়, এমনকি আগুনের উত্তাপ অনেক সময় লোহাও গলে যায়। এমন আগুনের কিছু কয়লা যদি আপনার শরীরে ছিটিয়ে দেয় তখন কেমন লাগবে? দুনিয়ার এই সামান্য আগুনে দুই / তিন সেকেন্ড একটি আঙ্গুল রাখা যায় না অথচ জাহান্নামের আগুন কত কঠিন, কত ভয়াবহ সেই আগুনে কিভাবে জ্বলবেন?
হাসপাতালে যত রোগী আছে তার মধ্যে কোন রোগী বেশি চিৎকার, হাহাকার করে? যে রোগী আগুনে পূড়ে গেছে সেই রোগীই সবচেয়ে বেশি চিৎকার করে। অথচ দুনিয়ার আগুনের চেয়ে জাহান্নামের আগুনের তাপ অনেক অনেক বেশি।
হাদিসে এসেছেঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” نَارُكُمْ هَذِهِ الَّتِي يُوقِدُ بَنُو آدَمَ جُزْءٌ وَاحِدٌ مِنْ سَبْعِينَ جُزءًا مِنْ حَرِّ جَهَنَّمَ ” . قَالُوا وَاللَّهِ إِنْ كَانَتْ لَكَافِيَةً يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ ” فَإِنَّهَا فُضِّلَتْ بِتِسْعَةٍ وَسِتِّينَ جُزْءًا كُلُّهُنَّ مِثْلُ حَرِّهَا ” . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . .
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের এই আগুন যা তোমরা প্রজ্বলিত কর তা জাহান্নামের আগুনের উত্তাপের সত্তর ভাগের এক ভাগ। সাহাবীগন বলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহ্র কসম! এ আগুনই তো জাহান্নামীদের আযাবের জন্য যথেষ্ট ছিল। তিনি বললেনঃ এটাকে ঊনসত্তর গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং প্রতিটি অংশের উত্তাপ এর সমান হবে।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৮৯)
জাহান্নামের আযাব কত কঠিন হবে চিন্তা করুন।এই দুনিয়ার আগুনেই লোহা গলে যায় অথচ এই চামড়ার শরীরে কি অবস্থা হবে!তাও জাহান্নামের আযাব হবে দুনিয়ার আগুনের চেয়ে সত্তরগুন।
দুনিয়াতে সন্তানের জন্য মা বাবা আগুনে ঝাপ দিতে পারে। কিন্তু জাহান্নামের ব্যাপারে কুরআনে এসেছেঃ
وَ لَا یَسۡـَٔلُ حَمِیۡمٌ حَمِیۡمًا ﴿ۚۖ۱۰﴾ یُّبَصَّرُوۡنَہُمۡ ؕ یَوَدُّ الۡمُجۡرِمُ لَوۡ یَفۡتَدِیۡ مِنۡ عَذَابِ یَوۡمِئِذٍۭ بِبَنِیۡہِ ﴿ۙ۱۱﴾وَ صَاحِبَتِہٖ وَ اَخِیۡہِ ﴿ۙ۱۲﴾ وَ فَصِیۡلَتِہِ الَّتِیۡ تُــٔۡوِیۡہِ ﴿ۙ۱۳﴾ وَ مَنۡ فِی الۡاَرۡضِ جَمِیۡعًا ۙ ثُمَّ یُنۡجِیۡہِ ﴿ۙ۱۴﴾
আর সুহৃদ সুহৃদের খবর নেবে না।যদিও তাদেরকে একে অপরের দৃষ্টির সামনে রাখা হবে। অপরাধী সেই দিনে শাস্তির বদলে দিতে চাইবে নিজ সন্তান-সন্ততিকে।
তার স্ত্রী ও ভাইকে।তার জ্ঞাতি-গোষ্ঠীকে, যারা তাকে আশ্রয় দিত।এবং পৃথিবীর সকলকে, যাতে এই মুক্তিপণ তাকে মুক্তি দেয়।( সুরা মাআরিজ ১০-১৪)
জাহান্নামের আযাব এতোটা ভয়াবহ হবে যে,একজন জাহান্নামি তার মা বাবা, ভাই বোন, স্ত্রী এমনকি গোটা দুনিয়ার বিনিময় হলেও এই আযাব থেকে মুক্তি পেতে চাইবে।
মহানবী (ﷺ) বলেন, “জাহান্নামের সবচেয়ে কম আযাবের একটি লোককে আল্লাহ তাবারাকা অতাআলা জিজ্ঞাসা করবেন, তোমার যদি দুনিয়া ও তন্মধ্যস্থিত সব কিছু হতো, তাহলে মুক্তিপণ হিসাবে তা দিয়ে কি মুক্তি নিতে?” সে বলবে, হ্যাঁ। আল্লাহ বলবেন, তুমি যখন আদমের পিঠে ছিলে, তখন আমি তোমার নিকট থেকে এর চাইতে সহজ জিনিস চেয়েছিলাম যে, তুমি শির্ক করো না, তোমাকে জাহান্নামে দেব না। কিন্তু তুমি শির্কই করেছ। (বুখারী, মুসলিম)।
আজ সামান্য বাড়ি, গাড়ি , পরিবার পরিজনের জন্য আপনি আল্লাহকে ভুলে যান। আজ কত যুবক সামান্য একটা মেয়ের ফেতনায় পড়ে ইমান বিসর্জন দিচ্ছে। অথচ জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য সব কিছু দিতে চাইবে। এত ভয়াবহ হবে সেই আযাব।
সেই আযাব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেনঃ
کَلَّا ؕ اِنَّہَا لَظٰی ﴿ۙ۱۵﴾ نَزَّاعَۃً لِّلشَّوٰی ﴿ۚۖ۱۶﴾
না, কখনই নয়! এটা তো লেলিহান অগ্নি।
যা দেহ হতে চামড়া খসিয়ে দেবে।( সুরা মাআরিজ ১৫-১৬)
জাহান্নাম এতটাই ভয়াবহ হবে যে,পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষটিকে শুধু একবার জাহান্নামে চুবানি দেওয়া হলে সে সব সুখের কথা ভুলে যাবে।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্য হতে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী ও বিলাসী ছিল। অতঃপর তাকে জাহান্নামে একবার (মাত্র) চুবানো হবে, তারপর তাকে বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো ভাল জিনিস দেখেছ? তোমার নিকটে কি কখনো সুখ-সামগ্রী এসেছে? সে বলবে, না। আল্লাহর কসম! হে প্রভু! আর জান্নাতীদের মধ্য হতে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়ার সবচেয়ে দুঃখী ও অভাবী ছিল। তাকে জান্নাতে (মাত্র একবার) চুবানোর পর বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি (দুনিয়াতে) কখনো কষ্ট দেখছ? তোমার উপরে কি কখনো বিপদ গেছে?” সে বলবে, না। আল্লাহর কসম! আমার উপর কোনদিন কষ্ট আসেনি এবং আমি কখনো কোন বিপদও দেখিনি।” (মুসলিম)
মনে করুন আপনি প্রচন্ড শীতে গভীর রাতে বেলা কোন নদীর মাঝখানে লঞ্চ থেকে যদি পড়ে যান, এবং লঞ্চ যদি আপনার থেকে দূরে চলে যায় তখন এই পানির মধ্যে আপনার অবস্থা কেমন হবে? চারদিকে পানি আর পানি, উপরন্তু আরো শীতে ও গভীর রাত। কত কঠিন হবে সেই পরিস্থিতি।
এবার চিন্তা করুন,যে ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে সেখানে চারদিকে থাকবে আগুন আর আগুন। ডানে বামে শুধুই আগুন। পালিয়ে যাবার কোন উপায় নেই। শুধু যে আগুন তা নয়,জাহান্নাম খুবই অন্ধকার।
হাদিসে এসেছেঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ أُوقِدَ عَلَى النَّارِ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى احْمَرَّتْ ثُمَّ أُوقِدَ عَلَيْهَا أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى ابْيَضَّتْ ثُمَّ أُوقِدَ عَلَيْهَا أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى اسْوَدَّتْ فَهِيَ سَوْدَاءُ مُظْلِمَةٌ ” .
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জাহান্নামের আগুন এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা লাল বর্ণ ধারণ করে। আবার এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা সাদা রং ধারণ করে। আবার এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা কালো বর্ণ হয়ে যায়। সুতরাং তা এখন ঘোর কালো বর্ণে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৯১)
কত কঠিন হবে সেই জাহান্নাম যেখানে চারদিকে আগুন এবং অন্ধকার।
দুনিয়াতে একজন মানুষ অনেক কষ্ট থাকলেও একটা সময় জ্ঞান হারায় বা ঘুম চলে আসে। কিন্তু জাহান্নামে অনবরত জ্বলতেই থাকবে। সেখান থেকে পালাবার কোন উপায় নেই। কারন জাহান্নাম এমন এক জায়গা যেখানে একটি পাথর পড়তেই বছরের পর বছর লেগে যায়। হাদিসে এসেছেঃ
عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ إِنَّ الصَّخْرَةَ الْعَظِيمَةَ لَتُلْقَى مِنْ شَفِيرِ جَهَنَّمَ فَتَهْوِي فِيهَا سَبْعِينَ عَامًا وَمَا تُفْضِي إِلَى قَرَارِهَا ” . قَالَ وَكَانَ عُمَرُ يَقُولُ أَكْثِرُوا ذِكْرَ النَّارِ فَإِنَّ حَرَّهَا شَدِيدٌ وَإِنَّ قَعْرَهَا بَعِيدٌ وَإِنَّ مَقَامِعَهَا حَدِيدٌ .
হাসান বাসরী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:‘উত্বাহ ইবনু গাযওয়ান (রাঃ) আমাদের এই বসরার মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নামের এক প্রান্ত হতে বড় একটি পাথরকে গড়িয়ে ছেড়ে দেয়া হলে এটা সত্তর বছর পর্যন্ত গড়াতেই থাকবে তবু স্থির হবার জায়গায় আসতে পারবে না।
(সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৬১২)
জাহান্নাম কত গভীর। দুনিয়াতে সত্তর বা আশি বছরের একটা জীবনকে কত দীর্ঘ মনে হয়। অথচ জাহান্নামে একটা পাথর পড়তে সত্তর বছর লাগবে তবুও স্থির হবে না।
এতো গভীর জাহান্নামে পড়ার পর পালাবার আর কোন জায়গা পাবে না।
হাদিসে এসেছেঃ
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ الصَّعُودُ جَبَلٌ مِنْ نَارٍ يُتَصَعَّدُ فِيهِ الْكَافِرُ سَبْعِينَ خَرِيفًا وَيَهْوِي فِيهِ كَذَلِكَ مِنْهُ أَبَدًا
আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জাহান্নামের মধ্যে ‘সাঊদ’ নামে আগুনের একটি পাহাড় আছে। কাফিরগণ সত্তর বছরে এর উপর উঠবে এবং সত্তর বছরে গড়িয়ে পড়বে। তারা তাতে অনন্তকাল ধরে উঠবে ও নামবে।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৭৬)
প্রয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي قَوْلِهِ: (كَالْمُهْلِ ) قَالَ “ كَعَكَرِ الزَّيْتِ فَإِذَا قَرَّبَهُ إِلَى وَجْهِهِ سَقَطَتْ فَرْوَةُ وَجْهِهِ فِيهِ .
আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা’আলার বাণী “কাল-মুহলি” (তা যেন গলিত তামা)-এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ তা হল তেলের গাদ সদৃশ। জাহান্নামীদের মধ্যে কোন জাহান্নামী যখনই এটা তার মুখের নিকটে নিবে সাথে সাথে তার মুখমন্ডলের চামড়া খসে তাতে পড়ে যাবে।
(সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং ২৫৮১)
দুনিয়াতে প্রচন্ড শীতেও গরম পানি খেয়ে মানুষ স্বাদ পায় না। অথচ জাহান্নামে এমন পানি দেওয়া হবে যা খাওয়ার আগেই মুখ পুড়ে যাবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ إِنَّ الْحَمِيمَ لَيُصَبُّ عَلَى رُءُوسِهِمْ فَيَنْفُذُ الْحَمِيمُ حَتَّى يَخْلُصَ إِلَى جَوْفِهِ فَيَسْلِتَ مَا فِي جَوْفِهِ حَتَّى يَمْرُقَ مِنْ قَدَمَيْهِ وَهُوَ الصَّهْرُ ثُمَّ يُعَادُ كَمَا كَانَ.
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জাহান্নামীদের মাথায় গরম পানীয় ঢালা হবে, এমনকি তা পেট পর্যন্ত পৌঁছবে এবং পেটের সব নাড়িভুঁড়ি গলিয়ে দিবে, তারপর তা পায়ের দিক দিয়ে বেরিয়ে পড়বে। এটাই হল ‘সাহর’ (গলে যাওয়া)। আবার তা পূর্বের ন্যায় হয়ে যাবে (এবং এমনিভাবে শাস্তির প্রক্রিয়া চলতে থাকবে)
(সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং ২৫৮২)
প্রিয় পাঠক, এই দুনিয়ায় একটানা একদিন বা দুই দিন মানুষ দাড়িয়ে থাকতে পারে না। অথচ হাশরের মাঠে ৫০ হাজার বছর দাড়িয়ে থাকা লাগবে। সেই দিন এতটাইই ভয়াবহ হবে যে,সবাই উলঙ্গ অবস্থায় উঠবে কিন্তু কেউ কাহারো দিকে তাকাবে না।
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন: কেয়ামতের দিন মানুষ ঘর্মক্ত হবে। এমনকি যমীনের সত্তর হাত ঘামে ডুবে যাবে। তাদের ঘামে তারা কান পর্যন্ত ডুবে যাবে। (বুখারী ও মুসলিম)
মহান আল্লাহ আমাদের জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
ভুমিকাঃ আমরা হলাম মুসাফির, আমাদের আসল বাড়ি জান্নাত।অথচ আমরা আমাদের আসল বাড়ির কথা ভুলে গেছি। আমরা জান্নাত জাহান্নাম সম্পর্কে পড়ি না, পড়লেও জীবনে একবার পড়া যথেষ্ট মনে করি অথচ জান্নাত জাহান্নাম সম্পর্কে সর্বদা জানা থাকতে হয়। মানুষ তার বাড়ি ঘর সম্পর্কে যতটা জানে তার চেয়ে বেশি জানা থাকতে হয়।আর আমরা জানলেও তা নিয়ে কোন গভীর চিন্তা করি না। নিম্নের লিখাটি আসা করি আমাদের কিছুটা হলেও বিবেককে নাড়া দিবে ইনশাআল্লাহ।
জান্নাত ও দুনিয়ার বাস্তবতাঃ
# এই পৃথিবীতে একজন মানুষ যতই তার আনন্দদায়ক কাজে মগ্ন থাকে, হঠাৎ করে যদি তাকে কোন মশা কামড় দেয় বা সুঁই দিয়ে আঘাত করা হয় সাথে সাথে তার মনোযোগ ওই আঘাতপ্রাপ্ত জায়গার দিকে চলে যাবে। অথচ মিশরের সুন্দরী নারীরা যখন হযরত ইউসুফ আঃ কে দেখেছিলো তখন ফল কাঁটতে গিয়ে তারা হাত কেঁটে ফেলেছিলো। কিন্তু তারা মালুম করতে পারে নি। কত সুন্দর ছিলেন ইউসুফ (আঃ)।
আর ইউসুফ আঃ কে যে মহান রব সৃষ্টি করলেন সেই আল্লাহ তা'য়ালা কত সুন্দর সুবহানাল্লাহ। যারা জান্নাতে যাবে তারাই মহান রবকে দেখতে পাবে, কত আনন্দদায়ক হবে, কত সুখের হবে সেই দেখা।
রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেনঃ
إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ قَالَ : يَقُولُ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالٰى تُرِيدُونَ شَيْئًا أَزِيدُكُمْ؟ فَيَقُولُونَ أَلَمْ تُبَيِّضْ وُجُوهَنَا أَلَمْ تُدْخِلْنَا الْجَنَّةَ وَتُنَجِّنَا مِنَ النَّارِ؟ قَالَ : فَيَكْشِفُ الْحِجَابَ، فَمَا أُعْطُوا شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلٰى رَبِّهِمْ عَزَّ وَجَلَّ ثُمَّ تَلاَ : لِلَّذِينَ أَحْسَنُوا الْحُسْنٰى وَزِيَادَةٌ-
‘জান্নাতবাসীরা জান্নাতে প্রবেশের পর আল্লাহ তাদের জিজ্ঞেস করবেন, তোমরা কি অতিরিক্ত আরও কিছু চাও? তারা বলবে, আপনি কি আমাদের চেহারা উজ্জ্বল করেননি? আপনি কি আমাদের জান্নাতে প্রবেশ করাননি এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেননি? রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, অতঃপর আল্লাহ স্বীয় পর্দা উন্মোচন করবেন। তখন তাঁকে দেখার চাইতে প্রিয়তর কোন বস্ত্ত আর থাকবে না’। আর এটিই হ’ল ‘অতিরিক্ত’। অতঃপর তিনি পাঠ করলেন,لِلَّذِيْنَ أَحْسَنُوا الْحُسْنٰى وَزِيَادَةٌ، ‘যারা সৎকাজ করে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত ও আরও কিছু অতিরিক্ত অর্থাৎ আল্লাহর দর্শন লাভ’ (ইউনুস ১০/২৬)।(মুসলিম,মিশকাত)
হযরত জাবের (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে এসেছে, ‘আল্লাহ সেদিন উজ্জ্বল চেহারায় হাসতে হাসতে মুমিনদের সাক্ষাৎ দিবেন...(মুসলিম হা/১৯১)
আজকে যদি আপনি প্রিয় নবী (সাঃ) কে স্বপ্নে দেখেন এবং যদি স্বপ্নে দেখেন তিনি হাসছেন তখন আপনার নিকট কেমন লাগবে?এই একটি স্বপ্ন সারাটি জীবন আপনাকে কত আনন্দিত করবে। কিন্তু যখন জান্নাতিরা সবকিছুর মালিক মহান আল্লাহ কে দেখবেন, যখন তিনি হাসবেন তখন জান্নাতিদের জন্য কত আনন্দের হবে, কত সুখের হবে যা কোন মানুষ চিন্তাও করতে পারে না। জান্নাতের সবচেয়ে বড় নেয়ামতই হবে মহান রবের দর্শন লাভ করা।
#এই পৃথিবীতে অধিকাংশ মানুষ সবদিক থেকে সুখী হতে চায়। সুন্দর বাড়ি, দামী গাড়ি, সুন্দরী নারী, সুস্বাস্থ্য, সুন্দর চেহারা, চোখশীতল কারী সন্তান,ক্ষমতা,জায়গাজমি সহ সুখী হওয়ার সব উপকরন কামনা করে। কিন্তু বাস্তবতা হলো এটাতো সব দিক থেকে সুখী হওয়ার জায়গা নয় ।একজন ব্যক্তি যদি সব দিক থেকে সুখী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে সারা জীবন কষ্ট করে তাহলে সে শুধু কষ্টই করবে কিন্তু সব দিক থেকে সুখী হতে পারবে না।যা চাইতে তাহা পাবে না।সব দিক থেকে সুখী হওয়ার জায়গা হলো একমাত্র জান্নাত।যেখানে সব দিক থেকে একজন ব্যক্তি সুখী হতে পারবে। আপসোসের বিষয় হলো যে ব্যক্তি সবদিক থেকে সুখী হতে চায় সে যদি জান্নাতে না যায় তাহলে তার সারাজীবনের স্বপ্ন কখনই আর বাস্তবায়ন হবে না, সব স্বপ্ন নিয়ে সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে।
অপরদিকে যে ব্যক্তি জান্নাতে যাবে তার চাওয়া তো পুরন হবেই, বরং তার চেয়ে বহু গুন পাবে যা কল্পনাও করা যায় না।হাদীসে এসেছে,
আব্দুল্লাহ ইব্ন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আমি অবশ্যই চিনি জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভকারী সর্বশেষ জাহান্নামী ও জান্নাতে প্রবেশকারী সর্বশেষ জান্নাতিকেঃ জনৈক ব্যক্তি হামাগুড়ি দিয়ে জাহান্নাম থেকে বের হবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ কর, সে জান্নাতে আসবে, তাকে ধারণা দেয়া হবে জান্নাত পূর্ণ। সে ফিরে এসে বলবেঃ হে আমার রব আমি তা পূর্ণ পেয়েছি, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তাকে বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ কর। তিনি বলেনঃ সে জান্নাতে আসবে তাকে ধারণা দেয়া হবে জান্নাত পূর্ণ। সে ফিরে এসে বলবেঃ হে আমার রব, আমি তা পূর্ণ পেয়েছি। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেনঃ যাও জান্নাতে প্রবেশ কর, তোমার জন্য দুনিয়ার সমান ও তার দশগুণ জান্নাত রয়েছে, -অথবা তোমার জন্য দুনিয়ার দশগুণ জান্নাত রয়েছে,- তিনি বলেনঃ সে বলবেঃ হে আমার রব আপনি আমার সাথে মশকরা করছেন অথবা আমাকে নিয়ে হাসছেন অথচ আপনি বাদশাহ?” তিনি বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে দেখেছি হাসতে, তার মাড়ির দাঁত পর্যন্ত বের হয়েছিল। তিনি বলেনঃ তখন বলা হতঃ এ হচ্ছে মর্যাদার বিবেচনায় সবচেয়ে নিম্ন জান্নাত”। [বুখারি ও মুসলিম]
অন্য হাদিসে আছে, সর্বশেষ জান্নাতিকে চাইতে বলা হবে, তখন সে চাইতে থাকবে। এমনকি মহান আল্লাহ তাকে স্মরন করিয়ে দিবেন, বলবেন এটা চাও, ওটা চাও, যখন সব চাওয়া শেষ হবে তখন তাকে তার সব চাওয়া ও তার দশগুণ দেওয়া হবে।
প্রিয় পাঠক, চিন্তা করে দেখুন এই হলো সর্বশেষ জান্নাতির অবস্থা। যাকে তার সব
চাওয়া ও তার অনুরুপ দশ গুন দেওয়া হবে। এই হলো সর্বশেষ জান্নাতির অবস্থা আর যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে,জাহান্নামে যাওয়া ছাড়াই জান্নাতি হবে তাদেরকে মহান আল্লাহ কত কিছু দিবেন। অথচ আমরা এমন এক দুনিয়ার পাগল যেখানে হাজার চাওয়া, স্বপ্ন থাকে কিন্তু পূরন হয় অল্প কিছুই।মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَشْتَهِيَ أَنفُسُكُمْ وَلَكُمْ فِيهَا مَا تَدْعُونَ ۳۱ نُزُلًا مِّنْ غَفُورٍ رَّحِيم ۳۲ ) [فصلت:
অর্থঃ ‘সেখানে তোমরা যা কিছু চাও এবং যা ইচ্ছে করবে সাথে সাথে তাই হবে। এটা হচ্ছে ক্ষমাশীল ও দয়াবান আল্লাহর তরফ হতে মেহমানদারী।' (সূরা হা-মীম আস-সিজদা: ৩০-৩১)
কল্পনা করুন, আপনি সেখান যা চাচ্ছেন তাই পাচ্ছেন , তখন কেমন লাগবে আপনার নিকট?
#এই পৃথিবীতে আপনি যত সুন্দর দৃশ্য দেখেন, কিংবা যত সুন্দর পুরুষ বা যত সুন্দর নারীই দেখুন না কেন সেটার সাথে জান্নাতের তুলনা করতে পারবেন না।
আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য দেখে মনে মনে এটা ভাবতে পারবে না যে,জান্নাতের দৃশ্য এমন হতে পারে।আপনি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী নারী বা সবচেয়ে সুন্দর পুরুষটি কে দেখে এটা ভাবতে পারবেন না যে, জান্নাতের পুরুষ বা হুর হয়ত এমন হতে পারে কেননা হাদিসে বলা হয়েছেঃ
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
قَالَ اللهُ أَعْدَدْتُ لِعِبَادِى الصَّالِحِيْنَ مَا لاَ عَيْنَ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنَ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ، فَاقْرَءُوْا إِنْ شِئْتُمْ: فَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِىَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ-
‘আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেছেন, আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন সব জিনিস প্রস্ত্তত করেছি, যা কখনও কোন চুক্ষ দেখেনি, কোন কান কখনও শুনেনি এবং মানুষের অন্তঃকরণ যা কখনও কল্পনাও করেনি। তিনি বলেন, (এর সত্যতা প্রমাণে) তোমরা ইচ্ছা করলে এই আয়াতটি তেলাওয়াত করতে পার। অর্থাৎ কেউই জানে না তাদের জন্য নয়ন প্রীতিকর কি লুক্কায়িত রাখা হয়েছে, তাদের কৃতকর্মের পুরস্কার স্বরূপ’।( বুখারী৩২৪৪, মুসলিম)
জান্নাতে মহান রব যা লুকিয়ে রেখেছেন তা কোন চোখ দেখি নি, এমনকি কল্পনাও করতে পারে না।
#আমরা যে দুনিয়া নিয়ে এতো স্বপ্ন দেখি যেই দুনিয়া নিয়ে প্লান পরিকল্পনা করতে গিয়ে আখেরাত নিয়ে ভাবার সময় হয় না সেই দুনিয়া মহান রবের নিকট মাছির ডানার সমতুল্য নয়।হাদিসে এসেছে
عن سهل بن سعد الساعدي ـرضي الله عنه- قَالَ رَسُول اللَّه -صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم-: «لو كانت الدنيا تَعدل عند الله جَناح بَعوضة، ما سَقَى كافراً منها شَرْبَة ماء».
সাহাল ইবন সা‘দ আস-সা‘য়েদী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে মারফূ‘ হিসেবে বর্ণিত, “দুনিয়া যদি আল্লাহর নিকট মাছির ডানার সমান হতো, তাহলে তিনি কোনো কাফেরকে তার এক ঢোক পানিও পান করাতেন না।”
সহীহ - এটি তিরমিযী বর্ণনা করেছেন।
যেই দুনিয়ার জন্য আমরা জান্নাতকে ভুলে গেলাম এবার আমরা সেই জান্নাত নিয়ে একটু জানি।
হাদিসে এসেছেঃ
مَوْضِعُ سَوْط في الجَنَّةِ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا
'জান্নাতের চাবুক পরিমাণ সামান্য জায়গাও দুনিয়া এবং দুনিয়ার মধ্যে যা কিছু আছে, তার চেয়ে উত্তম।( বুখারী,তিরমিজি)
চিন্তা করুন,এই পৃথিবীটা কত বিশাল, কত ধন সম্পদ, কত পাহাড় কত সমুদ্র, কত গাছগাছালি, কত দেশ,এই পৃথিবীর মধ্যে আছে।অথচ জান্নাতের চাবুক পরিমান জায়গা পৃথিবী ও তার মাঝে যা আছে তার চেয়ে উত্তম।
তবুও মানুষ জান্নাতকে ভুলে গিয়ে পৃথিবীতে সামান্য কয়েক বিঘা জমির জন্য সারা জীবন কত কষ্ট করে। রাসূল( সাঃ) বলেনঃ
لَوْ أَنَّ مَا يُقِلُّ ظُفُر مِمَّا فِي الجَنَّةِ بَدَا لَتَزَخْرَفَتْ لَهُ مَا بَيْنَ خَوَافِق السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، وَلَوْ أَنَّ رَجُلاً مِنْ أَهْل الجَنَّةِ اطلَعَ فَبَدَا أَسَاوِرة لطْمَسَ ضَوْءَ الشَّمْسِ كَمَا تَطْمِسُ الشَّمْسُ ضَوْءَ النُّجُومِ
যদি জান্নাতের কোনো জিনিসের এক চিমটি পরিমাণও (পৃথিবীতে) আসতে পারত, তাহলে আসমান-জমিন সকল স্থান আলোকিত ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়ে যেত। কোনো জান্নাতি যদি দুনিয়াতে উঁকি দিত, আর তার হস্তালংকার প্রকাশিত হয়ে পড়ত, তাহলে তা সূর্যের আলোকে নিস্তেজ করে দিত, যেভাবে সূর্যের আলো নক্ষত্রসমূহের আলোকে নিস্তেজ করে দেয়।( মুসনাদে আহমদ১৪৪৯, তিরমিজি)
দিনের বেলা সূর্য উঠলে আকাশের চাঁদ এবং নক্ষত্র মোটেও দেখা যায় না। অথচ এমনকি সারা পৃথিবীর সব বাতি দিনের বেলা প্রখর রোদের সময় কোন মাঠে জ্বালিয়ে দিলে সেই বাতির আলো দেখা যায় না। অথচ সেই সূর্যের আলোকেও নিস্তেজ করে দিবে জান্নাতির হস্তালংকার।একজন জান্নাতির হস্তালংকার যদি এতোটা সুন্দর হয় তাহলে জান্নাতি নারী ও পুরুষরা কত সুন্দর হবে সুবহানাল্লাহ।
ভেবে দেখুন কিসের বিনিময়ে আপনি কি হারাচ্ছেন!
#এই পৃথিবীতে যখন মানুষ বাজার ঘাটে উঠে তখন নিজের চাইতে সুন্দর চেহারার কাউকে দেখলে স্বাভাবিক ভাবে অধিকাংশ মানুষের মনে একটা আকাঙ্ক্ষা জাগে যে,নিজের চেহারাটাও যদি এমন সুন্দর হতো।কিন্তু এটাতো দুনিয়া, যেখানে কোটি টাকা দিয়েও নিজের চেহারা পরিবর্তন করা যায় না।
কিন্তু জান্নাতের বাজারের ব্যাপারে হাদিসে এসেছে রাসূলে কারীম (সা.) বলেন, জান্নাতে এমন একটি বাজার থাকবে, যাতে মানুষের প্রতিকৃতি ব্যতীত কিছুই ক্রয়-বিক্রয় হবে না। যদি কেউ কোনো প্রতিকৃতি পছন্দ করে তৎক্ষণাৎ সে ওই প্রতিকৃতিতে রূপান্তরিত হবে। (তিরমিজি : ২৫৫০)।
চিন্তু করুন, জান্নাতের বাজারে লক্ষ লক্ষ, কোটি কোটি ছবি থাকবে।সেখান থেকে যেটা আপনি পছন্দ করবেন সাথে সাথে আপনার চেহারা ওই রকমই হয়ে যাবে।
দুনিয়াতেতো বাজার ঘাটে উঠলে অনেক সময় নিজের পছন্দের জামা কাপড়ও টাকার অভাবে মানুষ কিনতে পারে না। কিন্তু জান্নাতে যখন নিজের পছন্দের ছবিটির মত আপনার চেহারা হয়ে যাবে তখন কেমন লাগবে আপনার নিকট।
#দুনিয়াতে একজন মানুষ ( হোক নারী কিংবা পুরুষ) যত সুন্দর হোক না কেন আস্তে আস্তে তার সৌন্দর্য কমতে থাকে। একটা পর্যায়ে তার প্রতি মানুষের আর্কষন থাকেই না৷ আপনি যত সুন্দর নারীকেই বিবাহ করুন সেই নারী একটা সময় বুড়ি হয়ে যায়। রুপ কমে যায়। এমন অনেক বুড়ি আছে যারা এক সময় অনেক সুন্দরী ছিলো। কত ছেলে তাদের পাগল ছিলো, একবার দেখলে ভুলে যাওয়া অনেক কঠিন হতো। কিন্তু আজ তাদের চামড়া ভাঁজ হয়ে গেছে, কেউ তাদের দিকে তাকায় না,এমন বহু সুন্দরী নারী পৃথিবীতে ছিলো যারা আজ মাটির সাথে মিশে গেছে, কোথায় তাদের দেহ? কোথায় আজ তাদের রুপ? তারা বহু আগেই কবরে পোকামাকড়ের খাবার হয়ে গেছে। । অথচ জান্নাত কোন মানুষের সৌন্দর্যতো কমবেই না বরং শুধু বাড়তেই থাকবে। হাদীসে এসেছেঃ
আনাস বিন মালিক রাসুল থেকে যে হাদিস বর্ণন করেছেন, তা শুনে দেখুন। রাসুল বলেন :
إن في الجنَّةِ لَسُوفًا، يَأْتُونَهَا كُلَّ جُمعَةٍ، فَتَهُبُّ رِيحُ الشَّمَالِ فَتَحْفُو في وُجُوهِهِمْ وَثِيَابِهِمْ، فَيَزْدَادُونَ حُسْنًا وَجَمَالاً، فَيَرْجِعُونَ إِلَى أَهْلِيهِمْ وَقَدِ ازْدَادُوا حَسَنًا وَجَمَالًا، فَيَقُولُ لَهُمْ أَهْلُوهُمْ وَاللَّهِ لَقَدِ ازْدَدْتُمْ بَعْدَنَا حُسْنًا وَجَمالًا، فَيَقُولُونَ: وَأَنْتُمْ، وَاللَّهِ لَقَدِ ازْدَدْتُمْ بَعْدَنَا حُسْنًا وَجَمَالًا
"জান্নাতে একটি বাজার হবে, যেখানে জান্নাতিগণ প্রত্যেক জুমআবার আসবে। তখন উত্তর দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হবে, যা তাদের চেহারা ও কাপড়ে সুগন্ধি ছড়িয়ে দেবে। ফলে তাদের শোভা- সৌন্দর্য আরও বেড়ে যাবে। অতঃপর তারা রূপ-সৌন্দর্যের বৃদ্ধি নিয়ে তাদের স্ত্রীগণের কাছে ফিরবে। তখন তারা তাদেরকে দেখে বলবে, “আল্লাহর কসম, আমাদের কাছ থেকে যাওয়ার পর আপনাদের রূপ-সৌন্দর্য বেড়ে গেছে।” তারাও বলে উঠবে, “আল্লাহর শপথ, আমাদের যাওয়ার পর তোমাদেরও রূপ-সৌন্দর্য বেড়ে গেছে।( সহিহ বুখারী ২৮৩৩)
চিন্তা করুন জান্নাতে একবার প্রবেশ করলে আর বের হবে না৷ অন্ততকাল সেখানে থাকবে, কত কোটি কোটি জুমারদিন সেখানে পাবে যার কোন হিসেব নাই। আর প্রতি জুমাবারে সৌন্দর্য শুধু বাড়তেই থাকবে। আপনার জান্নাতির স্ত্রীর সৌন্দর্য শুধু বাড়তেই থাকবে।
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন
«وَلَوْ أَنَّ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِ الجَنَّةِ اطَّلَعَتْ إِلَى أَهْلِ الأَرْضِ لَأَضَاءَتْ مَا بَيْنَهُمَا، وَلَمَلَأَتْهُ رِيحًا، وَلَنَصِيفُهَا عَلَى رَأْسِهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا»
‘জান্নাতীগণের স্ত্রীদের মধ্যে থেকে কোনো একজন স্ত্রী যদি পৃথিবীর দিকে উঁকি মেরো দেখতো তবে আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী সবকিছু আলোকিত হয়ে যেতো এবং গোটা পৃথিবী সুগন্ধে ভরে যেতো। তার মাথার উড়নাটিও পৃথিবী এবং পৃথিবীর সমস্ত বস্তুর চেয়ে দামী।’ (বুখারী, ২৭৯৬)
আপনি আজ দুনিয়ার কত মেয়ের ফেতনায় পড়ে নিজের ইমান আমল শেষ করছেন, অথচ যেই নারীর সৌন্দর্যের ফেতনায় পড়ে আপনি নিজের ইমান আমল শেষ করছেন সেই নারীর সৌন্দর্য একদিন থাকবে না।
আর আপনার জান্নাতি স্ত্রী হবে চিরকুমারী এবং প্রেমময়ী।
আল্লাহ বলেন,
﴿إِنَّآ أَنشَأۡنَٰهُنَّ إِنشَآءٗ ٣٥ فَجَعَلۡنَٰهُنَّ أَبۡكَارًا ٣٦ عُرُبًا أَتۡرَابٗا ٣٧﴾ [الواقعة: ٣٥، ٣٧]
“আমি জান্নাতী নারীদেরকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। তারপর তাদেরকে চিরকুমারী, কামিনী ও সমবয়স্কা বানিয়েছি।” (সূরা ওয়াকি‘আহ্: ৩৫-৩৮)
আল্লাহ বলেন:
﴿ وَحُورٌ عِينٞ ٢٢ كَأَمۡثَٰلِ ٱللُّؤۡلُوِٕ ٱلۡمَكۡنُونِ ٢٣ ﴾ [الواقعة: ٢٢، ٢٣]
“হুরের উদাহরণ হলো, আবরণে রক্ষিত মুক্তার মতো সুন্দর ও উজ্জ্বল এবং আয়তলোচনা। ”(সূরা ওয়াকি‘আহ্: ২৩)
দুনিয়াতে যে নারীর ফেতনায় পড়ে আপনি পরকাল ভুলে গেছেন সেই নারী হয়ত আপনার চেয়ে সুন্দর কাউকে ফেলে তার প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ে। অথচ আপনার জান্নাতি হুর সম্পর্কে বলা হয়েছেঃ
আল্লাহ আরো বলেন,
﴿وَعِندَهُمۡ قَٰصِرَٰتُ ٱلطَّرۡفِ عِينٞ ٤٨ كَأَنَّهُنَّ بَيۡضٞ مَّكۡنُونٞ ٤٩﴾ [الصافات: ٤٨، ٤٩]
“তাদের চোখ সর্বদাই অবনত (পবিত্রা যারা অন্যের দিকে তাকায় না), সুন্দর চোখ বিশিষ্ট এবং তারা যেন ডিমের আবরণের ভেতর সুপ্ত উজ্জ্বল।” (সূরা সাফ্ফাত:৪৮- ৪৯)
আপনার জন্য আল্লাহ এমন হুর রেখেছেন তারা আপনি ব্যতিত অন্য কাউকে কামনা করাতো দূরের কথা কারো দিকে তাকাবেও না। তাদের নিয়ে আপনি চিন্তিত হতে হবে না। তারা আপনার প্রতি রাগ করবে না।তাদের রুপ সম্পর্কে আরো বলা হয়েছেঃ
إِنَّ أَوَّلَ زُمْرَةٍ يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ يَوْمَ القِيَامَةِ ضَوْءُ وُجُوهِهِمْ عَلَى مِثْلِ ضَوْءِ القَمَرِ لَيْلَةَ البَدْرِ، وَالزُّمْرَةُ الثَّانِيَةُ عَلَى مِثْلِ أَحْسَنِ كَوْكَبٍ دُرِّيٍّ فِي السَّمَاءِ، لِكُلِّ رَجُلٍ مِنْهُمْ زَوْجَتَانِ عَلَى كُلِّ زَوْجَةٍ سَبْعُونَ حُلَّةً يُرَى مُخُّ سَاقِهَا مِنْ وَرَائِهَا»
“প্রথম যারা কিয়ামতের দিন জান্নাতে যাবে, তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মত উজ্জ্বল দেখা যাবে, আর দ্বিতীয় দল, তারা যেন সৌন্দর্যে আকাশের ধ্রুব তারা, তাদের প্রত্যেকের জন্য থাকবে দু’জন স্ত্রী, প্রত্যেক স্ত্রীর উপর থাকবে সত্তরটি কাপড়, তথাপি তার ভেতর থেকেও পায়ের নলার ভিতরের মগজ দৃষ্টিগোচর হবে।” (তিরমিযী, ২৫৩৫)
দুনিয়াতে একজন নারী কিংবা পুরুষ যতই সুন্দর হোক তার মাঝে এমন অনেক কিছু থাকে যা খুব ঘৃনিত। কিন্তু জান্নাতে এসব থাকবে না। হাদিসে বলা হয়েছেঃ
«لايبولون ولا يتغطون ولا يتفلون ولا يمتخطون»
‘‘তাদেরকে পেশাব পায়খানা করতে হবে না, মুখে থুথু আসবে না, আর নাকে কোনরূপ ময়লা জমবে না।’’ (বুখারী, ৩৩২৭; মুসলিম, ২৮৩৪)
# দুনিয়াতে অধিকাংশ মানুষ সারা জীবন কষ্ট করেও একটা ইট পরিমান স্বর্নের মালিক হতে পারে না।আর দুনিয়াতে একটা ইট পরিমান স্বর্ন দিয়ে অনেকগুলো প্রাসাদ করা যায় অথচ মহান রব আপনাকে জান্নাতে যে প্রাসাদ দিবেন তার ইট হবে, স্বর্ন ও রৌপ্যের।
রাসূল (ছাঃ) বলেন,
لَبِنَةٌ مِنْ فِضَّةٍ وَلَبِنَةٌ مِنْ ذَهَبٍ وَمِلاَطُهَا الْمِسْكُ الأَذْفَرُ وَحَصْبَاؤُهَا اللُّؤْلُؤُ وَالْيَاقُوتُ وَتُرْبَتُهَا الزَّعْفَرَانُ
‘একটি ইট স্বর্ণের এবং একটি ইট রৌপ্যের এভাবে গাঁথুনি দেয়া হয়েছে। আর মিশক হচ্ছে তার সিমেন্ট এবং মণি-মুক্তা ও ইয়াকূত পাথর হচ্ছে তার সুরকি। মেঝে বানানো হয়েছে জাফরান দিয়ে’।( তিরমিজি)
মহান রব আপনাকে জান্নাতে যে খাট দিবেন সেই খাটটিও হবে স্বর্নের।মহান আল্লাহ বলেনঃ
﴿عَلَىٰ سُرُرٖ مَّوۡضُونَةٖ ١٥ مُّتَّكِِٔينَ عَلَيۡهَا مُتَقَٰبِلِينَ ١٦﴾ [الواقعة:١٥، ١٦]
“জান্নাতীরা সোনার খাটে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে হেলান দিয়ে আরামের সাথে আলাপচারিতা করবে।” (সূরা ওয়াকি‘আহ্ : ১৫-১৬)
জান্নাতের স্বর্নতো দুনিয়ার স্বর্নের মত নয়, কেননা একটু আগেই পড়েছেন যে জান্নাতের চিমটি পরিমান কোন কিছু দুনিয়ায় প্রকাশিত হলে গোটা দুনিয়া এমন ভাবে আলোকিত হবে যে,সূর্যের আলোকে পর্যন্ত নিস্তেজ করে দিবে।
#একটু কল্পনা করে দেখুন, আকাশে অনেক গুলো সুন্দর সুন্দর পাখি উড়ে যাচ্ছে। আপনি পাখিগুলো ডাকার সাথে সাথে কাছে চলে আসলো, এরপর আপনি সেই পাখিগুলো রান্নাবান্না করে খেলেন। এমন যদি হয় তাহলে কেমন লাগবে আপনার নিকট? কিন্তু দুনিয়াতেতো এমন হবে না। অথচ জান্নাতে সুন্দর সুন্দর পাখি উড়ে যাবে আর আপনি সেখান থেকে কোন পাখি খেতে চাইলে তা সাথে সাথে খেতে পারবেন। মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَ لَحۡمِ طَیۡرٍ مِّمَّا یَشۡتَہُوۡنَ ﴿ؕ۲۱﴾
আর তাদের পছন্দমত পাখীর গোশত নিয়ে।( সুরা ওয়াকিয়া ২১)
সেখানে আপনি পছন্দ মত পাখীর গোশত খেতে পারবেন৷ হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কাউসার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, এটা এমন এক নাহর যা আমাকে আল্লাহ্ জান্নাতে দান করেছেন। যার মাটি মিসকের, যার পানি দুধের চেয়েও সাদা, আর যা মধু থেকেও সুমিষ্ট। সেখানে এমন এমন উঁচু ঘাড়বিশিষ্ট পাখিসমূহ পড়বে যেগুলো দেখতে উটের ঘাড়ের মত। তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এগুলো তো অত্যন্ত আকর্ষণীয় হবে। তিনি বললেন, যারা সেগুলো খাবে তারা তাদের থেকেও আকর্ষণীয়।” [মুসনাদে আহমাদ; ৩/২৩৬, তিরমিযী: ২৫৪২, আল-মুখতারাহ: ২২৫৮]
দুনিয়াতে অনেক কোটিপতিও যা ইচ্ছে খেতে পারে না। বিভিন্ন বিধি নিষেধ মানতে হয়। দেখা যায়, খাবারের অভাব নাই কিন্তু চাহিদা কম বা কোন রোগের কারনে খেতে পারছে না। অথবা কেউ অর্থের অভাবে খেতে পারে না।আবার দেখা যায় সব খাবার সব মৌসুমে পাওয়াও যায় না কিংবা পেলেও সেই খাবারে বিভিন্ন বেজাল মিশ্রিত থাকে কিন্তু জান্নাত আপনি যা খেতে চাইবেন তাই পাবেন। কুরআনে বলা হয়েছেঃ
﴿ وَأَمۡدَدۡنَٰهُم بِفَٰكِهَةٖ وَلَحۡمٖ مِّمَّا يَشۡتَهُونَ ٢٢ ﴾ [الطور: ٢٢]
“এবং আমি জান্নাতীদেরকে তাদের ইচ্ছানুযায়ী ফল ও গোশত প্রদান করতে থাকবো।’ (সূরা আত-তূর: ২২
#যদি কোন ব্যবসায়ী তার পন্যের ব্যাপারে নিজেই বলে যে,আমার পন্য ভালো না,আমার পন্য দুই নাম্বার। তাহলে তার পন্য কি কেউ কিনবে? অবশ্যই না,কিনলেও কম দামেই কিনবে। মহান আল্লাহ এই পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, তিনিই বলেছেনঃ
وَ مَا الۡحَیٰوۃُ الدُّنۡیَاۤ اِلَّا مَتَاعُ الۡغُرُوۡرِ ﴿۱۸۵﴾
আর পার্থিব জীবন ছলনাময় ভোগ ব্যতীত কিছুই নয়(সুরা আলে ইমরান ১৮৫)
এই দুনিয়াতে আপনি যে শরীরের এতো যত্ন নেন , একটা সময় শরীরটা দূর্বল হয়ে যায়, অসুস্থ হয়ে যায়।
কোটি টাকা বা ক্ষমতা দিয়ে নিজের যৌবন ধরে রাখা যায় না। দেখা যায় অনেকের আরামের বিছানা আছে কিন্তু ঘুম নাই, বিলাসবহুল বাড়ি আছে কিন্তু সুখ নেই এটাই দুনিয়া।
কিন্তু হাদিসে জান্নাতের ব্যাপারে বলা হয়েছে। নবিজি বলেন :
ينَادِي مُنَادٍ: إِنَّ لَكُمْ أَنْ تَصِحُوا فَلَا تَسْقَمُوا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَحْبَوا فلا تَمُوتُوا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَشِبُوا فَلَا تَهْرَمُوا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَنْعَمُوا فَلَا تَبْأَسُوا أَبَدًا
“জান্নাতিদের মাঝে একজন ঘোষক ঘোষণা দেবেন, এখন হতে তোমরা সুস্থ থাকবে, কখনো অসুস্থ হবে না; তোমরা জীবিত থাকবে,কখনো মরবে না; তোমরা যুবক থাকবে, কখনো বৃদ্ধ হবে না: তোমরা অফুরন্ত ভোগবিলাসের ভেতর থাকবে, অভাব-অনটন কখনো তোমাদের স্পর্শ করবে না।(সহিহ মুসলিম ২৮৩৭)
আহ দুনিয়ার মোহে পড়ে আমরা এমন জান্নাতকে ভুলে গেলাম যেখানে কোন অসুস্থতা, অভাব অনটন থাকবে না। অথচ দুনিয়া সম্পর্কে রাসূল সাঃ বলেছেনঃ
নবিজি একদিন শপথ করে বলেছেন :
وَاللَّهِ مَا الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا مِثْلُ مَا يَجْعَلُ أَحَدُكُمْ إِصْبَعَهُ هَذِهِ فِي الْيَمِّ، فَلْيَنْظُرْ بِمَ تَرْجِعُ
'আল্লাহর শপথ, দুনিয়া আখিরাতের তুলনায় এতটুকু, যেমন তোমাদের কেউ সমুদ্রের পানিতে তার একটি আঙুল ডুবিয়ে তুলে আনল, সে দেখুক তার আঙুল কতটুকু পানি নিয়ে ফিরেছে।( মুসনাদে আহমাদ,মুসলিম)
আমরা আজ ৬০/৭০ বছরের একটা জীবন নিয়ে সারা দিন কত চিন্তা করি, কত প্লান, পরিকল্পনা করি,।অপরদিকে অনন্তকালের জীবন নিয়ে ১০/১৫ বছরেও পাঁচ মিনিট চিন্তা করার সময় হয় না।
#এই পৃথিবীতে কত মানুষের সন্তান হয় না। আরেকজনের সুন্দর চেহারার সন্তান দেখলে কত আপসোস করে।
আবার দেখা যায় অনেকের সন্তান হলে সেই সন্তান সুন্দর চেহারার হয় না। মানুষ চায় সবসময় তার আশপাশে চোখশীতল কারী ছেলে মেয়ে ঘুরাফেরা করুক। কিন্তু দুনিয়াতে তো এটা সম্ভব নয়। হাদীসে এসেছেঃ
المُؤْمِنُ إِذا اشْتَفى الولد في الجنَّةِ، كَانَ حَملُهُ وَوَضْعُهُ وَلهُ فِي وَاحِدَةٍ كَمَا يَشْتَهِي
'কোনো মুমিন লোক যদি জান্নাতে সন্তানের আকাঙ্ক্ষা করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী গর্ভধারণ করবে এবং সন্তান প্রসব করবে আর সন্তানটি বয়সে হবে উপযুক্ত বয়সের (যুবক)। তার ইচ্ছা অনুযায়ী মুহূর্তের মধ্যেই এসব হয়ে যাবে।( সুনানে তিরমিজি ২৫৬৩)
মহান আল্লাহ বলেনঃ
یَطُوۡفُ عَلَیۡہِمۡ وِلۡدَانٌ مُّخَلَّدُوۡنَ ﴿ۙ۱۷﴾
তাদের সেবায় ঘোরাফেরা করবে চির কিশোররা।( সুরা ওয়াকিয়া ১৭)
আরও বলা হয়েছে, “তাদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে চিরকিশোরগণ, যখন আপনি তাদেরকে দেখবেন তখন মনে করবেন তারা যেন বিক্ষিপ্ত মুক্তা।” [সূরা আল-ইনসান: ১৯]
সেই দৃশ্য কেমন হবে যখন আপনার চারদিকে সুন্দর সুন্দর কিশোরেরা ঘুরাফেরা করবে?
# এই পৃথিবীতে এমন ব্যক্তি নেই যাদের ভিতর কোন ভয় বা দুশ্চিন্তা নেই। যার টাকা পয়সা আছে তার এগুলো হারানোর ভয় থাকে, যার ক্ষমতা আছে তার ক্ষমতা হারানোর ভয় ও দুশ্চিন্তা থাকে, যার সন্তান আছে তার সন্তান নিয়ে ভয় বা দুশ্চিন্তা থাকে। অথচ সকলেই চায় ভয় ও দুশ্চিন্তাহীন একটি জীবন।বাস্তবতা হলো এমন জীবনতো দুনিয়াতে কেউই পায় না।অথচ জান্নাতিদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ বলেনঃ
আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَهُمْ مِنْ فَزَع يَوْمَئِذٍ آمِنُونَ
'সেদিন তারা ভীতি-শঙ্কা থেকে নিরাপদ থাকবে।(সুরা আন-নামল, ২৭ : ৮৯।)
আল্লাহ তাআলা জান্নাতিদের ব্যাপারে আরও বলেন :
وَقَالُوا الحَمْدُ لِلهِ الَّذِي أَذهَبْ عَنَّا الحزن
“আর তারা বলবে, “যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের দুঃখ- কষ্ট দূর করে দিয়েছেন।( সুরা ফাতির ৩৫ঃ৩৪)
প্রত্যেক মানুষ চায় ভয় দুশ্চিন্তা হীন একটি জীবন, যা একমাত্র জান্নাতেই পাবে।ভেবে দেখুন যে জীবনে কোন ভয় নেই, কোন দুশ্চিন্তা নেই সেই জীবন কত মধুর, কত আনন্দের। সেই জীবন যে লাভ করবে না সেই প্রকৃত হতভাগা।
#এই পৃথিবীতে সবারই মন চায় কিছু চাষাবাদ করার।কেউ পেশা হিসেবে চাষাবাদ করে আর কেউ অনেক সম্পদের মালিক হওয়ার পরেও শখের বশে বিভিন্ন চাষাবাদ করে। চাষাবাদ করার পর যখন ভালো ফলন পায় তখন খুব আনন্দ লাগে,তাকিয়ে থাকতে মন চায়৷ কিন্তু কেউ জমির অভাবে শখ করে চাষাবাদ করতে পারে না। আবার কেউ করলেও আশানুরূপ ফল পায় না। অপরদিকে জান্নাতে কেউ যদি চাষবাদ করতে চায় মহান আল্লাহ তাকে সেই আনন্দ লাভের সুযোগ করে দিবেন। হাদীসে এসেছে
নবিজি -এর এই বাণী :
أَنَّ رَجُلًا مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ اسْتَأْذَنَ رَبَّهُ فِي الزَّرْعِ، فَقَالَ لَهُ: أَلَسْتَ فِيمَا شِئْتَ؟ قَالَ: بَلَ، وَلَكِنِّي أُحِبُّ أَنْ أَزْرَعَ، قَالَ: فَبَدْرَ، فَبَادَرَ الطَّرْفَ نَبَاتُهُ وَاسْتِوَاؤُهُ وَاسْتِحْصَادُهُ، فَكَانَ أَمْثَالَ الجِبَالِ فَيَقُولُ اللهُ: دُونَكَ يَا ابْنَ آدَمَ، فَإِنَّهُ لَا
يُشْبِعُكَ شَيْءٌ
‘জান্নাতবাসীদের কোনো একজন তার রবের কাছে চাষাবাদের অনুমতি চাইবে। তখন আল্লাহ তাআলা তাকে বলবেন, “তুমি কি যা চাও, তা পাচ্ছ না?” সে বলবে, “হ্যাঁ, নিশ্চয় পাচ্ছি; কিন্তু আমার চাষ করার খুবই শখ।” নবিজি বললেন, “তখন সে বীজ বুনবে এবং তা চারা হওয়া, গাছ বড় হওয়া ও ফসল কাটা সবকিছু পলকের মধ্যে হয়ে যাবে। আর তা (ফসল) পাহাড় সমান হয়ে যাবে। তখন আল্লাহ বলবেন, “হে আদম-সন্তান, এগুলো নিয়ে নাও। কোনো কিছুই তোমাকে তৃপ্ত করে না। (সহিহ বুখারী, মুসনাদে আহমাদ)
মনে করুন, আপনি কাহারো খুব সুন্দর আঙ্গুর ফলের বাগানে প্রবেশ করলেন, আপনার মন জুড়িয়ে গেলো। আপনি যখন তার কাছে বাগানটির প্রশংসা করলেন সাথে সাথে সে বললো বাগানটি এখন তোমার। কেমন লাগবে তখন আপনার নিকট? এবার চিন্তুা করুন জান্নাতের চাষাবাদ তো দুনিয়ার চাষাবাদের চেয়ে কৌটি কোটি গুন সুন্দর যা কল্পনাও করা যায় না। মহান আল্লাহ যখন সেই সুন্দর, নয়নাবিরাম চাষাবাদ করার আনন্দ ভোগ করতে দিবেন তখন কেমন লাগবে!
# আপনি কোন সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে গেলেন, কিন্তু সেই সৈকতে পানি নেই।সেই সৈকতে আছে স্বচ্ছ ধবধবে সাদা দুধ। ভেবে দেখুন কেমন লাগবে সেই দৃশ্য, কতটা মনোরম হবে? কেউ সেখান থেকে আসতে চাইবে? দুধ এমন এক খাদ্য যা খেলে অন্য কোন খাবার না খেয়েই দিনের পর দিন বাঁচতে পারে৷ কিন্তু দুনিয়াতে এমন দুধের নদীতো কোথাও পাওয়া যাবে না। দুনিয়াতে মানুষ একটু খাঁটি মধু খেতে পারে না।অথচ সবাই একটু খাঁটি মধু খেতে কত আগ্রহী। এরপর দুনিয়াতেতো মদ হারাম, আর যারা খায় তারাও সবসময় খেতে পারে না, আর সেই মদ খেলেও মাথা ঘুরায়, হুশ জ্ঞান হারায়।
কিন্তু জান্নাতে থাকবে দুধ, মধু, ও সরাবের নদী।মহান আল্লাহ বলেন,
مَّثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ ۖ فِيهَا أَنْهَارٌ مِّن مَّاءٍ غَيْرِ آسِنٍ وَأَنْهَارٌ مِّن لَّبَنٍ لَّمْ يَتَغَيَّرْ طَعْمُهُ وَأَنْهَارٌ مِّنْ خَمْرٍ لَّذَّةٍ لِّلشَّارِبِينَ وَأَنْهَارٌ مِّنْ عَسَلٍ مُّصَفًّى ۖ وَلَهُمْ فِيهَا مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَمَغْفِرَةٌ مِّن رَّبِّهِمْ
অর্থাৎ, সাবধানীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে তার দৃষ্টান্ত হলঃ ওতে আছে নির্মল পানির নদীমালা, আছে দুধের নদীমালা যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়, আছে পানকারীদের জন্য সুস্বাদু সুরার নদীমালা, আছে পরিশোধিত মধুর নদীমালা। আর সেখানে তাদের জন্য আছে বিবিধ ফলমূল ও তাদের প্রতিপালকের ক্ষমা। সাবধানীরা কি তাদের মত, যারা জাহান্নামে স্থায়ী হবে এবং যাদেরকে পান করতে দেওয়া হবে ফুটন্ত পানি; যা তাদের নাড়ীভুড়ি ছিন্ন-ভিন্ন করে দেবে? (মুহাম্মাদঃ ১৫)।
আমরা আজ এমন জান্নাতকে ভুলে গেলাম যেখানে দুনিয়ার মত অল্প অল্প দুধ বা মদ, মধু থাকবে না। বরং থাকবে দুধের নদী, মদের নদী, মধুর নদী। তাও সেই দুধ, মধু স্বাদ দুনিয়ার মত নয়। সেটার স্বাদ, রং এমন, যা কল্পনাও করা যায় না। আপনি সেখানে যত ইচ্ছে খেতে পারবেন।কতই না সুন্দর হবে সেই সাদা দুধের নহর, মধুর নহর।
প্রিয় পাঠক, আজ আমরা যে দুনিয়ার পাগল সেই দুনিয়ায় এমন অনেক মানুষ বসবাস করেছে যারা পশু পাখির পায়খানায় পরিনত হয়েছে। এমন অনেক গোরস্থান আছে যেখানে কবর দেওয়ার পর রাতের বেলা সেই কবর খুড়ে শরীরের মাংস রক্ত খেয়ে রাস্তার এক পাশে পায়খানা করে চলে যায়। কত মানুষ মারা যাওয়ার পর শকুনের খাদ্যে পরিনত হয়। শকুন মানুষকে খেয়ে তাও পায়খানা করে।
যেই মানুষটা হাটত, চলতো, কথাবার্তা বলতো সেই মানুষটাই আজ প্রানীর খাদ্যে পরিনত হলো।
আমাদের সামনে এমন অনেক বয়স্ক মানুষ আছে যাদের এক সময় কত শক্তি কত চাহিদা ছিলো, কিন্তু আজ তাদের একটাই চাহিদা, তা হলো শরীরটা যেন একটু সুস্থ থাকে, আশপাশের মানুষ যেন একটু মুল্যায়ন করে। আর এটাই হলো দুনিয়ার বাস্তবতা।দুনিয়া হলো এক ধুসর মরীচিকা। মরুভুমিতে পিপাসিত মানুষ হাঁটতে হাঁটতে এক পর্যায়ে অনেক দূরে পানি দেখতে পায়, কিন্তু কাছে গিয়ে দেখে সেটা পানি নয় বরং মরীচিকা । যারা দুনিয়ার পাগল তাদের অবস্থা ও এমন। তারা মনে করে ক্ষমতা পেলে,বা কয়েক কোটি টাকার মালিক হলে, খুব সুন্দর বাড়ি হলে হয়ত অনেক সুখে থাকবে অথচ সুখ আর বাড়ে না। বরং সে হয়ে যায় তার সম্পদ, ক্ষমতার পাহারাদার। আর এভাবেই একদিন সে দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়। তার কষ্টের বাড়ি, গাড়ি দিয়ে অন্যরা সুখ করে। অথচ পরকালের জীবনই আসল জীবন। মহান আল্লাহ বলেনঃ
بَلۡ تُؤۡثِرُوۡنَ الۡحَیٰوۃَ الدُّنۡیَا ﴿۫ۖ۱۶﴾ وَ الۡاٰخِرَۃُ خَیۡرٌ وَّ اَبۡقٰی ﴿ؕ۱۷﴾
বরং তোমরা পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দিয়ে থাক।অথচ পরকালের জীবনই উত্তম ও চিরস্থায়ী। ( সুরা আলা ১৬ -১৭)
যিনি সকলের জ্ঞানদাতা তিনিই বলতেছেন পরকালের জীবনই উত্তম।আপসোস আমরা তবুও দুনিয়ার মোহে রবকে ভুলে যাই। আল্লাহ আমাদের সঠিক বুঝ দান করুন।
★জান্নাত পেতে হলে করনীয়।
জান্নাত যাওয়ার প্রথম শর্ত হলো ইমান।যার ইমান নেই সে কখনও জান্নাতে যাবে না। সে থাকবে চিরকাল জাহান্নামে। অনেকেই নিজেকে মুমিন দাবি করে অথচ
তাদের ইমান নেই। কবেই তাদের ইমান চলে গেছে তারা জানে না। আজ অধিকাংশ মানুষ ইমান ভঙ্গের কারন জানে না, কালের শর্ত ও রোকন জানে না।
তাগুত সম্পর্কে জানে না, তাগুত কত প্রকার ও কি কি তাও একজন ব্যক্তি জানে না অথচ একজন ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করা ব্যতিত মুমিনই হতে পারবে না৷ মহান আল্লাহ বলেনঃ
فَمَنۡ یَّکۡفُرۡ بِالطَّاغُوۡتِ وَ یُؤۡمِنۡۢ بِاللّٰہِ فَقَدِ اسۡتَمۡسَکَ بِالۡعُرۡوَۃِ الۡوُثۡقٰی ٭ لَا انۡفِصَامَ لَہَا ؕ وَ اللّٰہُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۲۵۶﴾
সুতরাং যে তাগূতকে অস্বীকার করবে ও আল্লাহকে বিশ্বাস করবে, নিশ্চয় সে এমন এক শক্ত হাতল ধরবে, যা কখনো ভাঙ্গার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।( সুরা বাকারা ২৫৬)
ইমান সম্পর্কে জানা ফরয, শিরক কুফর সম্পর্কে জানা ফরয অথচ কয়জন ব্যক্তি এ সম্পর্কে জানতে চায়? শিরক কত প্রকার, কুফর কাকে ইত্যাদি সম্পর্কে কয় জনে জানে?
জান্নাতে যাওয়ার দ্বিতীয় শর্ত হলো আমলে সলেহ তথা নেক আমল। আমলে সলেহ সম্পর্কে অনেক বয়ান ও বই আছে আশা করি একজন পাঠক জেনে নিবেন ইনশাআল্লাহ ।
★জাহান্নামের আযাবের সংক্ষিপ্ত বর্ননা।
যদি আপনার ইবাদাতে অলসতা কিংবা গুনাহ ছাড়তে কষ্ট হয় তাহলে আগুনের কাছে গিয়ে একটু চিন্তা করুন।আপনি কোন কামারের দোকানের পাশে গিয়ে একটু গভীর ভাবে চিন্তা করুন। কামার যখন আগুনের মধ্যে শক্ত লোহা দেয় তখন আগুন সেই শক্ত লোহাকেও নরম করে দেয়, এমনকি আগুনের উত্তাপ অনেক সময় লোহাও গলে যায়। এমন আগুনের কিছু কয়লা যদি আপনার শরীরে ছিটিয়ে দেয় তখন কেমন লাগবে? দুনিয়ার এই সামান্য আগুনে দুই / তিন সেকেন্ড একটি আঙ্গুল রাখা যায় না অথচ জাহান্নামের আগুন কত কঠিন, কত ভয়াবহ সেই আগুনে কিভাবে জ্বলবেন?
হাসপাতালে যত রোগী আছে তার মধ্যে কোন রোগী বেশি চিৎকার, হাহাকার করে? যে রোগী আগুনে পূড়ে গেছে সেই রোগীই সবচেয়ে বেশি চিৎকার করে। অথচ দুনিয়ার আগুনের চেয়ে জাহান্নামের আগুনের তাপ অনেক অনেক বেশি।
হাদিসে এসেছেঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” نَارُكُمْ هَذِهِ الَّتِي يُوقِدُ بَنُو آدَمَ جُزْءٌ وَاحِدٌ مِنْ سَبْعِينَ جُزءًا مِنْ حَرِّ جَهَنَّمَ ” . قَالُوا وَاللَّهِ إِنْ كَانَتْ لَكَافِيَةً يَا رَسُولَ اللَّهِ . قَالَ ” فَإِنَّهَا فُضِّلَتْ بِتِسْعَةٍ وَسِتِّينَ جُزْءًا كُلُّهُنَّ مِثْلُ حَرِّهَا ” . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . .
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমাদের এই আগুন যা তোমরা প্রজ্বলিত কর তা জাহান্নামের আগুনের উত্তাপের সত্তর ভাগের এক ভাগ। সাহাবীগন বলেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহ্র কসম! এ আগুনই তো জাহান্নামীদের আযাবের জন্য যথেষ্ট ছিল। তিনি বললেনঃ এটাকে ঊনসত্তর গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং প্রতিটি অংশের উত্তাপ এর সমান হবে।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৮৯)
জাহান্নামের আযাব কত কঠিন হবে চিন্তা করুন।এই দুনিয়ার আগুনেই লোহা গলে যায় অথচ এই চামড়ার শরীরে কি অবস্থা হবে!তাও জাহান্নামের আযাব হবে দুনিয়ার আগুনের চেয়ে সত্তরগুন।
দুনিয়াতে সন্তানের জন্য মা বাবা আগুনে ঝাপ দিতে পারে। কিন্তু জাহান্নামের ব্যাপারে কুরআনে এসেছেঃ
وَ لَا یَسۡـَٔلُ حَمِیۡمٌ حَمِیۡمًا ﴿ۚۖ۱۰﴾ یُّبَصَّرُوۡنَہُمۡ ؕ یَوَدُّ الۡمُجۡرِمُ لَوۡ یَفۡتَدِیۡ مِنۡ عَذَابِ یَوۡمِئِذٍۭ بِبَنِیۡہِ ﴿ۙ۱۱﴾وَ صَاحِبَتِہٖ وَ اَخِیۡہِ ﴿ۙ۱۲﴾ وَ فَصِیۡلَتِہِ الَّتِیۡ تُــٔۡوِیۡہِ ﴿ۙ۱۳﴾ وَ مَنۡ فِی الۡاَرۡضِ جَمِیۡعًا ۙ ثُمَّ یُنۡجِیۡہِ ﴿ۙ۱۴﴾
আর সুহৃদ সুহৃদের খবর নেবে না।যদিও তাদেরকে একে অপরের দৃষ্টির সামনে রাখা হবে। অপরাধী সেই দিনে শাস্তির বদলে দিতে চাইবে নিজ সন্তান-সন্ততিকে।
তার স্ত্রী ও ভাইকে।তার জ্ঞাতি-গোষ্ঠীকে, যারা তাকে আশ্রয় দিত।এবং পৃথিবীর সকলকে, যাতে এই মুক্তিপণ তাকে মুক্তি দেয়।( সুরা মাআরিজ ১০-১৪)
জাহান্নামের আযাব এতোটা ভয়াবহ হবে যে,একজন জাহান্নামি তার মা বাবা, ভাই বোন, স্ত্রী এমনকি গোটা দুনিয়ার বিনিময় হলেও এই আযাব থেকে মুক্তি পেতে চাইবে।
মহানবী (ﷺ) বলেন, “জাহান্নামের সবচেয়ে কম আযাবের একটি লোককে আল্লাহ তাবারাকা অতাআলা জিজ্ঞাসা করবেন, তোমার যদি দুনিয়া ও তন্মধ্যস্থিত সব কিছু হতো, তাহলে মুক্তিপণ হিসাবে তা দিয়ে কি মুক্তি নিতে?” সে বলবে, হ্যাঁ। আল্লাহ বলবেন, তুমি যখন আদমের পিঠে ছিলে, তখন আমি তোমার নিকট থেকে এর চাইতে সহজ জিনিস চেয়েছিলাম যে, তুমি শির্ক করো না, তোমাকে জাহান্নামে দেব না। কিন্তু তুমি শির্কই করেছ। (বুখারী, মুসলিম)।
আজ সামান্য বাড়ি, গাড়ি , পরিবার পরিজনের জন্য আপনি আল্লাহকে ভুলে যান। আজ কত যুবক সামান্য একটা মেয়ের ফেতনায় পড়ে ইমান বিসর্জন দিচ্ছে। অথচ জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য সব কিছু দিতে চাইবে। এত ভয়াবহ হবে সেই আযাব।
সেই আযাব সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেনঃ
کَلَّا ؕ اِنَّہَا لَظٰی ﴿ۙ۱۵﴾ نَزَّاعَۃً لِّلشَّوٰی ﴿ۚۖ۱۶﴾
না, কখনই নয়! এটা তো লেলিহান অগ্নি।
যা দেহ হতে চামড়া খসিয়ে দেবে।( সুরা মাআরিজ ১৫-১৬)
জাহান্নাম এতটাই ভয়াবহ হবে যে,পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষটিকে শুধু একবার জাহান্নামে চুবানি দেওয়া হলে সে সব সুখের কথা ভুলে যাবে।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্য হতে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী ও বিলাসী ছিল। অতঃপর তাকে জাহান্নামে একবার (মাত্র) চুবানো হবে, তারপর তাকে বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি কখনো ভাল জিনিস দেখেছ? তোমার নিকটে কি কখনো সুখ-সামগ্রী এসেছে? সে বলবে, না। আল্লাহর কসম! হে প্রভু! আর জান্নাতীদের মধ্য হতে এমন এক ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হবে, যে দুনিয়ার সবচেয়ে দুঃখী ও অভাবী ছিল। তাকে জান্নাতে (মাত্র একবার) চুবানোর পর বলা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি (দুনিয়াতে) কখনো কষ্ট দেখছ? তোমার উপরে কি কখনো বিপদ গেছে?” সে বলবে, না। আল্লাহর কসম! আমার উপর কোনদিন কষ্ট আসেনি এবং আমি কখনো কোন বিপদও দেখিনি।” (মুসলিম)
মনে করুন আপনি প্রচন্ড শীতে গভীর রাতে বেলা কোন নদীর মাঝখানে লঞ্চ থেকে যদি পড়ে যান, এবং লঞ্চ যদি আপনার থেকে দূরে চলে যায় তখন এই পানির মধ্যে আপনার অবস্থা কেমন হবে? চারদিকে পানি আর পানি, উপরন্তু আরো শীতে ও গভীর রাত। কত কঠিন হবে সেই পরিস্থিতি।
এবার চিন্তা করুন,যে ব্যক্তি জাহান্নামে যাবে সেখানে চারদিকে থাকবে আগুন আর আগুন। ডানে বামে শুধুই আগুন। পালিয়ে যাবার কোন উপায় নেই। শুধু যে আগুন তা নয়,জাহান্নাম খুবই অন্ধকার।
হাদিসে এসেছেঃ
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ أُوقِدَ عَلَى النَّارِ أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى احْمَرَّتْ ثُمَّ أُوقِدَ عَلَيْهَا أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى ابْيَضَّتْ ثُمَّ أُوقِدَ عَلَيْهَا أَلْفَ سَنَةٍ حَتَّى اسْوَدَّتْ فَهِيَ سَوْدَاءُ مُظْلِمَةٌ ” .
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জাহান্নামের আগুন এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা লাল বর্ণ ধারণ করে। আবার এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা সাদা রং ধারণ করে। আবার এক হাজার বছর জ্বালানোর পর তা কালো বর্ণ হয়ে যায়। সুতরাং তা এখন ঘোর কালো বর্ণে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৯১)
কত কঠিন হবে সেই জাহান্নাম যেখানে চারদিকে আগুন এবং অন্ধকার।
দুনিয়াতে একজন মানুষ অনেক কষ্ট থাকলেও একটা সময় জ্ঞান হারায় বা ঘুম চলে আসে। কিন্তু জাহান্নামে অনবরত জ্বলতেই থাকবে। সেখান থেকে পালাবার কোন উপায় নেই। কারন জাহান্নাম এমন এক জায়গা যেখানে একটি পাথর পড়তেই বছরের পর বছর লেগে যায়। হাদিসে এসেছেঃ
عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ إِنَّ الصَّخْرَةَ الْعَظِيمَةَ لَتُلْقَى مِنْ شَفِيرِ جَهَنَّمَ فَتَهْوِي فِيهَا سَبْعِينَ عَامًا وَمَا تُفْضِي إِلَى قَرَارِهَا ” . قَالَ وَكَانَ عُمَرُ يَقُولُ أَكْثِرُوا ذِكْرَ النَّارِ فَإِنَّ حَرَّهَا شَدِيدٌ وَإِنَّ قَعْرَهَا بَعِيدٌ وَإِنَّ مَقَامِعَهَا حَدِيدٌ .
হাসান বাসরী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:‘উত্বাহ ইবনু গাযওয়ান (রাঃ) আমাদের এই বসরার মিম্বারে দাঁড়িয়ে বলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ জাহান্নামের এক প্রান্ত হতে বড় একটি পাথরকে গড়িয়ে ছেড়ে দেয়া হলে এটা সত্তর বছর পর্যন্ত গড়াতেই থাকবে তবু স্থির হবার জায়গায় আসতে পারবে না।
(সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৬১২)
জাহান্নাম কত গভীর। দুনিয়াতে সত্তর বা আশি বছরের একটা জীবনকে কত দীর্ঘ মনে হয়। অথচ জাহান্নামে একটা পাথর পড়তে সত্তর বছর লাগবে তবুও স্থির হবে না।
এতো গভীর জাহান্নামে পড়ার পর পালাবার আর কোন জায়গা পাবে না।
হাদিসে এসেছেঃ
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ الصَّعُودُ جَبَلٌ مِنْ نَارٍ يُتَصَعَّدُ فِيهِ الْكَافِرُ سَبْعِينَ خَرِيفًا وَيَهْوِي فِيهِ كَذَلِكَ مِنْهُ أَبَدًا
আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জাহান্নামের মধ্যে ‘সাঊদ’ নামে আগুনের একটি পাহাড় আছে। কাফিরগণ সত্তর বছরে এর উপর উঠবে এবং সত্তর বছরে গড়িয়ে পড়বে। তারা তাতে অনন্তকাল ধরে উঠবে ও নামবে।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ২৫৭৬)
প্রয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِي قَوْلِهِ: (كَالْمُهْلِ ) قَالَ “ كَعَكَرِ الزَّيْتِ فَإِذَا قَرَّبَهُ إِلَى وَجْهِهِ سَقَطَتْ فَرْوَةُ وَجْهِهِ فِيهِ .
আবূ সাঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা’আলার বাণী “কাল-মুহলি” (তা যেন গলিত তামা)-এর ব্যাখ্যায় বলেনঃ তা হল তেলের গাদ সদৃশ। জাহান্নামীদের মধ্যে কোন জাহান্নামী যখনই এটা তার মুখের নিকটে নিবে সাথে সাথে তার মুখমন্ডলের চামড়া খসে তাতে পড়ে যাবে।
(সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং ২৫৮১)
দুনিয়াতে প্রচন্ড শীতেও গরম পানি খেয়ে মানুষ স্বাদ পায় না। অথচ জাহান্নামে এমন পানি দেওয়া হবে যা খাওয়ার আগেই মুখ পুড়ে যাবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ إِنَّ الْحَمِيمَ لَيُصَبُّ عَلَى رُءُوسِهِمْ فَيَنْفُذُ الْحَمِيمُ حَتَّى يَخْلُصَ إِلَى جَوْفِهِ فَيَسْلِتَ مَا فِي جَوْفِهِ حَتَّى يَمْرُقَ مِنْ قَدَمَيْهِ وَهُوَ الصَّهْرُ ثُمَّ يُعَادُ كَمَا كَانَ.
আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ জাহান্নামীদের মাথায় গরম পানীয় ঢালা হবে, এমনকি তা পেট পর্যন্ত পৌঁছবে এবং পেটের সব নাড়িভুঁড়ি গলিয়ে দিবে, তারপর তা পায়ের দিক দিয়ে বেরিয়ে পড়বে। এটাই হল ‘সাহর’ (গলে যাওয়া)। আবার তা পূর্বের ন্যায় হয়ে যাবে (এবং এমনিভাবে শাস্তির প্রক্রিয়া চলতে থাকবে)
(সুনানে তিরমিযি, হাদিস নং ২৫৮২)
প্রিয় পাঠক, এই দুনিয়ায় একটানা একদিন বা দুই দিন মানুষ দাড়িয়ে থাকতে পারে না। অথচ হাশরের মাঠে ৫০ হাজার বছর দাড়িয়ে থাকা লাগবে। সেই দিন এতটাইই ভয়াবহ হবে যে,সবাই উলঙ্গ অবস্থায় উঠবে কিন্তু কেউ কাহারো দিকে তাকাবে না।
আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন: কেয়ামতের দিন মানুষ ঘর্মক্ত হবে। এমনকি যমীনের সত্তর হাত ঘামে ডুবে যাবে। তাদের ঘামে তারা কান পর্যন্ত ডুবে যাবে। (বুখারী ও মুসলিম)
মহান আল্লাহ আমাদের জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
Comment