কী দান করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়?┇ শাইখ তামিম আল আদনানী হাফিজাহুল্লাহ্
নাহমাদুহু ওয়ানুসাল্লি আলা রাসূলিহিল কারীম আম্মাবাদ
প্রিয় বোন! আজ আল্লাহ আমাদের কত সুখ দান করেছেন! কত সমৃদ্ধি দান করেছেন! কত* রংবেরঙের জামা আমরা গায়ে দিচ্ছি! কত উন্নত মানের সুস্বাদু খাবার আমরা খাচ্ছি! কত আরামের বিছানায় আমরা ঘুমোচ্ছি! আমাদের অনেক বোন তো* কেবল সাজগোজ ও প্রসাধনীতেই বিশাল অঙ্কের টাকা খরচ করে!
প্রিয় বোন! আপনার সুখ, আপনার সমৃদ্ধি, আপনার সচ্ছলতা - আপনার জন্য মোবারক হোক। কিন্তু আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন! দ্বীনের কল্যাণে সাদাকা করার কথা! আপনার কোনো সম্পদ কি দ্বীনের কল্যাণে ব্যয়িত হয়েছে?*
প্রিয় বোন! আপনাকে নিয়ে যাব সুদূর অতীতে। ইসলামের সোনালী যুগে। শোনাবো এক মহীয়সী নারীর গল্প। আপনারই এক মহান পূর্বসূরি নারীর গল্প। তিনি হলেন, আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহা।
গল্পটি বর্ণিত হয়েছে বিশুদ্ধতম হাদিসগ্রন্থ সহীহুল বুখারীতে। হিজরতের সময়কার ঘটনা। রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর প্রিয় সাথী আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নিয়ে মদিনায় হিজরত করার মনস্থ করলেন। মক্কা থেকে মদিনার দূরত্ব ৪৫৩ কিলোমিটার। কত দীর্ঘ পথ! এই দীর্ঘ পথ হেঁটে পাড়ি দেওয়া সহজ কথা নয়।
হযরত আসমা বিনতে আবু বকরের দায়িত্ব পরলো সফরের খাবার প্রস্তুত করার। এই মুবারক দায়িত্ব পেয়ে তিনি অনেক খুশি হলেন। পূর্ণ* আন্তরিকতার সঙ্গে তিনি প্রিয়নবী সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আব্বাজানের জন্য খাবার তৈরি করলেন। এবার খাবার গুলো পুটলি ভরে আব্বুর হাতে তুলে দেবেন। দীর্ঘ সফরে তাঁরা হাঁটতে হাঁটতে যখন ক্ষুধার্ত হয়ে পড়বেন তখন তাঁর নিজ হাতে বানানো এই খাবার খেয়ে তাঁরা ক্ষুধা নিবারণ করবেন, বিষয়টি ভাবতেই তাঁর মন খুশিতে ভরে উঠল। নিজেকে তাঁর অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল। তিনি অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে খাবারগুলোকে একটি পুটলিতে ভরলেন। কিন্তু পুটলির মুখ বাঁধার জন্য ঘরে কোন রশিই খুঁজে পেলেন না। আব্বাজান আবু বকরকে জানালেন বিষয়টি, " আব্বু খাবারের পুটলির মুখ বাঁধার জন্য তো কিছুই খুঁজে পাচ্ছিনা, এই যে আমার কোমর বন্ধনী এই ফিতাটি ছাড়া আর কিছুই তো ঘরে নেই যেটি দিয়ে আমি পুটলির মুখ বাঁধতে পারি "।*আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, "তাহলে তোমার কোমর বন্ধনীটিকেই ছিড়ে দু'টুকরো করো, একটি দিয়ে পানির মশক বাঁধো আর অপরটি দিয়ে পুটলি বাঁধো।"
মহিয়সী আসমা বিনতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহা যেমন পিতার তেমন মেয়ে। তিনি নিজের জামার একমাত্র কোমরবন্ধনীটি ছিড়ে দু'টুকরো করে মশক ও পুটলি বাঁধলেন। নিজের প্রিয় জিনিসটি তিনি দ্বীনের কল্যাণে হাসিমুখে কুরবান করলেন। তখন থেকে তাঁর নাম হয়ে গেল 'যাতুন নিতাকাইন' বা 'দুই ফিতাওয়ালি'।
প্রিয় বোন! আপনারা তো মহান সাহাবীয়্যাহ আসমা বিনতে আবু বকরেরই ভাগ্যবতী উত্তরসূরি। ভেবে দেখুন,* ইসলামের প্রতি আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহার কত গভীর ভালোবাসা ছিল! ইসলামের কল্যাণের জন্য তার কেমন ফিকির ছিল! কীভাবে তিনি তাঁর কোমর বন্ধনী দ্বীনের খেদমতে পেশ করলেন! তাঁর সবচেয়ে দামি ও মূল্যবান কোমর বন্ধনী হাসিমুখে দু'টুকরো করে ফেললেন!*
প্রিয় বোন! আজ আপনাদের বলতে চাই, কেউ কি আছে আপনাদের মধ্যে যে তার প্রিয় বস্তু আল্লাহর রাস্তায় কুরবান করবে! ইসলামের প্রচার ও প্রসারে সাহায্য করবে! ই'দাদ ও জিহাদের পথে ব্যয় করবে - নিজের সবচেয়ে প্রিয় জিনিসকে! এভাবে দ্বীনের জন্য কুরবানি করার মত ঈমান কি আপনার আছে!*
প্রিয় বোন! আপনি কি জানেন,* কোন জিনিস দান করলে সবচেয়ে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়!*
আল্লাহ তায়ালা বলেন :*
لَن تَنَالُوا۟ ٱلْبِرَّ حَتَّىٰ تُنفِقُوا۟ مِمَّا تُحِبُّونَۚ*
‘যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের পছন্দের জিনিস থেকে দান করবে ততক্ষণ তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পারবে না।’’*[সূরা আলি-ইমরান ৩:৯২]
শেখ আব্দুর রহমান আস-সা'দী রহিমাহুল্লাহ্ এই আয়াতের তাফসীরে বলেন," যে ব্যক্তি যত বেশি প্রিয় বস্তু আল্লাহর রাস্তায় দান করবে সে তত বেশি সাওয়াব ও কল্যাণ লাভ করবে।"
আমরা অনেক সময় ব্যবহৃত ছেঁড়া কাপড় দান করে সাওয়াব পেতে চাই! নিজেদের পরিত্যক্ত জিনিসগুলো দান করে সাওয়াবের আশা করি। অথচ আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে প্রিয় জিনিস থেকে দান করার নির্দেশ দিয়েছেন। যত বেশি প্রিয় জিনিস আমরা আল্লাহর রাস্তায় দান করতে পারবো, আমাদের সাওয়াবের পাল্লা তত ভারি হবে।*
আল্লাহ তা'আলা আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফীক দিন আমীন।* ইয়া রব্বাল আলামীন।
Comment