সন্তানকে সালাতে অভ্যস্ত করে তুলবেন কীভাবে?┇ শাইখ তামিম আল-আদনানী হাফিজাহুল্লাহ্
সালাত ইসলামের দ্বিতীয় রুকন, কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম সালাতের হিসাব নেওয়া হবে সুনানে তিরমিযিতে সহিহ সনদে বর্ণিত হয়েছে রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন:
إِنَّ أَوَّلَ مَايُحَاسَبُ بِهِ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنْ عَمَلِهِ صَلَاتُهُ فَإِنْ صَلُحَتْ فَقَدْ أَفْلَحَ وَأَنْجَحَ وَإِنْ فَسَدَتْ فَقَدْ خَابَ وَخَسِرَ
‘কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম নামাজের হিসাব হবে। যদি নামাজ ঠিক হয়, তাহলে সে সফল ও কামিয়াব। আর যদি নামাজ ঠিক না থাকে, তাহলে সে ব্যর্থ ও বিফল।’ (সুনানে তিরমিজি: ৪১৩)
সহিহ মুসলিমে এসেছে রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন:
إِنَّ بَيْنَ الرَّجُلِ وَبَيْنَ الشِّرْكِ وَالْكُفْرِ تَرْكَ الصَّلَاةِ
‘বান্দা এবং শিরক ও কুফরের মাঝখানে সামানা হলো সালাত পরিত্যাগ করা।’ (সহিহুল মুসলিম: ১৩৪)
প্রিয় বোন! সন্তানকে শৈশব থেকেই সালাতে অভ্যস্ত করে তুলতে না পারলে বড় হয়ে নিয়মিত সালাত আদায় করা তার জন্য অনেক কঠিন হয়ে যাবে তাই আপনি যদি চান আপনার আদরের সন্তান নিয়মিত সালাত আদায় কারি হোক, তবে ছোট কাল থেকেই তাকে যথাযথভাবে গড়ে তুলতে হবে। আমরা সন্তানকে সালাতে অভ্যস্ত করতে সহায়ক কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা কর ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় বোন! সন্তানকে সালাতে অভ্যস্ত করে তুলতে হলে অবশ্যই মা-বাবাকে সালাতের প্রতি খুবই গুরুত্ব দিতে হবে, সন্তান যেন নিজের চোখে দেখে তার মা-বাবা সালাতকে কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছেন, আপনার ছেলে যদি ইশারের আগেই ঘুমিয়ে পড়তে চায় তাকে বলুন, একটু অপেক্ষা কর আমরা এক সঙ্গে ইশারের সালাত পড়ব তারপর ঘুমাব। কোথাও বেড়াতে বের হবেন এদিকে সালাতের সময়ও হয়ে এসেছে তাকে বলুন সালাত পড়েই বের হচ্ছি ইন শা আল্লাহ। তখন সে বুঝতে পারবে সালাতকে সব কাজের উপর অগ্রাধিকার দিতে হবে, আপনার সন্তান পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ঠিকমত আদায় করছে কি না? তার খোঁজ খবর নিন, নিয়মিত উৎসাহ ও পুরষ্কার দিন, তার প্রশংসা করুন।
সন্তান যখন অসুস্থ হয়ে পরে তখনো সাধ্য অনুযায়ী তাকে সালাত আদায়ে উৎসাহ দিতে হবে, যেন সে বুঝতে পারে সালাত পরিত্যাগের কোনো ওজর নেই, যেভাবেই হোক সময়মত সালাত আদায় করে নিতে হবে। কোথাও সফরে গেলে তাকে কসর কিভাবে পড়তে হয় তা শিখিয়ে দিন।
প্রিয় বোন! আপনার সন্তানের হৃদয়ে সালাতের প্রতি দাওয়াত দেওয়ার মানসিকতা তৈরি করুন। সে যেন হিম্মত ও সাহসের সঙ্গে বন্ধু-বান্ধব ও সহপাঠিদের সালাতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে পারে, কেননা সালাতের প্রতি দাওয়াত দান কারী কখনো নিজে সালাত ত্যাগ করতে পারেনা, সালাতের সময় হওয়ার সাথে সাথে আপনার সন্তান যেন সব কাজ ছেড়ে সালাতের জন্য প্রস্তুতি নেয়, তাকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দিন সহপাঠিদের কেউ সালাতে অবহেলা করলে তাকে নিয়ে ঠাট্টা করা যাবেনা বরং বুঝিয়ে-সুজিয়ে সালাতের প্রতি মনোযোগী করে তুলতে হবে।
সন্তানদেরকে ফরজ সালাতের তা'লিম দেওয়ার পাশাপাশি নফল সালাতের প্রতিও উদ্বুদ্ধ করুন, নফলে অভ্যস্ত করে তুলতে পারলে তার জন্য ফরজ ছাড়া অনেক কঠিন হয়ে যায়, সন্তানকে সালাতের গুরুত্ব ও ফজিলতের কথা শুনান সালাতের পুরুস্কার ও সালাত ত্যাগের গুণাহের কথাও তাকে বুঝিয়ে বলুন তাকে বলুন সালাত হল জান্নাতের চাবি সালাত ছাড়া জান্নাতে প্রবেশ করা যাবেনা, সন্তানের পড়া-শোনাতেও সালাতকে সংযুক্ত করুন। তাকে গনিত শিখাচ্ছেন কিংবা নামতা শিখাচ্ছেন সেখানেও সালাতকে জুড়ে দিন।
যেমন: এক ব্যক্তি ফজরের দু'রাকাত, যোহরের চার রাকাত এবং আছরের চার রাকাত ফরজ সালাত আদায় করেছে, সে মোট কয় রাকাত সালাত আদায় করেছে? কিংবা বলতে পারেন এক ব্যক্তি প্রতিদিন ১৭ রাকাত ফরজ সালাত আদায় করে, পাঁচ দিনে সে মোট কত রাকাত ফরজ সালাত আদায় করে? এভাবে পড়াশোনায় সালাতের আলোচনা নিয়ে আসুন বার বার। সালাতের কথা শুনলে সে তার গুরুত্বের কথা উপলব্ধি করতে পারবে।
প্রিয় বোন! ছোট কাল থেকেই যদি আদরের সন্তানকে বিভিন্ন উপায়ে সালাতে অভ্যস্ত করে তুলতে পারেন তবে ইন শা আল্লাহ পরিণত বয়সে সে আর কখনো বে-নামাযি হবেনা। আল্লাহ তাআলা সকল মুসলিম শিশুদের সালাতে অভ্যস্ত হয়ে বেড়ে উঠার তাওফিক দিন আমিন। ইয়া রব্বাল আলামিন।
Collected
Comment