আপনি যদি দাওয়াতি কাজে ভালো ফলাফল লাভ করতে চান তাহলে আপনি আপনার শ্রোতাকে আকৃষ্ট করার মত কিছু করতে হবে। যেমন আসহাবে উখদুদের সেই তাওহীদবাদী বালকের ঘটনা অনেকেরই জানা আছে। যে বালকের নিকট যখন কোন ব্যক্তি রোগব্যাধী নিয়ে উপস্থিত হতো, বালক দোয়া করার সাথে সাথে তা কবুল হয়ে যেত। ফলে মানুষ তার প্রতি আকৃষ্ট হতো, তার দাওয়াত কবুল করে নিতো। ফলে সে মানুষের নিকট খুব জনপ্রিয় হয়ে গেলো, যার কারনে জালিম বাদশাহ তাকে জনগনের সামনে কিছু না করে পাহাড়ে ও সমুদ্রে বার বার হত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।
( এখন থেকে একটা শিক্ষনীয় ব্যাপার হলো গোটা সমাজের সকল মানুষের নিকট যদি গ্রহন যোগ্যতা বাড়ে তাহলে জালিমরা চাইলেই আপনাকে কিছু করতে পারবে না।
রাসূল সাঃ এর চাচা আবু তালিব যতদিন বেঁচে ছিলো ততদিন জালিমরা রাসূল সাঃ এর উপর সরাসরি আক্রমন করতে পারে নি।তবে মনে রাখবেন ইবাদাত করার উদ্দেশ্য যেন গ্রহনযোগ্য বা জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য না হয়।আল্লাহ খাঁটি বান্দা হলে গ্রহনযোগ্য তিনিই বাড়িয়ে দিবেন। )
আপনি যদি লক্ষ্য করে দেখেন, রাসূল সাঃ যখন মদীনার মানুষদের দাওয়াত দিলেন তখন তারা চিন্তা করে দেখলো, তাদের মাঝে দিনের পর দিন যুদ্ব বিগ্রহ চলছে। যার ফলে তারা মারামারি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছে,ফলে তারা দেখলো ইসলামই তাদের মাঝে শান্তি ও ঐক্য নিয়ে আসতে পারে। ফলে তারা ইসলামের সুমহান বানী শুনার পর তা গ্রহন করে নিলেন।
হযরত ইউসুফ আঃ এমন সময় মিশরের মন্ত্রী হলেন যখন মিশরে দুর্ভিক্ষ আসন্ন।ফলে উনি মন্ত্রী হয়ে যখন তাদের দুর্ভিক্ষ থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্লান পরিকল্পনা নিলেন এবং মিশর বাসী যখন উনার মাধ্যমে দুর্ভিক্ষ থেকে পরিত্রান পেল তখন মিশর বাসী একে একে দাওয়াতও কবুল করে নিলেন এমনকি স্বয়ং মিশরের বাদশাহও উনার দাওয়াত গ্রহন করে নিলেন।বাদশাহ তার পুরো ক্ষমতা ইউসুফ আঃ এর নিকট অর্পন করলেন।
এবার আমরা একটু বর্তমান পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য করলে দেখবো, বর্তমান সমাজের বেশিরভাগ যুবক তরুনরা পাপ করতে করতে মানষিক এক চরম হতাশা ভোগ করে, তারা হতাশা থেকে বের হয়ে আসতে চায়, তারা মুক্তি চায়। তারা চায় শান্তি।আর এ পরিস্থিতিতে তাদেরকে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার এক সুবর্ন সুযোগ আছে।
কিন্তু তারা এমন ব্যক্তি খুঁজে পায় না, যারা তাদের জন্য উত্তম উপদেশ দান কারী হবে, যারা তাদের সমস্যা বুঝবে। যাদের নিকট তারা উপস্থিত হলে মনে এক প্রশান্তি পাবে।কিন্তু যদি আপনি সত্যিকারে নেককার হতে পারেন তাহলে যারা আপনার সাথে উঠাবসা করে তারা শান্তি পাবে।
যেমন ইমাম ইবনে তাইমিয়ার ব্যাপারে বলা হয়েছেঃ
ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, 'আল্লাহ ভালো জানেন,আমি শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এর চেয়ে সুখী জীবন-যাপনকারী কাউকে দেখিনি
সংকীর্ণ জীবনের অধিকারী, যেখানে বিলাসিতা নেই, স্বাচ্ছন্দ্য নেই; সেইসাথে রয়েছে বন্দি জীবন, ধমকি ও কষ্টের জীবন; তা সত্ত্বেও তিনি মানুষের
মাঝে উত্তম জীবন-যাপনকারী; খোলা মন, মজবুত হৃদয় ও সবচেয়ে বেশি আনন্দের অধিকারী। তার
চেহারায় স্বাচ্ছন্দ্যের ভাব সর্বদা প্রস্ফুটিত। আমাদের যখন ভয় বেড়ে যেতো, ধ্যান-ধারণার অবনতি
ঘটত, জমিন সংকীর্ণ হয়ে আসত, তখন আমরা তাঁর কাছে আসতাম, তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতাম, তাঁর কথা শুনতাম, এতেই আমাদের সব সমাধান
হয়ে যেতো, আমারা শক্তি, দৃঢ়তা ও প্রশান্তি লাভ করতাম। -আল-ওয়াবিলুস সায়্যিব ৬৭
একজন ব্যক্তি যখন সত্যিকারে তাযকীয়া অর্জন করতে পারে তখন তার নিকট যারাই আসে তারাই এক প্রশান্তি লাভ করে, মানুষ এরকম ব্যক্তিদের নিকট ভীড় জমায়। এজন্য দেখবেন যুগে যুগে যারা বিরল তাযকীয়া লাভ করেছেন এবং তাযকীয়া লাভের পর দ্বীনের যে অঙ্গনেই কাজ করেছেন সেখানেই তারা অত্যান্ত সুফল লাভ করেছেন। যাদের দ্বারাই দ্বীনের বিশাল কোন কাজ হয়েছে তারাই কোন না কোন উঁচু মাপের শায়েখ থেকে তাযকীয়া হাসিল করেছেন।
যেমন খেলাফত পতনের পর থেকে বিশ্বে যতগুলো দল হয়েছে প্রায় সবগুলো জামায়াহ কোন না কোন ভাবে ইখওয়ানের সাথে যুক্ত ছিলো। খোদ শাইখ ওসামা বিন লাদেন রহঃ ইখওয়ানের সদস্য ছিলেন।শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহঃ এর বইয়ের পৃষ্টার পর পৃষ্টায় ইখওয়ানের ইতিহাস তুলে ধরেছেন।কেননা বর্তমান ইখওয়ান আর শুরুর দিকের ইখওয়ান এক ছিলো না।
সেই ইখওয়ানের যিনি প্রতিষ্টাতা ছিলেন তিনি হলেন শায়খ হাসান আল বান্না (রহঃ)।আপনি যদি শাইখের জীবনি পড়েন তাহলে দেখতে পাবেন তিনি মিশরের বড় বড় বুজুর্গের নিকট দিনের পর দিন খুব বিরল তাযকীয়া লাভ করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একজন হলেন শাইখ হোছাফী (রহঃ) ও শায়খ যাহরান (রহঃ)।তিনি উনাদের সান্নিধ্যে থেকে খুঁব বেশি আমল করতেন,কান্নাকাটি করতেন, যিকিরের হালাকায় বসে দীর্ঘ সময় যিকির করতেন, দীর্ঘ সময় ব্যাপি নীরব থাকতেন, মাঝে মাঝে উনার শাইখের সাথে কবর খুড়ে সেই কবরে বসে থাকতেন, কান্নাকাটি করতেন।
ফলে যখন শাইখ দ্বীন প্রতিষ্ঠার কাজ করা শুরু করেন তখন অল্প দিনে গোটা মিশরে উনার দাওয়াত সাড়া ফেলে দিয়েছিলো। এমনকি তিনি ইখওয়ানের বিরাট একটি অংশকে ফিলিস্তিনে জিহাদ করার জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিলেন, তারা বিরাট সাফল্যও লাভ করে।
এরপরে উপমহাদেশের বিখ্যাত মুজাহিদ ও বুজুর্গ সাইয়্যেদ আহমদ শহিদ রহঃ প্রথমে অনেক বড় বড় বুজুর্গের সান্নিধ্যে থেকে খুব উচ্চ মাপের তাযকীয়া লাভ করেছেন। ফলে অল্প দিনের মধ্যে উনার দাওয়াত উপমহাদেশের আনাচে-কানাচে পৌছে যায়। এক পর্যায়ে তিনি জিহাদের ময়দানে নামেন, অল্প দিনের ব্যবধানে বিশাল একটা অংশ দ্বীন প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
আপনি দেখুন শাইখ ওসামা বিন লাদেন রহঃ কত বড় তাযকীয়ার অধিকারী ছিলেন। উনাকে কাফেররা কত ভয় পেত এবং আজও পাচ্ছে। অথচ তিনি ছিলেন অধিক ক্রন্দন কারী। উনি বক্তব্য দিতে গেলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়তেন।তিনি ছিলেন খুবই নরম দিলের অধিকারী। আর আমরা শেষ কবে এক ফোটা চোখের পানি ঝরিয়েছি তা আমাদের জানা নাই।
বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় দায়ী ড.জাকির নায়েকের জীবনি দেখুন, উনি ব্যক্তিগতভাবে খুব আমলদ্বার। তিনি তার রুটিনে বলেছেন, দীর্ঘ সময় ব্যাপি তাহাজ্জুদ পড়েন, নিয়মিত সালাতুত চাশতের নামায পড়েন,পাশাপাশি ইলম অর্জনতো আছেই। ফলে আল্লাহ উনাকে কত উপরে উঠালেন তা সবার সামনে স্বষ্ট। আপনি যদি খেয়াল করেন, তাহলে দেখবেন উনি কিছু প্রশ্নের উত্তর এমন ভাবে দেন, লক্ষ পৃষ্টা বই পড়েও তা আপনি পাবেন না। উপস্থিত এরকম উত্তর দেওয়া এক মহান কারামত।
আমরা অনেকেই শাইখ আহমাদ মূসা জীবরিল হাফিঃ এর বই পড়েছি। উনি থাকে সুদূর আমরিকা অথচ উনার বই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। উনার বই পড়লে কিংবা উনার ছোট ছোট কথাও মানুষকে ব্যাপক প্রভাবিত করে। কিন্তু উনিও বড় বড় শাইখদের নিকট থেকে খুব উচ্চ মাপের তাযকীয়া লাভ করেছেন।তাযকীয়া অর্জনের জন্য দীর্ঘদিন উনি বড় বড় শাইখদের সান্নিধ্যে থেকেছেন। উনার বইগুলোই সাক্ষী দেয় উনি কত তাযকীয়ার অধিকারী ছিলেন।যিনি উনার বই পড়েন তিনিই শুধু জ্ঞানই পান না এর সাথে অনেক স্বাদও অনুভব করেন ।
বাংলাদেশের এক সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় আলিম দায়ী ছিলেন মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাইদী (হাফিঃ)।
উনারা পারিবারিক দিক থেকে পীরের সাথে একটা সম্পর্ক আছে,তিনি পড়া লেখাও করেছেন ছারছিনা মাদরাসায়। সেদিক থেকে উনি অত্যান্ত তাযকীয়ার অধিকারী ।বহু বছর রমজানে মক্কা মদীনায় তিনি ইতিকাফ করতেন।জীবনে বহু বার তিন হজ্ব করেছেন, উনি বাংলাদেশে এমন এক দায়ী ছিলেন যে,এক সময় প্রায় সবাই উনার ওয়াজ শুনে শুনে বড় হতো। এমনকি বাংলাদেশ স্বাধীনের পর থেকে ওয়াজ মাহফিলে উনার ওয়াজ শুনে সবচেয়ে বেশি মুসলিম হয়েছে। একসাথে৩০/৪০ জন মুসলমান হতো। (এখানে প্যান্ডেল করে যে আয়োজন করা হয় সেটার কথা বলা হলো)
জামায়াত ইসলামি জনপ্রিয় হওয়ার পিছনে উনার বিরাট অবদান আছে। বলা যায় উনার দ্বারাই জামায়াত ইসলামী ব্যাপক প্রচার প্রসার লাভ করে। বহু মানুষ আছে যারা জামায়াত ইসলামকে দেখতে না পারলেও উনাকে কিন্তু ঠিকই ভালোবাসে।
আপনি যদি খুব ভালোভাবে তাযকীয়া অর্জন করতে পারেন তাহলে আপনার গ্রামের যুবক তরুনরাও আপনার নিকট ভীড় জমাবে। আপনার সান্নিধ্যে তারা স্বস্তি খুঁজে পাবে।আপনার সামান্য কথাতেই তারা ব্যাপক পরিবর্তন হবে। যদি আপনার সান্নিধ্যে এসে তারা এমন সুখ পায় যে সূখ হারাম রিলেশান কিংবা অন্য কোথাও পায় না তাহলে মনে রাখবেন আপনি অল্প দিনে ব্যাপক দাওয়াতি কাজ করতে পারবেন। তবে আপনি অনেক মুজাহাদা করতে হবে, আপনার নিজের অন্তরের অবস্থাই যদি শোচনীয় হয়, কলুষিত হয় তাহলে আপনার দ্বারা তারা কোন ফায়দা পাবে না৷
আসলে মানুষ যখন কাহারো নিকট থেকে কোন উপকার লাভ করে তখন তাকে ভালোবাসে, মানুষ তাকে ভুলে না,এটাই মানুষের তবিয়ত । একজন সত্যিকারে উঁচু পর্যায়ের আধ্যাতিকতা সম্পূর্ন ব্যক্তি মানুষের যে উপকার করতে পারে তা আর কেউ পারে না। কেননা একজন সম্পদশালী ব্যক্তি সম্পদ দিয়ে বাহ্যিক উপকার করে, একজন ডাক্তার দেহের রোগের চিকিৎসা করে দেহের উপকার করে,কিন্তু একজন তাযকীয়া অর্জনকারী ব্যক্তি মানুষের কলবের চিকিৎসা করে যেটা আর অন্য কেউ পারে না।
কেউ যদি উচ্চ মাপের তাযকীয়া লাভ করতে পারে তাহলে দেখা যায় পরষ্পর শত্রুতা পোষন করা ব্যক্তিরাও তার নিকট এসে ঐক্যবদ্ব হয়। যেমন শাইখ উসামা বিন লাদেন রহঃ এর সামনে ভিন্ন মত পোষনকারী ব্যক্তিরাও এসে জড়ো হতো। এতে সবাই খুব আশ্চর্য হয়ে যেত। আজও যদি উঁচু মাপের তাযকীয়া অর্জন কারী কোন ব্যক্তি তৈরী হয় তার নিকট সবাই এসে ঐক্যবদ্ব হবে।
কিভাবে অগ্রসর হবেন?
আপনি হঠাৎ করেই খুব উপরে উঠতে পারবেন না, তাই আস্তে আস্তে শুরু করুন। যে গাছের গোড়ার দিক মোটা থাকে সে গাছ খুব অল্পতে ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কা থাকে না। তাই এমন ভাবে দ্বীনের দিকে অগ্রসর হোন যাতে কোন ঝড় তুফান আপনাকে টলাতে না পারে। সেজন্য প্রয়োজন একজন উচু মাপের কোন ব্যক্তি সান্নিধ্যে থাকা। যদি তা না পারেন চেষ্টা করুন পূর্বের বড় বড় মাপের আলিমদের বই পড়তে, কেননা বইয়ের মাঝে আপনি তাদের সান্নিধ্যে খুঁজে পাবেন।
নিজের জন্য ছোট ছোট প্লান নিন, অনেক বড় প্লান নিলে মাঝপথ থেকে ফিরে আসার সম্ভবনা থাকে। যেমনঃতিনদিনের ছোট একটা পরিকল্পনা গ্রহন করুন। তিনদিন একটানা রোজা থাকবেন। যদি আইয়্যামে বীজের রোজা হয় তাহলে সবচেয়ে ভালো।
এই তিনদিন শুধু মাত্র মেরুদণ্ড সোজা থাকে এমন খাবার গ্রহন করুন, সেটা হতে পারে পাঁচ টা খেজুর বা তার ছেয়ে কিছু বেশি। এরপর তিনদিনে একটা অপ্রয়োজনীয় কথাও বলবেন না।ইন্টারনেটে এক মিনিট সময়ও দিবেন না।
তিনদিনে যেন এক মিনিট সময়ও যিকির বিহীন না কাটে সেই চেষ্টা করবেন। চাশতের নামায ও তাহাজ্জুদ ছাড়বেন না। এরপর দিনের বেশিরভাগ সময় তেলোয়াতে কাটাবেন, ঘুম একদম কম যাবেন।
এতে অনেক কষ্ট হতে পারে, কিন্তু মনে রাখবেন আপনি মাত্র তিনদিন এই কষ্ট করতে হচ্ছে। এরপর শুরু হবে আপনার জন্য মজার দিন,আপনি চোখ দিয়ে যখন অঝোরে পানি ঝরবে আর অন্তরের দাগ মুছে যাবে আপনি এক আলাদা প্রশান্তি অনুভব করবেন ।
যদি তিনদিন এভাবে শেষ করা যায়, এরপর আবার এক সপ্তাহের প্লান নিন।
পুরো সপ্তাহে ৩৫ ওয়াক্ত নামায জামায়াতে পড়ার চেষ্টা করুন। যদি আপনি নামাযি হয়ে থাকেন তাহলে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ব হোন যে, ৩৫ ওয়াক্ত নামায পরিপূর্ণ মনোযোগ সহ পড়বেন। এক ওয়াক্তও যেন মনোযোগ ছাড়া না হয়। যদি মনোযোগ এদিক ওদিক যায়, তাহলে কয়েক রাকাত নফল নামায বেশি পড়ুন,দোয়া করুন যেন খুশুখুযু ধরে রাখা যায়। সাপ্তাহিক দুই রোজা রাখুন, একটি অনর্থক কথাও যেন মুখ দিয়ে বের না হয় সে চেষ্টা করুন, কম খাওয়ার চেষ্টা করুন। এরপর অনাহুত হাসি ঠাট্টা থেকে বিরত থাকুন।
আর যিকির যেন মুখ থেকে না ছুটে সেই ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।
এভাবে এক সপ্তাহ শেষ হলে এবার দশ দিন,এরপর আরো দশ দিনের প্লান নিন, তারপর পনেরো দিন, তারপর বিশ দিন, তারপর একমাসের প্লান করুন৷ নিজেকে এভাবে এগিয়ে নিন। তাহলে দেখবেন আপনি আস্তে আস্তে খুব উচ্চ পর্যায়ে যেতে পারবেন ইনশাআল্লাহ।
নিজের মাঝে শয়তানের অনেক ধৌকার টের পাবেন, যদি শয়তান আপনাকে ধৌকা দেয় তাহলে কোন বড় আলিমের কাছ থেকে চিকিৎসা নিন।
তাযকিয়া অর্জন করলে প্রথম লাভঃ
আমরা কুরআন পড়ি, কিন্তু কুরআনের গভীর মর্ম উপলব্ধি করতে পারি না। আপনি যখন একদিকে তাযকীয়া অর্জন করবেন, অন্যদিকে কুরআন ও হাদিসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পড়তে থাকবেন তখন দেখবেন আপনি এক গভীর মর্ম উপলব্ধি করতে পারতেছেন।ফলে দেখা যায় আপনি যখন কুরআন ও হাদিস থেকে কোন কথা বলবেন তখন সে কথা শ্রোতা খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করবে, শ্রোতা দিলে গিয়ে কথাগুলো রেখাপাত করবে৷
আপনি যখন তাযকীয়া অর্জন করবেন এবং ইবাদাতে স্বাদ পাবেন তখন আপনার অনুভূতি আপনি কোন শ্রোতার নিকট শেয়ার করলে সেটা খুব প্রভাবিত করবে।
যেমন ধরুন, আপনি জাহান্নামের বয়ান করতেছেন, আর জাহান্নামে বয়ান আপনার দিলকে দুমড়েমুচড়ে দিচ্ছে।ভয় পশম খাড়া হয়ে গেছে, আপনি খুব ভীত হয়ে গেলেন, এবার এরকম অবস্থায় যখন আপনার শ্রোতা শুনবে তখন তার অবস্থাও ভয়াবহ হয়ে যাবে। সে খুবই আতংকিত হয়ে যাবে। রাসূল সাঃ এর শুধু মাত্র কুরআন তেলোয়াত শ্রবন করে কাফেরদের চেহারা বিবর্ন হয়ে যেত, ভয়ে ভীত হয়ে যেতো।
আবার যখন জান্নাত নিয়ে আলোচনা করবেন তখন আপনি নিজেই যখন আনন্দে আত্নহারা হয়ে যাবেন তখন শ্রোতাও খুব আনন্দিত হয়ে যাবে। কিন্তু আপনার নিজেরই যদি ভিতরে আনন্দ না থাকে, জান্নাতের প্রতি আগ্রহ না থাকে তাহলে শ্রোতার আগ্রহ কিভাবে হবে?
আর আমি দেখেছি যেকোন দায়ী যদি ভালোভাবে তাযকীয়া অর্জন করে দাওয়াতি কাজ করে, আল্লাহ তার মাঝে বিশেষ কোন গুন দিয়ে দেন, যার ফলে সে মানুষকে খুব দ্রুত আকৃষ্ট করতে পারে। এটাই হলো এক কারামত।
Comment