"যখনই অবসর পাবেন তখনই ইবাদাতে আত্মনিয়োগ করুন" যারা দ্বীন কায়েমের কাজে নিয়োজিত তাদের জন্য একটি উপকারী লিখা।
আমরা অনেক সময় দ্বীন কায়েমের জন্য অনেক চেষ্টা প্রচেষ্টা, কষ্ট সহ্য করার পর দেখা যায় নফল ইবাদাতে সময় কম দিয়ে থাকি। যিকির আযকার, রাতের নামায, নফল রোজা, দোয়া ইত্যাদি ইবাদাত কম করি। মনের ভিতর কেমন যেন একটা চিন্তা চলে আসে আমিতো অনেক বড় বড় আমল করতেছি, নফল ইবাদাত একটু কম করলেও চলবে। ইসলামের বিজয়ের পর তখন অনেক বেশি আমল করবো। কিন্তু না ভাই!এটা শয়তানের পক্ষ থেকে একটা ধোকা।
একটু দেখুন, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ স্বয়ং তার নবীকে বলেছেনঃ
فَاِذَا فَرَغۡتَ فَانۡصَبۡ ۙ﴿۷﴾ وَ اِلٰی رَبِّکَ فَارۡغَبۡ ﴿۸﴾
অতএব যখনই অবসর পাও, তখনই (আল্লাহর ইবাদতে) সচেষ্ট হও।আর তোমার প্রতিপালকের প্রতিই মনোনিবেশ কর।(সূরা ইনশিরাহ ৭-৮)
অর্থাৎ আপনি( রাসূল সাঃ)যখন দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ থেকে অবসর পান তখনই অন্য কাজের জন্য তৈরী হয়ে যান।আর তা হলো আল্লাহর যিকির, দোয়া ও ইস্তেগফার আত্মনিয়োগ করুন।অধিকাংশ তাফসীরবিদরা এই তাফসীরই করেছেন।
এখানে فَانۡصَبۡ শব্দটি نصب থেকে উদ্ভুত। তার আসল অর্থ পরিশ্রম ও ক্লান্তি।এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে,ইবাদাত ও যিকির এতো পরিমান করা উচিত যাতে কিছু কষ্ট ক্লান্তি অনুভব হয়। আরাম পর্যন্তই সীমিত রাখা উচিত নয়।
এবার চিন্তা করুন, আল্লাহ তার হাবীবকে বলেছেন যখন তিনি অবসর পাবেন তখন যেন এমন ইবাদাত করেন যাতে কষ্ট ক্লেশ হয়।এখন প্রশ্ন হলো তিনি ( রাসূল সাঃ) কি থেকে অবসর পাবেন?।
আমরা সকলেই জানি রাসূল সাঃ মক্কার জীবনে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করতো, ফলে প্রচুর জুলুম , কটু কথা শুনতে হতো। আর এসব কাজ করাও তো সর্ববৃহৎ ইবাদাত।
কিন্তু এসব ইবাদাত হলো মানুষের মধ্যস্ততায় করা হয়। অত্র আয়াতে উদ্দেশ্য হলো আপনি শুধু এজাতীয় পরোক্ষ ইবাদাতেই ক্ষান্ত হবেন না। বরং যখনই অবসর পাবেন তখনই পত্যক্ষভাবে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করুন। তার কাছেই সাফল্যলাভের দোয়া করুন। মূলত দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের মূল উদ্দেশ্যও হলো মানুষ যেন শিরক মুক্ত হয়ে আল্লাহর ইবাদাতে আত্ননিয়োগ করুন।
সাধারনত দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ সবসময় থাকে না, ইসলাম বিজয় হয়ে গেলে এসব কাজের পরিধি কমে আসে।
কিন্তু দোয়া, যিকির, ইস্তেগফার, নফল ইবাদাত সবসময় করতে হয়। এসব ইবাদাত কখনই ছাড়া যায় না।
রাসূল সাঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে যে দায়িত্ব পেয়েছেন তা তিনি পরিপূর্ণ পালন করেছেন।সবার নিকট তিনি দাওয়াত পৌছিয়েছেন, এক্ষেত্রে কোন ছাড় দেন নি,কত জুলুম নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। কত না খেয়ে থাকতে হয়েছে। অথচ এরপরেও উনাকে বলা হচ্ছে এসব থেকে অবসরের পর যেন তিনি ইবাদাতে আত্মনিয়োগ করেন।
তাহলে আমরা যারা দ্বীনি দায়িত্ব পরিপূর্ণ পালন করি না, দ্বীন কায়েমের কাজে অনেক অবহেলা করি তাদেরতো সুযোগ পেলেই অনেক বেশি যিকির, দোয়া ইস্তেগফার, নফল নামায আদায় করা উচিত৷
আর দ্বীনি দায়িত্ব পালনের আগ্রহ উদ্দীপনা বাড়ে এসব পত্যক্ষ ইবাদাতের মাধ্যমে। কেননা আপনি যখন সবার আড়ালে ইবাদাত করবেন তখন মনে হবে আপনি রবের সাথে কথা বলছেন, এই ইবাদাতে নিজেকে রবের খুব কাছে মনে হয়।
কলবের প্রশান্তি, নূর ও দ্বীন কায়েমের কাজে আগ্রহ এসব ইবাদাতের মাধ্যমে বাড়তে থাকে।
যেমন যিকিরের ব্যাপারে বলা হয়েছেঃ
اَلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ تَطۡمَئِنُّ قُلُوۡبُہُمۡ بِذِکۡرِ اللّٰہِ ؕ اَلَا بِذِکۡرِ اللّٰہِ تَطۡمَئِنُّ الۡقُلُوۡبُ ﴿ؕ۲۸﴾
যারা বিশ্বাস করেছে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের হৃদয় প্রশান্ত হয়। জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্ত হয়।(সূরা রাদ ২৮)
আপনি দ্বীন কায়েমের যতই চেষ্টা করুন না কেন, যতই দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করুন না কেন, আপনাকে এটা মেনে নিতে হবে যে, আপনার চেষ্টা দ্বারাই বিজয় আসবে না। বিজয় আসতে হলে আপনাকে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। তার নিকট সাহায্য চাইতে হবে৷ আপনি যখন দ্বীন কায়েমের কাজ করতে শুরু করবেন তখন আপনি ভুল করবেনই। আপনার দ্বারা ভুল হওয়ার সম্ভবনা থাকেই কিন্তু এই ভুল থেকে বাঁচতে হলে রবের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে, তার নিকট আশ্রয় চাইতে হবে৷
আপনি বাহ্যিক শত্রুদের কথা দিয়ে কিংবা শক্তি দিয়ে দমন করবেন। কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনার আরো দুইটা শত্রু আছে, যাদেরকে আপনি দেখতেছেন না এবং ধরতেও পারছেন না। বাহ্যিক শত্রুতো কখনও থাকে আবার কখনও থাকে না। কখনও সুযোগ পায় আবার কখনও পায় না। কিন্তু যে অদৃশ্য শত্রু সবসময়ই আপনাকে ধোকা দিতে চায়, সবসময় আপনার পিছনে লেগে থাকে। সে কখনও সরাসরি আপনার দ্বারা গুনাহের কাজ করায়, আবার কখন নেক সূরতে এসে আপনাকে ধোকা দিবে, আপনাকে এমন ওয়াসওয়াসা দিবে যে, আপনার কাছে মনে হবে আপনি অনেক বড় একটা নেককাজ করতেছেন অথচ আসলে তা আপনার জন্য ও উম্মাহর জন্য ভয়ংকর ক্ষতিকর।
আর আপনার সেই দুই শত্রু হলো নফস ও শয়তান। এখন আপনি সেই শত্রুর মোকাবিলা কি দিয়ে করবেন? তার মোকাবিলাতো তলোয়ার কিংবা আধুনিক কোন অস্র দিয়ে সম্ভব নয়। তার মোকাবিলা করতে হলে অবশ্যই আল্লাহর নিকট দোয়া, ইস্তগফার, নফল নামায নফল রোজা বেশি বেশি করতে হবে। অবসর পেলেই রবের ইবাদাতে নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইতে হবে। তার নিকটই আশ্রয় চাইতে হবে৷
কিন্তু আপসোসের বিষয় হলো আমরা অনেক সময় এসব আমলকে কম গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমরা মনে করে থাকি এসব আমল ইসলামের বিজয়ের পরে করবো, অথচ অত্র সূরাতে আল্লাহ তার রাসূর সাঃ কে মক্কাতেই এই নির্দেশ দিয়েছেন।মদিনাতে কিংবা মক্কা বিজয়ের পরে নয়।
আর বাস্তব কথা হলো যারা দ্বীন কায়েমের কাজের সাথে বেশি বেশি নফল ইবাদাত, যিকির, দোয়া, কান্নাকাটি করতে পারে তাদের দ্বারাই দ্বীনের কাজ অনেক বেশি হয়। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ একই সাথে ইলম অর্জন করে একজন বড় ইমাম হয়েছেন, জিহাদ ও করেছেন, আবার জ্বেলও খেটেছেন৷ এরপরেও তিনি প্রচুর যিকির, নফল ইবাদাত করতেন।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বর্ণনা করেভেন-
أنه جاء إليه وقد ارتفع النهار فاستغرب جلوسه فقال له : ( هذه غدوتي لو لم أتغدها سقطت قواي )
“একদা ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) তাঁর নিকট আগমন করেন, তখন সূর্য অনেক উপরে উঠে যাওয়া সত্ত্বেও আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) তাঁর যিকিরের হালতে রয়েছেন। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) এতে আশ্চর্যান্বিত হলেন । আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বললেন, “যিকির হল আমার সকলের নাস্তা, যদি আমি এটি আহার না করি আমার শক্তি চলে যাবে” [আল-ওয়াবিলুস সাইয়্যিব, পৃষ্ঠা-৫৩, আর-রদ্দুল ওয়াফির, পৃষ্ঠা-৬৯/
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) এর আমলও এটি ছিল । তিনিও দীর্ঘ সময় যিকির করতেন, এমনকি দীনের অনেক অংশ অতিবাহিত হয়ে যেত। [ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওযিয়া হায়াতুহু ও আছারুহু, পৃষ্ঠা-৪৬, আদ-দুরারুল কামিনা,আল্লামা ইবনে হাযার আসকালানী (রহঃ), খ--৪, পৃষ্ঠা-২১]
ইমাম যাহাবী (রহঃ) তাঁর সম্পর্কে বলেছেন-
لم أر مثله في ابتهاله واستغاثته وكثرة توجهه
"আল্লাহর নিকট দু'য়া, ক্রন্দন, সাহায্য
প্রার্থনা ও অধিক তাওয়াজ্জুহের অধিকারী তার মত আর কাউকে আমি দেখিনি”
[ওকাফাতুন বাহিয়্যা মিন হায়াতি শাইখিল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, আৰু ইয়াঝিন হামযা বিন ফা'য়ে আল ফাতহী, পৃষ্ঠা-৪ (শামেলা) |
কল্পনা করে দেখুন উনারা কত বড় বড় ইমাম ছিলেন, কত গুরুত্ব পূর্ন কাজ করতেন, কিন্তু এরপরেও যিকির দোয়া, কান্নাকাটি,নফল ইবাদাত উনারা প্রচুর সময় দিতেন। কোন কিছুকে ছোট করে দেখতেন না। বড় বড় চার ইমামও প্রচুর ইজতেহাদের পাশাপাশি প্রচুর ইবাদাত করতেন।
যারাই দ্বীনের জন্য বড় কিছু করেছেন তারাই গোপনে প্রচুর ইবাদাত করেন। প্রচুর তাহাজ্জুদ, যিকির দোয়ায় মাঝে তারা সময় অতিবাহিত করেন।
আপনাকে বিজয় পেতে হলে রক্ত ঝরানোর পাশাপাশি, চোখের অশ্রুও ঝরাতে হবে৷যখনই অবসর পাবেন তখনই আপনার রবের ইবাদাতে আত্মনিয়োগ করতে হবে,এতো বেশি করতে হবে যেন কষ্ট ক্লেশ হয়।
আমরা অনেক সময় দ্বীন কায়েমের জন্য অনেক চেষ্টা প্রচেষ্টা, কষ্ট সহ্য করার পর দেখা যায় নফল ইবাদাতে সময় কম দিয়ে থাকি। যিকির আযকার, রাতের নামায, নফল রোজা, দোয়া ইত্যাদি ইবাদাত কম করি। মনের ভিতর কেমন যেন একটা চিন্তা চলে আসে আমিতো অনেক বড় বড় আমল করতেছি, নফল ইবাদাত একটু কম করলেও চলবে। ইসলামের বিজয়ের পর তখন অনেক বেশি আমল করবো। কিন্তু না ভাই!এটা শয়তানের পক্ষ থেকে একটা ধোকা।
একটু দেখুন, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ স্বয়ং তার নবীকে বলেছেনঃ
فَاِذَا فَرَغۡتَ فَانۡصَبۡ ۙ﴿۷﴾ وَ اِلٰی رَبِّکَ فَارۡغَبۡ ﴿۸﴾
অতএব যখনই অবসর পাও, তখনই (আল্লাহর ইবাদতে) সচেষ্ট হও।আর তোমার প্রতিপালকের প্রতিই মনোনিবেশ কর।(সূরা ইনশিরাহ ৭-৮)
অর্থাৎ আপনি( রাসূল সাঃ)যখন দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ থেকে অবসর পান তখনই অন্য কাজের জন্য তৈরী হয়ে যান।আর তা হলো আল্লাহর যিকির, দোয়া ও ইস্তেগফার আত্মনিয়োগ করুন।অধিকাংশ তাফসীরবিদরা এই তাফসীরই করেছেন।
এখানে فَانۡصَبۡ শব্দটি نصب থেকে উদ্ভুত। তার আসল অর্থ পরিশ্রম ও ক্লান্তি।এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে,ইবাদাত ও যিকির এতো পরিমান করা উচিত যাতে কিছু কষ্ট ক্লান্তি অনুভব হয়। আরাম পর্যন্তই সীমিত রাখা উচিত নয়।
এবার চিন্তা করুন, আল্লাহ তার হাবীবকে বলেছেন যখন তিনি অবসর পাবেন তখন যেন এমন ইবাদাত করেন যাতে কষ্ট ক্লেশ হয়।এখন প্রশ্ন হলো তিনি ( রাসূল সাঃ) কি থেকে অবসর পাবেন?।
আমরা সকলেই জানি রাসূল সাঃ মক্কার জীবনে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করতো, ফলে প্রচুর জুলুম , কটু কথা শুনতে হতো। আর এসব কাজ করাও তো সর্ববৃহৎ ইবাদাত।
কিন্তু এসব ইবাদাত হলো মানুষের মধ্যস্ততায় করা হয়। অত্র আয়াতে উদ্দেশ্য হলো আপনি শুধু এজাতীয় পরোক্ষ ইবাদাতেই ক্ষান্ত হবেন না। বরং যখনই অবসর পাবেন তখনই পত্যক্ষভাবে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করুন। তার কাছেই সাফল্যলাভের দোয়া করুন। মূলত দাওয়াত ও তাবলীগের কাজের মূল উদ্দেশ্যও হলো মানুষ যেন শিরক মুক্ত হয়ে আল্লাহর ইবাদাতে আত্ননিয়োগ করুন।
সাধারনত দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ সবসময় থাকে না, ইসলাম বিজয় হয়ে গেলে এসব কাজের পরিধি কমে আসে।
কিন্তু দোয়া, যিকির, ইস্তেগফার, নফল ইবাদাত সবসময় করতে হয়। এসব ইবাদাত কখনই ছাড়া যায় না।
রাসূল সাঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে যে দায়িত্ব পেয়েছেন তা তিনি পরিপূর্ণ পালন করেছেন।সবার নিকট তিনি দাওয়াত পৌছিয়েছেন, এক্ষেত্রে কোন ছাড় দেন নি,কত জুলুম নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। কত না খেয়ে থাকতে হয়েছে। অথচ এরপরেও উনাকে বলা হচ্ছে এসব থেকে অবসরের পর যেন তিনি ইবাদাতে আত্মনিয়োগ করেন।
তাহলে আমরা যারা দ্বীনি দায়িত্ব পরিপূর্ণ পালন করি না, দ্বীন কায়েমের কাজে অনেক অবহেলা করি তাদেরতো সুযোগ পেলেই অনেক বেশি যিকির, দোয়া ইস্তেগফার, নফল নামায আদায় করা উচিত৷
আর দ্বীনি দায়িত্ব পালনের আগ্রহ উদ্দীপনা বাড়ে এসব পত্যক্ষ ইবাদাতের মাধ্যমে। কেননা আপনি যখন সবার আড়ালে ইবাদাত করবেন তখন মনে হবে আপনি রবের সাথে কথা বলছেন, এই ইবাদাতে নিজেকে রবের খুব কাছে মনে হয়।
কলবের প্রশান্তি, নূর ও দ্বীন কায়েমের কাজে আগ্রহ এসব ইবাদাতের মাধ্যমে বাড়তে থাকে।
যেমন যিকিরের ব্যাপারে বলা হয়েছেঃ
اَلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ تَطۡمَئِنُّ قُلُوۡبُہُمۡ بِذِکۡرِ اللّٰہِ ؕ اَلَا بِذِکۡرِ اللّٰہِ تَطۡمَئِنُّ الۡقُلُوۡبُ ﴿ؕ۲۸﴾
যারা বিশ্বাস করেছে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের হৃদয় প্রশান্ত হয়। জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই হৃদয় প্রশান্ত হয়।(সূরা রাদ ২৮)
আপনি দ্বীন কায়েমের যতই চেষ্টা করুন না কেন, যতই দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ করুন না কেন, আপনাকে এটা মেনে নিতে হবে যে, আপনার চেষ্টা দ্বারাই বিজয় আসবে না। বিজয় আসতে হলে আপনাকে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। তার নিকট সাহায্য চাইতে হবে৷ আপনি যখন দ্বীন কায়েমের কাজ করতে শুরু করবেন তখন আপনি ভুল করবেনই। আপনার দ্বারা ভুল হওয়ার সম্ভবনা থাকেই কিন্তু এই ভুল থেকে বাঁচতে হলে রবের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে, তার নিকট আশ্রয় চাইতে হবে৷
আপনি বাহ্যিক শত্রুদের কথা দিয়ে কিংবা শক্তি দিয়ে দমন করবেন। কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনার আরো দুইটা শত্রু আছে, যাদেরকে আপনি দেখতেছেন না এবং ধরতেও পারছেন না। বাহ্যিক শত্রুতো কখনও থাকে আবার কখনও থাকে না। কখনও সুযোগ পায় আবার কখনও পায় না। কিন্তু যে অদৃশ্য শত্রু সবসময়ই আপনাকে ধোকা দিতে চায়, সবসময় আপনার পিছনে লেগে থাকে। সে কখনও সরাসরি আপনার দ্বারা গুনাহের কাজ করায়, আবার কখন নেক সূরতে এসে আপনাকে ধোকা দিবে, আপনাকে এমন ওয়াসওয়াসা দিবে যে, আপনার কাছে মনে হবে আপনি অনেক বড় একটা নেককাজ করতেছেন অথচ আসলে তা আপনার জন্য ও উম্মাহর জন্য ভয়ংকর ক্ষতিকর।
আর আপনার সেই দুই শত্রু হলো নফস ও শয়তান। এখন আপনি সেই শত্রুর মোকাবিলা কি দিয়ে করবেন? তার মোকাবিলাতো তলোয়ার কিংবা আধুনিক কোন অস্র দিয়ে সম্ভব নয়। তার মোকাবিলা করতে হলে অবশ্যই আল্লাহর নিকট দোয়া, ইস্তগফার, নফল নামায নফল রোজা বেশি বেশি করতে হবে। অবসর পেলেই রবের ইবাদাতে নিজেকে আত্মনিয়োগ করতে হবে। আল্লাহর নিকট সাহায্য চাইতে হবে। তার নিকটই আশ্রয় চাইতে হবে৷
কিন্তু আপসোসের বিষয় হলো আমরা অনেক সময় এসব আমলকে কম গুরুত্ব দিয়ে থাকি। আমরা মনে করে থাকি এসব আমল ইসলামের বিজয়ের পরে করবো, অথচ অত্র সূরাতে আল্লাহ তার রাসূর সাঃ কে মক্কাতেই এই নির্দেশ দিয়েছেন।মদিনাতে কিংবা মক্কা বিজয়ের পরে নয়।
আর বাস্তব কথা হলো যারা দ্বীন কায়েমের কাজের সাথে বেশি বেশি নফল ইবাদাত, যিকির, দোয়া, কান্নাকাটি করতে পারে তাদের দ্বারাই দ্বীনের কাজ অনেক বেশি হয়। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ একই সাথে ইলম অর্জন করে একজন বড় ইমাম হয়েছেন, জিহাদ ও করেছেন, আবার জ্বেলও খেটেছেন৷ এরপরেও তিনি প্রচুর যিকির, নফল ইবাদাত করতেন।
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বর্ণনা করেভেন-
أنه جاء إليه وقد ارتفع النهار فاستغرب جلوسه فقال له : ( هذه غدوتي لو لم أتغدها سقطت قواي )
“একদা ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) তাঁর নিকট আগমন করেন, তখন সূর্য অনেক উপরে উঠে যাওয়া সত্ত্বেও আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) তাঁর যিকিরের হালতে রয়েছেন। আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) এতে আশ্চর্যান্বিত হলেন । আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বললেন, “যিকির হল আমার সকলের নাস্তা, যদি আমি এটি আহার না করি আমার শক্তি চলে যাবে” [আল-ওয়াবিলুস সাইয়্যিব, পৃষ্ঠা-৫৩, আর-রদ্দুল ওয়াফির, পৃষ্ঠা-৬৯/
আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) এর আমলও এটি ছিল । তিনিও দীর্ঘ সময় যিকির করতেন, এমনকি দীনের অনেক অংশ অতিবাহিত হয়ে যেত। [ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওযিয়া হায়াতুহু ও আছারুহু, পৃষ্ঠা-৪৬, আদ-দুরারুল কামিনা,আল্লামা ইবনে হাযার আসকালানী (রহঃ), খ--৪, পৃষ্ঠা-২১]
ইমাম যাহাবী (রহঃ) তাঁর সম্পর্কে বলেছেন-
لم أر مثله في ابتهاله واستغاثته وكثرة توجهه
"আল্লাহর নিকট দু'য়া, ক্রন্দন, সাহায্য
প্রার্থনা ও অধিক তাওয়াজ্জুহের অধিকারী তার মত আর কাউকে আমি দেখিনি”
[ওকাফাতুন বাহিয়্যা মিন হায়াতি শাইখিল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, আৰু ইয়াঝিন হামযা বিন ফা'য়ে আল ফাতহী, পৃষ্ঠা-৪ (শামেলা) |
কল্পনা করে দেখুন উনারা কত বড় বড় ইমাম ছিলেন, কত গুরুত্ব পূর্ন কাজ করতেন, কিন্তু এরপরেও যিকির দোয়া, কান্নাকাটি,নফল ইবাদাত উনারা প্রচুর সময় দিতেন। কোন কিছুকে ছোট করে দেখতেন না। বড় বড় চার ইমামও প্রচুর ইজতেহাদের পাশাপাশি প্রচুর ইবাদাত করতেন।
যারাই দ্বীনের জন্য বড় কিছু করেছেন তারাই গোপনে প্রচুর ইবাদাত করেন। প্রচুর তাহাজ্জুদ, যিকির দোয়ায় মাঝে তারা সময় অতিবাহিত করেন।
আপনাকে বিজয় পেতে হলে রক্ত ঝরানোর পাশাপাশি, চোখের অশ্রুও ঝরাতে হবে৷যখনই অবসর পাবেন তখনই আপনার রবের ইবাদাতে আত্মনিয়োগ করতে হবে,এতো বেশি করতে হবে যেন কষ্ট ক্লেশ হয়।
Comment