ﺑِﺴْــــــــــــــــﻢِﷲِﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِﺍلرَّﺣِﻴﻢ ️
সায়্যিদা সারা আলাইহাস সালাম–মুসলিম নারীদের অনুপম আদর্শ
শাইখ তামিম আল আদনানি হাফিজাহুল্লাহ
শাইখ তামিম আল আদনানি হাফিজাহুল্লাহ
সাইয়্যিদা সারা আলাইহাস সালাম।
তিনি ছিলেন সায়্যিদুনা ইবরাহিম আলাইহিস সালাম এর সহধর্মিণী। প্রিয়তম সারাকে তিনি খুব বেশি ভালোবাসতেন। ইবরাহিম আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালামের মতো একজন নবীর ভালোবাসা পাওয়ার মতো সবগুণ-ই তাঁর ছিলো।
প্রথমতঃ সারা ছিলেন খুবই দ্বীনদার পরহেজগার।
দ্বিতীয়তঃ তিনি অসাধারণ সৌন্দর্যের অধিকারী ছিলেন। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম রূপসী নারীদের অন্যতম ছিলেন তিনি। বলা হয়ে থাকে, আম্মাজান হাওয়া আলাইহিস সালামের পর সারার মত সৌন্দর্য পৃথিবীর জগতে আর কোনো নারী লাভ করেননি। অনেক মুফাসসিরের মতে সাইয়্যিদুনা ইউসুফ আলাইহিস সালাম এর সৌন্দর্য তাঁর দাদী–সারার রূপের এক জলক মাত্র।
তৃতীয়তঃ সারা আলাইহাস সালাম ছিলেন ইবরাহিম আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের চাচাতো বোন। আপন পিতা-তাগুত-নমরুদ ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের সঙ্গে সংঘাত বাঁধার পর ইবরাহিম আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালাম বললেন:
“আমি তোমাদেরকে এবং তোমরা যেসব গাইরুল্লাহর ইবাদত করা তাদের পরিত্যাগ করছি।” তিনি আরো বললেন:
“আমি আমার রবের উদ্দেশ্যে হিজরত করছি।” তিনি যখন নিজের দেশ ছেড়ে শাম অভিমূখে হিজরত করেন প্রিয়তমা স্ত্রী সারাও তার সাথী হন।
তিনি স্বামীর প্রতি ঈমান এনে মুসলিম হয়ে গিয়েছিলেন। মাতৃভূমি ও আত্মীয়-স্বজনের মায়া ত্যাগ করে সায়্যিদা সারা নিজের ঈমান ও দ্বীন বাঁচাতে স্বামীর সঙ্গে নির্দ্বিধায় হিজরত করেন।
প্রিয় বোন! মা-বাবা–মাতৃভূমি ও আত্মীয়-স্বজন এর চেয়েও একজন মুমিন নারীর কাছ তার ঈমান ও দ্বীন-ই বেশি মূল্যবান। তাই তো সায়্যিদা সারা আলাইহাস সালাম ঈমান ও দ্বীনের তাগিদে সবকিছু বিসর্জন দিয়েছেন। স্বামীর সঙ্গে হিজরতের পথে পা বাড়িয়েছেন। যুগে যুগে এটিই মুমিন নারীদের শান। দ্বীনের পথে তারা কখনোই স্বামীর জন্য বাঁধা হয়ে দাঁড়াননি বরং স্বামীকে শক্তি-সাহস ও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছেন।
তাঁরা প্রিয়তম স্বামীকে জিহাদের জন্য নিজ হাতে সাজিয়ে দিয়েছেন, জায়নামাজে বসে স্বামীর জন্য হাত তুলে দোয়া করেছেন, প্রয়োজনে স্বামীর সাথে হিজরত করেছেন, জিহাদরত স্বামীর বিরহে ধৈর্য ধারণ করেছেন।
কিছুদিন শামে অবস্থান করে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম স্ত্রী সারাকে নিয়ে মিশরে চলে আসেন। মিশরের বাদশাহর কানে খবর চলে গেল অপূর্ব সুন্দরী নারীকে নিয়ে এক ব্যক্তি মিশরে এসেছে। নারীলিপ্সু বাদশাহ তাঁদের রাজপ্রাসাদে তলব করে।
সহীহ বুখারীতে এই ঘটনা এসেছে, পাপিষ্ঠ বাদশাহ–ইব্রাহিম আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামকে জিজ্ঞেস করে, “তোমার সঙ্গের নারীটি কে?” তিনি উত্তর দেন, “আমার বোন।” ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আসলে তাউরিয়াহ করেছিলেন, কারন তিনি যদি বলতেন আমার স্ত্রী তাহলে বাদশাহ তাকে হত্যা করে ফেলত। সারা ইবরাহিম আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালামের চাচাতো বোন ছিলেন। এছাড়াও মুসলিম নারী-পুরুষরা তো একে অপরের ভাই-বোনই হন বাদশাহ সায়্যিদা সারাকে তার কক্ষে ডেকে পাঠায়, তিনি কক্ষে প্রবেশ করে–ওযু করে সালাতে দাঁড়িয়ে যান, তারপর আল্লাহর কাছে দোয়া করেন:
” اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتُ آمَنْتُ بِكَ وَبِرَسُولِكَ، وَأَحْصَنْتُ فَرْجِي، إلَّا عَلَى زَوْجِي فَلَا تُسَلِّطْ عَلَيَّ الكَفِر“
“হে আল্লাহ! আমি যদি আপনার প্রতি এবং আপনার নবী ইবরাহিমের প্রতি ঈমান এনে থাকি এবং আমার স্বামী ছাড়া অন্য সবার ক্ষেত্রে আমার লজ্জাস্থান হেফাজত করে থাকি তবে আমার উপর কোন কাফের কে চাপিয়ে দিবেন না।”
বাদশা যখন কুমতলব নিয়ে সায়্যিদা সারার দিকে অগ্রসর হয়, আল্লাহর ইচ্ছায়–সাথে সাথে তার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়, ছটফট করতে করতে সে মাটিতে পদাঘাত করতে থাকে, তার মরণাপন্ন অবস্থা দেখে সায়্যিদা সারা দোয়া করেন, “আল্লাহ! বাদশাহ যদি মারা যায় লোকেরা বলবে তাকে আমি মেরে ফেলেছি।” এই দোয়ার ফলে বাদশাহ ভালো হয়ে যায়। পুনরায় সে কুমতলব সায়্যিদা সারার দিকে অগ্রসর হয়, তিনি পুনরায় আল্লাহর কাছে দোয়া করেন। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে বাদশাহ আবার ছটফট করতে শুরু করে। এভাবে সে তিন বার সায়্যিদা সারার দিকে অগ্রসর হয়, তিনবারই তার একই অবস্থা হয়। অবশেষে সে হাল ছেড়ে দেয় আর তার লোকদের বলে, “তোমরা আমার কাছে এক শয়তান নিয়ে এসেছো।” সায়্যিদা সারার এই দ্বীনদারি ও তার প্রতি আল্লাহর সাহায্য দেখে বাদশাহ ভীষণ মুগ্ধ হয় এবং তার সেবা করার জন্য ‘হাজার’ নামের এক তরুণীকে তাকে উপহার সরূপ প্রধান করে।
প্রিয় বোনেরা! এই জাহিলি রাষ্ট্র ব্যবস্থায় নারীদের ধর্ষণ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। আমাদের মা-বোনেরা আজ কোথাও নিরাপদ নয়, তাই সায়্যিদা সারার এই ঘটনা থেকে মা বোনদের অনেক কিছু শেখার আছে।
• প্রতিদিন আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করুন, আল্লাহ যেন সব ধরনের দুর্ঘটনা থেকে আপনাকে হেফাজত করেন। পাপিষ্ঠ বাদশাহর মুখোমুখি হয়ে সায়্যিদা সারা কত আত্মবিশ্বাস ও প্রত্যয় নিয়ে দুয়া করেছে দেখুন! কত স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, আমি স্বামী ছাড়া সবার কাছ থেকে নিজের লজ্জাস্থানের হেফাযত করেছি। এমন একজন সতী-সাধ্বী মু'মিন নারীকে আল্লাহ কি সাহায্য করবেন না?
• যখনি মসিবতে পরবেন আপনার নেক আমলের উসিলা দিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন।
• বাইরে বের হওয়ার সময় কোন মাহরামের সঙ্গে বের হন।
• সর্বাঙ্গে বোরকা জড়িয়ে নিজের সৌন্দর্য ঢেকে বের হন।
• নিজের জীবনকে পূতঃপবিত্র রাখুন।
আল্লাহ তাআলা আপনাকেও সায়্যিদা সারার মতো সব ধরনের লাঞ্চনা ও বেইজ্জতি থেকে রক্ষা করবেন ইনশাআল্লাহ।
প্রিয় বোন! সায়্যিদা সারা আলাইহাস সালাম আপনার জন্য উত্তম আদর্শ। আপনি তারই ভাগ্যবতী উত্তরসূরি। আপনার আদর্শ হলিউড-বলিউডের কোন মডেলের নয়, যারা নিজেদের দেহ বিক্রি করে দিন গুজরান করে। বিজ্ঞাপনে নিজেদের নগ্ন দেহ ফেরি করে বেড়ায়।
ইউরোপের পশু সভ্যতার এই দুর্গন্ধময় ভ্রষ্টাচার থেকে নিজের মন-মানুষকে পবিত্র রাখুন। আল্লাহ আপনাকে সারা ও ইবরাহিম (আলাইহিমুস সালাম)-এর মতো প্রেমময় দাম্পত্য জীবন দান করবেন, দুনিয়াতেই আপনি দেখবেন জান্নাতের নমুনা। আল্লাহ আমার সকল মা-বোনদের দ্বীনের জন্য কবুল করুন। আমীন।
Comment