Announcement

Collapse
No announcement yet.

সম্পদের মালিক না হওয়া জুহদ নয়, সম্পদ আপনার মালিক না হওয়াই জুহদ - ইসলাম জামাল

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সম্পদের মালিক না হওয়া জুহদ নয়, সম্পদ আপনার মালিক না হওয়াই জুহদ - ইসলাম জামাল

    সচ্ছল হও, অক্ষম থেকো না

    সম্পদের মালিক না হওয়া জুহদ নয়,
    সম্পদ আপনার মালিক না হওয়াই জুহদ।


    আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই

    মসজিদে খতিব সাহেবের খুতবা যেন মিম্বারকে কাঁপিয়ে তুলছে। তিনি এক মহান ফকিহ,মুক্তাকি তাবিয়ির গল্প বয়ান করছিলেন। কেমন ছিল তাঁর সবর, কেমন ছিল তাঁর কষ্ট-সাধনা যা অবলম্বন করে তিনি তাঁর যুগের শ্রেষ্ঠ ফকিহ হয়েছিলেন; এ সবই তুলে ধরেছিলেন একে একে। খতিব সাহেব বলছিলেন যে, এ বিশিষ্ট তাবিয়ির দিন কাটত কখনো কিতাবাদির ওপর উপুড় হয়ে ইলম অন্বেষণে,কখনো আবার মানুষের সামনে তিনি কথা বলতেন, তাঁদের ফাতওয়া দিতেন,আবার রাতের বেলায় তিনি একজন আবিদ, রবের সামনে দণ্ডায়মান একনিষ্ঠ বান্দা। এরপর তিনি আমাদের সামনে এ মহান তাবিয়ির উত্তম চরিত্র ও উত্তম তাকওয়ার কথা তুলে ধরলেন।

    এ তাবিয়ির গল্প শুনে আমি বেশ অবাক হয়ে গেলাম। তাঁর সাথে যেন আমার অন্তর লেগে গেল। (যদিও এখনো লেগে আছে)। আমার মন প্রবলভাবে চাচ্ছে আমিও যেন সে তাবিয়ির কিছুটা হলেও সৌভাগ্য অর্জন করতে পারি! সে জন্যই খতিব সাহেবের কথার দিকে পূর্ণ মনোযোগী হয়ে ছিলাম। যেন আমার মাথার ওপর কোনো পাখি এসে বসলেও সে টের পাবে না যে, আমি মানুষ নাকি পাথর! এতটাই মুদ্ধ হয়ে মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিলাম।

    খতিব সাহেব এ মহান পুরুষটির জীবনচরিত,তাঁর পানাহার,তাঁর আস্থা ও অবয়ব তুলে ধরলেন। কিন্তু খতিব সাহেবের বাচনভঙ্গি তখন আমাকে বেশ মুগ্ধ করেছিল,তিনি বেশ জোরালোভাবে সে তাবিয়ির জুহদের প্রশংসা করছিলেন,তাঁর কথায় গৌরব ফুটে উঠছিল,তিনি বলছিলেন, এ মহান তাবিয়ি তালিযুক্ত জামা আর ছেঁড়া জুতো পরতেন, খাবার হিসেবে খেতেন শক্ত রুটি!

    যে মন নিয়ে মসজিদে গিয়েছিলাম,আসার সময় সে মনটা ছিল না। আমার মস্তিষ্কে যেন সে মহান তাবিয়ির জীবনীর প্রতিটি বিবরণ খোদাই হয়ে বসে গেছে। তাঁর কল্পনা আমার মানসপটে ফুটে উঠেছে। যেন আমি চাক্ষুষ তাঁকে দেখছি!

    শুরুতে বেশ স্পৃহা জাগল আমার মাঝে। কিন্তু ধীরে ধীরে কিছু দিন গত হলে আমার মনের মধ্যে সে খুতবার গুঞ্জন নিমিয়ে আসছিল। সে তাবিয়ির ইলম,ইবাদত,উত্তম চরিত্রের বয়ান করা খতিবের মিম্বার কাঁপানো কন্ঠস্বর নীরব হয়ে আসছিল। আমার নফস তাঁর সঙ্গীকে সাথে নিয়ে আমাকে সে মহান মানুষটির উত্তম প্রশংসনীয় বৈশিষ্ট্যাবলি ধীরে ধীরে বিস্মৃত করে দিচ্ছিল। খতিব সাহেবের উচ্চারিত শব্দগুলো যেন মুছে যাচ্ছিল। তবে সব চলে গেলেও দুটো শব্দ আমার মস্তিষ্কে রয়ে গেলে…

    তাঁর জুহদের প্রশংসা!
    তাঁর দারিদ্র্যে মুগ্ধতা!
    আমি বড়ো হলাম। আমার সাথে আমার সে ধারণাও বড়ো হলো…
    ধারণা ছিল,আমি যদি পূণ্যবান হতে চাই, তবে আমাকে দরিদ্র হতে হবে!

    আমার সে ধারণা মস্তিষ্কে প্রোথিত হয়ে চলছিল। আর এমনটাই তো সৃষ্টিকুলের সর্দার,সবার প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সিরাত থেকে আমাদের বলা হয়। আমাদের সামনে বলা হয় যে, তিনি ক্ষুধার তীব্রতায় তাঁর পেটে পাথর বেঁধেছেন। (তাঁর জন্য আমি কুরবান হই)। যেন এমনটাই ছিল তাঁর পুরো জীবন। এ ঘটনা বর্ণনার সময় বর্ণনাকারী সব সময় পেটে পাথর বাঁধাকে প্রশংসনীয় ও গৌরবের কথা বলে উল্লেখ করেন। ফলে নেক আমলের সাথে দারিদ্র্যের দৃঢ় বন্ধন থাকার ব্যাপারটি আরও বেশি প্রবল হয়ে ওঠে আমার মাঝে।

    সে সময়ে… প্রত্যেক কিশোরের সামনে যা আসে – মিডিয়াম সিরিয়াল ও ফিল্মে যেমনটা প্রদর্শিত হয় – আমার সামনেও এল। দেখা যায়, অধিকাংশ সময় ফিল্মের হিরো দরিদ্র থাকে; কিন্তু দারিদ্র্যের মাঝে তাঁর মধ্যে এমন কিছু গুন থাকে,যেগুলো তোমার কাছে তাকে আকৃষ্ট করে তোলে। যেমন: তাঁর বিচক্ষণতা,ভদ্রতা,মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও সততা।
    পক্ষান্তরে ধনী মানুষটির চরিত্র হয়ে থাকে ঘৃণ্য,যা তোমাকে তাকে ঘৃণা করতে বাধ্য করবে। সে হয়ে থাকে অশ্লীল প্রকৃতির এবং কঠোর ও মন্দ স্বভাবের,যে মানুষকে গোলাম বানিয়ে রাখে,মানুষের সম্পদ খেয়ে ফেলে,দিনের আলোতে প্রতারণা করে বেড়ায়,আর রাতের বেলা নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনায় মত্ত হয়ে যায়- নেশা করে,তাঁর অর্থকড়ি পতিতাদের পেছনে খরচ করে। তা ছাড়াও স্ত্রীর নিকট সে একজন নির্দয় স্বামী এবং সন্তানদের কাছে কঠোর স্বভাব পিতা!

    জীবনযুদ্ধের বাস্তবতায় সে চিত্র আমার মনে জটিল হতে লাগল…
    সম্পদই কি সব মন্দের মূল!
    দারিদ্র্যই কি পূণ্যবানদের বৈশিষ্ট্য!
    রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি দরিদ্র ছিলেন!
    আল্লাহ দরিদ্রকে বেশি ভালোবাসেন!
    আকাঙ্খা কি ধনীদের বৈশিষ্ট্য!
    আর অল্পে তুষ্টি কি দরিদ্রদের মূল পুঁজি!

    আশ্চর্য় হচ্ছে এ ভাবনা আমার একার ছিল না। আমার আশেপাশের সবাই এমনটাই ভাবত। ফলে আমরা ধনাঢ্যতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতাম আর নিজেদের অজান্তেই দারিদ্র্যের দিকে ঝুঁকে যেতাম; এমনকি আমরা মনে করছিলাম দারিদ্র্য হচ্ছে রিজা বিল কাজা,সবরের প্রতীক। এ ভাবনার নিদ্রায় আমি অনেক গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলাম। অতঃপর নিদ্রা থেকে আমাকে জাগ্রত করেছে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়ে এ দুআ করা-
    হে আল্লাহ,আমি আপনার কাছে দারিদ্র্য,অভাব ও লাঞ্ছনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
    সুনানু আবি দাউদ: ১৫৪৪; সহিহ হাদিস

    আশ্চর্য়! আমরা যেটার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাসিল বলে মনে করছি,সেটা থেকেই আল্লাহর নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন?! আমরা দারিদ্র্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হই; অথচ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দারিদ্র্যকে এক দুআতে কুফরের পাশাপাশি উল্লেখ করে এতদুভয়ে থেকে মুক্তির দুআ করেছেন!
    তিনি দুআ করেছেন:
    হে আল্লাহ,আমি আপনার কাছে কুফর ও দারিদ্র্য থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
    সুনানু আবি দাউদ: ৫০৯০; হাদিস হাসান পর্য়ায়ের
    কীভাবে মুসতাজাবুদ দাওয়াহ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দারিদ্র্য থেকে মুক্তির দুআ করেন; অথচ আমাদেরকে তাঁর জীবনচরিত বলা হচ্ছে যে, তিনি ছিলেন দরিদ্র?!

    রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে তাঁর পেটে তীব্র ক্ষুধার কারণে পাথর বেঁধেছিলেন,সে ঘটনার বর্ণনার বিশুদ্ধতা নিয়ে আলিমদের মধ্যে ইখতিলাফ রয়েছে। কেউ এ হাদিসকে জয়িফ বলেছেন,আবার কেউ সহিহ বলেছেন,আবার কেউ বলেছেন যে, এখানে উদ্দেশ্য হচ্ছে পেটের ওপর পিঠের সাথে মিলিয়ে বিশেষ ধরণের বেল্ট বাঁধা, যা আরবদের অভ্যাস ছিল; যাতে তাদের পিঠ ও পেট দৃঢ় থাকে।

    আর যদি এ ঘটনার বর্ণনা সহিহ হয়- তবে এটা হচ্ছে খন্দকের যুদ্ধের ঘটনা,যখন কুরাইশরা আরবের কিছু গোত্রের সাথে একজোট হয়ে আহজাব গঠন করে মদিনা অবরোধ করেছিল। তখন মুমিনরা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নেতৃত্বে মদিনার উত্তরে প্রতিরোধ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে খন্দক খুঁড়েছিলেন। অবরোধ প্রায় এক মাস অবধি চলল। তখন মদিনার ভেতর খাবার আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ও সাহাবিদের বিজয় দিলেন।

    সে সময়টা ছিল যুদ্ধের সময়। অবস্থাটা ছিল অবরোধের। আর এমন সময়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মতো একজন সেনাপতির ব্যাপারে আপনার কী ধারণা,যিনি অন্যকে প্রাধান্য দেওয়ার সর্বোচ্চ পূর্ণতায় ভরপুর! তিনি তো অবরোধের অনটনের মধ্যে দিয়ে নিজে না খেয়ে তাঁর সাহাবিদের আহার করানোর বিষয়টি প্রাধান্য দেন।

    রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবনের এ ঘটনাকে নিয়ে এরপর আমাদের চিত্রিত করা হয় যে. রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দরিদ্র ছিলেন; অথচ তাঁর সম্পর্কে মহান রব নাজিল করেছেন:
    তিনি আপনাকে পেলেন নিঃস্ব,অতঃপর করলেন অভামুক্ত।
    সুরা আদ দুহা,৯৩:৮

    আমরা কীভাবে ধনাঢ্যতা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে পারি; অথচ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই দুআ করেছেন:
    হে আল্লাহ,আমি আপনার কাছে হিদায়াত,তাকওয়া,চারিত্রিক নিষ্কলুষতা ও ধনাঢ্যতা চাইছি।
    সহিহ মুসলিম: ২৭২১

    যেভাবে কিছু মানুষ দাবি করেন যে, সম্পদই সকল মন্দের উৎস,তাহলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর খাদিস আনাস বিন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর জন্য যে দুআ করেছেন,সে বিষয়ে কী বলব? আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মা তাঁর ছোটবেলায় তাঁকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে নিয়ে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল,এ হচ্ছে আনাস,আপনার ছোট্ট খাদিম,আপনি তাঁর জন্য দুআ করুন। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুআ করলেন:
    হে আল্লাহ,আপন তাঁর সম্পদ ও সন্তান বাড়িয়ে দিন; আর তাঁকে যা দেবেন,তাতে বরকত দান করুন।
    সহিহ বুখারি: ৬৩৩৪,সহিহ মুসলিম: ২৪৮১

    আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বৃদ্ধবয়সে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দুআর সত্যায়নে বলেন,আল্লাহর কসম,আমার অনেক সম্পদ,আমার সন্তান ও সন্তানদের সন্তান মিলিয়ে আজকে তাদের সংখ্যা একশর বেশি।

    সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন রোগাক্রান্ত হলেন,তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে দেখতে এলেন। সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আল্লাহর রাসুল,আপনি দেখছেন আমার কেমন অসুস্থতা। আমার কিছু সম্পদ আছে। কিন্তু আমার ওয়াসির হিসেবে কেবল এক মেয়ে আছে। আমি কি আমার সম্পদের দুই-তৃতীয়াংশ সদাকা করব? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, না।
    সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন,তবে অর্ধেক?
    রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,না।
    সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন,তবে এক-তৃতীয়াংশ?
    রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন:
    এক-তৃতীয়াংশ (করা যায়,তবে তাও) অনেক। তুমি তোমার ওয়ারিসদের অন্যের কাছে হাতপাতার মতো অবস্থায় রেখে যাওয়ার চাইতে তাদেরকে সহায়-সম্বল দিয়ে রেখে যাওয়া উত্তম।
    সহিহ বুখারি: ৪৪০৯


    রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং দান-সদাকার সর্বোচ্চ পর্য়ায়ে ছিলেন। তিনি পরিবারের জন্য এক বছরের খাবার জমা করে রাখতেন,তাঁর চেয়ে বেশি যা থাকত সবটাই দান দান করে দিতেন। তিনি ছিলেন ধনী জাহিদ। তিনি সম্পদ অর্জনের পর জুহদ অবলম্বন করতেন। জুহদ ও দারিদ্র্যের মধ্যে রাত-দিনের পার্থক্য । একজন মানুষ সম্পর্কে আমরা বলি যে, তিনি ছিলেন দরিদ্র; অথচ কী করে সম্ভব যে,তিনি কাউকে এমনভাবে দান করেন; ফলে দানপ্রাপ্ত ব্যক্তির আর কখনো জীবনে দারিদ্র্যে পড়ার ভয় থাকে না!

    আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট ইসলাম গ্রহণের পর কেউ কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তা দিয়ে দিতেন। একবার এক ব্যক্তি তাঁর কাছে এল। তিনি তাকে এত বেশি ছাগল দান করলেন যে,যাতে দুই উপত্যকার মধ্যবর্তী স্থান পূর্ণ হয়ে যাবে। এরপর লোকটি তার গোত্রের কাছে গিয়ে বলল, হে আমার জাতি ভাইয়েরা,তোমরা ইসলাম কবুল করো। কারণ,মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভাবের আশঙ্কা না করে দান করতে থাকেন।
    সহিহ মুসলিম: ২৩১২


    যুদ্ধ থেকে প্রাপ্ত গনিমতের এক-পঞ্চমাংস রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন আল্লাহ তাআলা। এ পুরোটাই তিনি দান করে দিতেন মানুষের মাঝে। প্রতিনিধি আগমনের বছর তাঁর কাছে ৭০টি প্রতিনিধি দল এসেছে জাজিরাতুল আরবের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। তাঁরা সবাই ইসলামের ওপর বাইয়াত হলো। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁদেরকে নিজ সম্পদ খরচ করে আপ্যায়ন করতেন এবং সম্মান করতেন।

    তিনি যদি দরিদ্র হতেন,তবে তিনি কী করে মসজিদে নববির প্রতিষ্ঠার সময় জমি কিনলেন,আর জমির একাংশে নিজের জন্য ঘর তৈরি করলেন?! তাঁর কাছে কসওয়া নামক উটনী ছিল,যার ওপর সওয়ার হয়ে তিনি হিজরত করেছেন। আরেকটি ছিল জাদআ। তৃতীয় আরেকটি উট ছিল আদবা। তাঁর আদবা নাম উটটি কখনো প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হতো না। তাঁর ফিদ্দাহ নামক একটি খচ্চর ছিল। আর তাঁর ঘোড়ার নাম ছিল সাকাব।

    তিনি কী করে দরিদ্র হন; অথচ তিনি ছিলেন সে কাফেলায় বয়সে সবার কনিষ্ঠ,মক্কার যে ব্যবসায়ী কাফেলায় তিনি নিজ চাচা আবু তালিবের সাথে তাঁর প্রথম ব্যবসায়িক সফরে শামে গিয়েছিলেন। তাঁর মোট ব্যাবসায়িক সফর ছিল ২৩টি। সে সময় রিসালাতের আগে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সততা,আমানতদারি ও ব্যাবসায়িক বিচক্ষণতা সবার মাঝে প্রসিদ্ধ হয়। তখন এক এক পর্য়ায়ে খাদিজা রাদিয়াল্লাহ আনহা প্রস্তাব দিলেন তিন যেন তার সম্পদ নিয়ে ব্যাবসায়িক সফর করেন। আল্লাহ তাআলা এভাবে তাঁকে অনেক সম্পদ দান করেছেন।

    দারিদ্র্য দোষের নয়; কিন্তু দারিদ্র্যকে বড়ো মর্য়াদার গুন মনে করে উপস্থাপন করা দোষের। দারিদ্র নিয়ে সংকল্প ও প্রচেষ্টাকে নিষ্ক্রিয় রাখা দোষের। দারিদ্র যেসব অন্তরকে ভেঙে দিয়েছিল,তাদের বিষয়ে আমাদের আল্লাহর সামনে জবাবদিহি করতে হবে। আমাদের হাতে সম্পদ থাকতেও কেন তাদের জন্য কিছু করিনি আমরা? আমরা কি তাদের অসচ্ছল অবস্থায় তাদের জন্য যথেষ্ট হয়েছি,না তাদেরকে দারিদ্র্য-ভোগে ছেড়ে দিয়েছি?

    নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক আনসার ব্যক্তিকে মানুষের কাছে হাত পাততে দেখলেন। তিনি তাকে বললেন,তোমার ঘরে কি কিছু নেই? লোকটি বললেন,জি আছে,একটা মোটা পশমি কাপড় আছে। সেটা আমরা কিছুটা বিছানা হিসেবে ছড়িয়ে দিয়ে বাকিটা গায়ে জড়িয়ে শুই। আর একটা কাঠের তৈরি পানপাত্র আছে। সেটা দিয়ে পানি পান করি।

    রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,সে দুটো এনে দাও। তখন লোকটা নিয়ে এলেন আদেশ মোতাবিক। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাত দিয়ে সে দুটো নিলেন আর বললেন,এ দুটো কে কিনবে? তখন উপস্থিত এক লোক বলল,আমি এক দিরহামে কিনব।

    রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,এক দিরহামের বেশি কে দেবে? এভাবে দুই কি তিনবার বললেন।

    তখন আরেকজন বলল,আমি দুই দিরহামে কিনব।

    রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন সে দুটো জিনিস তাকে দিয়ে তার থেকে দুই দিরহাম নিলেন এবং আনসারি লোকটাকে দিলেন। আর বললেন, এক দিরহামে তুমি খাবার কিনবে আর পরিবারের কাছে নিয়ে যাবে। আর বাকি এক দিরহাম দিয়ে কুড়ালের লোহার অংম কিনে আমার কাছে নিয়ে আসবে।

    সাহাবি আদেশ পালন করলেন। সেটা নিয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে আসলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ হাতে সেটাতে হাতল লাগিয়ে দিলেন। আর বললেন,এটা নিয়ে যাও,আর লাকড়ি কেটে তা বিক্রি করো,আমি যেন তোমাকে আগামী ১৫ দিন না দেখি। এ সময়ে কাজ করবে।

    সাহাবি কাঠ কাটতে চলে গেলেন। কেটে এনে বিক্রি করলেন। তাঁর তখন ১০ দিরহাম আয় হলো। এ আয়ের কিছুটা দিয়ে তিনি কাপড় কিনলেন,কিছুটা দিয়ে খাদ্য কিনলেন। এরপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
    তুমি কিয়ামতের দিন ভিক্ষা করার কারণে তোমার চেহারায় কালো দাগ নিয়ে ওঠার চাইতে এটাই তোমার জন্য উত্তম। ভিক্ষা করা কেবল তিন মানুষের জন্য প্রযোজ্য। এক,অতি দরিদ্র, দুই.ভয়াবহ ঋণে জর্জরিত, তিন.দিয়ত আদায়ে ক্লিষ্ট ব্যক্তি।
    সুনানু ইবনি মাজাহ: ২১৯৮


    বি.দ্র. ইসলাম জামালের লেখা বই থেকে নেওয়া। ধারাবাহিকভাবে আলোচনা করে হবে। ইনশাআল্লাহ
    নিশ্চয় কাফেরদের মুখোমুখি হওয়ার আগে মুমিনদের কাফেলাকে মুনাফিক ও ভ্রান্তদের থেকে পবিত্র করতে হবে। - শাইখ আবু মুহাম্মাদ আইমান হাফিযাহুল্লাহ

  • #2
    সম্পদের মালিক না হওয়া জুহদ নয়,
    সম্পদ আপনার মালিক না হওয়াই জুহদ।
    মাশাআল্লাহ, খুব সুন্দর একটা বিষয়। জাযাকাল্লাহ খাইর

    মুহতারাম ভাই, ইসলাম জামাল কে? উনার সম্পর্কে জানি না। অনুগ্রহ করে যদি জানাতেন, উপকৃত হতাম।

    Comment


    • #3
      সচ্ছল হও, অক্ষম থেকো না

      সম্পদের মালিক না হওয়া জুহদ নয়,
      সম্পদ আপনার মালিক না হওয়াই জুহদ।
      খুব সুন্দর কথা। জাযাকাল্লাহু খাইরান।
      ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

      Comment

      Working...
      X