“মুসলিম কারাবন্দীদের পক্ষে কে দাঁড়াবে?” ( ১ম পর্ব )
একজন বন্দীকে অসহ্য নির্যাতন করা হতে পারে, সম্মানহানিকর কিছু করা হতে পারে কিংবা কঠিন পরীক্ষার মাঝে তাকে পতিত হতে পারে।
যাই হোক না কেন, এসবের কারণে আল্লাহ তায়ালা জান্নাতে তাদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি করে দেন।
আল্লাহ বলছেন, “মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে, আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না?
আমি তাদেরকেও পরীক্ষা করেছি, যারা তাদের পূর্বে ছিল। আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন যারা সত্যবাদী এবং নিশ্চয়ই জেনে নেবেন মিথ্যুকদেরকে”।
[সূরা আল আনকাবুত ২-৩]
ও মুসলিম উম্মাহঃ
এই হল শত্রুদের হাতে যারা বব্দী হয়েছেন তাদের কথাঃ ফিলিস্তিন, কিউবা, গুয়ানতানামো কিংবা দুনিয়ার অন্য যে কোন প্রান্তে।
এরাই সেসব লোক, যারা তাদের ভাইদের সাহায্যে সামনে এগিয়ে এসেছিলেন, তারা এসেছিলেন মুসলিম ভূমির পবিত্রতা রক্ষার্থে, এমন একটি সময়ে যখন বাকিরা হতাশ হয়ে আশা ছেড়ে দিয়েছিল।
যখন তারা নিজেরা এগিয়ে এসেছিলেন উম্মাহর বিপদের সময়ে, আজকে তাদের এই দুর্দিনে সারা উম্মাহর প্রতি তাদের হক অধিকার আছে যেন আমরাও তাদের সাহায্যে এগিয়ে যাই,
তাদের এই পরীক্ষায় পাশে থাকি। আর এভাবেই আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মাহর প্রতি আদেশ করেছেন,
“ তোমরা বন্দীকে মুক্ত কর !” [বুখারী]
ইমাম মালিক রাহিমাহুল্লাহ বলেছেনঃ
“মানুষের উপর এটা বাধ্যতামূলক যে তাদের যা কিছু আছে সব মুক্তিপণ দিয়ে কারাবন্দীদের মুক্ত করবে, আর এ বিষয়ে কোন মতভেদ নেই(ফুকাহাদের মধ্যে),কারণ রাসুলুল্ললাহ বলেছেন, “ তোমরা বন্দীকে মুক্ত কর !” [বুখারী]
উলামায়ে ইসলাম যথার্থই বলেছনঃ
“যদি শত্রুদের হাত থেকে মুসলিম বন্দীদের মুক্ত করতে গিয়ে মুসলিম রাষ্ট্রের কোষাগার পুরোটাই খালি হয়ে যায়, তবু এ বিষয়ে ঢিলেমি করার অবকাশ নেই”।
আর এটাই সঠিকঃ
এ ক্ষতিকেও বেশি বড় করে দেখার অবকাশ নেই, পারে যখন আমরা দেখি লুটেরা আমেরিকানদের হাতে মুসলিমরা তাদের সম্মান হারাচ্ছে,
বেইজ্জতি হচ্ছে আর তারা তা ঘৃণার চোখে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে আর উপভোগ করছে, আর কি বিপর্যয় আছে যা এর থেকেও বেশি ?
এ দৃশ্য আপনারাও দেখেছেন নিশ্চয়ই, যেমনি দেখেছে সারা বিশ্বের মানুষ, কি নির্মম অমানবিক ট্রাজেডির শিকার হয়েছে
আমাদের ভাইয়েরা কিউবা (গুয়ানতানামো) তে। বিভিন্ন দেশ থেকে তাদের নিয়ে আসা হয়েছে,
তাদের অনেকেই এসেছেন পাকিস্তান থেকে
–একটি কার্গো বিমানে করে চালান করে দেয়া হয়েছে, তাদের দাড়ি কামিয়ে দিয়েছে, মাথা ন্যাড়া করা, কাপড় ছিড়ে ফেলা হয়েছে, কমলা রঙয়ের পোশাকে আপাদমস্তক, চোখ বাঁধা এবং সকল অনুভূতি ইন্দ্রিয় থেকে দূরে রাখা হয়েছে।
একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে তাদের সম্মান কোথায়? লোহার খাঁচার আবদ্ধ মানুষগুলোকে দেখে কি মনে হয় ?
তারা কি নূন্যতম মানবিক সম্মানটুকুও পেয়েছেন নাকি চিড়িয়াখানার পশুদের চেয়েও বাজে অবস্থায় আবদ্ধ রাখা হয়েছে তাদের?
একটি চিড়িয়াখার পশুও খাঁচার ভেতর যতটুকু জায়গা পায় তাদের ভাগ্যে ততটুকুও নেই।
তাদেরকে খাঁচা থেকে বের হবার কোন সুযোগ দেয়া হয় না দিনে একটিবার ছাড়া, আর সেটি হল যখন তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্যে বের করা হয়।
হাতে-পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায়, মাথা নিচু করে রাখা, কালো কাপড়ে মোড়ানো, তাদের আত্মসম্মানকে ধবংস করে দেয়া হচ্ছে,
সব সময় তাদের মনে যে চিন্তা দানা বাঁধছে তা অনেকটা এরকম নয় কিঃ “ মুসলিমদের সেই সম্মানের দিনগুলো কোথায়?
বিজয়ীদের সেই দীন কোথায়? আর কোথায় তোমরা আমাদের মুসলিম ভাইয়েরা?”
আমাদের ভাইয়েরা আছে কিউবার গা ঝলসানো সূর্যের নিচে, আর এটা শীতকালের অবস্থা, ভাবুন গ্রীষ্মকালে কি অবস্থায় থাকেন তাঁরা?
এমনকি যে রাতকে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বিশ্রাম ও ঘুমের জন্যে তৈরি করেছেন সেই রাতেও অত্যাচারী সৈনিকেরা চোখ ধাঁধানো ফ্লাস লাইটের আলো জ্বেলে রাখেন তাদের খাঁচাগুলোর দিকে।
দিনে তারা উত্তপ্ত সূর্যের নিচে আর রাতে চোখ ধাঁধানো ফ্লাস লাইটের কারণে তারা দিনের পর দিন না ঘুমিয়ে থাকছেন।
তো এই অবস্থায় কিভাবে তারা ঘুমের স্বাদ পেতে পারেন, কিভাবে তারা এই যন্ত্রণাদায়ক অবস্থায় খাদ্য-পানীয়ের স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন? বস্তুতঃ তাদের এই যন্ত্রণা দু ধরণের।
প্রথমত, বন্দীদশায় অত্যাচারী আমেরিকানদের হাতে পাশবিক নির্যাতন সহ্য করার কষ্ট,
আর দ্বিতীয়ত আজকে আমরা যারা মুসলমান হয়েও তাদেরকে ত্যাগ করেছি, ছেড়ে দিয়েছি আর তাদের কথা ভুলে গেছি সেই কষ্ট।
কেউ নেই আজকে তাদের প্রতি যে অত্যাচার করা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে কথা বলবার,
বরং আমরা তাদের কথা ভুলে গেছি এবং এমনভাবে আমাদের দৈনন্দিন জীবন কাটাচ্ছি যেন কিছুই ঘটেনি, যেন সব কিছু ঠিকঠাক মতই চলছে।
সৌদি আরবে রিয়াদের আল ইজ্জ বিন আব্দুস সালাম মসজিদের ইমাম
🎙️"শাইখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল হাবদান"
🎤“মুসলিম কারাবন্দীদের পক্ষে কে দাঁড়াবে?”
শীর্ষক জুম্মার খুতবার লিখিত রুপ
(১৬ আগস্ট ২০০২ সাল ১৪২৩ হিজরী)
Comment