মুসলিম কারাবন্দীদের পক্ষে কে দাঁড়াবে?” চতুর্থ পর্ব :-
ইবন তাইমিয়া ‘বুলাই’ এর সাথে সাক্ষাতের জন্যে গিয়েছিলেন,
সে ছিল একজন মঙ্গোলীয় জেনারেল এবং ইবনে তাইমিয়ার দাবীর প্রেক্ষিতে সে সময় মঙ্গোলদের হাত থেকে অনেক মুসলিম যুদ্ধবন্দীদের মুক্ত করা সম্ভবপর হয়েছিল।
ইবন তাইমিয়া সাইপ্রাসের সম্রাটের নিকট নিম্নলিখিত পত্রটি প্রেরণ করেনঃ
“হে সম্রাট! এটা কেমন কাজ হল,
তুমি রক্তপাতের অনুমতি দিচ্ছ, মহিলাদের বন্দীনি হিসেবে ধরে নিয়ে যাচ্ছ,
মানুষের সম্পদ দখল করছ অথচ তুমি কিনা আল্লাহ্ এবং তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে কোন অনুমতি বা বৈধতা দিলে না?
আমরা কি ধরে নিব যে সম্রাট জানে না এই আমাদের দেশে অগণিত খ্রিস্টানেরা শান্তি এবং নিরাপত্তার সাথে বাস করে আসছে?
তাদের সাথে আমাদের আচরণের স্বরূপ সবাই জানে। তাহলে এটা কেমন ঘটনা হল যে তুমি আমাদের বন্দীদের সাথে এমন আচরণ করছ
যে একজন নীতিবোধ সম্পন্ন মানুষ, বিবেকমান মানুষ কিংবা একজন ধার্মিক লোকও কিছুতেই সন্তুষ্ট হতে পারছে না!!?
বরং, অনেকের প্রতিই অত্যচার নির্যাতন চালানো হচ্ছে বন্দী অবস্থায়, অথচ বন্দীদের নির্যাতন সকল ধর্মে, আইনে রাজনীতিতে নিষিদ্ধ।
কিভাবে তুমি সেই সকল লোকদের আটক করে রেখেছে যাদের নির্যাতন করার জন্যে বন্দী হিসেবে তুমি ধরে নিয়ে গেছ? কেবল অত্যাচার চালানোর জন্যে?
তুমি কি মনে করেছ তুমি এতকিছুর পরে নিরাপদে থাকবে, এতকিছুর পরে যখন তুমি মুসলিমদের মুখোমুখি হবে,
যে অত্যাচার তুমি চালাচ্ছো এরপরে কি পরিণতি হবে তোমার তা কি ভেবে দেখেছ?
আল্লাহ্ তাদের সহায়তা করবেন এবং তাদের বিজয় দান করবেন,
বিশেষত এটা এমন এক সময় যখন মুসলিম জাতি নিজেদের সম্মানার্থে জেগে উঠছে এবং সামনের লড়াইয়ের জন্যে প্রস্তুত হয়েছে।
ন্যায়সংগত লোকেরা এবং সর্বশক্তিমানের সহযোগীরা তাঁর আদেশ মেনে তোমাদের এই আচরণে তীক্ষ্ণ নজর রেখে চলছে।
উপকূলবর্তী ঘাঁটিগুলোতে পুরুষ লোকের সমাবেশ ঘটছে, সাহসী এবং বীর পুরুষেরা,
তারা যোদ্ধা এবং তাদের সক্ষমতা আমরা দেখেছি এবং তার কারণে তাদের মর্যাদাও উত্তোরত্তর বেড়ে চলছে।
আরও আছে, তোমার অবগতির জন্যে জানাই, এখানে নিয়োজিত আছে
এমন সকল লোক যারা তাদের দীনের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ ও নিষ্ঠাবান।
সেখানে নিয়োজিত নতুন এবং পুরাতন সকল লোকের সক্ষমতার কথাই তোমার জানা উচিত।
তাদের মাঝে আছেন এমন সকল ন্যায়পরায়ণ মানুষ যাদের প্রার্থনা আল্লাহ্ ফিরিয়ে দেন না ,
আর তাদের চাহিদার কথাও তিনি অবজ্ঞা করেন না।
হ্যাঁ, এরাই হচ্ছেন এমন লোক যারা খুশি হলে আল্লাহও খুশি থাকেন আর তারা অসন্তুষ্ট হলে আল্লাহও অসন্তুষ্ট হন।
হে সম্রাট, জেনে রেখ সে সকল মুসলিম সীমান্তের কথা যা তোমার রাজ্যের নানাদিকে বেষ্টন করে আছে,
কি কল্যাণ আর মঙ্গলের আশা তুমি করতে পার যখন কিনা আমাদের সাথে তোমাদের আচরণে কোন সুস্থ মস্তিষ্কের কেউ সন্তুষ্ট নয় এবং জানি না
আর কোন মুসলিম কিংবা আমাদের মুসলিমদের সাথে যারা শান্তি চুক্তি করেছে তারা এতে তোমাদের সাথে আপোস করতে রাজি হবে কি না ?”
আবু সাঈদ আল থা’লাবী বর্ণনা করেন, যখন বিখ্যাত আব্বাসীয় খলীফা আবু জাফর আল মানসুরের বিরুদ্ধে ইব্রাহীম এবং মুহাম্মদ বিদ্রোহ ঘোষণা করলেন,
খলিফা চেয়েছিল যেন সীমান্তবর্তী সৈনিকেরা বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তাকে সাহায্য করে।
এরপর, তারা তা প্রত্যাখান করল এবং তাদের অনেকেই রোমানদের হাতে বন্দী হল,
তখন রোমানরা বন্দীদের বিনিময়ে মুক্তিপণ দাবীকরে বসল। কিন্তু খলীফা তাদের মুক্তিপণ দিতে অস্বীকার করলেন।
এহেন অবস্থায়, ইমান আল আউযাই (রাহিমাহুল্লাহ) খলীফার নিকট চরমপত্র লিখে পাঠালেন,
“নিশ্চয়ই আল্লাহ্ মহাপবিত্র,
মহামহিম তোমাকে উম্মাহর ভালোমন্দ দেখভালের জন্যে ক্ষমতা দান করেছেন, নির্বাচিত করেছেন- এ কারণে এটা আশা করা হয় যে,
তুমি ন্যায়নিষ্ঠার সাথে তোমার দায়িত্ব পালন করবে এবং অনুসরণ করবে তাঁর
রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নির্দেশনা, লোকেদের সাথে বিনম্র আচরণ করবে এবং বিনয়ের সাথে অবনত হবে।
আমি আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিকট এ মর্মে আবেদন পেশ করছি
যেন তিনি আমীরুল মুমিনিনকে শান্ত করেন এবং উম্মাহর জনসাধারণের ব্যাপারে সদয় হবেন এবং তাদেরকে বিজয় দান করবেন।
কার্যতই প্রথম বর্ষে মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদের আক্রমণ সফল হয়েছে এবং মুসলিমদের সীমানার ভিতরে তারা অনুপ্রবেশ করতে পেরেছে
তারা মুসলিম নারীদের নিকট পৌঁছে গেছে এবং শিশু ও বৃদ্ধদেরকে দূর্গ হতে বের করে দিয়েছে।
এ সবই ঘটেছে মুসলিমদের পাপের কারণে, যদিও যে অপরাধ আল্লাহ্ ক্ষমা করে দিয়েছিলেন তা আরও বৃহৎ ছিল।
এটা ছিল মুসলমানদের অপরাধ যে
তাদের শিশু ও বৃদ্ধদের দূর্গ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে-
তারা কোন সাহায্যকারী পায়নি কিংবা তাদের রক্ষার্থেও কেউ এগিয়ে আসেনি।
নারীদের টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, তাদের মাথা আর পা অনাবৃত ছিল,
আল্লাহ্ দেখলেন কিভাবে আমরা তাঁর থেকে সরে গিয়েছিলাম।
তাই বিশ্বাসীদের নেতার জন্য মানানসই আচরণ হল যে
তিনি আল্লাহকে ভয় করবেন এবং আল্লাহ্র নির্দেশিত পথের অনুসরণ করবেন মুক্তিপণ প্রদানের মাধ্যমে বন্দীদের মুক্ত করার দ্বারা
এই নির্যাতিত লোকদেরকে তিনি আল্লাহ্র ভালোবাসার কসম করে মুসলিম উম্মাহ থেকে আলাদা করে রাখতে পারেন না,
আল্লাহ্ বলেন, “আর তোমাদের কি হল যে, তেমারা আল্লাহর রাহে লড়াই করছ না দুর্বল সেই পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে, যারা বলে,
হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদিগকে এই জনপদ থেকে নিষ্কৃতি দান কর; এখানকার অধিবাসীরা যে, অত্যাচারী!
আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য পক্ষালম্বনকারী নির্ধারণ করে দাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী নির্ধারণ করে দাও”।
[নিসা ৭৫]
আমি আল্লাহ্র কসম করে বলছি,,
হে আমিরুল মুমিনিন, বন্দীদের কাছে না আছে কোন জমাকৃত মাল (গণীমত) না আছে কর দেয়ার মত কোন সম্পত্তি-কেবল তাদের নিত্য ব্যবহার্য সম্পদ ছাড়া।
নিশ্চয়ই, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘যখন আমি (জামাতে ইমামতি) সালাতরত অবস্থায় আমার পিছনে কোন শিশুর কান্না শুনি
তখন আমার সালাতের দৈর্ঘ্য সংক্ষিপ্ত করি, কারণ শিশুর কান্নার ফলে মায়ের মনে কষ্ট হয়’।
কাজেই কিভাবে তাদেরকে আপনি শত্রুদের হাতে ছেড়ে দিতে পারেন হে আমিরুল মুমিনিন?
তাদের উপর ফিতনা পতিত হয়েছে, তাদের দেহগুলো এভাবে উন্মুক্ত করে রাখা আছে যার কোন অনুমতি নেই
কেবলমাত্র বিবাহিত নারী-পুরুষের মধ্যেকার আন্তরিক অবস্থা ছাড়া,
আর এরাই তো দুনিয়াতে আল্লাহ্র প্রতিনিধি। আপনার উপরে আছেন আল্লাহ্,
তিনি আপনাকে যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন শেষ বিচারের দিনে তার পূর্ণ হিসাব নিবেন-
যেদিন কারো প্রতি অত্যাচার করা হবে না, যদিও একটি সরিষা দানা পরিমান কাজও হয়। তাঁর সিদ্ধান্তই আমাদের জন্য যথেষ্ট”।
যখন পত্রটি আবু জাফরের নিকট পৌঁছুল, তিনি আদেশ করলেন মুসলিমদের মুক্ত করার জন্যে মুক্তিপণ প্রদান করতে।
🎙️"শাইখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল হাবদান"🎤“মুসলিম কারাবন্দীদের পক্ষে কে দাঁড়াবে?”
শীর্ষক জুম্মার খুতবার লিখিত রুপ
(১৬ আগস্ট ২০০২ সাল ১৪২৩ হিজরী)
Comment