মুসলিম কারাবন্দীদের পক্ষে কে দাঁড়াবে?” সপ্তম পর্ব :-
হ্যাঁ, আপনাকেই বলা হচ্ছে যিনি এই লেখাটি পড়ছেন,
…আমরা কারাবন্দী…আমরা আপনাদের সবাইকে শেষ বিচারের দিনে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার সামনে দাঁড় করাবো
…আমরা বলব,
‘এই লোকগুলো, এরা জানত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কারাবন্দীদের মুক্ত করার ব্যাপারে কি আদেশ করে গেছেন,
এরা সেই আদেশ শুনেনি
কিংবা আমাদের মুক্ত করার জন্যে
যা করণীয় ছিল তাও গ্রহণ করেনি’
নিশ্চয়ই আমরা এর মাধ্যমে সেই সব লোকদের সবাইকে আহবান জানাই যারা তাদের দীন নিয়ে গর্বিত,
আমরা আপনাকে ঈমানের বন্ধনের কারণে ডাক দিচ্ছি,
যাতে আপনারা আমাদের এই ইস্যুটিকে জীবন্ত আলোচিত করে তুলেন।
আইনজীবীদের মাধ্যমে আমাদের মুক্তির দাবী জানিয়ে,
আমাদের করুণ অবস্থার কথা মিডিয়ায় প্রকাশ করে,
আমেরিকার উপর চাপ প্রয়োগ করে, তাকে এভাবে সতর্ক করে দিয়ে যে, তারা যদি মুসলিম কারাবন্দীদের ছেড়ে না দেয় তাহলে তাদের স্বার্থে আঘাত আসবে।
আর যদি আপনি নিজেকে এমন অসহায় মনে করেন যে,
আপনার কিছুই করার নেই,
তাহলে আপনার উচিত অন্তত দুই হাত তুলে আল্লাহর কাছে কাতর কন্ঠে দুয়া করা, এই যালিমদের বিপক্ষে,
মযলুমদের পক্ষে আপনি রাতের শেষ ভাগে দুয়া করুন,
আল্লাহর কাছে দুয়া করুন যেন তিনি আমাদেরকে কষ্ট যন্ত্রণা থেকে মুক্ত করে দেন, যেন আমাদের বোঝা অপসারণ করে দেন।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,‘যে একজন মুসলিমকে সাহায্য করতে সক্ষম হওয়ার পরেও তাকে পরিত্যাগ করে,
এরপর এমন এক সময় আসবে যখন সেই সক্ষম ব্যক্তি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবে, আর আল্লাহও তাকে পরিত্যাগ করবেন”।
তিনি আরও বলেন, “ যদি কেউ কোন মুসলিমের একটি কষ্ট দূর করে দেয়, শেষ বিচারের দিনে আল্লাহও তার একটি কষ্ট দূর করে দিবেন”।
হতে পারে আজকে তোমরা আমাদের ভুলে গেছ-
কিন্তু অনুরোধ তোমাদের কাছে, আমাদের স্ত্রী-সন্তানদেরকে ভুলে যেও না, তাদের দেখাশোনা কর, নিরাপত্তা দিও, আর আমরা যেন দৃঢ়পদ থাকতে পারি সেই জন্যে দুয়া করো,
আমরা আমদের অভিযোগ তো কেবল আল্লাহ্র কাছেই পেশ করি। আর শেষ কথা বলতে চাই,
আমাদের প্রাণপ্রিয় আম্মা ও আব্বাদের জন্য, সবর করুন, আল্লাহ্র নিকট হতে পুরষ্কার তালাশ করুন এবং বলুন, “আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন শক্তি বা ক্ষমতা নেই”,
‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’, যেভাবে আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন।
আউফ বিন মালিক আল আশজাই এসেছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামের কাছে এবং বললেন,
“হে আল্লাহ্র রাসূল ! শত্রুরা আমার সন্তানকে ধরে নিয়ে গেছে এবং তার মাতা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। আপনি এ অবস্থায় আমার জন্যে কি উপদেশ দিবেন?’
তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
“আমি তোমাকে আর তোমার স্ত্রীকে একটি বাক্য বলার উপদেশ দিচ্ছি, তোমরা যত পার তত বেশি করে পড়বে, ‘লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’।
মহিলা একথা শুনে তাঁর স্বামীকে বললেন, “কি বরকতময় একটি বাক্য তিনি আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন !’
আর তারা এই বাক্যটি পুনঃপুন পড়তে লাগলেন যে পর্যন্ত না শত্রুরা তার সন্তানের দিকে একসময় বেখেয়াল হয়ে পড়ল এবং তাদের সন্তান সেখান থেকে পালিয়ে আসতে পারল,
সে সাথে করে চার হাজার ভেড়ার পাল নিয়ে আসল, এরপর সে তার পিতাকে তা উপহার দিল। এরপরেই কুর’আনের সেই আয়াতটি নাযিল হয়েছিল যেখানে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলছেন,
“আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন। এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন।
যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন।
আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন”।
[সূরা তালাক :২-৩]
চূড়ান্ত কথা বলছি, আমাদের দুরাবস্থা ভুলে যাবেন না।
আমরা কারাবন্দী—আমরা আপনাদের সন্তান কিউবাতে, আমাদের কষ্ট ভুলে যাবেন না…
আমাদের কষ্টের কথা
ভুলে যাবেন না…”
হে মুসলমানেরা,
এই চিঠিগুলো দিয়ে আমি সবার প্রথমে আলেমদেরকে সম্বোধন করছি
…হ্যাঁ, সেই আলেমগণ যারা নবীদের উত্তরাধিকারী।
তাদের কাঁধে যে দায়িত্ব তা অন্য কারো প্রতি নেই। আপনারা দেখেছেন আমাদের পূর্বসূরীরা কারাবন্দীদের মুক্ত করার জন্যে কি না করেছেন,
আমরা দেখেছি তারা এই দাবী দাওয়াহ নিয়ে কত কষ্ট করেছেন।
আপনারা দেখেছেন শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া কি করেছিলেন,
দেখেছেন ইমাম আল আয-যাওয়ী কি করেছেন এবং তাদের পথে আরও কত জন ছিলেন।
আপনি কি দায়িত্ব পালন করছেন কারাবন্দীদের ইস্যুটিকে নিয়ে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সাথে কি যোগাযোগ করেছেন?
তাদের মুক্ত করার কথা যদি না বলতে পারেন অন্তত তাদের সাথে যে অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে
তা বন্ধ করার ব্যাপারেও কি আপনারা কথা বলতে পারেন না ?
মিডিয়াতে কথা বলে,
মানুষের মাঝে আলোচনা বক্তব্য দিয়ে কি আপনারা সাধারণ মানুষের মাঝে সাবধান করে দিতে পারেন না,
তাদের জানিয়ে দিন কারাবন্দী মুসলিম ভাইদের কথা ভুলে গিয়ে
তারা কিভাবে নিজেদের উপর
বিপদ ডেকে আনছে।
তাই আল্লাহকে ভয় করুন,
হে উলামায়ে ইসলাম,
শ্রেষ্ঠ উত্তরাধিকারীদের ন্যায় আচরণ করুন যাতে
পূর্ববর্তী যমানার শেষ্ঠ উলামাদের মাঝে শামিল হতে পারেন।
দ্বিতীয় পত্রটি কারাবন্দীদের
পরিবারের প্রতি,
সেই সকল বীর নায়কদের পরিবারের প্রতি, তাদের প্রতি যাদের কারণে আমরা মাথা উঁচু করে আছি…
আপনারা স্মরণ করবেন আপনাদের সন্তানেরা জেল খাটছে কোন নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে নয়,
কোন অপরাধের কারণেও নয় যে কারণে মানুষের কাছে আপনাদের মাথা নিচু হয়ে যাবে।
বরং, সারা দুনিয়ার মানুষ আপনাদের সন্তানদের নিয়ে গর্ব করে,
তাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে কারণ তারা দীনের শীর্ষচূড়ায় অবস্থান করছিল,
মুসলমানদের ইজ্জত সম্মান রক্ষা করা’ এটাই ছিল তাদের অপরাধ।
তাদের মর্যাদার কারণে আপনাদের আনন্দিত হওয়া উচিত, সম্মানিত বোধ করা উচিত,
আপনাদের নয়ন জুড়িয়ে যাক মুবারকবাদ আপনাদের প্রতি যারা এই সকল নায়কদের পরিবারের সদস্য।
আর তৃতীয় পত্রটি আমাদের
ভাইদের জন্য…
আমাদের প্রিয় বন্ধুদের জন্য
…যাদের সাথে আমরা আমাদের দুঃখ ভাগ করি যাদের সহানুভূতি আমরা অনুভব করি
…সেই ভাইয়েরা যারা বন্দী আছেন …হে ইসলামের নায়কেরা
…সবর, দৃঢ়তা ও একাগ্রতা !
হে তুমি যে অপমানের সময়েও মর্যাদাও শির উঁচু করে আছ,
তোমার তরে আমি কিছু কবিতার বাণী শোনাচ্ছি,
যেন তোমার চেতনা
জাগ্রত থাকে,
হে বীরেরা,
আমার প্রিয় ভাইয়েরা,
তোমাদের যারা আফগানিস্তানে কিংবা পাকিস্তান থেকে ধরে নিয়ে কিউবাতে প্রেরণ করা হয়েছে,
তোমাদের সবার প্রতি,
আমি এই কথাগুলো নিবেদন করছি ;
আর আল্লাহ্র সাথে যে সৎ থাকে, তার মতামতকে আল্লাহ্ ভুল
পথে চালিত করেন না !!
🎙️"শাইখ মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল হাবদান"
🎤“মুসলিম কারাবন্দীদের পক্ষে কে দাঁড়াবে?”
শীর্ষক জুম্মার খুতবার লিখিত রুপ (১৬ আগস্ট ২০০২ সাল ১৪২৩ হিজরী)
🎤“মুসলিম কারাবন্দীদের পক্ষে কে দাঁড়াবে?”
শীর্ষক জুম্মার খুতবার লিখিত রুপ (১৬ আগস্ট ২০০২ সাল ১৪২৩ হিজরী)
Comment